উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন পর্ব-৩৯+৪০

0
3

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৩৯
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

মধ্যরাতের পূর্ণিমাতে পুরো পৃথিবী যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আমি আর আদ্র তখন ছাদে চুপটি করে একে অপরের সাথে মিশে প্রকৃতি বিলাসে মগ্ন। আদ্রর বুকের সাথে পিঠ মিশিয়ে বসে আছি। উনি আমার চুলগুলো এলোমেলো করছে আবার গুছিয়ে দিচ্ছে। আমি বসে বসে তার পা*গলামো দেখছি। এক সময় বলে উঠলো,
“শোন রৌদ্রময়ী আমাদের বিয়ের পর তুই যখন আমার বাড়ি যাবি তখন তুই তোর চুল ধরতে পারবি না”

“মানে? কি বলছো?”

“তোর চুলের ওপর তোর কোনো অধিকার নেই সব আমার অধিকার। আমি সুন্দর করে চুলে শ্যাম্পু করে দিবো, চুল মুছে দিবো, আচড়িয়ে দিবো, হেয়ার প্যাক লাগিয়ে দিবো এমনকি আমি নিজের তোর চুল বেঁধে দিবো। তুই চুলে হাত দিতে পারবি না। তুই জানিস তোর কোমর সমান চুল গুলো আমার কাছে আস্ত এক মাদকতা? দেখলেই নেশায় পড়ে যাই আমি”

আদ্রর কথা যতো শুনি ততই মুগ্ধ হই। এই মানুষটা আর কতো পা*গলামো করবে? এখন নাকি তার জন্য আমি আমার চুলও ধরতে পারব না ভাবা যায়? মানুষটা সত্যিই পা*গল। আমার জন্য পা*গল, শুধুই আমার জন্য। আমার জন্য করা তার পা*গলামোর লিস্ট শুধু বড়ই হয়ে যাচ্ছে এর শেষ নেই। আদোও কখনো শেষ হবে কিনা তাও জানি না। এইযে একটু আগের ঘটনা। আদ্রকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
“সত্যি করে বলো তো ওই হাঁদারাম গাধার জায়গায় তুমি এলে কি করে? ওখানে তো ওদের থাকার কথা ছিলো। আর ওগুলো কে ভাগালেই বা কিভাবে?”

আদ্র চুটকি বাজিয়ে বলল,
“ইটস ম্যাজিক”

“ম্যাজিক তো জাস্ট বাহানা সত্যি করে বলো তো তুমি কি চাল চেলেছো যে ওই গাধা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে?”

আদ্র দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো। আমি নিশ্চত উনি কিছু না কিছু তো অবশ্যই করেছে। আদ্রর বর্ণনা মতে ঘটনাটা এমন যে, হাদারাম গাধা মানে শিহাব ভাইয়ের কাজিন সিফাত আর তার ফ্যামিলি বসে আছে। এমন সময় আগমন ঘটলো আদ্র মহাশয়ের। উনি যেয়ে সোজা তাঁদের সামনে পায়ে পা তুলে বসে পড়লো। বড়র কেমন বাঁকা চোখে তাকালো তার দিকে। আদ্র সেসবে পাত্তা দিলো না। বড় আব্বুর উদ্দেশ্যে বলল,
“একি মামু মেয়ে বিয়ে দিচ্ছ আর আমাদের একবার জানালেও না? এটা কিন্তু মোটেও ঠিক করোনি মামু”

বড় আব্বু বলল,
“আরে আমরা জানতাম নাকি আগে থেকে? একটু আগে তোর বড় মা আমায় ফোন দিয়ে জানিয়েছে তখন জানলাম”

আদ্র বড় আব্বুর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো সিফাত এর দিকে। ছেলেটা কেমন লাজুক মুখ নিয়ে মাথা নিচু করে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে নতুন বউ টাইপ। তার পাশে ওর বাবা-মা। ওপর পাশের সোফায় শিহাব ভাইয়ার বাবা-মা। আদ্র সিফাতকে জিজ্ঞেস করলো,
“নাম কি তোমার? কি করো? পড়াশোনা কতদূর?”

ছেলেটা মৃদু কণ্ঠে জবাব দিলো,
“আমার নাম সিফাত, একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি। ইংলিশে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি”

আদ্র সিফাতের দিকে ভালো করে খেয়াল করলো। নিঃসন্দেহে ছেলেটা ভদ্র। দেখেই মনে হচ্ছে বাবা-মায়ের বাধ্য সন্তান। আদ্র ফের প্রশ্ন করলো,
“রোদকে পছন্দ করো? ভালো লেগেছে?”

