নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব-২৭+২৮

0
55

#নীরদ_ক্লেশের_অন্ত
[পর্ব-২৭]
লেখিকা-নামীরা অন্তিকা

ইলার র’ক্তি’ভ মুখশ্রী হৃদ অম্বরে ঝড় তুলেছে আদিতের। আদিত মনেপ্রাণে মানে সে পাপ করেছে। এর শাস্তিও সে পাবে তবে তার পরিবার কেনো? প্রেয়সী কেনো পাবে? সে শাস্তি পাক। আদিতের এমুহূর্তে সবকিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে। আদিত যদি এই মুহূর্তে অভীক মাহমুদকে হাতের কাছে পায় তাহলে এমন মৃ’ত্যু দিবে অভীক মাহমুদের রূহ অব্দি কেঁপে উঠবে। ফোন থেকে নজর সরিয়ে আদিত আশেপাশে তাকালো। বিপুল রায়ের পিএ এহমাদ সাফিকের ছেলে ইনতেহার সারিফ এসেছে তাকে নিয়ে যেতে। আপাতত এহমাদ সাফিক আ’হত অবস্থায় রয়েছেন বিধায় ইনতেহার সারিফ ওনার বদলে ওনার দায়িত্ব পালন করবে। এহমাদ সারিফ বিপুল রায়ের পিএ হলেও একপ্রকার ভাইয়ের মতো ওনারা সেই সাথে ইনতেহার আর আদিতের সম্পর্কটাও বন্ধুত্বপূর্ণ। আদিতের এতো ক্রোধের মধ্যেও আদিতের ঠোঁটের কোণে ইনতেহার সারিফকে দেখে মৃত্যু হাসি ফুটলো। তবে মুখশ্রীতে রাগান্নিত ভাব বজায় রাখলো। ইনতেহার আদিতের নিকট এসে আদিতের এহেন মুখশ্রী দেখে খানিকটা ভড়কালো। তবে মুখোভঙ্গি স্বাভাবিক রেখে বলে উঠলো,,

“দুঃখিত দাভাই তোমাকে কিছুক্ষন অপেক্ষা করানোর জন্য।”(স্বাভাবিক স্বরে)

“এহমাদ আঙ্কেল আগের চেয়ে বেটার আছে?”(রাগান্নিত স্বরে)

ইনতেহার ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। ভারী কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো,,

“উহু, কন্ডিশন ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাবা হয়তো বাচঁবেনা, প্রে করা ছাড়া নাকি আর কিছুই করার নেই ডক্টরদের হাতে।”(ভারী স্বরে)

আদিতের রাগের পরিমান অম্বরের ছোঁয়া পেলো। মাথার চুল খামচে ধরে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো,,

“মৃ’ত্যু যন্ত্রনা দিবো তবে একেবারে নিঃশেষ করবোনা। ও নিজেই ওর অন্ত চাইবে তবে অন্ত’র ছোঁয়া পাবেনা। আশা করেছিলাম ঘটনাটা আমাদের মাঝেই মিটমাট করা যাবে কিন্তু ঐযে হৃদপিন্ড এক কেজি ওজনের। আমার ডায়মন্ডগুলোর দিকে হাত বাড়িয়েছে ওর হাত যদি আমি কে’টে হাজার টুকরো না করেছি তাহলে আমি আদিত রায় নই।”(রাগে ফোঁস ফোঁস করে)

ইনতেহার গম্ভীর হয়ে পাশে থাকা চারটে বডিগার্ডের মধ্যে দুজনকে আদিতের ট্রলি গাড়ির ডিকিতে রাখতে ইশারা করলো। ইনতেহার ছোট করে বললো,,

“গাড়ি ওখানে, চল।”(ছোট করে)

“এডউইনের খোঁজ?”

“পেয়েছি, খুঁজতে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছিল। অভীক মাহমুদের সিক্রেট হাউজে উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন নিজেকে লুকিয়ে। তবে আমাদের চোখ থেকে লুকাতে পারেননি। হেল হাউজে রাখা হয়েছে ওনাকে।”(ভারী স্বরে)

ইনতেহারের বাক্য বচনে খুশি হলো আদিত। শিমুল মাহমুদের পার্সোনাল সেক্রেটারি হলো এডউইন জেমস। বাঁকা হেসে আদিত ইনতেহারের উদ্দেশ্যে বললো,,

“হ্যালো হাউজেই যাবো প্রথমে। জেমসকে হেল হাউজে রাখা হয়েছে, একটু হেল শব্দের মর্মার্থ না বোঝালে নিজেকে অনেক ছোট মনে হবে।”(বাঁকা হেসে)

