রাঙা আলোর সন্ধ্যা পর্ব-২৯+৩০

0
174

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_২৯
জাওয়াদ জামী জামী

” আশফি, তিয়াসাকে আনতে গাড়ি পাঠিয়েছি আজ সারাদিন তোমরা তিন ভাইবোন আড্ডা দেবে বুঝলে? আজকে ভুলেও রান্নাঘরের দিকে যাবেনা। আজকে ভাইবোনকে সময় দেবে। আজকে তিয়াসাকে এখানেই রেখে দেব। ” মল্লিকা মির্জা সহাস্যে বললেন।

মল্লিকা মির্জার কথা শুনে ধক করে উঠল রিফাতের বুক। ও তিয়াসার সামনে দাঁড়াবে কিভাবে? কিভাবে চোখ রাখবে মেয়েটার চোখে। ওর সাথে কথাই বা শুরু করবে কিভাবে? না ও পারবেনা তিয়াসার সাথে বেশি সময় কাটাতে। ওর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে। এখান থেকে যেভাবেই হোক আজকেই চলে যেতে হবে।

” আন্টি, আমাকে কিন্তু আজকেই যেতে হবে। আব্বার শরীর ঠিক নেই। সে আমার জন্য পথ চেয়ে আছে। তিয়াসা আসুক ওর সাথে দেখা করে আমি রওনা দেব। ”

” কি বলছ এসব তুমি? বোনের বিয়ের পর প্রথম ওর বাড়িতে এসেছ, আর একটা দিন না থেকেই চলে যাবে! এটা কি করে হয়! একটা দিন অন্তত আশফির সাথে কাটাও। ” মল্লিকা মির্জা নিরাশ হয়ে বললেন। তার মনটা খারাপ হয়ে গেছে।

” আমাকে ভুল বুঝবেননা, আন্টি। আজকেই আমি আশফিকে সাথে করে নিয়ে যেতাম। কিন্তু ওর নাকি আগামীকাল পরীক্ষা আছে, তাই আপনাকে কিছু বলিনি। অনেকদিন পর ওকে দেখছি, আমার ইচ্ছে করছে ওকে কাছে রাখতে। এদিকে আব্বাও বারবার ফোন দিচ্ছে। তাই আমাকে যেতেই হবে। ”

মল্লিকা মির্জা রিফাতের অবস্থা বুঝলেন। ছেলেটা অনেকদিন পর এসেছে, স্বভাবতই বাবাও চাইবে তাকে কাছে পেতে।

” ঠিক আছে তুমি আজকেই যেও। কিন্তু এখন নয় বিকেলে যাবে। আশফির কালকেই শেষ পরীক্ষা। ও পরদিন সকালে পুলকের সাথে তোমাদের বাড়িতে চলে যাবে। তুমি যে কয়দিন গ্রামে থাকবে, সে কয়দিন আশফিও সেখানে থাকবে। ”

***

কলিংবেল বাজতেই একজন মেইড গিয়ে দরজা খুলে দেয়। গুটিগুটি পায়ে তিয়াসা ভেতরে প্রবেশ করল। ওর বুক ধুকপুক করছে। কতদিন পর সেই প্রিয় মানুষকে দেখবে।

তিয়াসাকে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতে দেখেই রিফাত এক ঝলক ওর দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিল। তবে কয়েক মুহুর্তের দেখায় বেশ বুঝতে পারছে, মেয়েটাকে বউ বউ লাগছে। চেহারায়ও পরিবর্তন এসেছে অনেকটাই। এই মেয়েটা এখন অন্য কারো বউ ভাবতেই বুক ভারী হয়ে আসল রিফাতের।

তিয়াসা এগিয়ে এসে মল্লিকা মির্জাকে সালাম দিয়ে রিফাতের দিকে তাকাল। রিফাত তখনো মাথা নিচু করে বসে আছে।

” কেমন আছো, ভাইয়া? ” অনেক কষ্টে এতটুকুই বলতে পারল তিয়াসা। মনেপ্রানে কান্না দমনের চেষ্টায় রত ও।

” ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? ” আরেকটিবার কয়েক মুহুর্তের জন্য তাকিয়ে উত্তর দিল রিফাত।

তিয়াসা রিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। সে উত্তর দেয়ার জন্য মুখ তুলে তাকাতেই দু’জনের চোখাচোখি হল। রিফাতের বিষন্ন চোখজোড়া উতলা করে তুলল তিয়াসাকে। বুকের পাঁজর ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে। ক’মাসের ব্যবধানেই যেন ওরা দু’জন যোজনযোজন দূরের বাসিন্দা।