সিফাত এবার লজ্জায় লাল হয়ে গেল। হয়তো বাবা-মা সামনে আছে বলে। মিনিমিনে কণ্ঠে বলল,
“হ্যাঁ”

আদ্র ভ্রু কুঁচকে চাইলো। মনে মনে বলল,
“আমার বউকেই পছন্দ হতে হলো তোর? দুনিয়ায় মেয়ের অভাব পড়েছিল নাকি?”

আদ্র এবার নড়েচড়ে বসলো। মুখে গম্ভীর্য এনে প্রশ্ন করলো,
“তুমি যে মেয়ে দেখতে এসেছো এটা তোমার গার্লফ্রেন্ড জানে? নিজের গার্লফ্রেন্ডকে ধোঁকা দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছো? এটা কি ঠিক?”

আদ্রর প্রশ্নে সিফাত বেক্কেল বনে গেল। চোখ তুলে চাইলো আদ্রর দিকে। সিফাতের বাড়ির সবাইক ওর দিকে দৃষ্টিপাত করলো। শিহাব ভাইয়া জিজ্ঞেস করলো,
“সিফাত আদ্রর কথা কি সত্যি? তোর গার্লফ্রেন্ড আছে?”

“না ভাইয়া। আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই”

আদ্র বলল,
“মিথ্যা কথা কেন বলছো?”

“আমি মিথ্যা কথা বলছি না”

এর মাঝেই সিফাতের ফোন বেজে উঠলো। সবার দৃষ্টি সিফাতের দিকে। আদ্র সিফাতকে বলল,
“কল রিসিভ করে স্পিকারে দেও। আমরাও শুনি কে ফোন দিয়েছে”

সিফাত কল রিসিভ করে স্পিকারে দিলো। ফোনের ওপর পাশ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে ভেসে এলো,
“হ্যালো জান,কেমন আছো তুমি?”

সিফাত ঘাবড়ে গেল। কোনো উত্তর দিলো না। মেয়েটা আবার বলে উঠলো,
“কি হলো জানু তুমি কথা বলছো না কেন? তুমি কি আমার ওপর রাগ করেছো?”

এবার আর সিফাত চুপ রইলো না। মুখ্ খুলে বলল,
“আপনি কে? আর ফোন দিয়ে কি সব আবোল তাবোল বলছেন?”

“ছিঃ বাবু তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন? তুমি আমাকে চিনো না? তোমার জানকে চিনো না? এভাবে বলতে পারলে তুমি ? ও বুঝেছি কালকে তোমার সাথে ঘুরতে যায়নি বলে রাগ করছো তাই না? সরি বাবু”

“আমি আপনাকে চিনি না। আর এসব কি বলছেন?”

এবার মেয়েটা রেগে মেগে বলল,
“সিফাত এবার কিন্ত বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। তুমি রাগ করছো আমি রাগ ভাঙাতে চেয়েছি। তাই বলে তুমি এতো বেশি করবে এটা ঠিক না। কালকে এসো অফিসে দেখাচ্ছি মজা”

মেয়েটা কল কেটে দিলো। সিফাতের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে আদ্র হাই তুলে বলল,
“দেখলেন তো আমার কথাই সত্যি হলো তো?আপনাদের ছেলে আপনাদের মিথ্যা বলেছে”

সিফাত বলল,
“বাবা বিশ্বাস করো এই মেয়েকে আমি চিনি না”

শিহাব ভাইয়ার বাবা বড় আব্বুর উদ্দেশ্যে বলল,
“দুঃখিত ভাইজান। আমাদের ছেলে যে এমন কান্ড করবে আমরা জানতাম না। আপনাদের বিড়ম্বনায় ফেলে দিলাম”

“সমস্যা নাই ভাইজান। এখানকার যুগে এসব হয়ে থাকে। আপনারা ছেলের পছন্দকে মেনে নিন তাহলেই আর ঝামেলা হবে না”

শিহাব ভাইয়ারের আব্বু সবাইকে উঠতে বলেল সবাই উঠে দাঁড়ালো। বড় আব্বু তাঁদের থাকার জন্য রিকোয়েস্ট করলেও তারা শুনলেন না। বললেন অন্য একদিন আসবেন। ঈশিতা আপু আর শিহাব ভাইয়াকে থেকে যেতে বললেন। যাওয়ার আগে সিফাত আবার বলল,
“বিশ্বাস করো আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই। ওই মেয়েকে আমি চিনি না”