আদিত গা ছাড়া ভাব নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। ইনতেহার ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো। আদিতের পিছু পিছু গিয়ে গাড়িতে বসলো ড্রাইভিং সিটে। মিররে একবার আদিতের মুখশ্রী পানে তাকালো ইনতেহার। ভয়ঙ্কর রকমের রেগে আছে আদিত। ইনতেহার শুকনো ঢোক গিললো। এইতো মাত্র সপ্তাহ খানিক হবে হয়তো সে আদিতের পরিচয়ের পাশাপাশি আদিতের আরেকটা পরিচয়ের কথা জানতে পেরেছে। যেদিন সে শুনেছে আদিত একজন হিটম্যান সেদিন ভারী অবাক হয়েছিল ইনতেহার। আদিত ঠান্ডা মাথায় ভয়ঙ্কর কাজ করতে পারে, সত্য বলতে ইনতেহার নিজেও আদিতকে কিছুটা ভয় পায়।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ইনতেহার গাড়ি স্টার্ট করলো। উদ্দেশ্য হেল হাউজ অর্থাৎ ‘নরকের ঘর’। আদিত আজ অব্দি যাদের খু’ন করেছে তাদের এই হেল হাউজে নরক যন্ত্রনা দিয়ে খু’ন করেছে। আদিতের মুখশ্রীতে পৈ’শা’চিক হাসি ফুটে উঠেছে। তবে হৃদঅম্বরে ঠিকই অম্বর পাতাল ওলোট পালট হয়ে যাচ্ছে।


সময়টা এখন মধ্যাহ্ন। মধ্যাহ্নর কড়া রোদ ডিঙিয়ে সারু শেরহামের সাথে ইলার কাছে এসেছে। সারা রাত সারু ঘুমায়নি শেরহাম, কল্যাণী আর নেহাল রায়ের টেনশনে। তারা ঠিক আছে কিনা জানার জন্য প্রায় একপ্রকার দিক বেদিক ভুলে বসেছিল সারু। অবশেষে যখন বাড়িতে শেরহাম, কল্যাণী ও নেহাল রায় ফিরলেন সারু ও মিতালি দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়েছিল পরক্ষণে সবার থমথমে বিধ্বস্ত মুখশ্রী অবলোকন ও গতকাল রাতের ঘটনা জানার পর নিস্তব্ধ হয়েছিলেন মিতালি ও সারু। নতুন সম্পর্ক গড়ার সূচনাতেই সবটা কেমন আউলিয়ে গিয়েছে। আদিত দ্রুত কানাডা ফিরে গিয়েছে, আর ইলা! ইলা ও তার বাবা মায়ের ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ ও গুরুতর কন্ডিশন। সবটা ভেবে সারু বাঁধভাঙ্গা কান্না করেছিল শেরহামের বুকে মুখ গুঁজে। স্নিগ্ধা নেই আজ তিনদিন, আদিতের এভাবে চলে যাওয়া হুট্ করে এর উপর ইলার ও তার পরিবারের এই করুন অবস্থা। সারু অসুস্থ হয়ে পড়ছে এসব শুনে ও দেখে। এদিকে ডাক্তাররা জানিয়েছেন প্রমীলা চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছেন। ও কৌশিক চৌধুরী এখন আশঙ্কামুক্ত অর্থাৎ ওনারো জ্ঞান ফিরছে। প্রমীলা চৌধুরী, কৌশিক চৌধুরী ও ইলাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। ওনাদের জ্ঞান ফিরলেও ফিরেনি শুধু ইলার। তারা ধারণা করেছেন ইলার কোমায় যাওয়ার সম্ভাবনা সত্তর পার্সেন্ট। ইলার এক্সিডেন্টকৃত মুখখানা দেখে সারুর ভীষণ খারাপ লাগলো। এইতো গত রাতেও মেয়েটা আদিতের চলে যাওয়ার আগ মুহূর্ত অব্দি খুশি ছিল। আর এখন! কোমায় যাওয়ার সম্ভাবনার মাঝে অচেতন হয়ে আছে।
সারুর সাথে তার শাশুড়ি মিতালি এসেছেন সাথে কল্যাণী নেহাল রায়ও। সারুর এমন প্রতিক্রিয়া দেখে শেরহাম দুহাতে সারুকে আগলে নিয়েছে। ভাবতেও অবাক লাগছে, গত রাতে আদিত তাদের থেকে সুদূর কানাডা পাড়ি দিলো আর তার কিয়ৎক্ষণ পরই ইলাদের গাড়ির বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট।
শেরহাম থানায় গিয়েছিলো। এক্সিডেন্ট স্পটে এস কে আহাজীব ও ওনার দুইজন কনস্টেবলকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলো। যে ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়েছিল সেটার নাম্বারের সাহায্যে গাড়ির ড্রাইভারকে খুঁজে বের করা হয়েছিল। তবে খোঁজ পাওয়ার পর জানা গিয়েছিলো ট্রাকের ড্রাইভারকে গতকাল রাতে ছু’ড়ি’র আঘাত করে ট্রাকটি জোর করে দুজন লোক নিয়ে গিয়েছিলো। ট্রাক ড্রাইভারের অবস্থা সুবিধার নয়।
এস কে আহাজীব শেরহামকে স্পষ্ট জিজ্ঞাসা করেছিলেন এটা মা’র্ডারের চেষ্টা। তবে শেরহাম চায়নি বিষয়টা আপাতত অনেক বড় করার। তাই ধূর্ত ভাবে জবাব দিয়েছিলো ট্রাকটি চুরি করা হয়েছিল আর এটা আনএক্সপেক্টেড একটা এক্সিডেন্ট। যদিও শেরহামের ধারণা এটা অভীক মাহমুদের কারসাজি।


