#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৯_৩০(এক মুঠো হাসি)
রাত্রীবেলা স্বামীর কাছ থেকে জবাব না পেলেও ভোর বেলায় নাছির উদ্দিন এর হাতে বেল্ট দেখে রূপালি বেগম মাথা নুইয়ে নিলেন। স্বামীর মনে তার ভাইয়ের প্রতি রাগ জমে আছে কী! সেজন্যই কী বেল্ট হাতে নিয়েছেন তিনি! স্ত্রীর আকাশকুসুম ভাবনার মাঝে গালে আলতো স্পর্শ পেয়ে চমকে যান রূপালি বেগম। নাছির উদ্দিন পরিপাটি হয়েছেন। ভদ্রলোকের বেশভূষায় সুপুরুষ লাগছে স্বামীকে। রূপালি বেগম সেই হাতের স্পর্শকে উপেক্ষা করতে পারলেন না। আবেশে হাতজোড়া আঁকড়ে ধরেন।
“দোকানে যামু। সেখান থেইকা নাস্তা পানির জিনিস নিয়ে আনমু। বাজারে গিয়ে রুই মাছ বড় দুটা, দুটা সোনালী মুরগির মাংস আনমু। কতবছর পর শালককে দাওয়াত করমু। চেয়ারম্যান বলে হতা আয়োজনের কোনো কমতি রাখমু না। দেইখা নিও তুমি। মোকতাব মিয়ার টাকাও তার মুখে ছুঁইড়া মারমু। আমার সোনার টুকরো মাইয়ারে নিয়া অশ্লী’ল হতার উপর অপমান দিমু তারে।”
“আচ্ছা আপনে সেদিনের হতা কইলেন না এহনো! মোকতাব মিয়া কী কইছিল আপনারে? আপনে আর আমার লগে আলাপ করেন না ক্যা?”
“আচ্ছা আমি যাই হ্যাঁ দোকানে গিয়া সিদ্দিকরে কল দিমু। নাহলে দেরি হইয়া যাবে আবার। তুমি ঘরধর সাফসুতরো কইরা নাও। ভাই ভাবী সন্তানদের নিয়া আসবো। ঘরধর অগোছালো রাইখো না। আর হুনো বারোটার দিকে তোমাগোর জন্য সুন্দর কাপড় পাঠামু। তাগোর জন্য ও কাপড় কিনমু।”
নাছির উদ্দিন এর এড়িয়ে যাওয়াটা ধরতে পারেননি রূপালি বেগম। তিনি তো প্রথমবারের মত স্বামীর কথায় আশ্চর্য যেমন হয়েছেন তার চেয়েও বেশি খুশিতে আত্মহারা। নাসমা আর নাসমুর আড়াল থেকে বাবা মায়ের মধ্যকার সম্পর্কের উষ্ণতা দেখে মিটমিটে হাসল। নাছির উদ্দিন বের হওয়ার মুহূর্তে তাদের দেখে লজ্জা পেলেন। আদুরীয় ভঙ্গিতে চোখ রাঙিয়ে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে পাশ কেটে চলে গেলেন।
শেহরীনা ঘুম থেকে হামি দিয়ে উঠল। এলার্ম বাজার আগেই উঠেছে আজ সে। আশপাশ তাকিয়ে দেখল সূর্যের কিরণ পড়ছে জানালার বাহিরে উঠানের দিকে। আড়মোড়া ভেঙে ওয়াশরুমে গেল। গরম পানির কেটলি রাখা দেখে মৃদু হাসল। এ কাজ তার মায়ের। বৃষ্টির সময় ট্যাংকির পানি ঠাণ্ডা হয়ে পড়ার কারণে তার মা অভ্যাসের বশে তার জন্য কুসুম গরম পানি করে রাখেন।
মুখ হাত ধুয়ে রুমে এসে দেখল তার রুমে রূপালি বেগম গুছগাছ করছেন। এ দেখে সে অলস ভঙ্গিমায় তার রুমের সোফায় বসে বলে,
“ও মা আপনি এতো সকালে রুম গুছাচ্ছেন কেনো? আমি ভার্সিটির থেকে আসার পর গুছিয়ে নিতাম।”
“হ্যাঁ আর তোর শ্বশুর বাড়ির লোক এসে যেনো দেখুক তাদের হবু বউমা একটা ঢেঁড়স মার্কা মেয়ে।”
খট করে চমকিত চোখের বড় বড় আঁখি দিয়ে ড্যাবড্যাব করে মায়ের দিকে তাকাল। রূপালি বেগম নিজের মত কাজ করছেন। আমতা আমতা করে শেহরীনাও তাল মেলাতে কাজে হাত দেয়।
“মা আপনি কী বললেন বুঝিনি!”
রূপালি বেগম আলমারিতে কাপড় রেখে মেয়ের কাছে গিয়ে তার মাথায় মৃদু চাপড় মে’রে বলেন,
“ঢেঁড়স একটা। বলছি তোর মামার বাড়ির সবাইকে আজ রাতে এখানে খাওয়ানো হবে। দাওয়াত দিচ্ছি তাই। এতবছর পর নিজের ভাইকে দাওয়াত করছি। এই যেনো সুভাগ্য! তুই একটু পরিপাটি হয়ে থাকিস। তোর শ্বাশুড়ির সামনে আগের বারের মত উল্টাপাল্টা বকিস না। চুপ করে শুনিস প্রতিবাদ….।”
“মা প্লিজ! এটাতে আপনি আমাকে মানা করতে পারেন না।”
“না-রে মা এটা বলিস না। তুই তো জানিস তোর মামার সাথে আজ দ্বিতীয় বার দেখা হবে। চাইছি না কোনো গণ্ডগোল অথবা মন খারাপী হোক কারো মাঝে।”
শেহরীনা মুখ লটকে তার ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। মায়ের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলানোর কণ্ঠে বলে,
“হু হু মামী যদি বেশি ফ্যাডের ফ্যাডের করে তাহলে আমিও ব্যাডের ব্যাডের করব বলে দিলাম।”
রূপালি বেগম শুনে মেয়েকে প্রতিক্রিয়া জানানোর পূর্বেই শেহরীনা রুম থেকে পালিয়ে গেল। তার ঠোঁটযুগল কিঞ্চিৎ ফাঁকা হয়ে গেল।
“এটা কী আদৌ আমার মেয়ে? মনে তো হয় না আমার মেয়ে। আস্ত একটা তরিচগাছ।”
(তরিচ হলো নাগা মরিচ)তিনি আনমনে হেসে শেহরীনার রুম গুছিয়ে খাওয়ার টেবিলের কাছে এসে দেখেন বাচ্চারা অপেক্ষা করছে। তিনি তার সন্তানদের অপেক্ষিত দৃশ্য দেখে মুচকি হেসে হাত ধুয়ে খেতে বসেন। স্বামীর জন্য খাবার নাসমুর দিয়ে আসবে।
খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই গাড়ির শব্দ শোনা গেল। শেহরীনা চমকে যায়। গাড়ির শব্দে রূপালি বেগম ভ্রু কুঁচকে বসা থেকে উঠে জানালার কাছে গেলেন। বাহিরে সারোয়ার কে দেখে গলা ঝেড়ে নিশ্চুপে এসে বসে যান। শেহরীনা বুঝেছে হারামী লোকটা ভদ্র সেজে চলেই এলো। নাসমা চোখের আড়ালে চোরেচুপে পা টিপে টিপে বাহিরে চলে গেল। সারোয়ার গাড়ির দরজায় হেলান দিয়ে আছে।
‘এই যে ভাইয়া আপনি কী আপুকে নিতে এসেছেন?’
পিচ্চি মেয়ের কণ্ঠস্বর কানে শুনে সারোয়ার ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকায়। গোলাপি ফ্রক পরিহিতা পিচ্চি কে দেখে মৃদু হাসে।
তার মুখ বরাবর ঝুকে বলে,
“হুস কাউকে বলিও না তোমার আপুকে কিডন্যাপ করতে আসছি। কিডন্যাপ করে ফেলে দেবো নদীতে।”
পিচ্চি নাসমা হা হয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ সারোয়ার এর সামনেই ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠে। সারোয়ার থতমত খেয়ে গেল। সে তো মজা করছিল পিচ্চিটা দেখি সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলল!!
সারোয়ার উপায়ান্তর না পেয়ে নাসমার মুখের ভেতর একটা ডেইরি মিল্ক ঢুকিয়ে দেয়। যার কারণে তার কান্না সেখানেই বন্ধ হয়ে যায়। নাসমা মনের সুখে চকলেট চাবাচ্ছে। যা দেখে সারোয়ার মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“চকলেট খাবে বললেই পারতে। এতো নাটক করলে কেনো হুম?”
“আপুর বোন বলে কথা। নাটক কম পারি নাকি পিও!”
নাসমার কথায় বেকুব বনে গেল বেচারা। নাসমা তার বোনকে বেরিয়ে আসতে দেখে দৌড়ে পালিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে। সারোয়ার মাথা চুলকে বিড়বিড় করে বলে,
“বোন কী কম ছিল যে শালিকাও খটখটে হলো। দুটোর একটাও কম না। আবার বলে কি-না নাটক কম পারি নাকি পিও! তার বয়সে নাকে দুধ খেতাম।”
“কেন আপনার কী নাক দিয়ে দুধ পেটে যেতো?”