” তুমি এত শুকিয়েছ কেন, ভাইয়া? ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করোনা? ” আবারও জিজ্ঞেস করল তিয়াসা।

” বুয়ার রান্না খেতে কষ্ট হয়। তাই বোধহয় শুকিয়ে গেছি। ” রিফাত স্বল্প কথায় উত্তর দিল।

” তুমি তো রান্না করতে পার। নিজেই রান্না করে খাবে? ” তিয়াসা চাইছে রিফাতের গলা শুনতে। একটা সময় ওর গলার আওয়াজ শোনার জন্য পাগল হয়ে থাকত মেয়েটা।

” সকাল আটটায় অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে বাসায় আসি রাত এগারোটায়। অফিসের কাজ করার পর বাসায় এসে আর রান্না করতে ইচ্ছে করেনা। ”

” খেয়ে বাঁচতে হবেতো তোমার। প্রয়োজন হলে হোটেলে খাবে। এভাবে না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে যে। ” মৃদু গলায় বলল তিয়াসা। ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিফাতের দিকে। কিন্তু রিফাত আর চোখ তুলে চাইলনা।

” এবার গিয়ে বুয়া পাল্টাব। ”

” ভাইয়া, তুমি তো তিয়াসার জামাইকেই দেখোনি। আপনার ফোনে ভাইয়ার ছবি আছেনা? থাকলে ছবি বের করুনতো। ভাইয়াকে দেখাই। ” ওদের কথার মধ্যে আশফি কথা বলল। ও পুলকের কাছ থেকে শাহেদের ছবি চাইল।

আশফির কথা শোনামাত্র তিয়াসার বুক কেঁপে উঠল। রিফাতও হালকা কেঁপে উঠল। যে স্থানে ওর থাকার কথা, সে স্থান আজ অন্য কেউ দখল করেছে ভাবতেই রিফাত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল অতি সংগোপনে।

আশফি বলা মাত্রই পুলক শাহেদের ছবি বের করে আশফির দিকে ফোন বাড়িয়ে দিল। আশফি শাহেদের ছবি রিফাতের সামনে ধরল।

কাঁপা কাঁপা হাতে রিফাত ফোন হাতে নিল। কয়েক সেকেন্ড পর ওর ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে আসল। নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসল,

” শাহেদ! ”

” তুমি শাহেদ ভাইয়াকে চেনো! ” আশফিসহ সবাই অবাক হয়ে গেছে রিফাতের কথা শুনে।

” ও আমার দুই বছরের জুনিয়র ছিল। আমাদের ডিপার্টমেন্ট আলাদা হলেও মাঝেমধ্যেই সিনিয়র-জুনিয়র মিলে টিএসসিতে আড্ডা দিতাম। ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ওর সাথে। ”

” শাহেদও তাহলে আপনাকে চিনবে তাইনা, ভাইয়া? ভালোই হলো পূর্ব পরিচিত কেউ আপনার বোনের স্বামী হয়েছে। ” এবার পুলক কথা বলল।

” খুব ভালো ছেলে শাহেদ। ওর মত ভদ্র ছেলে খুব কমই দেখেছি আমি। আমার নাম ওকে বলো, তাহলে দেখবে ও আমাকে চিনবে। ”

সব শুনে তিয়াসা মাথা নিচু করে রইল। জীবন একি খেলা খেলছে ওর সাথে! জীবনে যাকে আপন করে চেয়েছিল, আর যাকে না চাইতেও পেয়েছে, সেই দু’জন ব্যক্তি আগে থেকেই একে-অপরকে চেনে! তারা যেদিন একে-অপরের মুখোমুখি হবে, সেদিন ও কি করবে? তারথেকেও বড় কথা, শাহেদ যদি কখনো জানতে পারে রিফাতই ওর প্রাক্তন সেদিন দু’জনের সম্পর্ক আগের মত থাকবে তো?

