জারুল ফুলের কাব্য পর্ব-২৬+২৭

0
202

#জারুল_ফুলের_কাব্য
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:২৬]

রজনীর আঁধার বিলীন হয়ে নতুন ভোরের আলো ফুটেছে ধরণীতে। সেই আলোর সঙ্গেই তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে বাড়িটিতে অবস্থারত সকল লোকজন। রন্ধনশালা থেকে ভেসে আসছে বাসনপত্রের ঝনঝন আওয়াজ। বাড়ির বউয়েরা সেই কাক ডাকা ভোরে বিছানার সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে এসেছে সকলের জন্য নাস্তার বন্দোবস্ত করতে। রান্না শেষে জয়নবের খাবার সবার আগে বেড়ে ফেললো উথমী। তারপর মালতী ফুফুর হাতে খাবার ভর্তি ট্রে তুলে দিয়ে বাচ্চাদের জন্য খাবার সাজানোয় মনোযোগ দিলো। অপরদিকে জেবা এবং সূচি মিলে টেবিলে সাজাচ্ছে বাদবাকি খাবার।

বেলা একটু বাড়তেই পুরুষেরা একে একে এসে বসলো খাবার টেবিলে। শাহানা গতকাল রাতেই পুত্রবধূদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, যতদিন বাড়িতে অতিথিরা থাকবে ততদিন বাড়ির ছেলে- মেয়েরা আগে খাবে। তাদের খাওয়া শেষ হলে খাবে বাড়ির বউয়েরা। এই নিয়মটা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। শাহানার শাশুড়ির তৈরি নিয়ম। তাই বাড়িতে সর্বপ্রথম বউ হয়ে আসার দরুণ নিয়মটা জেবার আগে থেকেই জানা। শুধু উথমীই যেনো নতুন করে জানলো।

খাবার টেবিলে মোটামুটি সবাই উপস্থিত হলেও ফাঁকা রয়ে গিয়েছে দুটো চেয়ার। সকলের খাওয়া অর্ধ সমাপ্ত হতেই সেখানে এসে উপস্থিত হলো তৈমূর এবং ছোটো চাচার ছেলে এহসান। তৎক্ষণাৎ সকলের দৃষ্টি গিয়ে পড়ল তাদের উপর। তুরাগ হাতের ছেঁড়া রুটিখানা মুখে পুরে ভাইদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়লো, “কোথায় গিয়েছিলি তোরা?”

প্রত্যুত্তর করল এহসান,“কোথায় আবার? বাজারে। তুমি তো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলে তাই বড়ো ভাবী আমাদেরকেই সকাল সকাল ফর্দ হাতে পাঠিয়ে দিলেন। এত্ত ভিড় না চারিদিকে! তাই ফিরতে দেরি হয়ে গেলো।”

বাজারের ব্যাগগুলো সূচি আর মালতী ফুফুকে দিয়ে রন্ধনশালায় পাঠিয়ে দেবরদের প্লেটে রুটি, তরকারি তুলে দিতে লাগলো জেবা। খাওয়ার ফাঁকে আবারো পুরো দমে শুরু হলো একে অপরের মধ্যে কথাবার্তা। তৈমূর খেতে খেতে নিরবে সেসব শুনছে। বাড়তি কথা বলা তার স্বভাব বহির্ভূত। স্বল্পভাষী মানুষ হওয়ায় ছোটো থেকেই সব স্থানে খুব বাধ্য না হলে হা হু ছাড়া মুখ থেকে তার তেমন কোনো কথাই বেরোতে চায় না।

শামীম বেশ কিছুক্ষণ ধরে আড়চোখে শ্যালকের নিরবতা লক্ষ্য করল। তারপর আচমকাই উচ্চস্বরে ঠাট্টা স্বরূপ বলে উঠলো,“আমাদের তৈমূর হচ্ছে একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ। জীবনে তার কোনো চিন্তা নেই, অশান্তি নেই, তার উপর চাকরি করা বউ পেয়েছে। বউয়ের পয়সায় শুধু আয়েশ আর আয়েশ!”

আকস্মিক ছোঁড়া বাক্যগুলো যেনো বিস্ফোরণ ঘটালো স্থানটিতে। সকলের দৃষ্টি গিয়ে আবারো স্থির হলো তৈমূরের পানে। নড়েচড়ে উঠলো তৈমূর। একপলক সবাইকে দেখে নিয়ে পুনরায় দৃষ্টি রাখলো নিজের খাবার প্লেটে। তুরাগ একবার দুলাভাই তো আরেকবার ছোটো ভাইয়ের পানে চাইলো। সবার মধ্যে চলা গুরুত্বপূর্ণ কথার মাঝখানে এমন এক উদ্ভট কথা খুবই বেমানান ঠেকলো তার নিকট। নিরবতা ডিঙিয়ে উৎসুক হয়ে প্রথম প্রশ্ন ছুঁড়লো ঝুমুরের স্বামী,“তোমার বউ চাকরি করে নাকি তৈমূর?”

এবারো সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো না তৈমূর। উপস্থিত সকলের মধ্যে বয়সে সবার বড়ো বুশরার স্বামী। এরপর একে একে ঝুমুরের স্বামী সজীব, তিথিয়ার স্বামী শামীম এবং রেণুকার স্বামী রাজীব। সজীবের করা প্রশ্নটির উত্তর শামীমই দিলো,“তা আবার বলতে? একেবারে সরকারি চাকরি করে। আপনারা তো বৌ ভাতের দিন এসে তার পরেরদিনই চলে গেলেন তাই হয়তো কিছু জানেন না। তৈমূরের কপাল বরাবরই ভালো। নইলে তাকে এতো মেয়ে দেখালাম অথচ তাদের কাউকে পছন্দ না হয়ে শেষমেশ কিনা….”

