#প্রিয়_পৌষমাস ২৫.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️
সকাল হতেই নতুন এক মহাযুদ্ধে নিজেকে জড়িয়েছে পৌষী। রাত থেকেই এমনিতেই মাথা ধরে আছে। একে তো আরাভের বিরূপ আচরণ, তার প্রতি অভিযোগের বহর দেখে। আবার অন্যদিকে তার মায়ের হুমকি ধামকি। সে না’কি রাতে আরাভের কোনো খেয়ালই রাখেনি। এজন্য আরাভ অভুক্ত এখনো। কিন্তু সেও তো রাতে খায়নি, এটা তো বলল না। এখন তাকে না’কি এই ঘুমন্ত আরাভকে জাগাতে হবে, তাকে তুলে খাওয়াতে হবে। এটাই বউ হিসেবে প্রধান দায়িত্ব তার। সেই কখন থেকে আরাভকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরাভের রুমের অবস্থা যাচ্ছেতাই। সিগারেটের বিদঘুটে গন্ধে তার বমি আসার উপক্রম। কোন রকম নাক চেপে দাঁড়িয়ে আছে। বার কয়েক ডাকল সে, আরাভ ভাই, ঘুম থেকে উঠ। কিন্তু আরাভের নড়চড় নেই। কিঞ্চিৎ সাড়াও দিল না তার ডাকে। চিৎপটাং হয়ে কেমন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। রাতে সে কম্বল পরিয়ে গেছে। কিন্তু তার হুঁশ নেই। নিরুপায় হয়ে অন্য উপায় অবলম্বন করল। হাতের কাছে পানির জগ ছিল। তার থেকে মুঠো ভরে পানি নিয়ে আরাভের মুখে ছিটিয়ে দিল। এতে অবশ্য কাজ হল।
আকস্মিক পানির ছিটায় আরাভ নড়ে উঠল। বদ্ধ দু’চোখে চেঁচিয়ে বলল, পড়ে গেলাম পানিতে, বাঁচাও আমাকে। কিন্তু চোখ খুলতে পৌষীকে দেখে হা হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করল, ‘কে তুমি?’
পৌষী দু’চোয়াল শক্ত করে বলল, ‘ভূত।’
‘রাতে এসো, এখন আমাকে ঘুমাতে দাও।’
‘আজকে আমার দিনে ডিউটি পরেছে। তোমাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য এসেছি, উঠো জলদি।’
‘এত কাজ থাকতে তুমি আমাকে উঠানোর দায়িত্ব নিতে গেলে কেন?’
‘তোমাকে আম্মু ডাকছে, জলদি উঠো।’
আরাভ বিড়বিড় করল, আম্মু, কোন আম্মু? দু’চোখে তখনও ঘুমের রেশ। মনে পড়তেই তড়াক করে বিছানা থেকে নামল। তার ছোট আম্মু তাকে ডেকেছে। দু’পায়ে দু’রকম জুতা পরে বেরুনোর উদ্দেশ্য দাঁড়াল। পৌষী অবাক হল। এভাবে বাইরে যাবে। আরাভ কিছুটা এগোতেই পৌষী তার সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। চোখ পাকিয়ে বলল, ‘আরে, কোথায় যাচ্ছো এভাবে?’
‘ছোট আম্মুর কাছে।’
‘একদমই না।’
‘ আশ্চর্য তো! আমাকে ছোট আম্মু ডেকেছে আমি যাবো না।’
‘না, যাবে না।’
আরাভ পৌষীর কথা অগ্রাহ্য করে পুনরায় দরজার দিকে ছুটল। নিরুপায় হয়ে পৌষী তার গায়ের টিশার্টের এককোণা চেপে ধরল। আরাভ হকচকিয়ে গেল মুহুর্তে। দুচোখ গোল গোল করে বলল,
‘এভাবে জামা ধরে টানাটানি কর কি জন্য? মুখে বলতে পার না।’
‘তুমি গোসল করে তারপর বাইরে যাবে?’
‘গোসল করতে হবে কেন? আমি কি বাসর করেছি না’কি?’