উৎস নিজের কথামতো স্নিগ্ধাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলো, অবশেষে তারা ঢাকা এসে পৌঁছিয়েছে। জানালা দিয়ে স্নিগ্ধা বাহিরে তাকিয়ে হতবাক হলো। উৎস তাকে নিয়ে হসপিটালে এসেছে। স্নিগ্ধা এই হসপিটাল চেনে, দু মাস আগেও এখানে চার দেয়ালের মাঝে সেই নরকীয় দিনগুলো কাটিয়েছিল। প্রতি ঘন্টায়, মিনিটে, সেকেন্ডে নিজের মৃ’ত্যু কামনা করেছিল স্নিগ্ধা। তবে ভাগ্য তাতে সায় দেয়নি, সে বেঁচে আছে। এখনো অব্দি নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ভেবে স্নিগ্ধার অবাক লাগছে যেখানে তার দম বন্ধ হয়ে ম’রে যাওয়া উচিৎ সেখানে সে জীবিত আছে এখনো। এইতো কি নিদারুন শ্বাস নিতে পারছে ইচ্ছেমতো।
সবটা ভেবে স্নিগ্ধার অনুভব হতে লাগলো স্নিগ্ধার ভীষণ কান্না পাচ্ছে, গলায় পাথর আটকে গিয়েছে।
বার কয়েক ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে বহু জড়তা নিয়ে স্নিগ্ধা কম্পিত স্বরে উৎসকে জিজ্ঞাসা করলো,,

“আপ.. আপনি আমায় এ.. এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন?” (কম্পিত স্বরে)

উৎস জবাব দিলোনা। গাড়ি পার্ক করে নামলো, সাথে স্নিগ্ধাও। উৎস স্নিগ্ধার হাত ধরে হসপিটালের ভেতরে প্রবেশ করলো। কাঙ্খিত কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। এদিকে স্নিগ্ধা সামনে নিজের পরিবারের সদস্যদের দেখতে পেয়ে অবাক ও হতভম্ব হলো। কল্যাণী, নেহাল রায়, মিতালি, সারু ও শেরহাম সবাই এখানে আছে। স্নিগ্ধা আজ তিনদিন পর মায়ের মুখশ্রী দেখতে পেলো। অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করলো, “মা!”

কল্যাণী স্নিগ্ধার দিকে তাকালেন। বিমর্ষ মুখশ্রীতে অবাক হওয়ার রেশ ফুটে উঠলো। স্নিগ্ধা অশ্রুভেজা চোখে মায়ের দিকে দৌড়ে গেলো। ঝাপ্টে ধরলো কল্যাণীকে। শেরহাম স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে সামনে কিছু দূরে উৎসকে পাথরের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখলো। মুহূর্তেই শেরহামের রাগ উঠে গেলো। আজ তিনটা দিন পর শেরহাম স্নিগ্ধফুলকে স্ব-চক্ষে দেখতে পারছে। সেদিন পাগলের মতো আদিত, নেহাল রায় ও সে মিলে খুঁজেছিলো স্নিগ্ধাকে। কোথায় পায়নি, শেষে জানলো উৎস চৌধুরী স্নিগ্ধাকে নিয়ে গেছে।

