রাঙা আলোর সন্ধ্যা পর্ব-৫৫+৫৬

0
130

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৫৫
জাওয়াদ জামী জামী

কাক ডাকা ভোরে দরজা খুলে নিলাশাকে দেখে ভিষণ চমকে যায় রিফাত। মেয়েটা যে চিটাগং আসবে সেটা ওকে জানায়নি। ও আরও অবাক হল যখন দেখল আফজাল হোসেন আর পৃথা, পিয়াসও নিলাশার সাথে এসেছে। কিন্তু সে বলেছিল, সাতদিন পর আসবে। অথচ আজকে চারদিন হল। এরইমধ্যে নিলাশা হুট করে চলে আসল কেন সেটা ভেবে পাচ্ছেনা রিফাত।

” এভাবে খাম্বার মত দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেবেননা নাকি! ” নিলাশার ঝাড়ি খেয়ে রিফাত সরে দাঁড়ায়।

” কেমন আছো, রিফাত? শুকিয়ে গেছ যে? ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করোনা? ” আফজাল হোসেন জিজ্ঞেস করলেন।

” আমি ভালো আছি। রান্নার করার সময় পাইনা, তাই খাওয়া হয়না নিয়মিত। এজন্যই বোধহয় শুকিয়েছি। ভেতরে আসুন। পৃথা, পিয়াস তোরা কি সত্যিই এসেছিস? আমার কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছেনা। ” আফজাল হোসেনের কথার উত্তর দিয়ে, ভাইবোনের সাথে কথা বলল রিফাত।

” এবার গ্রামে গিয়ে ভাবী আমাকে বলেছিল, আমাদের নিয়ে এখানে আসবে। আগে কখনো তো চিটাগং আসিনি তাই আমারও আসার লোভ হচ্ছিল। আজকে তোমার অফিস আছে, ভাইয়া? ” পৃথা ড্রয়িংরুমে ঢুকে এদিকওদিক তাকিয়ে দেখছে আর কথা বলছে।

” হুম। তোরা রেষ্ট কর। আমি অফিস থেকে এসে তোদের নিয়ে বাহিরে যাব। ”

***

” এই যে গোমড়ামুখো বুড়ে, আমাকে তো একবারও জিজ্ঞেস করলেননা কেমন আছি? আপনার থেকে কদম আলী বেশি ভালো এটা বুঝতে পারলাম। সে আমার কত খেয়াল রাখে। ”

নিলাশার মুখে কদম আলী নামটা শুনেই রিফাত ভ্রু কঁচকে তাকায়। এই মেয়ের মতিগতি রিফাত বুঝতে পারেনা।

” এই কদম আলী আবার কে! সে তোমার খেয়াল রাখে কেন? আর আমাকে তোমার বুড়ো মনে হচ্ছে কেন? ”

” যে জামাই তার এমন এ্যাট্রাকটিভ বউ দেখেও দেখেনা, তখন সেই বউয়ের খেয়াল রাখতে মাঝেমধ্যে কদম আলী, রসুল মিঞার মত মানুষজনের উদয় হয়। বোঝাতে পেরেছি? ”

এবার রিফাত বুঝতে পারল নিলাশা ওকে খোঁচাতে চাচ্ছে। তবে সে এবার বোকা হতে চায়না। তাই বুদ্ধি করর উত্তর দিল,

” বাহ্ বেশ ভালো। অবশেষে মনের মত মানুষ পেলে! কিন্তু তাদের ছেড়ে যে চিটাগং চলে আসলে, এবার তারা তোমার খেয়াল রাখবে কিভাবে? ফোনে কথা বলে কি শান্তি পাওয়া যায়। এক কাজ কর, তুমি আব্বার সাথে গ্রামে ফিরে যেও কয়েকদিন পর। আমি যেহেতু তোমার যত্ন করতে পারিনা, সেহেতু চাইব কেউ তোমার যত্ন করুক। ”

রিফাত কথা শেষ করার আগেই নিলাশা ওকে বালিশ ছুঁড়ে মারল। রিফাত দেখল মেয়েটা রাগে ফুঁসছে।

” আমি চলে গেলে তো আপনার সুবিধা হয়। আরেকটা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে পারবেন। তার সাথে মজিয়ে সংসার করবেন। প্রথম থেকেই আমি আপনার অপছন্দের তালিকায় ছিলাম। কিন্তু ভদ্রতাবশত সেটা বলতে পারেননি। এখন সুযোগ খুঁজছেন কিভাবে আমাকে তাড়ানো যায়? ” নিলাশা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল।