পৌষী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল যেন। রাতে মহাপুরষ সেজে তার কাছে বিষাদ বিসর্জন করল। আর এখন বেহায়ার মত বেফাঁস বাক্যে আওড়াচ্ছে। বেদ্দব লোক। সে চোখমুখ কুঁচকালো। নাক সিটকে বলল,
‘তোমার গায়ে সিগারেটের বিশ্রী গন্ধ আরাভ ভাই। এভাবে আম্মুর সামনে যাবে। ইয়াক, আমার তো নিজেরই বমি আসছে।’
হুট করে আরাভের মুখাবয়ব বদলে গেল। মুখের কোণে কিঞ্চিৎ বক্র হাসি। ভৎসনা করে উঠল নিজেই নিজেকে। বলল,
‘খুবই বাজে গন্ধ, তাই না পৌষমাস?’
‘হুমম।’
আচম্বিত আরাভের দু’ঠোঁট প্রসারিত হল। পৌষী বুঝার আগেই শুরু হল তার মহাপ্রলয়। আচমকাই ঘটল ওষ্ঠদ্বয়ের সন্ধি। নিকোটিনে পোড়ানো আরাভের সেই কালচে দু’ঠোঁট একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করল পৌষীর ওষ্ঠদ্বয়ে। আকস্মিক এমন ওষ্ঠাপুটে সে হতরুদ্ধ প্রায়। কস্মিনকালেও ভাবেনি এমন কিছু। সিগারেটের বিদঘুটে গন্ধ তার মুখের ভেতরে এখন। দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা প্রায়। শেষে না পেরে আরাভের চুল টেনে ধরল। কিন্তু আরাভ যেন অপ্রতিরোধ্য, বেপরোয়া। তাকে আটকাতে নখ দিয়ে খামছি কাটল জোরে। এতে বোধহয় কাজ হল। আরাভ তার ওষ্ঠাধর ছেড়ে দিল আলগোজে। কিন্তু হাতের বাঁধন শক্ত করে কোমর জড়িয়ে ধরল। মিহি গলায় হুমকি ছুঁড়ল তার উদ্দেশ্যে।
‘আর কখনো গন্ধ বললে এর থেকেও কঠিন শাস্তি দেব, পৌষমাস।’
নিজের মুখে হাত রেখে পৌষী দৃষ্টি নামিয়ে রেখেছে। চোখাচোখি হল না আর। কিন্তু নিজমনে কিছু অশ্রাব্য গালি ছুঁড়ল, অসভ্য, বেহায়া, খবিশ লোক। আরাভ তাকে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। পৌষীও সুযোগ পেয়ে রুম থেকে বাহির হয়ে এল। এ লোকের সামনে সে আর আসবে না। একদমই না। তার এখনো কেমন যেন লাগছে। পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। মাথাও ভনভন করছে। এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না সে। নিজের রুমে যাওয়ার পথে প্রিয়ার সাথে দেখা হল। সে বলল,
‘আরাভ কোথায়? তোকে কখন পাঠালাম তাকে ডাকতে। ও উঠেনি এখনো?’
পৌষী বিরক্ত হল মায়ের কথায়। বলল,
‘জানি না, মন চাইলে তুমি ডাকো। আমাকে বিরক্ত কর না’তো।’
তারপর হনহনিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করল। প্রিয়া হা হয়ে মেয়ের যাওয়া দেখল শুধু। সে ভেবেই পায় না। তার মেয়েটা কি এখনো বাচ্চা? স্বামী-সংসার কবে বুঝবে সে। কোথায় আরাভকে বোঝার চেষ্টা করবে, তা না? তার বাপটাও হয়েছে এমন? এদের নিয়ে সে পড়েছে মহা বিপদে।
আরাভ খাবার টেবিলে এসে দাঁড়াল। প্রিয়া তাকে দেখে বলল, বস বাবাজী। আরাভ হাসিমুখে গিয়ে বসল চেয়ার টেনে।
প্রিয়া আবার বলে উঠল, ‘এত দেরি হল কেন আসতে? সেই কখন পৌষীকে ডাকতে পাঠালাম।’
আরাভের মুখে লাজুক ভাব। বলল,
‘তোমার মেয়ে তো আমাকে গোসল না করে বেরুতেই দিচ্ছিল না রুম থেকে। তো আমি কি করব বল?’