***

সন্ধ্যার আগেই রিফাত গ্রামে আসল। বাড়ির সামনে অটোরিকশা এসে দাঁড়ালে ও নেমে আসল। তবে সামনে তাকাতেই অবাক হতে হয় ওকে। আফজাল হোসেন বাহিরের উঠানে চেয়ার নিয়ে বসে আছে। তার সাথে পাড়ার তিনজন চাচা বসে আছে।

” তুমি এসেছ, বাবা? কতদিন তোমার মুখটা দেখিনি। এত শুকিয়ে গেছ কেন? ” আফজাল হোসেন রিফাতকে দেখেই দ্রুত পদে ছেলের কাছে ছুটে আসলেন। তার চোখে পানি।

” আমি আরও আগেই আসতাম। কিন্তু আন্টি কিছুতেই আসতে দিলেননা। তুমি কেমন আছো, আব্বা? ”

” আমি ভালো আছি। এসো ভেতরে এসো। ”

রিফাত ভেতরে যাওয়ার আগে উঠানে বসা প্রতিবেশিদের সালাম দিল। তাদের সাথে কুশল বিনিময় শেষে বাড়িতে গেল। ওকে দেখে রিনা আক্তার ঠিক খুশি হলো কিনা বোঝা গেলনা। সে আগ বাড়িয়ে এসে রিফাতের সাথে কথা বললনা। রিফাতই আগে তাকে সালাম দিল। টুকটাক কথাবার্তা বলল। পৃথা, পিয়াসকে ডেকে ওদের সাথে কথা বলল। এরপর নিজের রুমে গেল।

রুমে এসে ব্যাগ রেখে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকল রিফাত। হঠাৎ করেই এই বাড়িটা ফাঁকাফাঁকা লাগছে। আগে ভার্সিটি থেকে বাড়িতে আসলে আশফি থাকত ওর আশেপাশে। আবার গত তিন বছর ধরে তিয়াসাও থেকেছে আশফির পাশাপাশি। ওর কি লাগবে না লাগবে সবকিছুর খেয়াল রেখেছে। কিন্তু আজ ও এই বাড়িতে, এইরুমে একা বসে আছে। এরপর থেকে হয়তো বাকিটা জীবন এভাবেই কাটবে। আদরের ছোট বোনটাও সময়ে-অসময়ে এসে ওর পাশে বসবেনা, ওর প্রতি খেয়াল রাখবেনা। আর প্রানপ্রিয় তিয়াসা নামক মেয়েটাও হুটহাট এসে দরজায় দাঁড়াবেনা, রাত-বিরেতে জানালায় এসে টোকা দিয়ে ওকে চমকে দেবেনা । কারনে-অকারনে হুটহাট হেসে উঠবেনা। নানান ভাবনায় রিফাতের চোখে পানি এসে যায়। রুমের বাহিরে আব্বার গলার আওয়াজ পেয়ে চোখ মুছতেই ওর চোখ পরল দেয়ালের দিকে। যেখানে ওর একটা ছবি ছিল। ভার্সিটিতে পড়ার সময় বন্ধুদের সাথে বান্দরবান গিয়েছিল। সেখানে বন্ধুদের সাথে অনেকগুলো ছবি তুলেছিল। সেইখান থেকে একটা ছবি বাঁধাই করেছিল। গত পাঁচ বছর যাবৎ সেই ছবিটা দেয়ালে ঝোলানো ছিল। কিন্তু এখন ছবির জায়গাটা ফাঁকা। তবে কি ছোটমা সরিয়ে ফেলেছে? আফজাল হোসেন রুমে আসায় ভাবনায় ছেদ পরল। ভদ্রলোক অনেকদিন পর ছেলেকে দেখে আপ্লূত হয়ে গেছেন। তিনি রুমে এসে বেশ কিছুক্ষণ ছেলের সাথে গল্প করলেন।

***

” ও নতুন বউ, তোমার ফুফুশ্বাশুড়ি আর চাচাশ্বশুরেরা আইব চারদিন পর। আইজকা জান্নাত আপায় ফোন করছিল। ”

দাদুর রুমে এসে দাদুকে ঔষধ দিচ্ছিল তিয়াসা। তখনই খাদিজা আন্টি এসে ওকে খরবটা দিল। ওর পরীক্ষা শেষ। হাতে অফুরন্ত সময়। তাই দাদুকেই বেশি সময় দিচ্ছে তিয়াসা। আশফি গ্রামে গেছে। ও বারবার তিয়াসাকে যেতে বলছিল। কিন্তু দাদুর শরীর খারাপ থাকায় তিয়াসা যায়নি।

” আন্টি, তাহলেতো রুমগুলো সব গুছিয়ে রাখা দরকার। উনারা আসলে কোন রুমগুলোয় থাকেন, সেটাতো আমি জানিনা। উনাদের থাকার রুমগুলো আমাকে দেখিয়ে দিন, আমি শিলা আপাকে সাথে নিয়ে সব গোছগাছ করে ফেলব। ”