শিহাব ভাইয়ার বাবা ওকে ধমক দিয়ে বলল,
“চুপচাপ বাড়ি চলো আর একটা কথাও বলবে না”

ওরা সবাই চলে গেল। আদ্র ভাই আয়েস করে সোফায় বসে পড়লো। বড় আব্বু বলল,
“তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বাবা। ঠিক সময়ে এসে আমাদের করতে যাওয়া ভুলটা আটকে দিলি। এর আগেও আমাদের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য মেয়েটাকে কতো কষ্টই না পেতে হলো। আবারও সেই একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিলো ওর সাথে। মেয়েটার জন্য যোগ্য একটা ছেলে পেলে আমি ওকে তার হাতে তুলে দিয়ে শান্তি পেতাম। ইভানের সাথে ওরা বিয়ে ঠিক হওয়ায় ওর ওপর দিয়ে যেই ঝড় গেল সেই কথা ভাবলে এখনো আমি আত্মগ্লানিতে ভুগি। আমার সেদিনের নেওয়া ভুল সিদ্ধান্তের জন্য মেয়েটা কতো টা বদলে গিয়েছিলো। তুই ছিলিস বলে ও আবার আগের রূপে ফিরে এসেছে। তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বাবা”

আদ্র বিরবির করে বলল,
“ধন্যবাদ না দিয়ে মেয়েটাকে আমায় দিয়ে দিলেও তো পারো নাকি? ধন্যবাদ দিয়ে কি আমি ডিম ভেজে খাবো?”

বড় আব্বু বলল,
“কিছু বললি বাবা?”

“বলছি ছেলে তোমাদের সামনেই আছে খুঁজে দেখো”

“কোথায় ছেলে? আমার চোখে তো কাউকে পড়ছে না”

আদ্র ফের বিরবির করে বলল,
“তা পরবে কেন? এইযে তোমাদের সামনে দিয়ে ঘুর ঘুর করছি তাও তোমাদের চোখে পরবে না”

“ছেলে তোমাকে আম্মু দেখিয়ে দিবে”

ফুপ্পি এতক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আদ্রর কান্ড দেখছিলো। তার ছেলে আমার জন্য কতো দূর যেতে পারে সেটাই দেখছিলো। এগিয়ে এসে বড় আব্বুর হাত ধরে সোফায় বসিয়ে নিজে পাশে বসলো। বড় আব্বুর হাতে হাত রেখে বলল,
“ভাইয়া আজকে আমি তোমার কাছে একটা আবদার করবো রাখবে?”

“তুই বল, রাখার মতো হলে অবশ্যই রাখবো। তুই আমাদের সবার আদরের একটা মাত্র বোন”

“আমি রোদ সোনাকে আমার আদ্রর জন্য চাইছি। রোদকে আমার ছেলের বউ হিসেবে দিবে? আমি ওকে আমার বাড়িতে পুতুলের মতো সাজিয়ে রাখবো”

“কিন্তু?”

“কিন্তু কি ভাইয়া? তুমি কি ভাবছো আদ্রও ইভানের মতো করবে? না, তোমরা তো ওকে চিনো। আদ্র কেমন তোমরা ভালো করেই জানো। আমার ছেলেটা রোদকে অনেক ভালোবাসে ভাইয়া। আমি মা হয়ে বলছি তোমাকে তুমি দেখো আদ্রর মতো রোদকে কেউ ভালোবেসে এতটা আগলে রাখতে পারবে না। আদ্র রোদকে মাথায় করে রাখবে। রানী বানিয়ে রাখবে তোমাদের মেয়েকে”

“কিন্তু কথা হচ্ছে রোদ কি আদ্র কে পছন্দ করে? ওকে একসেপ্ট করবে?”