প্রিয়া ভীষণ লজ্জা পেল। কি জিজ্ঞেস করে ফেলল সে। আরাভ অবুঝের মত হয়ত বলে ফেলেছে তাকে। তাই ভেবে নিল আনমনে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শাসালো বেশ। তারপর কোন বাক্য বিনিময় ছাড়া খাবার পরিবেশন করল। আরাভ খাবার নিয়ে বসে আছে। চোখ বুলিয়ে দেখল তার প্রিয় খোলা চিতই পিঠা আর গরুর মাংস টেবিলে সাজানো আছে। সেই দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ছোট আম্মু, তোমার মেয়ে কই?’
প্রিয়া বার কয়েক ডাক দিল পৌষীকে। কিন্তু তার সাড়াশব্দ না পেয়ে রুমে ছুটল ডাকার জন্য। বের হচ্ছে না দেখে শেষে ধমক দিল। পৌষী ত্রস্ত পায়ে খাবার রুমে এল। প্রিয়া আরাভের পাশের চেয়ারে বসতে বলল। দু’চোখ এখনো নামিয়ে রেখেছে সে। চেয়ার টেনে বসতেই আরাভ দুষ্টু হাসল। মুখে পিঠা পুরতে পুরতে বলল, ‘আমাকে গোসল করালে অথচ তুমি নিজে গোসল কর নি কেন, পৌষমাস?’
পৌষী থ হয়ে গেল। আশেপাশে চোখ বুলাতে দেখল, তার মা তাদের থেকে কিঞ্চিৎ দূরত্বে দাঁড়ানো। লজ্জায় আড়ষ্ট হল তার তনুমন। হাসফাস করছে সে। তার মা শোনেনি তো এই কথা। আরাভকেও আড়চোখে দেখল। সে মিটমিট করে হাসছে তখন। আরাভ তার মুখের সামনে এসে নিজের নাক টানল কিঞ্চিৎ। ফিসফিস করে বলল,
‘নিকোটিনের কি বাজে গন্ধ আসছে তোমার মুখ থেকে। ইয়াক, আমার তো বমি পাচ্ছে ভীষণ? ছিঃ! কি বাজে দুর্গন্ধ তোমার মুখে পৌষমাস!’
কথাগুলো বলেই আরাভ নিজের নাক সিটকালো। পৌষীর পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে রাগে। কত বড় খারাপ লোক! ভাবা যায়! নিজেই গন্ধ মেখে এখন নিজেই নাক সিটকায়। তার মাথায়ও দুষ্টু বুদ্ধি চাপল। সে আরাভের পেটে আঙ্গুল দিয়ে এক গুঁতো মারল। এতে আরাভ উহু বলেই মৃদু চিৎকার করে উঠল হঠাৎ। সহসাই চিৎকার শুনে প্রিয়া অজান্তেই তাকাল দু’জনের দিকে। তার দৃষ্টি পড়তেই দু’জনেই শান্ত হয়ে গেল। আরাভ বলে উঠল,
‘ছোট আম্মু, আমি পৌষীকে মুখে তুলে পিঠা খাওয়াচ্ছিলাম। কিন্তু তোমার মেয়ে আমাকে ইচ্ছে করে কামড় দিয়েছে।’
পৌষী আবারও থ হয়ে গেল। কি সাংঘাতিক মিথ্যে বলতে পারে এই লোক। সে তাজ্জব বনে গেল। প্রিয়া কিছু আঁচ করতে পেরেছে। সে দু’জনকে একপলক দেখে আবার চোখ নামিয়ে নিয়েছে। নিজেই লজ্জা পেল বেশ। তাই বলল, ‘তোমরা খাও। আমি আসছি।’
প্রিয়া যেতেই আরাভও পৌষীর পেটে গুঁতো মারল। তবে বেশ মোলায়েম হাতে। আর কানে কানে ফিসফিস করে বলল, ‘হিসাব বরাবর।’
পৌষী বিষম খেল যেন। এই লোকটা মাত্রারিক্ত নির্লজ্জ। মাত্র এক দিনেই তার বোঝা হয়ে গেছে। খাবারটুকু আর শেষ করল না সে। উঠে দাঁড়াল রুমের উদ্দেশ্য। পেছন থেকে আরাভ ডেকে উঠল,
‘কোথায় যাও পৌষমাস? আমার আরও একটা গুঁতো দেওয়ার বাকি আছে কিন্তু। দাঁড়াও, সেটাও নিয়ে যাও।’
