#বিষচন্দ্রিমা
#পর্ব১০
#তামান্না_আনজুম_মায়া
ফারাবীর দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে তার বড় মামী হালিমা বেগম,মহিলার নিজের মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো ফারাবীর কাছে,এতো ভালো পরিবারে মেয়ে দিতে কে না চায়,সহায় সম্পত্তির ও তো অভাব নেই ফারাবীদের।তাদের তো ধারনাতেও ছিলো না পড়াশোনা শেষ করার আগেই ফারাবী বিয়ে করে ফেলবে তাহলে তো আগেই নিজের মেয়ের কথা তুলতো ফারাবীর মা বাবার কাছে।হালিমা বেগমের একটুও ইচ্ছে জাগলো না ফারাবীর বউ কে দেখার।
সায়েবা শেখ অবাক হলেন নিজের বাবার কথায় ফারাবী তো বিয়ের কথা কাউকে জানাতেই চায়নি প্রথমে এখন নিজ থেকে নিজের নানাকে জানিয়েছে,ছেলেটার মতিগতির ঠিক নেই।
ফারাবীর পেছন থেকে গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে সবার সামনে আসলো তরী।সালাম দিলো সবার উদ্দেশ্য, উৎসুক জনতার সবাই তরীকে দেখে মুগ্ধ হলো।মেয়েটি দেখতে সত্যি মায়াবী,সুরুজ তালুকদার মাশাআল্লাহ বলতে ভুললেন না।সবার প্রশংসায় লজ্জা পেলো তরী,হালিমা বেগমও আড়চোখে দেখলেন একবার সত্যি মেয়েটি অসম্ভব সুন্দর না হয় কি ফারাবীর মতো ছেলে পাগ ল হয়!নিশ্চিত প্রেমের বিয়ে হবে না হয় এতো তাড়াতাড়ি তো বিয়ের করার পাত্র নয় ফারাবী।
সবাইকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে যাওয়া হলো,বাড়িটা এখনো পুরোপুরি সাজানো হয়নি, অর্ধেক অংশে কাজ করছে পেন্ডেলের লোকেরা।একটা সুন্দর দোতলা বাড়ি মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে,বাড়ির সদস্য সংখ্যাও কম।ফারাবীরা আসার পর এখন বাড়িটা ভরে উঠেছে অনেকটাই।
তরী তো বাসা থেকে ঠিক করে এসেছিলো আয়রার সাথে থাকবে এই ফারাবী যেখানে খুশি গিয়ে থাকুক সে এই ছেলের আশপাশ ঘেঁষবে না।কিন্তু হলো উল্টো ছেলেটা এসেই ধেই ধেই করে নেচে বললো আমার বউ এটা।এখন সবাই ওদের কে একটা রুম দিয়েছে।তরী লাগেজ থেকে জিনিস গুলো নামাচ্ছে কম ছুঁড়ে মারছে বেশি।বিরবির করে বকছে ফারাবী কে।ফারাবী রুমে আসে কিছুক্ষণ পর, তরীকে রেগে টমেটো হয়ে থাকতে দেখছে দরজায় দাড়িয়ে, ঠোঁট টিপে হাসে নিজ মনে।তরী কাপড় গুলো বের করে রেখে প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো বের করে তা আবার লাগেজে রাখে,এতটুকু কাজেই ঘেমে গেছে পুরো, গরমটা যা পড়েছে।
তরী সোজা হয়েছে দেরি নেই ফারাবী হুট করে এসে পেছন থেকে তরীকে জড়িয়ে ধরে।কোমরে হাত রাখতেই তরী কেঁপে উঠে,মৃদু চিৎকার ও দিয়ে ফেলে আকষ্মিক ঘটনায়।
কে না কে এসে তাকে ধরলো!তরী নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে, কে তা দেখার জন্য মাথা ঘুরায় পেছনে।ফারাবী কে দেখে তো রেগে যায় পুরো
,,কি সমস্যা আপনার,ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি এভাবে হুটহাট জড়িয়ে ধরেন কেনো?অস ভ্য পুরুষ কোথাকার।ছাড়ুন বলছি,,,
ফারাবী না ছেড়ে উল্টো তরীর গালে নিজের খসখসে চাপ দাড়ির লাগিয়ে দিলো।
তরীর পুরো শরীরে যেনো শিরশিরে অনুভূতি খেলা করছে।
,,এতো রেগে আছেন কেনো মিসেস?
