বিষাদ-বৃক্ষ পর্ব-১৩

0
37

#বিষাদ-বৃক্ষ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১৩

আহমাদরা বাসায় ফিরতেই আবসার মৃত্যুর খবর পেল। পেয়ে রমিজকে নিয়ে সাথে সাথেই রওনা দিল। আবসারের কাছে তার জীবনে সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেকটা মানুষ প্রিয়। হাজার দোষ থাকলেও প্রিয়। হাজার দোষ করলেও প্রিয়। সে সম্পর্ক ছিন্নতে না, সুযোগে বিশ্বাসী। অবশ্য সেটা একবারই। তার পরে সে আর কখনো কারো দিকে ফিরে তাকায় না।

আবসারা চলে এলো খুব তাড়াতাড়িই। দু- বাড়ির পরেই বাড়ি। সময় বেশি লাগার কথা না। অবশ্য শুধু সে না, এর মধ্যে গ্রামের অনেক মানুষই চলে এসেছে। আসবে না কেন? তিনটা সময়ই মানুষ মানুষকে মন ভরে দেখে। এক.জন্ম, দুই.বিবাহ, তিন. মৃত্যু। আর এই তিনটা বিষয়’ই আল্লাহ নিজের হাতে রেখেছেন। হাজার চাইলেও ইচ্ছে মতো করা যায় না, আবার পছন্দ না হলে খন্ডানোও যায় না।

ইব্রাহিম আবসারকে দেখে নিজেই এগিয়ে এলো। এসেই জড়িয়ে ধরল। আবসার হালকা হাসলো। এটা ইব্রাহিমের অভ্যাস! ছেলের বয়সি হলেও এই ছেলে তাকে ডাকে ভাইজান বলে। রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। ইব্রাহিমের বাবা অন্য গ্রাম থেকে এসে এখানে জমি কিনেছিলেন। ইব্রাহিমের বাবা তার বাবাকে ভাই বলে ডাকতো, সেই হিসেবে সেও ভাই। অবশ্য এই ভাই শুধু নাম মাত্রই ছিল। হ্নদয়ের সাথে হ্নদয় জোরা লাগল যুদ্ধে গিয়ে। সেই যে লাগল আর ছিন্ন হয়নি। সময়, পরিস্থিতে মানুষ বদলে যায়। ইব্রাহিমও বদলে গেছে। তবে বদলাইনি তাদের সম্পর্ক, তার প্রতি সস্মান। তাই যতবার গ্রামে আসবে ততবারই একবার না একবার হলেও তার সাথে দেখা করবে। আর দেখা হলেই এভাবে জড়িয়ে ধরবে।

ইব্রাহিম আবসারকে ধরে বারান্দায় বসালো। বসতেই আবসার বলল, — জানাযা কখন হবে ?
— এশার পরে ।
— তোমার চোখে আমি মায়ের জন্য কষ্ট দেখিনা কেন ইব্রাহিম?
— আমার মা আমার কষ্ট দেখেনি তাই।
— কোন কিছুকেই এতো সময় পর্যন্ত মনে পুষতে নেই।
— আমি তো এমনই।
— না! তুমি এমন নও। শুধু বদলে গেছ। অনেক আগেই। কেন বদলেছো ইব্রাহিম?

ইব্রাহিম আবসারের দিকে তাকালো। কোন বদলানোর কথা আজ ভাইজান বলছে ইব্রাহিম ধরতে পারল না। সে তাকিয়ে বলল, — সময় মানুষকে বদলাবে এটাই স্বাভাবিক।
— এতোটাও বদলাতে নেই, যেখানে সব বিসর্জন দিতে হয়।
— আমি এমনিই ভাইজান।

আবসার আর কিছু বলল না। উঠানের এক কোণে বাঁশ কাটা হচ্ছে। সেখানে তাকিয়ে রইল।

ইব্রাহিমও কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসল। তারপর বলল — আজাদকে কোথায় বিয়ে করিয়েছেন ?