শেহরীনার কথায় মুখটা এটুকুন হয়ে এলো সারোয়ার এর মুখ। ইশ বেচারার গাজাব বেইজ্জতি হয়ে গেল। বিড়বিড় করতে গিয়ে উঁচু কণ্ঠে কেনো বলে ফেলল। মেয়েটা পুরো রাস্তা টোন মারবে। শেহরীনা কণ্ঠে আক্রোশ এনে বলে,
“আপনাকে না বলেছি আমার পিছু করবেন না তাহলে আজ কেনো আসলেন নিতে?”
“ঐ কথা আমাকে বলেছিলে?”
“আপনার কী ভুলে যাওয়ার রোগ আছে? সেদিন রেস্টুরেন্ট থেকে পৌঁছে দেওয়ার পরপর আপনাকে রাতেই জানিয়েছিলাম। আমার পিছু না করতে তবুও করছেন কেনো হুম?”
“দেখো ঐ কথা আমায় তুমি বলোনি এটা আমার আত্মবিশ্বাস।”
শেহরীনা জেদ পাকিয়ে বলে,’আপনাকেই বলেছি প্রমাণ আছে আমাদের কলে কথা বলার সময়ের। দেখাব?’
সারোয়ার আগ্রহ উদ্দীপক কণ্ঠে ক্রুর হেসে বলে,
‘আরে তুমি পারবে না। মিছে কথা বন্ধ করো তো।’
দাঁতে দাঁত চেপে ফোন বের করে কললিস্ট সারোয়ার এর চোখের সামনে ধরল। যা দেখে ঠোঁট কামড়ে শেহরীনার দিকে ঘোর দৃষ্টিতে তাকায়। শেহরীনা অদ্ভুত দৃষ্টিপাত দেখে নিজেই ফোনটা ঘুরিয়ে চোখের সামনে নেয়। চমকে ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়। ইশ তার মত গাঁধী বোধ হয় পৃথিবীতে আর নেই।
একে তো সারোয়ার এর নাম ‘হবু ব্যারিস্টার জামাই’ লিখে কললিস্টে সেভ করেছে। সেই কি-না অনায়াসে দেখিয়ে দিলো। তার মাথায় আসলেই বুদ্ধি নেই।
“তুমি দেখি জেগে জেগেই অন্যমনস্ক হয়ে যাও ব্যাপার কী? আমার মত হ্যান্ডসাম দেখোনি কখনো?”
“ওও এক্সকিউজ মি আপনি আর হ্যান্ডসাম!”
“থাক তোমার আর মিছে কথা বলতে হবে না।”
“এই আপনি আবার আমাকে আপনি তুমিতে গুলিয়ে ফেলছেন কেনো? দেখেন আমার পিছু ছেড়ে দিন।”
“এটা তোমার হবু জামাই কে গিয়ে বলো আমি তো তোমার মামাতো ভাই। মামাতো ভাইয়ের কাছে তুমি তুই ইটস জাস্ট নরমাল।”
“ওহহ মামাতো ভাই তাই আজ থেকে ভাইয়া ডাকি কেমন?”
“ইয়েস ইয়েস অফকোস হোয়াই নট! তুমি নিঃসন্দেহে ভাইয়া ডাকতে পারো।”
“আপনার মধ্যে কী ফিলিং নেই? ভাইয়ার অর্থ বুঝেন? কত গল্প পড়েছি, কত মুভির, কত সিরিয়াল দেখেছি। ভাইয়া বললেই হিরোর চোখ মুখ লাল হয়ে যায়।”
“তোমার মনে হয় আমি তাদের সাথে যায়? প্লিজ শেহরীনা তোমাকে বলেছিলাম না আমার কাছ থেকে হিরো টাইপ ফিলিং আশা করবে না। তুমি কী ভাবছো তুমি আমাকে ভাইয়া ডেকে ডেকে মুখে ফেনা তুলে ফেলবে। আমিও হিরোদের মত নাকের ডগা লাল করে, চোখগুলো লাল করে তোমাকে কষে একটা চ’ড় দিয়ে ভাইয়া ডাকার শখ মিটিয়ে দেবো? প্লিজ! আমি সেসব ল ক্লাস হিরো নয়। আমি মেয়েদের সম্মান যেমন করি তেমন ঘৃণাও করি। মেয়েদের গাঁয়ে হাত তোলা আমার মায়ে আমায় শিখাইনি। তুমি যদি আমার গাঁয়ে হাত উঠাও তার বিনিময়ে আমি হাত উঠাব নাহয় প্রতিশোধ নেবো তেমনটা তোমার ভাবনায় চলে আসবে। কারণ জেনারেশনে সবাই ভুলভাল লিখে প্রচার করতেই ওস্তাদ। আমাদের উচিৎ কথা শেখানো তো দূরে থাক উচিৎ পন্থা অব্দি দেখিয়ে দেওয়ার মত কেউ থাকে না। শুনো আমি হলাম ফ্যামিলি ম্যাটেরিয়াল পুরুষ। আমার নাকের ডগা, চোখের বর্ণ চেঞ্জিং দেখবে বিয়ের পর যদি তুমি ভুল পথে পা রাখো তবেই। অন্যথায় তোমাকে আমি লিখিত দিতে পারি বয়স পেরিয়ে যাবে বৃদ্ধ হয়ে যাবো তবুও আমার কাছ থেকে কখনো উঁচু কণ্ঠস্বর এ বকাও শুনবে না, অত্যা’চারের অ শব্দটাও খুঁজে পাবে না। সেই তুমি ভাইয়া ডেকে হাঁফিয়ে যাবে তবুও আমিই তোমার ভাইয়া থেকে ছাইয়া ছাইয়া হবো।”
শেহরীনা সারোয়ার এর কথার ঘোরে পড়ে গেল। আনমনে ঢোক গিলে। সারোয়ার তপ্ত শ্বাস ফেলে ফ্রন্ট সিটের দরজা খোলে দিয়ে শেহরীনাকে ভ্রু নাচিয়ে আহ্বান করে বসার জন্য। সেও উপেক্ষাহীন বসে পড়ল। আসলে সে ফেসবুকে গল্প পড়ে অভ্যস্ত। সেই কথাই এই পুরুষের কাছে ব্যক্ত করেছে। কই সত্যিই এ পুরুষের সাথে গল্পের পুরুষদের আকাশ পাতাল তফাৎ! এ কেমন পুরুষ ‘ফ্যাক্টরিয়াল ইনোসেন্ট’ বলে কথাটি তবে সত্য? পুরুষ মানুষ সত্যবাদী নিষ্পাপ চরিত্রের ও হয়ে থাকে। নাকি তা নিছক অভিনয় মাত্র!
শেহরীনার মলিন চোখজোড়া সারোয়ার এর দিকে যায়। সারোয়ার স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ি চালাচ্ছে।
মনে মনে বলে,
“আপনি যে আমার সাথে এতটা ভালো ব্যবহার করেন। আমার পূর্ণ অপূর্ণ দিকের খেয়াল রাখেন। এই দিক কী শুধুই লোক দেখানো ভালোবাসা? না আপনি সত্যিই আমায় মন থেকে চান।”
“কী হলো আমায় এত গভীর ভাবে দেখে নিয়ে কী ভাবছো?”
শেহরীনার ধ্যান ভাঙ্গে। সে ম্লান হেসে বলে,
“আচ্ছা আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার কোনো স্মৃতি নেই? মানে এ কথা জানি যে, তার আপনার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু বাসররাতেই হয়ে গিয়ে ছিল। তবুও আপনার সাথে লোকালয়ে অথবা রেস্টুরেন্টে কখনো দেখা সাক্ষাৎ করে কথাবার্তা চলেনি।”
সারোয়ার এর মুখখানা গম্ভীর হয়ে যায়। পরক্ষণে সে চমৎকার হেসে তার পকেট থেকে ফোন হাতড়ে শেহরীনাকে দিল। ফোনটা পেয়ে সে ভ্রু কুঁচকায়।
“গ্যালারিতে গিয়ে দেখো দুইবছর আগের ছবিগুলো দেখতে পাবে। সেখানে আমার আর আমার প্রথম স্ত্রীর ছবি আছে। তার সাথে স্বল্প মুহুর্ত বলতে সেই একটাই ছবি ছিল। আসলে জানো তো আমি ব্যারিস্টারি শেষ করার আগেই আমার বিয়েটা হয়ে যায়। তখনো আমি বিদেশে। ফোনালাপে বিয়ে কথাটা তেমনি বলতে পারো। তখন দেশে এসে প্রথম বাসররাতে তার ঘোমটা তোলার পরপর দেখি সে আকস্মিক অজ্ঞান হয়ে যায়। তাকে হুঁশ ফেরানোর চেষ্টা করেও পারিনী। পালস চেক করার পর বুঝলাম সে মা’রা গিয়েছে। অদ্ভুত লাগে তাই না!”
“কী আপনার স্ত্রীর হঠাৎ মৃত্যু হলো আপনি তদন্ত করেননি!”
