রাঙা আলোর সন্ধ্যা পর্ব-৩৯+৪০

0
9

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৩৯
জাওয়াদ জামী জামী

রিফাতের বিয়ের দিন প্রায় আগত। আশফি পুষ্পিতাকে নিয়ে গ্রামে গেছে। ও চেয়েছিল তিয়াসাও যাক ওর সাথে। কিন্তু তিয়াসা রাজি হয়নি। ও শাহেদ আর দাদুকে নিয়েই গ্রামে যাবে। শাহেদ আসবে দুই একদিনের মধ্যেই। আশফি তিয়াসার সমস্যা বুঝে আর ওকে জোর করেনি। ও গ্রামে গিয়ে পুষ্পিতা, বড়মা আর ওর ছোট চাচীকে নিয়ে সকল আয়োজন শুরু করে দিয়েছে। বিয়ে উপলক্ষে ওর ছোট চাচা-চাচীও এসেছে। তবে মল্লিকা মির্জা না আসায় আশফির মন খারাপ। তিনি বিয়ের একদিন আগে গ্রামে যাবেন। তবে তার আগে তিনি তার বাবার গ্রামের বাড়িতে যাবেন। সেখান থেকেই বিয়ে হবে নিলাশার। তিনি দুই-একদিন বাবার বাড়িতে থাকবেন। এরপর তিনি যাবেন আশফির গ্রামে। পুলকও তার সাথেই যাবে। পুলক তাকে একা ছাড়তে চায়না। তাই তাকে মামার বাড়িতে পৌঁছে দিতে চায় সে।

***

শাহেদ গত বিশ-পঁচিশ দিন যাবৎ ভিষণ ব্যস্ত আছে। সে ঢাকা এসে প্রথমেই একটা বড় ফ্ল্যাট নিয়েছে। এরপর ফার্নিচারের শো-রুমে দৌড়াদৌড়ি করছে। প্রতিদিন অফিস শেষ করে গিয়েছে শো-রুমে। প্রতিটা শো-রুমে গিয়ে তিয়াসাকে ভিডিও কল দেয়। ওর যদি একটা ফার্নিচার পছন্দ হয় তবে দশটাই অপছন্দ করে। পুরো ফ্ল্যাটের ফার্নিচার পছন্দ করতেই ও পনের দিন লাগিয়েছে। ওর এমন খুঁতখুঁতে স্বভাব দেখে শাহেদ স্তম্ভিত। ও পারলে হা-পা ছড়িয়ে কাঁদে। ফার্নিচারগুলো ফ্ল্যাটে এনে ঠিকঠাক মত সাজিয়ে তারপরই ও বাড়িতে যাওয়ার কথা ভেবেছে। এসব করতে গিয়ে ওর ঠিকঠাকমত ঘুম হয়নি।তাই ফ্ল্যাট গোছগাছ করেই প্রথমে নিশ্চিন্তমনে কয়েকঘন্টা ঘুমিয়ে নিয়েছে। এরপর রওনা দিয়েছে বাড়ির উদ্দেশ্যে।

তিয়াসা ভোরে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করে রান্নাঘরে ঢুকেছে। আজকে ও দাদুর সাথে বেশিক্ষণ গল্প করেনি। শাহেদের জন্য রান্না করতে হবে। সে দুপুরের মধ্যেই চলে আসবে। তিয়াসা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ শাহেদের পছন্দের সব খাবার রান্না হবে। ও কেয়ারটেকারকে পাঠিয়েছে বাজারে। কয়েক রকম ছোট-বড় মাছ আনিয়েছে। বেচারা এবার ঢাকা যাওয়ার পর থেকেই অনেক কষ্ট করেছে। তিয়াসার পছন্দের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বেচারার ঠিকমত খাওয়াদাওয়াও হয়নি। আর না পেরেছে ঘুমাতে। তবুও সে হাসিমুখেই তিয়াসার সকল আবদার মেনে নিয়েছে। তিয়াসা যদি বলেছে, এই শো-রুমের ফার্নিচার ওর পছন্দ হয়নি, ও হাসিমুখে অন্য শো-রুমে গিয়েছে। তবুও একটাবারও বিরক্ত হয়নি। তিয়াসা এই মানুষটাকে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। একটা মানুষ এতটা ভালো হয় কি করে, সেটা ওর বুঝে আসেনা। আজ শাহেদের জন্য রান্না করতে ওর একটুও খারাপ লাগছেনা। ও ভিষন মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে।

