অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি পর্ব-০৮

0
2

#অনাকাঙ্ক্ষিত_অতিথি ।০৮।
#সাইরা_শেখ

রেস্তোরাঁয় পৌঁছাতে ১৫ মিনিটের মতো সময় লাগলো। সভ্যতাদের জন্য পাশাপাশি দুটো চেয়ার খালি রাখা হয়েছে। সভ্যতা চুপচাপ নিজের চেয়ার টেনে বসলো।

নম্রতা স্বল্পস্বরে প্রশ্ন করে, ‘আসতে এত দেরি হলো কেন? কোথায় ছিলি এতক্ষণ? ফোনটাও সঙ্গে আনিসনি। কল করেছিলাম, আম্মু রিসিভ করলো।’

সভ্যতা চোখমুখ শক্ত করে বলল, ‘পরে বলবো,মেজাজ খারাপ আছে, আগে একটু ঠান্ডা হই।’

রিকশায় আসার সময় পুরো ঘটনা মিলিয়েছে সভ্যতা। এটাও বুঝতে পেরেছে মাশহুদ যা করেছে, সবটাই তার বিচক্ষণতা। সে সভ্যতার উদ্দেশ্য বুঝেই কিছু না বলে, নাটক করে, সভ্যতাকে বোকা বানিয়ে এ পর্যন্ত নিয়ে আসলো। সভ্যতা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, সময়-টা খারাপ যাচ্ছে। পরিচিত মানুষগুলো তখন সামনে না থাকলে পরিকল্পনা সফল হতো। ব্যাপার নাহ্, আজ প্রথমদিন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি আরও চারদিন থাকবে, তারপর যাবে। এই চারদিন সহ্য করার পাশাপাশি অল্পস্বল্প শোধ তুলতে কার্পণ্য করবে না সভ্যতা।

সভ্যতা থাই স্যুপ নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই মাশহুদ দ্রুত সভ্যতার হাত ধরে বসলো। সভ্যতা ভড়কে যায়, মাশহুদ গম্ভীরকন্ঠে বলল,
‘তোমার চিংড়িতে এলার্জি আছে। স্যুপ খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে, তোমাকে নিয়ে হসপিটালে দৌড়াবে কে?’

শাহরিন বাদে বাকি সবাই ঠোঁট চেপে হাসছে। সভ্যতা এবার তার পছন্দের বিরিয়ানির প্লেট নিল। মাশহুদ এবার প্লেট টেনে নিল। সভ্যতা রেগে বলল,
‘এবার কি?’
‘এত খেতে পারবে না। অর্ধেক আমি নিচ্ছি।’
সভ্যতা হাসার চেষ্টা করে, ফিসফিসিয়ে বলল,
‘আপনার মনে হয় না, এবার বাড়াবাড়ি করছেন? গত এক ঘন্টা ধরে যথেষ্ট উপকার করেছেন, আর প্রয়োজন নেই।’

মাশহুদ সভ্যতার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে সভ্যতার প্লেটে তুলে দিচ্ছে।সভ্যতার রাগ বাড়ছে। অসহ্য লাগছে এই লোক দেখানো আদিখ্যেতা। শাহরিন হঠাৎ বিভ্রান্ত চোখে তাঁকিয়ে সভ্যতাকে প্রশ্ন করল,
‘তোমার হাতের রিং-টা?এটা তো আসার সময় ছিল না।’
সভ্যতা কিছু বলার আগেই মাশহুদ বলল, ‘প্রপোজাল রিং।’
‘কিন্তু…’
‘কিন্তু কি? তোমার কোনো সমস্যা আছে নাকি সভ্যতার রিং নিয়ে?’
নম্রতা ও মাহিন বাদে বাকিরা সমস্বরে বলল, ‘সমস্যা থাকবে কেন? এটা তো গুড নিউজ। অবশেষে আমাদের সভ্যতা বিয়েতে রাজি হয়েছে।’

সভ্যতা আঙ্গুল তুলে বলল, ‘এক মিনিট.. আমি কখন রাজি হলাম..’
মাশহুদ ফোনের দিকে চোখ রেখে নিচুস্বরে বলল, ‘তোমার আম্মু ফোন করছেন। তুমি আমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছ বা করছ সে সম্পর্কে নাকি আঙ্কেল জানতে চেয়েছিলেন বিকালে।আমি কি কলটা রিসিভ করবো সভ্যতা?’