” পাগল মনে হয় আমাকে? একজনের জ্বালায় জীবনটা অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে, আবার আরেকজনকে এনে জীবনের যতটুকু অবশিষ্ট আছে ততটুকুও নিঃশেষ করে ফেলি! ” রিফাতের সরল সোজা উত্তর।

” পরেরটা জ্বালাবেনা, আদরে আদরে ভরিয়ে রাখবে আপনাকে। আমি যেহেতু আপনাকে জ্বালাচ্ছি, হিসেবমত পরেরটা আপনাকে জ্বালাবেনা। ” নিলাশা জোড় করে হাসার চেষ্টা করছে।

” মাফ কর। এক ঝামেলা ঘাড় থেকে নামিয়ে আরেক ঝামেলা ঘাড়ে নিতে চাইনা। যে ব্যক্তি একবার বিয়ে করেছে, সে জানে কোন অকূলপাথারে সে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমিও সেই ব্যক্তিদের দলেই পরি। তাই বরং ঝামেলা একটা আছে একটাই থাক। ”

কথা শেষ হতেই রিফাত দেখল নিলাশা এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ ছলছল করছে। হঠাৎ করেই মেয়েটার মন খারাপ হয়ে গেছে। রিফাত হাজার চেষ্টা করেও নিলাশার মন খারাপের কারণ বের করতে পারলনা।

***

” বউ, আগামী সপ্তাহেই আমরা ইন্ডিয়া যাচ্ছি। কি কি কেনাকাটা করতে হবে তোমার, লিস্ট দিও। আমি চাইনা অসুস্থ শরীরে তুমি বাহিরে যাও। ”

শাহেদের কথা শুনে ওর দিকে তাকায় তিয়াসা। ও ভেবে পায়না, একটা মানুষ কিভাবে এতটা ভালোবাসতে পারে! শাহেদের ভালোবাসা বারবার ওকে একথা ভাবায়।

” আপনার ট্যুর না আরও কিছুদিন পর হওয়ার কথা ছিল? ”

” সেটা ক্যান্সেল করে দিয়েছি। শুধু তুমি আর আমি যাব। বউকে নিয়ে বেড়াতে যাব, কিন্তু সাথে একগাদা লোকজন থাকবে, এটা মানতে পারবনা। শোন, তুমি শুধু কাপড়চোপড় সাথে নিবে। বাকিগুলো আমরা সেখান থেকেই কিনব। এবার বল, প্রথমে কোথায় যাবে? কাশ্মীর নাকি দার্জিলিং? আগামী একমাস শুধুই তোমার। তুমি যেটা বলবে সেটাই হবে। ”

” কি বললেন! একমাস! অফিস একমাস ছুটি দেবে আপনাকে! ”

” বউ, তুমি শুধু তোমার জামাইকে চিনতে পারলেনা। কিন্তু বাকি দুনিয়া তোমার জামাইকে মাথায় তুলে রাখে। আমি অফিসে বলামাত্রই ছুটি মঞ্জুর হয়ে গেছে। ”

” সত্যিই! আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা। ”

” গেলেই বুঝতে পারবে। এবার বল কোথায় কোথায় যাবে? তবে সাতদিন হাতে রাখবে চেন্নাইয়ের জন্য। আমরা সেখানে সাতদিন থাকব। ”

তিয়াসা আনন্দে কথা বলতে পারলনা। শাহেদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ওর মন ছেয়ে গেল। শাহেদের তাড়ায় লিষ্ট করতে শুরু করল।

***

তিনদিন ধরে নিলাশা রিফাতের আশেপাশে ঘেঁষছেনা। রিফাতের সাথে কথা বলছে ঠিকই, তবে আগের মত থেকে থেকেই হেসে উঠছেনা কিংবা রিফাতকে সময়ে-অসময়ে বিরক্ত করছেনা। বিষয়টা রিফাতকে ভাবাচ্ছে। ও নিলাশাকে এটাসেটা জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু নিলাশার অভিব্যক্তি বদলাচ্ছেনা।

” বউমা, আমরা আগামীকালই চলে যাব। রিফাত তুমি আমাদের টিকেটের ব্যবস্থা করে দিও। ” রিফাত অফিসে বেরোনোর আগেই বললেন আফজাল হোসেন।

” কালকেই যাবেন? আর কয়েকটা দিন থেকে যান। পৃথা, পিয়াসকে পুরো চিটাগং দেখানো হয়নি এখনো। ” রিফাত চাইছে ওর আব্বা আরও কয়েকটা দিন থাকুক।