দুপুরের দিকে বাসায় আসল শাহেদ। প্রথমেই ও কিছুক্ষণ দাদুর সাথে কাটিয়ে নিজের রুমে গিয়ে সোফায় শরীর এলিয়ে দেয়। শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে। বোধহয় জ্বর আসবে। তিয়াসা ওয়াশরুমে থাকায় শাহেদের আসার কথা জানেনা। ও ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে শাহেদকে সোফায় শুয়ে থাকতে দেখে মলিন হেসে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও শাহেদ কিছুই টের পায়না। ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া লাগল তিয়াসার। এই কয়দিনে কেমন শুকিয়ে গেছে। চেহারা থেকে যেন লাবন্যও খানিকটা মুছে গেছে। শাহেদের চুপসানো মুখটা দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারলনা তিয়াসা। পরম আবেগে হাত বুলিয়ে দিল শাহেদের মুখাবয়বে। কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে নিল। ভিষণ চমকে গেছে ও। শাহেদের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। ও যে শাহেদের মুখে হাত দিয়েছে জ্বরের ঘোরে সেটা শাহেদ বুঝতেই পারেনি। এত জ্বর নিয়েও লোকটা দিব্যি ঘুমাচ্ছে! তিয়াসা ভেবে পায়না, জ্বর হলে মানুষ ঘুমায় কিভাবে? উদগ্রীব হয়ে ও খাদিজা আন্টিকে ডাক দিল। এরপর দু’জনে ধরাধরি করে শাহেদকে বিছানায় নিয়ে গেল। ওকে তুলে বসাতে গেলেই শাহেদ জেগে ওঠে। ও প্রানপনে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করে দু’জনকেই। কিন্তু তিয়াসার জিদের সাথে পেরে উঠেনা।

প্রায় দেড় ঘন্টা মাথায় পানি ঢালার পর জ্বর কমল। এরপর তিয়াসা শাহেদকে জোর করে ওয়াশরুমে পাঠায়। শাহেদ গোসল সেড়ে রুমে এসে দেখল তিয়াসা রুমেই খাবার নিয়ে এসেছে। শাহেদ খেতে না চাইলেও তিয়াসা ওকে ধমক দিয়ে খেতে বাধ্য করল। এরপর ওকে ঔষধ খাওয়াল। খাওয়ার পর শাহেদ বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে তিয়াসার বারণ স্বত্বেও বাহিরে গেল।

রাতে বাসায় ফিরে শাহেদ অবাক হয়ে যায়। রুম থেকে সোফা উধাও। তাহলে ও কোথায় ঘুমাবে!
তিয়াসা রাতের খাবার রুমেই নিয়ে আসল। আবারও জ্বর এসেছে, তাই শাহেদ কিছু না বলে খেয়ে ঔষধ খেল।

” আমি স্টাডি রুমে গিয়ে ঘুমাচ্ছি। তুমি শুয়ে পর। ”

” কেন? স্টাডি রুমে যাবেন কেন? ”

” সোফাতো নেই রুমে। ”

” খাট আছেতো। ”

তিয়াসার কথা শুনে শাহেদ স্তব্ধ হয়ে গেছে। তিয়াসা কি বলেছে সেটা ওর বোধগম্য হচ্ছেনা। এটাও কি সম্ভব যে তিয়াসা ওকে বিছানায় শুতে বলছে? শাহেদ একবার ভাবল ও বোধহয় ভুল শুনছে। তাই শিওর হতে ও আরেকবার জিজ্ঞেস করল।

” ক…কি বললে? ”

” কেন শুনতে পাননি? আপনি কি কানে কম শোনেন? ”

” শুনতে পেয়েছি কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছেনা। তাই জিজ্ঞেস করেছি। ”

” বিছানায় শুতে বলেছি। এবার শুনতে পেয়েছেন? নাকি আরেকবার বলতে হবে? ”

” শুনেছি। কিন্তু তুমি কি মন থেকে চাইছ এমনটা? তিয়াসা, যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটা কয়েকবার ভেবে দেখবে। কারন তোমার একটা সিদ্ধান্ত আমাদের জীবন পাল্টে দেবে। তুমি আবেগের বশে আজ একটা সিদ্ধান্ত নিলে, কিন্তু কিছুদিন পর দেখা গেল আবেগের জায়গায় বিরক্তি ঠাঁই নিল। তখন কি হবে ভেবে দেখেছ? তাই যেটা বলবে ভেবেচিন্তে বলবে। ”

” আমাকে কি আপনার অবিবেচক বলে মনে হয়? আমি আপনার কাছ থেকে সময় চেয়েছিলাম। আপনি সেটা দিয়েছেন। তাই আমার বেশ কিছুদিন থেকেই মনে হচ্ছে, এবার মুভঅন করা দরকার। প্রত্যেকের জীবনেই কিছুনা কিছু স্টোরি থাকেই। কিন্তু তাই বলে সেই স্টোরি আঁকড়ে ধরে কেউই থাকেনা। কিংবা থাকতে হবে এমনটাও নয়। আমি আমার অতীত ভুলে গেছি অনেকটাই। বাকি যেটুকু ভুলতে পারিনি, সরি ভুলতে পারিনি বলছি কেন, আমি সেটুকু ভুলতে চাইনা। আমি সেটা বুকের গহীনে সযত্নে সংরক্ষণ করতে চাই আজীবন। প্লিজ আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমি আপনাকে কোন অভিযোগের সুযোগ দেবনা। ” তিয়াসা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