সারোয়ার তাচ্ছিল্যের হাসল। মলিন কণ্ঠস্বরে বলে,
“করে ছিলাম মেয়েটা আমার সাথে বিয়ের পর পরপুরুষের মাঝে আসক্ত হয়ে গিয়ে ছিল। বিদেশ থেকে আসার পর তার আর আমার প্রথম রাত। তার কাছাকাছি যাওয়ার আগেই তার সেই বয়ফ্রেন্ড তাকে বিষ খাইয়ে ছিল। যার কারণে সে মা’রা যায়। তার বয়ফ্রেন্ড কে অবশ্য শাস্তি দিয়েছি আমি। প্রতারণার দাবিতে আমি চাইলে মৃত্যু স্ত্রীর বাবা মায়ের উপর আরোপ করতে পারতাম। তা করিনি কারণ আমি অমানুষ না। দোষ মেয়ের তার শাস্তি তার বাবা মা পাবে সেটা অন্যায়।”
শেহরীনার আফসোস লাগল মেয়েটার প্রতি! তবে সে সারোয়ার কে বুঝতে দিল না যে সে কী পরিমাণে আত্মতৃপ্তির জোয়ারে ভাসছে! ইশ মেয়েটা ডায়মন্ড পেয়েও গ্লাস কে বেছে নিয়ে ছিল। ভাগ্যের খেলায় সেই ডায়মন্ড এখন তার হাতের কাছে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
___
“হুনো মোকতাব মিয়া তোমার টাকা এই লোও। আবার যদি আমার মাইয়ার দিকে খারাপ নজরে তাকাস। তাহলে তোর বুইড়া শরীরের একটা হাড্ডিও রাখব না। টাকা লইয়া নিলি। আর কখনো আমার সামনে পড়বি না।”
নাছির উদ্দিন মোকতাব মিয়ার মুখে টাকার বান্ডিল ছুঁড়ে মেরে তাকে দোকান থেকে বের করে দিলেন। মোকতাব মিয়ার রাগে গাঁ জ্বলছে। তবুও তার পরিকল্পনা পূর্ণ না হওয়া অব্দি তার নাটক করতে হবে। বিধেয় সে কান্নামাখা মুখ করে নাছির উদ্দিন এর পায়ে পড়ে গেলেন। নাছির উদ্দিন দেখে হামি দিয়ে পা জোড়া সরিয়ে সেখান থেকে সরে গেলেন। মোকতাব মিয়া মাটিতে গড়াগড়ি দেওয়ার মত শুয়ে আবুল তাবুল বকছে। যা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই নাছির উদ্দিন এর। তার বহু কাজ বাকি ঘরের সবার জন্য শাড়ি,জামা সাথে মেহমানদের জন্য ও কেনাকাটা করা লাগবে। সেই কারণে তিনি একটা রিকশায় উঠে মার্কেটের দিকে চলে গেলেন। মোকতাব মিয়ার বকবকের মাঝে তার কাঁধে কেউ হাত রাখে। তিনি ভাবেন নাছির উদ্দিন বোধহয় তাকে ক্ষমা করেছেন। তিনি উৎফুল্ল হয়ে তাকাতেই তার মুখের উপর তরল পানি পড়তে লাগে। তিনি ইয়াক ইয়াক থুতু করতে থেকে উঠে বসেন। তার মুখের সামনে একটা গরু। যে কি-না সাচ্ছন্দ্যে মোকতাব মিয়ার এসে মুখের উপর প্রস্রাব করে দিলো। মোকতাব মিয়ার গাঁ গুলিয়ে এলো। তিনি তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে দূরে একটা বড় পুকুরপার আছে সেখানে ছুটে গেলেন। চারপাশ না তাকিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিলেন।
মিনিট খানেক পর হাঁফাতে হাঁফাতে উঠেন। তখনি কিছু মেয়ে চিৎকার করে উঠে। তারা সেখানে কাপড় কাঁচছিল। অনেক মেয়ে নিজেকে আড়াল করে স্নানের আনন্দ নিচ্ছিল। এক বুড়ো লোককে পুকুরে ঝাঁপ দিতে দেখে তারা ভয়ে ভীতি হয়ে পড়ল। মেয়েরাও তিরিক্ষি মেজাজে মোকতাব মিয়ার দিকে জুতো জোড়া, সাবান, কাপড়ের টুকরো অর্থাৎ হাতের নাগাল যা পাচ্ছে তা ছুঁড়ে মারছে। মোকতাব মিয়া উপায়হীন দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে মোড়ে এসে একটা রিকশায় উঠে পড়েন।
চলবে……..
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি রিচেক করিনী।😓 ঘরে রান্নার কাজ, ঘরের কাজ ছিল। দুইপর্ব লিখতে পারিনী তাই একপর্ব করে দিলাম। সবাই বেশি বেশি কমেন্ট করুন। নাহলে লেখার প্রতি আগ্রহ পায় না ।🥹)
#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৩০ (সত্য উন্মোচিত)
“নাছির ভাই আমারে ক্ষমা করে দে-রে, তোর সাথে যা হলো অন্যায়ের শাস্তি আমি পেয়েছি। এই দেখ আমার ছেলেটার মন কত করে পুড়ে তোর মেয়ের জন্য। ঠিক সেই সময়ের কথা মনে পড়ে যায়। আমি জানি তোর মনের কোণায় একটু হলেও আমার জন্য শ্রদ্ধাবোধ আছে নাহয় কী তুই আমায় দাওয়াত খেতে ডাকতিস। ভাই আজ আমরা সবাই উপস্থিত আছি আমি চাই সবাই জানুক। আশা করি তুই অর্ধেক বলেই দিয়েছিস বাকিটা নাহয় আমিই বলি।”
নাছির উদ্দিন উৎসুক দৃষ্টিতে সকলের দিকে দৃষ্টিপাত করছেন। রূপালি বেগম বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলেন স্বামীর উদগ্রীব দৃষ্টিকোণ দেখে। কোনো স্ত্রীই চাইবে না তার স্বামীর চোখ স্ত্রী ছাড়া পরনারীর উপর পড়ুক। তিনি জানেন সেই নারী নাছির উদ্দিন এর প্রাক্তন তবুও এই লোকটিই তার ইহকাল আর পরকালের সাথী। গোপন ব্যথিত শ্বাস আড়ালে ছাড়েন। মোঃ আবু সিদ্দিক সারোয়ার এর দিকে তাকান। তার ছেলেটার মনে হয়ত আঘাত লাগবে কিন্তু তিনি নিরুপায়। বাবা হয়ে ছেলের সাথে অন্যায় করতে তিনি পারবেন না। জাহানারা পুষ্প এককোণে দাঁড়িয়ে আছেন। তার চোখজোড়া অদ্ভুত দৃষ্টি দেখাচ্ছে। কারণ তিনি নাছির উদ্দিন কে চেনেন পাত্রীর বাবা হিসেবে এ লোকটা তো তার প্রাক্তন নয়। তবে মিশকিতা যা বলেছে তা কী মিথ্যে!!
জাহানারা পুষ্প শান্ত চাহনি নিয়ে ফোনের দিকে তাকান। মিশকিতাকে একবার কল দেবেন ভাবছেন পরক্ষণে তারা ফ্যামিলি ডিনারে এসেছে দেখে কল করাটা ঠিক হিসেবে ধরেননি। মিশকিতা ,তার স্বামী, নিলীমা আর তার বোন তাদের সাথে আসেনি। কেননা তাদের অন্য কোথাও ঘুরার প্ল্যানিং ছিল বিধেয় তারা নিজেদের মত ঘুরতে বেড়িয়ে ছিল। মোঃ আবু সিদ্দিক নিজ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে পরক্ষণে বোনের দিকে তাকান।
“রূপের বিয়ে নাছিরের সাথে হওয়ার পর ভেবে ছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে। রূপ তার শ্বশুরবাড়ি চলে গেলে খবর পাই এক মেয়ে সুই’সা’ইড এ’টে’ম্প করতে গিয়েছে। খবর শুনে আমি কাউকে না জানিয়ে সেই মেয়ের কাছে যায়। মেয়েটা আর কেউ নেই নাছিরের প্রাক্তন পদ্মীতা ছিল। মেয়েটাকে বুঝিয়ে ছিলাম তবুও সে মানে না। তখন গভীর এক কথা জানতে পারলে তুই হতভম্ব হয়ে যাবি নাছির। ভাই তুই ভুল মানুষকে ভালোবেসে ছিলি। তোর সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত আমি অজান্তেই করে দিয়ে ছিলাম আমার বোনের সাথে তোর বিয়ে দিয়ে। পদ্মীতার মনে কখনো তুই ছিলি না। তুই ছিলি তার সম্পত্তির একমাত্র হাতিয়ার। সে তোকে ছলেবলে আপন করতে চেয়ে ছিল। কিন্তু তুই হয়ত জানিস না পদ্মীতা তার চেয়েও জ’ঘ’ন্য পরিকল্পনা মাথায় এঁটে রেখেছিল। তার সুইসাইড নোট লিখে রাখাটা ছিঁড়ে আমি তাকে সুন্দর জীবন দেওয়ার ওয়াদা করি কিন্তু বিয়ে তাকে আমি কেনোই বা করব! যেখানে আমি পুষ্পকে ভালোবাসি। হয়ত সেই প্রেম এক তরফা ছিল কিন্তু পরিণয়ে মেয়েটা আমার হয়েছে। তাও কতটা ঝড়ঝাপটা পেড়ানোর পরে।”
কথাটুকু বলেই মোঃ আবু সিদ্দিক দীর্ঘ শ্বাস ছাড়েন। এক নাগাড়ে তিনি বলতে পারেন না। ছাত্র-ছাত্রীর কাজ লেকচার দেওয়ার সময়ও তিনি কিছুক্ষণ ঝিড়িয়ে বলা আরম্ভ করেন।
“নাছির তুই প্রেমের সময় পদ্মীতার মাঝে কিছু লক্ষ্য করিসনি কখনো?”
