রক্তিম পূর্ণিমা পর্ব-১৮

0
57

#রক্তিম_পূর্ণিমা
#পর্ব_১৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

পলকের চোখ খুলে যেতেই সে নিজেকে আবিষ্কার করে একটা অন্ধকার কুঠুরিতে। সে কোনরকমে উঠে বসে। তখনই শুনতে পায় কেউ যেন বলছে,
“এই দূর্ঘটনার ফলে তোমার জীবনের একটা সুযোগ তুমি হারিয়ে ফেললে পলক এবার তোমার হাতে আর মাত্র একটা সুযোগই রইল তোমার কাছে নিজের জীবন পরিবর্তন করার। এবার দেখো, এই শেষ সুযোগটা কাজে লাগাতে পারো কিনা।”

পলক কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে আবারো রক্তিম আভা দেখতে পেল। সেই রক্তিম আভা পলককে নিয়ে এলো ভবিষ্যতে মানে ২০২৪ সালে। পলক এবার নিজের চোখ খুলতেই নিজের চোখের সামনে ফারিয়া ও রুশাদকে দেখতে পেল। পলক তাদের দেখে অবাক হয়ে বলল,”তোরা?”

ফারিয়া ও রুশাদ দুজনেই পলককে এভাবে দেখে দুঃখ দুঃখ মুখ করল। রুশাদ বলল,
“তোর সাথে কি হয়েছে সেটা আমরা সবই শুনেছি। ঐ আরাফাত শয়তানটা তোকে এভাবে ঠকালো!”

ফারিয়া বলল,
“তুই কি আমাদের নিজের আপন মনে করিস না? আমাদের বিপদে তুই পাশে ছিলি। আমরা কি থাকতাম না? এই দেখ তোর আর আরাফাতের ডিভোর্সের খবর পেতেই আমরা দুজনেই আমেরিকা থেকে ছুটে চলে এসেছি।”

“তার মানে তোরা আমেরিকায় ছিলি?”

পলকের প্রশ্ন শুনে ফারিয়া বলে,
“হ্যাঁ, কেন তোর মনে নেই? আমাদের বিয়ের কিছুদিন পরই তো রুশাদের আমেরিকার ভিসা হয়ে যায় তখনই তো আমরা দুজনে আমেরিকা চলে যাই।”

পলক হেসে বলে,
“যাইহোক, তোদের দুজনকে এক সাথে সুখী দেখে ভালো লাগছে। আমি তো সব সময় তোদের এই খুশিই দেখতে চেয়েছি। আমার পরিশ্রম স্বার্থক।”

রুশাদ বলে,
“আর তোর সুখের কি হবে?”

ফারিয়া এবার খানিক রেগে বলে,
“যে নিজের হাতে সুখকে দূরে ঠেলে দুঃখকে কাছে ডেকে নেয় তার সুখের আশা তুমি কিভাবে করো রুশাদ? মনে নেই, পলক কিভাবে নিজের দুঃখ নিজেই ডেকে এনেছে? আমার বান্ধবী হিসেবে আমি ওকে দূরে ঠেলে দিতে পারিনি সেই সময় কারণ ও আমার অনেক উপকারও করেছে। কিন্তু সেদিন ওর উপর আমার মনটা যে কী ভীষণ খারাপ হয়ে গেছিল তা তোমার অজানা নয়।”

“এখন এসব কথা না তোলাই ভালো।”

ফারিয়া রেগে বলে,
“কেন তুলবো না? আজ যে ওর এই অবস্থা তার জন্য তো ও নিজে দায়ী। হিরা ফেলে কি কেউ কাচের পেছনে ছোটে? ছোটার ফল এখন পেলো না? ভালোই হলো৷”

পলক তো বুঝতেই পারছিল না ফারিয়া কিসের কথা বলছে। তাই সে জিজ্ঞেস করে,
“তুই কি বলছিস ফারিয়া? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!”

ফারিয়া বলে,
“বুঝতে পারছিস না তো? বেশ তাহলে বুঝিয়ে বলছি। তোর মতো গবেট তো একটাও নেই। তুই বারবার একই ভুল করিস। কদিন মেহরাজ ভাইয়ের সাথে তোর এত ভালো সম্পর্ক দেখে তো আমি ভেবেছিলাম এবার তোদের মধ্যে সবটা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, সেগুড়ে বালি। আমাদের বিয়ের দিন তোর এক্সিডেন্ট হলো। তারপর জ্ঞান ফেরার পর তোর না জানি কি হলো তুই আরাফাত আরাফাত করতে শুরু করলি। মেহরাজ ভাই কত কষ্ট করে তোকে বাঁচাল, তোকে নিজের রক্ত দিল, তোর চিকিৎসার খরচ বহন করল আর তুই?? ঐ আরাফাত তোকে এত অপমান করল তবু ওর পা ধরলি,ওর সাথে আবার রিলেশনে গেলি। আবারো মেহরাজ ভাইকে কষ্ট দিলি। সেই শোকে মেহরাজ ভাই ভার্সিটি পর্যন্ত ছেড়ে দিলো। তারপর তো তার আর কোন খোঁজ নেই! আজ অব্দি কেউ জানে না সে কোথায় আছে। আর তুই তো সেসব নিয়ে ভাবলিও না। আরাফাতের সাথে চুটিয়ে প্রেম করলি। তারপর ওকে বিয়েও করে নিলি। আর আজ ডিভোর্সও হয়ে গেল। মাঝখান থেকে তোদের জীবন গুলো নষ্ট হয়ে গেল তোর কিছু বোকামির জন্য।”