” তিয়াসা, চোখ মোছ। তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারিনা। তুমি না চাইলেও একটা পবিত্র বন্ধনে আমরা আবদ্ধ হয়েছি অনেক আগেই। আর এই বন্ধন সৃষ্টিকর্তা না চাইলে ছুটবেনা। তোমার চাওয়াকে আমি সম্মান জানাই। তোমার জায়গায় আমি থাকলে ঠিক একই কথাই বলতাম। আমার ভালোবাসায় কোন খাঁদ নেই। তোমাকে ভোলা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমার জীবনে যদি তুমি ব্যতিত অন্য কেউ আসত, তবে আমিও তোমার মতই বলতাম, আমি তাকে ভুলতে চাইনা। তাকে মনের গহীনে সযত্নে সংরক্ষণ করতে চাই। তিয়াসা, যেটা তোমার সেটা তোমার একান্তই থাকুক। যাকে তুমি সযত্নে হৃদয়ের গহীনে রাখতে চাইছ, সে থাকুক। আমার কোন আপত্তি নেই। কিছু কিছু জিনিসে অন্য কাউকে হস্তক্ষেপ করতে নেই। এটা শোভনীয় নয়। ”

” এত ভালো কেন আপনি? আমি কি আপনাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারি? ” কাঁদতে কাঁদতে বলল তিয়াসা।

” একবার নয় হাজারবার ধরতে পার। নিজের জিনিস ধরবে তাতে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। আমি মানুষটাই আপাদমস্তক তোমার। ” শাহেদের বলতে দেরি হয়েছে কিন্তু ওকে জড়িয়ে ধরতে তিয়াসার দেরি হলোনা।

তিয়াসাকে কাঁদতে দেখে শাহেদ আবারও বলল,

” তোমার কাজিনের বিয়েতে কবে যাচ্ছি বলতো? আর নিলাশার জন্য কি গিফ্ট সিলেক্ট করেছ? ওকে যেনতেন গিফ্ট দেয়া যাবেনা সেটা আগেই বলে দিলাম। ওর পছন্দ না হলে আমাকে সারাজীবন খোঁটা দেবে কিন্তু। ”

” গোল্ড দিতে বলেছে দাদু। আমি একদিন আন্টির সাথে জুয়েলারিতে গিয়ে একটা হার পছন্দ করে এসেছি। আপনি বললে সেটাই নেব। ”

” কালকে আন্টির সাথে গিয়ে নিয়ে এস। টাকা আলমারিতে আছে। নিয়ে নিও। ”

” আচ্ছা। ”

” এখনও কাঁদবে? নাকি চোখের পানিতে আমার এই ভাঙ্গাচোরা বাড়িটাকে মহাসাগর বানাতে চাও? দেখ অলরেডি হাঁটু পানিতে ডুবে আছি আমরা। আর কয়েক মিনিট পর গলা অব্দি পানি উঠে যাবে। ”

শাহেদের কথা শুনে তিয়াসা চমকে পায়ের নিচে তাকায়। তারপর বোকাবনে যায়। শাহেদ যে ওকে বোকা বানিয়েছে সেটা বুঝতে পেরেই ওর বুকে দুমদাম কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয়।

***

অনেকদিন পর তিয়াসা গ্রামে এসেছে। রত্না পারভিন মেয়েকে কাছে পেয়ে ভিষণ খুশি। তিনি মেয়েকে-জামাইকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে গেছেন। পুলক গালে হাত দিয়ে রত্না পারভিনের কাজকর্ম দেখছে। পুলকের কাজ থাকায় আজ ও এত তারাতারি আসতে চায়নি। কিন্তু শাহেদের জোড়াজুড়িতে আসতে হয়েছে। সাথে মল্লিকা মির্জাকেও এনেছে।

রিফাত বাড়িতে ছিলনা। তাই শাহেদের সাথে এখনও ওর দেখা হয়নি। তাই রিফাত বাড়িতে ঢুকতেই ওকে দেখে শাহেদ অবাক হয়ে যায়।

” রিফাত ভাইয়া, আপনি! মানে আপনিই দুলহা? মাই গড! আমি জানতামইনা। ”

” কেমন আছো, শাহেদ। অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা হল। ”

” ভালো আছি। প্রায় তিন বছর পর। আপনি ফোন নম্বর চেঞ্জ করেছেন, তাই আর যোগাযোগ করতে পারিনি। ”

” আমিই ইচ্ছে করেই কারও সাথে যোগাযোগ রাখিনি। ”

” খু্ব অন্যায় করেছেন। আমরা আপনাকে কত খুঁজেছি জানেন? ”

” জানতাম জন্যই নম্বর পরিবর্তন করেছিলাম। ”

” কেন করেছিলেন! ”

