#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৪২ (আজ কী রাত🔥!)
“পুষ্প এই মহিলার সাহস কেমনে হলো আমার বাড়ির চৌকাঠে পা ফেলানোর। এই তুই আর কোনো জায়গা না পেয়ে আমার কাছেই আসতে পারলি। এমনিতে তোর মত মেয়ের রাস্তাঘাটে শুয়ে থাকলেও কিছু হবে না। কেউ না কেউ মাথার উপর ছাদ অনায়াসে তুলে দেবে। পুষ্প এই নোংরামি করা মেয়েকে এখনি বের করে দাও।”
পদ্মিতা তার প্রথম ভালোবাসার টানে এসেছে সিদ্দিক বাড়িতে। তার ছলনায় গোড়া জন্ম নেওয়া পুত্র কে একপলক দেখতে এসেছেন তিনি। জাহানারা পুষ্প এর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকান তিনি। জাহানারা পুষ্প এর মনে উত্তাল পাতাল ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বাঙালী নারী বলে কথা। স্বামীর ভাগ কী কখনো অন্য কে দেওয়া যায়! সেখানে তিনি মানতে না চাইলেও তিনি মেনে নিয়েছেন। মোঃ আবু সিদ্দিক তার স্বামী ,তার অন্তঃপ্রাণ। ঢোক গিলে ধীমি পায়ে হেঁটে স্বামীর কাছে যান। পদ্মিতা মহিলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলেন। পরক্ষণে অস্বাভাবিক, অসহায় নিপীড়নের শিকার হওয়া মহিলারা মত মুখখানা করে নিলেন তিনি।
মোঃ আবু সিদ্দিক পদ্মিতা কে নিজ বাসস্থানে দেখে তার মাথা ধরে গেল। জাহানারা পুষ্প নির্লিপ্ত ভাবে সোফায় বসে ছিলেন। মূলত স্বামীর অপেক্ষায় তিনি বসে ছিলেন। বাড়ির দরজায় স্বামীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জাহানারা পুষ্প দাঁড়িয়ে যান। তখনি পদ্মিতার উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে স্বামীর মন্দ বাক্য শুনে কিছুটা স্বস্তি পেলেন তিনি। তবুও স্বামীকে কী কথা বলতে চাই সেটা শোনার জন্য হলেও অনুরোধ করবেন তিনি। এ ভেবে স্বামীর সন্নিকটে গিয়ে দাঁড়ান। মোঃ আবু সিদ্দিক অন্যদিক ফিরে ফোঁস ফোঁস করছেন।
“শুনেন তিনি কিছু বলতে চাইছেন। আপনি নাহয় একটু শুনে নেন।”
“চুপ তুই আমার মুখের উপর কথা বলছিস পুষ্প। ভুলে যাস না তোর চেয়ে বড় আমি। এই চোখ দিয়ে পুরো দুনিয়াটা দেখেছি। কে কেমন তা আমার ভালোই জানা আছে।”
মোঃ আবু সিদ্দিক একবাক্যে কথা শেষ করে জাহানারা পুষ্প এর হাত চেপে সোফার কাছে গিয়ে দাঁড়ান। পদ্মিতা কান্নামাখা নজরে তাকিয়ে আছেন। মোঃ আবু সিদ্দিক এর উপর তার কোনো প্রভাব পড়ল না। বরং তিনি অত্যাধিক রাগান্বিত। পদ্মিতা তার পায়ের কাছে বসে পা চেপে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠেন। ফুঁপিয়ে বলতে লাগলেন।
“আমারে ক্ষমা কইরা দাও। আমি আমার পোলারে একটু দেখতে চাই। তোমার লগে সংসার সাজাতে চাই। আমারে আপন কইরা নাও না। আমি আমার সংসার এ ফিরে যেতে চাই।”
জাহানারা পুষ্প এর স্তদ্ধ। মোঃ আবু সিদ্দিক তাচ্ছিল্যের হেসে জাহানারা পুষ্প এর দিকে তাকান। তিনি ভাবতেও পারেননি এ মহিলা কি-না তার স্বামীকেই চাইবে। তিনি ভেবে ছিলেন হয়ত অপরাধবোধে ভুগছেন তাই ক্ষমা চাইতে এসেছেন। তবে আর নয়। এই সংসার তার, তিনি কোনোমতেও এই সংসারে কোনো জঞ্জাল সহ্য করবেন না। জাহানারা পুষ্প তৎক্ষণাৎ পদ্মিতার মাথার চুল একগুচ্ছ চেপে ধরলেন। পদ্মিতা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল। মোঃ আবু সিদ্দিক নিবিড় মুখে তাকিয়ে রইলেন। জাহানারা পুষ্প অকৃত্রিম গা’লি দিয়ে বলেন,
“হা’রামজাদী শরীর বিলিয়ে শান্তি মিলেনি এখন আমার স্বামীর দিকে নজর মারিস। ভাবছিলাম তুই এসে ক্ষমা চাই বেরিয়ে যাবি। আরে তোর মত দুমুখো মাইয়া তো আমি আমার জীবনে দেখি নাই-রে। কপালে অন্ন জুটে নেওয়ার ভালোই ফন্দি আটকে ছিলি। কিন্তু আমি এই ঘরের রাণী মিসেস মোঃ আবু সিদ্দিক।”
পদ্মিতাকে একটানে বাড়ির বাহিরে ছুঁড়ে মারলেন জাহানারা পুষ্প। তখন পদ্মিতা রেগে গেলেও কান্নার ভান করে পড়ে পড়ে চেঁচিয়ে বলেন,
“আমি যামু না আমি আমার পোলারে দেখমু। আমার পোলা কৈ!”
পদ্মিতা উঠে বাড়ির ভেতর পুনরায় পা ফেলতে চাইলে জাহানারা পুষ্প উত্তেজিত হয়ে কষে এক চ’ড় দেন। পদ্মিতাও নাকচ, অদেখা করে ‘আমার পোলা আমার পোলা কৈ’ বলে বলে চেঁচামেচি করতে লাগলেন। পাড়াপড়শিরা কী ভাববে সেটা মাথায় আসতেই মোঃ আবু সিদ্দিক গলা উঁচিয়ে ছেলেকে ডাক শুধান। সারোয়ার আর শেহরীনা বাড়িতেই ছিল। তারা এসেছে আজ প্রায় দুসপ্তাহ পর। আর আজই আপদ কোথায় থেকে উপড়ে পড়ল! শেহরীনা স্বামীর পিছু পিছু বের হয়। সারোয়ার এর পা চলছিল না। তবুও সে বাবার ডাকের সাড়া দিয়ে এগিয়ে গেলো। পদ্মিতার চোখজোড়া জ্বলে উঠল। এই তো সেই ছেলে যার কাছে সে কেইস নিয়ে লড়াই করার অনুরোধ করে ছিলেন। ছেলেটাও অমত জানায়নি। গোপনে মাত্রাতিরিক্ত খুশি হলেন তিনি। জাহানারা পুষ্প কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তৎক্ষণাৎ সারোয়ার এর কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন। ‘আহহ’ আর্তনাদ শুনে সারোয়ার আঁতকে উঠল। সারোয়ার এর গাঁ ঘৃণায় টগবগে উঠল পদ্মিতার স্পর্শে। কিন্তু তার নজর গেল তার আপন মায়ের দিকে। জাহানারা পুষ্প ধাক্কা সামলে না উঠতে পেরে পাশে থাকা ফুলদানির সাথে লেগে কপাল আঁচড়ে গেছে। র’ক্ত ঝরছে দেখে তার কলিজা মোচড়ে উঠল। পদ্মিতার হাত জোড় করে ছাড়িয়ে ‘মা মা’ করে সারোয়ার জাহানারা পুষ্প এর নিকট ছুটে গেলেন। মোঃ আবু সিদ্দিক ও খেয়াল করেননি। ছেলের যাওয়া দেখে তিনিও এগিয়ে যান।
শেহরীনা তৎক্ষণাৎ রুম থেকে ফাস্ট এইড বক্স এনে শ্বাশুড়ির কাছে গিয়ে বসেন। জাহানারা পুষ্প আতঙ্কিত চোখে সারোয়ার এর দিকে তাকান। আজ প্রথম তার চোখে মমতা দেখা যাচ্ছে। এতবছরে তিনি নিজেও এই মমতার শক্তি বুঝতে পারেননি। ছেলে পরের সন্তান হলেও তিনি তাকে নিজ হাতে লালিত পালিত করে বড় করেছেন। তবে কেনো সেই সন্তান কে অন্যজন ছিনিয়ে নিবে! এতটা ঠুনকো নাকি! তিনি ছেলেকে জড়ায় ধরে আতঙ্কিত গলায় বলেন,