তরী ধরা গলায় বললো
,,দূরে সরে দাঁড়ান প্লিজ!
,,যদি আরো অনেকটা কাছে আসতে চাই তখন কি করবে মিসেস?
তরী জবাব দিতে পারলো না।মিশ্র অনুভূতি গলায় এসে যেনো দলা পেকে গেছে তার। বাহির থেকে আয়রা কন্ঠস্বর শুনেই ফারাবী সরে গেলো,তরী যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো এভাবে ফারাবী আবার কাছে আসলে নিশ্চিত হার্ট অ্যা*টাক করে ফেলবে সে।ছেলেটা অতিরিক্ত অবাধ্য। ঠিক খুঁজে খুঁজে ওর দুর্বলতা বুঝে গেছে।
আয়রা বলে বলে ঢুকছে,ভাবি ভাবি তুমি কই বলোতো,সবাই তো তৈরি হয়ে যাচ্ছে আমরা তো সন্ধ্যায় কনে পক্ষের বাড়ি যাবো।তোমার না কথা ছিলো আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবে।
তরী মুখ কালো করে বলে
,,আমার তো যেতে ইচ্ছে করছে না আয়রা পাখি,অনেক ঘুম পাচ্ছে!
ফারাবী খোঁচা মেরে বললো
,,পারো তো শুধু ওই একটা কাজই সারাদিন রাত শুধু ঘুম!
তরী বিরক্ত হয়ে বলে
,,আয়রা চলো তো,তোমার ভাই একটা অসহ্য সব সময় ঝ গড়া করার তাল করে।
—–
গায়ে হলুদে যাওয়ার জন্য তৈরি সবাই,তরী শুধু একটু লিপস্টিক দিয়েছে,সাজগোজ কম করে সব সময়,গায়ের হলুদে যাবে সে অনুযায়ী শুধু শাড়ি পড়েছে।আয়রা আর তরীর শাড়ি একরকম।হলুদ কমলার মিশ্রনে এক জামদানী শাড়ি,আয়রাকে সুন্দর করে সাজতে সাহয্য করেছে তরী,তরীকে সাজতে না দেখে আয়রা অবশ্য মুখ ফুলিয়েছিলো তাকে সাজিয়ে তরী নিজে সাজতে মানা করে দিলো।
বাড়ির সব ছোটরা তৈরি হয়ে গাড়িতে চড়ে বসল, সময় লাগবে আধঘন্টা, তরী এক সাইডে দাঁড়িয়ে ফোন চাপছে,ফারাবীর বাচ্চাটা সব সময় ত্যাড়ামি করে, সায়েবা শেখ বলে দিয়েছে সবাই যাতে ফারাবীর সাথে যায় কিন্তু এ লোককে দেখো লা পাত্তা!
তরীর মনোযোগ বিগ্ন ঘটলো কারোর উপস্থিতি লক্ষ্য করে।
ফারাবীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তরীর টকটকে লাল ঠোঁটে।আঙুল নিয়ে যখনই ছুঁতে যাবে,তরী ফারাবীর আঙুল বরাবর কামড় বসিয়েছে।
ফারাবী হাত সরিয়ে নেয়।তরী তেজ দেখিয়ে বলে
,,একদম ছোঁয়ার চেষ্টা ও করবেন না বলে দিলাম।
তরী এগিয়ে এগিয়ে গেলো গাড়ির দিকে,পেছন থেকে ফারাবী গম গমে কন্ঠে বললো
,,লিপস্টিক মুছো বলছি,তোমার ঠোঁটে লাল লিপস্টিক টা আমার একদম সহ্য হচ্ছে না বলে দিচ্ছি।যদি না মুছো তো আমি সত্যি সত্যি তোমার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দিবো বেয়া*দব মেয়ে!
