বিষচন্দ্রিমা পর্ব-০১

0
7

#বিষচন্দ্রিমা
#পর্ব১
#তামান্না_আনজুম_মায়া

“একটা ধর্ষ*ক কে কোনো মতেই বিয়ে করতে পারবো না আমি”!
তরীর কথায় যেনো রুমের মধ্যে একটা ছোট খাটো বা*জ পড়েছে।রুমের মধ্যে বসে আছে তরীর ছোট চাচী আর বড় ফুফু।তরীর বড় ফুফু নাজমা বেগম তরীকে কষে একটা চ*ড় মা রতেও দেরি করেনি।

,,বেয়া দব, বেহায়া মেয়ে বিয়ের একঘন্টা আগে এসে কোন ধরনের নাটক শুরু করে দিয়েছিস?নিজের তো কোনো মানসম্মান নেই আমার বাবার সম্মান টা শেষ করতে এভাবে উঠে পড়ে লেগেছিস কেনো?

কষ্টে তরীর চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসলো,নিজের দাদুর কথা রাখতে পাত্র কে তা না জেনেই বিয়েতে মত দিয়ে দিয়েছে সে।এ বাড়িতে এই একটি মানুষই তাকে ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন,ছোট থেকেই বাবা মা কাউকে পায়নি। তার আজও সেই আবছা দৃশ্য চোখে ভাসে যখন এই ছোট্ট তরী কে রেখে তার মা না ফেরার দেশে চলে গেলো তার কিছুদিন পর তার বাবাও তাকে রেখে কোথায় যেনো চলে গেছে,এখন তরীর উনিশ বছর বয়স,এই এতো বছরে তার বাবা একবার ও তার খোঁজ নিতে আসেনি, সে বেঁচে আছে নাকি ম রে গেছে দেখার বা জানার কি একবারও ইচ্ছে হয় না বাবা নামক সে মানুষটার।তাকে একা করে কেনো চলে গেলো সে, অভিমানের মাত্রা পালা দিয়ে বেড়েই চলেছে বাবার প্রতি।
তরী কাঁপা কন্ঠে বললো

,,প্লীজ ফুপ্পি একটা বার আমি দাদুর সাথে কথা বলতে চাই।এই ছেলেকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আগে এর পরিচয় জানলে কখনো বিয়েতে মত দিতাম না আমি!

নাজমা বেগম তেতে উঠলেন,ঘোর আপত্তি জানিয়ে বললেন
,,বিয়ের আগে এ ঘর থেকে তুই কেনো তোর ছায়াও বের হতে পারবে না।
কেনো বিয়ে করতে চাস না তুই,এরকম ছেলে পাবি আর এমপি নিজে এসেছে ছেলের বউ হিসাবে তোকে চাইতে।তোর কি রাজ কপাল আমাদের মেয়েদের বললে, তোর মতো এতো নাটক করতো না।আফসোস এমপি জয়নাল শেখ তার পুত্র বঁধু হিসেবে তোকে পছন্দ করেছে।আর তুই হাতে পাওয়া ধন পায়ে ঠেলে দিচ্ছিস।কি দেই নি তোকে আমরা?আমরা সবাই মিলে তোকে বড় করেছি তোর বাপ তো তোকে ফেলে কবেই বেপাত্তা হয়ে গেছে।জন্মের চার বছর না যেতেই তো মা টা কে
খে য়ে ফেলেছিস,তাও আমার বাবা তোকে কম ভালোবাসা দেন নি।সবার চাইতে উপরে সব সময় তোকে রাখতো।আজ তার সম্মানের কথা তুই একবার ও ভাববি না।তুই এতো স্বার্থপর কেনো রে তরী?কোন সাহসে তুই ফারাবী কে ধর্ষ ক বলছিস?কোনো প্রমান আছে তোর কাছে।আর প্রমান থাকলেও কিছু করার নেই,ছেলেরা বিয়ের আগে একটু আকটু ওরকম করেই থাকে ঘরে বউ আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।যদি নিজের দাদুকে এক ফোঁটাও ভালোবেসে থাকিস তো তার মূল্য তুই আজ বিয়ে করে দিবি।প্রমান করবি তুই তোর দাদুর জন্য সব করতে পারিস!
এবার মুখ খুললেন তরীর ছোট চাচী মাহমুদা।