মাঝ থেকে ইভা ফট করে বলে উঠলো,
“রোদ ও আদ্র ভাইকে পছন্দ করে বাবা”

“তাহলে তো ভালোই। খুব শীঘ্রই দুজনের চারহাত এক করে দিবো। আমাদের মেয়ে আমাদের কাছেই থাকবে। আর আমিও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো”

ইভা খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,
“আমি বনুকে জানিয়ে আসি”

আদ্র বাঁধা দিয়ে বলল,
“মোটেও না। আগে শোন আমার একটা প্ল্যান আছে”

আদ্র সবাইকে বুঝিয়ে বলল। আদ্রর প্ল্যান শুনে ইভা উঠফুল্ল কণ্ঠে বলে উঠলো,
“আদ্র ভাই তুমি পারোও বটে”

আদ্রর বুকে হেলান দিয়ে ঘটনা শুনে হেসে কুটি কুটি অবস্থা আমার। এই লোক পারেও বটে। কিন্ত আমার সন্দেহ হচ্ছে। সন্দেহহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
“এই সত্যি করে বলো তো ওই হাদারাম গাধার কি সত্যিই কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে? নাকি ওটাও তোমার কারসাজি”

আদ্র ভাই দাঁত কেলিয়ে বলল,
“অবশ্যই আমার কারসাজি”

“কিভাবে করলে শুনি?”

“মিহিকে কল করে সব বললাম ও বুদ্ধি দিলো, বলল ও বাকিটা সামলে নিবে”

“নাম্বার পেলে কোথায়?”

“ওর নাম্বার জোগাড় করা আমার বা হাতের খেল”

“সত্যিই তুমি পারোও বটে”

“বেটার শখ কম না আসছে আমার বউ বিয়ে করতে। তাইতে এতো কিছু করা”

মনে মনে হাসলাম। এই মানুষটা পারেও। আমার জন্য একদিনের মাঝে কতো কিছু করে ফেলল। আমি তো শুধু একটু উদিগ্ন হয়েছি আর উনি তো পুরো পাগলামো শুরু করে দিয়েছিলো। নিজেকে বড্ড ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। এই আদ্র নামক মানুষটাকে পেয়ে আমি ধন্য। ঘাপটি মেরে ওনার বুকে পড়ে রইলাম।
——

সকালের মিষ্টি আলো এসে চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ কচলে চেয়ে নিজেকে রুমে আবিষ্কার করলাম। কিন্তু আমার যতো টুকু মনে পড়ে আমি আদ্রর বুকেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।তারামানে আদ্র মহাশয় আমায় রুমে নিয়ে এসেছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে একেবারে রেডি হয়ে নিচে নামছি। নামতে নামতে খেয়াল করলাম টেবিলে আদ্র, ইভা, শুভ ভাই নাস্তা করছে। আমি টেবিলের কাছে যেতেই আদ্র ইশারা করলো উনার পাশে বসার জন্য। একটু পড়েই বড় আম্মু খাবার দিয়ে গেল। এক মনে খাচ্ছি হটাৎ কানে ভেসে এলো কারো ফিসফিসে কণ্ঠস্বর।
“শুভ সকাল বউ”

অধর কোলে খেলে গেল মুচকি হাসি। উনার মুখে ‘বউ’ ডাকটা শুনলেই শিরদাঁড়া বেয়ে শীতলতা ছড়িয়ে যায়। মনে প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়। ওনার মতো ফিসফিস করে বললাম,
“শুভ সকাল বর মশাই”

“ইসস, বুকে লাগলো রে। এভাবে কেউ মিষ্টি করে বর মশাই বলে?”

ওনার কথায় লজ্জা পেলাম। সামনে শুভ ভাই আছে তাই কথা বাড়ালাম না। ইভা কাশি দিয়ে বলে উঠলো,
“দুজনে কি ফিসফিস করছো? আমাদেরও বলো, আমরাও একটু শুনি”

আদ্র খেতে খেতে বলল,
“বর-বউয়ের পার্সোনাল কথা শুনতে হয় না জানিস না?”

ইভা মুখ ভেংচি খাওয়াও মনোযোগ দিলো। খাওয়া শেষে শুভ ভাই, ইভা আর আমি বেরিয়ে এলাম। শুভ ভাই গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করছে। আমি আর ইভা দাঁড়িয়ে আছি। গাড়ি বের করতেই ইভা আগে উঠে বসলো। আমি উঠতে যাবো এমন সময় আদ্র এসে হাত ধরলো। শুভ ভাইকে বলল,
“ভাইয়া তোমরা চলে যাও। আমি রোদকে পৌঁছে দিবো”

শুভ ভাই সম্মতি জানিয়ে চলে গেল। ইভা দাঁত কেলিয়ে হাসছে। আদ্র আমার হাত ধরে নিয়ে গাড়িতে বসালো। নিজে বসে পড়লো ড্রাইভিং সিটে।আচমকা ঝুঁকে এলেন আমার দিকে। উনাকে নিজের দিকে ঝুঁকতে দেখে মাথা খানিকটা পিছিয়ে নিলাম। আদ্র সিট্ বেল বেঁধে দিয়ে কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। অতঃপর সরে নিজের জায়গায় বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।

#চলবে?

