মন সে কথা শোনেনা পর্ব-০৩

0
1

#মন_সে_কথা_শোনেনা
লেখিকা:#শ্যামলী_রহমান
পর্ব:৩

নিয়ম অনুযায়ী নতুন বউকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখেছে অন্যান্য বিয়েতে জানাই বউ এক সাথে থাকলেও মায়ার পাশে নেই তাসফির এ নিয়ে মনে তার বিষন্নতার শেষ নেই। সবাই বলাবলি করছে বউ এখানে তাসফির কোথায়? মায়া চুপ করে আছে কি বলবে?সে নিজেও বুঝতে পারছে অমতের জোর করে বিয়ের ফল এটা। একটা মেয়ে যখন বিয়ের পর শশুড় বাড়িতে আসে তার ভরসার একমাত্র স্থল হয় নিজের স্বামী কিন্তু মায়ার পাশে নেই হয়তো নিয়তি আমার ভাগ্যে এমনটাই রেখেছিলো বলে নিজের মনে নিজেই উপহাস করে।

মায়া মা তুমি ওঠে পড়ো আর বসে থাকা লাগবে রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেও! সুরাইয়া তুমি মায়াকে তাসফির রুমে দিয়ে আসো তো ও আগেই চলে গেছে আর নিচে আসলো না।

ঠিক আছে মামা আপনি রুমে যান আমি মায়া কে নিয়ে যাচ্ছি।

তুমি ওর নাম ধরে ডাকছো কেন?ও তোমার বড় ভাইয়ের বউ তাই ভাবি ডাকবা।

সরি মামা আর এমন হবে না এবার থেকে ভাবি ডাকবো ভিতরে ভিতরে রাগ হলেও রশিদ সাহেবর কাছে হাসি মুখে উত্তর দিলো। চলো মায়… সরি ভাবি চলেন দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
তুমি কি জানো তাসফির সবার সামনে থেকে তোমাকে রেখে সেই রুমে এসেছে এখনো নিচে যায়নি বা তোমার খোঁজ নেয়নি কেন?
মায়া মাথা ঝাকায় যার অর্থ ও জানেনা।
আমি জানি তার কারণ বলবো কি? যদি তুমি কাউকে না বলো আমি বলেছি তাহলে বলতে পারি।
জি আপু বলেন আমি কাউকে বলবো না।
মায়া সুরাইয়ার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার উওর শোনার আশায়।

শোনো তবে তাসফির এই বিয়েতে রাজি ছিলো না মামা জোর করে তোমার সাথে ওর বিয়ে দিয়েছে নয়তো আজ এই জায়গায় আমি বউ সেজে থাকতাম। তুমি গরিব ঘরের মেয়ে বলে মামা করুণা করে এনেছে এ বাড়িতে আর তুমিও বড়লোক আর হ্যানসাম জামাই দেখে গলে গিয়ে চলে এসেছো একবারো ভাবলে না তোমার আর তাসফির মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক ও কেন তোমার মতো মেয়েকে মেনে নিবে।
সুরাইয়া থেমে যায় কারণ সামনে তাসফির দাঁড়িয়ে আছে মনে মনে ভয় পায় সব শুনে নেয়নি তো?

এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?

কিছু না ভাইয়া মামা ভাবিকে তোমার রুমে দিতে আসতে বললো তাই আসলাম।

ঠিক আছে তুই যা আমি নিয়ে যাচ্ছি। সুরাইয়া চলে যায় তাসফির মায়ার দিকে তাকায়,
তুমি আমার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো আমি অন্য রুমে শুয়ে পড়বো।

মায়া মুখ ফুটে জিজ্ঞেস করে অন্য রুমে শোবেন কেন?