এতোটুকু বলেই থামলো সে। বাকি কথা না বলেই আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলো অনেককিছু। বরাবরের মতো এখনো তৈমূরের মুখভঙ্গি স্বাভাবিক। ভেতরে বয়ে চলা রাগের পারদ বাইরে থেকে দেখা যেনো বড়োই দুষ্কর। রন্ধনশালায় দাঁড়িয়ে এখনো রুটি বেলা চলমান রেখেছে উথমী। তাকে সাহায্য স্বরূপ অপরপাশে দাঁড়িয়ে রুটি ছ্যাঁকছে সূচি। এতো অচেনা পুরুষের সম্মুখে যাওয়ার সাহস তারা পায়নি। তাই জেবার কথায় ওদিকটাই সামলাচ্ছে দুজন। আর বাইরে পরিবেশনার কাজ করছে জেবা এবং বুশরা।

নিজেকে নিয়ে বাইরে আলোচিত প্রত্যেকটি কথাই শ্রবণাতীত হয়েছে উথমীর। যার কারণে চলন্ত হাতটা এক মুহূর্তেই থমকে গেলো তার। মনটা বিষিয়ে উঠলো। এতো এতো অচেনা পুরুষের মধ্যে তাকে নিয়ে এমন সব কথা চলছে! ভাবতেই শরীরটা কেঁপে উঠলো, অপমানে চোখে জমলো অশ্রু।

তুরাগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালালো। কথা ঘুরানোর উদ্দেশ্যে বললো,“আপনিও না দুলাভাই! এসব কেমন কথা? সব জেনেও ভুল তথ্য দিলে কেমন করে হয়?”

সবাই এবার উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রইলো তুরাগের পানে। তুরাগ হয়তো আরো কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না। তৈমূর মুখ খুললো। স্বভাবসুলভ অধরে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে তাকালো দুলাভাইয়ের পানে। শুধালো,“এতোগুলো মানুষের সামনে আপনি কি তবে বলতে চাইছেন, আমাদের বুবুকে বিয়ে করে আপনি দাম্পত্য জীবনে অসুখী দুলাভাই?”

এমন একটি কথা যেনো কিছুতেই আশা করেনি শামীম। আমতা আমতা করে বললো,“এটা কী বললে তৈমূর? তোমার বুবুকে নিয়ে আমি কতটা সুখী তা তুমি জানো না? তাও এসব প্রশ্ন করার মানে কী?”

“আমি তো অবশ্য এতোদিন ধরে তাই জানতাম কিন্তু আপনিই না এই মাত্র বললেন, তৈমূরের জীবনে অশান্তি নেই, ঝঞ্ঝাট নেই তাই মনে হলো।”

“তুমি কি রাগ করেছো? আমি কিন্তু কথাটা মজার ছলে বলেছি। শালার সঙ্গে মজা করবো না তো কার সঙ্গে করবো? তবে এটা তো মিথ্যে নয় যে তোমার বউ চাকরি করে আর সেই টাকা…..”

এবার আর বাক্যটি উনাকে সম্পূর্ণ করতে দিলো না তৈমূর। বিদ্রুপের সুরে বললো,“হ্যাঁ, আমি তো বেকার, মূর্খ মানুষ। বিয়ের আগে আপনার পয়সায় খেয়েছি আর বিয়ের পর খাচ্ছি বউয়ের পয়সায়।”

কথাটা যেনো সূচের মতো গায়ে গিয়ে বিঁধলো শামীমের। বাড়ি বয়ে গিয়ে তৈমূরের করা অপমানের কথা সে আগেই স্ত্রীর মুখ থেকে শুনেছিল। তাই ভেবেছিল ভরা মানুষের সামনেই না হয় তার কিছুটা শোধ তোলা যাক। কিন্তু এভাবে যে ছেলেটা তার মুখের উপর জবাব দিয়ে দিবে সে কথাটা কষ্মিনকালেও ভাবতে পারেনি শামীম। তাদের চলমান কথার মধ্যেই তৎক্ষণাৎ এহসান বলে উঠলো, “চাকরির কথা বলতেই মনে পড়ল! কয়েকদিন আগে না তুমি প্রমোশন পেয়েছো তৈমূর ভাই? একবারও আমায় জানালে না? এই ট্রিটটা কিন্তু তোলা রইলো বলে দিলাম।”

আড়চোখে দুলাভাইয়ের চুপসে যাওয়া মুখখানি একবার দেখে নিয়ে এহসানের দিকে দৃষ্টি স্থির করল তৈমূর। অবুঝের মতো বলে উঠলো,“আমি প্রমোশন পেয়েছি? কে বললো তোকে? আমি আবার চাকরি করি কবে থেকে? শুনলি না দুলাভাই কী বললেন? বউয়ের টাকায় আয়েশ করি, আমার কোনো চাকরি বাকরি আছে নাকি?”

ঠেস দিয়ে বলা কথাটা সকলেই খুব সহজে বুঝে গেলো। এমনকি শামীম নিজেও। তুরাগ ভাইয়ের এমন জবাবে ভেতরে ভেতরে সন্তুষ্ট হলো। আড়চোখে তাকালো নিজ স্ত্রীর পানে। জেবার মুখশ্রীতেও সন্তুষ্টি ফোটে উঠেছে। প্রসঙ্গ বদলে যাওয়া ধরলো। কিন্তু বদলাতে গিয়েও বদলালো না। রাজীব শব্দ করে মুখের খাবার চিবোতে চিবোতে বললো,“বাড়ির বাইরে গিয়ে মেয়ে মানুষের চাকরি বাকরি করা ভালো না। এদের কোনো বিশ্বাস নেই। কখন যে কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে তার ঠিক নাই। এরা স্বাধীনতা পেলে নষ্ট হয়ে যায়।”

এসব কথায় এবার ভীষণ বিরক্তবোধ করছে তৈমূর। এতোগুলো পুরুষের সামনে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে করা আলোচনা, সমালোচনা তার মেজাজ তুঙ্গে তুলে দিচ্ছে। এদের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এতক্ষণে ঠিকই কিছু একটা বলে দিতো তৈমূর কিন্তু বোন জামাই বলেই হয়তো তা আর পারছে না। শামীমও তাতে সায় জানালো,“আমিও তো এটাই বলি কিন্তু শালা আমার বুঝতেই চায় না। বউয়ের কথাতেই এখন সে চলে।”

মাঝপথেই খাওয়া থামিয়ে দিলো তৈমূর। এবার একটু কড়া বাক্যেই বললো,“বউয়ের কথাতে আর চলতে পারলাম কই দুলাভাই? আপনার মতো তো নিজের মা, ভাই-বোন, পরিবার, বাবার ভিটে বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরের দেওয়া ফ্ল্যাটেই এখনো উঠতে পারলাম না। আর না পারলাম নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে চাকরি ছেড়ে বউকে পটিয়ে শ্বশুরের থেকে ব্যবসায়ের জন্য টাকা আদায় করতে। এখনো কিন্তু বউ নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকছি।”

এবার রাজীবের দিকে তাকিয়ে অধরে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললো,“যার নষ্ট হওয়ার সে এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায় ছোটো দুলাভাই। তাকে যদি আপনি বদ্ধ ঘরে বন্দি করে রাখেন তবুও। আর যার ঠিক থাকার সে হাজারটা অপশন ছুঁড়ে ফেলে এমনিতেই ঠিক থাকে। একবার নিজের পরিবারের দিকেই তাকিয়ে দেখুন না। অতো আগে তো আর নারীদের এমন স্বাধীনতা ছিলো না তারপরেও আপনার মা!”