” তোমার কিছুই করতে হবেনা। আমিই শিলা আর রহিমাকে কইয়া দিছি। হেরা সব গোছগাছ কইরা নিব। তুমি আব্বার কাছে থাক। তুমি কাছে থাকলে আব্বা শান্তি পায়। ”

” দিদি ভাই, আমার ছেলেমেয়েরা আসুক, তুমি দেখবে ওরা কত ভালো। তোমাকে ওরা মাথায় তুলে রাখবে। জহির ওদের আদরের ভাই ছিল। তাই শাহেদও ওদের থেকে একটু বেশিই আদর পেয়েছে। আর তুমি তো শাহেদের বউ। তোমাকে নিয়ে ওরা কত কি যে করবে। ” দাদু হাসছেন। অনেকদিন পর তার ছেলেমেয়েরা আসছে জন্য তিনি খুব খুশি।

” দাদুর বোধহয় খুশি খুশি লাগছে তাইনা? আন্টি, আমার কি মনে হয় জানেন? ছেলেমেয়েরা আসলেই দাদু পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। আমার এখনই মনে হচ্ছে, নাতি-নাতনীদের সাথে দাদু দৌড়াদৌড়িও করবে। ”

” তুমি ঠিকই কইছ। প্রত্যেকবারই আপা-ভাইয়ারা আসলে আব্বায় সুস্থ হয়ে উঠে। তার শরিলে কুন রোগই থাকেনা। ”

” খাদিজা, আমার শাহেদ দাদু ভাই আসবেনা? সে কি তোকে কিছু বলেছে? ”

” শাহেদ বাবা কইল কয়দিন পর আইব। এখন ছুটি পাইবনা। ”

” কতদিন দাদু ভাইকে দেখিনা। আগে তাও ভার্সিটিতে পড়ার সময় মাসে একবার করে আসত। একদিনের জন্য হলেও ওর মুখটা দেখতে পেতাম। বাপ-মা মরা ছেলেটার মুখটা দেখলেই আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যেত। ” দাদুর চোখে পানি এসেছে।

দাদুর কথা শুনে তিয়াসা মুখ নিচু করল। একটা সময় শাহেদ যে ওকে দেখতেই বাড়িতে আসত, সেটা ও কয়দিন আগেই জেনেছে। সেই পুরোনো কথা দাদুর মুখে আরেকবার শুনে ওর বুকে মোচড় দিল। সে কি সত্যিই কয়েকদিন পর আসবে?

***

” শাশুমা, মাছের মাথাটা কে খাবে? অনেকক্ষণ ধরেই দেখছি মাথাটা কেমন ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে আছে। ”

আফজাল হোসেন ছেলেমেয়ে, জামাইকে নিয়ে একসাথে খেতে বসেছেন। রিনা আক্তার সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছে। পুলক লক্ষ্য করছে রিনা আক্তার পৃথা, পিয়াসের প্লেটে বড় মাছের পিস দিয়েছে । পুলককেও দিয়েছে । কিন্তু আশফি, রিফাতের প্লেটে শুধু ছোট মাছের একটা টুকরা দিয়েছে। তাও লেজের কাছের। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই মনে মনে বুদ্ধি আটছে পুলক।

পুলকের কথা শুনে রিনা আক্তার হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাকায়।

” এইডা পিয়াসরে দিব। পোলায় আমার মাছের মাথা খাইতে পছন্দ করে। সব মাছের মাথাই পিয়াসে খায়। ”

” কিন্তু শাশুমা, মাছগুলো তো ভাইয়া কিনে আনল দেখলাম। আর এতদিন পর যখন ভাইয়া বাড়িতে এসেছে এবং অনেক বাজারও করেছে, সে হিসেবে মাছের মাথা ভাইয়ার পাওনা। যেহেতু পিয়াস প্রতিদিন মাছের মাথা খায়, তাই একদিন মাথা না খেলে ওর কিছুই হবেনা। তাইনা পিয়াস? ” পুলক পিয়াসকে জিজ্ঞেস করে, ওর উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে মাছের মাথাটা রিফাতের প্লেটে তুলে দেয়।

পুলকের এমন কাজে হকচকিয়ে গেল রিফাত। পুলক এমন কাজ করবে ও ভাবতেই পারেনি।

” আরে আরে করছ কি? আমি এটা খাবনা। কাঁটা বেছে মাথা খাওয়া খুবই ঝামেলার। মাথাটা পিয়াসই খাক। ” রিফাত মাছের মাথা পিয়াসের প্লেটে দিতে গেলেই বাঁধা দেয় পুলক।