” তুমিতো জানোই আমার স্কুল আছে। এছাড়া পিয়াসের পরীক্ষা শুরু হবে আগামী সপ্তাহেই। ও তোমার মত পড়ুয়া নয়। ওকে ধরে-বেঁধে পড়াতে হয়। এখন বাড়িতে না গেলে দেখা যাবে ও পরীক্ষায় পাশই করতে পারবেনা। ”

রিফাত আর কথা বাড়ালোনা। মাথা নেড়ে সায় দিল।

” আমি তাহলে আগামীকাল রাতের টিকিট কেটে নিয়ে আসব। তবে ওদের পরীক্ষা শেষ হলে আপনি ওদেরকে সাথে নিয়ে আসবেন। আমিও তখন ছুটি নেব। ওদেরকে সময় দেব। ”

আফজাল হোসেন করুণ চোখে ছেলের দিকে তাকালেন। তার ছেলেটা পর হয়ে গেছে তারই জন্য। অল্প বয়সেই কত পরিনত হয়েছে ছেলেটা। শুধু তারই জন্য এতকিছু হয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আফজাল হোসেন।

***

” তুমি আমার সাথে কথা বলছনা কেন? দূরে দূরে থাকছ। আমার কি কোন ভুল হয়েছে? ” রাতে ঘুমানোর সময় রিফাত নিলাশাকে বলল।

” কিছু হয়নি তো। আপনি চিন্তা না করে ঘুমান। ” নিলাশা রিফাতের পাশ ফিরে শুয়ে কথা বলছে।

” আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল। মুখ ঘুরিয়ে রেখেছ কেন? ” রিফাত উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করল।

রিফাত বুঝল নিলাশার কিছু একটা হয়েছে। এবং সেটা গুরুতর কিছু। নিলাশার চুপসানো মুখ দেখে রিফাতের বুকে ধাক্কা লাগল। মেয়েটাকে এমন রূপে দেখে সে অভ্যস্ত নয়।

” আপনি ঘুমান। এত কথা বলছেন কেন! আমার ঘুম পেয়েছে। সকালে উঠে রান্না করতে হবে। দেরিতে ঘুমালে উঠতে দেরি হবে। ”

রিফাত এক ঝটকায় নিলাশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। লক্ষ্য করল নিলাশা ওর দিকে তাকাচ্ছেনা।

” আমার দিকে তাকাও, নিলাশা। এভাবে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছ কেন? ”

” বিরক্ত করবেননাতো। আমাকে ছাড়ুন। ঘুমাব এখন। ”

” তুমি যতক্ষণ আমার সাথে ঠিকঠাক কথা না বলবে, ততক্ষণ আমি তোমাকে বিরক্ত করেই যাব। এবার বল তোমার কি হয়েছে? এরপর যতক্ষন খুশি ঘুমাও। ”

কিন্তু নিলাশা রিফাতের কথা না শুনেই আবারও পাশ ফিরে শুয়ে পরল।

” আমার বুকে মাথা না রাখলে তোমার তো ঘুম আসেনা। তবে গত তিনটা রাত কিভাবে ঘুমালে? নাকি আমাকে জাগিয়ে রেখে শান্তি খুঁজে নিচ্ছ? ” রিফাত গম্ভীর গলায় বলল।

আচানক রিফাতের কথা শুনে চমকে যায় নিলাশা। সেই সাথে একটু লজ্জাও পায়। তবে নিজের লজ্জা ঢাকতে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিল,

” ক..কে বলেছে আজাইরা সব কথা? আর আপনি ঘুমালেন কি না ঘুমালেন সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। ”

” আমাকে কি তোমার এতই বোকা মনে হয়? কি ভেবেছিলে, প্রতি রাতে ঘুমানোর ভান করে আমার বুকে মাথা রাখ সেটা আমি বুঝতে পারবনা? ”

” ক…কিসব আবোলতাবোল বকছেন? আমি মোটেও কারও বুকে মাথা রেখে ঘুমাইনা। আমি নিজের মত ঘুমাতে ভালোবাসি। আর যদিও ভুলক্রমে আপনাকে ছুঁয়ে ফেলি, তবে সেটা ঘুমের ঘোরেই হবে। ”

” আচ্ছা! কারও ঘুম এত গভীর হয় সেটা একজনকে না দেখলে জানতে পারতামনা। আমার হাজার নড়াচড়ায়ও তার ঘুম ভাঙ্গেনা। সে ঘাপটি মেরে বুকে পরে থাকে। আবার মাঝেমধ্যেই ঘুমের ঘোরে আমার বুকেও চুমু দেয়! আর কতকিছু করে। কি গভীর ঘুম ভাবা যায়! ”