এর বেশি কিছু বলার আর প্রয়োজন হলো না তার। যা বুঝার বুঝে গেলো রাজীব। মিইয়ে গেলো সে। কোনো মতে সেখানেই খাওয়ার ইতি ঘটিয়ে দ্রুত হাতটা ধুয়ে মুখ লুকিয়ে ত্যাগ করল স্থান। বাইরে থেকে কথাগুলো শুনে তিথিয়া খাবার ঘরে প্রবেশ করল। এসেই ছোটো ভাইয়ের উদ্দেশ্যে রাগমিশ্রিত স্বরে বললো,“তুই কী তোর দুলাভাইকে খোঁটা দিচ্ছিস তৈমূ? আমি আমার বাপের থেকে পাওনা ওয়ারিশ নিয়ে যা করার করেছি। সেসব নিয়ে তুই বলার কে?”

“আমিও তো একই কথা বলতে পারি। আমাদের কী নিজের বাবার সম্পত্তিতে কোনো অধিকার নেই? নিজেদের বাড়িতে নিজের বউ নিয়ে থাকছি, আমার বউ যা ইচ্ছে করুক তাতে তোমরা বলার কে? কবেই তো নিষেধ করে দিয়েছিলাম আমার বউ নিয়ে কোনো গসিপ চলবে না।”

শামীম মিনমিনে স্বরে বললো,“আমি না হয় মজার ছলে কিছু কথা বলেছি তাই তুমি এভাবে অপমান করবে? শালার সঙ্গে তো দেখছি এখন আর মজাই করা যাবে না।”

“নিজের হাঁটুর বয়সী ছোটো শালার সঙ্গে মজা করাটা আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হলেও আমার কাছে আমার স্ত্রীর নামে পরপুরুষের করা মন্তব্য বড়োই দৃষ্টিকটু লাগে দুলাভাই। আমি সম্পর্কে আপনার শ্যালক হলেও আমার বউ আপনার জন্য পরনারী। হাঁটুর বয়সী বললেও ভুল হবে। তার থেকেও অনেক ছোটো সে। তাকে নিয়ে আপনি কোন আক্কেলে কথা বলেন? তার স্বামী কী জ্ঞানহীন, অবুঝ?”

এরপর বলার মতো আর কোনো কথাই খুঁজে পায় না কেউ। স্বামীর অপমান কিছুতেই যেনো তিথিয়া মেনে নিতে পারে না। দিনদিন তার শান্তশিষ্ট ভাইটা যে এমন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে ভাবতেই ভেতরে ভেতরে অবাক হয় সে। স্বামীর উদ্দেশ্যে কড়া কণ্ঠে বললো,“তোমাকে বলেছিলাম না, তৈমূর আর আগের তৈমূর নেই। অনেক পরিবর্তন হয়েছে ওর মধ্যে।”

“পরিবর্তন তো তোমাদেরও হয়েছে বুবু। বিয়েটা করে যেনো আমি মহা অন্যায় করে ফেলেছি। যা শুরু করেছো তোমরা! বারবার বলার পরেও অধিকারের বাইরে এসে কথা বলো। পরের বউ নিয়ে রসালো সব আলাপ করতে খুব ভালো লাগে তাই না?”

চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো তিথিয়ার। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,“এই বাড়িটা আমার বাবার। এই বাড়িতে আমারও সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে তাই অধিকার নিয়ে অতো বড়াই করিস না।”

এতক্ষণ সব কথা নিরবে শুনলেও শেষে বাধ্য হয়েই মুখ খুললো তুরাগ। এই প্রথম বোনের মুখের উপরই বলে বসলো সে,“ভুল বললে বুবু। মৃত্যুর আগেই কিন্তু সব সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা বাবা করে দিয়ে গিয়েছেন। আম্মা, তুমি নিজেই তো সাক্ষী। উইল অনুযায়ী দুতলা তৈমূরের আর একতলা হচ্ছে আমার। আর তাছাড়া আমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে তাই একতলা, দুতলা দিয়ে কারোরই কোনো মাথাব্যথা নেই। যদি সঠিক ভাগের কথা আসে তাহলে তুমি তোমার পাওনার থেকে বেশিই পেয়েছো।”

সামান্য এক কথা থেকেই ঘটনা মোড় নিলো সম্পত্তির দিকে। ভাই-বোনদের মধ্যে ঝামেলা লাগার উপক্রম হতেই মালতী ফুফু সুযোগ বুঝে ডেকে নিয়ে এলেন শাহানা এবং মঈনুদ্দিনকে। ঘটনা সবটা শুনে কথার মধ্যেই শাহানা আটকে দিলেন তাদের। মায়ের কথায় দুই ভাই চুপ হলেও চুপ হলো না তিথিয়া। অভিযোগের সুরে মাকে সবটা ইনিয়ে বিনিয়ে জানালো। তৈমূর এদের আর কোনো কথাই শোনার প্রয়োজনবোধ করল না। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বললো,“এতো কথা শোনার সময় নেই। এটা ভদ্র বাড়ি, মাছের বাজার নয়। অসুস্থ মানুষ দেখতে এসেছো তাকেই দেখো। এরপর থেকে আর অন্যের পরিবারের মেয়ে বউ নিয়ে কথা বলতে এসো না। তা মোটেও কারো জন্য ভালো হবে না।”

বলেই স্থান ত্যাগ করল সে। তুরাগও এই ঝামেলায় আর নিজেকে পুরোপুরি জড়ালো না। ছোটো ভাই বরাবরই তার থেকে বেশ বুদ্ধিমান তাই তার পিছুপিছু সেও সেখান থেকে চলে এলো।
__________

বাংলাদেশের আবহাওয়া বুঝা বড়োই দুষ্কর। এই ভূখণ্ড অতিষ্ঠ করা গা ঝলসানো রোদ তো এই আবার রিমঝিম বৃষ্টি। আধ বেলা সূর্যি মামা ধরণী জুড়ে দাপট চালালেও বিকেল থেকে অন্তরীক্ষে ধূসর মেঘ জমেছে।ক্ষণে ক্ষণে বেরিয়ে আসছে বিদ্যুৎ রশ্মি। সাথে হো হো করে বাড়ছে বাতাসের বেগ।