” আমরা যারা টিএসসিতে আড্ডা দিতাম, তাদের মধ্যে বোধহয় আমিই একমাত্র হতাশ ছিলাম। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে সব সময়ই উদগ্রীব থাকতাম। মা ছিলনা। মাথায় সব সময়ই ঘুরপাক খেত, বাড়িতে ছোট বোনটা অবহেলা, অনাদর আর দুঃখের সাথে লড়াই করছে। আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। কিন্তু সেই চাওয়াটাই এক সময় ভারী হয়ে আমার মাথায়ই ভেঙে পরল। পড়াশোনা শেষ করার পর আমার বন্ধুবান্ধবরা সবাই ভালো জায়গায় সুযোগ পেয়ে গেল। কিন্তু আমি এখানে ফিরে আসলাম। লজ্জা লাগতো। তাই সবার সাথেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। ”
রিফাত ধরা গলায় কথা বলছে।

” আপনার কাছ থেকে এটা আশা করিনি। চড়াই-উৎরাই মানুষের জীবনে থাকবেই। কিন্তু তাই বলে সবার কাছ থেকে দূরে সরে যাবেন? ”

” এই যে দুই আইনস্টাইন, আপনারা থামবেন? আপনারা দু’জন ছাড়াও এখানে আমরা অনেকেই আছি। আমাদের দিকে একবার দয়া করে তাকাবেন? ধন্য করবেন আমাদের? বউয়ের ভাই, শ্বশুর বাড়িতে শুধু শাহেদ আসেনি আমিও এসেছি। কিন্তু ও আপনার পরিচিত বলে আমাকে রেখে ওর সাথে কথা বলবেন এটা হবেনা। ” ওদের দু’জনের কথার মধ্যেই কথা বলল পুলক। ও আসলে এই টপিক থেকে বেরিয়ে আনতে চাইছে দু’জনকেই।

পুলকের কথা শুনে রিফাত হো হো করে হেসে উঠল।

” কেন তোমাকে কেউ এখনো ওয়েলকাম করেনি? আশফি, এটা কিন্তু অন্যায়। হাজার হলেও আমাদের জামাই রাজা একজন মেয়র, তাকে অন্তত মিনিটে ত্রিশ বার ওয়েলকাম জানাবিনা! ”

” মজা নিচ্ছেনতো, বউয়ের ভাই। নিন অসুবিধা নেই। কালকে আপনি টের পাবেন মজা কাকে বলে আপনার মহামান্য শালিকারা আপনাকে সেকেন্ডে ত্রিশবার ওয়েলকাম জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে। তাদের কিভাবে সামলান সেটাই আমি দেখব। ”

” কেন তোমরা আছ কি করতে? তোমরা সামাল দেবে। ”

” আপনার বউ আর শালিকা বাহিনী যে বিচ্চু, ওদের সাথে কথা বলতে গেলেই আমার লস। এমনিতেই আপনার বউ আম্মুর কাছ জড়োয়া সেট আর আমার কাছ থেকে আইফোন বাগিয়েছে। এরপর যদি আপনার হয়ে কথা বলতে যাই, তখন বিচ্চু বাহিনীরা আমার পকেট ফাঁকা করে দেবে। আমার কাজিন সমাজ যে কোন লেবেলের ফাজিল, সেটা যদি জানতেন তবে এই বিয়েতে রাজি হতেননা। আবার আমার বোনকে দেখছেননা? সে কাল এই বাড়ি থেকে বরযাত্রা বের হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনার পক্ষে কাজ করবে। কিন্তু যেই আপনি আপনার শ্বশুর বাড়ির সীমানায় পা রাখবেন, তখনই সে পল্টি খাবে। পুরোদস্তুর কন্যাপক্ষ হয়ে যাবে সে। তাই সাবধান। ”

” এই বদ লোক, আপনি কি আমার ভাইয়ার বিয়েটা ভাঙতে চাইছেন? চুপ থাকতে পারেননা? টাকা খরচ করতে হলে করবেন। আব্বুতো আপনার জন্য কম রেখে যায়নি। দু-চার লাখ টাকা খরচ করলেই কি আপনি ফকির হয়ে যাবেন? ” আশফির ধমকে চুপ করল পুলক। তবে ও শান্তি পাচ্ছেনা। রিফাতকে আরেকটু ভড়কে দিতে পারলে ভালো লাগত।

তিয়াসা চুপচাপ ওদের কথা শুনছিল। ও লক্ষ্য করেছে রিফাত একবারও ওর দিকে তাকায়নি। তবে তিয়াসা বেশ কয়েকবার ওর দিকে তাকিয়েছে। মানুষটা আগের থেকেও ফর্সা হয়েছে। চেহারায় বর বর ভাব এসেছে। বেশ হাসিখুশিও আছে। হয়তো সব ভুলে সুখী হতে চাইছে। তিয়াসাও চায় সে সুখী হোক। সবকিছু ভুলে নিজের ছন্নছাড়া জীবনকে গুছিয়ে নিক। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে মুখে হাসি ফুটিয়ে ওদের দিকে মনযোগ দিল তিয়াসা।