আবসার ইব্রাহিমের দিকে তাকালো। তার পর শান্ত ভাবে বলল, — আমার বোনের বাড়িতে।
— জাহিদের খোঁজ পেয়েছেন?
— হ্যাঁ।
— তার সাথে আপনার কথা হয়েছে?
— না হয়নি। দেখা হওয়ার আগেই সে মারা গেছে।
— আজাদের বউয়ের নাম কি ভাইজান?

আবসার কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল ! তারপর বলল,– আনতারাকে দেখেছো তুমি?
— আনতারা..
আবসার বড় একটা শ্বাস ফেললো। ইব্রাহিমের কাঁধে হাত রেখে বলল, — আমি জানি। আমার মতো তুমিও ধাক্কা খেয়েছে। তবে সে আনতারা। আনজুমের দোহিত্রী আনতারা।

— দৌহিত্রী?

— হ্যাঁ! আনজুমের একমাত্র সন্তানের একমাত্র কন্যা।

— নাম বদলালেই কি মানুষ বদলায়?

— এখানে শুধু নাম না ইব্রাহিম। পুরো যুগ ঘুরে গেছে, সময় ঘুরে গেছে, এমনকি সম্পর্কও ঘুরে গেছে। তুমি যেটা ভাবছো, এটা কখনও হয় না। এই পৃথিবীতে মানুষের জন্ম একবারই হয়। আমাদের ধর্মে দ্বিতীয় জনম বলে কিছু নেই।

— কিছু নেই, এর বাইরেও অনেক কিছু আছে। প্রমাণ আপনার সামনে।

— না নেই। সে আনতারা! সে শুধু দেখতে তার দাদির মতো হয়েছে। এর বাইরে কিছু নেই।

ইব্রাহিম আর কিছু বলল না। আবসার আগের মতো শান্ত ভাবে বলল, — আমি চাইনা আনতারার সামনে কিছু আসুক। তার জন্য যতটুকু ভালো সে শুধুমাত্র ততটুকুই জানবে। আশা করি তুমি আমার এই চাওয়াটুকু রাখবে।

ইব্রাহিম এবার হালকা হাসলো! হেসে আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল, — আপনার চাওয়া আমার শিরধার্য ভাইজান।

আবসারের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটল। ইব্রাহিমের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল, — তাহলে ভাইজানের আরেকটা কথা রাখ। মায়ের কাছে যাও। শেষবার মায়ের মাথায় হাত রাখ। মা তো মা’ই ইব্রাহিম। তারা যা করে সন্তানকে ভালোবেসে করে। সেগুলো মনে পুষে রাখতে নেই।

ইব্রাহিম সাথে সাথেই উঠল। তার মায়ের লাশ ভেতরের উঠানে। সে এগিয়ে গিয়ে হাতের উপরে হাত রাখলো।

আনতারার নাকের ব্যথা কমেছে। তবে যায়নি। যেতে নাকি একটু সময় লাগবে। কত সময় লাগবে কে জানে। আগে সারা দিনেও নাকে হাত দিত কিনা সন্দেহ। এখন ঘুরে ফিরেই চলে যায়। আর গেলেই আনতারা ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে। শবনম, সোহাগী মুখ টিপে হাসে। আর তার শাশুড়ি। মুখ ফুটে তেমন কিছু না বললেও, হাবভাবে বিরক্তি ঠিক বোঝাচ্ছে। আনতারা অবশ্য এই হাব – ভাব ওতো বোঝেনা। বোঝেনা বলেই সে ভালো আছে।

গত দু- দিন ধরেই আবহাওয়া বেশ গুমোট, বাতাস নেই বললেই চলে। গরমে দু- দন্ড কোথাও বসা যায় না। বসলেই নেয়ে ঘেমে একাকার হতে হয়। তাই আনতারা ঘোমটা টেনে আঁচল দিয়ে হালকা করে তার নাক, মুখ মুছলো। সে এমনিতেও বেশি ঘামে। তার মধ্যে এই দশ, বারো হাত কাপড়। ডিমের মতো সেদ্ধ হচ্ছে না এই তো কত?