নিকটাত্মীয়দের অনেকেই ফিরে গিয়েছে নিজেদের বাড়ি। বাড়িতে এখন শুধু জয়নবের বড়ো এবং মেজো কন্যা, তিথিয়ারা, তুরাগ-জেবা, মঈনুদ্দিন-করবী আর তাদের ছেলে-বউ।

রাত সাড়ে নয়টা, মুখ ভার করে জেবার ঘরের বিছানায় বসে আছে উথমী। গত কয়েকদিনে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কটার বেশ উন্নতি হলেও আজ সারাদিনে তৈমূরের সঙ্গে কথা হয়নি তার। গত রাতেও খাওয়া শেষে ঘরে গিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শুতেই কখন যে ঘুমিয়ে কাঁদা হয়ে গিয়েছিল উথমী, সে খেয়ালও তার নেই। এমনকি স্বামী কখন ঘরে প্রবেশ করেছে তাও সে জানে না। এরপর সেই ভোরে ফজরের আজান হতেই ঘর থেকে যে বেরোলো তৈমূর আর ফিরলো নাস্তার টেবিলে। আর উথমীও নামাজ শেষে চলে গেলো রান্নাঘরে। তবে সকালের ওই বিচ্ছিরি ঘটনাটির পর যেনো নিজেকে আরো গুটিয়ে নিলো মেয়েটি। অমন একটি ঘটনা, স্বামীর অপমান, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টির জন্য দায়ী করতে লাগলো নিজেকে।

তারপরেও কীভাবেই বা সে স্বামীর মুখোমুখি হতো সে? নিজেকে আজ খুব অসহায় লাগছে উথমীর। জীবনটা এমন কেনো তার? যাকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় সেই যেনো তার থেকে দূরে সরে যায়। তাদের চোখে খারাপ হয়ে যায় সে।

জেবা ছোটো জায়ের চুল বেঁধে দিতে দিতে তার এই উদাসীনতা খেয়াল করে শুধালো,“মন খারাপ?”

উথমী নিজের ভাবনাতেই বিহ্বল। যার জন্য প্রশ্নটি তার শ্রবণালী পর্যন্ত পৌঁছালো না। তার এই নিরবতায় যা বুঝার বুঝে গেলো জেবা। চুল বাঁধা শেষ করে কানের কাছে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিলো কয়েকটি হাসনাহেনা ফুল। সম্মুখে এসে বসে মেকআপ সরঞ্জামের বক্সটিতে কিছু খুঁজতে খুঁজতে জিজ্ঞেস করল,“সকালের সেই ঘটনাগুলো নিয়ে এখনো ভেবে লাভ কী?”

ধ্যান ভাঙলো উথমীর। অনুভূতি শূন্য দৃষ্টিতে তাকালো জানালার বাইরে। মিনমিনে স্বরে বললো,“আমার জন্যই এই পরিবারে এতো অশান্তি। আমার সঙ্গে উনার বিয়ে না হলে কী আর এমনটা হতো?”

“নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে?”

“হ্যাঁ হচ্ছে।”

“তৈমূর কখনো এই অশান্তি নিয়ে তোমায় দোষারোপ করেছে? চড়াও হয়েছে?”

“উনি খুবই ভদ্র, সুন্দর মনের একজন মানুষ। কীভাবে যেনো সবটা সামলে নেন। চড়াও হওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

“তাহলে এতো মন খারাপ, নিজেকে হীন ভাবার যৌক্তিকতা কী? মানুষ কখনোই নিজের দিকে তাকিয়ে নিজের ভুলগুলো দেখে না। এরা দেখে শুধু অন্যের করা ভুল। ভুল না থাকলেও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তারা ভুল বের করতে উস্তাদ। সমাজ থেকে শুরু করে সংসার জীবন সবখানেই এসব চলে। তাই সবকিছু মনের মতো হয় না। একটা কথা সর্বদা মনে রাখবে, মানুষ কখনো একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে সুখী হতে পারে না। তাই কে কী বললো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। যদি কখনো ভুলও করো তবে কৌশলে সেই ভুলের জন্য স্বামীর থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবে। ব্যস জীবন সুন্দর।”

কিছুটা হলেও মন খারাপ কমলো উথমীর। প্রসঙ্গ বদলে বললো,“এই রাত বিরেতে কী এক পাগলামো শুরু করলেন? ঘরে গিয়ে তো ঘুমিয়েই পড়ব তাহলে অযথা এই সাজিয়ে দেওয়ার মানে কী?”

জেবা মোটা করে উথমীর দু চোখে কাজল লাগিয়ে দিয়ে বললো,“মেয়ে মানুষের আবার সাজের সময় অসময় আছে নাকি? তার উপর বিবাহিত মেয়ে! বাচ্চা-কাচ্চা বিহীন বিন্দাস লাইফ! কোথায় সেজে গুঁজে স্বামীর সামনে দিয়ে একটু রং ঢং করবে তা না, ঘুমিয়ে পড়ব।”

ফ্যালফ্যাল নয়নে জায়ের পানে তাকিয়ে রইলো উথমী। জেবা পুনরায় বললো,“তোমার ভাসুর আর আমার প্রেমের বিয়ে। তারপরেও বিয়ের পর কম জ্বালাতন তাকে করিনি। দেখা গেলো, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেছে। তখনি শোয়া থেকে উঠে শুরু হয়ে গিয়েছে আমার সাজগোজ। সেই সাজগোজ শেষে তাকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে জিজ্ঞেস করতাম, আমায় কেমন লাগছে?”

“ঘুম ভাঙিয়ে এমন প্রশ্ন! বকতো না?”

“বকার মতো সাহস আছে ওর? একটা ধমক দিলেই তো রেগেমেগে কথা বলা বন্ধ করে দিতাম। সেই রাগ চলতো সপ্তাহ খানেকের মতো। ব্যাটাকে কাছেও ঘেঁষতে দিতাম না। এরপরেও আর কোন স্বামী বউয়ের উপর বিরক্তি দেখাতে পারে?”

ফিক করে হেসে ওঠে উথমী। লাজুক স্বরে বলে,“তাই বলে ঘুম থেকে জাগিয়ে এমন ছেলে মানুষি? কেমন একটা বাড়াবাড়ি লাগে না?”