,,তরী মা!এভাবে বলছিস কেনো বলতো জয়নাল শেখ খুবই ভালো মানুষ তোর দাদুর ছাত্র ছিলেন তিনি,তার ছেলে ফারাবী ও অনেক ভালো ছেলে। আমি তো ছবি ও দেখেছি দেখতে শুনতেও অনেক সুদর্শন।বাড়ি ভর্তি মেহমান মা, আজ বিয়েটা না হলে তোর দাদুর অসম্মান হবে,চেয়ারম্যান বাড়ির এতোদিনের অর্জিত সম্মান এভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিস না!তুই বললে বাবা কোনো কিছু চিন্তা না করে বিয়ে ভেঙ্গে দিবে কিন্তু পরে কি হবে ভেবে দেখেছিস।বাড়িতে তো তোর আরো ভাই বোন আছে তাদের বিয়ের কথা উঠলে তখন সমাজের মানুষ থু থু করবে।লক্ষ্মী মেয়ে বিয়ের জন্য তৈরি হয়ে যা পাত্র পক্ষ এলো বলে।

তরী খাটের এক কোনে বসে চোখ বুজলো।চোখের অশ্রু কণা গুলো যেনো বাঁধ মানছে না।চোখের পটে ভেসে উঠছে ফারাবী নামক মানুষটার সেই দিনের করা
নোং রা স্পর্শ গুলো।কি করে এই মানুষ টাকে স্বামী হিসেবে কল্পনা করবে তরী যার জীবনের উনিশটা বসন্ত সে জমিয়ে রেখেছে স্বামী নামক মানুষটার জন্য বিয়ের পরের পবিত্র ভালোবাসার আলিঙ্গনে নিজেকে জড়িয়ে নিতে,এক পুরুষে আসক্ত হতে। নিজে কখনো কোনো ছেলের পাশ ঘেঁষেনি।তবে তার সাথে কেনো এমন হলো?কেনো আজ সময়টা এতো নিষ্ঠু র।কেনো তাকে এমন এক বিভীষিকা ময় পরিস্থিতিতে পড়তে হলো।এই ছোট জীবনে তো কম কিছু দেখেনি, বাবা মা ছাড়া চলাটা তো চারটে খানি কথা নয়।নিজের দাদুর কথা ভেবেই বুকটা কেমন হু হু করে উঠলো তার।এই মানুষ টা ছিলো বলেই তো তার জীবনটা এতো সুন্দর। সে মানুষ টাকে কিভাবে শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য কষ্ট দিবে।আর ভাবতে পারছে না তরী দুপাশে মাথা চেপে ধরে বসে আছে।
আজ সিদ্ধান্ত নিতে সে দ্বিধায় ভুগছে।

******
আম্মু, আম্মু,,,আব্বুর সাহস কি করে হলো আমার অনুমতি না নিয়ে, বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার?আমাকে একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন ও মনে করলো না।আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি,পড়াশোনাই তো শেষ হয়নি এখনো।উনি নিজের সিদ্ধান্ত আমার জীবনে এভাবে চাপিয়ে দিতে পারে না।আমি কিছুতেই এই বিয়ে করবো না।এটাই আমার শেষ কথা।

জয়নাল শেখ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলেন ছেলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে পাঞ্জাবির শেষ বোতামটা আটকে চোখের চশমাটা ঠেলে ঠিক করে সোফায় বসতে বসতে বললেন।
,,ফারাবী উপর থেকে শুনলাম তুমি কিছু বলছিলে।