রিফাতের কথা শুনে একরাশ লজ্জা এসে নিলাশার তনু-মনে হানা দেয়। ও বুঝে যায়, ওর করা এতদিনের পাগলামিগুলো রিফাতের অগোচরে নেই। ঠোঁট কামড়ে, চোখ বন্ধ করে লজ্জা লুকানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে আবারও পাশ ফিরে শুয়ে পরল। রিফাতের চোখে তাকানোর এই মুহুর্তে ওর নেই। বারবার ভাবছে, ওর কর্মকাণ্ডের জন্য রিফাত হয়তো ওকে সস্তা মেয়ে ভেবেছে। কথাটা মনে আসতেই লজ্জার বদলে স্থান পেল হতাশা আর ভয়। রিফাত যদি ওকে দূরে ঠেলে দেয়? তবে ও বাঁচবে কি নিয়ে? এই মানুষটাকে ছাড়া নিলাশা কিছুই নয়। রিফাতকে হারানোর ভয় পেয়ে বসেছে মেয়েটাকে। কয়েকদিন আগেই রিফাত ওকে ঝামেলার সাথে তুলনা করেছে। তবে কি ও রিফাতের কাছে শুধুই ঝামেলা? ও তো কারও ঝামেলার কারন হতে চায়না। ও তো একটু ভালোবাসা চায়। বিনিময়ে হাজার গুন ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে বদ্ধ পরিকর। নানান ভাবনার মাঝেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল নিলাশা।

হঠাৎই নিলাশাকে কাঁদতে দেখে চমকে উঠল রিফাত। ও পাগলের মত নিলাশাকে আঁকড়ে ধরল।

” এই নিলাশা, কাঁদছ কেন? প্লিজ কেঁদোনা। ” অসহায় গলায় নিলাশাকে ডাকল রিফাত।

বেশ কিছুক্ষণ পর চোখ মুছে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করল নিলাশা। তবে মাঝেমধ্যেই ফোঁপাচ্ছে।

” সরি, আর কাঁদবনা। তবুও আমাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেবেননা প্লিজ। আপনি যা বলবেন আমি সেটাই শুনব। আপনার ঝামেলার কারণ হবনা। কোন অভিযোগের সুযোগ দেবোনা। ” বলতে বলতে আবারও ঝরঝর করে কেঁদে উঠল মেয়েটা।

নিলাশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে হতভম্ব রিফাত অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে। নিলাশার কথার মানে বোঝার চেষ্টা করছে। অনেকক্ষণ পর বুঝতে পারল নিলাশা কেন ঝামেলার কথা বলল। তবে কি সেদিনের ওর বলা কথায় মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে? সাথে সাথেই হাসি ফুটল রিফাতের ঠোঁটে। ও একটু ঝুঁকে নিলাশার মুখোমুখি হয়ে মৃদু গলায় বলল,

” এখন ঘুম পাচ্ছেনা? এত কাঁদলে ঘুম ছুটে পালাবে যে। তখন আমার বুকে মাথা রাখবে কে? তুমি তো আবার না ঘুমালে কারও বুকে মাথা রাখতে পারোনা। ”

রিফাতের কথায় আবারও লজ্জা এসে ভর করল নিলাশার শরীরে। কান্না আর লজ্জার সংমিশ্রণে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে নিলাশার। রিফাত তখনো ওর দিকে ঝুঁকে আছে। লজ্জা থেকে বাঁচতে ধপ করে শুয়ে পরল সে। এবারও পাশ ফিরেই শুলো।

” এই দেখ, আবারও পাশ ফিরে শুয়েছে! একবার এদিকে তাকাও, তোমার লজ্জারাঙা মুখটা দেখি। ”

” দেখতে হবেনা, আপনি ঘুমান। আর তাছাড়া ঝামেলা থেকে যত দূরে থাকা যায়, ততই মঙ্গল। ”

” কে চেয়েছে এমন মঙ্গল? এই ঝামেলাই আজীবন ঘাড়ে নিয়ে বাঁচতে চাই। ভালোবাসতে চাই। ”

নিলাশা এক ঝটকায় উঠে বসল। রিফাত কি বলল সেটা বোঝার চেষ্টা করছে। আবেগে রুদ্ধ নিলাশার শরীর কাঁপছে। একবার মনে হল, ও বুঝি ভুল শুনেছে। তাই শিওর হতে রিফাতকে জিজ্ঞেস করল,

” ক..কি করতে চান? ”

” ভালোবাসতে চাই। ”