চলবে…

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৪০
জাওয়াদ জামী জামী

” কবুল, কবুল, কবুল। ”

কাজী সাহেব বিয়ের আসরে এসে দাঁড়াতেই নিলাশা ‘ কবুল ‘ বলে ফেলল। ওর এহেন কাণ্ডে উপস্থিত সকলেই হতবাক হয়ে গেছে। রিফাত হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে নিলাশা’র দিকে। ও বিরবির করে বলল,

” কি বিয়ে পাগল মেয়েরে বাবা! না জানি ভবিষ্যতে আমার জন্য কি কি অপেক্ষা করছে। আল্লাহ রক্ষা কর। ”

” মা গো আমিতো এখনও বিয়ে পড়ানো শুরুই করিনি। তোমাকে আর একটু অপেক্ষা করতে হবে। ” প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে কাজী সাহেব বললেন।

” হুজুর, আমি আমার হবু শ্বশুরের নাম, জামাইয়ের নাম এমনকি তাদের গ্রামের নামও জানি। তাই আপনাকে কষ্ট করে আর সেগুলো বলতে হবেনা। সেজন্য আগেভাগেই আমি কবুল বলেছি। বাকি রইল দেনমোহরের বিষয়, আমার কোনও দেনমোহর লাগবেনা। এবার আমার জামাইকে কবুল বলতে বলুন। আর তো কোন ঝামেলা থাকলনা। ” নিলাশার কথা শুনে হল রুমে হাসির রোল পরে যায়। নিলাশা হতাশ হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে থাকল। ও বুঝতে পারছেনা, কি এমন ভুল কথা বলেছে যে সবাইকে এত হাসতে হবে!

” এতদিন যখন ধৈর্য্য ধরেছ, আর পাঁচটা মিনিট ধৈর্য্য ধর, মা। আমি শরিয়ত মেনেই বিয়েটা পড়াই। ” কাজী সাহেব তার এত বছরের জীবনে এমন আজব ঘটনার সম্মুখীন হননি।

পুলক এগিয়ে এসে নিলাশার মাথায় ঠক করে মারল।

” চুপ থাক ফাজিল। কাজী সাহেবকে তার কাজ করতে দে। আর একটাও কথা বললে তোকে তুলে নিয়ে গিয়ে নর্দমায় ফেলব। তোর বিয়ের সাধ আমি মিটিয়ে দেব। ”

পুলকের ধমক খেয়ে নিলাশা মুখ কালো করে বসে থাকল।

এদিকে আশফি হেসেই চলেছে। ওর এত বছরের জীবনে কনেকে এভাবে আগেই কবুল বলতে শোনেনি। ও ভাবছে, কি বোকা মেয়ে নিলাশা। কিন্তু ওকে সবাই বোকা বলে। অথচ ও বিয়ের পুরোটা সময়ই ব্যাকুল হয়ে কেঁদেছে। মনের কথাটা চেপে রাখতে পারলনা। সকলের সামনে বলেই ফেলল,

” দেখেছেন আপনি আমাকে অযথাই বোকা বলেন? আমি কি বিয়ের দিনে এমনভাবে কবুল বলেছিলাম? নিলাশা বোকা জন্যই এভাবে কবুল বলেছে। আর কখনোই আমাকে বোকা বলবেননা। ”

আশফির কথা শুনে পুলক রেগে একসা। ও রাগী চোখে তাকায় আশফির দিকে। আশফির কথায় হলরুমে আবারও হাসির রোল পরে যায়। আশফি বোকার মত সবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। ও বুঝতে পারছেনা সবাই কেন হাসছে!

তিয়াসা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিলাশার দিকে। মেয়েটার মুখে সুখী সুখী ভাব। যেন কোন মূল্যবান জিনিস চাওয়া মাত্রই পেয়ে গেছে। ঠোঁটের কোনে শোভা পাচ্ছে মিষ্টি হাসি। বউয়ের সাজে কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে! সুন্দর কি রিফাতকেও কম লাগছে? পুরুষালী চেহারার সুদর্শন যুবকটিকে আজ যেন একটু বেশিই।সুন্দর লাগছে। সে মাথা নিচু করে বসে আছে। গতকাল থেকে একবারও তিয়াসার দিকে ভুল করেও তাকায়নি। গতকাল যখন তিয়াসা রিফাতের কপালে হলুদ ছুঁইয়ে দিয়েছে, তখনও সে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল। এতে তিয়াসার মন খারাপ হয়নি মোটেও। ও চায় রিফাত সুখী হোক। তার জীবনে শাহেদ এসেছে রংধনু হয়ে। মানুষটা ভালোবাসা দিয়ে ওর জীবন রাঙাতে সদা তৎপর। তবুও বেহায়া মন মাঝেমধ্যেই বেইমানী করে বসে। রিফাতের কথা ভাবলেই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে হৃদ অন্তঃপুর থেকে। তবে আজ কেন যেন ওর খুশি খুশি লাগছে। এই খুশিটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে নিলাশার পাগলামি। তিয়াসার বারবার মনে হচ্ছে, নিলাশাই রিফাতকে সুখী করতে পারবে। ওর পাগলামির পেছনের ভালোবাসা ঠিকই দেখতে পেয়েছে তিয়াসা। নিলাশার কথা ভাবতেই ওর হাসি পেল।