চলবে,,,,,
#প্রিয়_পৌষমাস ২৫.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️
সকাল হতেই নতুন এক মহাযুদ্ধে নিজেকে জড়িয়েছে পৌষী। রাত থেকেই এমনিতেই মাথা ধরে আছে। একে তো আরাভের বিরূপ আচরণ, তার প্রতি অভিযোগের বহর দেখে। আবার অন্যদিকে তার মায়ের হুমকি ধামকি। সে না’কি রাতে আরাভের কোনো খেয়ালই রাখেনি। এজন্য আরাভ অভুক্ত এখনো। কিন্তু সেও তো রাতে খায়নি, এটা তো বলল না। এখন তাকে না’কি এই ঘুমন্ত আরাভকে জাগাতে হবে, তাকে তুলে খাওয়াতে হবে। এটাই বউ হিসেবে প্রধান দায়িত্ব তার। সেই কখন থেকে আরাভকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরাভের রুমের অবস্থা যাচ্ছেতাই। সিগারেটের বিদঘুটে গন্ধে তার বমি আসার উপক্রম। কোন রকম নাক চেপে দাঁড়িয়ে আছে। বার কয়েক ডাকল সে, আরাভ ভাই, ঘুম থেকে উঠ। কিন্তু আরাভের নড়চড় নেই। কিঞ্চিৎ সাড়াও দিল না তার ডাকে। চিৎপটাং হয়ে কেমন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। রাতে সে কম্বল পরিয়ে গেছে। কিন্তু তার হুঁশ নেই। নিরুপায় হয়ে অন্য উপায় অবলম্বন করল। হাতের কাছে পানির জগ ছিল। তার থেকে মুঠো ভরে পানি নিয়ে আরাভের মুখে ছিটিয়ে দিল। এতে অবশ্য কাজ হল।
আকস্মিক পানির ছিটায় আরাভ নড়ে উঠল। বদ্ধ দু’চোখে চেঁচিয়ে বলল, পড়ে গেলাম পানিতে, বাঁচাও আমাকে। কিন্তু চোখ খুলতে পৌষীকে দেখে হা হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করল, ‘কে তুমি?’
পৌষী দু’চোয়াল শক্ত করে বলল, ‘ভূত।’
‘রাতে এসো, এখন আমাকে ঘুমাতে দাও।’
‘আজকে আমার দিনে ডিউটি পরেছে। তোমাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য এসেছি, উঠো জলদি।’
‘এত কাজ থাকতে তুমি আমাকে উঠানোর দায়িত্ব নিতে গেলে কেন?’
‘তোমাকে আম্মু ডাকছে, জলদি উঠো।’
আরাভ বিড়বিড় করল, আম্মু, কোন আম্মু? দু’চোখে তখনও ঘুমের রেশ। মনে পড়তেই তড়াক করে বিছানা থেকে নামল। তার ছোট আম্মু তাকে ডেকেছে। দু’পায়ে দু’রকম জুতা পরে বেরুনোর উদ্দেশ্য দাঁড়াল। পৌষী অবাক হল। এভাবে বাইরে যাবে। আরাভ কিছুটা এগোতেই পৌষী তার সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। চোখ পাকিয়ে বলল, ‘আরে, কোথায় যাচ্ছো এভাবে?’
‘ছোট আম্মুর কাছে।’
‘একদমই না।’
‘ আশ্চর্য তো! আমাকে ছোট আম্মু ডেকেছে আমি যাবো না।’
‘না, যাবে না।’
আরাভ পৌষীর কথা অগ্রাহ্য করে পুনরায় দরজার দিকে ছুটল। নিরুপায় হয়ে পৌষী তার গায়ের টিশার্টের এককোণা চেপে ধরল। আরাভ হকচকিয়ে গেল মুহুর্তে। দুচোখ গোল গোল করে বলল,
‘এভাবে জামা ধরে টানাটানি কর কি জন্য? মুখে বলতে পার না।’
‘তুমি গোসল করে তারপর বাইরে যাবে?’
‘গোসল করতে হবে কেন? আমি কি বাসর করেছি না’কি?’