তাসফির বিরক্ত হয় কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় মেয়েটার চোখে মুখে কিছু তো আছে তাকালেই কেমন যেন মায়া লাগে।
তাসফির কোনো উওর দেয়না মায়াকে ওর রুমে রেখে নিজে পাশের রুমে চলে যায়।
মায়া পুরো রুমে একা। রুমটা চোখ বুলিয়ে দেখে নিচ্ছে বেশ গোছালো রুম এতো বড় রুমে ও একা থাকবে ভেবে ভয় লাগছে আগে কখনো একা থাকেনি তার মধ্যে নতুন জায়গা এই নিয়ে মায়া বেশ ভয়ে আছে।

অনেকক্ষণ হয়ে গেছে তাসফির শুয়ে আছে কিন্তু ঘুম ধরছে না মাথায় শুধু একটা কথা আসছে মেয়েটাকে ও যতই বাধ্য হয়ে বিয়ে করুক মেয়েটা তো অনেক স্বপ্ন নিয়ে এ বাড়িতে এসেছে নতুন জায়গা ও ভয় পেতেও পারে এটা ভাবনায় আসতেই এক পা দু পা ঘরে নিজের রুমের দিকে এগোয়।
রুমের দরজায় হাত দিতেই দরজা খুলে যায়।
অন্ধকার রুমে দরজা খুলে যাওয়াতে মায়া ভয় পেয়ে চিৎকার দেয় তাসফির ভাবে হয়তো কিছু হয়েছে এজন্য দৌড়ে গিয়ে লাইট অন করে।
মায়া তাসফিরকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরে। মায়ার পরো শরীর ভয়ে কাঁপছে চোখে হালকা জল আর তাসফিরের বুক ধুকপুক করছে কোনো মেয়ের সংস্পর্শে এই প্রথম তবে মায়ার কোনো খেয়াল নেই ওর মনে ভয়ের রেশ তাসফির ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও মায়া ঝাপটে জড়িয়ে ধরে আছে। কয়েক মিনিট পর মায়া নিজে ছেড়ে দেয় সরি বলে মাথা নিচু করে নেয়।

চিৎকার করলে কেন?

মায়া মুখ লুকিয়ে উওর দেয় আমি একা থাকতে ভয় পাই আগে কখনো একা থাকিনি আমি ভূত ভেবে ভয় পেয়েছিলাম।

তাসফির চোখ কুনো করে জিজ্ঞেস করে,
আমায় কি ভূতের মতো দেখতে লাগছিলো?

আমি তো অন্ধকারে আপনাক দেখতে পাইনি শুধু মনে হলো কেউ দরজা ঠেলে ভিতরে আসছে।

তাসফির কিছু বলেনা ওয়াশ রুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে শুয়ে পড়ে মায়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধমক দিয়ে বলে,
দাঁড়িয়ে আছো কেন ওপাশে শুয়ে পড়ো।

মায়া ভয়ে কাচুমাচু হয়ে একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে যদিও কিছুটা লজ্জা লাগছিলো ব্যক্তিটা নিজের হলেও অপরিচিত তো সময়ের সাথে পরিচিত হবে লজ্জাটাও চলে যাবে আর আপন হবে….. এই কথাটা বলা শেষ করে ভাবে সত্যি কি আপন হবে?
উনি তো আমায় পছন্দ করেননা স্যারের জন্য জোর করে বিয়ে করতে হয়েছে। উনার কি পছন্দের কেউ আছে নাকি সুরাইয়া আপুর কথা গিলো সঠিক আমি উনাদের মাঝে আসলাম। মায়া মনে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অপর পাশের মানুষটা ভাবছে বিয়ে নামক বন্ধনে জড়িয়ে নিজেকে আটকাতে চাইনি কিন্তু বাবা জড়িয়ে দিয়ে ভালো করলো না।

রাত পেরিয়ে নতুন দিনের সূচনা হলো ভোরের সূর্য পূর্ব দিগন্তে ওঠেছে এ দৃশ্য অপরুপ চিত্র তুলে ধরে যা মনকে শান্ত করে সকালের স্নিগ্ধ বাতাস মন ছুঁয়ে দিচ্ছে। মায়া খুব ভোরে উঠে পড়েছে চোখ মেলে পাশে তাকিয়ে দেখে স্বামী নামক মানুষটা ঘুমিয়ে আছে মুখের আদল খানি ফর্সা কপালের উপরে সিল্কি ছোট চুল গুলো হেলে পড়েছে অসম্ভব সুন্দর লাগছে মানুষটাকে চোখ ফেরানো মুসকিল।
মায়া ওঠে পড়ে কিন্তু কি করবে বুঝতে পারছে না নতুন জায়গায় কোথায় কি সেটাও জানেনা অনেক ভেবে চিন্তে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে যায় গিয়ে দেখে রফিক সাহেব সোভায় বসে আছেন। মায়াকে দেখে জিজ্ঞেস করেন এতো তাড়াতাড়ি ওঠে পড়েছো মা।