” আমি আপনার প্লেটে মাথাটা দিয়েছি তাই আপনি খেতে বাধ্য। প্রয়োজন হলে আমি কাঁটা বেছে দেব। বড় বড় কয়েকটা মাছ কিনেছেন ওগুলোর মধ্যে থেকে একটা মাছের মাথা শাশুমা পিয়াসকে দেবে। তাই আপনি এটা খেলেও কম পরবেনা। আপনি যে কয়দিন গ্রামে আছেন, আশফিও থাকবে। ও রান্না করবে। আপনি গত দুইদিন বাজার করেছেন আর করবেননা। কাল আমি বাজার করব। ” পুলক গম্ভীর কণ্ঠে বলল।

” তুমি কেন বাজার করবে? তোমরা দু’জনের কেউই বাজার করবেনা। বাজার করব আমি। ” আফজাল হোসেন ওদের কথার মধ্যে কথা বলল৷

” না বাবা, আমারও কিছু দ্বায়িত্ব আছে। সেগুলো পালন করতে দিন। আশফি যদি এখন কোন জব করত, আর ও যদি আপনাদের খাওয়ানোর জন্য বাজার করতে চাইত আমি কখনোই বাঁধা দিতামনা। আর যতদিন আশফি জব না পাচ্ছে, ততদিন এই দ্বায়িত্ব আমিই পালন করব। আপনি নিষেধ করলেও আমি শুনবনা। শাশুমা, এবার আপনি বলুন কালকে কি খাবেন? গরু, খাসি নাকি অন্য কিছু? ”

” তোমার যা পছন্দ হয় তা-ই নিয়া আইস। ” প্রায সাথে সাথেই উত্তর দিল রিনা আক্তার। স্ত্রী’র এমন আদেখলেপনা দেখে বিরক্ত হলেন আফজাল হোসেন।

রিফাত পুলকের দিকে তাকিয়ে আছে। একসময় এই ছেলেটার নামে কতরকম কথা শুনেছে। কিন্তু ছেলেটার সাথে না মিশলে বুঝতেই পারতনা কতটা ভালো সে।

চলবে…

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৩০
জাওয়াদ জামী জামী

” শাশুমা, বাজার এসে গেছে। সবকিছু আছে কিনা আপনি দেখে নিন। ” পুলকের সাঙ্গপাঙ্গরা বাজার নিয়ে বাড়িতে ঢুকলে, পুলক রিনা আক্তারকে ডাকল।

আজকেও বাজার দেখে রিনা আক্তারের চোখ কপালে উঠল। রিফাত অবাক হয়ে গেছে এত বাজার দেখে।

” এসব কি করেছ তুমি, পুলক! এত জিনিস খাবে কে? তুমি তো পুরো বছরের বাজার করেছ! ” রিফাত সবিস্ময়ে বলে উঠল।

” কি যে বলেন, ভাইয়া। এগুলো সামান্য বাজার। শাশুমা, এই যে বোয়াল মাছ। এটার ওজন বারো কেজি। এটা রান্না করার পর, শুধু এক টুকরো মাছ আশফি খাবে। এবং সবথেকে বড় টুকরা খাবে। বাকিগুলো প্রতিবেশিদের বাড়িতে দেবেন। আরও দুইটা বোয়াল আছে। সেগুলো আপনারা খাবেন। ” পুলক হাসিমুখে কথা বলছে।

” কি কও, জামাই! এত বড় মাছের এক টুকরা শুধু আশফি খাইব? আর সবগুলানই বিলায় দিমু! ” রিনা আক্তার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

” হুম। পুলক মির্জা তার বউয়ের জন্য এতটুকু করতেই পারে। আশফি এতবড় মাছ একা খেতে পারবেনা, সেটা আমি জানি। কিন্তু মাছটা কিনেছি ওর সম্মানের জন্য। গতকাল দেখলাম লেজের কাছের মাছের টুকরা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল। কাঁটার জন্য খেতে পারছিলনা। সেজন্য আজকে বোয়াল মাছ এনেছি। ও শুধু এখান থেকে একটা টুকরাই খাবে। আমার আম্মু যদি দেখে, আশফি বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে শুকিয়ে গেছে, তখন নির্ঘাত আমার বকা খেতে হবে। ” শীতল কণ্ঠে বলল পুলক।