নাছির উদ্দিন কিছুটা অবাক হোন। প্রেমের সময় মানুষের দিকবেদিক চোখেই পড়ে না। তিনিও পদ্মীর সুষ্ঠু চালচলনে হালাল সম্পর্ক বিহীন কখনো গভীর দৃষ্টিতে দেখতে চাননি।
“না কিন্তু তাতে কী সে আর আমি প্রায়শ চিঠি আদান-প্রদান নাহয় রূপের মাধ্যমে কথা সাক্ষাৎকার করতাম।”
“দেখা করেছিলি কখনো?”
“হ্যাঁ এক দুবার তার পর সে দেখা করতে চাইতো না!”
“কখনো জানতে চেয়েছিস কেনো করেনি?”
নাছির উদ্দিন নিশ্চুপ। আসলে সেও বিয়ের মত হালাল সম্পর্কে বাঁধা পড়ায় কখনো আর অবৈধ দিকে নজর দেননি। বলাবাহুল্য তিনি যতই তার স্ত্রী কে প্রত্যাখান করেন না কেনো, দিনশেষে তিনি সেই স্ত্রীকে নিয়েই এক ছাদের নিচে বসতভিটে গড়লেন, সন্তানের মুখ দেখলেন, শারীরিক মানসিক সুখ অনুভব করলেন। হ্যাঁ তাই বলে তিনি তার প্রথম প্রেম ভুলে গিয়েছিলেন তেমনটাও নয়। মাঝরাতে তিনি স্ত্রীর মধ্যে পদ্মীতার আদল খুঁজে বেড়াতেন যা না পেয়ে বিচলিত হয়ে স্ত্রীর সাথে কথা অব্দি বলতেন না। তপ্ত শ্বাস ফেলে মোঃ আবু সিদ্দিক এর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকান। তাচ্ছিল্যের হেসে মোঃ আবু সিদ্দিক বলেন,
“দেখেও বুঝতে পারতি না স্বাভাবিক। মেয়েটা ছিলোই তেমন ছলনাময়ী। পদ্মীতার সঙ্গে তোর সম্পর্ক হওয়ার আগে তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল প্রায় নয় বছরের। আমাদের সম্পর্কের একমাত্র ফল হলো সারোয়ার। তার অবশ্য দৃশ্যপট মনে নেই। না থাকার কথা। কারণ আমি সারোয়ার হওয়ার পরপর সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে পুষ্পকে বিয়ে করে ছিলাম। পুষ্প আর আমার বিয়ের খবর কেউ জানত না। আসলে আমি জোর করে পুষ্প কে বিয়ে করে ছিলাম। নিজের জিনিসে অন্য কেউ ভাগ বসাবে তা আমার সহ্য হচ্ছিল না। বিয়ের পরপর পুষ্পের কাছে সত্য ঘটনা খুলে বলার মত মুখ আমার ছিল না। তবুও আমি সারোয়ার কে তার কাছে দিয়ে শুধু অনুরোধ করে ছিলাম ভালোবাসো আর না বাসো তোমার ব্যাপার। তবুও অবহেলা করো না একে,স্নেহ দিও প্লিজ! আমাদের বাচ্চাকে পুষ্পই পালছিল। কিন্তু পুষ্পের মনে তখন আমার প্রতি ক্ষোভ থাকায় সে সারোয়ার কে মনযোগ সহকারে দেখতে অথবা স্নেহ করতে চাইতো না। এতে কষ্ট পেতাম আমি। তবুও মানিয়ে নিলাম। বাসর রাতে পুষ্প তার প্রেমিকের কথা জানায়। বউয়ের মুখে পরপুরুষের কথন শোনা কতটা কষ্টদায়ক তা এক স্বামীই বুঝতে পারে। ঐক্য ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল শুনে ভেঙ্গে পড়ে ছিলাম তবুও আমি মানিয়ে নেয়। ঐক্যের সাথে দেখা করে অবাক হয় সেদিন যেদিন দেখলাম ঐক্য আমার চেয়ে দু’বছরের বড় আমার চাচাতো বোন কে বিয়ে করেছে। তাদের হাসিখুশি হাবভাব দেখে ঐক্যকে পুষ্পের ব্যাপারে জানায়। পুষ্পের নাম শুনে সে বিকৃত মুখে আমায় গা*লা*গাল করে। বলে কি-না আমার সন্তান পেলেছে বলে সে ন*টি। দিয়ে ছিলাম একটা উত্তম মধ্যম। সেই কথাটা আমি লুকিয়ে যায়। তবে আজ বললাম কারণ কথাগুলো তোদের জানার ছিল। নাহলে বছর পেড়িয়ে গেলেও সম্পর্কের উন্নতি হতো না। আমরা আমাদের অবিশ্বাস কেই আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকতাম। তবে নাছির ভাই শুন আমার ছেলেটা ভীষণ নিষ্পাপ মনের। চাল চতুরো তার মনে নেই। সে নিষ্পাপ মনেই তোর মেয়েকে চাইছে। না করিস না ভাই!”
সব সত্য জানার পর সবার থমথমে মুখখানা দেখে ভেতর ভেতর খুব আহত হলো সারোয়ার। একপলক শেহরীনার দিকে তাকায়। মেয়েটাও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার চাহনি দেখে বোঝা মুশকিল সে কী আদৌ রাজি না অরাজি! তবে কী তার সত্য জানার পর থেকে মেয়েটা পিছিয়ে যাবে! কথাটা ভাবতেই সারোয়ার এর বুক খানা কষ্টে ঝালাপালা হয়ে উঠে। যা প্রকাশ্যে দেখাল না। সহে নিল পূর্বের ন্যায় বাধ্য বালকের মত।
শেহরীনা ভাবছে ইশ তার আর সারোয়ার এর মাঝে কত মিল! লোকটাকে দেখে মনেই হচ্ছে না এসবের কারণে সে ডেস্পারেট হয়ে পড়েছে। অথচ তাকে দেখে লাগছে তার কিছুই যায় আসে না। তার বর্তমান মা জাহানারা পুষ্পই।
“আমার মা ইনিই। ইনাকে দেখেই আমি বড় হয়েছি আমি ইনাকে মা হিসেবে মানি আর কেউ যদি থেকেও থাকে তবে আমি প্রাপ্তবয়স্ক যুবক। আমার ভালো কিসে তা আমি ভালোই জানি।”
জাহানারা পুষ্প ছেলেকে আগলে নেন। শেহরীনার মুখে হাসি ফুটে। সে মুগ্ধ সারোয়ার এর কথায়। এ পুরুষ সহজে নিজেকে সামলে নিতে জানে অথচ বোকা মেয়ে সে নিজে। কিছুতেই সে নিজেকে সামলাতে পারেনি নিজের আসল পিতার পরিচয় পেয়ে। ভাগ্যিস আল্লাহ্ জুটি মেলালেও মিলিয়েছে অদ্ভুত প্রিয় অপ্রিয় ভাবে! সারোয়ার শেহরীনার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা দেখে চিন্তামুক্ত হতে গিয়েও পারল না। মেয়েটার মুখ থেকে একবার ‘রাজি’ শব্দটা শোনার পর সে নিশ্চিত হতে পারবে। অন্যথায় তার মনের কাঁচ ভাঙ্গার মত ভুল সে স্বজ্ঞানে করবে না কখনো।
সারোয়ার এর ভাবনার গতি ঘটে নাসমার ডাকে। পিচ্চি টা এসেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
“এই আপনেরা এত কথা বলেন কেনো? পেটে খিদে রেখে এত কথা কেউ বলে নাকি হুম? সাজিয়া আপু আপনার বেবি এটা বেশি কাঁদে। কোলেও উঠতে চায় না। ফাজিল একটা দিয়ে দিলেন খেলার করার জন্য। খেলে তো না উল্টা খেলনা গুলো দেখেন ছুঁড়ে মেরে ভেঙ্গে দিল। ছেলে না যেনো ছিদকাঁদুনে একটা।”
“ভাবী এই মেয়ে এত পাকনা কেনো?”