সভ্যতা মাশহুদের দিকে তাঁকিয়ে দাঁত বের করে মেকি হাসে। এরপর বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, শাবাশির ভঙ্গিতে বলল,
‘আপনি আসলেই একজন বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ পুরুষ! এখনকার মতো মুখে তালা দিচ্ছি কিন্তু বাড়িতে ফিরে আপনাকে এর পাই-টু-পাই হিসেব চুকাতে হবে মিস্টার পয়সা-ওয়ালা হ্যান্ডসাম। প্রতিটি অ্যাকশনের রিয়্যাকশন পাবেন। যাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি।’
প্রত্যুত্তরে হাসলো মাশহুদ।

নম্রতা ভ্রঁকুটি করে চেয়ে আছে সভ্যতা ও মাশহুদের দিকে। মাশহুদ এসে ধরে সভ্যতার অতিরিক্ত খেয়াল রাখছে। কোন খাবার সভ্যতা পছন্দ করে, কোনটা করে না, সভ্যতার কোন খাবারে সমস্যা হয়, সেসব লক্ষ করার পাশাপাশি গ্লাসে পানি ঢেলে দেওয়া,টিস্যু পেপার এগিয়ে দেওয়া, চামচ ঠিক করা, সবকিছু সে একাই করছে।
সভ্যতার প্রতি মাশহুদের এই প্রেমময় আচরণ সহ্য হচ্ছে না শাহরিনের।কাঁটাচামচ দিয়ে সে লেগপিস নিচ্ছিল, হঠাৎ চামচ উল্টে ওর হাতে ঢুকে যায়, সেটা দেখে সভ্যতার বি’ষম লাগে। সবাই শাহরিনের র’ক্তাক্ত হাত দেখে ওর কাছে ছুটে গেল, কেবল মাশহুদ ছাড়া। সে পানি নিয়ে সভ্যতাকে পানি পান করাতে ব্যস্ত, টিস্যু দিয়ে সভ্যতার মুখ মুছে দিচ্ছে।শাহরিন সেটা দেখে টিস্যু হাতে চেপে ধরে বেরিয়ে যায়। মিতা মাশহুদের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

‘মেয়েটার সামনে এমন করার কি খুব দরকার ছিল?’

মাশহুদ গম্ভীরগলায় সভ্যতাকে বলল, ‘একটু রেস্ট নিয়ে তারপর খাও।’

মিতা মাশহুদের ব্যবহার সম্পর্কে অবগত তাই বুঝতে পারলো শাহরিনের ব্যাপারে মাশহুদ কোনো মন্তব্য করবে না। তাই মাশহুদকে এ বিষয়ে কিছু বলা, না বলা দুটোই সমান। সবার খাওয়া শেষ দেখে সভ্যতা না খেয়েই উঠে যাচ্ছিল। মাশহুদ বাঁধা দিয়ে বলে,

‘ওরা আগে যাক। তুমি বসো, আগে খাওয়া শেষ করো। তারপর যাব আমরা।’

নম্রতা সভ্যতার কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘তুই ধীরেসুস্থে খেয়ে মাশহুদের সঙ্গে আয়। আমরা এগোচ্ছি।’

সবাই চলে গেলে সভ্যতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিশ্চল ভঙ্গিতে বসে রইল। মাশহুদ সেটা লক্ষ করে,পাশ ফিরে সভ্যতার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করলো,

‘কি সমস্যা?’

‘শাহরিন আপু সুন্দর, মার্জিত, চাকরি করে, সবকিছুর খেয়াল রাখতে জানে।আপনার উচিত এমন কাউকে বিয়ে করা যে আপনাকে পছন্দ করবে, ভালোবাসবে। আমি সে নই..’

‘তুমি আমাকে বিয়ে না করলে আমি শাহরিনকে বিয়ে করবো এমন ভুল ধারণা মাথায় এনো না।উদ্দেশ্য কেবল ‘বিয়ে করা’ হলে লামিয়াকেই করতে পারতাম। তাহলে বাড়ি ছেড়েও যেতে হতো না।’

সভ্যতা বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘আমাকে-ই কেন বিয়ে করতে চান? নিশ্চই যৌক্তিক কোনো কারণ আছে, সেই কারণ-টা কি?’

