বিষাদ বৃক্ষ পর্ব-২৫

0
32

#বিষাদ_বৃক্ষ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২৫

আনতারা গোসল করতে এসে বসে রইল চুপচাপ অনেকক্ষণ । আজ গায়ে হলুদ। ছেলেরা ভেতর বাড়িতে কেউ নেই বললেই চলে। সবাই বাইরের আয়োজন দেখছে। সে হাঁটুতে মাথা গুঁজে অনেকক্ষণ বসে রইল। মুর্শিদার হাউমাউ কান্না আর মানুষের কথা তার কানে বাজচ্ছে।

মুর্শিদা তার মা ভাইয়ের বউয়ের গলা ধরে অনেকক্ষণ কাঁদলো। দুটো মাত্র পিঠাপিঠি বোন তারা। ছোট থেকে বড় হলো একজন আরেক জনের গলা ধরে। সেই বোন তার একমাত্র মেয়ের বিয়েতে আসে নি। আসবে কি করে। আসার কি রাস্তা সে রেখেছে?

তার বোনের মেয়ে ছোট থেকে বড় হলো এই জেনে, এই বাড়ির বউ হবে। কোথা থেকে আরেকজন উড়ে আসলো। মুর্শিদা কিছুই করতে পারল না। এই দুঃখে তিনি বুক চাপড়ে কাঁদলেন। এই কাঁদা তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল না। পুরো বাড়ি ছড়ালো। আনতারাকে অনেকেই দেখে টিপ্পনী কাটলো। কেউ কেউ তো সামনেই বলল — কারো হক মেরে কেউ শান্তিতে থাকতে পারে না। প্রতিটা চোখের জলের হিসাব এই দুনিয়াতেই দিতে হয়। আহারে ঐ মাইয়ার চোখের জল কি আর বিফলে যাবে?

শবনম আনতারার গায়ে হলুদ শাড়ি পরাতে পরাতে দীর্ঘশ্বাস ফেলল । আনতারা সেই যে চুপচাপ হয়েছে হয়েছেই । তার মধ্যে আজকে আবার তার শাশুড়ির কান্ডকারখানা। মেয়েটার মুখ আরো চুপসে গেছে।

বাড়িতে দুনিয়ার মেহমান। শোয়া টোয়ারও কোন ঠিক ঠিকানা নেই। মেয়েরা ভেতর বাড়িতে উপর নিচ করে শুলেও। ছেলেরা সব বাহিরে। তবুও আনতারা আর নিজের রুমের দিকে যাইনি। ঘুমিয়েছে তার সাথে। আর ওই দিকে ওই বান্দা আজাদ। এটাতো আসাদের চেয়েও বড় খাটাশ। আসাদ যাই করুক পরে জড়িয়ে ধরে ভুল শিকার করে। আর এই বান্দা বিন্দাস ঘুরছে। বউ এদিকে গাল ফুলিয়ে ফুলিয়ে পটকা মাছ হয়ে বসে আছে। এই বান্দার খবরও নেই।

সে আনতারার কাপড় পরাতে পরাতে বিথীর দিকে তাকালো। তার গায়েও হলুদ শাড়ি ফুলের গহনা। কালো হলেও বিথী কাটিং ভালো। দেখতে ভালো লাগছে। বিয়ে টিয়ের মধ্যে ননদেরা ভাবিদের ধারের কাছেই থাকে। বিথীর সেরকম নেই। এতো ভালো ঘরে বিয়ে হচ্ছে এই অহংকারেই তার দেমাগ বেড়ে গেছে আরো দশগুণ আর তার সাথে এখন আছে তার আরো মামাতো, ফুফাতো বোন। তাও ভালো ছোট খালা আসেনি। আজাদ ভাইয়ের সাথে বিয়ে ভাঙায় তারা গাল ফুলিয়েছে। সেই ফোলা এখনো কমেনি। সেই দুঃখেই তাদের শাশুড়ি একচোট দুঃখ ঝাড়লেন। অবশ্য শবনম ভালো করেই জানে এটা দুঃখ ঝাড়া না। দাদা ভাইয়ের জন্য আনতারাকে কিছু বলতে তাদের শাশুড়ি একবার হলেও ভাবেন। তাই এটা ছিল শুধু বাহানা।