পৌষী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল যেন। রাতে মহাপুরষ সেজে তার কাছে বিষাদ বিসর্জন করল। আর এখন বেহায়ার মত বেফাঁস বাক্যে আওড়াচ্ছে। বেদ্দব লোক। সে চোখমুখ কুঁচকালো। নাক সিটকে বলল,
‘তোমার গায়ে সিগারেটের বিশ্রী গন্ধ আরাভ ভাই। এভাবে আম্মুর সামনে যাবে। ইয়াক, আমার তো নিজেরই বমি আসছে।’
হুট করে আরাভের মুখাবয়ব বদলে গেল। মুখের কোণে কিঞ্চিৎ বক্র হাসি। ভৎসনা করে উঠল নিজেই নিজেকে। বলল,
‘খুবই বাজে গন্ধ, তাই না পৌষমাস?’
‘হুমম।’
আচম্বিত আরাভের দু’ঠোঁট প্রসারিত হল। পৌষী বুঝার আগেই শুরু হল তার মহাপ্রলয়। আচমকাই ঘটল ওষ্ঠদ্বয়ের সন্ধি। নিকোটিনে পোড়ানো আরাভের সেই কালচে দু’ঠোঁট একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করল পৌষীর ওষ্ঠদ্বয়ে। আকস্মিক এমন ওষ্ঠাপুটে সে হতরুদ্ধ প্রায়। কস্মিনকালেও ভাবেনি এমন কিছু। সিগারেটের বিদঘুটে গন্ধ তার মুখের ভেতরে এখন। দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা প্রায়। শেষে না পেরে আরাভের চুল টেনে ধরল। কিন্তু আরাভ যেন অপ্রতিরোধ্য, বেপরোয়া। তাকে আটকাতে নখ দিয়ে খামছি কাটল জোরে। এতে বোধহয় কাজ হল। আরাভ তার ওষ্ঠাধর ছেড়ে দিল আলগোজে। কিন্তু হাতের বাঁধন শক্ত করে কোমর জড়িয়ে ধরল। মিহি গলায় হুমকি ছুঁড়ল তার উদ্দেশ্যে।
‘আর কখনো গন্ধ বললে এর থেকেও কঠিন শাস্তি দেব, পৌষমাস।’
নিজের মুখে হাত রেখে পৌষী দৃষ্টি নামিয়ে রেখেছে। চোখাচোখি হল না আর। কিন্তু নিজমনে কিছু অশ্রাব্য গালি ছুঁড়ল, অসভ্য, বেহায়া, খবিশ লোক। আরাভ তাকে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। পৌষীও সুযোগ পেয়ে রুম থেকে বাহির হয়ে এল। এ লোকের সামনে সে আর আসবে না। একদমই না। তার এখনো কেমন যেন লাগছে। পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। মাথাও ভনভন করছে। এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না সে। নিজের রুমে যাওয়ার পথে প্রিয়ার সাথে দেখা হল। সে বলল,
‘আরাভ কোথায়? তোকে কখন পাঠালাম তাকে ডাকতে। ও উঠেনি এখনো?’
পৌষী বিরক্ত হল মায়ের কথায়। বলল,
‘জানি না, মন চাইলে তুমি ডাকো। আমাকে বিরক্ত কর না’তো।’
তারপর হনহনিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করল। প্রিয়া হা হয়ে মেয়ের যাওয়া দেখল শুধু। সে ভেবেই পায় না। তার মেয়েটা কি এখনো বাচ্চা? স্বামী-সংসার কবে বুঝবে সে। কোথায় আরাভকে বোঝার চেষ্টা করবে, তা না? তার বাপটাও হয়েছে এমন? এদের নিয়ে সে পড়েছে মহা বিপদে।
আরাভ খাবার টেবিলে এসে দাঁড়াল। প্রিয়া তাকে দেখে বলল, বস বাবাজী। আরাভ হাসিমুখে গিয়ে বসল চেয়ার টেনে।
প্রিয়া আবার বলে উঠল, ‘এত দেরি হল কেন আসতে? সেই কখন পৌষীকে ডাকতে পাঠালাম।’
আরাভের মুখে লাজুক ভাব। বলল,
‘তোমার মেয়ে তো আমাকে গোসল না করে বেরুতেই দিচ্ছিল না রুম থেকে। তো আমি কি করব বল?’