” মজা করছেন? এমন মজা আর করবেননা। আপনার মজাকে আমি সত্যি ধরে নিলে, সেটা আমার জন্য ভিষণ খারাপ হবে। এখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। তখন হয়তো সেটা আর পারবনা। আপনার শত অবহেলা আমি হাসিমুখে মেনে নিই। কিন্তু ভালোবাসার নামে মজা করলে, সেটা আমার জন্য সহ্য করা সহজ হবেনা। সহজ বলছি কেন? আমি কখনো সহ্য করতেই পারবনা। আপনি ঘুমান। ” নিলাশা শুয়ে পরল। ওর চোখ দিয়ে ঝরছে কষ্টের নোনাজল।

রিফাত নিলাশার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার কথাগুলো অন্তর ছুঁয়ে দিয়েছে। ওর নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে। এতদিন ওর করা অবহেলা নিলাশার চোখে পানি আনতে পারেনি। কিন্তু আজ ভালোবাসা নামক শব্দে মেয়েটা আতংকিত হয়েছে! নিজেকে আজ নিকৃষ্ট বলে মনে হচ্ছে রিফাতের। মলিন মুখে নিলাশার নিলাশার দিকে ঝুঁকল। খুব কাছে গেল মেয়েটার। মেয়েটা তখনো ফুঁপিয়েই চলেছে।

” ভালোবাসি। আমার বউটাকে খুব বেশি ভালোবাসি। আমার অতীতের অতিথিতে হৃদয়ের কোঠরে চিরদিনের মত চাপা দিয়েছি। সামান্য উঁকিঝুঁকি দেয়ার সাধ্যও এখন তার নেই। এই হৃদয়ে এখন রাজত্ব করে নিলাশা নামক ঘূর্ণিঝড়। যে ঝড়ের তাণ্ডবে আমার জীবনটা ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে গেছে। পূর্ণতা পেয়েছে নিলাশা নামক ঘূর্ণিঝড়ের ভালোবাসা। যা আজীবন সগৌরবে নিজের অবস্থানে থাকবে। এবার আমার বুকে আসবেনা? তুমি বুকে না আসলে আমারও ঘুম আসেনা কিছুতেই। এই কয়মাসে তুমি আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছ। তোমাকে ছাড়া আমি ঘুমাতে পারবনা জন্যই সেদিন আমি তোমাকে গ্রামে পাঠাতে চাইনি। ”

নিলাশার মনে হচ্ছে ও ভুল শুনেছে এতক্ষণ
এটাও কি সম্ভব! এই মানুষটাও ওকে ভালোবাসে? নিলাশা ঘুরে তাকায় রিফাতের দিকে। চোখাচোখি হয় দু’জনের। রিফাত যেন নিলাশার মনের কথা শুনতে পেয়েছে। আর তাতে সায় জানাতেই বুঝি চুমু দিল নিলাশার কপালে। স্তব্ধ নিলাশাকে চমকে দিয়ে রিফাত চুমু দিল নিলাশার ঠোঁটে। প্রথমে কয়েক সেকেন্ড সময় নিল। এরপর একটা দীর্ঘ চুম্বনে সিক্ত করল নিলাশাকে। আবেগে আপ্লুত নিলাশা জড়িয়ে ধরল রিফাতকে। ও বেশ বুঝতে পারছে, আজকের রাতটা অন্য রাতের মত হবেনা মোটেও। আজ রাত দু’জনের চাওয়া-পাওয়া পূরনের রাত। আজকে রাতে হবে প্রেমময় বর্ষণ। যে বর্ষণে ভেসে যাবে নিলাশার দুকূল। ভাসাবে রিফাতকেও। নিলাশা প্রস্তুত হয়ে যায় সেই ক্ষণের তরে। এদিকে রিফাতের স্পর্শের গভীরতা বেড়েই চলেছে। কাঁপছে নিলাশার শরীর।

চলবে…

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৫৬
জাওয়াদ জামী জামী

” বোকা পাখি, কয়েকটা দিন আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা? ”

” কোথায় যাবেন এই অসুস্থ শরীরে? আমি আপনাকে কোথাও যেতে দিবনা। ”

” যেতে আমাকে হবেই। মাত্র আট-দশটা দিন। তারপর আমার প্রিন্স না আসা পর্যন্ত তোমাদের রেখে কোথাও যাবনা। প্রমিজ করছি, বউ। আমাকে অনুমতি দাও। ”

” কি এমন কাজ আপনার? শরীরের এই অবস্থায়ও বাহিরে যেতে হচ্ছে। আর যাবেনই বা কোথায়? তা-ও এতদিনের জন্য। ”

” জোহানসবার্গ যাব। আমার এক ফ্রেন্ডের বিয়ে। ঘনিষ্ঠ বন্ধু যাকে বলে। ও বারবার ফোন দিচ্ছে। ”