পলক তো এসব কথা শুনে হতবাক হয়ে যায়। বলে ওঠে,
‘এসব কি বলছিস তুই? এত কিছু হয়ে গেছে। না,না আমায় সব ঠিক করতেই হবে।’

বলেই পলক উঠে দাঁড়ায় এবং দৌড় দেয়। রুশাদ আর ফারিয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেহরাজের বাড়ির দিকে দৌড় দেয়। তার যে এখন সেখানে যাওয়া ভীষণ বেশি প্রয়োজন। নাহলে যে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে না। পলক তাই আর সময় নষ্ট করল না। একটা সিএনজিতে উঠে পড়ল।

★★★
মেহরাজের বাড়ির সামনে এসে আরেক দফা হতাশ হলো পলক। কারণ বাড়ির গেইটে তালা দেয়া। পলক একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
“এটাই কি হওয়ার ছিল? তাহলে কি আমি মেহরাজ ভাইকে চিরতরে হারিয়ে ফেললাম?! এখন যদি আমি তার সন্ধান না পাই তো অতীতে গিয়ে কই খুঁজে বেড়াব তাকে?”

এমন সময় পেছন থেকে কেউ রাশভারী কন্ঠে বলে উঠল,
“কে আপনি?”

পলক পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো টিশার্ট আর জিন্স পরিহিত একটা মেয়েকে। সামান্য হেসে বললো,
“মুমতা তুমি! আমি পলক..”

“তুমি? তুমি কেন এসেছ এখানে? কোন সাহসে এসেছ? আমার ভাইয়াকে এত কষ্ট দিয়েও তোমার শান্তি হইনি? সবকিছুই তো শেষ করে দিয়েছ তাহলে এখন কি শেষ করা বাকি আছে যার জন্য এখানে এসেছ?”

পলক বলে,
“তুমি বিশ্বাস করো, যা হয়েছে তাতে আমি ইনভলভ ছিলাম না। এসব অনেক ব্যাপার যা তোমাকে এখন বোঝানো সম্ভব না। তুমি শুধু একবার আমাকে মেহরাজ ভাইয়ের কাছে নিয়ে চলো। তার সাথে দেখা করা যে আমার অতীব দরকার। আমার কাছে আজ রাত ১২ টা পর্যন্ত সময় আছে। সেটাই আমার শেষ সময়। তার মধ্যে মেহরাজ ভাইয়ের সাথে দেখা নাহলে যে সব অনর্থক হয়ে যাবে!”

মুমতা রেগে বলে,
“কিসব বলছ তুমি? মশকরা করছ আমার সাথে?”

“তোমাকে যা বলছি তাই করো..”

এমন সময় সেখানে উপস্থিত হয় হাসিব ও মুসকান। বর্তমানে তারা দুজন বিবাহিত। মুসকান এসেই মুমতাকে বলে,
“কে এসেছে রে?!”

মুমতা বলে,
“আমাদের জীবনে সব সমস্যার সূচনাকারী পলক এসেছে।”

মুসকানকে দেখে পলক খু্শি হয়। কিন্তু মুসকান রাগী স্বরে বলে,
“কেন এসেছে ও? কি চাই ওর?”

হাসিব বলে,
“তুমি শান্ত হও মুসকান। তুমি প্রেগন্যান্ট। এই অবস্থায় এত উত্তেজিত হলে চলবে না। সেটা আমাদের বাচ্চার জন্য ভালো হবে না।”

মুমতা বলে,
“ও বলছে ভাইয়ার সাথে দেখা করতে চায়!”

হাসিব ও মুসকানের চোখ বিস্ফোরিত হয়। মুসকান বলে,
“ও কি মজা করছে আমাদের সাথে?”

পলক বলে,
‘মজা কেন করব? আমি সত্যিই মেহরাজ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চাই।’

মুসকান পলকের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“মেহরাজ ভাইয়ের সাথে দেখা করবে?”

“হুম, করব।”

“তাহলে এসো আমার সাথে।”

বলেই মুসকান পলকের হাত ধরে টানতে থাকে। টানতে টানতে পলককে পাশের একটা কবরস্থানের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে একটা কবরস্থানের সামনে দাঁড় করায় পলককে আর বলে,
“এই নাও দেখা করো ভাইয়ার সাথে।”

বলেই কাঁদতে থাকে। হাসিব দৌড়ে এসে মুসকানকে সামলায়। মুমতাও দূর থেকে এসব দেখে কাঁদতে থাকে। পলকের পুরো পৃথিবী যেন থমকে যায়। সে মেহরাজের কবরের পাশে বসে বলতে থাকে,
“না…এটা হতে পারে না..মেহরাজ ভাই আমায় এভাবে ছেড়ে যেতে পারেন না..”

বলেই কাঁদতে শুরু করে দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