সাজিয়ার কথায় ফিক করে হেসে ফেলল সবাই। আসলে এসেছিল তারা সেই দুপুরে একসাথে উঠান ঘুরে চারপাশ ঘুরে দেখাদেখি করার পর গল্পে মেতে ছিল। মাঝে নাস্তার পর্ব চলে ছিল তবে রাত্রী যে ঘনিয়ে যাচ্ছিল তার খবর কারো মনে জাগেনি। নাছির উদ্দিন বড় বড় মুখ করে বলেন,
“হ্যাঁ-রে বউ বড় মাছ দুটো তোমার ভাইরে দিমু না। শা’লা খাইবে না হতা কইতেই সময় পার করে দিলো।”
“কী এত বড় সাহস তোর? মাছের দিকে তাকালেই খবর করে ফেলব।”
তাদের খুনসুটি দেখে রূপালি বেগম এর চোখে জল চলে এলো। তিনি আড়ালে চোখ মুছলেন লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে তিনি চমকে পেছন তাকান। জাহানারা পুষ্প মুচকি হাসি উপহার দেন।
“আপনি আমি যেমন একই দাড়িপাল্লার ঠিক আমাদের স্বামী দুটোও। তবে আমি চাই সবটা ঠিক হোক। আমার সন্তান আর আপনার সন্তানের মাঝে মিটে যাক দূরত্ব।”
রূপালি বেগম ও হেসে দেন। বিনিময়ে জাহানারা পুষ্প এর হাত ছুঁয়ে বলেন,
“জ্বি ভাবী ইন শা আল্লাহ।”
“যাক ননদ হওয়ায় একটু সুবিধা ভোগ করব আজ। ননদের হাতের রান্না চেটেপুটে খাবো।”
“এটা ভুল বললেন ভাবী। আপনি ভাইয়ার বউ তার মানে ভাবীরা ননদকে জ্বালায় না, ননদই ভাবীকে জ্বালাবে। আসুন আসুন রান্না বসাতে হবে।”
জাহানারা পুষ্প হাস্যোজ্জ্বল মুখে রূপালি বেগম এর সঙ্গে রান্নাঘরে গেলেন। আজ তিনিও হাত ভাটাবেন। স্বামীর জন্য তিনি এ প্রথম নিজ থেকে আয়োজন করবেন ননদের সঙ্গতায়।
____
“তানভি এসব কী শুনছি তুমি নাকি নিলীমার পিছু নিয়ে ছিলে?”
থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে সারোয়ার এর পিএ তানভির। তাকে সে বের করে দিয়ে ছিল হঠাৎ নিলীমার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েই কল করে কেবিনে ডাকে। তানভির ও বিনা বাক্য ব্যয় করে চলে এসেছে। সারোয়ার চোখ বুঁজে জোরালো শ্বাস টেনে বলে,
“দেখো আমি কখনো মেনে নেবো না এটা। মেয়ের পিছু নিয়ে পটানোর দিককে ভালো দিক বলা হয় না। বলব হালাল ভাবে তাকে মানিয়ে নাও।”
“স্যার সে তো আপনাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। প্রতিবার এসে খালি আপনার কথাই জিজ্ঞেস করে। আমিও তাল বাহানা করে আপনি নেই জানিয়ে বসিয়ে রাখি ঘণ্টাখানেক চোখের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ব্যস।”
সারোয়ার কপাল চাপড়ে তানভিকে কিঞ্চিৎ মুহুর্তের জন্য একা সারতে বলে। তানভির নিবিড় মুখে চলে গেল। মূলত তার কোনো ভাবেও সারোয়ার এর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে নেই। লোকটা যবে থেকে বিপক্ষী দলের টাকা হাতে নিয়েছে তখন থেকেই লোকটা তার নজরে ঘৃণিত।
সারোয়ার চোখ দেখেই মানুষের মনোভাব বুঝতে পারে। তানভির চোখে তার জন্য যে ঘৃণা দেখেছে এতে সে কষ্ট পেলেও আমলে নিলো। সে ফোর্স করার মত মানুষ।
কথায় আছে,কাউকে জোর করে যেমন রাখা যায় ,তেমনি কাউকে আটকে রাখলে সে আটকে থাকবে না।
সারোয়ার আপনমনে তার কেবিনের সীটে গাঁ হেলিয়ে দিলো।
গতরাত্রী তার জন্য শুভক্ষণ ছিল বলা যায়।
বিদায়ের পূর্ব মুহূর্তে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে।
শেহরীনা বেচারী লজ্জায় সামনে অব্দি পড়ল না। সে বুঝে পায় না মেয়েদের এত লজ্জা আসে কোথার থেকে! সে কী আদৌ বাসররাত্রী পালন করতে পারবে! নাকি সেখানে মেয়েটার লজ্জা এসে বলবে, আমার লজ্জা লাগছে দূরে থাকুন। তখন বেচারার কপাল পুড়বে।
“এক বউ বাসর করার আগেই মরে গেল, আরেক বউ বাসরের সময় লজ্জা পেয়ে পালিয়ে যাবে। তখন আমার কী হবে! ইয়া মাবুদ তাহলে কী শেষমেশ এ বয়সে এসে সন্ন্যাস নিতে হবে। সন্ন্যাসী হয়ে বনবাসে ঘুরার প্ল্যান তো কখনো করিনি। থাক করা লাগবে না স্বপ্ন আছে প্রজন্ম গড়ার। না শেহরীনাকে পেলে রোমান্স সব উতলায় দেবো।”
আপনমনে কথাগুলো বলেই তার মাথায় ফট করে একটা বুদ্ধি চলে এলো। টেবিলে চার্জে লাগানো ফোন হাতে নিয়ে শেহরীনার নাম্বারে কল দেয়। সে সবে মাত্র ক্লাস প্রেজেন্টেশন দিয়ে বেরিয়েছে। তার তো জান যায় যায় অবস্থা হয়ে গিয়ে ছিল। কোনো প্রিপারেশন ছাড়াই সে মোটামুটি তার তদন্ত বিদ্যার উপর সাময়িক তদন্তের বিবরণ প্রেজেন্ট করতে পেরেছে। তার পরপর সিরিয়াল অনুযায়ী ক্লাসরুমের ভেতরে গেল ফারদিন। ছেলেটা কী বিন্দাস ঢুকে পড়ল! অথচ সে আর ইপশিতার তো গলা,কলিজা শুকিয়ে ভুনা হয়ে যাচ্ছিল। ইপশিতা আগে দিয়ে বেরিয়েছে , তারপর শেহরীনা এখন ফারদিন এরপর জাফরান। তাদের আজকের মত ক্লাস এখানেই সমাপ্ত। পানির বোতল হাতে নিয়ে একঢকে পানি খাইতে লাগে শেহরীনা। কাঁপা গলায় হলেও আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে প্রেজেন্টেশন দিয়েছে তাই তার অবস্থা টাইট হয়ে গেল।
ভয়ে হিসু অব্দি পেয়েছিল তার। এ মুহুর্তে সব নরমাল হয়ে যাওয়ায় তার হিসুও গায়েব হয়ে গেল।
ইপশিতা ফট করে হেসে দেয় বান্ধবীর কথায়।
শেহরীনার ফোন রিং করায় সে পানির বোতল রেখে ফোন বের করতেই দেখল সারোয়ার এর কল। সে রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠনালীর স্বর শুনতে পেল।
“এই যে মেয়ে খবরদার আজকের পর থেকে লজ্জা পাবে না। তোমার এত লজ্জা পাওয়া দেখলে ভবিষ্যতে বাসর করা লাগবে না আমার। লজ্জা পাবে ভালো কথা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পেয়ো। কিন্তু খবরদার আমার সামনে পেলে সেখানেই বনবাসে যাওয়ার প্ল্যানিং ক্যান্সেল করে দেবো। এমনিতেও বনবাস করার ইচ্ছে আমার নেই। একবছরের মধ্যে দুই বাচ্চার বাপ হতে চাই আমি। বুঝছো খবরদার লজ্জাবতী হয়ে সিডিউস করবে না আমাকে।”
ফট করে কল কাট হয়ে গেল শেহরীনা স্তম্ভিত,স্তদ্ধ। আসলে সে বোকা না কিংবদন্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সারোয়ার একনাগাড়ে কী কী বলেছে তা তার মস্তিষ্কের নিউরনে পৌঁছাতে মিনিটখানেক সময় লাগল। ঢোক গিলে ফোনটা ব্যাগে ভরে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল। ইপশিতা ফারদিন কে বের হতে দেখে শেহরীনার দিকে ফিরে বলে,
“আয় আয় ফারদিন বের হয়েছে জিজ্ঞেস করি কেমন দিয়েছে চল!”
তার নজর গেল মেয়েটার চেহারার দিকে। গালটাল ফোলা ফোলা গোলাপী বর্ণে পরিণত হয়েছে। এ কেমন লজ্জা আবার! শেহরীনা লজ্জা পাচ্ছে কী কারণে! অদ্ভুত তো। ইপশিতা ভ্রু কুঁচকে তাকে নাড়া দেয়। সে চোখ পিটপিট করে বলে,
“কী ধাক্কা দিলি কেন?”
“আপনি ম্যাডাম লজ্জা পাচ্ছেন কেনো? এখানে তো সারোয়ার ভাইয়ার চিহ্নটুকু দূর দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। হেইই ওয়েট ওয়েট কোনো ভাবে কলটা ভাইয়ার ছিল না তো! হু হুম!”
ঠোঁট কামড়ে শেহরীনার কাঁধে মৃদু ধাক্কা দেয় ইপশিতা। বেচারি শেহরীনা পড়েছে এক পাভার্ট বিয়ের পাল্লায়। তার এ মুহূর্তে ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁকা করে গর্তে ঢুকে পড়তে। তার জীবনের আরেক ফাজিলের বংশধর হলো তার বন্ধুগণ। ধুর ভাল্লাগে না…..।
চলবে…..
