উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন পর্ব-০৬

0
212

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৬
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

সময়টা আষাঢ় মাসের মাঝ বরাবর। যখন তখন বলা নেই কওয়া নেই ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির সাথে হিমেল হওয়া। হৃদয় জুড়িয়ে দেওয়ার মতো প্রকৃতি। দিনটা শুক্রবার। তাই সবাই আজকে বাসায় আছে। ছুটির দিন হওয়ার বেলা করে ঘুমিয়ে আছি। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঠান্ডা পরিবেশ। কম্বল জড়িয়ে শুয়ে রয়েছি। ঠান্ডা পরিবেশে গাঁয়ে কম্বল জড়িয়ে ঘুমানোর মজাই আলাদা। বিছানা থেকে উঠতেই ইচ্ছে করছে না। তবে আমার এই ঘুম যেন ইভার সহ্য হলো না। এসেই ডাকাডাকি শুরু হলো,
“বনু দেখ কি সুন্দর বৃষ্টি পড়ছে। চল বৃষ্টিতে ভিজি”

বৃষ্টিবিলাসী এই আমি’র এখন একটুও উঠতে ইচ্ছে করছে না। কম্বলটা আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে বললাম,
“দেখ বনু এখন ঘুম পাচ্ছে। জ্বালাস না। আমাকে ঘুমাতে দে। এমনিও কলেজ থাকলে একটুও ঘুমাতে পারিনা”

ইভা নড়লো না বরং কম্বলের নিচে ঢুকে আমাকে পেঁচিয়ে ধরে বলল,
“আমিও তোর সাথে ঘুমাবো”

আমি ওকে দূরে ঠেলতে ঠেলতে বললাম,
“দূরে যা। এভাবে সাপের মতো পেঁচিয়ে রাখলে আমার দম বন্ধ লাগে”

ঠেলে ইভাকে দূরে সরিয়ে দিলাম। ও আবারো জাপটে ধরলো। এবার মাথা গরম হয়ে গেল। রাগী স্বরে বললাম,
“দূরে যা ইভার বাচ্চা। নাহয় এক ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবো”

ইভা দূরে সরে গিয়ে দুঃখি হওয়ার ভান করে বলল,
“তোর জামাই বেচারার কপালে ভীষণ দুঃখ আছে। তোর মতো আনরোমান্টিক মেয়ে জুটবে বেচারার কপালে। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার জন্য ”

“তোকে আমার জামাই নিয়ে ভাবতে হবে না”

কথা বলতে বলতে এক সময় দুজন পারি জমালাম ঘুমের দেশে।
———-

সোফায় বসে বসে ফোন চালাচ্ছি। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। রোশনিকে ঠেলে পাঠালাম দরজা খুলতে। বাড়ির সকল ছেলেরা জুম্মার নামাজ পড়ে এসেছে। একে একে সবাই ভিতরে ঢুকছে। হটাৎ সেদিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল অ্যাশ কালার পাঞ্জাবী পড়া ইভান ভাইয়ার দিকে। অ্যাশ পাঞ্জাবী, কালো প্যান্ট, হাতে ঘড়ি। সব মিলিয়ে মানুষটাকে চমৎকার লাগছে। পাঞ্জাবীর হাতা কনুই পর্যন্ত উঠানো। তার ওই ফর্সা হাতের ওপর একদফা ক্রাশ খেলাম। মানুষের হাত এতো সুন্দর হতে হবে কোনো? নিজের হাতের দিকে তাকালাম। আমিও ফর্সা তবে ইভান ভাইয়ের মতো না। মানুষটা মারাত্মক সুন্দর। ইভান ভাই পাঞ্জাবীর ওপরের বোতাম খুলতে খুলতে ভিতরে ঢুকছেন। আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। ইভান ভাই সহ সবাই এসে একে একে সোফায় বসছে। আমি আর ইভা একটা সোফায় বসে আছি। পাশে একজন বসার জায়গা আছে। আদ্র ভাই হুট করে এসে ধপাস করে বসে পড়লো আমার পাশে। ইভান ভাই বসলো আমার বরাবর।
“ইভা এক গ্লাস পানি দে তো”

ইভা এক মনে গেম খেল খেলছে। মনে হচ্ছে একটু হলেই একবারে ফোনের ভিতর ঢুকে যাবে। খোঁচা দিয়ে বললাম,
“ইভান ভাই পানি চাচ্ছে। যা তাকে পানি দে”

“তুই দে”

“আমাকে বলেছে না তোকে বলেছে”

“একজনকে বললেই হলো। দেখছিস তো খেলছি। যা না বনু”

