বসন্ত বিকেল পর্ব-০৪

0
22

#বসন্ত_বিকেলন
#পর্ব_৪
#নবনী_নীলা

শুদ্ধ তাকিয়েই আছে। কি বলবে সে? তার কি কোনো কথা বলার প্রয়োজন আছে? কিভাবে চুপ করানো যাবে এই মেয়েকে। শুদ্ধ একটু ভাবলো তারপর একটু এগিয়ে গিয়ে মাহার চোখের দিকে তাকাতেই মাহা স্থির হয়ে গেলো। চোখ বড় বড় করে তাকালো সে।

শুদ্ধ চোখে চোখ রেখে বললো,” তুমি আমার সাথে বেশি ফ্রাঙ্ক হয়ে যাচ্ছো না?”

মাহা কয়েকবার চোখের পলক ফেলল। এক মুহূর্তের জন্য ভাবনায় পড়ে গেলো সে। মনে হচ্ছে সব সময়ের মতন এবারো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কথা বলে ফেলেছে সে। মাহা শুদ্ধর দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বললো,” আমার বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।”

শুদ্ধ এক গাল হেসে বিড় বিড় করে বললো,” যাক মনে তো পড়েছে।”

মাহার ফোন বেজে উঠতেই সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে বাইরে গেলো। বাইরে আসতেই কল কেটে গেলে। অহনা কল করেছিল। ওকে বাড়িতে গিয়ে কল দেওয়া যাবে। মাহা বাইরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো। লোকটার কথা বার্তা কেমন জানি? অদ্ভুত। কি চায় সেটা স্পষ্ট করেও বলছে না। কথায় কথায় এই চেঙ্গিস খান শুধু ভাব দেখিয়েই যাচ্ছে। ঘটনা আসলে কি সেটা তো মাহজাবিন জেনেই ছাড়বে।

শুদ্ধ বাইরে এসে দেখে মাহা একা একা কিসব বিড় বিড় করে যাচ্ছে। মেয়েটার কি মাথায় সমস্যা আছে। হতেও পারে আচরণ তো স্বাভাবিক লাগছে না তার কাছে। এইভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিসব বকছে?

শুদ্ধ এসে পাশে দাঁড়াতেই মাহা ভেবাচেকা খেয়ে তাকালো।

শুদ্ধ বললো,” কথা বলা শেষ?”

মাহা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই শুদ্ধ বললো,” তাহলে গাড়িতে গিয়ে বস।”

___________________

মাহা বাড়িতে এসে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। চট জলদি সে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। রুমে এসে দেখে তার মা বোন দুজনেই তার রুমে হাজির। আজকে সারাদিন কি হলো? সেটা জানতে তারা দুজনেই খুব আগ্রহী। মাহার বিরক্তির শেষ রইলো না। তারপর কোনো ভাবে এটা ওটা বলে তাদের নিজের রুম থেকে তাদের বের করে দিয়ে রুমের দরজা আটকে দিলো সে। নিজের বাড়িতেও তার একটু শান্তি নেই। হঠাৎ তার অহনার কথা মনে পড়লো। চটজলদি অহনাকে সে কল দিলো।

” কিরে? আমাকে দেখি ভুলেই গেছিস। আমার কল পর্যন্ত ধরার সময় নেই তোর?”

” আরেহ বলিস না। আমার উপর দিয়ে যে কি যাচ্ছে আমি তোকে বলে শেষ করতে পারবো না। এই যে বিয়ের শনি আমার মাথায় চেপে বসেছে। আমি ভেবে ভেবে ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছি।”

” বিয়ে তো করতেই হবে আজ নয়তো কাল। কতদিন এমন করবি।”

” আমি জানি না। কিন্তু আমি এইসব বিয়ে সাদির ঝামেলা নিজের গলায় নিতে পারবো না। বিয়ে মানেই ঝামেলা।”

” তা হবে কেনো? সবার সাথে নিজেকে তুলনা করলে হবে।”

” জ্বি না। আমি আমার লাইফে এই পর্যন্ত কোনো যত পুরুষ মানুষ দেখেছি তারা সবাই ইনসেন্সিটিভ। ওরা অন্যের অনুভূতির সম্মান করতে জানে না।”

” সবাই এক হয় না।”

” সবাই যদি এক না হয় তাহলে আজ পর্যন্ত আমি এমন কাউকে দেখলাম না কেনো?”

” তুই করো সাথে মিশলে তো বুঝবি?”

” ওইসব নাটক আমি করতে পারবো না। যা বুঝার বোঝা হয়ে গেছে। তুই পুরুষ মানুষের সাফাই না গেয়ে আমার কথা শুন।” হাঁটতে হাঁটতে মাহা বারান্দায় চলে গেলো।

” হুম বল শুনছি।”

” আমি একটা প্ল্যান করেছি। তোর শুনে অনেক ফালতু মনে হতে পারে বাট এটা ওয়ার্ক করবে।”

” আবার প্ল্যান? লাস্ট টাইম ধরা খেয়ে শিক্ষা হয় নি?”

মাহা অহনাকে থামিয়ে দিয়ে নিজের প্ল্যানটা বিস্তারিত বললো। অহনা শুনে মাথায় হাত। সে বলল,” পাগল হয়েছিস?”

” ট্রাস্ট মী। এটা কাজ করবে। আমার শুধু এখন ওই চেঙ্গিস খানকে ম্যানেজ করতে হবে। লোকটা একবার রাজি হয়ে গেলেই হয়।”

” আচ্ছা উনি কেনো বিয়ে করতে চাচ্ছে না বলেনি?”