#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৩১_৩২
তানভির সারোয়ার এর সঙ্গে কোর্টে এসেছে। আজ তার মক্কেলের জন্য লড়াইয়ের দিন। ইতিমধ্যে সারোয়ার শান্ত হয়েই বসে আছে। তাদের পাশের বেঞ্চে হৈচৈ লেগে আছে। তাদের দেখে মনেই হচ্ছে আজ তাদের পক্ষী রায় পেয়ে রেহাই পেয়ে যাবে। তানভির বিরক্তির চটে মুখ ঘুরিয়ে নিল। সে মোটেও কোর্টে আসতে চায়নি। হঠাৎ সকাল আটটায় সারোয়ার তাড়া দিয়ে আসতে বলায় পরিপাটি হয়ে চলে এলো। তার ইচ্ছে করছে বখাটে কয়েকটার মুখ ভেঙ্গে দিতে। তবে আইন নিজ হাতে তুলে লাভ নেই দেখে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল।
জর্জ সাহেব চলে এলেন!! সবাই সম্মান জানানোর পর বিপক্ষী দলের উকিল নিজের মন্তব্য পেশ করে। তার মক্কেলের সেই রাতে জরুরি ডিল ফাইনাল করতে যাওয়ার কথা ও প্রমাণ জর্জ সাহেবের কাছে দিলেন। তিনি ঘোর ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর হাত রেখে চিবুক তুলে সারোয়ার এর দিকে তাকান।
“মিস্টার সারোয়ার আপনি কিছু বলতে চান আপনার মক্কেলের প্রতি!”
“আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি কিছু প্রমাণ সহ আমার মক্কেলের উপস্থিতি কামনা করছি।”
“মঞ্জুর করা হলো!”
সারোয়ার কে উঠতে দেখে বিপক্ষী দলের লোকেরা আড়ালে বাঁকা হাসে। পূর্বেই টাকা দিয়ে ব্যারিস্টার কে হাতিয়ে রেখেছে। যার ফলে তাদের মনে কোনো ধরনের চিন্তাও নেই। পায়ের উপর পা তুলে সীটে গাঁ হেলিয়ে আছে। ধ’র্ষিতা মেয়েটি মাথা নুইয়ে বসে রইল। তারা সকলের আড়ালে সেই মেয়েটি কে গোপনে টিজ করছে। তানভির হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বসে আছে। সারোয়ার তার জোগাড় করা প্রমাণ জর্জ সাহেবের নিকট দিয়ে কিঞ্চিৎ মুহুর্ত অব্দি নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। জর্জ সাহেব প্রমাণ দেখার পর রাগান্বিত দৃষ্টিতে বিপক্ষী দলের আসামীর দিকে তাকান। তিনি আক্রোশ ভরা গলায় বিপক্ষী দলের উকিল কে জানান।
“এসব কী আপনারা নিজেদের পেশা বেছে আসামীকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আসেন কোর্টে? মিস্টার জাফর আপনার থেকে এই আশা আমি করিনি। আসামীর সত্যগুলো আপনি কতই সংকোচহীন মিথ্যে প্রমাণ করে দিলেন। আপনাকে আপনার পেশা থেকে কয়েক বছরের বিরতি প্রদান করা হবে। সেই সাথে আসামীর পক্ষপাতীত্ব করা পুলিশ অফিসার আপনাকেও সাসপেন্ড করা হলো।”
“ওয়েট মাই লর্ড! আমি এর বিরুদ্ধে আমার মক্কেল কে ডাকতে চাইছি। পারমিশন দেন প্লিজ!”
“পারমিশন গ্রান্টেড!”
“সো কাঠগড়ায় আমি ডাকতে চাইছি স্বয়ং আমার মক্কেলকে। প্লিজ দিক্ষি আপু আপনি বিনা সংকোচে কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ান।”
ধ’র্ষিতা মেয়ে দিক্ষি চমকে তাকায়। জনগণের সামনে এসে কাঠগড়ায় কেমনে দাঁড়াবে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। তবে দিক্ষির বাবা মেয়ে কে সাহস জুটান। যার ফলে দিক্ষি ধীরস্থির পায়ে হেঁটে কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ায়। সারোয়ার তার সামনে গিয়ে বলে,
“শপথ করুন যা বলবেন সত্যি বলবেন, সত্যি ছাড়া অন্য কিছু মুখে আনবেন না।”
দিক্ষি সারোয়ারের কথামত সকলের সামনে শপথ করে। এবার সারোয়ার শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে।
“সেদিন রাতে আপনি ফার্মেসি থেকে ফিরছিলেন বাসার জন্য এম আই রাইট!”
“জ্বি”
“তারপর কী হয়েছে বলতে পারবেন!”
“ঐদিন আমি বাসায় ফেরার পথে ঐ ছেলেটার গাড়ি এসে থামে। আমায় বার কয়েক বলে গাড়িতে উঠতে সে আমায় পৌঁছে দেবে বাসায়। তবে আমি বারণ করার পর ছেলেটা রাস্তা ছাড়ে না। এখন আমি তার গাড়িতে উঠতে না চাওয়ার দুটো কারণ ছিল। এক ছেলেটা আমার কাছে অপরিচিত দুই ছেলেটার সঙ্গে তার দুজন সঙ্গি ছিল।”
“ওহ তাহলে সেই সঙ্গি দুটো তারা নাকি দেখুন তো!”
দিক্ষি মাথা তুলে তাকায়। সঙ্গি দুটো দেখে ভয়ে মাথা নাড়ে। সারোয়ার জর্জ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে,
“দেখুন স্যার একজন মেয়ে অবশ্যই অচেনা অপরিচিত লোকের গাড়িতে উঠতে স্বাভাবিক ভয় পাবেই। কারণ মানুষের মন মানেই শয়তানের আড্ডাখানা। তবে এই প্রসঙ্গটা আসামীর মত লোকদের ক্ষেত্রে বেশি যায়। সে কোন বিবেকবান হলে মেয়েটাকে জোর করতো না উল্টো তার পেছন পেছন বাড়ি অব্দি তাকে নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে ফিরে যেতো। সে যেহেতু যেতে চাইনি সেহেতু তাকে ধরে নির্জনে নিয়ে গিয়ে ইজ্জতের উপর হামলা করে।”
কথাটার প্রভাবে মেয়েটার চোখজোড়া জ্বালা করে উঠে। আসামীর পক্ষে লড়াই করা উকিল জাফর ক্ষেপে উঠে বলে,
“অভজেকশন মাই লর্ড! এবার আমি কিছু বলতে চাই আমাকে অনুমতি দিন।”
“গ্রান্টেড!”
“মাই লর্ড যেমনে আমার বিপক্ষী দলের সঙ্গি সারোয়ার বলেছেন, তার মক্কেল নির্দোষ সেহেতু তার অবশ্যই জানা উচিৎ কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ে রাত এগারোটায় বাহিরে ঘুরাঘুরি করে না। সেখানে মক্কেল দিক্ষি ম্যাম সে সময় ফার্মেসিতে গিয়ে ছিল। তার মানে কী দাঁড়ায়? নিশ্চয় মেয়েটা জন্মনিরোধক পিল অথবা প্রটেকশন কিনতে গিয়ে ছিল। এসব মেয়েদের অভ্যাসই হলো রাতবিরেতে ঘুরাঘুরি করে খোলামেলা নিজেকে প্রদর্শন করা। এখন পুরুষ মানুষ তো সতি পুরুষ না যে একজন মেয়েকে খোলামেলা পেয়ে ছেড়ে দেবে। তবুও আমার মক্কেলে তাকে সহায়তা করতে চেয়েছিল মেয়েটা না করে অন্য পুরুষের সাথে…..।”
“এসব মিথ্যে সত্যি জর্জ সাহেব আমি কিছু করিনি। সেই আমাকে জোর করে গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে যায় আমার কাপড়….।”
দিক্ষি কান্নার কারণে আর বলতে পারে না। সারোয়ার চুপ করে জাফরের কারনামা দেখছিল। কিন্তু নিজের মক্কেল কে কান্নায় অন্যের কাছে মাথা নত করতে দেখে সে দাঁড়িয়ে যায়। জর্জ সাহেবের কাছে অনুমতি সূচক কণ্ঠে বলে,
“মাই লর্ড আমার বিপক্ষী সঙ্গি জাফর যা বলেছেন তার দ্বারা একজন নারীকে অসম্মান করা হচ্ছে। নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। তেমনি নারী দোষী হলে পুরুষ ও সমানভাবে দোষী হবে। আমাকে আমার শেষ মন্তব্য পেশ করার সুযোগ দিন।”
“গ্রান্টেড!”