“বাবা তুই কী তোর মা কে ছেড়ে চলে যাবি! ঐঐ মহিলা তোকে নিয়ে যাবে বলছে কেন! তুই কী সত্যি আমাকে ছেড়ে যাবি। আরে আমি মা হয় মা। তোকে বকা দেওয়া ,আদর , শাসন ও করব আমি। তখন বয়স কম ছিল বলে অভিমান করে চুপ থাকতাম। কিন্তু তোর ঘুমন্ত অবস্থায় কত কত ভালোবেসেছি জানিস তুই! সেই তুই আমার মমতা ভুলে ঐঐ কালনাগিনীর সাথে চলে যাবি। যাস না বাপ তুই ছাড়া আমি একলা হয়ে যাবো। মেয়েটাও শ্বশুরবাড়িতে। তুই আর শেহরীনা আমার কাছে থাকবি বল না বাবা।”
মোঃ আবু সিদ্দিক এর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটল। তিনি বউয়ের চোখমুখে উপচেপড়া মমতা দেখে তার হৃদয় হতে বড়সরো এক বোঝা নেমে গেল। অবশেষে যাক তার বউ মন থেকে মেনেই নিয়েছে। এই যেনো তার জন্য ঢের। সারোয়ার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“মা মা আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না সত্যি।”
পদ্মিতা এসে সারোয়ার এর বাহুডোরে হাত চেপে দাঁড় করাতে চাইলে সেই হাতজোড়া চেপে ধরল শেহরীনা। চোখ রাঙিয়ে হাতজোড়া ছুঁড়ে দিয়ে বলে,
“ডোন্ট ক্রস ইন ইউর লিমিট মিস পদ্মিতা আন্টি। আমার শ্বাশুড়ি আর তার ছেলের মধ্যে কথা হচ্ছে দেখছেন না। ছেলে তার মাকে ছেঁড়ে কেনো আপনার কাছে যাবে।”
“দেখো শেহরীনা তুমি আমার বউমার লাগো। কিন্তু ঐ আমার পোলা। ওরে আমি আমার লগে নিয়াই যাবো।”
সারোয়ার গলা উঁচিয়ে এক ঝাড়া দিলেন পদ্মিতাকে।
“ওহ বীচ জাস্ট সেট আপ। আপনার মত ঘৃণ্য মহিলার মুখ আমি দেখতেই চাই না। আর আপনার সত্য জানার পর আপনার মনে হলো কী করে যে আমি আপনার কেইস লড়ব। এখন আমি নিজ মুখে বলছি, আমি কেন কেউই আপনার কেইস নিয়ে লড়বে না। আপনি মাইর খেয়ে খেয়েই মরার যোগ্য। আপনার কারণে আমি মায়ের মমতা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। আজ সেটাও পূর্ণ হয়ে গেল। আপনাকে আমি আর এক দন্ড চোখের সামনে সহ্য করতে পারব না। এখনি চলে যান বলছি। নাহলে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।”
পদ্মিতা দেখলেন সব তার হাতছাড়া হয়ে গেছে। মোঃ আবু সিদ্দিক ও ধমকে বলেন,
“এখনো যাসনি কালনাগিনী। চলে যাহ্ বলছি। নাহয় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করব তোকে।”
পদ্মিতা ভনিতা না করেই বেরিয়ে গেলেন। তবে যেতে গিয়েও পিছু মোড়ে মোঃ আবু সিদ্দিক এর তাকিয়ে বলেন,
“আমি তোমারে শান্তিতে বাঁচতে দিমু না সিদ্দিক। তোমার কারণে আমার জীবনটা উজার হইয়া গেল। তোমার সংসার ছিন্নভিন্ন করে ছাড়মু। কেউ শান্তিতে থাকবি না এই আমার অভিশাপ।”
“আহ্ আন্টি একটা কথা মাথায় রাখবেন শকুনের দয়ায় গরু মরে না। আপনার মত শকুনের নজর থেকে নিশ্চয় আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখবেন আমাদের। আরেকটা কথা আপনার থেকে আমাদের কথা না ভাবলেও হবে আপনি যেতে পারেন এখন।”
শেহরীনা পদ্মিতার কাছে গিয়ে তার বাহু চেপে ধরে বাড়ির বাহিরে ছুঁড়ে দিয়ে দরজাটা তার মুখের উপর লাগিয়ে দিল। পদ্মিতা রহস্যময়ী হেসে সেখান থেকে চলে যান।
____
সেদিনের ঘটনার পর পুরো তিনমাস পার হয়ে যায়। সারোয়ার স্বাভাবিক আচরণ করলেও মুখটা তার গম্ভীর মনমরা হয়ে থাকতো। শেহরীনা যা চাইতো সে নিমিত্তে হাজির করতো। কিন্তু প্রণয় মাখা সেই সারোয়ার এর স্বাক্ষরিত কথা সমূহ ভীষণ ভাবে মনে পড়তে থাকে শেহরীনার। সারোয়ার কে গম্ভীর মলিন মুখে কখনো মানায়নি আর মানাবেও না। সে হাসবে এটাই চাই শেহরীনা। এতক্ষণ যাবত লেকচার নোট করার মাঝে স্বামীর দিকে একদৃষ্টিতে মগ্ন হয়ে ভাবছিল শেহরীনা।
আজও একই দশা সারোয়ার উদাসীন হয়ে কেইস নিয়ে স্টাডি করছে। যা দেখে শেহরীনা খারাপ লাগল। আচ্ছা আজ সে কিছু একটা করলে যদি মানুষটার মন ভালো করতে পারে তাহলে! শেহরীনা ঠোঁট কামড়ে স্বামীর দিকে তাকায়।
‘বিয়ের এতটা দিন পার হলো মানুষটা সুপুরুষ এর মত এক বিছানায় থেকেও পাশ ঘেঁষে শুইয়েও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এমন পুরুষ তো সব নারীর কাম্য।’
ঠোঁট কামড়ে শেহরীনা সারোয়ার এর মুখের আদল পরখ করছে। ঠান্ডা ভেজা আজকের রাত্রি। অদ্ভুত এক নেশা গ্রাস করছে তার মন পাঁজরের মাঝে। তারা এক ছাদের নিচে থাকছে, খুনসুটি করছে, ঘুমাচ্ছে আর খাচ্ছে। দুজন কাছাকাছি তবুও দেখতে গেলে ডজন খানেক দূরত্ব তাদের মধ্যে বহমান। আজ যদি এই বহমান দূরত্ব মিটিয়ে নিলে কেমন হয়! আপনমনে ভেবেই লজ্জায় কুঁকড়ে উঠল শেহরীনা। সারোয়ার এর চোখের আড়ালে লাজুক হাসে।
হঠাৎ তার ধ্যান ভাঙ্গে সারোয়ার এর এক ফোন কলে। সারোয়ার এর ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল তানভির কল দিয়েছে। কানের ব্লুটুথ কানেক্ট করে নেয়।
‘স্যার নিলীমা ম্যাম কী আপনাদের বাড়িতে আছে!”
“না কেনো!”
“না মানে স্যার আজকে আমি আর উনি ডেট করতে যাওয়ার কথা।”
মিনমিন কণ্ঠে বলে দেয় তানভির। নিলীমা কে সারোয়ার কয়েক মাস ধরে পরখ করেছে। মেয়েটা এই বাড়িতেও থাকছে না। নিজ বাড়িতে থেকে তার অফিসে এসে তানভির সঙ্গে সময় কাঁটায়। এতে সে বিরক্ত নয়। তবে তার বিরক্ত লাগে যখন মেয়েটা তাকে কোণা চোখ দিয়ে লক্ষ্য করে। কথাটা জুনিয়র হিসেবে তানভির কে বলতেও পারে না। যদি সিনিয়র দেখে কটু কথা শুনাচ্ছি বলে বুঝে সেই ভেবে চুপ করে সহ্য করে। মেয়েটাও অসভ্য লেভেলের তার ইচ্ছে করে কষে চ’ড় দিতে। বলাবাহুল্য মেয়েটা তানভির এর জিএফ হয়ে গেছে।
‘স্যার স্যার কী হলো কোথায় হারালেন!’