আনতারা নাক মুখ মুছে শবনমের দিকে তাকালো। তারা বসে আছে খাবার ঘরে । শবনম ভাবি গাছের পেঁপে কাটছে। এই বাড়ির উঠানের বাইরেও আরেকটা উঠানের মতো আছে। সেটা অনেক বড়। সেখানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসল নেওয়া হয়। আশে পাশে দুনিয়ার গাছগাছালি। বেশি ভাগই ফলের গাছ। তাই সব সময় এ বাড়িতে কিছু না কিছু ফলের মজুদ থাকেই। বিকেলে সেগুলোই সবাইকে হালকা নাস্তার মতো দেওয়া হয়।

শবনমের মুখ ভার। কেন ভার আনতারা জানে না। তবে সে খেয়াল করেছে আসাদ ভাই বাসায় থাকলেই ভাবি মুখ ভার করে ঘুরে বেড়ায়। বাকি সব সময় স্বাভাবিক। আসাদ ভাইয়ের সাথে তার তেমন কথা বার্তা হয় না। সে সব সময় থাকে তার মতো। শুধু যখন নাকে ব্যথা পেল। তাকে দেখে আগের মতোই জিজ্ঞেস করেছে, — আর কোন সমস্যা নেই তো আনকারা ?

আনকারা হালকা হেসে বলেছে, — উঁহু।
— ভয় নেই! ঔষুধ ঠিক মত খাও ঠিক হয়ে যাবে।

আসাদ ভাই নিশ্চুপ ধরনের মানুষ। বাড়িতে থাকলেও বোঝা যায় না। তবে আজাদ উল্টো। সে রাত ছাড়া বাড়িতে থাকে না বললেই চলে। তবে বাড়িতে এলেই বাড়ির প্রতিটা মানুষ বুঝতে পারে, সে এসেছে। এই লোক মনে হয় আস্তে ধীরে কোন কাজ করতে পারে না। দরজাও খুলবে এমন ধাক্কিয়ে মনে হয় লাথি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে।

শবনম পেঁপে কেটে আনতারার হাতে ধরিয়ে দিলো। দিয়ে বলল, — তোমার ভাইকে একটু দিয়ে আসো। বাকি গুলো আমি সবাইকে দিচ্ছি।

আনতারা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর স্বাভাবিক ভাবেই নিয়ে গেল। এতক্ষণ আনতারা না বুঝলেও এখন বুঝল। ভাবি ভাইয়ের সাথে রাগ করেছে।

আনতারা আসাদের রুমের সামনে এসে দরজায় টোকা দিলো। আসাদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। দরজায় টোকা দিয়ে তাদের রুমে আসার মতো এই বাসায় কেউ নেই। বিথী, মিথি তারা বিনা নোটিশে ঢোকে। মা আসে দু- মাইল দূরে থেকে ডাকতে ডাকতে। আর শবনম সে আসে বিড়ালের মতো। সে ভ্রু কুঁচকেই বলল, — কে?

আনতারা তার মিহি সুরে আস্তে করে বলল, — আমি আনতারা।

আসাদ খাটে আধো শোয়া হয়ে বই পড়ছিল। সে পা গুটিয়ে সোজা বসে বলল, — এসো।

আনতারা ঢুকলো! আগের মতোই আস্তে করে বলল, — ভাবি পাঠিয়েছে।

আসাদ হালকা হাসলো। অবশ্য এতোই হালকা কারো নজরে পরার কথা না। কালকে রাতে শবনমের কাছে যেতেই সে মুখ ফেরালো। অবশ্য এটা নতুন না। শবনম তাকে দেখতে পারে না সে জানে। অবশ্য দেখার মতো সে কখনো কিছু করেছে বলে মনে পরে না। সে দিলো এক ধমক।

সে ধমক দিতে চায়না। কিন্ত সে ছোট বেলা থেকেই কাঠখোরা টাইপের মানুষ। ইচ্ছে হলেও অভ্যাস থেকে বেরুতে পারে না। তার মধ্যে শবনম তার বয়সে অনেক ছোট। এলোমেলো কাজকারবার করে। সে মেজাজ ঠিক রাখতে পারে না। তার এই অল্প বয়সের বিয়ে টিয়ে পছন্দ না। তবে মায়ের উপরে কিছু বলতে পারে নি। তার মধ্যে এই মেয়ে বাড়ির সবার সাথে তাল দিয়ে বাচ্চা বাচ্চা করে মাথা খাচ্ছে। নিজেই বাচ্চা, তার আবার লাগবে আরেক বাচ্চা ।