উৎস একবার স্নিগ্ধা ও সবার দিকে তাকালো। উৎস সবাইকে উপেক্ষা করলো অতঃপর ধীর পায়ে কেবিনের দিকে এগিয়ে গেলো। কেবিনে প্রবেশ করে উৎস একদৃষ্টিতে তাকালো তার এক সময়কার নাম মাত্র বাবা নামক লোকটার দিকে। কৌশিক চৌধুরী, প্রমীলা ও ইলাকে একই কেবিনে আলাদা আলাদা বেডে রাখা হয়েছে। কৌশিক চৌধুরীর বাম পাশেই প্রমীলা চৌধুরীর বেড। উৎস নির্লিপ্ত ভাবে প্রমীলা চৌধুরীর দিকে তাকালো। এই মহিলা! হ্যা এই মহিলার জন্যই আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে তার বাবা তাকে আর কানন দেবীকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ একা করে রেখে গিয়েছিলেন। উৎসের মনে প্রশ্ন জাগে, কৌশিক চৌধুরী তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তার মাকে। তাহলে কিভাবে অন্য নারীর প্রেমে আবদ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করে তাকে আর কানন দেবীকে ফেলে গিয়েছিলেন! এদিক দিয়ে এক অম্বর সমান ঘৃণা কাজ করে উৎসের কৌশিক চৌধুরীর প্রতি। তবে বর্তমানে কৌশিক চৌধুরীর এহেন করুন অবস্থা দেখে মায়া লাগছে উৎসের, ইশ যদি তার মতো মায়া যদি কৌশিক চৌধুরী করতেন তাহলে আজকে সে পিতৃহীন ভাবে বড় হতোনা। মায়েরও সমাজের থেকে বাজে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হতোনা। উৎস স্কুল, কলেজে কোথাও পিতৃহীন, বাজে কথার শিকার হতোনা।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো উৎস। এগিয়ে গেলো ধীর পায়ে। কৌশিক চৌধুরীর বেডের ডান পাশে ইলার বেড। উৎস ধীর পায়ে ইলার বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। অনেকটাই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে ইলা। কপালে সে’লাই পরেছে। গালে, শরীরে ব্যান্ডেজ করা। উৎসের খারাপ লাগলো। মায়ের পেটের আপন বোন নয় ইলা তবুও তার বাবারই তো মেয়ে। সে হিসেবে ইলা তার বোন। বোন! শব্দটা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো উৎসের।

“উৎস!”(ধীর কণ্ঠস্বরে)

উৎস তৎক্ষণাৎ তাকালোনা, কিয়ৎক্ষণ সময় নিলো। নির্লিপ্ত চক্ষুতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। সাদা এপ্রোনে দাড়িয়ে আছে ডাক্তার শাফান। উৎস ছোট করে একটা নিঃশ্বাস নিলো। ডাক্তার শাফান বলে উঠলো,,

“অবশেষে তোর দেখা মিললো বহুদিন পর। কেমন আছিস?”

“আছি ভালো, তুই?”(নেভানো কণ্ঠস্বরে)

উৎসের নির্লিপ্ত চাহনি ও কণ্ঠস্বর শুনে ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেললো ডাক্তার শাফান। ডাক্তার শাফান আর উৎস এঁকে অপরকে চেনে হাই স্কুল থেকে। উৎসের ক্লাসমেট ডাক্তার শাফান। ক্লাসমেটের পাশাপাশি ভালো বন্ধু। উৎসের সম্পর্কে সবটাই জানে ডাক্তার শাফান। তবে তিনমাস আগে জেনেছিলো যে কৌশিক চৌধুরী উৎসের বাবা। সে হিসেবে গতকাল রাতে যখন কৌশিক চৌধুরী, প্রমীলা চৌধুরী ও ইলার র’ক্তা’ক্ত অবস্থা দেখেছিলো তখনই ডাক্তার শাফান দ্রুত ইনফর্ম করেছিল উৎসকে। কৌশিক চৌধুরীর ও ইলার অপারেশন মূলত ডাক্তার শাফান ও তার সহকারী ডাক্তাররা করেছে।

“আমারও আছে ভালো। আঙ্কেল আর আন্টি আপাতত আউট অফ ডেঞ্জার। এখন ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি। তবে তোর বোনের কোমায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এখনো আটচল্লিশ ঘন্টা হয়নি। আমরা আশাবাদী যে ওর জ্ঞান ফিরবে, অন্যথায় কোমায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রে করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।” (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

উৎস নির্লিপ্ত, নিশ্চুপ হয়ে ডাক্তার শাফানের দিকে তাকিয়ে আছে। নজর সরিয়ে উৎস ইলা, কৌশিক চৌধুরী ও প্রমীলা চৌধুরীর দিকে কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে রইলো। অতঃপর উঠে দাঁড়ালো। ডাক্তার শাফানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বলে উঠলো,,