“এই চুপ বেয়াদব স্যার স্যার করে কানের পোকা মেরে দিচ্ছিস কেনো। চুপ যাহ্ কিসের ডেটিং তোর হ্যাঁ! তোর না অনার্সের শেষ সেমিস্টার চলছে। সামনের মাস থেকে তোর পরীক্ষা ভুলে যায় নাই আমি। ডেটিং ফেটিং বাদ দিয়ে পড়তে বস। আরেক বার যদি নিলীমার সাথে রসলিলা বানাতে দেখছি আই সোয়্যার তোকে যমুনা নদীতে আছাড় মা’রব।”
ফট করে কলটা কেটে ফোনটা পাশে ছুঁড়ে মা’রল সারোয়ার। হঠাৎ রেগে গিয়েছে সে। চাপের কারণে সে উদাসীন হয়ে গেছে তার শান্তির প্রয়োজন। নেহায়েৎ তাকে অশান্তি গ্রাস করে ফেলবে। অন্যদিকে, তানভির ভয়ে ঢোক গিলল।
স্যার রেগে আছে তার মানে বউ এর সাথে কিছু হয়েছে! কিন্তু কেন ম্যাম কে তো দেখতে কত ভালো মনে হয়। ওওহ হয়ত রাতে লাগাতে দেয় না স্যারকে। আপনমনে ভেবে নিজেই ফিক করে হেসে ফেলল তানভির।
‘বেয়াদব ছেলেপেলে তোকে আমি খু’ন করব। এসব ডার্টি কথা ভাবিস।’
স্যারের কণ্ঠস্বর আকস্মিক তানভির এর হ্যালুসিনেশন হয়ে যায়। বেচারা আর না পেরে ঘুমানোর জন্য কাঁথা মোড়ে শুয়ে পড়ল।
____
সারোয়ার বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। পাশে শেহরীনা শুয়ে আছে অথচ মেয়েটা নিজ থেকে কাছে আসতে চায় না। সেও পুরুষ মানুষ তার নিজস্ব চাহিদা আছে। সংসারের মূল ফটক এখন শেহরীনার। সংসারের এতদিন কাছে থেকেও মেয়েটার মনে সে কী জায়গা নিতে পারেনি। না আজ সে জবাব চাইবে।
মুখ গম্ভীর করে পাশে ফিরতে দেখল কেউ নেই। ধড়ফড়ে জেগে উঠে সে। এতক্ষণ চোখ বুঁজে থাকায় সে বুঝতে পারেনি কখন শেহরীনা উঠে চলে অব্দি গেল। ঘড়ির দিকে তাকায় সবে রাতের দুটো বাজছে। এতক্ষণ এ মেয়েটা কোথায় গেল! সারোয়ার উঠে রুমের বাহিরে যায়। এপাশ ওপাশ অন্ধকার দেখে ছাদের দিকে এগোল। দেখতে পেল শাড়ি পরিহিত এক কমলা রঙের নারীকে। যার পেছনের দিক পুরো উম্মুক্ত। ঢোক গিলল সারোয়ার।
মেয়েটার মাথায় কী ভূত ছড়ল কী!
কণ্ঠস্বর নম্র করে ডেকে উঠে। শেহরীনার নিজেরও লজ্জা লাগছে ভীষণ। আজ স্বামীর জন্যেই সে পাতলা ফিনফিনে শাড়ি পড়েছে। ভেতরে ট্রান্সপারেন্ট ব্লাউজ পরেছে। যার কারণে তার পিঠের মধ্যে ব্লাউজটি নেই দেখাবে। অথচ সে ব্লাউজ পরেই আছে। স্বামীর কণ্ঠস্বর শুনে শক্ত হাতে রেলিং চেপে ধরল। সারোয়ার এর বুক বরাবর মেয়েটার আঁচলের বাহিরে উম্মুক্ত পিঠ দেখে মোহে আবেশিত হয়ে তার ডান হাত ছুঁয়ে দিলো মেয়েটার পিঠে। কেঁপে উঠল শেহরীনা। সারোয়ার এর নাকে সুন্দর সুবাস আসছে। মেয়েটার শরীরে ফুলের সমারোহে থাকার কারণে লিলিফুল এর সুবাস আসছে তার পরণের শাড়ি থেকে। চুলের থেকে শ্যাম্পুর কড়া ঘ্রাণে মনপ্রাণে ভয়াবহ ঝড় বয়ে যাচ্ছে সারোয়ার এর। সে ঢোক গিলে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে।
“কৃষ্ণরাণী ততুমি এএখানে দাঁড়িয়ে আছো কেককনো আসো রুমে যায়।”
বলেই পেছন মোড়ে গেল সারোয়ার। সে চাই না মেয়েটার অমতে তার শরীরে স্পর্শ করার। তার হক থাকলেও মেয়েটার অনুমতি বিহীন সে আগাবে না কখনো। শেহরীনা ঠোঁট কামড়ে পেছন ফিরল। স্বামীকে অন্যদিক ফিরে থাকতে দেখে তার মুখখানা চুপসে গেল।
সে ভুলেই গিয়ে ছিল তার কারণেই মানুষটা দূরে দূরে থাকে। অথচ মানুষটার পূর্ণ হক আছে তার উপরে।
শেহরীনার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে সারোয়ার। সে কাঁপছে উত্তেজনায়। বউ কে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সে বারবার ঢোক গিলছে। আবহাওয়া ঠান্ডা তবুও সে ভেতরে উষ্ণতা অনুভব করছে। শেহরীনা ভাবল সে নিজেই চমকে দেবে তার সুপুরুষ কে। একপা একপা করে আগাতে লাগে। তবে তার খেয়াল নেই যে ছাদের উপর পানি পড়ে আছে। এশার নামাজের পরপর ঝুমঝুম বৃষ্টি পড়েছে। যার কারণে এখনো ছাদ পিছলে ভিজে আছে। খানিক আঘাতেই ভুলবশত তার পা পড়ে পানিতে। এতেই হোঁচট খেয়ে পড়ে।
‘সারোয়ার!’ চিৎকার শুনে আত্মা কেঁপে উঠে সারোয়ার এর। তৎক্ষণাৎ পেছন ঘুরে তাকায়। শেহরীনা পড়ে গিয়েছে মাটিতে। এ দেখে তার স্বস্তি মেলল। একটুর জন্য কোনো বড় অঘটন হলো কি-না ভেবেই তার জান চলে গিয়ে ছিল। সময় নষ্ট না করে শেহরীনাকে আলগোছে পাঁজাকোলা করে নেয়। ফট করে স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরল শেহরীনা। তার চোখমুখে কিছুক্ষণ আগেও ব্যথা ছড়িয়ে ছিল। এখন যেনো তার চোখে অদ্ভুত চাহনি। সারোয়ার তার কানের লতিতে মৃদু কামড়ে বলে,
“আজ কি রাত আমাদের নামে কৃষ্ণরাণী।”
চলবে…..
#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৪৩ (স্পেশাল মোমেন্ট)
“কৃষ্ণবউ এটা তুমি বড্ড অন্যায় করছো। আমার ভেতর গরম গরম অনুভূতি, অনুভব জাগিয়ে দিয়ে তুমি এখন ওয়াশরুমে বাসর করছো। আমার ছটফটানির কোনো কদর নাই দেখছি তোমার কাছে। ঐ কোমল চামড়ায় নিজেই হাত লাগাতে দিলে এখন আমি হাত লাগাতে চাইছি তুমি কি-না ওমনি পাল্টি খেলে। দ্যাটস নট ফেয়ার। আই ওয়ান্ট মাই হানিবি। তুমি কী বের হবে না আমি এতো রাতে দরজা ভাঙ্গার মত রিস্ক নেবো কোনটা!”