পুলকের কথা শুনে রিনা আক্তার চমকে ওর দিকে তাকায়। তার চোখগুলো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। রিফাত মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে পুলকের দিকে। ছেলেটা যে আশফিকে প্রানের থেকেও বেশি ভালোবাসে সেটা সে বুঝতে পারছে। আবেগে দু ফোঁটা অশ্রু গড়ায় রিফাতের দু-চোখ বেয়ে। অবশেষে তার বোনটা সুখের নাগাল পেয়েছে।

এদিকে রিনা আক্তারের গালে যেন কেউ চপেটাঘাত করেছে। আঁধার রাতের কালিমা যেন কেউ মেখে দিয়েছে তার মুখে। পুলক মির্জা সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে ঠিকই বুঝিয়ে দিয়েছে গতকাল সে আশফিকে লেজের কাছের মাছের টুকরা দিয়েছিল। তাই সে প্রতিবাদ করতে পারলনা। গাইগুই করে রান্নাঘরে গেল।

আশফি বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবকিছুই অবলোকন করছিল। পুলকের এমন কাজে ও মোটেও অবাক হয়নি। এই কয়মাসে ও পুলককে চিনে গেছে। ওর জন্য পুলক মির্জা কি কি করতে পারে সেটাও ভালো করেই জানে। গতকাল ওর প্লেটের দিকে একনজর তাকিয়েছিল সে। এবং সাথে সাথেই তার মুখে আঁধার ঘনিয়েছিল। সেটা কেউ না বুঝলেও আশফি ঠিকই বুঝেছিল।

***

তিয়াসা রুম গোছগাছ করছে। আজ বিকেলেই চাচাশ্বশুর, ফুফু শ্বাশুড়ি বাসায় আসবে। তাই যতটা সম্ভব সব কাজ এগিয়ে রাখছে। রাতের রান্নার জোগাড় করে রেখেছে। রান্নাঘরের দ্বায়িত্ব দিয়েছে দু’জনকে। তারা নাস্তার আয়োজন করছে। কাজের মধ্যেই তিয়াসার ফোন বেজে উঠল। হাতে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস সাইড টেবিলে রেখে ফোন হাতে নিল। অপরিচিত নম্বর দেখে একটু চিন্তা করল, কে ফোন করেছে? এদিকে ফোন একবার কেটে গিয়ে আরেকবার বাজতে শুরু করেছে। এবার অতশত না ভেবে তিয়াসা ফোন রিসিভ করল।

” আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন? ”

অপরপাশে নিরবতা বিরাজ করছে। কারও আওয়াজ না পেয়ে বিরক্ত হয়ে ফোন রাখতে গেলেই, অপরপাশ থেকে কেউ কথা বলল।

” আমি শাহেদ। ”

কথাটা তিয়াসার কানে যেতেই ওর বুকটা ধক করে উঠল। এতদিন পর সে ফোন দিয়েছে!

” কেমন আছেন আপনি? ” হড়বড়িয়ে জানতে চাইল তিয়াসা।

” ভালো আছি। আপনার কোন সমস্যা হচ্ছেনাতো ? ” বরাবরের মত মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করল শাহেদ।

শাহেদের কথা শুনে তিয়াসার বুকে অভিমানেরা হানা দেয়। মনের ভেতর থেকে কারা যেন বলতে থাকে, এতদিনে সে জানতে চাইছে তুই কেমন আছিস? তোর কথা আদৌ কি তার মনে হয়? আর এদিকে তুই তার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছিস! সে নাকি তোকে চার বছর আগে থেকেই ভালোবাসে! এই তার ভালোবাসার নমুনা?

” এতদিন পর জানতে চাইছেন কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা! যদি সমস্যা হতোই, তবে আপনি কিভাবে জানতে পারতেন! ” হুট করে বলে ফেলল তিয়াসা। ওর ভিষণ কান্না পাচ্ছে। ওর প্রতি শাহেদের নিস্পৃহ আচরণ মানতে পারছেনা কিছুতেই।

তিয়াসার অভিযোগমাখা কথা শুনে শাহেদ থমকে যায়। কয়েক মুহুর্ত তিয়াসার কথার উত্তর খুঁজে পায়না। একটু ধাতস্থ হয়ে মুখ খুলল সে।

” আমি ফোন করলে আপনি বিরক্ত হতে পারেন ভেবে ফোন দেইনি। আমি চেয়েছি আমার অনুপস্থিতিতে আপনি ঐ বাড়িতে নিজেকে মানিয়ে নিন। তাই নিজের অস্তিত্ব জানান দেইনি। আমি চেয়েছি আপনি নিরুপদ্রব জীবন-যাপন করুন। ” শাহেদ কথাগুলো বলেই চুপ করে যায়।