অগত্যা আমাকে উঠতে হলো। পানি নিয়ে ভাইয়ার সামনে ধরতেই সে মুখ তুলে তাকালো। চোখাচোখি হলো মুহূর্তেই। তীক্ষ্ণ চোখের চাওনি তার। মনে হচ্ছে ওই চোখ জোড়া দিয়েই আমাকে খু*ন করে ফেলবে। তবে আমি তার এরূপ চাহনির মানে বুঝলাম না। ভাইয়া পানির গ্লাসটা নিয়ে একবারেই পুরো গ্লাস শেষ করে ফেলল। আমি গ্লাসটা রেখে বসতে যাবো দেখি ইভান ভাই তখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই না বসে সোজা নিজের রুমে চলে এলাম।

সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছি। যে যার মতো গল্প করছে। ইভান ভাই কথা বলছে সাথে ফোনে কি যেন করছে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে হা হু জবাব দিচ্ছে। আড্ডা দিতে বসে ওনার এতো কি কাজ কে জানে? আড্ডার মাঝে সবাই আদ্র ভাইকে জেঁকে ধরলো ট্রিট দেওয়ার জন্য। একটু জোরাজুরি করতেই সেও রাজি হয়ে গেল। আজ অনেক দিন পর সব ভাই বোনরা মিলে বাহিরে যাবো। যদিও অনেকে নেই। শুভ ভাই মেডিকেল থেকে ডাক পড়ায় মেডিকেলে গেছেন। সবাই যার যার রুমে তৈরি হচ্ছে। আমিও সিম্পল এর মধ্যে সেজে নিলাম। ঈশিতা আপুর রুমে গিয়ে দেখি আপু আর ইভা সেজেগুজে পটের বিবি সেজে তৈরি। আয়নার সামনে দুজন দুজনকে দেখছে আর জিজ্ঞেস করছে,
“এই আমাকে সুন্দর লাগছে না?”

ওদের নজর আমার দিকে পড়তে ঈশিতা আপু কাছে এসে বলল,
“এমন সন্ন্যাসীদের মতো সেজেছিস কোনো? তোকে দেখে মাদার তেরেসার মতো লাগছে”

“যেমনই লাগুক আমি এতেই কমফোর্টেবল। জানোই তো আমার ভারী সাজ পছন্দ না”

ঈশিতা আপু ইভাকে খোঁচা মেরে বলল,
“যাই বলিস রোদকে সিম্পল সাজে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগে। মাশাআল্লাহ”

“একটু আগে না বললে মাদার তেরেসার মতো লাগছে, এখন আবার বলছো সুন্দর লাগছে”

“আরে সেটা তো মজা করে বলেছি”

নিচ থেকে আদ্র ভাই ডাকছে। সবাই নিচে উপস্থিত শুধু আমরা তিনজন বাদে। আমরা আসতেই আদ্র ভাই বলল,
“এতো আটা ময়দা যে মেখেছিস কে নিতে আসছে তোদের? যদিও তোদের মতো পে*ত্নীদের কে নিতে আসবে। তবে রোদ ঠিক আছে”

আমি আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। ইভা আর ঈশানি আপু রেগে কিছু বলবে তার আগে অভ্র ভাই তাড়া দিয়ে বলল,
“ঝগড়া পরে করিস এখন দেরি হয়ে যাচ্ছে চল”

আমরা মোট নয়জন । দুটো প্রাইভেট কার নেওয়া হলো। প্রথমটায় অভ্র ভাই, রূদ্র ভাই , আদ্র ভাই , আরু, রোশনি বসে পড়েছে। আর কোনো সিট্ খালি নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে লাট সাহেবের গাড়িতেই যেতে হবে। দ্বিতীয়টায় ঈশিতা আপু, ইভা, ইভান ভাই আর আমি। ইভা আর আমি আগে পিছনের সিটে বসে পড়লাম। ঈশিতা আপু বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। আমায় ডেকে বলল,
“রোদ শোন”

“হুম বলো”

“আমি রুমে আমার ব্যাগটা ফেলে এসেছি নিয়ে আয় না”

“আমি পারবো না। তুমি যাও”

“আমি না তোর বড়। যা না নিয়ে আয় ভালো বনু আমার”

আমি নিচে নামতেই ঈশিতা আপু আমার কানে কানে বলল,
“বোকা বানিয়েছি। এখন তুই বস ইভান ভাইয়ের পাশে”

আপু চটজলদি বসে পড়লো। আর এদিকে আমি বেক্কেল বনে গেলাম। কি হলো কিছুই মাথায় ঢুকলো না। বিষয়টা বুঝতে কিছুক্ষন সময় লাগলো। ঈশিতা আপু আমার সাথে এমনটা করতে পারলো। এভাবে বোকা বানালো। আমাকে যমের গুহায় ঠেলে দিলো। আমি ভাবনায় বিচরণ করছি এমন সময় ইভান ভাই ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
“কি সমস্যা গাড়িতে উঠছিস না কোনো?”