প্রিয়া ভীষণ লজ্জা পেল। কি জিজ্ঞেস করে ফেলল সে। আরাভ অবুঝের মত হয়ত বলে ফেলেছে তাকে। তাই ভেবে নিল আনমনে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শাসালো বেশ। তারপর কোন বাক্য বিনিময় ছাড়া খাবার পরিবেশন করল। আরাভ খাবার নিয়ে বসে আছে। চোখ বুলিয়ে দেখল তার প্রিয় খোলা চিতই পিঠা আর গরুর মাংস টেবিলে সাজানো আছে। সেই দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ছোট আম্মু, তোমার মেয়ে কই?’
প্রিয়া বার কয়েক ডাক দিল পৌষীকে। কিন্তু তার সাড়াশব্দ না পেয়ে রুমে ছুটল ডাকার জন্য। বের হচ্ছে না দেখে শেষে ধমক দিল। পৌষী ত্রস্ত পায়ে খাবার রুমে এল। প্রিয়া আরাভের পাশের চেয়ারে বসতে বলল। দু’চোখ এখনো নামিয়ে রেখেছে সে। চেয়ার টেনে বসতেই আরাভ দুষ্টু হাসল। মুখে পিঠা পুরতে পুরতে বলল, ‘আমাকে গোসল করালে অথচ তুমি নিজে গোসল কর নি কেন, পৌষমাস?’
পৌষী থ হয়ে গেল। আশেপাশে চোখ বুলাতে দেখল, তার মা তাদের থেকে কিঞ্চিৎ দূরত্বে দাঁড়ানো। লজ্জায় আড়ষ্ট হল তার তনুমন। হাসফাস করছে সে। তার মা শোনেনি তো এই কথা। আরাভকেও আড়চোখে দেখল। সে মিটমিট করে হাসছে তখন। আরাভ তার মুখের সামনে এসে নিজের নাক টানল কিঞ্চিৎ। ফিসফিস করে বলল,
‘নিকোটিনের কি বাজে গন্ধ আসছে তোমার মুখ থেকে। ইয়াক, আমার তো বমি পাচ্ছে ভীষণ? ছিঃ! কি বাজে দুর্গন্ধ তোমার মুখে পৌষমাস!’
কথাগুলো বলেই আরাভ নিজের নাক সিটকালো। পৌষীর পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে রাগে। কত বড় খারাপ লোক! ভাবা যায়! নিজেই গন্ধ মেখে এখন নিজেই নাক সিটকায়। তার মাথায়ও দুষ্টু বুদ্ধি চাপল। সে আরাভের পেটে আঙ্গুল দিয়ে এক গুঁতো মারল। এতে আরাভ উহু বলেই মৃদু চিৎকার করে উঠল হঠাৎ। সহসাই চিৎকার শুনে প্রিয়া অজান্তেই তাকাল দু’জনের দিকে। তার দৃষ্টি পড়তেই দু’জনেই শান্ত হয়ে গেল। আরাভ বলে উঠল,
‘ছোট আম্মু, আমি পৌষীকে মুখে তুলে পিঠা খাওয়াচ্ছিলাম। কিন্তু তোমার মেয়ে আমাকে ইচ্ছে করে কামড় দিয়েছে।’
পৌষী আবারও থ হয়ে গেল। কি সাংঘাতিক মিথ্যে বলতে পারে এই লোক। সে তাজ্জব বনে গেল। প্রিয়া কিছু আঁচ করতে পেরেছে। সে দু’জনকে একপলক দেখে আবার চোখ নামিয়ে নিয়েছে। নিজেই লজ্জা পেল বেশ। তাই বলল, ‘তোমরা খাও। আমি আসছি।’
প্রিয়া যেতেই আরাভও পৌষীর পেটে গুঁতো মারল। তবে বেশ মোলায়েম হাতে। আর কানে কানে ফিসফিস করে বলল, ‘হিসাব বরাবর।’
পৌষী বিষম খেল যেন। এই লোকটা মাত্রারিক্ত নির্লজ্জ। মাত্র এক দিনেই তার বোঝা হয়ে গেছে। খাবারটুকু আর শেষ করল না সে। উঠে দাঁড়াল রুমের উদ্দেশ্য। পেছন থেকে আরাভ ডেকে উঠল,
‘কোথায় যাও পৌষমাস? আমার আরও একটা গুঁতো দেওয়ার বাকি আছে কিন্তু। দাঁড়াও, সেটাও নিয়ে যাও।’
চলবে,,,,,