একমুঠো রোদ্দুর পর্ব-০৯

0
17

#একমুঠো_রোদ্দুর
#পর্বঃ৯
#আদওয়া_ইবশার

অলস দুপুর। রোদের তেজ ম্রিয়মাণ। এরপরও যানজটপূর্ণ শহরতলীর মানুষজন গা চিমটানো গরমে হাঁসফাঁস করছে। তীব্র জলের তৃষ্ণায় পথচারীর বুক চৌচির। কপোল বেয়ে গড়িয়ে পরছে চিকন ঘামের রেখা। নীল সাদার মিশেল আকাশের বুকে প্রজ্জ্বলিত নিরুত্তাপ সূর্যটা লুকোচুরি খেলছে মেঘেদের সাথে। শহরের যান্ত্রিক কোলাহল ছাপিয়ে কতক্ষণ পরপর শোনা যাচ্ছে গুরুম গুরুম সুরে মেঘর ডাক। ধারণা করা যায় অতি সত্বর তৃষ্ণার্ত ধরণীর বুকে আকাশের বুক চিরে শান্তিময় বর্ষণ নেমে আসবে। শীতলতার পরশ বুলাবে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবনে। জীর্ণকায় প্রকৃতি ফিরে পাবে সজীবতা। একে একে তিনটা ক্লাস শেষ করে মূল ভবন পেরিয়ে পার্কিং এরিয়া ধরে সোজা হাঁটা ধরেছে অতসী। গন্তব্য জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। পরনের জামাটা ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে।ভীষণ অসস্থি হচ্ছে এমন অবস্থায় পরে। অসহ্য গরমেও সেই অসস্থি থেকে বাঁচতে গলার ওড়নাটা ভালোভাবে শরীরে পেচিয়ে দ্রুত গতিতে পা চালাচ্ছে। গোল চত্বর পেরিয়ে সোজা পশ্চিম দিকে হেঁটে যেতে যেতে চাতক পাখির ন্যায় আকাশপানে তাকায় অতসী। মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নিকট আকুল আর্জি জানায়, এই মুহূর্তে আকাশের বুক চিরে মেঘ গুলো যেন বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে। অসহ্য গরমে ধুকতে থাকা প্রাণ গুলো একটু স্বস্তি পাক। আকাশ থেকে মুখ ফিরিয়ে সামনে তাকাতেই হঠাৎ পরিচিত এক মুখ দেখে চলন্ত পা জোড়া থমকে যায় অতসীর। তার থেকে একটু দূরেই দিহান একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে শার্টের কলার ঝাকাচ্ছে। চোখ দুটো ঢেকে আছে সানগ্লাসের আড়ালে। এই অসভ্য অফিসারটা এমন টিপটপ ফুলবাবু সেজে ভার্সিটি চত্বরে কী করছে? ভাবতে ভাবতে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে অতসী। না দেখার ভান করে এগিয়ে যায় গ্রন্থাগার ভবনের দিকে। পথিমধ্যেই কারো ডাকে আবারও থাকতে হয় তাকে,

“এই যে ম্যাডাম! আপনি এখানে?”

অনিহা সত্বেও পিছু ফিরে অতসী।দিহানের সাথে ঐদিন দেখা সেই অফিসারটাই তাকে ডেকেছে, যাকে ঐ ফালতু অফিসারটা দিয়েছিল তাদের পৌঁছে দেওয়ার।কী যেন নাম ছিল লোকটার! ওহ হ্যাঁ, মনে পরেছে, ইমরান। মন থেকে লোকটার ডাকে সাড়া দেবার কোনো তাগিদ অনুভব না করেও ভদ্রতার খাতিরে মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে উত্তর দেয় অতসী,

“জ্বী, এটা আমার ভার্সিটি। তাই বোধহয় এখানে আমার থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু আপনি এখানে যে!”