শাহেদের মুখে এমন কথা শুনে তিয়াসা স্তব্ধ হয়ে গেছে। বুকটা কাঁপছে ভিষণ। তবে কি শাহেদ ভাবে তিয়াসার জীবনে সে উপদ্রব? আঁখিদ্বয় পূর্ণ হয়েছে নোনা জলের সায়রে। তারা ঝরে পরতে চাইছে কপোল বেয়ে। নিরবে অশ্রু সংবরন করল মেয়েটা। এরপর ঝাঁঝালো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,

” সমস্যার কথা জানতে নিশ্চয়ই ফোন দেননি। কেন ফোন দিয়েছেন বলুন? ”

তিয়াসার ঝাঁঝালো গলা শুনে থমকায় শাহেদ। মেয়েটার মতিগতি ও বুঝতে পারছেনা। তবে সে বেশি কথা বাড়ুক সেটা চায়না।

” আসলে আজকে ফুপি, চাচুরা বাসায় যাচ্ছে। সাথে আমার কাজিনরাও আছে। প্রথম প্রথম হয়তো আপনার একটু অস্বস্তি হতে পারে। আপনার যদি কোনও সমস্যা হয় তবে আন্টিকে বলবেন। তবে দেখবেন আমার ফুপি, চাচু, বড়মা সবাই খুব ভালো। আমার বিশ্বাস তারা আপনাকে দেখে খুশি হবে। ”

এতক্ষণে তিয়াসা বুঝতে পারছে শাহেদের ফোন দেয়ার কারন। রাগে ওর শরীরে চিড়বিড় করছে।
কয়েক মুহুর্ত পর চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠল,

” বুঝেছি আপনি কেন ফোন দিয়েছেন। আমার কোনও সমস্যা হবেনা। আর কিছু বলবেন? আমার অনেক কাজ আছে। ”

তিয়াসার এমন তীর্যক কথাবার্তা শুনে শাহেদ ভড়কে যায়। ও বুঝতেই পারছেনা কেন তিয়াসা ওর সাথে এভাবে কথা বলছে।

” আমি রাখছি। আপনি ভালো থাকবেন। আর কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আন্টিকে বলবেন। ”

” তো, আর কাকে বলব! সবকিছুর জন্য আন্টিকেই তো রেখে গেছেন। ” তিয়াসা রাগে ফোন কেটে দেয়।

এদিকে শাহেদ ফোন হাতে নিয়ে হতভম্ব হয়ে বসে আছে। মেয়েটা এত রেগে গেল কেন সেটাই ওর মাথায় ঢুকছেনা।

***

সেদিন সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে শাহেদের ফুপি, চাচুরা আসল। তাদের সাথে আছে শাহেদের তিনজন কাজিন। শাহেদের বাবারা তিন ভাই এক বোন। এই চার ভাইবোনের সাতজন ছেলেমেয়েদের মধ্যে শাহেদ শুধু একটাই ছেলে। বাকি সবাই মেয়ে। এজন্য শাহেদ সব সময়ই বেশি আদর পেয়ে এসেছে। শাহেদের ফুপি ফাতিমা জান্নাত তিয়াসাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলেন। শাহেদের দুই চাচু, আর বড়মারাও তিয়াসাকে দেখে ভিষণ খুশি হয়েছেন। তারা কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই তিয়াসাকে আপন করে নিলেন। শাহেদের কাজিনরাও তাদের একমাত্র ভাবীকে পেয়ে আনন্দে আটখানা হয়ে গেছে।

তিয়াসা প্রথম দিকে একটু ভয়ে ভয়ে থাকলেও সবার আন্তরিকতা দেখে সেও মিশে যায় সবার সাথে। ওকে দেখে কেউ মনেই করবেনা আজই প্রথমবার তাদের সাথে দেখা হয়েছে

দাদু ছেলেমেয়েকে কাছে পেয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন। তিনি থেকে থেকেই ছেলেমেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠছেন। আবার কখনোবা প্রানখোলা হাসিতে মাতছেন।

খাদিজা আন্টি একসাথে সবাইকে দেখে আনন্দে চোখ মুছলেন আঁচলের কোনে। মনে আনন্দ থাকলেও শাহেদের শূন্যতা তাকে কাঁদাচ্ছে। সবাই এখানে একসাথে আনন্দ করছে, কিন্তু শাহেদ তার ব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছে।