সারোয়ার এর কণ্ঠস্বর শুনে শেহরীনার হাঁসফাঁস লাগছে। ছাদে থাকা অব্দি সব ঠিক ছিল। সেও মোহে আবেশে লিপ্ত হয়ে পড়ে ছিল। ওমা! যেই রুমে ঢুকেছে ফুড়ুৎ করে সব অনুভূতি গায়েব। সারাজীবনের লজ্জা আজকেই তাকে গ্রাস করে ফেলল। এক দৌড়ে সেই যে ওয়াশরুমে ঢুকল। বের হওয়ার নাম গন্ধ নেই। তাই তো সোহাগপ্রিয় ক্ষেপে বাহির থেকে গর্জন করছে। শেহরীনা বের হচ্ছে না দেখে অস্থির হয়ে উঠল সারোয়ার। দরজার কাছে গিয়ে বার কয়েক টোকা দিলো। মৃদু শব্দ হয়েছে। তবুও মেয়েটা সাড়া দিলো না।
“ওকে ওকে কৃষ্ণরাণী রিলেক্স আমি তোমাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি। তোমার অমতে কিছুই করব না আমি।”
শেহরীনার মন চাইছে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে। সে স্বামী কে তার অনুভূতি বোঝাতে পারছে না। তার ও অধীর আগ্রহ স্বামীর পরশে-সোহাগে মত্ত হওয়ার। তবে দেখানোর মত সাজ দিলেও লাজ-লজ্জায় রমণী কুঁকড়ে উঠছে। কী করবে, না করবে তার ভাবনার মাঝেই সুপ্রিয় স্বামী পুনরায় ডাক শুধায়। শেহরীনা নিজেকে শাঁসাল।
সারোয়ার এর অনুভূতি নিমিষে উধাও হয়ে গেল। মুখে যে এক পানাহার এর অস্থিরতা ছিল তা যেনো হুট করেই হারিয়ে গেল। ওয়াশরুমের দরজায় দিকে একপলক তাকাল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আলমারির কাছে গিয়ে শুভ্র রাঙা পাতলা শার্ট আর ট্রাউজার বের করে রুমেই কাপড় পাল্টে নেয়। এর মাঝে তার নজরখানা ওয়াশরুমের দরজায় ছিল। না, মেয়েটা হয়ত তাকে ভয় পেয়েছে। আসলেই তার উচিৎ ছিল না ওমন আচরণ করার! গলা কাঁপছে তার অনুভূতির অশ্রু তার চোখে ভীড় জমিয়েছে। তবুও সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নেয়। দরজার নিকটে গিয়ে আলতো হাতে টুক টুক করে শব্দ তৈরি করল। শেহরীনা কিছুটা অবাক হলো।
‘কৃষ্ণবউ আমি ঘুমিয়ে পড়ছি। তোমার হয়ে আসলে লাইট অফ করে শুয়ে পড়িও। আমার কাল দুপুরে খেয়ে চলে যেতে হবে। একটা কেইসের শুনানি আছে। বেশ রাত জাগলে কেইস নিয়ে কাজ করতে পারব না।’
সারোয়ার পলপল অপেক্ষা করল। ক্ষীণ আশা যদি কোনো জবাব আসে! উহুম আসেনি কোনো শব্দ সুর। পাংশুটে মুখ করে সে বিছানা ঝেড়ে নেয়। একপাশে শুয়ে কপালে হাত ঠেকাল। তারপর.. চোখ বন্ধ হলো। চোখের সামনে সেই তার প্রথম স্ত্রীর মুখপান ভেসে উঠল। ইশ মধুর রাত্রী ছিল তবুও সেই রাত্রীর মুহুর্তটা ভয়ানক ছিল। প্রথম স্ত্রীর ধড়ফড় করে শ্বাস আটকে মা’রা যাওয়ার দৃশ্যটা তার চোখে কাতরতা জড়িয়ে দিলো। তবে কী কৃষ্ণবউ বুঝি এ কারণে কাছে আসায় ভয় পাচ্ছে! তার হৃদয়ে অগ্নিদগ্ধ হলো। এ ভাবনা তার প্রথমে কেনো আসেনি। সে এপাশওপাশ করল। শেহরীনা ফুঁপিয়ে উঠলো। তার অবুঝ আচরণে স্বামী কষ্ট পেয়েছে। সে দরজা খুলে উঁকি দিলো। রুমের ডিম লাইট জ্বলছে। বিছানায় পিঠ এপাশ করে ঘুমোচ্ছে সারোয়ার। চেহারা অন্যদিকে হওয়ায় বোঝা মুশকিল। তবে সত্যি কী উনি ঘুমিয়ে পড়েছেন! এ রাত্রী না তাদের হওয়ার কথা! বিছানার কাছে এসেও সংকোচ এর কারণে উঠে বসতে ভয় পাচ্ছে। সারোয়ার মেয়েটার প্রতিটা পদক্ষেপ আয়নায় পরখ করছে। বালিশ শক্ত হাতে চেপে গম্ভীর গলায় বলে,
“শুয়ে পড়ো কৃষ্ণ বউ। স্বামীর সাথে এর আগেও শুয়েছো এটা নতুন নয় নিশ্চয়।”
শেহরীনার মন খারাপ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। লোকটা তার কারণেই গম্ভীর মনোভাব পোষণ করছে। সে বসে ধীরগতিতে হাত এগোতে নিলে চট করে কোলবালিশ পিঠের পাশে রাখল। হতভম্ব হয়ে গেল শেহরীনা।
“আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমার কাছে আসতে ভয় পাচ্ছো। কারণ আমার প্রথম স্ত্রী ও আমার কাছে আসার মুহুর্তেই মা’রা গিয়ে ছিল। এ কথা বোধয় কারো থেকে জেনেছো। ভালোই হলো জানলে। চিন্তে করো না আমি মা’রা যেতে রাজি তবুও তোমায় ছাড়া নয়। তোমাকে বাঁচিয়ে হলেও আমি পৃথিবীর বুকে মাটিতে শান্তি পেতে চাই।”
বন্ধ চোখে এত কাতরময় কণ্ঠস্বর। না সে অন্যায় করেছে তার স্বামীর সাথে। শেহরীনা এক ঝটকায় কোলবালিশ তুলে বিছানায় অপর পাশে আছাড় মা’র’ল। আর কোনো দূরত্ব নয়। কিসের দূরত্ব স্বামী তার, বিছানা তার। তবে কেনো তার কাছ থেকে সে দূরে থাকব। যাকগে মরুক গে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে হলেও স্বামী কে আজ অধিকার দেবে সে। দু’হাতে পেছন থেকে সারোয়ার কে জড়িয়ে তার গালে ওষ্ঠজোড়া ছুঁয়ে দিলো শেহরীনা। তার কান্ডে সে নিজে কেঁপে উঠলেও পর মুহুর্তে মায়াময় আকর্ষণ তাকে টান টান করে দেয়। ওষ্ঠের ছোঁয়া ধারাল হলো। সারোয়ার এর গলায় দাঁত বসিয়েছে মেয়েটা। এটা কী সত্যি সেই তার কৃষ্ণ বউ!
সারোয়ার এর কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে ঠোঁট কামড়ে বলে,
‘আইম সরি কাছে আসুন না। প্লিজ ওমন মুখ করে রাখবেন না। আমার খুব কান্না পায়।’
সারোয়ার শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। তার দৃষ্টিতে নেশা হ্যাঁ নেশা ফুটেছে। বিছানা খামচে ধরল আনমনে। সারোয়ার সময় ব্যয় করল না। এক বলিষ্ঠ হাতে কমলা রঙের শাড়িটি টান দিয়ে খুলে ফেলল। বিছানার একপাশে অবহেলিত হয়ে স্থান পেল শাড়িটি। শেহরীনা দুহাতে চেপে ধরল নিজেকে। লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলেও আজ এই সভ্য নামক অসভ্য পুরুষের হাত থেকে তার রেহাই নেই। সারোয়ার আলগোছে তার হাতের বিচরণ ছড়িয়ে দিলো তার কৃষ্ণবউ এর উম্মুক্ত পিঠে। গুড়ুন গুড়ুম শব্দ হচ্ছে। তবে বৃষ্টির ছিটেফোঁটা ও নেই। বিজলীর চমকানোর মধ্যে সারোয়ার নেশাময় দৃষ্টিতে তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে তাকিয়ে আছে। শরীরের ভার ইতিমধ্যে মেয়েটার উপর ছেড়ে দিয়েছে। শেহরীনাও পায়ে পা খামচে স্বামীর আলিঙ্গন হতে মত্ত। সামাল দিতে লাগল এক বেসামাল পুরুষ কে। সারোয়ার পরপর ওষ্ঠজোড়ায় চুমু খেয়ে বলে,
“আমায় অনুভব করো কৃষ্ণ বউ। ঘন বিজলীর মধু্র রাত্রী আমি বিঘ্নিত হতে দিতে চাই না। বন্ধ চোখে আমায় খামচে দিয়ে জড়িয়ে থাকো। যাতে তোমার নখের ধারালো তীক্ষ্ণতায় আমার পিঠ জ্বালাপোড়া করে উঠে।”
শেহরীনা ‘আহ’ শব্দ করার আগ মুহূর্তে পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে গেল। রুমের মধ্যে মৃদু সুখের গোঙানি হচ্ছে। দুনর-নারীর ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসে শেহরীনা বিড়াল ছানার ন্যায় লেপ্টে যাচ্ছে। সারোয়ার নম্র হাতে মেয়েটাকে জড়িয়ে নেয়। এটুকু ছাড়ো আজ সে দিতে রাজি নয়! উহুম এতদিনের অপেক্ষা।
রাত ৪টা কী! হতে পারে ঘড়ির দিকে তাকানোর মত ইচ্ছে নেই শেহরীনার। তার বুক কেঁপে কেঁপে উঠছে। ফাঁকা ঢোক গিলে পাশে তাকাল। একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে সারোয়ার। কাঁথাটা সন্তপর্ণে বুকের উপর চেপে ধরল শেহরীনা। ঠোঁট কামড়ে পিঠ ঠেকিয়ে অপরপাশে মুখ ফিরিয়ে নিলো। সারোয়ার এর বেশ অপছন্দ হলো বিষয়টা। একটানে বউকে মুখোমুখি করে নেয়। শেহরীনা তাকাল। চোখজোড়ায় লাজুকতা ভরপুর। সারোয়ার সময় দিল। কোনো তাড়াহুড়ো নেই সে আপনমনে বউয়ের গালে নাকের ঘর্ষণ দিচ্ছে।
‘ঘঘুমাবেন না!’