” কি এত ভাবছ? আবার মিটিমিটি হাসছও দেখছি! নতুন বউ দেখে আবারও কি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে ইচ্ছে করছে? ” শাহেদ কোথায় থেকে এসে তিয়াসার কানে কানে বলল।

” আমি নিলাশার কথা ভাবছি। ওর বিয়ে করার তাড়া দেখে আমার হাসি পাচ্ছে। ”

” ওহ্ আমি আরও ভাবলাম, তোমার বুঝি আরেকবার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। আমি প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম, আজকে আরেকবার বিয়েটা ঝালাই করে নিব। কিন্তু এখন দেখছি সে আশায় গুড়ে বালি। ”

শাহেদের দিকে তাকিয়ে তিয়াসার হাসি পেল। ছেলেটা চোপসানো মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

” মন এত বিয়ে বিয়ে করে কেন? বিষয়টা চিন্তার। ”

” মন শুধু বিয়ে বিয়েই করেনা। আরও অনেককিছুই করে। কিন্তু সেটা দেখার কিংবা বোঝার মানুষ নেই। আমি… ” শাহেদ আর কিছু বলতে পারলনা। তিয়াসার চিমটি খেয়ে থেমে যায়। আর তিয়াসা আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে, কেউ শাহেদের কথাগুলো শুনেছে কিনা।

” চুপ একদম চুপ। ” তিয়াসার চিমটি খেয়েই শাহেদ থেমে গেছে। তিয়াসা ওকে বৃথাই ধমক দিল।

***

” ননদীনি, এই যে তোমার বাসর ঘর। দেখতো পছন্দ হয় কিনা? তোমার পছন্দের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। ” তিয়াসা, আশফি আর পুষ্পিতা নিলাশাকে বাসর ঘরে নিয়ে এসেছে। তিয়াসা নিলাশার সাথে একটুআধটু মজা করছে। আর মজার ছলেই কথাগুলো বলল।

” হেব্বি পছন্দ হয়েছে, ননদীনি। রাতে ফুলের গন্ধ নিব নাকি তোমার ভাইয়ার সাথে কুটুসকুটুস করব সেটাই ভেবে পাচ্ছিনা। ” নিলাশা বিছানা থেকে কয়েকটা বেলি ফুল হাতে নিয়ে গন্ধ নিতে নিতে বলল।

নিলাশার কথা শুনে আশফি, পুষ্পিতা আর তিয়াসা অবাক। ওরা একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।

” এই মেয়ে আমি তোমার ভাবী হই। ভাবী না ডেকে কি ননদীনি ননদীনি করছ? আর একটুতো লজ্জা কর। লজ্জা নতুন বউয়ের ভূষণ এটাতো জানো নাকি? ” তিয়াসা কৃত্রিম ধমক দিল নিলাশাকে।

” ঐসব পুরোনো সম্পর্ক বাদ। এখন নতুন সম্পর্ক মানতে হবে বুঝলে? আর নতুন সম্পর্ক অনুযায়ী তোমরা দু’জনেই আমার ননদীনি। তাই আজ থেকে বড় ভাবীকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে। জানোতো, ভাবী হল মাতৃসমা? তা তোমার ভাইয়াটি রুমে আসবে কখন? ” নিলাশা স্বাভাবিক মুখভঙ্গিতে কথা বলছে।

” এই নিলাশা, তোমার কি একটুও লজ্জা নেই! আমি এখনও তোমার ভাইয়া কাছে আসলে লজ্জা পাই আবার ভয়ও লাগে। আর তুমি আজকেই বিয়ে হয়ে এসে এসব বলছ! আল্লাহ আমার ভাইয়ার কপালে দুঃখ আছে। তোমার ভাইয়াকে যদি আমি না বলেছি, তখন দেইখো। সে তোমাকে কালকেই টাইট দিয়ে দেবে। ” আশফি বিস্ময় নিয়ে বলল৷