আর তখন থেকেই মেয়েটার মুখ আরো চুপসে আছে। আমাদের মতো তো না। সব হজম করে শক্ত হয়ে বসে থাকবে। একেবারে ফুলের মতো কোমল। সামান্য টোকাও নেতিয়ে পড়ে। শ্বশুর বাড়িতে এতো নরম হলে চলে? কত ঝড় ঝাপটা পেরুতে হবে। কি যে আছে এর কপালে আল্লাহ’ই জানে।

শবনম আবারো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো! ফেলে আনতারার মাথায় খোঁপা করল। তাতে গাঁদা ফুলের মালা পেঁচালো। লাল টকটকে একটা গোল টিপ কপালের মাঝ বরারবর রাখল। ঠোঁটে লাল লিপস্টিকের ছোঁয়া দিতেই শবনম মুখ দিয়ে আপনা আপনি বেরুলো, মাশাআল্লাহ।

শবনমের কথায় আনতারার ধ্যান ভাঙলো। ভাঙতেই আয়নায় তাঁকালো। অবশ্য সে আয়নায় নিজেকে দেখল না। দেখল আজাদকে। উঁহু! এলোমেলো, খামখেয়ালি, উদাসীন যাকে দিনভরে দেখে এই আজাদ না। দেখল সেই দিন রাতের অন্য এক আজাদকে। যার চোখে আনতারার ঘোর। আর সেই ঘোর নিয়েই কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বলছে, মাশাআল্লাহ।

আনতারা কেঁপে উঠল। শবনম ভ্রু কুঁচকে বলল, — কি হয়েছে?

আনতারা সাথে সাথেই দু- সাইডে মাথা নাড়লো। নাড়তেই এক রাশ লজ্জা একদিন পরে কোথা থেকে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল কে জানে ? তার মিশে যাওয়ার জোগাড়।

আনতারা অভিনয় জানে না। তার লজ্জা তার চোখে মুখেই ফুটে উঠল। শবনম হা হয়ে তাঁকিয়ে রইল। নিজেকে দেখে এই মেয়ে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। দেখোতো! এক আজবগজব দেবর কম ছিল। এ তো আরেক নতুন আমদানি।

সব মেয়েরা তৈরি হয়ে মেহেদী তুলতে যাবে। মেহেদী গাছ বাইর বাড়িতে। এমনিতে কাজ ছাড়া বাইর বাড়ির বউদের বের হওয়া নিষেধ থাকলেও, আজকে বাঁধা নেই। তাই সবাই বেরুলো, সাথে গীত গাইছে। শবনমের সাথে আনতারাও আছে। সে অবশ্য গীত গাইছে না। সে আছে সব সময়ের মত নিশ্চুপ। আত্মীয় – স্বজন ছাড়া বড় হয়েছে। সেই ভাবে কখনও বিয়ে খাওয়া হয়নি। নিশ্চুপ থাকলেও এতক্ষণ যে খারাপ লাগা ছিল এখন আর সেটা লাগছে না।

ইব্রাহিম বসে ছিল প্যান্ডেলের এক সাইডে। যোহরের নামাজের পরে ভাইজানের সাথে দেখা। তিনি ধরে নিয়ে এলেন। তখনি আনতারা উপর তার নজর পড়ল। পড়তেই তার হাতের শরবতের গ্লাস মুহুর্তে ছুটে গেল।

জামিল লাফিয়ে উঠল। উঠে হায় হায় করতে করতে বলল, — ভাইজান সরেন সরেন। পায়ে লাগবো তো।

ইব্রাহিম সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিলো। সামলে অলি আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল, — দুঃখিত ভাইজান আমি…

আবসার হেসে কাঁধে হাত রেখে বলল, — কৈফিয়ত দিয়ো না ইব্রাহিম। আমি মনে কষ্ট পাব। এটা যে কারো সাথেই হতে পারে।

ইব্রাহিম মৃদু হাসলো। আবসার তার কাঁধে হাত রেখেই বলল, — তুমি যে সব ভুলে আমার খুশিতে এসেছো। আমি কত খুশি হয়েছি তুমি জানোনা ইব্রাহিম। তা না হলে আমার বুকে পাথর বেঁধে থাকতো।

— এতো ভাবার কিছু তো নেই ভাইজান। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

— হুম! জহির ঠিক আছে?