আমার তাড়াতাড়ি ওঠার অভ্যাস তাই উঠে পড়েছি স্যার।

রফিক সাহেব হতাশ হয়ে তাকালো
কি স্যার, স্যার বলছো? এখন থেকে বাবা বলে ডাকবে তোমার নিয়ে আসার আগে বলেছিলাম তোমাকে আমি মেয়ে করে নিয়ে আসছি তাহলে কি মেয়ে বাবাকে স্যার বলে ডাকে পাগল মেয়ে।

মায়া মাথা নাড়ায় বলে ঠিক আছে বাবা।
মায়ার চোখে জল এসেছে বাবার ভালোবাসা পায়নি কিন্তু আল্লাহ এই মানুষটাকে আমার জীবনে পাঠিয়েছে বাবার ভালোবাসা দেওয়ার জন্য।
বাবা আপনি তো প্রচুর চা খান আপনার জন্য চা বানিয়ে আনি রান্না ঘরটা কোনদিকে বলেন। সবার কি এখন ওঠবে সবার জন্য কি আনবো?

সবাই বলতে আমার জন্য আর তোমার ফুফি শাশুড়ীর জন্য বানাও সুরাইয়া আর তাসফিরের ওঠতে এখনো দেরি আছে। আর হ্যাঁ ওই যে বা দিকে ওখানটায় রান্না ঘর।
মায়া রান্না ঘরে যায় কোথায় কি আছে জানেনা কাকে বলবে? রফিক সাহেব কে ডাকতে চেয়েও ডাকেনা খুঁজে খুঁজে চা বানানোর জিনিস বাহির করে চা বানাতে দেয়।
চা বানিয়ে নিয়ে গিয়ে এক কাপ রফিক সাহেব কে দেন অপর কাপটা হাতে নিয়ে বলেন বাবা ফুফি কি এখানে আসবেন নাকি ঘরে দিয়ে আসবো?

রত্নার শরীরটা একটু খারাপ বলছিলো তাই তুমি ওর রুমে দিয়ে আসো।
মায়া চলে যায় উপরের ঘরে দরজায় কড়া নাড়ে ভিতর থেকে অনুমতি আসে ভিতরে যাওয়ার।
মায়া চায়ের কাপ দিয়ে বলে ফুফি আপনার চা।
রত্না চোখ পাকিয়ে তাকান তার পর কাপটা নেন। চা মুখে দিতেই তিনি চেতে ওঠেন ওয়াক থু এটা কি চা বানিছো এতো চিনি দিয়েছো কেন?এটা কি শরবত যে চিনিতে ভরে খাবো বাবার বাড়ি কি এই সামান্য চা বানানোটাও শিখোনি?

মায়ার মুখ ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায় মুখে বলে,
সরি ফুফি আমি জানতাম না আপনি চায়ে কম চিনি খান আর আমি এমনিতেও কম চিনি দিয়েছিলাম।

তার মানে কি বলতে চাচ্ছো আমি মিথ্যে বলছি?

না না ফুফি আমি তা বলিনি আপনি বাবাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন আমি চায়ে কম চিনি দিয়েছিলাম।

এ কথা শুনে উনার মুখ চুপসে যায় মনে মনে ভাবে রফিককে ডাকলে ধরা পড়ে যাবো চায়ে চিনি ঠিকি আছে এটা বুঝতে দেওয়া যাবে না তাই রাগ দেখিয়ে বলে কাউকে বলার দরকার নেই তুমি এখান থেকে যাও।

মায়া বেরিয়ে আসে ছোট মনে ভাবতে আমি তো চায়ে চুনি কম দিয়েছিলাম তাহলে উনি এমন মিথ্যা বললেন কেন? হয়তো উনার আমাকে পছন্দ না এজন্য অপমান করলেন সাথে বাবা মাকে ও শশুড় বাড়িতে কিছু করতে না পারলে সবাই বাবা মা কে খোটা দেয় কিন্তু তারা একটা বার ভাবে না একদি৷ তারাও কারো বাড়ির বউ হয়েগেছিলো এমন ভুল তাদের ও হয়েছিলো। মেয়েদের জীবন এতো কঠিক কেন?এর উওর কোথাও নেই কারো জানা নেই।

চলবে………..?