তরী থেকে একবার দেখলো ফারাবী কে,আশেপাশে ও তাকালো একবার কেউ নেই,তারা দুজন ছাড়া।এক দুষ্ট বুদ্ধি খেললো তরীর মাথায়।
সে এগিয়ে গেলো ফারাবীর দিকে,হাত রাখলো ফারাবীর শার্টের বোতামে।ফারাবী সরু চোখে তাকিয়ে আছে বুঝার চেষ্টা করছে তরীর মনোভাব। তরী একবার মনে মনে ফারাবী অসামাজিক বলতে ভুললো না সবাই পড়েছে পাঞ্জাবি আর এই ছেলে একাই শার্ট!
তরীর ব্যাস্ত হাতে ফারাবীর শার্টের বাটন চারটা খুলে ফেললো,ফারাবী এবার হকচকিয়ে গেলো।এই মেয়ে কি এখন রাস্তা ঘাটে ওর ইজ্জতে হাম লা করবে নাকি।ফারাবী দুকদম পিছিয়ে গেলো,তরী এক টান দিলো ফারাবীর শার্টের কর্লারে,ফারাবী ব্যালেন্স হারিয়ে কিছুটা ঝুঁকে পড়লো তরীর উপর।
ফারাবী কথা বলতে ভুলে গেছে কেনো জানি।তরী এক অবিশ্বাস্য কাজ করলো এরপর,ফারাবীর শার্টের ভিতর মুখে ঢুকিয়ে দিলো,শার্টের উল্টো পাশে ঘঁষে তুলে ফেললো ঠোঁটের সব লিপস্টিক।
তরী মাথা বের করে বিজয়ী হাসি হাসলো, ভালো করে শুধ তুলেছে কথাটার, লিপস্টিক মুছে ফেলো না হয় কামড়ে দিবো!বললেই হলো নাকি।
তরী কিছুটা দূরে সরে বললো
,,আপনার পারফিউমের স্মেইল টা অনেক সুন্দর মিস্টার জামাই!নেক্সট টাইম আর এটা দিয়ে বাহিরে বের হবেন না।আর শার্টের বোতাম লাগিয়ে চলে আসুন আমাদের কে এখন যেতে হবে।
ফারাবী ঠোঁটে দাঁত চেপে হাসলো,বউ তার থেকেও এক কাঠি উপরে ভাবা যায়!
ফারাবী তরীর কোমর চেপে ধরে নিজের কাছে আনলো,ফিসফিস করে বললো
,,শার্ট টা পূর্বে যেরকম ছিলো, আবার আগের মতো করে এখান থেকে যাওয়ার কথা ভাববে না হয়,,
“অঙ্গনার অঙ্গ ঝলসানো সাজ আমি নিজ হাতে স্বযত্নে নষ্ট করবো”!
তরী যেনো চোখের পলকে বুঝে যায় কথার মর্মার্থ!দ্রুত হাত বাড়িয়ে ফটাফট বোতাম গুলো লাগিয়ে দেয়।
মিনমিন করে বলে
,,এবার তো ছাড়ুন!
ফারাবী পকেট থেকে রুমাল বের করে,তরীর ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা লিপস্টিক মুছে দিয়ে বলে,,এবার পারফেক্ট!
তরী ছুটে চলে যায় সেখান থেকে,তরী যাওয়া মাত্র তন্ময় এসে হাজির হয় সেখানে।
চুলে হাত চালিয়ে বলে
,,বাহ্ বাহ্ বাতাসে প্রেম প্রেম গন্ধে মো মো করছে।মানুষ জন রাস্তায় দাড়িয়ে রোমান্স করছে।কি ভাগ্য কি ভাগ্য!
ফারাবী ভ্রু কুচকে বলে
,,কি সমস্যা?
,,আমাদের কে গাড়ির বসিয়ে রেখে তুই শা লা এখানে বউয়ের সাথে রোমান্স করছিস?
