একটি অপ্রেমের গল্প পর্ব-২১+২২

0
155

#একটি_অপ্রেমের_গল্প
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২১।

মাহিরের মাঝে কোনো হেলদোল না দেখে বেশ বিরক্ত হলো অন্বিতা। বাধ্য হয়ে গাছের নিচ থেকে বেরিয়ে এল সে। ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। মাহির ভিজে একাকার। এখন অন্বিতাও। সে মাহিরের সামনে দাঁড়িয়ে চোখ পিটপিট করে বলল,

‘আপনার সমস্যাটা কী বলুন তো?’

মাহির হাসল কিঞ্চিৎ। বলল,

‘তুমি।’

অন্বিতা কপাল কুঁচকাল। বলল,

‘আমি আপনার সমস্যা?’

‘হ্যাঁ।’

‘তবে এই সমস্যাকে জীবনে রাখছেন কেন? উপড়ে ফেলে দিন।’

‘অসম্ভব। তুমি আমার জীবনের এমন এক সমস্যা যার কোনো সমাধান আমি চাই না।’

বৃষ্টির দরুন তাকানো মুশকিল। অন্বিতা বলল,

‘আপনি গাছের নিচে আসুন, আর নয়তো গাড়িতে চলুন। এভাবে ভেজার কোনো মানে হয় না।’

অন্বিতা সামনে আগাতে নিলেই মাহির তার হাত ধরে। আটকায় তাকে। অন্বিতা বীতঃস্পৃহ সুরে বলল,

‘আবার কী হলো?’

মাহির অন্বিতার হাত টেনে তাকে ঠিক তার সামনে এনে দাঁড় করায়। চেয়ারে বসা অবস্থাতেই অন্বিতাকে জড়িয়ে ধরে সে। অন্বিতা চমকায়। বিস্ফোরিত চোখে মাহিরকে দেখে। মাহির তাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে আছে। অন্বিতার অস্বস্তি হয় বড্ড। তাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে। মাহির ক্ষীণ সুরে বলে,

‘চিন্তা নেই, সীমা অতিক্রম করব না।’

কম্পিত সুরে অন্বিতা বলল,

‘কেন করছেন এমন?’

মাহিরের নিশ্বাসের গতি বাড়ছে। যতই বলুক, সীমা সে অতিক্রম করবে না, কিন্তু তার বেহায়া মন কি আর তা মানতে চায়। সে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্ত করে বলল,

‘আমাকে ক্ষমা করে দাও, অন্বিতা। আমি আর এসব নিতে পারছি না।’

অন্বিতা ঢোক গিলে বলল,

‘এখন এসব কথা বলার সময় না, মাহির। এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন যে।’

‘শরীরের অসুখ তো ঔষধ দিয়ে ঠিক করা যায়, কিন্তু মনের অসুখ, এই অসুখের কোনো ঔষধ নেই কেন বলো তো?’

‘এসব কথা এখন থাক না। চলুন, আমরা গাড়িতে গিয়ে বসি।’

মাথা তুলে চাইল মাহির। ঠিক অন্বিতার চোখের দিকে। মাহিরের চোখে চোখ পড়তেই অন্বিতা থমকাল। মাহিরের মুখ চুইয়ে পড়া বৃষ্টির পানিগুলো তার চোখের পানিকে চমৎকার ভাবে আঁড়াল করছে। অন্বিতা বলল,

‘আমাদের যাওয়া উচিত।’

‘আমার ক্ষমা লাগবে, অন্বিতা। তোমার ভালোবাসা লাগবে, তোমাকে লাগবে, ঠিক আগের মতো।’

‘হারিয়ে যাওয়া জিনিস ফিরে আসে না, মাহির।’

‘কেন আসে না? এত নির্দয় তুমি কেন হচ্ছো? কী করলে আমায় ক্ষমা করবে, বলো?’