সপ্রতিভ হয়ে ইমরান কিছু বলতে নেয়, তার আগেই দিহান তাদের দিকে আসতে আসতে বলে,

“যেভাবে আমার বলছেন, মনে তো হচ্ছে ভার্সিটি আপনার বাপের সম্পত্তি। আর সেই বাপের একমাত্র আদরের দুলালি হিসেবে এই ভার্সিটির একমাত্র উত্তরসূরি আপনি।”

দেখা হতে না হতেই আবার জ্বালাময়ী কথা শুরু করে দিয়েছে! লোকটার প্রতি রাগ লাগে অতসীর। ইচ্ছে হয় কোনো এক দেয়ালে অভদ্রটার মাথা ঠুকে দিয়ে বলতে, “আরও বলবি এমন গা জ্বালানো কথা?” কিন্তু দূর্ভাগ্য অতসীর। এমন কিছু করার ক্ষমতা তো দূরের কথা, মুখ ফোটে বলতে গেলেও হয়তো দশ-বারোটা মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে চৌদ্দ শিকের ভিতর ভরে দিবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে। বাস্তবে কিছু করা সম্ভব না হলেও কল্পনায় তো অনেক কিছুই করা যায়। এক মুহুর্ত সময় নিয়ে অতসী কল্পনার জগতে বিলীন হয়। দেখতে পায় সামনে দাঁড়ানো জ্বালাময়ী, অভদ্র- অসভ্য অফিসারটার শার্টের কলার ধরে দূরের ঐ মেহগনি গাছটার কাছে টেনে নিয়ে সজোরে আঘাত করছে আর বলছে, আর কখনো লাগতে আসবি আমার সাথে?

“ও ম্যাডাম! কোথায় হারিয়ে গেলেন?”

মুখের সামনে দিহান তুড়ি বাজিয়ে কথাটা বলে উঠতেই হড়বড়িয়ে কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে অতসী।নিজেকে ধাতস্থ করে মুখে গম্ভীরতা এটে অবজ্ঞার সুরে বলে,

“কাজ আছে আমার,আসছি।”

“এতো তাড়া কিসের? বাবু কাঁদবে না কী?”

“বাবু! কার বাবু?”

“কার আবার! আপনার।”

বাবুর কথা শুনে অতসী অবাক। হতভম্ব হয়ে কিছু পল দিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে,

“আমার আবার বাবু আসবে কই থেকে? কী যা তা বলছেন এসব? ফাজলামি পেয়েছেন?”

ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির রেখে টেনে দিহান বলে,

“ফাজলামির কি দেখলেন? কাজকাল তো সবারই বাবু থাকে। তবে আমার মনে হয় একটু মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছে। আপনি বোধহয় বুঝতে পারছেন না আমি কোন বাবুর কথা বলছি। আমি ফিটার খাওয়া বাবুর কথা বলছিনা ম্যাডাম। বলছিলাম বয়ফ্রেন্ড নামক লুতুপুতু বাবুর কথা। মর্ডান জেনারেশনের ছেলে-মেয়েরা তো বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডকে বাবু বলেই ডাকে। আছে না কী আপনার ওমন বাবু?”

শেষের কথা যেন খুবই গোপন, এমন একটা ভাব করে অতসীর মুখের কাছে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে দিহান। তৎক্ষণাৎ তেতে ওঠে অতসী। একেতো অসহ্য গরমে মাথা এমনিতেই আউলে ছিল, এখন আবার এই অসভ্য লোকটার এহেন কথায় সেই আউলা মাথায় ধপ করেই আগুন জ্বলে ওঠে। রাগে কিড়মিড়িয়ে অতসী বলে,

“আপনি যে একটা ভীষণরকম অসহ্য পাবলিক সেটা কী আপনি জানেন? একটা মেয়ের ব্যক্তিগত জীবন টেনে এভাবে কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে?”