“তা তোমার কাছে লাগতেই পারে কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এগুলোই হচ্ছে ভালোবাসা। একটু খুনসুটি, দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া, ন্যাকামি, বাড়াবাড়ি স্বামীর সঙ্গে করবো না তো আর কার সঙ্গে করবো? তবে জোহান হওয়ার পর থেকে অনেক কিছুই বদলেছে। মা-বাবা হলে দায়িত্ব বেড়ে যায়। বাবা-মাকে চলতেও হয় অমন করেই যাতে সন্তানের চোখের সামনে সেসব না পড়ে।”

কালো শাড়ির সাথে হাত ভর্তি লাল টুকটুকে চুড়ি পরিয়ে দিয়ে সাজানোর সমাপ্তি টেনে মুখশ্রী গম্ভীর করে নিলো জেবা। কোনো ধরণের ভণিতা ছাড়াই এবার প্রশ্ন ছুঁড়লো,“তোমাদের সম্পর্কটা এখনো স্বাভাবিক হয়নি তাই না?”

“কই? সবই তো স্বাভাবিক।”

“মিথ্যে বলো না, সংসার জীবনের আট বছর পেরিয়ে এসেছি তাই যা বুঝার দেখলেই বুঝা যায়। বিবাহিত মেয়েদের মধ্যে আলাদাই একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যা তোমার মধ্যে আমি দেখতে পাচ্ছি না উথমী। বিয়ের পরের প্রথম কয়েকদিন যখন ছিলাম তখনও এক কাহিনী দেখেছি কিন্তু তখন কিছু বলিনি। ভেবেছিলাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো অনেকগুলো দিন পেরিয়েছে তারপরেও ঠিক হলো না? আজ সকাল থেকেই কিন্তু তোমায় আমি লক্ষ্য করছি।”

অপ্রস্তুত হলো উথমী। ভদ্রমহিলার ইঙ্গিতপূর্ণ কথাটা সহাস্যেই বুঝে গেলো সে। জেবা পুনরায় বললো, “সম্পর্কে এফোর্ড, প্রায়োরিটিই বেশি ম্যাটার করে উথমী। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে একটু বেশিই সংসারী হয়। তাই তোমার বয়সী মেয়েরা সবটাই জানে, সবটাই বুঝে। আমি কী বলতে চাইছি আশা করি তুমি বুঝতে পারছো?”

“হুম পারছি।”

আরো কিছু বলতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গেলো জেবা। জোরপূর্বক হেসে বললো,“রাত হয়েছে, ঘরে যাও তবে। শুভ রাত্রি।”

মাথা নাড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায় উথমী। বিদায় জানিয়ে জেবার ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা হাঁটা ধরে নিজেদের কক্ষের দিকে।

চলবে_________

#জারুল_ফুলের_কাব্য
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:২৭]

বৃষ্টি আসার আগ মুহূর্তটা সবচেয়ে সুন্দর। আর এই সুন্দর মুহূর্তটিকে আরো সুন্দর করে তুলতে অন্য কোনো সময় হলে হয়তো বসে বসে বই পড়তো তৈমূর। কিন্তু আজ সে উদাস মনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের ওই খোলা মেঘাচ্ছন্ন অন্তরীক্ষে। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটা। তারপর চোখ বন্ধ করে বার কতক দীর্ঘশ্বাস ফেলে পকেটে হাত গুঁজে আরো কিছুক্ষণ সেখানেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো সে। বৃষ্টির তেজ বৃদ্ধি পেতেই নড়েচড়ে উঠলো তৈমূর। ঘরের ভেতরে পা রাখতেই মুখোমুখি হলো প্রিয় রমণীর। তৎক্ষণাৎ পথিমধ্যে পা দুটো তার থমকে দাঁড়ালো। রমণীকে নতুন সাজে দেখে দৃষ্টিতে ছড়িয়ে গেলো মুগ্ধতা।

উথমী মাত্রই কক্ষে প্রবেশ করে দরজার ছিটকিনি লাগিয়েছে। তারপর সারা ঘরে স্বামীকে খুঁজে না পেয়ে অনুমানবশত পা বাড়িয়েছিল বারান্দার দিকে। তখনি সেখান থেকে তৈমূরকে বেরিয়ে আসতে দেখে থেমে দাঁড়ালো সে। চোখাচোখি হলো দুজনার। আজ আর ব্যস্ত হয়ে সেই চশমায় ঢাকা নদীর মতো সরল, সুগভীর আঁখি যুগলের থেকে দৃষ্টি সরালো না উথমী। মনোযোগী গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওই চোখে। খুঁজে ফিরলো কিছু। এক মুহূর্তের জন্য হৃদস্পন্দন যেনো থমকে গেলো তার।

মেয়েটির এহেন দৃষ্টিতে অপ্রস্তুত হলো তৈমূর। মনোযোগ ঘুরাতে খুক খুক করে বার কতক কেশে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো পালঙ্কের ওপাশে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে চার্জে বসাতে বসাতে জিজ্ঞেস করল,“কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?”

বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আবারো স্বামীর পানে দৃষ্টি স্থির করল উথমী। প্রত্যুত্তরে বললো,“ভাবীর ঘরে।”

বিপরীতে নিরব রইলো তৈমূর। সেখান থেকে সরে গিয়ে সোজা ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল সোফায়। স্বামীর এই নির্লিপ্ত ভঙি দেখে ভেতরে ভেতরে চরম ক্ষুব্ধ হলো উথমী। রাগটাকে গিলে ফেলে প্রশ্ন ছুঁড়লো,“রাতে খেলেন না যে?”

“সন্ধ্যায় নাস্তা করেছিলাম তাই আর খিদে পায়নি। আপনি খেয়েছেন?”

প্রশ্নটির কোনো উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লো উথমী,“কেমন লাগছে আমায়?”

“সুন্দর।”

“শুধুই সুন্দর?”

প্রশ্নটিতে কৃত্রিম হেসে স্ত্রীর পানে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো তৈমূর। শীতল কণ্ঠে বললো,“সুন্দর মানুষদের সব ভাবেই সুন্দর লাগে। সাজলেও, না সাজলেও।”

প্রশংসাটি মোটেও পছন্দ হলো না উথমীর। মনটা ভীষণ খারাপ হলো তার। অন্যদিনের তৈমূরের থেকে আজকের তৈমূরকে যেনো তার কাছে ভিন্ন এক মানুষ মনে হচ্ছে। যার কথাবার্তায় কোনো প্রাণ নেই। নেই তার হাসিতে সজীবতা। সকালের ঘটনাটির কারণেই কি তবে?

বাইরে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। বাতাসের বেগ হো হো করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।বিছানা থেকে নেমে নিরবে বারান্দার দিকে পা বাড়ালো উথমী। তৈমূর তা দেখলো। বলে উঠলো,“আপনি চাইলে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়তে পারেন।”

পথিমধ্যে থেমে দাঁড়ালো উথমী। জিজ্ঞেস করল, “আপনি শোবেন না?”