‘থাক না এসব।’

‘না, থাকবে না। আমি ঠিক কতগুলো দিন শান্তিতে ঘুমাতে পারছি না, তোমার ধারণা আছে? নেই। আমি জানি, আমি ভুল করেছি। তোমাকে অবিশ্বাস করাটা আমার জীবনের সবথেকে বড়ো ভুল। আমি তখন অন্ধ ছিলাম, মূর্খ ছিলাম, নয়তো সামান্য কয়টা মানুষের কথায় কেউ বুঝি তার ভালোবাসাকে অবিশ্বাস করে? আমাকে তুমি যা খুশি শাস্তি দাও, আমি মাথা পেতে নিব, তবু এই দূরত্বটা আর রেখো না। আমি আর পারছি না।’

অন্বিতা কান্না আটকায়। জোরে শ্বাস ফেলে বলে,

‘একটা মানুষের কাছে তার চরিত্রের চেয়ে দামি কিছু হয় না। সেদিন আপনার ফুপি, আপনার কাজিন আর আপনার বন্ধু মিলে যে নাটকটা সাজিয়েছিল আপনি তা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন। সবার মতো আপনিও সেদিন আমার চরিত্রে আঙ্গুল তুলেছিলেন। জানেন, সেদিন নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছিল। মনে হচ্ছিল, আমি এতদিন কাকে ভালোবেসে এসেছি, যে মানুষটা আমাকে নূন্যতম বিশ্বাস অবধি করে না, তাকে!’

মাহির দু হাত জোড় করে। অনুরোধের সুরে বলে,

‘আমি এই সবকিছুর জন্য অনুতপ্ত।’

‘কী হবে এই অনুতপ্ত দিয়ে? আপনার এই অনুতপ্ত কি আমার খুইয়ে যাওয়া সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারবে?’

‘সম্মান চাও তো? আমি বলছি, আমাদের রিসেপশনে সেই সব মানুষ থাকবেন যারা ঐ অনুষ্ঠানেও ছিলেন। সেদিন সবার সামনে আমি সব সত্যিটা বলব। আমার ফুপি, শশী আর রিয়াল সবাই তোমার কাছে সেদিন ক্ষমা চাইবে।’

‘লাগবে না আমার কিছু। কারোর ক্ষমার প্রয়োজন নেই। আর কাউকে ব্যাখ্যা দেওয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই। আমি কেমন, আমার চরিত্র কেমন, সেটা আমি জানি, তাই আমাকে নিয়ে অন্যকেউ কী ভাবল না ভাবল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’

‘আমার আসে। আমি তোমার দেওয়া ঘৃণা আর নিতে পারছি না। এবার একটু ভালোবাসো না, প্লিজ।’

অন্বিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। তবে পুরোপুরি না। তারা দুজনেই ভিজে কাক। শাড়িটা লেপ্টে আছে গায়ে। অন্বিতা আঁচলটা সামনে টেনে বলল,

‘এবার বাসায় যাওয়া উচিত। এভাবে বসে থাকার কোনো মানে হয় না।’

‘আমি তোমার কাছে কিছু চেয়েছি, অন্বিতা।’

‘আমার কাছে দেওয়ার মতো কিছু নেই।’

‘এত নিষ্ঠুর কেন তুমি?’

‘আপনি বানিয়েছেন।’

‘আর একটা বার নরম হও।’

‘কেন, আরো একবার ভেঙে ফেলতে চান?’

‘না, এবার যত্ন করে আগলে রাখব। আই প্রমিজ।’

‘ঠিক আছে, দেখা যাবে। এবার চলুন।’

‘যাব না আমি, শুনেছ? আজ এখানেই থাকব।’

কিছুটা উঁচু গলায় বলল মাহির। অন্বিতা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। একে তো শাড়ি পরেছে, তারউপর ভেজা শরীর; কী মারাত্মক অস্বস্তি হচ্ছে সেটা আর বলে বোঝানোর জো নেই। সে রেগে বলল,

‘ঠিক আছে, আপনি বসে বসে নাটক করুন। আমি চললাম।’

অন্বিতা হাঁটা ধরল। মাহির তাকে থামায় না। সে ক্ষুব্ধ হয়ে চুপচাপ বসে থাকে। রাস্তায় আসে অন্বিতা। মাহিরের গাড়িটা এখানেই। এই রাস্তায় আর অন্য কোনো গাড়ি আসছে না। সে এক পাশ দিয়ে হেঁটে কিছুটা সামনে আসে। আশেপাশে গাছগাছালি আর পাঁকা রাস্তা ব্যতিত আর কিছুই চোখে পড়ে না তার। এই এক কোথায় এসে ফেঁসেছে কে জানে।