তাই গত রাতে ধমক খেয়ে সেই যে গাল ফুলিয়েছে। ফুলিয়েছে’ই। আর একটা কথাও বলেনি। সকালে সে যতক্ষণ রুমে ছিল আর এ মুখো হয়নি। এখনও হচ্ছে না।

সে হালকা হেসেই বলল,– টেবিলে রাখ। তোমার নাক ঠিক হয়েছে?
আনতারা মাথা নাড়ল। নেড়ে টেবিলে রেখে দাঁড়াতেই তার চোখ পড়ল বইয়ের তাকের উপরে।

আসাদ দেখলো! দেখে বলল,– তুমি কিসে পড়তে আনতারা?

আনতারা ফিরে তাকালো। মাথা নিচু করে বলল, — দশম শ্রেণি। এবার প্রিটেস্ট দিয়েছিলাম।

আসাদ অবাক হলো! অবাক হয়ে বলল, — রেজাল্ট কেমন ছিল।
— ভালো।
— কোন বিষয় নিয়ে পড়তে?
— সাইন্স।
— রোল
— ০২
আসাদ অবাক হয়েই কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। গ্রামের মেয়েরা পড়া লেখা করেনা বললেই চলে। করলেও কোন রকম। তবে শহরের দিকে অনেক মেয়েরাই পড়ে। এমনকি তাদের সাথে ভার্সিটিতেও অনেকেই পড়েছে। তবে সংখ্যায় খুবই কম। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, — তোমার ভাগ্য ভালো বলবো না খারাপ আমি বুঝতে পারছি না। গ্রামে মেয়েদের’ই কেউ পড়াতে চায় না আর বউরা তো স্বপ্নের বাইরে।

আনতারা কিছু বলল না। সে বইয়ের তাকের দিকে এগিয়ে গেল। ঘুরে ঘুরে তার শুভ্র আঙুল দিয়ে হালকা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখল। আসাদ পেঁপের বাটি হাতে নিতে নিতে বলল, — তোমার ইচ্ছে হলে এখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারো।

আনকারা হাসলো। হেসে আস্তে করে বলল, — ভাবির মন খারাপ।

আসাদ আবারো হাসলো! হেসে বলল, — তুমি সব সময় এমন আস্তে আস্তে কথা বলো?
— হুম।
— তোমার ভাবিকে একটু শিখিয়ে দেবে। তাহলেই আর মন খারাপ হওয়ার মত কারণ হবে না।

আনতারা মন খারাপ হলো। ভাবিকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না। সে ভেবেছিল আসাদ ভাই কিছু করবে। সে চলে যেতে নিল।

তখনি আসাদ বলল, — এভাবে কেউ পেঁপে কাটে। চেটকিয়ে তো ভর্তা বানিয়ে ফেলেছে। তোমার ভাবিকে ভালো দেখে কেটে আনতে বল।

আনতারা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। সে সোজা মানুষ। সোজা কথা ছাড়া কথা কমই বুঝে। আসাদ কি ইশারায় বলল সে বুঝতে পারল না। তবে শবনমের জন্য তার আরো মন খারাপ হলো। ভাবি এসব শুনে নিশ্চই আরো কষ্ট পাবে।

তার ভোঁতা মুখ আরো ভোঁতা হলো। ভোঁতা করেই সে বেরিয়ে এলো। শবনমের সামনে গিয়ে বলল, — আসাদ ভাই রাগ করছে ভাবি। পেঁপে নাকি চেটকে ভর্তা হয়ে গেছে।

শবনম দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নতুন কি? তার কোন কাজই আজ পর্যন্ত পছন্দ হয়েছে। সে সব সময়ের মুখ বাঁকিয়ে ভেংচি কাটলো, মনে মনে বলল, – খাটাশ। তারপর শক্ত শক্ত দেখে পেঁপে আরেক বাটিতে নিলো। নিয়ে নিজেই এগিয়ে গেল। তার এগিয়ে যাওয়ার দিকে আনতারা মন খারাপ করে তাকিয়ে রইল।

— কি হয়েছে?