“না, দেরি হবে।”

“অফিসে আবার কাজের চাপ বেড়েছে?”

“না।”

“তাহলে?”

“গতকালকের কিছু কাজ বাকি আছে, ঘুমিয়ে পড়ুন আপনি। কাল তো কলেজ যেতে হবে।”

“উহুম, বন্ধ দিয়ে দিয়েছে।”

“বন্ধ? কীসের?”

“কীসের আবার? এই সপ্তাহের পরের সপ্তাহে যে ইদ সেকথা ভুলে গিয়েছেন?”

“ভুলিনি।”

“আপনার অফিস বন্ধ দিবে কবে?”

“সম্ভবত ইদের তিন চারদিন আগে দেয়। আবার সপ্তাহ পেরোনোর আগেই খুলে দেয়।”

“এতো দেরি করে ছুটি দিয়ে এতো তাড়াতাড়ি খুলে দেয়? এটা আবার কেমন দুর্নীতি?”

“সরকারি চাকরি নয় যে এতো সুযোগ-সুবিধা থাকবে। প্রাইভেট কোম্পানি তাই ছুটি অল্পই থাকে। বেশি ছুটি দিলে কোম্পানির লস।”

“তাহলে আপনার বিসিএস দেওয়া উচিত ছিলো।”

“লাভ কী?”

“এতো কাজ করতে হতো না, অনেক সুযোগ-সুবিধা পেতেন।”

“লাভ কী এতো সুযোগ সুবিধার? যদি বেতনই কম থাকে।”

“তাও অবশ্য ঠিক।”

কথা শেষে সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে বারান্দায় চলে এলো উথমী। বাতাসের সাথে সাথে বৃষ্টির তেজ বাড়ছে। বারান্দার অর্ধেকটা ইতোমধ্যে ভিজে গিয়ে জমেছে বৃষ্টির পানি। সাথে ভিজছে উল্টিয়ে রাখা বেতের চেয়ার এবং টেবিলটা। শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে দু হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দিতে লাগলো উথমী। চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে জায়গাটিতে সৃষ্টি হলো ভুতুড়ে এক পরিবেশ। একসময় রেলিং শক্ত করে ধরে দেহের অর্ধেকটা বাইরে বাড়িয়ে বৃষ্টির জলে গা ভেজাতে লাগলো উথমী। আকাশ থেকে ক্ষণে ক্ষণে বেরিয়ে আসছে মেঘের গর্জন। মাটিতে পড়া বৃষ্টির ফোঁটার শব্দ ব্যতীত শোনা যাচ্ছে না আর তেমন কোনো শব্দ। তন্মধ্যে আচমকা তার ডান হাতের কব্জি ধরে হেঁচকা টানে তাকে সরিয়ে নিয়ে এলো কেউ। মুহূর্তেই শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো উথমী। মাথা গিয়ে ঠেকলো পুরুষালি প্রশস্ত বক্ষে। তৈমূর গম্ভীর এবং কঠিন স্বরে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, “মাথা কী গেছে আপনার? এই রাতবিরেতে ভিজছেন কেনো? অসুখ করলে? তার উপর রেলিং এখন পিচ্ছিল। নিচে পড়ে গেলে হাড়গোড় তো সব ভেঙে যাবে।”

কথাগুলো চুপচাপ শুনে মাথা উঁচু করে স্বামীর মুখপানে তাকায় উথমী। কয়েক সেকেন্ড নিরব থাকে। তারপর হুট করেই ভোঁতা মুখে বলে ওঠে,“আপনি না একটু বেশিই লম্বা তৈমূর সাহেব। আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা শুনতে কিংবা বলতে বলতে কবে যেনো আমার ঘাড়টাই ভেঙে যায়।”

গুরুত্বপূর্ণ কথার মধ্যিখানে নিজের সম্পর্কে স্ত্রীর মুখ থেকে এমন একটি উদ্ভট কথা যেনো কিছুতেই আশা করেনি তৈমূর। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে প্রত্যুত্তর করল,“বেশি সমস্যা হলে না তাকিয়েই বলতে পারেন।”

“সামনে এতো হ্যান্ডসাম একটা জামাই রেখে তার দিকে না তাকিয়ে কথা বলবো? এমন একটি কথা কোন আক্কেলে বললেন আপনি? আপনাকে বললে আপনি আমার দিকে না তাকিয়ে থাকতে পারবেন?”

মুখশ্রী থেকে গম্ভীরতা বিলুপ্তি হয়ে বোকা বনে গেলো তৈমূর। নিজের সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনে কী লজ্জা পেলো সে? বুঝা গেলো না তা। তৈমূর ছেলেটার গায়ের রং ফর্সা না হলেও সরাসরি তাকে কালো মানুষদের কাতারে ফেলা যায় না। চেহারা কিছুটা অনুজ্জ্বল, নদীর স্রোতের মতো সরল, সমুদ্রের মতো সুগভীর দুটো চোখ তার সাথে লাগোয়া সরু নাক, গাল থুতনি ভর্তি চাপ দাড়ি, মাথায় ঘন কালো চুল। আজ তার এই সৌন্দর্য না চাইতেই খুব করে আকৃষ্ট করছে উথমীকে। মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে ছড়িয়ে গিয়েছে একটি কথা, তৈমূর সুন্দর! তার চোখ সুন্দর, তার ঠোঁট সুন্দর, তারচেয়েও অধিক সুন্দর তৈমূরের ব্যক্তিত্ব। তাকে এই মুহূর্তে নিজের করে না পেলে যেনো জীবনটাই বৃথা।

বাইরের ঝড়ো হাওয়া এসে মেয়েটির কপোলে, ললাটে বৃষ্টির পানিতে ভিজে লেপ্টে থাকা খুচরো চুলগুলো উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় অবিরত। কপোল থেকে গড়িয়ে পড়া পানির ফোঁটা গলা দিয়ে বেয়ে শাড়ির ভাঁজে এসে বিলীন হচ্ছে। নিষ্পলক দৃষ্টিতে সেসব অবলোকন করল তৈমূর। স্ত্রীর দিকে কিছুটা ঝুঁকে এলো। দৃষ্টি গিয়ে স্থির হলো গলার নিচে হীরের মতো চিকচিক করা কুচকুচে কালো তিলটির উপর। চুম্বকের ন্যায় ঘোরের অতল গহ্বরে আটকে গেলো পুরুষটি। ইচ্ছে জাগলো নরম ঠোঁটে সেই তিলটি ছুঁয়ে দিতে।