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও অন্বিতা কোনো গাড়ি দেখা পায় না। পরে হতাশ হয়ে পূর্বের জায়গায় ফিরে আসে। মাহিরকে দূর থেকে দেখে, সে এখনও একই ভাবে বসে। লোকটা আজ একটু বেশিই ত্যাড়ামি করছে। সে এগিয়ে যায়। মাহিরের সামনে দাঁড়িয়ে রেগে বলে,

‘এভাবে ভেজা শরীরে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব? এবার কিন্তু আপনি বাড়াবাড়ি করছেন।’

মাহির চোখ তুলে অন্বিতার আপাদমস্তক দেখে। এতক্ষণ সে খেয়াল করেনি। মাহিরের চাহনি দেখে লজ্জা পায় অন্বিতা। খানিকটা জড়োসড়ো হয়ে বলে,

‘চলুন।’

মাহির চোখের দৃষ্টি সরায়। এই দৃষ্টির সময়কাল যত বাড়বে তার নিজের বেহায়া মনকে সংযত রাখা ততই কঠিন হয়ে পড়বে। ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে মাহির বলে,

‘আমার কথা না মানা অবধি আমি যাব না।’

‘এতটা বিপদে পড়তে হবে জানলে আমি কখনোই আসতাম না।’

‘এখন বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়ার একটাই পথ আছে, আমার দাবি মেনে নাও।’

‘না মানলে?’

‘এখানেই থাকতে হবে।’

‘পাগল হয়েছেন? জায়গাটা দেখেছেন আপনি? এখন’ই কী নীরব নিস্তব্ধ, সন্ধ্যা নামলে তো ভূতের আস্তানা মনে হবে।’

‘হোক, তাও আমি নড়ব না। আর আমাকে ছাড়া তুমিও এখান থেকে যেতে পারবে না।’

অন্বিতা বিপদে পড়েছে বেশ। ফোনটাও তার মাহিরের গাড়িতে। আর মাহির মহাশয়, গাড়ি লক করে এখানে আরাম করে বসে আছেন।

চলবে…..

#একটি_অপ্রেমের_গল্প
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২২।

বৃষ্টি থেমেছে। তবে দিন অন্ধকার। বৃষ্টি ভেজা চারদিক স্নিগ্ধ লাগছে বেশ। মাটির একটা সোঁদা গন্ধ নাকে ঠেকছে যেন। এমন পরিবেশে নির্দ্বিধায় একটা বিশাল সময় কাটিয়ে ফেলা যায়। তবে অন্বিতার জন্য সেটা সম্ভব নয়। তার গায়ের শাড়ি’টা বড্ড পীড়া দিচ্ছে তাকে। এভাবে থাকাটা অসম্ভব। মাহির আরাম করে বসে বসে প্রকৃতি দেখছে। অন্বিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার সামনে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে,

‘আপনার ফোন কোথায়?’

‘গাড়িতে।’

‘গাড়ির চাবিটা দিন।’

‘উঁহু।’

‘আপনার কি আজ এখানে থাকার ইচ্ছা?’

‘তুমি চাইলে থাকতে পারি।’

‘আমি বাড়িতে যেতে চাই, চলুন প্লিজ।’

‘আমায় ক্ষমা করবে না?’

‘করেছি, চলুন।’

‘মন থেকে তো করোনি।’

অন্বিতা বিরক্তির সুরে বলল,

‘না তো কি কিডনি থেকে করেছি?’

‘করতেই পারো, তোমাকে দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।’

‘উফ, আপনি ভীষণ বিরক্ত করছেন।’

মাহির উঠে দাঁড়াল। এক কদম পিছিয়ে গেল অন্বিতা। মাহির তার কাছে এসে ভেজা চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে বলল,

‘একজন পুরুষ সব সহ্য করতে পারলেও তার প্রিয়তমার দূরত্ব সহ্য করতে পারে না। যদি কোনো এক উপায় জানা থাকত, তবে তোমায় দেখাতাম, তোমার জন্য আমার ঠিক কতটা যন্ত্রণা হয়। নিজের করা ভুলের অনুশোচনায় হৃদয় ঠিক কতটা দগ্ধ তা যদি বোঝাতে পারতাম। আফসোস, তা তো সম্ভব নয়।’

মাহিরের চোখের দিকে চেয়ে মায়া হলো অন্বিতার। যতই অভিমান, অভিযোগ, ক্ষোভ থাকুক না কেন, এই গভীর চোখ সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়। অন্বিতা ঢোক গিলে। বলে,