“আমি যাবো না”

কথাটা বলে তাকিয়ে দেখি ইভান ভাই রক্তিম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চানিতে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।
“তুই গাড়িতে উঠবি নাকি আমি নামবো”

তিনি নামলে আমার সুন্দর গাল লাল করে দিবে। তার চেয়ে ভালো নিজেই উঠে বসি। বসে সিট্ বেল্ট লাগিয়ে নিলাম। একটু পর পর তার দিকে তাকাচ্ছি। আর মনে মনে তাকে ডিটের্জেন্ট ছাড়া ধুয়ে ফেলছি। বেটা বজ্জাত একটু ভালো করে বললে কি হয়। এভাবে ধমক দেওয়া লাগে? আমি বুঝি ভয় পাইনা। পাষান লোক একটা। মায়া দয়া একটুও নাই। কথাই বলবো না তারসাথে। গাল ফুলিয়ে বসে আছি।

খানিকক্ষন পর গাড়ি এসে থামলো একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে। আমরা সবাই মিলে রুফটপে উঠলাম। জায়গাটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। ছবি তোলার জন্য সুন্দর কয়েকটা কর্নার আছে। ইভা আর ঈশিতা আপু ছবি তুলছে বিভিন্ন ভঙ্গিমা করে। আমি এক পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটু পরপর হাওয়া এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে। পরিবেশ টা খুবই সুন্দর। খাওয়া দাওয়া আড্ডা শেষ সবাই গল্প করছে। এমন সময় কেউ ইভাকে ডাক দিলো। তাকিয়ে দেখি কলেজের কিছু ফ্রেন্ডস। আমি আর ইভা মিলে ওদের সাথে কথা বলছি। মাঝ থেকে নিহা বলল,
“চল সবাই মিলে গ্রূপ ফটো তুলি”

আমরা সবাই রাজি হয়ে গেলাম। সবাই দাঁড়ালাম। আমার এক পাশে ইভা অন্য পাশে এসে দাঁড়ালো লিমন। আমার স্কুল ফ্রেন্ড প্লাস কলেজ ফ্রেন্ড। আমরা মানুষ বেশি হওয়ায় এক ফ্রেমে আসছি না। তাই নিহা বলল,
“সবাই কাছাকাছি এসে দাড়া”

সবাই কাছাকাছি দাড়লাম। ছবি তোলা শেষে সবাইকে বিদায় দিয়ে চলে এলাম। সবাই টুকটাক কথা বলছে। ইভান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি লাট সাহেবের মুখ রাগে লাল হয়ে আছে। একটু আগেই তো ভালো দেখে গেলাম। এইটুকু সময়ের মাঝে কি হলো? ইভান ভাই গম্ভীর স্বরে বলল,
“এখন যাওয়া যাক”

সবাই সম্মতি জানালো। আসার সময় যে যেখানে বসেছে। এখনই তাই। অগত্যা আমাকে ইভান ভাইয়ার পাশেই বসতে হলো। ইভান ভাই স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। মনে হচ্ছে গাড়িতে না প্লেনে বসে আছি। আমাদের তিনজনের অবস্থায় বেহাল। ঈশিতা আপু বলল,
“ইভান ভাই আস্তে গাড়ি চালাও”

কে শোনে কার কথা। ঈশিতা আপুর কথা যেন তার কান পর্যন্ত গেলনা। আমি চোখ মুখ খিঁচে বসে আছি। ভয়ে আমার আত্মা বেরিয়ে আসার উপক্রম। ত্রিশ মিনিটের রাস্তা দশ মিনিটে চলে এলাম। ইভান ভাই গাড়ি থেকে নেমে ধূপধাপ পা ফেলে চলে গেলেন। পিছনে রয়ে গেলাম আমরা তিনজন। তিনজনেরই মাথা ভোঁ ভোঁ করছে।

রুমে বসে ফোন চালাচ্ছি। ধরাম করে দরজা আটকানোর শব্দে কেঁপে উঠলাম। ইভান ভাই এগিয়ে আসছে আমার দিকে। রাগে তার চোখমুখ লাল হয়ে আছে। তাকে দেখে ভয় লাগছে। আমি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। ইভান ভাই এগিয়ে আসছে আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। ইভান ভাই কাছে এসে হাতটা মুচড়ে ধরে রাগী স্বরে বলল,
“ছেলেদের সাথে ঢলাঢলী করতে ভালো লাগে?”

আমি মাথা নেড়ে না বললাম। চিৎকার করে বলল,
“তাহলে ওই ছেলেটা যখন তোর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো তখন সরে গেলিনা কোনো? ভালো লাগছিলো নাকি? এর পর যদি কখনো তোর আশেপাশে কোনো ছেলেকে দেখি খু*ন করে ফেলবো। মনে রাখিস”

ইভান ভাই চলে গেল। আমি তার যাওয়া দিকে তাকিয়ে আছি। সে আমাকে পছন্দ করে না এটা জানি। তাই বলে কি এখন তার জন্য আমি কারো সাথে মিশতেও পারবো না?

#চলবে?