‘প্লিজ তোতলে কথা বলো না! আমার ভেতরটা চুরমার হয়ে যায় আদর দেওয়ার লোভে।’
‘ইশ আপনি এতটা অসভ্য জানা ছিল না।’
‘পৃথিবীর একটা কথা কিন্তু তুমি সব জায়গায় পাবে কোনো পুরুষই তার হক নারীর কাছে সভ্য নয়। অসভ্যই বটে। নাহলে কী আর আদম(আ.) এর পর বংশপরম্পরা চালু হতো!’
‘কিন্তু আপনি লাগামহীন।’
‘প্রথম বউ কে কাছে পাওয়া একটু তো লাগাম ছাড়া ঘোড়ার মত দৌড়াতেই হয়।’
‘ছিঃ’
‘ছিঃ ছাঃ ছাড়ো আসো এখন কাছে আরেকবার অসভ্যতামি প্রমাণ করে দেয়।’
‘কককি না না আর লাগবে না। ছিঃ আপনার মত দামড়া পোলা কে সামলাতে আমার বয়েই যাচ্ছে যেনো। সরেন সরেন ঘুমাব।’
সারোয়ার তার কথা শুনলে তো। কাঁথার ভেতর ঢুকে মেয়েটাকে একটানে আলিঙ্গনে নিয়ে ফেলল। হাতের বিচরণে কাহিল করতে লাগল প্রিয় নারীকে। ব্যথায় সামান্য একটু কুঁকড়ে উঠলে সারোয়ার তার ওষ্ঠযুগলকে বন্দি বানিয়ে ফেলে। রাতের প্রহর তাদের কাটতেই চাইছে না। মগ্ন হলো পুনরায় সুখের আদান-প্রদানে। ‘না না’ করা মেয়েটিও সুখ কুঁড়াতে নিজে কে বিচরণে করে দিলো।
ফজরের আযানের শেষ মুহূর্তেই ঘুমটা ভেঙ্গে আসল সারোয়ার এর। ধীরপায়ে গিয়ে গিজার চালিয়ে দিলো। পানি গরম হতে থাকুক। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে আলমারির দরজা খুলে নতুন বেডশিট, বেড কভার, কাঁথা বের করে চেয়ারের উপর রাখে। অপরপাশে শেহরীনা আর নিজের জন্য জামা বের করে রাখল। একটু ওয়াশরুমে গিয়ে পরীক্ষণ করে নেয়। হ্যাঁ পানি গরম হয়েছে বটে। বিছানায় গিয়ে ঘুমন্ত কৃষ্ণবউ কে চাদর মুড়িয়ে কোলে উঠিয়ে নিলো সে। স্বামীর গলা জড়িয়ে নিভু নিভু চোখে তাকায়। তবে টু শব্দ করল না। ক্লান্ত শরীর তার। বাথটাবে কুসুম গরম পানিতে শেহরীনা কে বসিয়ে দিয়ে সারোয়ার পুনরায় বের হলো। বেডশিট, বেড কভার ,চাদর উঠিয়ে তা ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে পাউডার আর পানি ছেড়ে দিলো।
নতুন বেডশিট দিয়ে বিছানা গুছিয়ে নিয়ে দুটো তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিলো। লাইট বন্ধ করে অন্ধকারের মাঝেই বুঝল মেয়েটার বাথটাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে। মৃদু হাসল সারোয়ার।
কয়েকক্ষণে দুজন বেরিয়ে আসল। মাথায় গামছা বেঁধে শেহরীনা হিজাব বেঁধে নেয়। সারোয়ার জামা পরে টুপি পরে নেয়। মসজিদ যাওয়ার পূর্বে একপল কৃষ্ণবউ এর দিকে তাকিয়ে তার কপালে গাঢ় এক চুম্বন দিলো।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
‘মসজিদ থেকে এসে একসাথে কুরআন পড়ে ঘুমাব কেমন!’
শেহরীনা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
____
“হুনো আমার এত কিছু জানার নাই। আমারে মুক্তি দিতে পারবা কিনা কও তৈ!”
শোয়াইব মিলদাজ শুনে ‘চ’ উচ্চারণ করতে গিয়েও করলেন না। কাঁদামাখা শরীরে বিদঘুটে গন্ধ নিয়ে মাটিতে বসে আছে পদ্মিতা। তার দিকে তাকাতেও গাঁ রিরি করছে শোয়াইব মিলদাজ এর। তবে এ মুহূর্তে তার পরিবার হিসেবে শেহরীনা কে সন্তান হিসেবে পেতে চাইছেন। পদ্মিতা যখন অপমানিত হয়ে সিদ্দিক বাড়ি থেকে বের হলো। তখন তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নেন শোয়াইব মিলদাজ। নিজের বাড়িতে এনেই বলেন,
“এত উত্তেজিত না হওয়াই ভালো। আমাদের মন দিয়ে কাজ করতে হবে।”
কিন্তু অশিক্ষিত গাইয়া পদ্মিতা লোভের চটে ‘না না’ করেন। তার এখনি কাপড়-খাওয়া চাই। শোয়াব মিলদাজ বিরক্ত হয়ে নিজের স্ত্রীর পোশাক থেকে একটা পোশাক ধার দিলেন। কাজের ছেলে কে রান্না করে টেবিলে দিতে আদেশ করে দেন। পদ্মিতা আড়চোখে তাকিয়ে বলেন,
“তৈ এহন কী করমু! সারোয়ার তো মানল না।”
“দেখো আমি শেহরীনা কে কোনো ভাবে ঐ পরিবারের কাছে রাখতে চায় না। তোমাকে বলছো মুক্তি দিতে আমি দিয়ে দিবো কালকেই। কিন্তু মনে রেখো ভুল যেনো না হয়। শেহরীনা কে আমি সাইন করাব দুটো কাগজে। এক সারোয়ার এর সাথে ডিভোর্স আরেক সেটা মেয়ে-বাপের মধ্যকার কথা তোমার না জানলেও চলবে।”
পদ্মিতা মাথা নাড়লেন। তবে সেও কম কিসে পকেট হাতড়ে মোবাইলটা এগিয়ে দিলেন। শোয়াইব মিলদাজ এর কপালে ভাঁজ পড়ল। মোবাইল চালু করতেই স্ক্রিনের ছবি দেখে হতভম্ব হয়ে যান। পদ্মিতা খুব চালাকির সঙ্গে এ কাজটি করেছে। অবিশ্বাস্য কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।
“এটা তুমি একলা মানুষ হয়ে কেমনে উঠালে! এ ছবি এআই দিয়ে ভাইরাল করলে সম্মান এক সেকেন্ড ধুলোয় মিশে যাবে তার।”
পদ্মিতা রহস্যের হাসি হেসে হাত ধুয়ে খেতে বসেন। কাজের ছেলে খাবার দিলো দুজন কে। সে খেতে খেতেই বলেন,
“ওমন ছবি তোলা আর বাঁ হাতের খেলা। এহন কী করতে হইব এডা তৈ ভালা করেই জানো। কিন্তু আমি চাই মোঃ আবু সিদ্দিক আমার পায়ের কাছে বসে গড়াগড়ি খাক। ক্ষমা চেয়ে চেয়ে তার মুখে ফেনা উঠুক।”
শোয়াব মিলদাজ এর ও মাথায় আগুন ধরে যায়। মনে পড়ে যায় তাকে চ’ড় দেওয়ার দৃশ্য। দুজনেই নিজেদের কে আশ্বস্ত করে নিলো।
‘তোরে আমি তোর যোগ্যতা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবো মোঃ আবু সিদ্দিক। এই শোয়াইব মিলদাজ এর গালে চ’ড় মা’রা এর শোধ না নিয়ে আমি বসে থাকব না।’
চলবে…….