“ওনাদের খেয়াল রাখিস। তোর উপর ভরসা যেমন দুমাস আগেও ভরসা রেখেছি তেমনি এখনও ভরসা রাখছি। সময়ে সময়ে ইনফর্ম করিস। আসছি, পরে দেখা হয়ে কথা হবে।”(মৃদু হেসে)

“এখনই আসলি আর এখনই চলে যাবি? তিনমাস পর দেখা হয়েছে আমাদের। তাছাড়া ওনাদের কাছে, পাশে থাক।”

“পাশে থাকবো? যে মানুষটা আমার এবং আমার মায়ের পাশে থাকেনি তার পাশে থাকবো? ওনার প্রতি মনের গহীনে কোথাও একটু শ্রদ্ধা রয়ে গিয়েছে বলেই আমি আজকে এখানে ওনাকে এবং ওনাদের দেখতে এসেছি অন্যথায় সম্পূর্ণটাই ঘৃণা থাকলে আসতাম না। পাশে বসে থাকার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই আমার, ঘৃণা অভিমানের পাহাড় এমনিতেও অনেক উঁচু। ওনার মুখশ্রী পানে তাকিয়ে আর উঁচু করতে চাইছিনা। বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই ওনার পাশে বসার।”(নির্লিপ্ত স্বরে)

ডাক্তার শাফান কিঞ্চিৎ হাসলো, ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলল,,

“তোর চোখ আমি পড়তে জানি। এতো বছরে আরও কোনো এক্সপেরিয়েন্স না হলেই তোর চোখ পড়ার এক্সপেরিয়েন্স আমার ভালোই হয়েছে। জানিস? তোর চোখ ভিন্ন কথা বলছে।”(কিঞ্চিৎ হেসে)

“সবারই কথা বলার অধিকার আছে। চোখ ভিন্ন কিছু বললেও বলতে পারে। ভিত্তিমূলক কথা আমরা গুনায় ধরি, ভিত্তিহীন কথা আমরা গুনায় ধরিনা তেমনি এই চোখের ভিত্তিহীন কথাও আমি গুনায় ধরিনা। তুইও ধরিস না। আমার চোখ বাবার ভালোবাসা চায়, তবে উৎস চৌধুরী চায়না।”(নির্বিকার ভঙ্গিতে)

চলবে..?

#নীরদ_ক্লেশের_অন্ত
[পর্ব-২৮]
লেখিকা-নামীরা অন্তিকা

বাংলাদেশ থেকে কানাডার সময়ের পার্থক্য তেরো ঘন্টা। বাংলাদেশ সময় বর্তমানে বারো টা বেজে ত্রিশ মিনিট আর কানাডায় এখন রাত একটা বেজে ত্রিশ মিনিট। সাধারণত আদিত অ্যালকোহল পান করেনা, যেদিন কারো মা’র্ডার করে সেদিনই একটু আকটু খায়। শেষবার পুষণ ভৌমিককে মার্ডার করেছিল, যদিও তখন আদিত ভীষণ ক্ষোভে ছিল। অ্যালকোহল পান করার মতো নেশাটা তীব্র ছিলোনা, ছিল শুধু খু’ন করার তীব্র নেশা।
তবে আজ, আজ আদিতের ফ্রেশ মাইন্ড। কোনো ক্ষোভ নেই। হতে পারে আছে তবুও প্রকাশ পাচ্ছেনা ক্ষোভটা। সোফায় আয়েশী ভঙ্গিতে বসে নিশ্চিন্ত মনে অ্যালকোহল পান করছে সে। এই মুহূর্তে যেন এটাই একমাত্র ধর্ম তার। ইনতেহার পাশে বসে চেয়ে আছে তার দিকে। আদিত না তাকিয়েই জিজ্ঞাসা করলো,,

“খাবি?”

“উহু!” (নিচু স্বরে)

“তাহলে এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস? নজর টজর দিস না। আমার পেট খারাপ হলে সাপ, ব্যাঙ এগুলোকে শিকার করে কে’টে টুকরো টুকরো করবো কিভাবে?”(আড়চোখে তাকিয়ে)

ইনতেহার ভরকানো দৃষ্টিতে তাকালো আদিতের দিকে। ভ্রু কুঁচকে আদিতের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে বেশ বড়সড় টেবিলের উপর বেঁধে রাখা এডউইন জেমসের দিকে তাকালো। এডউইন জেমসের চক্ষুতে এখন মৃ’ত্যু ভয়েরা উপস্থিত হচ্ছে।

“শিকার করার আগে বাঘ হিংস্র থাকে। তুমি সবসময় তেমনই থাকতে, আজকে এমন হাস্যকর মশকরা কেনো করছো?”(নিচু স্বরে)