” কিহ্! জোহানসবার্গ যাবেন! আপনার মাথা ঠিক আছে? কোথাও যেতে হবেনা আপনার। দেশে এত বন্ধু থাকতে আপনাকে বিদেশ যেতে হবে বন্ধুর বিয়েতে? এখানে বন্ধুদের সাথে সারাদিন টইটই করে ঘুরে বেরিয়ে সাধ মেটেনা? ”

” প্লিজ, না করোনা। আমি দশ দিনের মধ্যেই ফিরে আসব। আমি না গেলে এলেন ভিষণ কষ্ট পাবে। ও আশা করে আছে। জানোতো ও আমার খুব কাছের? স্কলারশিপ নিয়ে সুইজারল্যান্ড যাওয়ার পর ওর সাথে সেখানেই পরিচয়। এক ফ্ল্যাটে দু’জন থাকতাম। কতশত স্মৃতি জড়িয়ে আছে দু’জনের। ”

পুলকের অনুনয় আশফিকে হ্যাঁ বলতে বাধ্য করল। তবে ও খুশি হয়ে পুলককে অনুমতি দিলনা।

দুইদিন পরে পুলক জোহানসবার্গের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। জোহানসবার্গ পৌঁছানোর পর পুলক আশফিকে ফোন দিল।

***

” বউমা, পুলক তোমার কাছে ফোন করেছিল? ওর খবর কিছু জানো? ” মল্লিকা মির্জা উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইলেন। গত পাঁচদিন যাবৎ পুলক তাদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি।

” না মা, সেখানে পৌঁছানোর পর আমাকে ফোন দিয়েছিল। তারপর আর যোগাযোগ করেনি। ” আশফি পুলকের চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে।

” এই ছেলেকে নিয়ে আর পারিনা। এতবড় হয়েছে অথচ সামান্য দ্বায়িত্ববোধটুকু নেই। এদিকে অয়নের বাবা-মা বারবার ফোন দিচ্ছে। তারা বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে চায়। অয়ন দুইমাস পরই দেশের বাহিরে চলে যাবে। তারা চাচ্ছে আগামী পনের দিনের মধ্যেই বিয়ে হোক। পুলককে ছাড়া আমি এসব কিভাবে করব? ”

” আমি আপনার ছেলের বন্ধুদের সাথে কথা বলেছি, তারা কেউই জানেনা সে এখন কোথায়। উনার কিছু হয়নি তো, মা? আমার ভিষণ চিন্তা হচ্ছে। কোথায় খুঁজব তাকে? ” আশফি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

মল্লিকা মির্জাও নিজেকে ধরে রাখতে পারলেননা। কেঁদে উঠলেন হাউমাউ করে। পুষ্পিতা রুমে এসে মা আর ভাবীকে কাঁদতে দেখে দিশেহারা হয়ে গেল। ভাইয়ার চিন্তায় এমনিতেই মেয়েটা অস্থির হয়ে আছে, তার ওপর মা আর ভাবীর কান্না তাকে আরও অস্থির করে তুলল। এ চেষ্টা করছে দু’জনকে শান্ত করার।

***

আশফি অসুস্থ হয়ে গেছে। দুই দিন হসপিটালে কাটানোর পর ওকে বাসায় নিয়ে এসেছেন মল্লিকা মির্জা। বাসাতেই চিকিৎসা চলছে আশফির। মল্লিকা মির্জা পুলকের কোন খোঁজই পাচ্ছেননা। তিনি পুলকের সব বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। বাধ্য হয়ে তিনি শাহেদকে জানিয়েছেন। শাহেদও চেষ্টা করছে পুলকের সাথে যোগাযোগ করার। কিন্তু সে সাতদিনেও পুলকের কোন খোঁজ পায়নি। শাহেদও বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে। ও তিয়াসাকে নিয়ে ইন্ডিয়া গেছে। তাই স্ব শরীরে মল্লিকা মির্জার পাশে থাকতে পারছেনা।

ঠিক দশদিন পর পুলকের ফোন পেয়ে কান্নায় ভেঙে পরল আশফি। ওকে শান্ত করে মল্লিকা মির্জার সাথে কথা বলল পুলক। মল্লিকা মির্জা কিছুক্ষণ ছেলেকে বকাঝকা করলেন। পুলক নিরবে আম্মুর বকাঝকা হজম করল। অবশেষে মল্লিকা মির্জা শান্ত হলেন। তখন পুলক তাকে জানাল, ওর ফিরতে আরও কয়েকদিন লেগে যাবে।