ফারাবি চুপ করে গেলো,বাবার মুখের উপর কথা বলার মতো সাহস তার বরাবরই আছে।শুধু একটা কারনে তার মুখে কুলব আটকে থাকতে হচ্ছে।এমন একটা কাজ যে করবে সে এটা নিজেও কল্পনা করতে পারেনি, সেখানে তার বাবা ওই বিষয় টা নিয়ে তাকে কথায় কথায় থ্রে ট দিচ্ছে।তাই সে দাঁতে দাঁত চেপে সব হজ ম করছে।কিন্তু এবার বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেললেন তিনি,শেষে কিনা কোন না কোন মেয়ের সাথে বিয়ে ফিক্সড করে ফেলেছে।বিয়ের দিন সকালে এসে জানিয়ে দিয়ে গেলো দুপুরে তোমার বিয়ে তৈরি থেকো।আগে জানলে বাড়িতেই ফিরতো না।

,,আসলে আব্বু,,না মানে বিয়ে এখন,করতে চাই না।

,,তোমার কথায় সব হবে নাকি? মেয়ের বাড়িতে আয়োজন হয়ে গেছে তোমার জন্য একজন মেয়ের সম্মান নষ্ট হোক তা আমি চাই না।তোমার তো আবার কোনো মেয়ের সম্মান থাকুক বা না থাকুক তাতে কিছু যায় আসে না!বিয়ের পর কি হবে না হবে তা তোমায় ভাবতে হবে না তোমার কাজ শুধু গিয়ে ভদ্র ছেলের মতো কবুল বলে বিয়েটা শেষ করা।

ফারাবী রক্ত চক্ষু নিয়ে বাবার দিকে তাকালো,রেগে বললো
,,বাবা তুমি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছো।তুমি ভালো করেই জানো এসব বিয়ে টিয়েতে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
,,তা থাকবে কেনো বিয়ে ছাড়াই তো তুমি রঙ্গ লী লা করে বেড়াও।
,,বাবা তুমিও জানো আমিও জানি ওইদিনের ওইটা শুধুই একটা ভুল ছিলো।
,,এভার ভুলের মাশুল দাও।
,,না মানে না!
ফারাবীর চিল্লানিতে পুরো বসার ঘর কেঁপে উঠেছে, জয়নাল শেখ নির্বাক তিনি জানতেন তার ঘাড়ত্যাড়া ছেলে এরকমটাই করবে।তিনি গলা উচিয়ে স্ত্রীকে ডাকলেন যা দেখে ফারাবী কিছুটা চুপসে গেলো।মায়ের নেওটা বলা চলে তাকে।তার বাবা যে তাকে পুরোপুরি ফাঁ সিয়ে দিতে চাচ্ছে তা বুঝতে আর বাকি রইলো না।

ফারাবী গটগট করতে করতে উপরে উঠে গেলো।গিয়েই এমন জোরে দরজা ধাক্কা দিয়েছে যেনো দরজাও বলবে

,,ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি!

ফারাবী চলে যেতেই বসার ঘরে আসলের ফারাবীর মা সায়েবা শেখ।তার চোখে মুখেও লেগে আছে অদ্ভুত হাসি।স্বামীর উদ্দেশ্য বললো

,,যাই বলো মেয়েটাকে কিন্তু আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।এরকম একটা মেয়ে কেই আমার ফারাবীর সাথে মানাবে।কিন্তু এভাবে কাউকে না জানিয়ে তুমি ছেলের বিয়ে দিচ্ছো এটা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি আমার একটা মাত্ররো ছেলে।

জয়নাল স্ত্রীর মনের কথা বুঝলেন,বুঝানোর সুরে বললেন
,,তুমি তো সবই জানো সায়েবা সামনে আবারও নির্বাচন এমনিতেই একবার জিতে যাওয়া নির্বাচন আবার করতে হচ্ছে শত্রুের তো অভাব নেই এখন লোক জানাজানি করতে গেলে দেখা যাবে শত্রুরা বিয়ের অনুষ্ঠানের মাঝেই কোনো না কোনো অ ঘটন ঘটিয়ে দিবে।ফারাবীর পড়াশোনা শেষ হোক পরে সবাইকে জানিয়ে বড় করে অনুষ্ঠান হবে তার আগে ছেলে মেয়ে দুজন দুজনকে চিনুক জানুক নিজেদের মতো করে গুছিয়ে নেক সব কিছু।