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৪০
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

তপ্ত দুপুরে রৌদ্র মাঘের আনাগোনা। আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘেদের দল। নীল আকাশ দেখতে বড্ড সুন্দর লাগছে। মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছি বন্ধুরা মিলে। একেক জন একেক কথা বলছে তবে সেদিকে আমার খেয়াল থাকলে তো? আমিতো ব্যাস্ত ম্যাসেজে আদ্রর সাথে কথা বলতে। উনি কবিতা লিখে পাঠিয়েছে।

“এই রোদেলা দুপুরে, ক্লান্ত শরীরে, হেটে আসা বহুদূর।
দূরে আরো দূরে হারিয়ে চলো মেঘেদের ছায়া তলে,
দূরে আরো দূরে মেয়েরা দেখো তাকিয়ে আছে স্বপ্নের ডানা মেলে।
রোদেলা দুপুরে ক্লান্ত শরীরে দুঃখকে ভুলে হাতে হাত ধরে,
চলনা একটু মিষ্টি সুরে গেয়ে আসি গান।
এই রোদেলা দুপুরে ক্লান্ত শরীরে মনটাকে ভালো করতে,
ছলনা দুজনে মিলে ঘুম পরীদের দেশে হারিয়ে যাই।
দূরে আরো দূরে চলো না হারিয়ে সুখের নদীতে ভেসে যায়,
যেখানে আর কেউ নয়, শুধু তুমি আর আমি”
( কালেক্টেড )

নিমিষেই ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো মিষ্টি হাসি। এই মানুষটা পারেও বটে। তার পা*গলামো গুলো আমায় মাতিয়ে রাখে সারাক্ষন। মুচকি মুচকি হাসছি। ফোন থেকে চোখ তুলে সামনে তাকাতেই ঘাবড়ে গেলাম। সবাই একসাথে আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। ওদের এভাবে আহাম্মকের মতো আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
“কি হলো? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমাকে দেখে কি ভুত বা পে*ত্নী মনে হচ্ছে? নাকি দেখতে খারাপ লাগছে?

লিনা বলল,
“তোর লক্ষণ আমার ঠিক লাগছে না বন্ধু। কয়েক দিন ধরে লক্ষ্য করছি কেমন যেন আচরণ তোর। আজকে সকালে একটা ছেলে এসে নামিয়ে দিয়ে গেল যে ঐদিন তোর জন্য হিরোর মতো মারামারি করেছিল। এখন আবার আড্ডায় বসে মোবাইল দেখে হাসছিস? কাহিনী কি?”

সবাই ওরা সাথে তাল দিয়ে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো,
“ছেলেটা কে? কি হয়? বয়ফ্রেন্ড নাকি?”

আরো এক্সট্রা অনেক প্রশ্ন। মাঝ থেকে ইভা হাই তুলতে তুলতে বলল,
“ওই হিরোর মতো ছেলেটা রোদ সোনার বর হয়”

সবাই একসাথে মৃদু চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
“কি? কি বলছিস?”

“হ্যাঁ। ওই হিরোটা আমার ফুপ্পির একমাত্র ছেলে। যে রোদকে পা*গলের মতো ভালোবাসে। গতকালই ওদের আকদ হয়েছে”

রুমা অভিমানে গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো,
“ওর আকদ হয়ে গেল আর ও আমাদের বললোও না? আর বলবেই বা কেন? আমার থুড়ি না ওরা ফ্রেন্ড লাগি”

আমি ওরা গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
“আরে রাগ করছিস কেন? আমার আকদ আমি নিজেও জানতাম না। তোদের কিভাবে বলবো বল?”

“তোর আকদ তুই জানতি না মানে? বোকা পেয়েছিস আমাদের?”