রাতের খাবার খেয়ে ননদদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে তিয়াসা রুমে এসেছে। অনেকদিন পর ও কারও সাথে এভাবে মন খুলে হেসেছে, আড্ডা দিয়েছে। সকালে তারাতারি উঠতে হবে জন্য আর দেরি না করে বিছানায় যায়। অনেকক্ষন শুয়ে থাকার পরও ওর ঘুম আসছেনা। বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ-ওপাশ করছে। রাত আড়াইটা বাজলেও ওর চোখে ঘুম নেই। বারবার মনে হচ্ছে দুপুরে শাহেদের সাথে এতটা রুড না হলেও পারত। ওর এমন আচরণ দেখে শাহেদ নিশ্চয়ই ওর সম্পর্কে খারাপ ধারনা পোষন করেছে। ইশ, কেন যে এমন করতে গেল? এখন আফসোস হচ্ছে তিয়াসার। কেন তার সাথে ভালোভাবে কয়েকটা কথা বললনা? আজকের এমন ব্যবহার পাওয়ার পর সে নিশ্চয়ই আর তিয়াসাকে ফোন দেবেনা। কথাটা মনে হতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল তিয়াসা। কিন্তু ও কিছুতেই বুঝতে পারছেনা এসব ভাবছে কেন। অনেকবার মনকে প্রবোধ দিচ্ছে, এসব কথা আর ভাববেনা। সে অনুয়ায়ী চেষ্টাও করছে, কিন্তু কোনবারই সফল হচ্ছেনা। সেই রাত পুরোটাই জেগে কাটাল তিয়াসা। ফজরের নামাজ আদায় করে রান্নাঘরে গেল। মাথাটা ভিষণ ধরেছে। এই মুহুর্তে এক কাপ কড়া চা না হলে চলবেনা।

***

গ্রামে কয়েকদিন কাটিয়ে রিফাত চিটাগং ফিরে গেল। পুলকও আশফিকে নিয়ে বাসায় ফিরল। আশফির মন ভিষণই খারাপ। রিফাত চলে গেল। কতদিন পর আবার ভাইয়াকে দেখতে পাবে সেটা জানেনা। ওর শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে, ভাইয়ার সাথে আগেরমত আর দেখা হবেনা, কথা হবেনা। ও এখন অন্য বাড়ির বউ। চাইলেই যখনতখন ভাইয়ার কাছে যেতে পারবেনা। ভাইয়া ওর হাতের রান্না ছাড়া খেতে পারতনা। কিন্তু একটা সময় অন্যের রান্না খেয়ে ঠিকই অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আশফি চায় ওর ভাইয়া ভালো থাকুক। কিন্তু দীর্ঘদিন ভাইয়ার অনুপস্থিতি ওকে পীড়া দেয়। একা ফ্ল্যাটে ভাইয়া কিভাবে থাকে সেটা ভাবে ও। অসুখবিসুখ হলে তাকে দেখার কেউ নেই, সেবা করার কেউ নেই। এটাও ভাবায় আশফিকে। সারাজীবন নীরবে সকল অনাদর সয়ে যাওয়া ভাইয়ার জীবনে কেউ আসুক। যে ভাইয়ার জীবন ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে। সেটাই চায় আসফি। সবকিছু ভেবে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা।

” বউমা, তুমি কাঁদছ কেন? কি হয়েছে তোমার? পুলক কিছু বলেছে? ” মল্লিকা মির্জা আশফিকে ডাকতে এসে দেখলেন মেয়েটা কাঁদছে। তিনি প্রায় ছুটে আসলেন ওর কাছে। এরপর ব্যাকুল গলায় জিজ্ঞেস করলেন।

” আমি ভাইয়ার কথা ভেবে কাঁদছি, মা। আমার ভাইয়া একা একা থাকে। তাকে দেখার কেউ নেই। বুয়ার রান্না খেতে পারেনা। ”

” পাগলি মেয়ে, তাই বলে এভাবে কাঁদবে! এবার রিফাতের বিয়ের ব্যবস্থা কর। তোমার আব্বাকে বল। এরপর মেয়ের খোঁজ কর। আর যদি রিফাতের কোন পছন্দ থাকে, তাহলেতো কথাই নেই। ” মল্লিকা মির্জা আশফির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন।

শ্বাশুড়ির কথাটা আশফির ভিষণ মনে ধরেছে। ও সিদ্ধান্ত নিল আগে পুলকের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে। এরপর রিফাতের সাথে আলোচনা করবে।

চলবে…