” শুনেছ ছোট ভাবী, তোমার বোন এসব কি বলছে? এর মাথায় কি গোবর পোড়া? ছোট বোনের দুষ্টু কথা তার ভাইকে বলবে! আমার ভাইয়া তোমাকে কি দেখে ভালোবাসতে গেল সেটাই আমি মাঝেমধ্যে ভাবি। শোন ননদী, তুমি সকালে আমার কথা শোনার জন্য প্রস্তুত থেক। রাতে কি কি হয়েছে সব তোমাকে শোনাব। তখন সিদ্ধান্ত নিও আমার ভাইয়াকে বলে আমাকে টাইট দেয়া যায় কিনা। ” নিলাশাও কম যায়না। সে-ও আশফির কথার প্রত্যুত্তর দিয়েই দিল।

ওদের কথপোকথন শুনে পুষ্পিতা হেসেই খুন। ও আগে থেকেই জানত নিলাশা ফাজিল। ওর মুখে কিছুই আটকায়না। কিন্তু নিজের বিয়েতেও এমন কিছু করবে সেটা বোঝেনি। আবার আশফির বোকামিও ওকে হাসতে বাধ্য করছে।

” এই তোমরা থামবে? অনেক রাত হয়েছে এবার বেয়াইকে রুমে আসতে দাও। বেচারা বিয়ে করেছে অনেকক্ষণ কিন্তু এখনও বউয়ের সাথে কথা বলতে পারেনি। তোমরা বস আমি বেয়াইকে ডেকে নিয়ে আসছি। ” পুষ্পিতা রিফাতকে আনতে বেড়িয়ে গেল।

” শোন নিলাশা, ভাইয়া কিন্তু বেশি কথা বলেনা। আমরা আগে বেশি কথা বললেই ধমক দিত। তুমিও একটু কম কথা বলো। নইলে তোমাকেও নির্ঘাত ধমক দেবে। ”

আশফির সাবধানতামূলক কথা শুনে নিলাশা কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকল। এরপর বলল,

” আমার ভাইয়ার নাম শুনলেওতো জেলার মানুষ ভয় পেত। কিন্তু আমার সেই ভাইয়াই তোমার সামনে ভেজা বেড়াল হয়ে যায়। শুধু শুধু আমাকে ভয় দেখাচ্ছ তুমি। ” নিলাশা অবুঝের মত বলল।

” এই তোমরা বাহিরে যাও। বেয়াই এসে গেছে। ” পুষ্পিতা রিফাতের হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসল।

রিফাতকে ভেতরে আসতে দেখেই আশফি রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তিয়াসাও বেরিয়ে যেতেই রিফাতের মুখোমুখি হল। সেই সাথে হল দু’জনের চোখাচোখি। রিফাত তিয়াসাকে রুমে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তিয়াসা সেটা বুঝতে পারল। ও হাসল রিফাতের এমন কাজে। ও রিফাতকে সহজ করতে কথা বলল।

” শুভরাত্রি, ভাইয়া। আমার ননদী কিন্তু খুব ভালো মেয়ে। তবে মাথায় মাঝেমধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। তুমি একটু ধমক টমক দিয়ে ওকে ঠিক কর। বোধহয় ও তোমার সব কথাই শুনবে। ”

” হুম। ” রিফাত আর কিছু বলতে পারলনা।

” আমি যাই। তোমরা দু’জনে সুখী হও এই কামনা করি। ” তিয়াসা দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

***

তিয়াসা বেরিয়ে গেলে রিফাত দরজা বন্ধ করে বিছানার পাশে এসে দাঁড়ায়। নিলাশা মাথা নিচু করে বসে আছে। ও নিলাশাকে কি বলবে ভেবে পায়না। ওর অস্বস্তি ভেঙে নিলাশাই প্রথমে কথা বলল,

” আমি কিন্তু বিছানাতেই ঘুমাব। আপনি আমাকে মেঝেতে শুতে বলবেননা বলে দিচ্ছি। আর আপনি বললেও আমি নিচে শুতে যাবনা। আমি শাবানা নানী নই যে, জামাই বলা মাত্রই ঢ্যাংঢেঙ্গিয়ে বালিশ নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পরব। ”

নিলাশার কথায় রিফাত কপাল চাপড়ায়। এই মেয়ে যে সাংঘাতিক সেটা ওর বুঝতে বাকি নেই।

” আমি কেন তোমাকে মেঝেতে শুতে বলব! এতটাও নিষ্ঠুর আমি নই। ”

” তারমানে আপনি মেঝেতে ঘুমানোর চিন্তা করছেন? ভুলেও ওটি করতে যাবেননা। আমাকে পছন্দ হোক আর না হোক, বিছানাতেই আপনার ঘুমাতে হবে। আমি শাবানা নানী নই বলে আপনি যে রাজ্জাক নানা হবেন সেটা হতে দেবনা। ”

” আমি বিছানাতেই ঘুমাব। ”

” গুড, জামাই। এবার ঘুমাতে পারেন। আবার যদি চান আমার সাথে গল্পও করতে পারেন আমি কিছু মনে করবনা। ”

” তুমি রাতে কিছু খাওনি বোধহয়? আমি কি খাবার নিয়ে আসব? ”