“বাঘ বলে কি অনুভূতি নেই নাকি? সবসময় হিংস্র থাকতে হবে এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম আছে নাকি ইনতেহার? কিছু কিছু বাঘ দেখবে, নিশ্চুপে শিকারকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকবে ঝোপঝাঁড়ের আড়ালে। অতঃপর দেখবে হুট্ করে এক লাফ দিয়ে শিকারীকে আবদ্ধ করে ছিঁ’ড়ে ফেলবে অনেক হিংস্র ক্ষো’ভ নিয়ে। আমার অনুভূতিটাও বর্তমানে এমন। শান্ত ভাবে থাকবো তবে এমন হিংস্র মৃত্যু দেবো, রূহ কেঁপে উঠবে।”(শান্ত স্বরে)

ইনতেহার আড়চোখে তাকালো আদিতের দিকে। আদিত তার দেহের সম্পূর্ণ ভার সোফার উপর ছেড়ে দিয়েছে। ইনতেহার ভেবেই চলেছে এই বুঝি লাফ দিয়ে উঠেই এডউইন জেমসকে টর্চার শুরু করবে। হেল হাউজের নির্মমতা কতটা ভয়ঙ্কর, তা বুঝিয়ে পৃথিবী থেকে চিরমুক্তি দিবে এডউইনকে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইনতেহার। বাবার নিষ্প্রভ মুখশ্রীটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। ছোটবেলায় তাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা গেলো। জীবনের এতগুলো বসন্ত বাবার ছায়াতলেই কাটিয়েছে বাবাকে ভালোবেসে, সেই বাবার আজকে কি করুন পরিস্থিতি! ইনতেহারের রাগ হয়, মন চায় বাবার এই করুন পরিস্থিতি যারা করেছে তাদের হাত কে’টে ফেলতে। তবে ইনতেহার এমন কিছুই করবেনা। আদিত থাকতে ইনতেহারকে কিছুই করা লাগবেনা শুধু মাত্র তাদের অবস্থানটাই আদিতকে জানানো ছাড়া।
এই যেমন সকালে এডউইনের অবস্থান বের করে তাকে কিডন্যাপ করে এনেছে। ঠিক এমনই। ফোঁস করে একটা শ্বাস ছাড়লো ইনতেহার।
আদিত উঠে দাঁড়িয়েছে। এডউইনকে যে টেবিলে শুইয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে সেই টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। টেবিলে এডউইনের পাশে ছুরি, লবন, গুঁড়া মরিচের কৌটা রাখা আছে।
এডউইনের মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকানো ছিল যার দরুন সে শুধু গোঙাতেই পারছিলো, কিছু বলতে পারছিলোনা।

“তোর খুব শখ তাইনা নিজ চোখে জাহান্নামের নির্মমতা দেখা? আজ এমন জাহান্নাম দেখাবো তুই মরার পর তোর রূহ তোর দেহের পরিনাম দেখে আবারও মৃত্যু বরণ করতে চাইবে। আমার উচিৎ ছিল তোর মতো জঞ্জালকে সেদিনই মে’রে ফেলা, তবে মারিনি। যে ডোজ দিয়েছিলাম ভেবেছিলাম নিজ থেকেই ম’রে যাবি। কিন্তু না তোর তো কৈ মাছের জান। এতো সহজে বিলীন কিভাবে হবি, সেই বেঁচে থেকে চামচামি করলি। তোর এক্স বস যে তোর নতুন বসের বাপকে খু’ন করিয়েছে তা তো বললিনা, বললি শুধু আমার কথা। ফাঁসিয়ে দিলি শুধু শুধুই।”(অত্যান্ত রাগান্নিত স্বরে)

এডউইন শুধু গোঙাচ্ছেই, আদিতের ভয় তার সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পরেছে। পূর্বে একবার আদিতের হিংস্রতার শিকার হয়েছিল সেই শোধ তুলতেই তো অভীককে আদিতের কথা বলেছিলো, কিন্তু হলোটা কি! আদিত আরও হিংস্র হয়ে উঠলো। আগের বার রেহাই দিলেও এবার তো নিশ্চিত মৃ’ত্যু।

আদিত এডউইনের মুখের স্কচটেপ খুলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গেই এডউইন অস্থির স্বরে ইংরেজিতে বলে উঠলো,,

“আদিত! আদিত প্লিজ আমায় মেরোনা। আমি ভুল করেছি, আমায় মাফ করে দাও।”