“আগে শুনবি তো আমার কথা”

একে একে ওদের পুরো ঘটনা খুলে বললাম। ওরা একেক জন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওদের রিয়েকশন দেখে মনে হচ্ছে ওরা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখে ফেলেছে। টিয়া বলে উঠলো,
“ভাই তোর কাহিনী তো গল্পের কাহিনী চেয়েও সিনেমাটিক। আমার মনে হলো এতক্ষন আমি কোনো গল্পের নায়কের তার নায়িকার জন্য করা পা*গলামোর বর্ণনা শুনলাম। গল্পের কাহিনীও তোর কাহিনীর কাছে হার মেনে যাবে। ইউ আর সো লাকি রোদ। ইসস, আমার সাথে যদি এমন হতো”

ইভা বলল,
“ওসব স্বপ্ন বাদ দে। আদ্র ভাইয়ের মতো করে সচরাচর কেউ ভালোও বাসতে পারবে না, আর না পারবে ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য এতটা পা*গলামো করতে”

রুমা উদাস কণ্ঠে বলল,
“এটা ঠিক বলেছিস। সবাই তো আর আদ্র ভাই না”

সবার মুখে আদ্রর প্রশংসা শুনে নিজেকেই সৌভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। সবাই যাকে পাওয়ার জন্য আফসোস করে সে আমার, শুধু আমার। আবার শুরু হলো আমাদের আড্ডা। আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বাড়ি যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। আজকে শুভ ভাইয়ের একটা অপারেশন ছিলো বলে এতক্ষন সবাই মিলে আড্ডা দিলাম। নাহয় আগেই চলে যেতাম। শুভ ভাইয়ের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ভাইয়া ভিতরে আছে কিনা জানি না। দরজা খুলে উঁকি দিলাম দেখার জন্য। ভিতরে শুভ ভাই আর তিথি আপু কথা বলছে। তিথির আপুর কথা বলার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে আপু কিছু বায়না করছে আর শুভ ভাই তাকে বোঝাচ্ছে। নক করে বললাম,
“ভাইয়ার বাড়ি যাবে না?”

দুজনে আমার দিকে তাকালো। ওদের এভাবে তাকাতে দেখে হতচকিয়ে গেলাম। আমি কি ভুল টাইমে এন্ট্রি নিয়ে নিলাম? তিথি আপু উঠে এসে আমার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেল। বলে উঠলো,
“দেখো না পাখি তোমার ভাইয়া আমায় বিয়ে করতে রাজি না। আমি কতো করে বলছি চলুন বিয়েটা করে ফেলি কিন্তু উনি রাজিই হচ্ছে না”

শুভ ভাই গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
“আমি তোমায় আগেও বলেছি এখনো বলছি, সামনে কয়েকদিন পড় তোমার ফাইনাল এক্সাম এখন এরকম পা*গলামো করো না। এক্সাম টা শেষ হোক তারপর বাকি সব হবে। আমি নিজে আমার বাড়িতে তোমার কথা বলবো”

“উহু, আমি বলেছি এখন মানে এখন। বিয়ের পরেও পরীক্ষা দেওয়া যাবে। কিন্তু আমি আপনাকে নিয়ে রিক্স নিতে চাই না। ক্লাসের মেয়ে গুলো কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে সেটা আমার সহ্য হয় না”

“বাচ্চাদের মতো আবদার করো না। সব হবে কিন্তু এক্সাম এর পড়। এখন এই বাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে পড়ায় মন দাও। আগামী মাসে এক্সাম”

তিথি আপু রাগে গজ গজ করতে করতে বলল,
“এক্সাম তো আমি দিবো কিন্তু সেটা বিয়ের পর । আমার কথা মিলিয়ে নিয়েন মিস্টার শুভ। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের বিয়ে, তৈরি থাকুন। কালকে বাবা-মাকে আপনাদের বাড়িতে পাঠাবো”

“তিথি আমার কথা শুনো। এমন উ*ন্মাদের মতো করো না”

“উ*ন্মাদের এখনো তো কিছুই দেখেননি মিস্টার সবে তো শুরু। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ”

তিথি আপু চলে গেল। আমি তাকিয়ে আছি আমার বেচারা ভাইটার দিকে। কি ফাঁসাটাই না ফেঁসেছে আমার বেচারা ভাই। শুভ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“চল বাড়ি যাই”