রিফাতের কথা শুনে নিলাশার চোখে পানি এসে যায়। মানুষটা যে ওকে নিয়ে ভাবছে এটাই ওর কাছে অনেক কিছু। আবেগে ওর গলা রুদ্ধ হয়ে গেছে।

” দুপুরে পেটপুরে খেয়েছিলাম, আবার সন্ধ্যায় শাহেদ ভাইয়া ঝালমুড়ি, ছোলা খাইয়েছে। তাই ক্ষুধা নেই। আপনাকে কষ্ট করে খাবার নিয়ে আসতে হবেনা। ” কাঁপা কাঁপা গলায় বলল নিলাশা।

” তোমার সাথে কিছু কথা আছে। যদি অনুমতি দাও তাহলে বলব। ”

” নতুন কিছু বলতে চাইলে বলতে পারেন। আপনার অতীতের অতিথির কথা আমি জানি, মেনেও নিয়েছি। তাই সেই অতীত খুঁচিয়ে দগদগে ক্ষত করতে চাইনা আমি। ”

” অতীত নয় বর্তমান নিয়ে কিছু বলতে চাই। আসলে পাঁচদিন পর থেকে আমাকে একটা স্পেশাল ট্রেনিংএর জন্য ঢাকা যেতে হবে। সাতদিনের ট্রেনিং। এই সাতদিন আমি কোন হোটেলে থাকব। তুমি কি আমার সাথে হোটেলে থাকতে পারবে? ”

” আমার কি ঢাকা যাওয়া জরুরী? না মানে বলছিলাম, আমি যদি সেই সাতদিন এখানেই থাকি, আপনার কোন অসুবিধা হবে? ”

” থাকতে পারবে? ”

” পারতেই হবে। যার সাথে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাটাব বলে শপথ নিয়েছি, তার বাড়ি আর রুম তার বিছানা আর পরিবারের মানুষদের আপন করে নিতে হবেনা? এর আগে ভাবীর সাথে এসেছি মেহমান হয়ে আর এবার এসেছি বাড়ির পার্মানেন্ট সদস্য হয়ে। এতটুকুতো আমাকে করতেই হবে। ”

নিলাশার কথা শুনে অভিভূত হয়ে যায় রিফাত। মেয়েটা ওকে সত্যিই ভালোবাসে সেটা রিফাত বিশ্বাস করে।

পোশাক পাল্টে রিফাত বিছানায় গিয়ে দেখল নিলাশা শুয়েছে।

” শুনুন, রাতে যদি একটুআধটু আপনার শরীরে আমার হাত-পা লাগে তাহলে রাগবেননা। আমার আবার হাত-পা ছুঁড়াছুঁড়ি না করলে ঘুম ভালো হয়না। ”

” অসুবিধা নেই। ”

রাত গভীর হয়েছে। রিফাত ঘুমিয়েছে অনেক আগেই কিন্তু নিলাশার চোখে ঘুম নেই। তবে ও ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে। চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছেনা কিছুতেই। বারবার রিফাতকে ছুঁয়ে দেখার সাধ জাগছে মনে। মানুষটাকে ও অবশেষে পেয়ে গেছে। এবার শুধু তার মন জিতে নেয়ার পালা। অনেক চেষ্টার পরও নিজের ইচ্ছেকে সংবরণ করতে পারলনা মেয়েটা। ঘুমের ভান করেই রিফাতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।

অনেকক্ষণ ধরেই রিফাতের কেমন একটা লাগছিল। ওর ঘুম ভেঙে গেলে লক্ষ্য করল নিলাশা ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে রেখেছে। নিলাশার ছোঁয়ায় ওর শরীর শিথিল হয়ে আসল। এমন নয় যে এই প্রথমবার ও কোন মেয়ের ছোঁয়া পেল। এর আগেও দুই-একবার ও তিয়াসাকে জড়িয়ে ধরেছিল। তাও কয়েক মুহুর্তের জন্য। তবে সেই জড়িয়ে ধরায় কোন কামনা ছিলনা। ছিল শুধু ভালোবাসা। রিফাত ভেবে পাচ্ছেনা ওর কেন এমন হচ্ছে। ও যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করল। নিজেকে প্রবোধ দিল, মেয়েটা ঘুমের ঘোরে ওকে জড়িয়ে ধরেছে।

অনেকক্ষণ পেরিয়ে যাবার পর রিফাতের পাশ ফিরে শোয়ার দরকার পরল। কিন্তু নিলাশা ওকে তখনো জড়িয়ে রেখেছে। ও ধীরে ধীরে ওর শরীর থেকে নিলাশার হাত সরিয়ে দিয়ে নিলাশার দিকে মুখ করে শোয়। ঠিক কয়েক মুহুর্ত পরই ও অনুভব করল নিলাশা এবার ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। মাথা রেখেছে রিফাতের বুকে। রিফাত কিছুক্ষণ নড়াচড়া করল নিলাশাকে ছাড়াতে কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল।

চলবে….