আদিত শুনলোনা। নিজের নির্মমতা পুনরায়ের চেয়েও ভয়ঙ্করভাবে প্রকাশ করতে লাগলো। ছু’রি দিয়ে এক ইঞ্চি করে গভীর ভাবে ক্ষ’ত করছে এডউইনের শরীরে। ব্যথায় এডউইন গগন কাঁপা চিৎকার করছে। আদিতের যেন হৃদয়ে প্রশান্তির ঢেউ উঠছে। সেই ক্ষ’ত স্থানে সে চিমটি করে লবন ছিটিয়ে দিচ্ছে। এডউইন কাঁ টা মুরগির মতো ছটফট করছে। এদিকে ইনতেহার নিশ্চুপে আদিতের কান্ড দেখে যাচ্ছে।
আদিত এবার এডউইনের হৃদপিন্ড বরাবর ছু’রি দিয়ে কা’টলো, অতঃপর গুঁড়া মরিচ ছিটিয়ে দিলো সেখানে। এডউইনকে পায় কে, তার চিৎকারে মনে হলো হেল হাউজ কেঁপে উঠছে। ভীষণ ভয়ানক লাগছে পরিবেশটা। তবে আদিত, ইনতেহার বেশ উপভোগ করছে পরিবেশটা।

“হেল হাউজের অতিথি হেল হাউজের মর্মার্থ বুঝবেনা এমনটা হয় এডউইন জেমস? মর্মার্থ অনেক আনন্দদায়ক তাইনা?”(প্রশস্ত হেসে)

আদিতের কথায় কিছুই বলতে পারলোনা এডউইন। শুধু গোঙাতে লাগলো। ব্যথাতুর আওয়াজ। ভীষণ করুন শোনালো আওয়াজটা। আদিতের মায়া দয়া কিছুই অনুভব হলোনা, তার হাত এডউইনের র’ক্তে লা’ল হয়ে গেছে। সর্বশেষ আদিত উন্মাদের মতো হেসে উঠলো। হাতে থাকা র’ক্তে রঞ্জিত ছু’রিটা এডউইনের হৃদপিন্ডে গেঁথে দিয়ে একদলা থুথু ছুঁড়ে মা’রলো এডউইনের শরীরে। একরাশ ক্ষোভ নিয়ে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,,

“তোদের মতো ঘৃণ্য জানোয়ারদের কঙ্কাল সংগ্রহ করতে বেশ আনন্দ পাই। তোর কঙ্কাল হেল হাউজের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখবো, তোর কঙ্কাল যখন দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখবো দেখিস তোর কাছে তখন তোকে খুব নাইস এন্ড এট্রাক্টিভ দেখাবে।”(হিসহিসিয়ে)

এডউইনের গোঙানি কমে এলো। আসলেই কৈ মাছের প্রাণ। এখনো ম”রার নাম গন্ধ নেই।

“এঁকে এসিডে চুবিয়ে কঙ্কাল বানিয়ে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখিস। আজকে বাড়িতে যাবোনা, পাশের ঘরেই থাকবো। শুন, আগামী দুদিনের মধ্যেই এসজে গ্রুপের সকল সদস্যের ইনফরমেশন আমাকে দিবি। রাত অনেক হয়েছে, তুইও এখানেই থেকে যা।”

শরীর ঝেড়ে আদিত হামি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ইনতেহার নির্বিকার ভাবে এডউইনের মুখশ্রীপানে চেয়ে আছে। মৃদু হাসলো ইনতেহার। অন্যরুমে গেলোনা, রুমের সোফাতেই লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। আপাতত তার ঘুমের দরকার, সকালে উঠে এই নমুনাকে আবার এসিডে চুবিয়ে কঙ্কাল বানিয়ে টাঙিয়ে রাখতে হবে। পাপিষ্ঠ মানুষের কঙ্কাল দেখতে বেশ ভালো লাগে, মনে শান্তি শান্তি অনুভব হয়।


ইলাদের কেবিনের দরজা খুলে উৎস এক পলক স্নিগ্ধার দিকে তাকালো। ভেজা নেত্রপল্লব, মায়ের বুকে লেপ্টে ফোঁপাচ্ছে। শেরহাম নির্বাক চোখে চেয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে। স্নিগ্ধার পাশেই সারু, মিতালি দাঁড়িয়ে। আর শেরহামের পাশে নেহাল রায়। উৎস স্নিগ্ধার কান্না দেখে মনে মনে ভেঙালো,,

“এহহ পাপা কি পারী, এমন ভাবে কাঁদছে যেন তিনদিন আটকে রেখে খেতে দেইনি, আনলিমিটেড বেল্ট দিয়ে মে’রেছি।