মল্লিকা মির্জা, আশফি বারবার পুলককে জিজ্ঞেস করল এতদিন ফোন না দেয়ার কারন। কিন্তু পুলক প্রতিবারই প্রশ্নটা কৌশলে এড়িয়ে গেল। বাধ্য হয়ে হাল ছাড়লেন মল্লিকা মির্জা।

***

বিশদিন পর দেশে ফিরল পুলক। কিন্তু তখন সে সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। আগেরমত কথা বলেনা, চুপচাপ থাকছে, হুটহাট বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সপ্তাহে দুই-চারদিন ঢাকা যাচ্ছে। আশফি জিজ্ঞেস করলেও সে কোন উত্তর দিচ্ছেনা। তবে হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও ঠিকই আশফির খেয়াল রাখছে। আশফির প্রেগেন্সির ছয়মাস চলছে। মেয়েটা বেশ মুটিয়ে গেছে। চেহারায় মা মা ভাব চলে এসেছে। ডক্টর জানিয়েছে, আশফির ছেলে হবে। কথাটা শোনার পর পুলক আরেক দফা মিষ্টি বিলিয়েছে। রিফাত, নিলাশা এসে আশফিকে দেখে গেছে। শাহেদ তিয়াসাও এসেছিল। শাহেদ এসে বাসায় সময় দেয়নি। সব সময়ই পুলকের সাথে ছিল।

***

” তিয়াসা, আমরা আগামী মাসে আবারও ইন্ডিয়া যাচ্ছি। এবার কিন্তু আমরা সাতদিন থাকব। তাই আগে থেকেই লিষ্ট করে রাখ কি কি কেনাকাটা করবে। এবার শুধু চেন্নাইতেই থাকব। ”

শাহেদের কথা শুনে তিয়াসা ওর দিকে তাকিয়ে থাকল। মেয়েটার চোখে হাজারও প্রশ্ন ভীড় জমিয়েছে। তবে সে প্রশ্নগুলো চেপে রাখলনা।

” আবারও কেন? দুইমাস আগেইনা আমরা ইন্ডিয়া থেকে আসলাম? আপনি আবার ইন্ডিয়া যাবেন, অফিস এত ছুটি আপনাকে দেবে? ”

” তুমি সুস্থ হতে চাওনা? ডক্টর বলেছিলেন, দুইমাস পর তোমাকে আরেকবার নিয়ে যেতে। সেজন্যই।যাচ্ছি। ” শাহেদ সুচতুরভাবে উত্তর দিল।

” কি হয়েছে আমার? আপনি আমার থেকে কি লুকাচ্ছেন? এর আগেও আমার সিস্ট হয়েছিল। সেবার অপারেশনের পর সুস্থ হয়েছিলাম। এবারেরটা কি আগের থেকেও গুরুতর? ” চিন্তিত গলায় সুধালো তিয়াসা।

” মোটেও গুরুতর নয়। তবে ডক্টর চাচ্ছেন, অপারেশনবিহীন চিকিৎসা দিতে। এতে তুমি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকবে। ”

না চাইলেও মিথ্যা বলতে হল শাহেদকে। ডক্টর জানিয়েছেন, আগেরবার তিয়াসার ভুল চিকিৎসা হয়েছিল। সেজন্যই সে মা হবার ক্ষমতা হারিয়েছে। তবুও তিয়াসার বর্তমান ডক্টর হাল ছাড়তে রাজি নন। তিনি আরও কয়েকটা টেস্ট করাতে চান।

এবার তিয়াসার সত্যিই চিন্তা হচ্ছে। ওর কান্না পাচ্ছে ভিষণ। কাঁদোকাঁদো মুখে শাহেদকে জিজ্ঞেস করল,

” আপনি সত্যি করে বলুন, আমার কি হয়েছে? আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছেননাতো? আমার কি এমন হয়েছে যে দেশে চিকিৎসা না করে ইন্ডিয়া যেতে হচ্ছে। ”

তিয়াসার প্রশ্নে শাহেদ অপ্রস্তুত হয়ে যায়। মেয়েটার কাছ থেকে বিষয়টা লুকাতেও পারছেনা আবার ওকে কিছু জানাতেও পারছেনা। তবে শাহেদ উত্তর দেয়ার আগেই ওর ফোন বেজে উঠল। ফোনের শব্দ কানে আসতেই শাহেদ হাঁফ ছাড়ল। পুলকের নাম দেখে বুকের মধ্যে হাঁসফাঁস করে উঠল শাহেদের। ফোন।নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে রিসিভ করল ফোন। কিন্তু কথা বলতে পারলনা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আশেপাশে মানুষজন থাকতে পারে সেই খেয়াল ওর নেই।

শাহেদের কান্না পুলককে উদগ্রীব করে তুলল। যে ছেলে শত আঘাতেও মুখে হাসি ধরে রাখে সেই ছেলের কি এমন হল যে, সে কাঁদছে?