,,কচু রোমান্স করছিলাম,লিপস্টিক মুছে গেছে তাও আমার শার্টে বজ্জা ত মেয়ে একটা।
তন্ময় হু হা করে হাসলো,ফারাবী বললো হেসে নে যতো পারিস আমার মতো একটা কপালে জুটলে বুঝবি কতো মরিচে কতো ঝাল।
বিয়ে বাড়িতে গান বাজনার আওয়াজে ঠিকঠাক কিছু শোনা যাচ্ছে না।ফারাবী ফোন বেজে উঠলো এক পাশে সরে গেলো সে তার পর নেটওয়ার্কের সমস্যা। বিরক্ততে চ মূলক শব্দ করলো মুখে।আবার ও ফোন আসলো পার্টি অফিসের ছেলেটার,আবির ফোনের ওপাশ থেকে জান প্রাণ দিয়ে কিছু বলেই যাচ্ছে।আবছা আবছা শুনতে পাচ্ছে ফারাবী
,,হ্যাঁ বল আবির শুভ,,শুভ কি কাজ,,,,
ফোনটা কেটে গেলো মুহুর্তে মেজা জটা খারা প হলো ফারাবীর।গুরুত্বপূর্ণ কথা না হলে তো অয়ন বা তামিম কেও বলতো আবির,নিশ্চিত কিছু একটা হয়েছে।
,,,,,,
আবির এখনো বলেই যাচ্ছে
,,ভাই আপনি শুভকে ভুলেও বিশ্বাস করবেন না,ভাবীর নামে উল্টো পাল্টা বলে আপনাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করতে চাইছে ও।ও মিলে আছে জ্যাক পাটোয়ারীর সাথে।হ্যালো হ্যালো ভাই শুনছেন!
আবিরের কাঁধ চেপে ধরলো কেউ একজন,তীব্র ঘুটঘুটে অন্ধকারে কেঁপে উঠলো আবির।
আজই শুভ কে সন্দেহ করে তার পিছু নিয়ে জ্যাক পাটোয়ারীর ডেরা পর্যন্ত পোঁছে গেছে সে।শুভ ভাই যে বিশ্বাসঘা তকা করবে এই কথা তো কেউ ই বিশ্বাস করবে না সে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করেনি প্রথমে।তবে যখনই ওদের পরিকল্পনা সম্পর্কে শুনলো পৃথিবীটা যেনো এসে ওর মাথায় ভেঙ্গে পড়েছিলো।সাতপাঁচ না ভেবে দ্রুত কল লাগিয়েছিলো ফারাবী কে।
,,ফারাবী না শুনলেও আমি যে শুনে ফেলেছি আবির!
বলেই হাসলো শুভ।
আবির ছেলেটার বয়স কম,নতুন এসেছে দলে। তবুও সাহস কম নয় ওর।
,,আপনি কেনো এমনটা করছেন শুভ ভাই?ফারাবী ভাই আপনার কি ক্ষ*তি করেছে?
,,তা জেনে তোর কাজ নেই।তুই যে সব কিছু জেনে বড় ভুল করে ফেলেছিস রে আবির ।
,,ছি!শুভ ভাই আপনার মতো হতে চাইতাম আমি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আপনি একটা নি কৃষ্ট কীটের থেকে ও নোং রা কিছু!
আমি সব কিছু বলে দিবো ফারাবী ভাই কে।আপনার মতো একটা কাল পিট দলে থাকা দলের জন্য অপমানজনক!
,,বেশি বলে ফেলেছিস তুই আবির।ফারাবী কে বলার জন্য তুই বেঁচে থাকলে তো বলবি নাকি।আমি পথের কাটা রাখতে ভালোবাসি না আবির।আমার পথ সব সময় রাখি মসৃণ, তাই তোকেও যে উপরে ফেলতে হবে এখন!
আবির ছেলেটার কি হলো কে জানে সে হাসলো, অন্ধকারেও চকচক করে উঠলো ছেলেটার দাঁত।
শুভর ক্রো ধ যেনো আরো বাড়লো হাসি দেখে। জ্যাক পাটোয়ারীর থেকে নেওয়া বন্দু ক টা বসিয়ে দিলো আবিরের বুকে পর পর গু লি করে ঝাঁঝরা করে দিলো এক নতুন উদ্দীয়মান উজ্জ্বল শিখার বুক!
মাটিতে নেতিয়ে পড়লো আবিরের চিকন গড়নের দেহটা।
চলবে?