,,তা যা ভালো মনে করো।তা তোমরা বের হবে কখন দুপুর হয়ে এসেছে।আমি যাই তোমার তেঁদড় ছেলেকে তৈরি করিয়ে আনি।

শেখ পরিবারের কোনো সদস্যই এই বাড়িতে বর্তমানে নেই,এখানে সচারাচর কেউই আসে না শহরে তাদের যৌথ পরিবারের সবাই আছে,ছেলের বিয়ের কথা তিনি কাউকে জানায়নি স্ত্রী ছাড়া।বাড়িতে কয়েকজন গার্ড আর পার্টি অফিসের কিছু ছেলে ছাড়া কেউ নেই।

ফারাবী শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পড়ে হাতা গোটাতে গোটাতে নিচে নামছেন।সায়েবা ছেলে কে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিচ্ছেন।জয়নাল শেখ ছেলেকে দেখে মনে মনে মাশাআল্লাহ বললেন,ছেলেকে দেখেই কেমন নেতা নেতা লাগে,তার ভবিষ্যত উত্তরসূরী হিসেবে ছেলেকে তিনি মনে প্রানে আগেই মন্ত্রীর আসনে বসিয়ে দিলেন।

জয়নাল হক গাল এলিয়ে হাসলেন,ছেলের দিকে চেয়ে চোখ টিপ মেরে বললেন

,,আমাকে ছেলেকে আজ যা জোস লাগছে না সায়েবা,বউমা আমার অ্যা টাক ফ্যা টাক না করে ফেলে।

সায়েবা বিরক্তি সুরে বললেন
,,তুমি কি ভালো হবে না জীবনে ছেলেকে এসব কথা কোন বাপ বলে!

ফারাবী বাবার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো।

জয়নাল বের হতে গিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন
,,দোয়া করো প্রিয়তমা তোমার ছেলের বউ নিয়ে যাতে আ স্ত ফিরতে পারি।

***
বর এসেছে বর এসেছে শব্দে মুখরিত পরিবেশ।বাড়িতে হৈচৈ পড়ে গেছে।
খাটের এক পাশে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে জানালা মুখি হয়ে বসে আছে তরী,এক সময় জানালার গ্রীলে মাথা এলিয়ে দিলো,পড়নে হালকা কাজের সবুজ রঙের লাল পাড়ের কাতান শাড়ি।শাড়িটি তার ফর্সা শরীরে বেশ মানিয়েছে,সোনার ঝুমকো জোড়া চকচক করছে।কপালের মাঝ বরাবর শোভা পেয়েছে কারুকার্য সম্পন্ন টিকলি।হাতে মোটা কাঁকন গলা ভর্তি গহনা।বিয়ে নিয়ে কতো শতো স্বপ্ন ছিলো তার, কিন্তু আজ যেনো সব কিছু বি ষাক্ত মনে হচ্ছে।এই সাজ এই রূপ সে মেনে নিতে পারছে না।সে হাজার চেয়ে কাঁদতে পারছে না।কেমন গলায় দলা পাকিয়ে আছে সবকিছু না পারছে উগরে দিতে না পারছে গিলতে এ কেমন অসহনীয় অনুভূতি। হতাশ ভঙ্গিতে বাহিরের উঠোনের পানে তাকিয়ে আছে বিবর্ণ চোখে।শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরিহিত ছেলেটিকে এগিয়ে আসতে দেখলো গেইট পেরিয়ে।দোতলা থেকে এতোটাও স্পষ্ট নয় সে মুখ,তবুও এই আবছা অবয়বের সুদর্শন যুবকটিকে তার স হ্য হচ্ছে না।এই ছেলেটির
কুৎ সিত মনোভাবের রূপ বার বার ভেসে উঠছে মন বাগিচায়।এমনটা তো হওয়ার ছিলো না।বরের মুখ দেখলে যেখানে কনেরা লাজে রাঙা হয়ে মুখ লুকায় আঁচলে সেরকম কিছুই কেনো তার সাথে ঘটছে না।তার বেলায় নিয়ম গুলো এতো কঠো রতা দেখাচ্ছে কেনো?কেনো কেনো কেনো?এতো তি ক্ত অনুভূতি তাকে যে ভিতরে ভিতরে শেষ করে দিচ্ছে তা কি কেউ জানে!