— হুম ভালো।

— তাকে একটা ভালো মেয়ে দেখে সংসারটা বসিয়ে দিও।

ইব্রাহিম কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইল। তারপর হালকা হেসে বলল, — অবশ্যই ভাইজান। আমাদের বংশে দ্বিতীয় কোন ইব্রাহিম হবে না। অন্তত ইব্রাহিম থাকতে তো না।

ইব্রাহিম কি বুঝিয়েছে আবসারের বুঝতে অসুবিধে হয়নি। হয়নি বলেই সে শান্ত চোখে তাঁকালো।

ইব্রাহিম আগের মতোই হেসে বলল, — আমি শুধু জহিরের ব্যাপারটাই বুঝিয়েছি। সে আমাদের বংশের একমাত্র ছেলে। সে যদি আমার মতো বিয়ে শাদী না করে। তাহলে চলবে? বংশের পিরি আগাবে কে?

আবসার মাথা নাড়লো। নেড়ে বলল, — কথা সত্য। তার জুটি আল্লাহ যার সাথে বেঁধেছেন। সেটা যে ভাবেই হোক হয়ে যাবে। এতো চিন্তা ভাবনার কিছু নেই।

ইব্রাহিমও মাথা নাড়ল। নেড়ে আবার একবার আনতারার দিকে চোখ ফেরাতে গেল। তখনি আজাদ এসে আনতারাকে আড়াল করে দাঁড়ালো। অবশ্য ইচ্ছে করে কি না বোঝা গেল না। তবে সে খুবই বিরক্ত । বিরক্ত মুখে সেখানে দাঁড়িয়েই বাবুর্চি সাথে কথা বলছে।

ইব্রাহিম শান্ত চোখে আজাদের দিকে তাঁকিয়ে রইল। আজাদও তাঁকালো। চোখে চোখ পড়তেই আজাদ হেসে ফেলল। হেসে হাত উঁচু করে সালামের ইশারা করল।

রাতে আনতারা দু- হাত ভরে মেহেদী পড়ল। অবশ্য বলতে গেলে সবাই পড়েছে। শবনমও পড়বে এমন সময় আসাদ এলো। নেয়ে ঘেমে একাকার সে। রাতের খাবার এখনো খায়নি। রুমে এসে পানির জগে হাত দিতে দেখে জগ খালি।

বিয়ে বাড়ি যার যখন সামনে পড়েছে খেয়েছে। শবনমের খেয়ালও ছিল না। সে সাথে সাথেই উঠতে গেল। এখনি না শুরু করে দেয় লাফালাফি। ঘর ভর্তি মানুষ। এর তো আবার রাগ উঠলে চোখে মুখে দেখে না।

আসাদও সাথে সাথেই বলল, — উঠতে হবে। যেটা করছিলে সেটা কর। আমি দেখছি।

শবনম হা হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তার তো হজমই হচ্ছে না। আসাদ চোখ রাঙালো। শবনম সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। ভালো হবে না জীবনে।

আসাদ ঠোঁট টিপে হাসলো। শবনমের গায়েও হলুদ শাড়ি। তবে শবনম সাজেনি। শুধু কোন রকম শাড়ি পরেছে। মাথায় সব সময়ের মতোই এলোমেলো খোঁপা। তবুও আজাদের চোখে অপ্সরার মতোই মনে হলো।

আনতারা একবার আসাদ আরেকবার শবনমের দিকে তাকালো। তার সাদাসিধে মাথা আসলে কাহিনী বোঝার চেষ্টা করছে। তখনি মিথি খোঁচা দিল। দিয়ে বলল, — ঐ দিকে তাকাতাকি না করে তুমি বরং দরজার দিকে তাকাও।

আনতারা সাথে সাথে তাঁকালো। আজাদ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে তার দুনিয়ার বিরক্তি, তার সাথে ক্লান্তি। এমন ভাব এখানেই গড়িয়ে পড়বে। সে সেই ক্লান্তি, বিরক্তি নিয়েই বলল, — আমার কাপড় চোপরতো কিছুই হাতে কাছে পাই না। সারা দিন দৌড়া দৌড়ি। একটু আরাম করব। কাপড় খুঁজতে খুঁজতেই তো সময় শেষ। রুমে আছে না গাট্টি বেঁধে সব ফেলে দিয়েছো?