সায় জানিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম।
——-

রাতের নিস্তব্ধতায় ঘেরা শহর। টেবিলে বসে পড়ছি। অনেক পড়া জমে গেছে। দুদিন না পড়লেই মনে হয় এক গাদা পড়া জমে যায়। তাই পড়া গুলো কমপ্লিট করার প্রয়াসে বই নিয়ে সেই বিকেল থেকে বসে আছি। মাঝে আম্মুর ডাক শুনে খেতে গিয়েছিলাম। ভাবি, রোশনি ওরা গল্প করতে ডেকেছিলো তবে যাইনি। এক মনে পড়ছি এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখলাম বর মশাইয়ের ফোন। ভিডিও কল দিয়েছে। সেই দুপুরের পড়ে আর কথা হয়নি। সত্যি বলতে আমিই রিপ্লাই দেয়নি। পড়ার সময় ফোন ঘাঁটাঘাঁটি আমার পছন্দ না পড়ার সময় শুধুই পড়া। ফোন রিসিভ করে সামনে রেখে দিলাম। আদ্র এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে আমি উত্তর দিচ্ছি। উনি নিজে নিজেই বক বক করে যাচ্ছে। আর আমি বসে বসে তার কথা শুনছি। আদ্রর কতো প্ল্যান আমাদের বিয়ে নিয়ে। উনার প্ল্যানের যেন শেষ নেই। উনি এগুলো নিয়ে বকে যাচ্ছে আর আমি শুনছি। এক সময় আদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
“বিয়েটা কি আমার একার নাকি তোরও? আমি একাই সব বলছি তুই কিছুই বলছিস না যে?”

“দেখছো তো পড়ছি”

কথা শুনে বোধ হয় আদ্রর অভিমান হলো। অভিমানী কণ্ঠে বলে উঠলো,
“ও আচ্ছা তাহলে পড়। আমি পড়ে কল করবো”

বর মশাই যে আমার অভিমান করেছে সেটা বুঝতে সময় লাগলো না। বইটা বন্ধ করে বললাম,
“তোমায় এতো বেশি বুঝতে কে বলেছে? তুমি বলছিলে শুনছিলাম তো। আমি তোমার প্লানিং শুনছিলাম। তাই কিছু বলিনি। রাগ করো কেন?”

“রাগ করব না তো কি করবো? আমি বলেই যাচ্ছি তোর কোনো রিয়েকশন নেই”

“এখন বলো শুনছি”

আদ্র ফের বলা শুরু করলো। আমি উনার কথা শুনে যাচ্ছি। উনার কতো প্লানিং বিয়ে নিয়ে। উনি বলে যাচ্ছে আমি গালে হাত দিয়ে ওনার পা*গলপনা দেখে যাচ্ছি। আরো প্রায় এক ঘন্টা কথা বলে ঘুমাতে গেলাম।
——–

নতুন দিনের সূচনা। নতুন সব কিছু। গরম ধোয়া ওঠা কফির কাপ হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। মৃদু বাতাস বইছে। সতেজ হাওয়া যাকে বলে। মনটা একদম ফুরফুরে। বুক ভরে শ্বাস নিলাম। সকাল সকাল উঠলে স্নিগ্ধ পরিবেশে মনটা ভালো হয়ে যায়। দিনটাও ভালো কাটে। কফি শেষ করে পড়া গুলো রিভাইস করে নিলাম। একেবারে তৈরি হয়ে নিচে নামছি। খাওয়া দাওয়া শেষে তিন ভাইবোন মেডিকেলের জন্য বেরিয়ে পড়লাম।

বেলা এগারোটা নাগাদ বাড়ি চলে এলাম। প্রফেসর অসুস্থ থাকায় একটা ক্লাস হয়নি। তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছি। বাড়ির সামনে এসে ভ্রু কুঁচকে গেল। আজকে আবার কে এলো বেড়িতে? ইভা আর আমি একসাথে ভিতরে ঢুকালাম। ড্রয়িং রুমের পরিবেশ থমথমে। সবাই গভীর চিন্তায় মগ্ন। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে শুভ ভাইয়া। সোফায় বসে আছে তিথি আপু আর তার বাবা-মা। ঘটনা বোঝার চেষ্টা করছি এমন সময় পাশ থেকে ইভা গুতা মেরে জিজ্ঞেস করলো,
“আজকে কি ঘটনা বনু? মেয়েটাকে আমার কেমন চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি মনে হচ্ছে!”

আমি কিছু বললাম না। ইভা মনে পড়তেই ফট করে বলে উঠলো,
“হ্যাঁ মনে পড়েছে এটা ফাইনাল ইয়ারে আপু না? ওনাকে মেডিকেলে দেখেছিলাম। কিন্তু আপু আমাদের বাসায় কি করে?”

আমি ইভার দিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললাম,
“আপু শুভ ভাইকে ভালোবাসে। তাই হয়তো বাবা-মাকে নিয়ে এসেছে”

“আর ভাইয়া?”