দরজা ঠেলে ভিতরে আসা রমনীর কন্ঠস্বরে চিন্তার রেশ কাটলো তরীর।ঘরে একে একে ছুটে আসছে তরীর সকল মেয়ে কাজিনরা।সবার চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে পাত্র দেখে তারা সন্তুষ্ট।
হাবিবা,মাইমুনা,সামিয়া,সুপ্তি এক প্রকার হুমড়ি খেয়ে পড়েছে বিছানার উপর।সামিয়া সুর তুলে বললো

,,ছেলেটা যা কিউট কি বলবো আপু।দুলাভাই না হলে নিশ্চিত আমি লাইন মারতাম!তোমার ভাগ্য টা দেখে এতো ডেসিং একটা ছেলেকে না চাইতেই পেয়ে যাচ্ছো।

তা যা বলেছিস সামিয়া ছোট বোনের জামাইয়ের উপর তো আমি নিজেই পিছলা খেয়ে পড়ে গেছি।হায় কিতনা হ্যান্ডসাম!মন তো চায় টুপ করে গিলে ফেলি!

সুপ্তি নাক মুখ কুঁচকে বলে

,,ছি!ছি! হাবিবা আপু কি রকম অশ্লী ল কথাবার্তা বলো!

এই এই মাইমুনা তুই ছোট মানুষ এখান থেকে যা তো।

তরী গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,তার মস্তিষ্ক ফাঁকা অনুভুতি শূন্য। এসব কথায় সে বেশ বিরক্ত হচ্ছে।এতো পছন্দ হলে নিজেরা বিয়ে করে নিতি আমি বেঁচে যেতাম।মনে মনে কথাটা বলে চোখ বন্ধ করে নিলো।

তার বড় চাচী এবার ঘরে প্রবেশ করতে করতে বললো

,,এই তরীর ঘোমটা টা টেনে দে তো হাবিবা,কাজি সাহেব এসেছে।

তরীর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হতাশার ছাপ,নিজে থেকেই টেনে নিলো শাড়ির আঁচল, আজ যে তাকে বিয়ে করতেই হবে।এটাই যে তার নিয়তি।

কাজি সাহেব এসে বসলেন সামনে রাখা চেয়ারে,পাশে বসা বড়রা।

কাজি সাহেবের স্পষ্ট কথা গুলো কানে এসে কেমন বিঁধছে তরীর।
“পিতা জয়নাল শেখের পুত্র শেখ ইসরাক ফারাবীর সহিত বিবাহের প্রস্তাবে রাজি থাকলে বলো মা কবুল”!

তরী কিছু সময় ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে ছিলো মেঝেতে।কাজি সাহেব আবারও বললেন,নাজমা বেগম শক্ত চোখে তাকালেন তরীর দিকে।তরী গমগমে কন্ঠে পর পর তিনবার বললো কবুল।

বিবাহ সম্পন্ন হলো,বিদায়ের বেলা সবার চোখে কান্নার জল হোক তা মিথ্যা কিংবা সত্যি। শুধু পানি নেই তরীর চোখে। তরীর দাদু মনসুর আহমেদ খান এগিয়ে এলেন।নাতনীর মাথায় হাত রেখে অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকালেন।তরী শেষ বারের মতো দাদুকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলো।তিনি ফারাবীর হাতে তরীর হাত তুলে দিয়ে বললেন
,,আমার কলিজাটা কে তোমায় দিয়ে দিচ্ছি ওকে দেখে রেখো ভাই!সব কিছু থেকে রক্ষা করো নিজের করে আগলে রেখো।
তরী মনে মনে তাচ্ছিল্য নিয়ে,বললো তুমি তো জানোই দাদু এই রক্ষ কই ভক্ষ ক!
চলবে,,,,