আনতারাও হা হয়ে তাঁকিয়ে রইল। আজাদ তার সাথে এভাবে কথা কখনোও বলেনি। সে সাথে সাথেই আবার গাল ফুলালো। ফুলিয়ে অন্য পাশে তাঁকালো। কি আশ্চর্য! তার চোখে পানি এসে পড়েছে।

শবনম হাসলো। এই গাধী না বুঝলেও সে বুঝেছে আজাদ কেন এভাবে কথা বলছে। সে হেসেই বলল, — কোন দিন না আবার তোমাকেই ফেলে দেয় ছোট ভাই।

আজাদ মুখ বাঁকিয়ে হাসলো। শুধু আজাদ না। এই রুমের প্রত্যেকটা মানুষ’ই হাসলো। বিয়ে বাড়িতে শুধু ছুতো লাগে, হাসতে সময় লাগে না। তাই আজাদ মুখ বাঁকিয়ে হাসলেও বাকি সবাই হাসলো প্রাণ খুলেই।

অন্য সময় হলে শবনমের দিকে আসাদ এখন কটমট করে তাকাতো। তবে আজ তেমন কিছু বলল না। তার নিজের মুখও হাসি হাসি।

আজাদেরও তেমন ভাবান্তর হলো না। সেই আগের মতোই বলল — আজাদকে ফেলে দেওয়া এত সোজা না ভাবি।

— আচ্ছা?

— জ্বি প্রাণ প্রিয় শ্রদ্ধেয় বড় ভাবি।

— সময় বলবে।

আজাদ হাসলো! হেসে একবার আনতারা দিকে তাঁকিয়ে যেতে যেতে বলল, — উঁহু! আজাদের জীবনে শুধু আজাদ’ই বলবে।

শবনম মুখ বাঁকালো। ঢং! আনতারাও নড়লো না। সে যাবে না। বিথী বিরক্তি নিয়ে বলল, — তুমি এখনো বসে আছো কেন। দেখলে না ভাই কত ক্লান্ত। যাও তাড়াতাড়ি কি কি লাগবে দাও।

শবনম ভেংচি কাটলো! অবশ্য এবার মনে মনে। এক শাশুড়ির জ্বালায় বাঁচিনা চৌদ্দ শাশুড়ির আমদানি। যা! শ্বশুর বাড়ি যা। পারলে ওখানে গিয়ে শাশুড়ি গিরি দেখাস। তখন বসে বসে মা মেয়ের মজা দেখবো।

আনতারা কিছুই বলল না। তবে মুখ ফুলিয়ে ঠিক উঠে দাঁড়ালো। তার দু- হাতে মেহেদি। হাত ছড়িয়েই রুম থেকে বেরুলো। বেরুতেই থমকে দাড়ালো।

বারান্দা ঘুটঘুটে অন্ধকার। আল্লাহ! এখানের লাইট কই। সে আবার ফিরে যাবে তার আগেই কেউ ঝট পাজোকোলো তুলে নিলো।

আনতারা ভয়ে চিৎকার দেবে তখনি আজাদ ফিসফিস করে বলল, — আমি আজাদের তারা বেগম।

আনতারা স্তব্ধ! কি বলবে ভেবে পেল না। তবে বারান্দার ঐ সাইড থেকে আমজাদ চেঁচিয়ে বলল, — বারান্দা অন্ধকার কেন? বিয়ে বাড়ি সবাই আসছে, যাচ্ছে। হুমড়ি খেয়ে পড়ে তো একেক জনে নাক, মুখ ভাঙবে। এই কে কোথায় আছিস?