মনে মনে এসব বললেও উপর দিয়ে নিজেকে বেশ গম্ভীর করে কেবিন থেকে বের হলো সম্পূর্ণ। উৎস বের হতেই সবাই উৎসের দিকে তাকালো। শেরহাম যেন উৎসকে দেখতেই চটে গেলো। তবে উৎস সবাইকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে হসপিটাল থেকে বেরোনোর জন্য উদ্যোত হলো। ভাবখানা এমন দেখালো যেন সে চেনেই না এদের কাউকে। কল্যাণী উৎসের এমন কাণ্ডে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলেন উৎসের যাওয়ার দিকে।


দুদিন পর বিকেলে,

পরপর দুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও ইলার জ্ঞান ফিরলোনা। ডাক্তার শাফান কনফার্ম করলেন ইলা কোমায় চলে গিয়েছে। কবে এই অবস্থা থেকে বের হবে এটা বলা যাচ্ছেনা। এদিকে প্রমীলা চৌধুরী নিজে অসুস্থ হলেও মেয়ের এহেন অবস্থায় কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। কৌশিক চৌধুরী উত্তেজিত হয়ে পড়ায় ওনার অবস্থা প্রায় শোচনীয় হয়ে পরেছে।
শেরহাম কি করবে বুঝে উঠতে পারলোনা। আদিত যাওয়ার তিনদিন হওয়ার গেলো। তবুও আদিত ফোন করেনি তাদের। ওখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই জানতে পারছেনা শেরহাম। আদিত ঠিক আছে কিনা নেই! একদিকে আদিতের টেনশন অন্যদিকে ইলার কোমায় চলে যাওয়া। পরিবারে যেন একটা অসহায়ত্ব নেমে এসেছে। চারদিকে দুঃখদের আনাগোনা। সুখ শব্দটা কতদিন হলো তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে! না জানি আবার কবে সুখ শব্দটা তাদের দ্বারে আসবে!
হসপিটালে নেহাল রায় আর কল্যাণী রয়েছেন। শেরহামও যাবে। তবে সেখান থেকে তাকে অফিস যেতে হবে। কতগুলো দিন হলো অফিসে ঠিকমতো উপস্থিত থাকতে পারছেনা সে বা নেহাল রায় কেউই। আজকে যাবে।

“সারু, আমি একেবারে রাতে ফিরবো। অফিসে যাবো আজকে। ঠিকমতো খেয়ে নিবে কিন্তু, মা থাকবে বাড়িতে। ভালো খারাপ সবটা মাকে বলবে।”(মৃদু কণ্ঠে)

সারু জবাব দিলোনা। নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো শেরহামের দিকে।

“ইলাদির কি আর জ্ঞান ফিরবেনা?”(স্থির কণ্ঠে)

শেরহাম নির্লিপ্ত ভাবে চাইলো সারুর দিকে। এই প্রশ্নের জবাব অনেকটা কঠিন মনে হলো তার কাছে। কঠিন লাগবেই তো, যে প্রশ্নের জবাব জানেনা শেরহাম সে প্রশ্ন তার কাছে কঠিনই লাগার কথা। তবুও সারুকে আশ্বাস দেওয়ার স্বরে বলে উঠলো,,

“দ্রুতই ফিরতে পারে অথবা অনেক দেরীও হতে পারে। আমরা পজিটিভ ভাবি, তাহলে সবটা পজিটিভই হবে।”

“আদিত দাভাইয়েরও তো কোনো খোঁজ নেই। কানাডা যাওয়ার পর ওনার তরফ থেকেও কোনো ফোনকল আসেনি। উনি তো জানেনও না ইলাদির এক্সিডেন্ট হয়েছে আর উনি কোমায় চলে গেছেন!”(নিষ্প্রভ স্বরে)

শেরহাম বলার মতো কিছু খুঁজে পেলোনা। সত্যিই তো কি বলার আছে। আদিত কানাডা যাওয়ার আজ তিন দিন হয়ে যাওয়ার পরেও একবারের জন্যেও কল করেনি যে ঠিক মতো পৌছিয়েছে নাকি অন্যকিছু। শেরহাম সারুর দিকে এগিয়ে আসলো।

“সবটা ঠিক হয়ে যাবে সারু, এতো ভেবোনা। আমাদের উচিৎ এসময়ে সবটা পজিটিভ ভাবা। সবটা ঠিক হবে, ধৈর্য হারিয়ে ফেলনা। সৃষ্টিকর্তা আমাদের ধৈর্যর পরীক্ষা নিচ্ছেন, আমাদের ধৈর্যহারা হলে চলবেনা।”(থেমে থেমে)

সারু শুনলো মনোযোগ দিয়ে। শেরহাম এগিয়ে এসে দুহাত দিয়ে সারুকে বুঁকের সাথে মিশিয়ে নিলো। সারুর কপালে আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।

চলবে..?