নিজের ইচ্ছেকে রুখে দিতে চাইলো তৈমূর। নিজেকে সংযত রাখার অবিচল চেষ্টায় রত হলো। সেদিক থেকে দৃষ্টি সরাতে গিয়েও পারলো না। বরং এবার তার দৃষ্টি গিয়ে থামলো মেয়েটির উন্মুক্ত ফর্সা উদরে। কালো শাড়ির ভাঁজে সুন্দর দেহটা যেনো আবেদনময়ী ঠেকছে পুরুষালি দৃষ্টিতে। শরীরের ভেতরে ধীরে ধীরে পুরুষত্ব জেগে উঠার জন্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। নিঃশ্বাস ভারি হলো। বিপরীত লিঙ্গে মারাত্মকভাবে টান অনুভব করল।

কোনো এক অদ্ভুত কারণে আজ এই মুহূর্ত থেকে নিস্তার পেতে চাইছে তৈমূর। কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলার আগেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। মেয়েটি তার স্ত্রী, তার জন্য তার পুরুষালি মনে একচ্ছত্র অনুভূতির আধিপত্য রয়েছে। জীবনের বিশাল এক জায়গা জুড়ে বাস করছে সে। আছে দুজনার মধ্যে হালাল সম্পর্ক। আর সেই সম্পর্কের জেরেই হয়তো মস্তিষ্ক হেরে গিয়ে জিতে যেতে চাচ্ছে শারীরিক চাহিদা। শুকনো ঢোক গিলে জিভের ডগায় ঠোঁট ভেজালো তৈমূর। সরে যাওয়ার প্রয়াস চালালো কিন্তু পারলো না।

উথমীর জ্বলজ্বলে চাহনি তখন ওই ভেজা ঠোঁটে নিবদ্ধ। কর্ণে তার পৌঁছাচ্ছে না কোনো শব্দ। পুরুষটির প্রেমে এতোটাই সে মত্ত হয়ে গিয়েছে যে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পায়ের আঙুলে ভর করে উঁচু হয়ে দাঁড়ালো। বিলম্ব না করে লাজ লজ্জা ভুলে নরম ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা ছুঁয়ে দিলো অপর জোড়া ওষ্ঠ। দুই হাত দিয়ে লোকটির গলা জড়িয়ে ধরে তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় শুষে নিতে লাগলো মসৃণ পুরুষালি পুরু ঠোঁট।

জীবনের প্রথম অথচ এতো গভীর মেয়েলি স্পর্শে কেঁপে উঠলো তৈমূর। ভারসাম্য হারাতে হারাতেও ডান হাতটি মেয়েটির অনাবৃত কোমরে আর বাম হাতটি রেলিংয়ের সাথে চেপে ধরে সামলে নিলো নিজেদের। রমণীটিকে বাঁধা দেওয়ার বদলে আরো প্রশ্রয় দিলো। দুজনার মধ্যে সৃষ্ট সকল দূরত্ব ঘুচিয়ে নিয়ে নির্ভর হয়ে গেলো তার উপর। এই সামান্য প্রশ্রয়ে উথমী যেনো সব তালগোল হারিয়ে ফেললো। হয়ে গেলো পাগলাটে সঙ্গী।

দূরে কোথাও বাজ পড়ার শব্দ হলো। সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হলো বিদ্যুৎ। চারিদিক হয়ে উঠলো গা ছমছমে, আঁধারে ঘেরা। আকাশের বুক চিরে বেরিয়ে আসা আলোকরশ্মি কিছু সেকেন্ডের জন্য আলোকিত করে দিয়ে গেলো ধরণী। যুগল দুজন ক্লান্ত হয়ে একে অপরের ঠোঁট ছেড়ে ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে। উথমী দেহের ভারসাম্য ছেড়ে দিয়ে মাথা গুঁজেছে পুরুষালি বুকে। তৈমূর এক হাতে ধরে রাখলো তাকে। অত্যন্ত কোমল এবং কম্পিত স্বরে ফিসফিস করে বললো, “এখানেই থেমে যাওয়া উচিত উথমী। নইলে ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যাবে।”

এই অন্ধকারেই মুখ তুলে বিপরীতে দাঁড়ানো মানুষটির পানে সুগভীর দৃষ্টিতে তাকালো উথমী। ক্ষণে ক্ষণে এসে আলোকিত করা প্রাকৃতিক আলোতে যতটুকু দেখা যায় ততটুকু দেখেই অচেতন মনে, এলোমেলো বাক্যে বললো,“হোক।”

“পরে আফসোস হলে?”

“আমায় ভালোবাসেন না তৈমূর?”

ছোট্ট একটি বাক্য অথচ তাতেই বুকটা কেঁপে উঠলো তৈমূরের। আবারো ঝুঁকে এলো। কপোলে হাত রাখলো আলতো করে। ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এলো অতি সত্য একটি শব্দ,“বাসি।”

“তাহলে হোক বাড়াবাড়ি? আমি তো আপনারই।”

বেসামাল হয়ে উঠলো তৈমূর। ‘আমি তো আপনারই’ বাক্যটি মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে ছড়িয়ে যেতেই স্ত্রীর কোমর চেপে ধরে নিজের অতি নিকটে টেনে নিলো তাকে। কানের ধারে গুঁজে রাখা ফুলগুলোর মিষ্টি ঘ্রাণ টেনে নিলো নাসারন্ধ্রে। বন্ধ চোখের পাতা, কপোল থেকে শুরু করে সারা মুখে অনবরত চুম্বন এঁকে মুখ নামালো গলায়। মাথা নষ্ট করা সেই তিলটিতে কামড় বসিয়ে গাঢ় চুমু দিলো। তার প্রতিটি স্পর্শে কেঁপে উঠছে উথমী। মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে ব্যথাতুর শব্দ। কিন্তু বাঁধার বদলে সে দিচ্ছে সায়। তাতেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে শান্তশিষ্ট এক পুরুষ। রমণীকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ঠাঁই নেয় পালঙ্কে। মত্ত হয় ভালোবাসা, উন্মাদনা, আদরে। সকল দূরত্ব ঘুচিয়ে চার দেয়াল আর এই সুন্দর একটি বৃষ্টিমুখর রজনীকে সাক্ষী রেখে এক দম্পতি মিলেমিশে একাকার হয়। মেটায় তাদের শারীরিক তৃষ্ণা।
_____________

সারারাত মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার পর শেষরাতে এসে বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমেছে। রাতের আঁধারে হঠাৎ করে জেগে উঠেছে নিস্তব্ধ ফুলকুঞ্জ। চারিদিকে চিৎকার চেঁচামেচি আর কান্নার আওয়াজে কাঁচা ঘুমটা হালকা হয়ে গেলো তৈমূরের। দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে। সেই শব্দে বুকের উপর থেকে উথমীকে সরিয়ে আলস্যে উঠে বসলো সে। হাত বাড়িয়ে অতি কষ্টে চশমাটা খুঁজে পেয়েও মুখ ভার হলো। চশমার বাম গ্লাসে বিশাল এক ফাটল ধরেছে। কিন্তু কখন হলো এমনটা? ওই প্রেমময় মুহূর্তে? কীভাবেই বা হলো? অসাবধানতাবশত?