আনতারা গলা শুকিয়ে এলো। কেউ দেখলে কি ভাববে? কিন্তু আজাদ নির্বিকার। সে অন্ধকারেই আনতারাকে পাজোকেলে নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে স্বাভাবিক ভাবে বলল, — লাইট ফিউজ হয়েছে চাচা জান। আমি দেখছি। বলেই সে বাড়ির পেছনে চলে এলো। পুকুরের সাইডে। ঘুটঘুটে অন্ধকার।
আনতারা ভয়ে আজাদকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল।

আজাদ হাসলো। হেসে আনতারাকে কোলে নিয়েই পুকুরের পারে একটু উঁচু জায়গায় বসে বলল, — তোমার হাতে মেহেদি ছিল আনতারা।

আনতারা সাথে সাথে আজাদের গলা ছাড়লো। তার সব মেহেদি শেষ। তার মন খারাপ হয়ে গেল।

আজাদ আবারো হাসলো! তার পুরো শরীর মেহেদীতে মাখামাখি। অবশ্য তা নিয়ে তাকে তেমন বিচলিত মনে হলো না। বরং সে আনতারার দু- হাত নিজেই আবার গলায় তুলে দিল।

এবার অবশ্য আনতারা ধরল না। সে শক্ত হয়ে বসে রইল।

আজাদ কোমল সুরে বলল — কি হয়েছে আজাদের তারা বেগমের?

আনতারা উত্তর দিলো না। আজাদ হাসলো। হেসে বলল, — খারাপ মানুষ তো তাই খারাপ কাজ করে ফেলেছি। বলো কি শাস্তি দেবে?

আনতারা এবারো কিছু বলল না। আজাদ ডাকলো, — তারা..

আনতারা চমকে উঠল। কতোদিন পরে কেউ এই নামে ডাকলো। তার বাবা কখনো তাকে পুরো নামে ডাকে নি। তিনি শুধু ডাকতেন তারা বলে।

সাথে সাথেই আনতারা আকাশের দিকে তাকালো। পুরো আকাশ অন্ধকার। মেঘ জমেছে নাকি? একটা তারাও তার নজরে পড়ল না। তার বাবা প্রায় তাকে আকাশ দেখিয়ে বলতেন, — আমি জীবনে কিছুই পায়নি রে মা। তাই হয়ত উপরে যিনি আছেন। তার অসংখ্য তারা থেকে একটা আমাকে দিয়ে দিয়েছে। আর বিশ্বাস কর মা। আমি আর জীবনে কিছুই চাই না।

আনতারা ফুপিয়ে উঠল। আজাদের ঘাড়ে কপাল রাখল। ইশ! বাবাকে তো সে ভুলেই গেছে। কি করে পারল সে?

এলোমেলো আজাদ সুন্দর, গুছিয়ে, যত্ন করে আনতারাকে আগলে ধরল। ধরে বলল — কাঁদছো কেন?

— আমি খুব খারাপ মেয়ে।

— তুমি খারাপ হলে দুনিয়ায় আর কোন ভালো মেয়ে নেই।

— আপনি জানেন?

— জানি তো।

— ছাই জানেন। যে আশে পাশের কিছু চোখেই দেখেনা। সে আবার জানে।

— কিছু না দেখি, তবে একজনকে ঠিক দেখি।

— কাকে?

— আজাদের তারা বেগমকে।

— মিথ্যুক।

— প্রমাণ দিতে হবে?

— হ্যাঁ

— যদি পারি কি দেবে তারা বেগম?

— কিছু না।

আজাদ হাসল। হেসে বলল, — এর পরে যদি কখনো কাঁদতে ইচ্ছে করে। আজাদের বুকে চলে এসো আনতারা। বাথরুমে যাওয়ার দরকার নেই।

আনতারা সাথে সাথে মাথা সোজা করে আজাদের দিকে তাকালো। ঘুটঘুটে অন্ধকার। সে অবশ্য কিছুই দেখতে পারল না।

আজাদ বুঝল! বুঝে হাসলো। হেসে পকেট থেকে লাইটার বের করে টুপ করে জ্বালালো। জ্বালাতেই দুজনের মুখ স্পষ্ট হলো।

আনতারা চোখ ফিরিয়ে নিলো না। সে তাঁকিয়ে রইল। আজাদও সেই চোখের দিকে তাঁকিয়ে বলল, — কি দেখতে পাও আনতারা?

আনতারা কিছু বলল না, আজদই বলল, — — আমি আমার তারাকে কখনো চোখের আড়াল করিনা আনতারা। আর হ্যাঁ তুমি কারো হক মেরে আসোনি। আজাদ চেয়েছে তাই এসেছো। আজাদের জীবনের সময়ও আজাদের ইচ্ছেতে’ই চলে। আর এখানে তো তার হ্নদয়ের ব্যাপার স্যাপার।

চলবে……