‘সেদিন আমায় একটু বিশ্বাস করলে আজ আর এতকিছু হতো না।’

ছেলে মানুষের কাঁদতে নেই। তার উপর মাহির একজন ডাক্তার। কান্না তো তার চরম শত্রু। তাও তার চোখ সিক্ত। সে বলে,

‘এই ভুলের জন্যই তো আজ আমার এই অবস্থা। আমিও যে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না।’

অন্বিতা নিশ্বাস ফেলে জোরে। বলে,

‘তোমার বন্ধু শরবতের গ্লাসে কিছু একটা মিশিয়ে খাইয়েছিলেন, তারপর আমি ওয়াশরুমে যেতে নিয়ে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নিলেই উনি কোথ থেকে যেন এসে আমায় উঠান। আমাকে নিয়ে একটা রুমে যান। তখন আমার মাথা ঘুরাচ্ছিল, চোখে অন্ধকার দেখছিলাম। তাও উনাকে বারবার বলছিলাম, তোমাকে ডেকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু উনি ডাকেননি। ততক্ষণে আমি অচেতন হয়ে পড়ি। তারপর আর মনে নেই। চোখ খুলতেই হল রুমে গিয়ে দেখি কুরুক্ষেত্র। তোমার বন্ধু তোমাকে কী বলেছেন, কী দেখিয়েছেন জানি না। তবে সবকিছু ঊর্ধ্বে আমি ভেবেছিলাম, তুমি আমায় কখনোই অবিশ্বাস করবে না। কিন্তু হলো তার উল্টো। সবার সামনে আমায় অপমান করলে। তোমার ফুপি, তোমার কাজিন, আমাকে যা নয় তাই বলল, তুমি কিচ্ছুটি বললে না। উল্টো টেনে সেখান থেকে বের করে দিলে, একটাবারের জন্যও আমার কথাটা শুনলে না। তারপর থেকে আজ অবধি আমি একটা দিনের জন্য ঐ মুহুর্তগুলো ভুলতে পারিনি। আর হয়তো কোনোদিন পারবও না।’

অন্বিতা কেঁদে ফেলে। মাহিরের অসহায় লাগছে নিজেকে। বুকে ব্যথা করছে তীব্র। সে বলে,

‘সেদিন জানতে না পারলেও কয়দিন পর ঠিকই আমি সব জানতে পারি। সেখানের এক ওয়েটার আমায় সব বলেছিল, সে দেখেছিল সব। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, আমি তখন দেশের বাইরে। সেখানে থেকেও তোমার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেও পারিনি। ঐ সময়টা আমি ঠিক কতটা ছটফট করেছি, তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। তারপর দেশে এসেই তোমাকে খুঁজে বের করেছি। তোমার মায়ের সাথে কথা বলে বিয়েটা ফাইনাল করেছি, কারণ তোমাকে দ্বিতীয়বারের মতো আমি হারাতে চাইনি। অথচ এই সবকিছুর মাঝেও তোমাকে আমার পাওয়া হয়ে উঠেনি এখনও। এখনও বুকের ভেতরটা আগের মতোই ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মাঝে মাঝে দম বন্ধ লাগে, জানো তো? মনে হয়, এই বুঝি দম আটকে মারা যাব। এই যন্ত্রণার কি কোনো শেষ নেই, অন্বি? আমি যে আর পারছি না।’

মাহির অন্যদিকে ঘুরে যায়। মাথা উঁচু করে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। অন্বিতা কান্না ফেলে থমকে তাকায়। সুপ্ত ভালোবাসা মাথা চেড়ে উঠে যেন। পেছন থেকে সে জড়িয়ে ধরে মাহিরকে। মাহির স্তম্ভিত, হতভম্ব। চোখ বন্ধ ধাতস্ত করে নিজেকে। এ যেন এক স্বর্গ সুখ। অন্বিতা বলে,

‘আমিও পারছি না। বিশ্বাস করো, আমারও বড্ড কষ্ট হয়, বুকে ব্যথা হয়। তোমার কাছে গেলে, নিজের অপমানের কথা মনে হয়ে কষ্ট হয়, তোমার থেকে দূরে গেলে, ভালোবাসার যন্ত্রণায় কষ্ট হয়। আমিও যে আর এসব নিতে পারছি না, মাহির।’

মাহির ঘুরে দাঁড়ায়। অন্বিতার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

‘আমাকে আর একটা সুযোগ দাও। আই প্রমিজ, এই চোখের কাজল কখনো লেপ্টাবে না।’

অন্বিতা চোখে হাত দিয়ে বলে,

‘আজ তো কাজল পরিনি।’

মাহির স্মিত হেসে বলল,

‘কাল থেকে পরবে। এমন শুকনো চোখে প্রেম ধরা পড়ে না।’

‘আর যদি কোনোদিন অবিশ্বাস করো?’