দরজার আওয়াজ ক্রমশ বেড়ে চললো। এবার ভেসে এলো মেয়েলি ডাক,“তৈমূর! এই তৈমূর!”

রাতে দেরিতে ঘুমানোর ফলে মাথায় চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়েছে তৈমূরের। মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করতেই কণ্ঠস্বরের মালিককে চিনে ফেললো সে। সকাল কী হয়ে গিয়েছে? প্রশ্নটি মাথায় রেখে কাঁচের জানালায় দৃষ্টি রাখলো। না এখনো সকাল হয়নি। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। পাশে শুয়ে থাকা শুভ্র চাদরে মোড়ানো রমণীর পানে এবার তাকালো তৈমূর। ড্রিম লাইটের আলোয় চেহারা তার সুস্পষ্ট। কি নিষ্পাপ তার মুখশ্রী! হাত বাড়িয়ে তার মুখখানি ছুঁয়ে দিতে চাইলো কিন্তু পারলো না। আবারো কর্ণে ভেসে এলো সেই ডাক। ক্লান্তির নিঃশ্বাস ফেলে উথমীর গায়ের চাদরটা আরেকটু টেনে দিয়ে নিজের টি-শার্টটা পরে উঠে দাঁড়ালো তৈমূর।

ঘরের আলো জ্বেললো না। দরজার ছিটকিনি খুলে এক পাটা ফাঁকা করে মাথা বের করতেই দৃষ্টিগোচর হলো ভাবী জেবাকে। চোখেমুখে তার চিন্তা, উদ্বিগ্নতা। সে অতো খেয়াল করে তাকালো না দেবরের দিকে। উদগ্ৰীব হয়ে বললো,“ওদিকে তো সর্বনাশ হয়ে গেছে তৈমূর! বড়ো চাচী আর নেই। ফজরের আজানের একটু আগেই মারা গেছেন।”

চমকালো, থমকালো তৈমূর। কথাটা বোঝার জন্য সময় নিলো কয়েক সেকেন্ড। এমনটা যে হবে আগে থেকেই হয়তো কিছুটা আঁচ করেছিল সে। মুখ দিয়ে আপনাআপনি বেরিয়ে এলো,“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।”

জেবা আবারো তাড়া দিয়ে বললো,“বাড়ির সবাই এখন ওখানে। তাড়াতাড়ি এসো তোমরা।”—-তারপর আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না সে। ছুটে চলে গেলো সিঁড়ির দিকে। গন্তব্য তিনতলা।

দরজা আটকে ঘরের আলো জ্বেলে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তৈমূর। মৃত্যুর সংবাদ শুনে এখন আর সে দুর্বল হয় না। শেষ যেদিন খুব দুর্বল হয়েছিল সেদিন পিতার লাশটা তার সম্মুখে ছিলো। মেয়েদের মতো সবার সম্মুখে হাউমাউ করে কাঁদতে না পারলেও চোখ বেয়ে তার পানি ঝরেছে। চার দেয়ালের ভেতর বুকে কষ্ট নিয়ে তিলেতিলে যন্ত্রণা ভোগ করেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তৈমূর। চশমার অন্তরালে কী অশ্রু জমেছে চোখে? হয়তো। যতোই হোক চাচী তো! মায়ের মতোই। ছোটো থেকে এক বাড়িতে থেকেছে, মায়ের পরে সেই তো শাসন করেছে তাদের।

ভাঙা চশমাটা বড়ো অবহেলায় ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে নতুন আরেকটি চশমা বের করে চোখে পরে নিলো তৈমূর। আর কোনোদিকে না তাকিয়ে ভ্রমের মধ্য দিয়েই চলে গেলো বাথরুমে।

পাশে স্বামীকে না পেয়ে, লাইটের কৃত্রিম আলোয় আচমকাই ঘুমটা ভেঙে গেলো উথমীর। কোনোমতে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। খোলা চুলগুলো খোঁপা করে চারিদিকে দৃষ্টি বুলালো। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পোশাক আশাক দেখে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো তার মুখশ্রী। বাথরুমের দরজা খুলে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো তৈমূর। জেগে ওঠা স্ত্রীকে দেখেও কোনো অনুভূতি কাজ করল না তার ভেতর। তোয়ালেটা সোফায় রেখে না ঘুরেই বললো,“দরজাটা আটকে দিন। ভালো করে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসুন। বড়ো চাচী মারা গেছেন।”

সকল লাজ লজ্জা নিমিষেই বিলুপ্ত হলো রমণীর অঙ্গ থেকে। চমকিত স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়লো,“কিহ! বড়ো চাচী…. কখন? কীভাবে?”

“ সঠিক জানা নেই। ভাবী এসে জানিয়ে গেলো। আমি সেখানেই যাচ্ছি, আপনি তৈরি হয়ে আসুন।”

আর দাঁড়ালো না তৈমূর। দরজা ভিড়িয়ে চলে গেলো বাইরে। উথমী কান পেতে শুনলো বাইরে থেকে ভেসে আসা মেয়েলি কান্নার শব্দ। মুহূর্তেই বুকটা কেঁপে উঠলো তার। গতকাল সন্ধ্যায়ও গিয়ে সে জয়নবের সঙ্গে কথা বলে এসেছে। আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ হয়েছেন ভদ্রমহিলা। অথচ এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই? মানুষের মৃত্যু কত নিকটে! ভাবতেই কষ্ট হয় উথমীর। মৃত্যু ভয়ে ভীত হয় মন।

সকল কিছু ভুলে বসে। অন্তরে গেঁথে থাকে শুধু একটি শব্দ আর তা হলো মৃত্যু।

চলবে _________

(কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)