” শাহেদ, কি হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেন তুই?, এই শাহেদ, কাঁদিসনা ভাই আমার। ভাইকে বল তো কি হয়েছে? ”

শাহেদ চারপাশে তাকিয়ে গ্যারেজে গিয়ে ঢুকল। গ্যারেজের শেষপ্রান্তে একটা গাড়ির পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে শান্ত করে চোখ মুছে ভাঙ্গা গলায় বলল,

” ভাই, আমি তিয়াসার সাথে মিথ্যা বলতে পারছিনা। মেয়েটার মুখোমুখি দাঁড়াতে আমার বিবেকে বাঁধছে। ”

” কেন তুই তিয়াসাকে মিথ্যা বলবি! কি করেছিস তুই? আমাকে খুলে বল কি হয়েছে? ”

শাহেদ কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে একে একে পুলককে সবকিছু বলল। সব শুনে পুলক অবাক হয়ে গেছে। শাহেদকে শান্তনা দেয়ার ভাষাটুকুও হারিয়েছে। তবুও চেষ্টা করল কিছু বলার,

” মন খারাপ করিসনা, ছোট। একবছর পর আশফিকে আরেকটা বেবি নিতে বলব। আর সেই বেবিটা আমি তিয়াসাকে দিয়ে দেব। সারাজীবন ওরা দুইবোন একসাথে থেকেছে। আশিফকে আগলে রেখেছে। তাই আশফির একটা সন্তান ও পেতেই পারে। ”

” সত্যি বলছ, ভাই? তিয়াসাকেও কেউ মা বলে ডাকবে? আমি পাপা হব? ”

” আমি কখনো মিথ্যা বলিনা এটা তুই ভালো করেই জানিস। সেই বেবির ওপর আমরা কোন দাবী রাখবনা। সে তোদেরকেই বাবা-মা হিসেবে চিনবে। ”

” একটা রিকুয়েষ্ট, ভাই। ভাবী অথবা কাউকেই তিয়াসার বিষয়ে জানিওনা। আমি চাইনা মেয়েটা কষ্ট পাক। ওর কষ্টে ভরা মুখ আমি দেখতে চাইনা। ”

” নিশ্চিত থাক, কেউই জানবেনা। এবার একটু হেসে কথা বল। ”

” ঐদিকের খবর কি, ভাই? তুমি নাকি আজকাল ভাবীকে খুব কমই সময় দিচ্ছ? তুমি জানোনা, এই অবস্থায় ভাবীর তোমাকে কতটা প্রয়োজন? ”

” আমি একটু ঝামেলায় আছি রে। ঝামেলা মিটলেই আবার আগেরমত ফ্রি হয়ে যাব। ”

” কিসের ঝামেলা? আমি বুঝতে পারছি তুমি আমার কাছ থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছ। কি লুকাচ্ছ, ভাই? এমন লুকোচুরি খেলতে গিয়ে তোমার তো কোন ক্ষতি হবেনা? মনে রেখ, তুমি ছাড়া মামীর কেউই নেই। ”

” কোন ক্ষতি হবেনা। এবার একটা দফারফা হবে। আচ্ছা শোন, তুই এখানে কবে আসছিস? বিয়ের আর দেরি নেই। তুই দুই-একদিনের মধ্যেই চলে আয়। আর অবশ্যই দাদুকে নিয়ে আসবি। আশফি এই অবস্থায় কিছুই করতে পারবেনা। তিয়াসা না থাকলে হবেনা। ”

শাহেদ বুঝল পুলক ওকে কিছু জানাতে চায়না।তাই আর জোড়ও করলনা। তবে ও বিশ্বাস করে, ভাই ওকে ঠিকই সবকিছু জানাবে।

” আমি আগামীকাল অফিস করেই রওনা দেব। তুমি চিন্তা করোনা, আমরা গিয়ে সব দেখভাল করব। ”

” তোর আশাতেই আছি। জানিসইতো তুই ছাড়া আমি কিছুইনা। ”

” আহ্ মেয়র সাহেবের কথা শুনে প্রানটা জুড়িয়ে গেল। এমন কথা শুনেও শান্তি। দাপুটে মেয়র কিনা সামান্য একজনের জন্য অপেক্ষা করছে। ”

দুই ভাই কিছুক্ষণ হাসাহাসি করল। এরপর ফোন রাখল।

চলবে….