সারোয়ার একটা ভিডিও ক্লিপের পেনড্রাইভ জর্জ সাহেবের নিকট এগিয়ে দিলেন। তিনি সেটা লেপটপে ঢুকিয়ে দেখেন একটা ফোল্ডার সেভ করা। ফোল্ডার ওপেন করার পরপর একটা ভিডিও চালু হয়।
ভিডিওতে দিক্ষিকে সেই আসামী কী হারে জুলুম করে রে*প করছিল তার দৃশ্যপট দেখানো হয়েছে।
“মাই লর্ড এখানে এই আসামীর মন্দ দিককে আলোচিত করা হয়েছে। প্রমাণের দিকও চিৎকার করে তাকেই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এখন আপনিই এর রায় দিন।”
জর্জ সাহেব সারোয়ার এর কথা শুনে লেপটপ বন্ধ করে পেনড্রাইভ রেখে কঠোর গলায় বলেন,
“সব প্রমাণ আসামীর বিরুদ্ধে হওয়ায় এই আদালত তাকে ত্রিশ বছরের কারাদণ্ড আর এক মেয়ের সম্মানহানি করার জন্য আসামীর বাবা কে অবশ্যই একলাখ টাকা মেয়ের পরিবার কে দিতে হবে। এই আসামীর পক্ষপাতীত্ব করা পুলিশ অফিসার যিনি তাকে খোলামেলা ঘুরার জন্য রেহাই দিয়ে ছিলেন তাকে সাসপেন্ড করা হলো। মিস্টার জাফর আপনাকে বিরতি প্রদান করা হলো। এই আদালতের কার্যক্রম আজই শেষ হলো। রায় দেওয়া হলো মিস দিক্ষি নির্দোষ আর আপনি যদি ধ’র্ষিতা বলে হেয়োর মুখোমুখি হোন তবে সর্বদা আইন আপনার পাশে থাকার চেষ্টা করবে।”
টান টান উত্তেজনা চলছিল টিভিতে। ব্যারিস্টার সারোয়ার এর শক্ত হাতে রায় দেয়ার পদক্ষেপ দেখে শেহরীনা খুশিতে হাত তালি দিয়ে উঠল। রূপালি বেগম নিজের ভাই পুতের কাজে মিষ্টিমুখ করাল সবাইকে। আসামী কে ধরে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই সে চিৎকার করে সারোয়ার কে ‘বেইমান,প্রতারক’ ডাকে। ঠাস করে তার নাকে ঘু’ষি দেয় কেউ। সে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই ভয়ে পিছপা হয়ে পড়ে। তানভির জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে। সে ঘৃণা করলেও কখনো তার স্যারের বিরুদ্ধে মন্দ কথা শুনতে রাজি নয়। সারোয়ার তানভির কান্ডে গোপনে হাসল। শেহরীনাও ‘বাহ বাহ’ করল। তখনি রূপালি বেগম এর হাতের কাজ থেমে যায়। টিভিতে এমন এক ব্যক্তির কণ্ঠস্বর শোনা গেল। যার কণ্ঠস্বর শুনে তিনি কাঁপা চোখে টিভির পর্দায় নজর দেন। শেহরীনার শীতল চোখ টিভিতে আবদ্ধ।
“আপনার সাহস বেশি দেখছি মিস্টার সারোয়ার। আপনি আমাকে চেনেন না। তাই আপনার সাথে লড়াই করে আমার লাভ নেই। আপনি আমার ছেলেকে জেলে পুরে দিলেন। আমিও দেখব সে কতদিন জেলে থাকে। আর আইনের কথা রাখতে ঐ মেয়েকে টাকা দেব। এমনিতে তারা যে টাকার ক্ষুর্ধাত তা দেখেই বোঝা যায়।”
“এক্সকিউজ মি মিস্টার আসামীর বাবা। আমার মক্কেল গরীব হোক ভিক্ষুক হোক হোয়াট এভার! বাট দে আর হাইলি হার্টফুল। ধনী লোক হয়ে নিজের আদুরের পুতকে সামলে শাসনে রাখলে আজ আপনার এই দিন দেখতে হতো না। আচ্ছা আপনি কে জানি! উমম মনে পড়ছে না। এই তানভি এই লোকটা কে-রে। আসামীর বাপ বলে জানি এমনিতে নাম কী এই বুড়োর!”
তানভির তার স্যার সারোয়ার এর অভিনয় দেখে হিহিহি করে হেসে উঠল। বুড়ো লোকটাকে কে না চেনে! শহরের নামিদামি ফসল উৎপাদনের উদ্যেক্তা শোয়াইব মিলদাজ। তার ছেলে ধ’র্ষণের মত ঘৃণ্য কাজ করেছে এ যেনো শহরের মানুষদের কাছে নতুন ঘটনা বটে। টিভিতে শোয়াইব মিলদাজ কে দেখে রূপালি বেগম ধপ করে চেয়ারে বসে যান। নিজের বাবাকে দেখে ঘৃণা লাগছে শেহরীনার। লোকটার পুত্র মানে তার সৎ ভাই ছিঃ। ভাগ্যিস সে সত্য জানার পর থেকে এ লোককে হৃদয় থেকে ছুঁড়ে ফেলেছিল। রূপালি বেগম কে উদাসীন বসে পড়তে দেখে শেহরীনা তার মায়ের কাছে গিয়ে বসে পড়ে। রূপালি বেগম মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন।
শেহরীনা মায়ের আর্তনাদে তার মন ভার হয়ে যায়।
তবুও সে তার মাকে আশ্বাস দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে। রূপালি বেগম অসহনীয় গলায় বলেন,
“দেখলি তুই পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। লোকটা আমার সাথে অন্যায় করে ছিল ঠিক সেটাই হলো তার সঙ্গে তার ছেলের জেল হয়ে গেল। লোকটাও কম ঘৃণিত পুরুষ না। আর জানিস এই জা’নো’য়ার আমায় ফাঁসিয়ে কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে করে ছিল। তখন তার একটাই মতবাদ ছিল সে তার ক্যারিয়ার গড়বে তারপর বিয়ের খবর জমিদার বাড়িতে দেবে। কিন্তু লোকটা আমার সাথে এক রাত্রি বেলা যাপন করে। তখনো ভেবেছিলাম স্বামী নামক মানুষটার জন্য অপেক্ষা করলে বোধহয় সে সত্যিই ফিরে আসবে। কিন্তু না সে ফেরেনি উল্টো আমায় হেয়ো করে তোকে অস্বীকার করল। তুই পেটে আসার পরপর খবরটা জানালে আমায় গা’লি দিতেও পিছপা হয়নি সে। তোর গর্ভে আসার ছয়মাস পর তালাকনামা পাঠিয়ে দেয়। তুই হওয়ার পর সেটা কোর্টে প্রকাশ হয়। এ কথা নাছিরের সাথে বিয়ের একবছর পর শুধু ভাইয়াকে জানায়। তাই ভাইয়া ক্ষমা চাইতে আসলেও নাছির উপেক্ষা করে। যার কারণে এতবছর আমরা দূরত্ব বজায় রেখে ছিলাম। এই একটা কিটের কারণে আমাদের মাঝে ফাটল ধরে ছিল। আজ তার সন্তান লাঞ্ছিত হচ্ছে। দেখে আমার কোনো আফসোস হচ্ছে না। এই তার জীবনের ভুল সে পস্তাবে আরো কঠোরভাবে পস্তাবে দেখে নিস মা। তোর বাবা একজনই নাছিরই তোর বাবা।”
মাকে উম্মাদ হতে দেখে শেহরীনা মাকে বুকে চেপে ধরে। সেকালের প্রেম কেনো এতো ভয়াবহ হয়! কেনো প্রেম নাম আবেগ দিয়ে ভরপুর। চারপাশের যন্ত্রণা দেখেও প্রেম ভোলা দায় হয়ে পড়ে। শেহরীনা সেই পিতার সন্তান তবুও তার রক্ত তার মায়ের। তার মা কিশোরী বয়সের আবেগে ভেসে ছিল তা কখনো ভুল নয়। হতে পারে পারিপার্শ্বিক ভেদে তা ভুল বৈধ নয়। কিন্তু লোকটা প্রতারণা করেছে্ তার মায়ের সাথে। বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে বেঁধে মায়ের কাছ থেকে নিজের চাহিদা মিটিয়ে ছুঁড়ে ফেলেছে। তার শাস্তি ঠিক আল্লাহ নিজ হাতে দিচ্ছেন।
____
মোঃ আবু সিদ্দিক এর রাগ তরতরিয়ে বাড়ছে। শোয়াইব মিলদাজ কে দেখে তার ইচ্ছে করছে সোজা খু’ন করে ফেলতে। জাহানারা পুষ্প স্বামীর কাঁধে হাত রাখেন। স্ত্রীর সান্নিধ্য পেয়ে চুপ হয়ে রইলেন। হঠাৎ মোঃ আবু সিদ্দিক গলা ঝেড়ে বলেন,
“আজ আমি কোর্টে যায়নি বলে শোয়াইব এর জীবন টিকেছে নাহয় কোনো অনর্থ হয়ে যেতো।”
“আপনার এ রাগই আমাদের সম্পর্ককে অবনতি করে ছিল। তাই প্লিজ আমি চাই না পুনরায় সেই রাগের ফাঁদে পড়ে আপনি ভুল কিছু করেন।”
মোঃ আবু সিদ্দিক শীতল চাহনি নিয়ে স্ত্রীর পানে চান। জাহানারা পুষ্প নিরবে রুম ত্যাগ করেন। মোঃ আবু সিদ্দিক তপ্ত শ্বাস ফেলে বলেন,
“কবে বুঝবে পুষ্প! ঐক্য কখনো তোমার যোগ্য ছিল না। সে যদি তোমার যোগ্য হতো তাহলে কখনো তোমার অগোচরে বিয়ের পাত্রী দেখার পরপর বিয়েতে মত দিতো না। শুধু তুমিই তাকে মনে রেখেছো সে তো তোমায় ভুলে ঠিকি সংসার করছে। তার সুখের সংসার নিজ চোখে দেখেছি।”
“ওহহ তাহলে আপনি বলতে চান আমি আপনাকে মান্য করি না। আপনি কী ভুলে যাচ্ছেন! ঐক্য সত্য জানার আগ পর্যন্ত আমিও মানিয়ে চলেছিলাম। হতে পারে সারোয়ার কে আমি আদরযত্নে কম রেখেছিলাম তবে এটাও সত্য সে আপনার অবৈধ সম্পর্কের ফসল…..।”
ঠাস করে বিকট শব্দ হলো রুমজুড়ে। চ’ড় পড়েছে জাহানারা পুষ্পের গালে। মোঃ আবু সিদ্দিক রক্তিম চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন। জাহানারা পুষ্প রুম ত্যাগ করলেও উল্টো পায়ে পুনরায় রুমে ফিরে আসতেই স্বামীর কথা শুনে ফেলেন। এতে তিনিও রেগে জবাব দিয়ে দেন। মোঃ আবু সিদ্দিক অবাক তার স্ত্রীর মনে এতটা ঘৃণা বসে আছে। তিনি কখনো কল্পনাও করে দেখেননি। কাঁপা গলায় বলেন,
“সারোয়ার কে অবৈধ বলার অধিকার তোমাকে দিয়েছি আমি! সে কোনো জারজ না আমার সন্তান সে বুঝেছো আমার। আমি পিতা হয়ে স্বীকারোক্তি দিচ্ছি সে আমার সন্তান। আর তুমি তোমার মনে এত ঘৃণা থাকলে চলে যেতে তোমার ঐক্যের কাছে। আমার কাছে কেনো পড়ে থাকছিলে বলো!”