আনতারা চমকে উঠল। চমকে আজাদের দিকে তাকালে। এই লোক কখন এসেছে? সব সময় তো ভেঙে চুরে আসে। আজ কখন এসেছে?

আজাদ দেওয়ালে হেলান দিয়ে বলল, — এমনিতেই তো দিন রাত মুখের বারোটা বেজে থাকে। নতুন করে আবার হলোটা কি? যে আজ তেরোটা বেজে গেছে।

আনতারা কিছু বলল না। আজাদ সোজা হয়ে দাঁড়ালো। গালের দাঁড়ি চুলকে বলল, — ওহ দুঃখিত! আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম। আল্লাহ আপনাকে জবান দেইনি। থাক সমস্যা নেই। বিয়ে যখন হয়েই গেছে। কি আর করার। এখন বলেন কাজ টাজও কিছু পারেন? নাকি মুখের মতো হাতও নেই?

আনতারা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর মাথা নিচু করে আস্তে করে বলল, — পারি।

আজাদ চমকে যাওয়ার ভান করে, বুকে হাত রেখে বলল, — আল্লাহ! আপনি দেখি কথাও বলতে পারেন। কি ধোকাটাই না দিল দাদাভাইয়ে। বোবা কাঠের পুতুল বলে জলজ্যান্ত মানুষ ঘাড়ে গোছানো। এতো মহা অন্যায়।

আনতারা বুঝল, এই লোক তার মজা নিচ্ছে। তার মন আরো খারাপ হলো। সে সাইড দিয়ে চলে যেতে নিল।

আজাদ ফট করে সেই সাইডেও গিয়েও দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে বলল, — আমার কথা শেষ হয়েছে?

আনতারা দু পাশে মাথা নাড়ল।
— তাহলে যাচ্ছো কেন? স্বামী বলে গনায় ধরো না। না? সেই দিন তো বড় গলা শুনলাম, নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছি। এই করার নমুনা?

আনতারা ঢোক গিলল। সেটা তো মারুফা চাচি বলতে বলেছিল। এভাবেই বললে নাকি আর ঝামেলা হবে না।

আজাদ ঠোঁট টিপে হাসলো! হেসে বলল, — গনায় ধরার ব্যবস্থা করব?

আনতারা এবারো কিছু বলল না। তবে তার চোখে, মুখে ভয় স্পষ্ট।

আজাদ আবারো হাসলো! হেসে রুমের দিকে যেতে যেতে বলল, — এক গ্লাস শরবত নিয়ে আসো নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করা বউ। নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছ, এখন নিজের ইচ্ছায় একটু সেবা যত্নও করো। আর খবরদার কলের ঠান্ডা পানির দরকার নেই। একবার নাক ফাটিয়েছো আরেকবার কি ফাটাবে কে জানে।

আনতারা নড়লো না। শরবতের জন্যও গেল না। সে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। তাকে দেখে আমেনা হাক ছেড়ে বলল, — কে ওখানে?

আনকারা মাথায় ঘোমটা টেনে এগিয়ে গেল। আমেনা দেখে একগাল হেসে বলল, — ওমা ছোট বউ দেখি আসো?

আনতারা হেসে এগিয়ে গেল। আমেনার রুমেই মিথি আর বিথী বসে লুডু খেলছে। তাকে দেখে দু- জনেই একসাথে মুখ বাঁকালো।

আনতারা তাকিয়ে রইল। এই দু- মেয়ে তার ধারের কাছেও যায় না। দেখলেই এমন ভাব যেন জনম জনমের শত্রু। সে চোখ ফিরিয়ে আমেনার পাশে গিয়ে বসলো। বসতেই আমেনা হাত ধরল। কি সুন্দর মাইয়া গো। দেখলেই তো চোখ জুড়াইয়া যায়।

চলবে……