‘অসম্ভব।’

‘যদি করো, তবে কী শাস্তি দিব বলো?’

‘মৃত্যুদণ্ড।’

‘না না, মরে গেলে তো বেঁচে যাবে। তোমাকে জীবিত রেখে একটু একটু করে মারব, একেবারে না।’

‘তোমার যা খুশি করো, তাও একটা সুযোগ দাও আমায়।’

অন্বিতা শান্ত করল নিজেকে। বুকের ভেতরটা হাঁপরের মতো উঠানামা করছে। যেদিন মাহিরকে প্রথম “আই লাভ ইউ” বলেছিল, সেদিনও এমন হয়েছিল। আজও হচ্ছে। মাহির বলল,

‘কী হলো, কিছু বলছো না কেন?’

অন্বিতা মাথা নুইয়ে ধীর গলায় বলল,

‘ঠিক আছে।’

‘কী ঠিক আছে?’

‘ক্ষমা করে দিয়েছি।’

‘আর এই দূরত্ব রাখবে না তো?’

‘চেষ্টা করব।’

‘চেষ্টা করবে মানে? আমাকে আর যন্ত্রণা দিও না তো, মরে গেলে কিন্তু আর পাবে না।’

অন্বিতা ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘কেউ কারোর জন্য মরে না।’

‘বুকে আজকাল যে ব্যথা উঠে, স্ট্রোক করব যেকোনো সময়। তাই রিস্ক না নেওয়াই ভালো।’

‘আজকের পর থেকে আর উঠবে না।’

‘মনে থাকবে তো?’

‘হ্যাঁ থাকবে, চলো এবার।’

‘এত তাড়া কেন তোমার? বারবার কি আর এখানে আসার সুযোগ পাব, নাকি বারবার তোমাকে এভাবে দেখার সুযোগ পাব?’

অন্বিতা বড়ো বড়ো চোখে চেয়ে বলল,

‘একদম বাজে কথা বলবে না। ক্ষমা করেছি বলে, নিজের লিমিট ভুলে যাবে না একদম।’

মাহির বড়ো করে নিশ্বাস ফেলল। বলল,

‘সেটা তোমার মনে না করালেও চলবে। এই বিয়ের অপেক্ষা করতে করতে যৌবন’ই আমার শেষ হবার পথে।’

অন্বিতা কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,

‘এইজন্যই তোমাকে ক্ষমা করতে চাইনি, তোমার অসভ্যতার মাত্রা বাড়বে বলে।’

‘এমন সুন্দরী বউ, না হবু বউ থাকলে ছেলেরা একটু অসভ্যতামো করবেই; এটাই স্বাভাবিক।’

‘হয়েছে তোমার? এবার চলো, আমি আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না।’

‘বেশ, চলো।’

দুজনেই গিয়ে গাড়িতে বসল। ভেজা চুলগুলো ঝাড়ছে অন্বিতা। চুলের সব পানির ছিটা পড়ছে মাহিরের চোখে মুখে। সে হেলান দিয়ে সিটে বসল। ঘাড় কাত করে চেয়ে রইল অন্বিতার দিকে। অন্বিতা চুল ঝাড়া শেষ করে সোজা হয়ে সিটে বসে দেখল, মাহির তাকে দেখছে। সে অপ্রস্তুত হয়ে বলল,

‘কী হলো, গাড়ি স্টার্ট দাও।’

‘এমন চমৎকার মুহুর্ত উপেক্ষা করে কেউ গাড়ি চালাতে পারে?’

অন্বিতা তার কথায় প্রশ্রয় না দিয়ে বলল,

‘সন্ধ্যা হচ্ছে, মাহির; এবার আমাদের যাওয়া উচিত।’

মাহির বীতঃস্পৃহ সুরে বলল,

‘হ্যাঁ, যাচ্ছি।’

চলবে….