#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৪৪ (হারিয়ে ফেলা💔)
“আমার মেয়ে কে তো আমি পেলাম না কিন্তু তাকে তোর কাছে আমানত রেখে যাবো তাও তুই ভাবলি কেমনে। তুই আমার ছেলেকে জেলে পঁচিয়েছিস। কিন্তু তোর বউ কে আমি পৃথিবী ছাড়া করব।”
শোয়াইব মিলদাজ কথার ছলেবলে পিস্তল দিয়ে গু’লি চালিয়ে দিলো। জোরালো শব্দে ‘সারোয়ার!’ নিজস্ব নাম শুনেই ধড়ফড়ে জেগে উঠল সারোয়ার। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। বলিষ্ঠ দেহখানায় র’ক্ত এর প্রবাহমান বেড়ে গিয়েছে প্রচুর। শেহরীনা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীর জায়গায় হাত ফেলে দেখল বিছানা খালি পরন্তু পুরুষের আবছায়া আছে। ঘুমন্ত নিভু নিভু চোখজোড়া খুলে দেখল সারোয়ার হেলান দিয়ে বসে আছে। চোখের দৃষ্টিকোণ শেহরীনার উপর নিবন্ধন। শেহরীনার ঠোঁটের কোণে মিটিমিটি হাসি ফুটে। হাত এগিয়ে স্বামীর বুক পাঁজরের উপর রেখে বলে,
“কী হয়েছে জেগে গেলেন কেনো! এখনো তো…।”
মাথা কিছুটা উঠিয়ে দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকায়। ঘড়ির কাঁটায় পৌনে তিনটা বাজছে। ঘুমন্ত নিবিড় শ্বাস টেনে আওয়াজ করল।
‘পৌনে তিনটায় জেগে গেলেন। কী হয়েছে!’
সারোয়ার এর গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে। সারোয়ার নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে। তার চোখজোড়ার চাহনি অন্য কিছু প্রকাশ করছে। এতটা মাস একসঙ্গে থেকেছে। স্বামীর চোখ দেখে মেয়েটা এখন তার মন পড়ার এবং বোঝার তীব্র চেষ্টা করে।
গালে বিন্দু বিন্দু জলের স্পর্শ পেয়ে শেহরীনা সন্দেহভাজন হয়ে উঠে বসল।
‘কী হয়েছে কখন থেকে দেখছি চুপটি করে বসে আছো! কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো!’
নিরুত্তর রইল সারোয়ার। তবে তার শক্তপোক্ত হাতজোড়া শেহরীনার কোমর স্পর্শ করল। শেহরীনা শক্ত হাতে কাঁথা চেপে রইল। পরণে স্বামীর একটা ফিনফিনে পাতলা শার্ট। ঘুমানোর সময় ছেলেটার পাগলামির ফল বলা যায়। সারোয়ার মোহনীয় গলায় বলে,
‘জানো বয়সের তুলনায় আমি তোমার চেয়ে বড় কিন্তু আমার ভালোবাসাটা সেই এক পাগলাটে প্রেমিক পুরুষ এর মত। স্বভাবগত আমার প্রকাশ করার সাধ্য নেই। তবে আমি লিখিত দিতে পারি আমি একজন স্বার্থক স্বামী। যে তার সোহাগীপ্রিয়া কে প্রাণঢালা ভালোবাসে। কখনো যদি ছেড়ে যায় নিজেকে অপ্রস্তুত করবে না কখনো। মনে রাখবে তুমি ব্যারিস্টার সারোয়ার সিদ্দিক এর বউ। তোমার শ্বাস-প্রশ্বাসে আমার নাম বয়ে যায়।’
স্বামীর কথায় শেহরীনার বুক মোচড়ে উঠল। গলা কেঁপে জিজ্ঞেস করে।
‘আআপনার কী হয়েছে এত রাতে অদ্ভুত কথা কেন বলছেন! কখনো ছেড়ে যাবেন না আপনি ইন শা আল্লাহ। আমি..।’
‘হেই হুস হুস পাগলী কান্না করছো কেন মজা করছিলাম আমি।’
শেহরীনা কান্নায় স্বামীর বুকে হামলে পড়ল। বাচ্চার মত মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। সারোয়ার তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,
“আমার পাঁচদিনের জন্য ইংল্যান্ডে যেতে হবে। সেখানে আমার এওয়ার্ড ফাংশন আছে। সেখানকার নানান কেইস আমি সলভ করেছিলাম। কয়েকদিন আগে নিদোর্ষ মন্ত্রী কেও রেহাই দিয়েছি। তাই সলভিং সুবাধে আমার নামে তারা একটা ইভেন্ট করেছে। চেয়ে ছিলাম তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তবে তোমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ। একদিনে মেয়াদ বাড়ানো যায় না কমপক্ষে তিনদিন নাহয় একসপ্তাহ নাহয় একমাস সময় লাগবে। তাই আমি এসে তোমাকে নিয়ে হানিমুনে যাবো।”
সারোয়ার এর যাওয়ার কথা শুনেই বেচারির মনটা উদাসীন হয়ে পড়ল। তবুও স্বামীর জন্য তার গর্ব হয় খুব। সে মুখে রসিকতা টেনে বলে,
“যান যান কে মিস করছে আপনাকে হুহ।”
“তাই বুঝি দেখা যাবে।”
পরের দিন দুপুরে,
সারোয়ার তৈরি হয়ে নিয়েছে। খাবার পরিবেশন করে শেহরীনা স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছে। খেতে এসে সারোয়ার তৃপ্তি ভরে খায়। কেননা পুরো পাঁচদিন স্ত্রীর রান্নার স্মৃতি আঁকড়ে বাহিরের রান্না খাবে। মোঃ আবু সিদ্দিক ছেলের দিকে তাকিয়ে গর্বিত কণ্ঠে বলেন,
“ছেলেকে টিভিতে দেখাবে এটাই সৌভাগ্যের বিষয়।”
জাহানারা পুষ্প ছেলের খাওয়া শেষ হতেই একচামচ পায়েস খাইয়ে মিষ্টি মুখ করে দিলেন। শেহরীনার হাঁসফাঁস লাগছে। লোকটাকে একদন্ড কাছে পাচ্ছে না। সারোয়ার নিজেও সুযোগ খুঁজছে। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসে। সে তৎক্ষণাৎ রুমে যেয়ে জোর গলায় ‘শেহরীনা’ বলে ডাক শুধায়।
শেহরীনা স্বামীর ডাকে তৎক্ষণাৎ ছুটে গেল। সারোয়ার দুহাত মেলে কাছে আসার আহ্বান জানায়। শেহরীনা আহ্লাদ ক্ষেপণে বুকে হামলে পড়ে। তার চোখজোড়া ছলছল করছে।
সারোয়ার সোহাগিনীর কপালে চুম্বন দিয়ে বলে,
‘কৃষ্ণবউ নিজের খেয়াল রেখো। ইন শা আল্লাহ জলদি ফিরে আসব।’
‘আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন।’
দেখতে দেখতে একদিন পার হয়ে গেল সারোয়ার এর অনুপস্থিতির। শেহরীনা সারাদিন ভার্সিটি, সংসার সামলে রুমে এলেই তার একাকিত্ব অনুভব হয়। সারোয়ার পাশে থাকলে তার খুনসুটি গুণ শেহরীনা কে বড্ড হাসায়।
ফোন হাতে ভাবছে একবার কল করবে নাকি করবে না!
দোটানায় ভোগান্তি না করতে না পেরে কল করেই দিলো।
সারোয়ার এর ফোনের রিং হয়। সে মাত্রই তার রুমে এসেছে। এতক্ষণ যাবত কলিগদের সাথে আড্ডা দিয়ে ছিল।
প্রিয় বউয়ের ফোন পেয়ে কানে ধরেই ধপাস করে শুয়ে পড়ল। দুষ্টূ হেসে বলে,
“কৃষ্ণ বউ দেখি একদিন না যেতেই কল দিলো। খুব কী জামাই কে মিস করছে সে!”
শেহরীনা ঠোঁট কামড়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইল। সারোয়ার বুঝল মেয়েটার নৈঃশব্দ্যে লজ্জা নিবারণ করছে।তবুও মজা করা থামাল না। অকপটে বলে,
“আমি ভাবছি জামাই চলে যাবে সেই খুশিতে বোধহয় বউ তার বাপের বাড়িতে ঘুরবে নিজের মত স্বাধীনভাবে বাঁচবে। এত দেখি উল্টো হয়ে গেল। বউয়ের দেখি কলিজা পুড়ছে। পুড়ার গন্ধ এদিকেও পাচ্ছি। আহারে কৃষ্ণবউ পুড়িও না। একটুখানি পানি খাও।”
“ধ্যাত ফাজলামি করেন কেনো আমার সত্যি একাকিত্বে সময় কাটছে না। নিজে তো গেলেন না। আমায় ফেলে গেলেন। এখন আমি কী করব!”
“সে কী ভার্সিটিতে কী ডিম পারতে যাও। নতুন সেমিস্টার না এবার। সো ভালোমত স্টাডি করে আমার মত ব্যারিস্টার হও।”
“চুলোয় যাক ব্যারিস্টার হওয়া। আমার এডভোকেট হওয়ার ইচ্ছে আছে।”
“আমার পেশার কাছাকাছিই তো। এমন ভাব করছো যেনো অন্য ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী।”
শেহরীনা জ্বিভ কাটল। চোখ ঘুরিয়ে রাগান্বিত সুরে জিজ্ঞেস করে।
“এই দেখেন আমি জানি না কবে আসবেন বলুন!”