মাশহুদের সুস্পষ্ট জবাব ‘কারণ তুমি অন্য মেয়েদের মত নও। কিছুটা টমবয় টাইপের, তাই..’

অপমানটা হজম করতে পারলো না সভ্যতা। মাশহুদের বাক্যে সমগ্র শরীর যেন ক্রোধে জ্ব’লে উঠল। মাশহুদ সকৌতুকে হেসে বলল,

‘মাসখানেক আগে কোনো ঘটনা ঘটিয়েছিলে নাকি? একটু মনে করার চেষ্টা করো। উত্তর পেয়ে যাবে।’

সভ্যতা রেগে গেল মাশহুদের কথা বলার ধরণ দেখে। মাশহুদ মুচকি হেসে বলল,’ট্রাই ইট ওয়ান্স।’ সভ্যতা এবার মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি করে। মাস খানেক আগে কি ঘটেছিল? যার দরুণ মাশহুদ ওকে বিয়ে করার জন্য এতটা উতলা হচ্ছে। সভ্যতার একটি ঘটনা মনে পড়লো, কিন্তু সেই ঘটনার সাথে মাশহুদ কিভাবে সম্পৃক্ত?

____________

গতমাসে বাবার চেক-আপের জন্য হসপিটালে যেতে হয়েছিল। বাবা ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলে সে ওয়েটিং এরিয়ার এসে বসে। সম্মুখপানে টিভি চলছে। টিভিতে ‘আজকের খবর’ দেখাচ্ছে। সভ্যতা মনোযোগ দিয়ে নিউজ দেখছিল, এমন সময় এক ভদ্রলোক পাশে এসে বসলেন।
ফোন কানে চেপে ধরে নিঃশব্দে কাঁদছেন তিনি। যাকে কল করছেন, সে বোধ হয় ফোন ধরছে না। সভ্যতা তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে তার স্ত্রী সন্তান জন্মদানের পর, র’ক্তক্ষরণজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এবং দ্রুত র’ক্ত না পেলে তার স্ত্রীর বাঁচার সম্ভাবনা কম।তারা ডোনার ঠিক করে রেখেছিলেন কিন্তু সে এখনো আসছে না। ব্লাডব্যাংকে এই মুহূর্তে ব্লাড নেই, পরিচিত যারা আছেন তাদের আসতেও বেশ সময় লাগবে। সভ্যতা নরম গলায় প্রশ্ন করে,
‘ব্লাডগ্রুপ কি?’
‘ও নেগেটিভ।’ বলেই তিনি ব্যস্ততার সঙ্গে উঠে চলে গেলেন।

যাদের ‘ও’ নেগেটিভ ব্লাডগ্রুপ তারা কেবল এই গ্রুপের ব্লাডই নিতে পারে। সভ্যতারও এই একই ব্লাডগ্রুপ। তাই কিছুটা চিন্তিত হলো সে।বাবা ফিরতেই সভ্যতা মৃদুস্বরে বলল,
‘আব্বু? একটা মেয়ের র’ক্তের প্রয়োজন। ইমিডিয়েটলি ব্লাড দিতে হবে।’
‘কোন মেয়ে মামণি? আর তোকে কে বলল?’
‘একটু আগে.. ওনার স্বামী ছিল এখানে। বেবি হওয়ার পর র’ক্তক্ষরণ নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে।এখন ব্লাড পাচ্ছে না।’
বাবা সভ্যতার কথার ধরণ জানেন। তাই সরাসরি প্রশ্ন করলেন, ‘ব্লাডগ্রুপ কি?’
‘ও নেগেটিভ।আব্বু আমি কি ওনাকে ব্লাড দিতে পারবো? প্লিজ আব্বু,একটু দেখো না দেওয়া যায় কিনা।’
‘কিন্তু..’
‘সবকিছু জানার পর ওনার জন্য কিছু না করে চলে গেলে খারাপ লাগবে আব্বু।যদি ওনার কিছু হয়ে যায় তাহলে সবসময় মনে পড়বে আমি চাইলেই একজনকে র’ক্ত দিয়ে সাহায্য করতে পারতাম, বাঁচাতে পারতাম কিন্তু তাকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে চুপচাপ চলে এসেছি। তুমি বা আম্মু কখনও আমাকে কারোর বিপদ দেখে চুপ থাকতে শেখাওনি। তাই এভাবে চলে যেতে ইচ্ছা করছে না। যদি ওনারা ব্লাড না পায়? আমি ওই আপুটাকে ব্লাড দিতে চাই আব্বু। যাবে প্লিজ?’
‘আজ অবধি তুই কিছু বলেছিস আর আমি শুনিনি এমন হয়েছে? এবার চল, আগে গিয়ে দেখতে হবে তুই ব্লাড দিতে পারবি কিনা.. না পারলে ওদের দেখেই বাড়ি ফিরবো। ঠিক আছে?’
‘হুম।’