“ভাইয়াও হয়তো বাসে”

ইভা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো।
“ভাইয়াও? তোরা দুজন আমার সামনে দিয়ে প্রেম করলি আর আমি টেরও পেলাম না। কি গাধা আমি? আমার ভাই প্রেম করে আর আমিই কিছু জানলাম না”

“শুভ ভাই আর তিথি আপুর মাঝে প্রেমের সম্পর্ক নেই। তিথি আপু ভাইয়াকে পছন্দ করতো, পা*গলামো করতো, ভাইয়াকে শাসন করতো যেন কোনো মেয়ের সাথে কথা না বলে ইত্যাদি। ভাইয়ার সাইড থেকে কিছুই ছিলো না। এখন হয়তো পছন্দ করে, ভালোও বাসতে পারে আমি শিওর না”

ইভা আর কিছু বলল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছি। বড় আব্বু,বড় আম্মু, তিথি আপুর বাবা-মা সবাই আপুকে বোঝাচ্ছে। কিন্তু তিনি মানতে নারাজ। আপুর কথা আজকে সে বিয়ে না করে বাড়ি যাবে না। সবাই পড়েছে মুশকিলে। শুভ ভাই গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
“তিথি পা*গলমো বন্ধ করো। বাসায় যাও। বাসায় গিয়ে পড়তে বসো। সামনে ইয়ার ফাইনাল তোমার”

তিথি আপু চোখ মুখ কুচকে নিলো। উঠে বড় আম্মুর কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
“শাশুড়ি আম্মু তোমার আমাকে ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ না বলো? দেখো তোমার ছেলে আমায় কিভাবে বকছে?”

বড় আম্মু বলল,
“তোমায় আমার অনেক পছন্দ হয়েছে মা। কিন্তু শুভ কথাটা শোনো। সামনে তোমার পরীক্ষা এখন তোমার পড়ার সময়। তোমাদের বিয়েটা নাহয় পরীক্ষার পড়ে হবে”

তিথি আপু কোনো মতেই কথাটা মানতে নারাজ। কেউ তাকে বোঝাতে পারছে না। তিথি আপুর বাবা মুখ খুলল,
“ভাইজান আপনারা কিছু মনে করবেন না। মেয়ে আমার একমাত্র হওয়ার অনেক আদরের। যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে তাই একরোখা হয়ে গেছে। আপনারা কিছু মনে করবেন না, প্লিজ। তবে ওর মনটা খুবই ভালো, মেয়ে হিসেবে ভালো। নিজের মেয়ে বলে বলছি না”

“আমিও বিষয়টি বুঝতে পড়েছি ভাই। কিন্তু শুভ তো রাজি হচ্ছে না”

সবাই মিলে তিথি আপুকে বুঝাচ্ছে তবে লাভের কিছুই হচ্ছে না। অবশেষে শুভ ভাইকেই হার মানতে হলো। তৎক্ষণাৎ কাজী এনে দুজনের বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হলো। আপুর পরীক্ষা শেষে অনুষ্ঠান করে নিয়ে আশা হবে। বিয়ে শেষ হলে সবাই একসাথে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠলো। সবাই মিষ্টি মুখ করছে। শুভ ভাই আর আপুকে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হয়েছে। শুভ ভাই বুকে হাত গুঁজে গম্ভীর মুডে দাঁড়িয়ে আছে। তিথি আপু কাছে যেয়ে বলল,
“দেখলেন তো তিথি যা বলে তাই করে। অবশেষে আপনি আমার। এবার শান্তি। এখন আমি মনের আনন্দে পরীক্ষায় বসতে পারবো। ইয়াহু”

শুভ ভাই বিরবির করে বলল,
“তোমার শান্তি হলেও, আমি আমার ভবিষ্যতের শান্তি চোখের সামনে শেষ হতে দেখছি”

“কি বললেন?”

“কিছু না। এখন অন্তত মন দিয়ে পড়ো। আমার যেন শুনতে না হয় ডক্টর শুভ’র বউ খারাপ রেজাল্ট করেছে”

“নো টেনশন। দেখবেন আমি টপ করবো”

বলে টুপ্ করে শুভ ভাইয়ের গালে চুমু দিয়ে নাচতে নাচতে বেরিয়ে এলো আপু । শুভ ভাই অবাক চোখে তিথি আপুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ভালোবাসা জিনিসটা আসলেই সুন্দর, মারাত্মক সুন্দর। ভালোবাসা দেখতেও সুন্দর লাগে। চোখ জুড়িয়ে যায়।

#চলবে?