“বাবা এত মিস করছে কৃষ্ণ বউ। যে এটাই ভুলে গেলো এখন অব্দি আমি আসলামই একদিন হলো। তিনদিন হলে বোধয় তুমিই লাফিয়ে উঠবে। বলি একটু শান্ত রাখো মনটাকে। তারপর দেখবে আমি চলে এসেছি।”
শেহরীনার মুখখানা মলিন হয়ে গেল। ম্লান গলায় আওড়ায়।
“আমার দেশে ভালো লাগছে না সত্যি।”
“আমি থাকলেও না! আমি না তোমায় চুমু খেয়ে পেট ভরিয়ে দিয়েছি। তবে ভালো না লাগার কী আছে আজব!”
“ধ্যাত ফাজিল বেটা।”
চট করে কলটা কেটে উদাসীন হয়ে পড়ল শেহরীনা। অন্যত্রে, সারোয়ার মৃদু হাসল। তার নিজের ও মন সায় দিচ্ছে না। কিন্তু তার ভার্সিটির পক্ষ থেকে এডওয়ার্ড দেওয়া হবে। সেই হিসেবে আজই এসেছে। পাঁচদিন এর আগে দেশে ফেরা তার জন্য অসম্ভব। অপেক্ষা বিহীন উপায়ান্তর নেই। তবে সে তার কৃষ্ণবউ এর পাই টু পাই খবর রাখছে তার পিএ তানভির মাধ্যমে।
___
“নিলীমা তুমি কিন্তু ভুলেও তানভির কে আবার বিশ্বাস করে ভালোবাসতে যেও না।”
“কী এটা কী বলছেন আপনি! আমি ওকে ভালোইবেসে ফেলেছি। তাই আমি আপনার সঙ্গ দেবো বলছিলাম। তবে আমার জেদ শেহরীনা কে নিয়ে। তার মত কালো নারী কে কেমনে এক সুদর্শন পুরুষ ভালোবাসলো সেটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় অপমানের বিষয়। তার জন্যেই সারোয়ার আমাকে রিজেক্ট করেছে। আমি জ্বলছে দিতে চাই শেহরীনা কে।”
শেষ কথায় রেগে গেলেন শোয়াইব মিলদাজ। অল্প বয়সী মেয়ের মাথায় যে ভয়ানক কল্পনা চলছে কে জানত! তার পরিকল্পনায় সামিল থাকা পদ্মিতাও হতবাক মেয়েটার কথায়। জট করে এক চ’ড় লাগান শোয়াইব মিলদাজ। তার এক সন্তান তো জেলেই আরেক সন্তান কে হারানোর কোনো ইচ্ছে নেই তার। ভদ্রলোকের দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকাল নিলীমা। গলা উঁচিয়ে বলে,
“এটা আপনি ঠিক করেননি মিস্টার শোয়াইব মিলদাজ। মেয়ের জন্য দেখি দরদ উতলায় পড়ছে। এতদিন তো ঠিকি মেয়ের স্বামী কে মা’রার ফন্দি আটকে নিয়ে ছিলেন। এখন কোথায় গেল সেই ফন্দিটা।”
“এই মেয়ে কথা কম বলো। বয়স কম দেখে ক্ষমা করছি। আমি কিন্তু মোটেও সারোয়ার কে ছেড়ে দেবো বলেনি। আমি আমার মেয়েকে পেয়ে গেলেই সারোয়ার এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো।”
পদ্মিতার মাঝে ভাবান্তর হলো না। সে তো শুধু সিদ্দিক এর সামনে নাটক দেখিয়েছে। যেনো অবলা মা হয়ে সন্তান কে কাছে পাওয়ার তীব্র বাসনা জেগেছে সে রূপটাই কেবল দেখাল।
___
“তানভির চলো না আজ শপিংমলে যায়।”
তানভির সারোয়ার এর কেবিনে বসে কাজ করছিল। নিলীমা আর তার সম্পর্কটা বেশ ভালোই চলছে। দুজন দুজনকে প্রায় সময় দিচ্ছে। নিলীমার আচরণ দেখে অবাক হয়ে যায় তানভির। মেয়েটা তাকে ছাড়া একদণ্ড স্থির থাকে না। জাগতে, উঠতে, বসতে কলের পর কল দিয়ে খবর নিয়েই ছাড়ে। তানভির ও ভালো না বেসে পারল না। পরীক্ষা শেষ হতেই নিলীমা কে সঙ্গে করে ফ্রেন্ডস মিলে ট্যুর অব্দি দিয়েছে।মজমাস্তির মাঝে তানভির গভীর ভাবে অবলোকন করেছে নিলীমা কে। তার মন চাই বিয়ের প্রস্তাব দিতে কিন্তু স্টেটাসের দিক দিয়ে নিলীমার পরিবারের নামডাক এগিয়ে। তানভির হলো মধ্যবিত্ত। পরিবারে এক মা আর ছোট ভাই ছাড়া কেউ নেই। আত্মীয়-স্বজন নামে মাত্র। তাদের সাথে যোগাযোগ নেই বছরখানেক হবে। সেই তার পরিবারের সঙ্গে নিলীমার পরিবারের মিলমেশ আদৌ সম্ভব ! সারোয়ার অবশ্য এ বিষয়ে বুঝিয়ে ছিল। সেই কর্ণপাত করেনি। তবে আজও তার মনে বিষয়টা গভীর প্রভাব ফেলে থাকে।
“তুমি আবারো বেখেয়ালে পড়লে! তানভির এমন করলে বিয়ের পর তোমাকে ডান্ডা দিয়ে পিটিয়ে সোজা করে দেবো।”
তানভির ধ্যান ভাঙ্গে নীল শাড়ি পরিহিত অপ্সরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে মুখ ভেংচে বলে,’পারতে না মেয়েদের এত সাহস নেই।’
‘তাই নাকি যেমন একটা দেখাও তো!’
‘আরে আরে ঐ যে তেলাপোকা।’
‘তেলাপোকা’ শুনেই নিলীমা চিৎকার করে লাফিয়ে উঠল। তার চিৎকারের গুঞ্জন পুরো রুমে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ করে দিলো। তানভির কান চেপে ধরে। অসহায় হয়ে নিলীমা কে জড়িয়ে ধরে সোজা দাঁড় করিয়ে বলে,
“চুপ চুপ মজা করছিলাম আমি।”
নিলীমা শান্ত হলো। তার মত বিদেশি কালচারাল মেয়ের কাছে ছোট তেলাপোকা ও বড় কিছু। যদি তেলাপোকার জায়গায় বিচ্ছু দেখতো তবে মাথা ঘুরিয়েই পড়ে যেতো। থাক বাবা মান সম্মানের ব্যাপার জড়িত। নিলীমা ঠাস-ঠুস পিটিয়ে দেয়। তানভির নিজেকে কোনোমতে নিজেকে বাঁচিয়ে আলিঙ্গন করে নেয় নিলীমা কে। নিলীমা বাহ্যিক দিক ভুলে একদৃষ্টিতে তানভির এর দিকে তাকিয়ে রইল। দেখলে মনে হবে জন্ম জন্মের ভালোবাসা।
নিলীমা শুকনো এক কাশি ছাড়ে। তানভির হকচকিয়ে ছেড়ে দিল। তোতলে বলে,’আআমি খখেয়াল কককরি…।’
পরক্ষণে তার নজর কাড়ল নিলীমার গালে আংশিক মিটে যাওয়া দাগের ছাপ। সে তার গালে আলতো হাত রেখে ছুঁতেই নিলীমা পিছিয়ে গেল।
‘তোমার গালে ঐটা…।’
‘আরে ধ্যাত ইটস ওকে আমি মাইন্ড করিনী।’
নিলীমা কথা ঘুরিয়ে নেওয়ায় তানভির ততটা মন দিল না। আপনমনে হেসে বলে,
‘সো কী জানি বলছিলে শপিং করবে চলো যায় আমার কাজ শেষ।’
দুজন মিলে রিক্সায় চরে শপিংমলের সামনে যায়। তানভির রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে নিলীমার হাত ধরে মলের ভেতর ঢুকল।শেহরীনা গাড়ির কাঁচ নামিয়ে অবাক। নিলীমা কে তানভির এর সঙ্গে দেখে তার মাথা হ্যাং হয়ে গেল। মেয়েটা তো সারোয়ার কে পছন্দ করতো এ কথা তার অবগত। তবে আজ তানভির সঙ্গে কী করছে!