বাবার সঙ্গে অপারেশন থিয়েটারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল সভ্যতা। এক ভদ্রমহিলা সমানতালে পাইচারি করছেন, আঙ্গুল গুনে দোয়া দরুদ পড়ছেন। একটি ছেলে উপস্থিত হয়ে বলল,
‘তুমি চিন্তা করো না মা। প্রীতির কিচ্ছু হবে না, ফাইয়াজ গেছে তো, র’ক্তের ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে।’
সভ্যতার বাবা এগিয়ে এসে বললেন,’ব্লাডের ব্যবস্থা হয়েছে?’
ছেলেটি বলল, ‘না, আপনারা?’
‘পরিচয় নিয়ে পরে কথা বলা যাবে।’
সভ্যতাকে দেখিয়ে, ‘আমার মেয়ে সভ্যতা। ওর-ও ‘ও’ নেগেটিভ ব্লাডগ্রুপ। একটু আগে পেশেন্টের স্বামীর কাছ থেকে পেশেন্টের কথা শুনে এখানে এসেছে। চিন্তা করবেন না সবকিছু নরমাল থাকলে ও ব্লাড দিতে পারবে।’
একজন নার্স এসে বলল, ‘আপনারা ব্লাড পেয়েছেন? এখনই একব্যাগ ব্লাড দেওয়া প্রয়োজন।’
সভ্যতার বাবা সভ্যতাকে দেখিয়ে বললেন,’আমার মেয়ে ব্লাড দিতে চায়, ওকে নিয়ে যান।’
নার্স সভ্যতার বয়স, ওজন, ব্লাড ডোনেট করার শেষ তারিখ, এ ধরণের কিছু প্রশ্ন ও তাপমাত্রা পরখ করে নিল। সবকিছু স্বাভাবিক থাকায় ব্লাড দিতে পারবে সভ্যতা।ব্লাড দেওয়ার সময় সভ্যতার তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। একব্যাগ র’ক্তের জন্য ১০-১২ মিনিট চুপচাপ শুয়ে, গুণগুণিয়েছে সে।
সভ্যতার মনে পড়ল ওর ক্লাসমেট অথৈ ব্লাড টেস্টের সময় সামান্য সুঁই দেখে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল, আজ সভ্যতাকে এভাবে দেখলে কেমন রিয়্যাকশন দিত? সেটা দেখার জন্য নার্সকে দিয়ে দ্রুত একটি ছবি তুলিয়ে নিল সভ্যতা।

______________

সেদিন কোচিং-য়ে পরীক্ষা থাকায় ব্লাড দেওয়ার পরপরই বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরে এসেছিল সভ্যতা। প্রীতি কিংবা বাচ্চাটিকে দেখার সুয়োগও পায়নি। তবে প্রীতির মা ও দাদির সঙ্গে কিছুটা আলাপ হয়েছিল।

মাশহুদ প্রশ্ন করলো, ‘মনে পড়েছে কিছু?’
‘একটি ঘটনা মনে পড়েছে। হসপিটাল নিয়ে কিন্তু আপনার সাথে ওনাদের কানেকশন কি সেটা বুঝতে পারছি না।’

‘তুমি যাকে র’ক্ত দিয়েছিলে সে আমার ছোটবোন প্রীতি। সেদিন হসপিটালে, তোমার ব্যবহার এবং পরিবারিক শিক্ষা দেখে মুগ্ধ হয়ে আমার মা ও দাদি তোমার মতো কাউকে বাড়ির বউ করার ইচ্ছাপোষণ করছেন। তবে দাদি যে কারণে তোমাকে অতিরিক্ত পছন্দ করেছেন, সেই কারণ-টা বাকিদেরও বেশ পছন্দ হয়েছে।’

সভ্যতা হতভম্ব হয়ে গেল,’মানে?’