” না কিছুই বলেনি। এইখানে কোনো কাহিনী নিশ্চয়ই আছে।আমি অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি প্রতিবার এরিয়ে গেছে।”

” তাহলে তো এই বিয়েটা করা একদমই ঠিক হবে না।”

” সেটাই তো। কেউ বুঝতেই পারছে না। যাক তুই খোঁজ খবর নিয়ে দেখ তো কিছু জানতে পারিস নাকি?”

” আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো। এখন রাখছি।”

অহনার সাথে কথা শেষে মাহা বারান্দার দোলনাটায় বসলো। সে যদি ছেলে হতো তাহলে নির্ঘাত সে কোথাও পালিয়ে চলে যেতো। জীবনটা তার অথচ এই জীবনকে ঘিরে কোনো সিদ্ধান্ত তার নিজে নেওয়ার অধিকার নেই। তাকে সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু কেনো?এইসব ভেবে মাহা একটা নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর হঠাৎ শুদ্ধর চেহারা তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। লোকটা দেখতে খারাপ না। হ্যান্ডসাম তো বটেই। কিন্তু স্বভাবে পুরোই চেঙ্গিস খান। লোকটার অ্যাটিটিউড দেখলেই তার গা জ্বলে যায়। মনে যখন পড়েছেই তাহলে চেঙ্গিস খানকে কল করা যাক।

শুদ্ধ এই সময়ে নিজের জিমে থাকে। এক্সারসাইজ করার সময় সে ফোন সাইলেন্ট করে রাখে। তার কোনো কাজেই কারোর ইন্টারফেয়ার করা সে পছন্দ করে না। লাইফ নিয়েও সে ভীষণ সিরিয়াস। সারাদিনের বেশির ভাগ টাইম কাটে নিজের বিসনেস হ্যান্ডেল করতে করতে। তার ব্র্যান্ড এখন পুরো দেশে জনপ্রিয়। শুদ্ধ এক্সারসাইজ শেষে নিজের রুমে এলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হাতে নিতে দেখে একটা নাম্বার থেকে অনেকবার কল এসেছে।

শুদ্ধ তার হাতে থাকা তোয়ালে দিয়ে চুলের পানি মুছতে মুছতে কল ব্যাক করলো। কল ধরে ওপাশ থেকে মাহা বললো,” আপনি কি কানে শুনতে পান না? কতবার কল করলাম?”

” হঠাৎ আমার কথা এতো মনে পড়ছে কেনো?”, তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল শুদ্ধ।

” আমার একটা প্ল্যান আছে। আপনি কালকে আমার সাথে দেখা করলে আপনাকে বলবো।”

” সরি। আমার কাছে তোমার জন্য অফুরন্ত সময় নেই। এমনিতেই তুমি আজকে আমার সারাদিন বরবাদ করেছো।”

” টাইম না থাকলে টাইম বের করবেন, নয়তো আমি আপনার সারাজীবন বরবাদ করে ছাড়বো। কালকে বিকেল চারটায় আমার ভার্সিটির সামনে দাঁড়াবেন।” বলেই শুদ্ধর মুখের উপর সে ফোনটা কেটে দিলো। তাকে অর্ডার দিয়ে গেলো! শাহরিয়ার শুদ্ধকে? আবার তার মুখের উপর ফোন কেটে দিলো। আনবিলিভএবেল!

_______________

মাহা ভার্সিটির ক্লাস শেষে বের হতেই দেখলো ভার্সিটির গেটের সামনে মেয়েদের ছোটখাটো একটা ভিড় জমা হয়েছে। একজন আরেকজনের কানে ফিস ফিস করছে। মাহা এদিক ওদিক তাকালো তারপর অহনাকে বললো,” কি হয়েছে বলতো? কি নিয়ে এত মাতামাতি এদের?”

” আমি কিভাবে জানবো?” বলেই অহনা সামনে তাকালো। কিছুক্ষণ পর অহনা মাহাকে ডেকে বললো,” আচ্ছা শুদ্ধ দেখতে কেমন?”

মাহা ব্যাগ থেকে নিজের ফোন বের করতে করতে বলল,” মানে?”

” মানে! শুদ্ধ কি লম্বা? গায়ের রং ফর্সা? আর মুখে সবসময় সিরিয়াস ভাব থাকে?”, অহনার কথায় মাহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো,” তুই জানলি কিভাবে?”

অহনা মাহাকে সামনে তাকাতে ইশারা করলো। মাহা সামনে তাকাতেই দেখলো, শুদ্ধ নিজের গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তার পরনে ব্ল্যাক প্ল্যান্ট এন্ড ওয়াইট শার্ট কনুই পর্যন্ত ভাজ করা। বাম হাতের কব্জিতে ঘড়ি।

” লোকটা কি সবসময় এমন স্টাইল মেরে থাকে?”, বলেই অহনা মাহার দিকে তাকালো। মাহা মুখ বাঁকিয়ে বলল,” হুম।”

” তুই এমন একটা লোককে রিজেক্ট করছিস? পাগল নাকি?”

মাহা দাঁতে দাঁত চিপে বললো,” তুই আমার চোখের সামনে থেকে যা। এমনেই আমি বুঝতে পারছি না এইসব শকুনের চোখের সামনে আমি যাবো কিভাবে? আর এই চেঙ্গিস খানকে কে বলেছে এইভাবে আমার ভার্সিটির গেটের সামনে নিজের গাড়ি রাখতে?”

মাহা চট জলদি ফোন করতে নিলো শুদ্ধকে যেন সে নিজের গাড়ি নিয়ে একটু দূরে দাঁড়ায়। কিন্তু ফোন করার আগেই শুদ্ধ মাহাকে দেখে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। মাহার কপালে হাত! এবার আর তার রক্ষে নেই। এই ভার্সিটিতে তাকে নিয়ে আর গুজবের শেষ হবে না।

( চলবে )