শেহরীনা এসেছিল তার বান্ধবী ইপশিতার সঙ্গে দেখা করতে। সে কল করল ইপশিতার ফোনে। ইপশিতা ফারদিনের মায়ের সাথে গল্প করছিল। মূলত বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে তাদের। কেনাকাটা করার জন্য ফারদিনের অপেক্ষায় বসে আছে। তার মাঝে শেহরীনা কেও কল করে মলে অপেক্ষা করতে বলেছে। হঠাৎ ফোন আসায় গল্পের থেকে বিরতি টেনে ফোন রিসিভ করে ইপশিতা।
‘দোস্ত কোথায় তোরা!’
‘দোস্ত আমার আসতে একঘণ্টা লাগবে-রে। ফারদিন এখনো কাজ করছে। তার কাজ শেষেই আমরা বের হবো।’
‘ওকে আয়।’
শেহরীনা কল কেটে পিছু যায়। তানভির আর নিলীমার কেনাকাটা পরখ করলেও হঠাৎ তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত চোখে পড়ল শেহরীনার। লজ্জায় সে আর তাদের সন্নিকট হলো না।
মলে থাকা রেস্টুরেন্টে বসে যায়। ফোন বের করে কল লাগায় সারোয়ার এর ফোন নাম্বারে। সারোয়ার নতুন সিম লাগানোর পরপর ভিপিএন চালু করে বিদেশি নাম্বার দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ এ ভিডিও কল দিয়ে ছিল। রিং হচ্ছে কিন্তু রেসপন্স নেই। কাজে আছে বোধহয়।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)শেহরীনা ভাবল কথাটা তার শ্বাশুড়ি কে জানাবে। যেহেতু নিলীমার মা তার শ্বাশুড়ির চাচাতো বোন। শেহরীনা বসে থাকার একঘণ্টা পার হতেই সেখানে এসে পড়ে জাফরান-রোকসানা, ইপশিতা-ফারদিন। বন্ধুমহল জমজমাট হলো। শেহরীনা কাপলস দেখে সারোয়ার কে প্রচন্ড মিস করছে। কিন্তু মুখের অভিব্যক্তি হাসিখুশিই রেখেছে।
ইপশিতা বান্ধবীকে খেয়ালে রেখেছে। বিধেয় গলা ঝেড়ে বলে,
‘এহম আমাদের শেহরীনা ও কম কিসে! পটিয়েছে তো যারে কোনো বিলিয়নিয়ার থেকে কম নাকি।’
তার কথায় হৈহৈ করে উঠল বাকিরা। লজ্জায় মিইয়ে উঠে শেহরীনা।
‘এক্সকিউজ মি আমরা কী বসতে পারি!’
শেহরীনার চোখজোড়া শীতল হয়ে গেল। তবুও মনের আড়ষ্টতা লুকিয়ে স্থান করে দিলো। আহ্লাদী কণ্ঠে তাদের বসার অনুরোধে বলে,
‘আরে বসো বসো তনুদি। কায়েসাম ভাইয়া ও কী এসেছেন!’
হ্যাঁ তনুদি আর কায়েসাম এর বিয়ে হয়েছে দুমাস হলো। সারোয়ার এর কষ্টের দিনক্ষণে শেহরীনা বাহ্যিক খবর রাখেনি। তবে একপল শুনে ছিল তনুদির সঙ্গে বিয়ে হয়েছে কায়েসাম ভাইয়ার।
কায়েসাম ভাইয়া এগিয়ে আসল। মানুষটা এমনিতে সুদর্শন ছিল বিয়ের পর তার চেহারায় আমল পরিবর্তন এসেছে। কায়েসাম জানত না শেহরীনা এখানে থাকবে। তার হাত-পা পুনরায় অচল হয়ে পড়তে লাগল। তবে তার নজর পড়ে তনুদির উপর। মেয়েটার আকুল চাহনি দেখে কায়েসাম চোখের মধ্যে চশমা এঁটে নেয়। মুচকি হেসে তনুদির হাত ধরে তার সঙ্গে বসে যায়। শেহরীনা চমৎকার হেসে তাদের ‘অভিনন্দন’ জানায়। কায়েসাম মুখ ফুটে টু শব্দ অব্দি করল না। ফোন নিয়ে বসে একধ্যানে টিপতে লাগল।
তনুদি নিজ থেকে কথা জারি রাখে।
‘শেহরীনা বিয়ের দিনক্ষণ কেমন কাটছে!’
‘আলহামদুলিল্লাহ আপু আপনাদের!’
‘আলহামদুলিল্লাহ আমাদের ও।’
‘যাক আপু তোমরা আসলে জম্পেশ খাওয়া দাওয়া চলবে আজ।’
শেহরীনা অপূর্ব হেসে কথাটি আওড়ায়।
কায়েসাম শুনে স্বেচ্ছায় বলে উঠে,
‘আজকে আমি সবাইকে খাওয়াব। আমার পক্ষ থেকে ট্রিট। সো মিসেস শেহরীনা সারোয়ার সিদ্দিক। আপনার স্বামী কৈ উনাকে দেখছি না ব্যাপার কী! তবে বিয়ের পর বউয়ের উপর থেকে ভালোবাসা উবে গেল।’
শেহরীনার মুখখানা মলিন হয়ে গেল। যার কারণে কায়েসাম ও হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। তার মোটেও তিক্ত করে বলতে ইচ্ছে করেনি। তবে তার ভেতরকার অগ্নি তাকে জ্বালিয়ে দিচ্ছিল। বিধেয় সে না বলেও বসে থাকতে পারছিল না। তনুদি তৎক্ষণাৎ স্বামীর হাত আঁকড়ে ধরল। আমতা আমতা করে হেসে শেহরীনা কে বলে,
‘আরে ধুর ওর কথা ধরো না তো। ওই এমনি মজা করে।’
হঠাৎ তাদের চোখের পলকে কয়েকজন স্টাফ এসে খাবার পরিবেশন করে। এই দেখে তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। এত খাবার তারা অর্ডার করেনি। বরঞ্চ মেনু দেখার পূর্বেই খাবার অর্ডার হলো কেমনে! সবার অবাক কর মুহুর্ত কাটল ফারদিন এর ফোন কলে। সে ফোন হাতে নিয়ে দেখে, ফোনের স্ক্রিনে আননোন বিদেশি নাম্বার একটা কল এসেছে। ফারদিনের কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ল। ইশিতা উঁকি দিয়ে দেখে কলটা টুস করে রিসিভ করে। স্বয়ং ভিডিও কল এসেছে। কায়েসাম কান স্থির করে শুনে আছে।
‘কেমন আছো ব্রো! নতুন নতুন বিয়ে করবে ভুলে গেলে তো চলবে না।’
‘আরে এত সারোয়ার জিজু। হাই জিজু!’
শেহরীনা চোখ পিটপিট করে মাথাটা উঁচু করে দেখার প্রয়াস করে। ইপশিতা নিজেই ফোনটা ফট করে তার মুখোমুখি ধরায় লজ্জায় সে অন্যদিক তাকায়। সারোয়ার হেসে বলে,
‘আহারে তোমার বান্ধবীর লজ্জার ঠেলায় আমি বসতে শুদ্ধ পারছি না। যাকগে কথায় আসি। বিয়ে হলো আমাদের দাওয়াত ও করতে পারলাম না। তাই আমার পক্ষ থেকে সুদূর বিদেশ হতে ছোটখাটো আয়োজন। সবাই মজা করে খাবে। কেউ যেনো আবার এটা না বলতে পারে সারোয়ার কিছু খাওনি। সে তার বউয়ের প্রতি খুব পসেসিভ।’
কায়েসাম নির্লিপ্ত হয়ে শুনল। সবার বুঝতে বাকি রইল না কথাটা কার উদ্দেশ্যে বলা। ইপশিতার সাথে টুকটাক কথা বলে শেহরীনা কে একপলক দেখিয়ে কল কেটে দেয় সে। গরম সুস্বাদু খাবার দেখে কেউ আর অপেক্ষা করল না। কায়েসাম খাওয়ার মাঝে তনুদি কে খাইয়ে মুখ মুছে দেয়। শেহরীনা অতশত না দেখে খাওয়ায় মন দেয়। যার যার মত খেয়ে বেরিয়ে যায়। ইপশিতার সাথে টুকটাক শপিং করে বাড়ির জন্য বের হলো শেহরীনা। সন্ধ্যা হয়ে গেল একা যাওয়া তার জন্য ঠিক হবে না। তাই ফারদিন বিনা সংকোচে বলে,
‘ধুর আমাদের সঙ্গে যাবি চলে আয়।’
কিন্তু শেহরীনার কাছে তা বোকামি লাগল। কারণ নতুন দম্পতির মাঝে সে তৃতীয় ব্যক্তি হবে দৃষ্টিকটু লাগছে। শেহরীনা জোর করায় ফারদিন আর ইপশিতা বাধ্য নিজেদের মত রিক্সায় উঠে পড়ল।
চলবে….