‘তুমি এক পেশেন্টের বাড়ির লোকের সাথে তর্ক জুড়ে দিয়েছিলে, তাদের অন্যায়-অনিয়ম করা দেখে। দাদি সেটা দেখেছেন। তিনি এমন প্রতিবাদী মেয়ে পছন্দ করেন। তাছাড়া তিনি তার ছোটনাতির(পৌত্র) জন্য এমন ঝগড়ুটে নাতবউ-ই খুঁজছিলেন। আমাকে শা’য়ে’স্তা করার খুব শখ তার। তাই তোমাকে এখন হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না।’

সভ্যতা চিন্তিতকন্ঠে বলল,’কিন্তু অপরিচিত থেকে বিয়ে অবধি গড়ালো কি করে এটা?’ পরমুহূর্তে ক্রোধিতকন্ঠে বলল,’সবথেকে বড় কথা, আমাকে এসবের কিছু-ই জানানো হয়নি.. এমনটা কি করে করতে পারলো সবাই?’
‘কুহুর বিয়ের দাওয়াত দিতে গিয়ে মামাদের (মিতাদের) বাড়িতে তোমার বাবার সঙ্গে আমার মায়ের দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিল।পরিচয়,বিয়ের কথাবার্তা সেখান থেকেই শুরু হয়েছে। আমি তখন দেশের বাইরে ছিলাম তাই জানানো হয়নি। আর দেশে ফেরার পর আমি জানাতে নিষেধ করেছিলাম।কারণ আমি নিজে, তোমাকে সবকিছু বলতে চেয়েছিলাম।’

সভ্যতা পানি পান করে দ্রুততার সাথে বলল, ‘আমি বাড়ি যাব।বাড়ি গিয়েই আপনার মা-বোনকে ফোন করবো। আমি র’ক্ত দিয়ে তাদের উপকার করলাম তার বিনিময়ে তারা আমার মতো খাঁটি রত্নকে আপনার মতো একটা ছেলের গলায় ঝোলাতে চাচ্ছেন? আজকাল মানুষ এভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে? উঠুন, উঠুন, আমাদের এক্ষুনি বাড়ি ফিরতে হবে।’

মাশহুদ হতাশ গলায় বলল, ‘তুমি কি আমাকে কখনই বিশ্বাস করবে না?’

‘বিশ্বাস তো পরে, আপনাকে তো সহ্যই হচ্ছে না। একটা মানুষ একই সাথে, এত সুন্দর, চালাক, স্বার্থপর, ডেভিল মার্কা হয় কি করে? আপনাকে বিয়ে করলে সারাজীবন মেয়েদের বদদোয়া নিতে হবে। শাহরিন, লামিয়া আপুর মতো মেয়েদের হিংসার আগুণে জ্ব’লতে হবে।’

কিছুটা থেমে সভ্যতা পুনরায় বলল,’তাছাড়া আমি যেমন ছেলে চাই, আপনি তেমন নন। যদি এতই বিয়ের শখ থাকে, তাহলে আগে তেমন হয়ে দেখান। তারপর ভেবে দেখবো।’

মাশহুদ টিস্যুপেপার এগিয়ে দিতেই ভ্রুঁ কুঁচকাল সভ্যতা। পকেট থেকে কলম বের করে মাশহুদ গম্ভীরগলায় বলল,’তোমাকেও বিশ্বাস করা কঠিন। পরে অস্বীকার করতে পারো। তাই প্রুফ রাখতে হবে। এই কাগজে লিখে দাও, আমি যদি তোমার পছন্দ মতো হই, তুমি আমাকে বিয়ে করবে।’

সভ্যতা বিস্মিত হবার ভান করে বলল,’আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন না?যদি বিশ্বাসই করতে না পারেন তাহলে বিয়ে করে কি লাভ? আমার পছন্দের ছেলের যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন,সেই গুণের তালিকায় এক নাম্বারে আছে বিশ্বাস। অথচ সেটাই নেই আপনার। তাই আপনি সরাসরি বাদ।আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।’

‘অর্থাৎ তুমি অবিশ্বাস করতে পারবে কিন্তু আমি পারবো না। তাই তো?’

‘একদম তাই।’

মাশহুদ মুচকি হাসে। অবশেষে দাদির মনের মতো মেয়ে পাওয়া গেল। এই মেয়ে মাশহুদকে প্রচণ্ড জ্বালাবে সেটা এখন থেকেই বোঝা যাচ্ছে।

চলবে…