জাহানারা পুষ্প এর মুখখানা চুপসে গেল। মোঃ আবু সিদ্দিক তাচ্ছিল্যের হেসে বলেন,
“অনেক বার তোমাকে বুঝিয়েছি। কিন্তু তুমি তো সোজা কথা বোঝার মত মানুষ নয়। সারোয়ার আমার গুণে গুণান্বিত। তার চরিত্রে কালো দাগ লাগিয়ে ছিল সেই পদ্মিতা। জানো আমি নাছিরের সামনে যা বলেছি তার আংশিক সত্য লুকায়িত। সব সত্য প্রকাশ করলে সারোয়ার গোমড়ে মা’রা যাবে। তার সুখীখুশির সংসার দেখতে চাইছি আমি। ছেলেটা আমার অযত্নে বড় হয়েছে। তবুও আমাদের সাথে মিলেমিশে থেকেছে। তার আয়ের বড় উৎস কার হাতে দেয় হুম? তোমার হাতে দিয়েছে আমাকে নিজের পিতাকে না দিয়ে তোমায় দিয়েছে। সেই তুমি তার ব্যাপারে এ কথা বলছো। ইয়া আল্লাহ ন্যূনতম মায়া নেই তার প্রতি হ্যাঁ! সে তোমাকে মা বলে আগলে রেখেছে আর সেই তুমি কি-না। পদ্মিতার সাথে কখনো আমার অবৈধ সম্পর্ক গড়ার কথাই ছিল না। পদ্মিতার চরিত্রই ছিল ছলনাময়ীর। কেমনে শুনবে তাহলে শুনো। জমিদার পরিবারে বড় হলেও আমি নিজ হাতে উপার্জন করতে চাইতাম। তাই তুমি যেখানে পড়তে মানে কলেজে যেতে সেই রাস্তায় একটা ভাঙ্গা নতুন বিল্ডিং তৈরি হচ্ছিল। সেখানে আমি নিজে কাজ করতাম। যার কারণে পদ্মিতার সাথে আমার স্বল্প পরিচয় হয়। তখনো ভেবেছিলাম কাকতালীয় পরিচয়। তবে মেয়েটা আমায় নিজের বশে রাখতে নানান ভাবে আমার সামনে এসে পড়তো। আমায় ম্যানিপুলেট করে বেড়াত। তার মোহে পড়ে গিয়ে ছিলাম। তখনো আমার মনে তোমার ছবি ভাসতো পুষ্প। কারণ কিশোর কালের প্রথম প্রেম তুমি ছিলে। তবে তুমি আমায় বুঝতে না হেয়ো করে বেড়াতে। হয়ত সেই উপেক্ষায় আমি পদ্মিতার ছলে পা ফেলে বসি। এক ঘনবৃষ্টির রাতে আমায় ফোন করে তার কাছে ডাকে। বলে ছিল তার খিদে পেয়েছে তার বাবা মা সবাই গ্রামে গেলো। সে একলা পায়ের ব্যথায় হাঁটতে পারছে না। আমিও নিরুপায় হয়ে পড়ি। বোন রূপকে নিয়ে তার বাড়িতে যায়। সেখানে মূলত আমি একা যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। কেননা একলা মেয়ের সাথে এক পুরুষ কে দেখলে নিশ্চয়ই কলঙ্ক লেপিত হতো। তাই আমি বুদ্ধি কাটিয়ে রূপকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। তবে জানতাম না পদ্মিতার মনে কী ছলনা চলছিল! ইচ্ছেকৃত রূপ আর আমাকে জুস খাইয়ে দেয়। যার কারণে আমরা অজ্ঞান হয়ে যায়। দিনের বেলা জাগ্রত হতেই চমকে যায়। পদ্মিতা কাঁদছিল। তাকে বিবস্ত্র দেখে আমি হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ি। রূপ কে নিয়ে আমি ফিরে আসি। রূপ তখনো অজ্ঞান। তবে সে জাগ্রত হওয়ার পর প্রশ্ন করেছিল আমি এড়িয়ে বলে ছিলাম এটা জাস্ট স্বপ্ন। সেও মেনে নেয়। কিন্তু পদ্মিতা আমার সন্তান গর্ভে নেয় টাকা হাতানোর জন্য। আমি বিয়ে করতে চাইলে সে কী করতে চেয়ে ছিল জানো! সে আমার সন্তানকে এবোরশন করতে চেয়ে ছিল। তাও কিসের জন্য! অন্যের বেড পার্টনার হওয়ার জন্য। আমিও তাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে সারোয়ার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি। সে হওয়ার পরপর তোমার কাছে সঁপে দেয়। তার পরিণামে আজ আমার সন্তান কে জারজ বলছো তুমি! তুমি নিজেও তো ঐ ঐক্যের প্রেমে পড়ে অকালে ঝরে পড়তে। আমার বোন রূপের সাথে হওয়া অন্যায় তোমায় সাথে হতে দেয়নি। যার কারণে এই সিদ্দিক বংশে তোমার নামডাক বেশি। তোমায় জোর করে বিয়ে করলেও একতরফা তোমার জীবনের রক্ষাকবচ হয়েছি। আমি তোমায় ভালোবাসতাম। সারোয়ার হওয়ার পর পদ্মিতার কোনো খবর আর রাখিনি। পরে জানতে পেরে ছিলাম সারোয়ার তার গর্ভে থাকতে নাছিরের সাথে প্রেমে জড়ায়। কোনো আফসোস ছিল না তার চোখমুখে। সে তার শয়তানি খেলা চলেই যাচ্ছিল। নাছিরের সঙ্গেও সেই এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার পূর্বেই আমি সব থামিয়ে দেয়। রূপকে নাছিরের সাথে জোড়া বেঁধে নিজেকে তোমার মাঝে সঁপে দিলাম। পদ্মিতার নাছির কে না পাওয়ার কারণে সুইসাইড করতে চাওয়াটা নিছক অভিনয় মাত্র। যা আমি রূপদের জানায়নি। মূলত সে নাছিরের সন্তান গর্ভে ধারণ করতে চেয়ে ছিল। যা আমি হতে দেয়নি। সেই দিন হাসপাতালে তার মুখে দশ লাখ টাকা ছুঁড়ে মেরে ছিলাম। যার কারণে সে আমাদের জীবন থেকে দূরে চলে যায়। তবে হ্যাঁ জোরপূর্বক বিয়ে করাটা অন্যায়। তোমার অনুমতি ছাড়া কখনো তোমায় ছুঁয়ে অব্দি দেখিনি। তুমি স্বেচ্ছায় আমার কাছে এসেছিলে। আজ বললে আর কখনো বলো না প্লিজ! সে জারজ সন্তান না। আমার সন্তান, আমার একার। তুমি না মানতে চাইলে কোনো দরকার নেই। তুমি তাকে সন্তান হিসেবে মেনো না। তার সামনে দুমুঠো অভিনয় করিও তাহলেই হবে। আমার সন্তান কে আমি আগলে রাখব। তোমার মত মায়ের দরকার নেই তার। এতবছর যেমন পদ্মিতা ছাড়া আগলে রেখেছি তেমন তুমিও আগলে না রাখলে আমিই তাকে আগলে রাখব।”
“বাবা….।”
শব্দটা শুনে চমকে যান মোঃ আবু সিদ্দিক আর স্ত্রী জাহানারা পুষ্প।
চলবে……