অতসীকে আকস্মিক রাগতে দেখে দিহান ভয় পাবার ভান ধরে দু-পা পিছিয়ে আসে। শব্দ করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে মাথা ঝাকিয়ে বলে,

“উচিৎ কথায় বন্ধু বেজার, কথাটা আসলেই সত্য।”

“কিসের উচিৎ কথা? আপনি জানেন আমার বয়ফ্রেন্ড আছে কী নেই? আন্দাজে একটা কিছু বলে দিলেই হলো? সবাইকে কি আপনার মতো সাত ঘাটের পানি খাওয়া মানুষ ভাবেন?”

যে কথাটা জানার জন্য দিহান এতোক্ষন ভিত্তিহীন কথাবার্তা চালিয়ে গেছে, অবশেষে সেটা জানতে পেরে বিশ্ব জয়ের হাসি হাসে। ঠোঁট দুটো প্রসারিত করেই প্রফুল্ল চিত্তে বলে,

“এবারও একটু মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে ম্যাডাম। আমি সাত ঘাটের জল খাওয়া পাবলিক না। আপনার মতোই পিওর সিঙ্গেল।দেহ, যৌবন, ইজ্জত যায় বলেন না কেন, সবটাই যত্ন করে বউয়ের জন্য রেখে দিয়েছে। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আমাকে স্বামী হিসেবে পেয়ে একটুও ঠকবেননা।”

দিহানের শেষোক্ত কথায় ভীষণভাবে চমকায় অতসী। হতভম্ব বদনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে দিহানের দিকে। অতসীর এমন বিহ্বলতা দেখে দিহান পূণরায় ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে বলে,

“আমি এখনো পরপুরুষ ম্যাডাম। এভাবে তাকিয়ে থেকে ইজ্জতে দাগ লাগাবেননা প্লিজ! একবার বিয়েটা হয়ে যাক, এরপর যত খুশী তাকিয়ে থাকবেন। কোনো বাঁধা থাকবেনা।সেই পযর্ন্ত একটু ধৈর্য্য ধরুন।”

অতসীর এই মুহূর্তে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন এই অফিসারটাকে স্রেফ পাগল ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছেনা। মানসিক সমস্যা না থাকলে কোনো স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে এমন স্বস্তা মজা করা সম্ভব, তাও কী না স্বপ্ল পরিচিত এক মেয়ের সাথে? দাঁতে দাঁত চেপে বহুকষ্টে নিজেকে সামলায় অতসী। চাপা ক্ষুব্ধ হয়ে বলে,

“আপনার মতো এমন তার ছেঁড়া পাবলিকের স্ত্রী হবার আগেই প্রয়োজনে কলা গাছে দড়ি বেঁধে ঝুলে যাব। এরপরও এমন পাগলের পাল্লায় পরে নিজেও পাগল হবনা।”

***

ইদানিং দৃষ্টির মন-মেজাজ ভীষণ খিটখিটে হয়ে থাকে। অল্পতেই রেগেমেগে ফায়ার হয়ে থাকে মেয়েটা। ক্ষণেক্ষণে বিষন্নতা এসে ঘিরে ধরে। ইচ্ছে হয় সবকিছু ফেলে, সংসার নামক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে পালিয়ে গিয়ে মুখ লুকাতে মায়ের আঁচলে।এতো বড়ো বাড়িটাতে নিজেকে বড্ড একা মনে হয়।মাঝে মাঝে মনটা এতোটাই অশান্ত হয় ইচ্ছে করে গলা ছেড়ে কাঁদতে। মনে হয় চিৎকার করে কাঁদলে বুঝি মনটা একটু হালকা হতো। কিন্তু মন ভরে কান্নার অধিকারটাও যেন তার নেই। ঠিক কেন, কি কারণে মনটা এমন অস্থির হয় জানা নেই দৃষ্টির। শুধু জানে মনের জ্বরের উত্তপ্ততায় প্রতিনিয়ত পুড়ছে সে। দেহটাও ইদানিং দূর্বল হয়ে নেতিয়ে যাচ্ছে। মনের দুর্বোধ্য অসুখ হলে কী আর দেহ সচল থাকতে পারে? ইদানিং রোদ্রিকটাও বড্ড জ্বালাতন করছে। একটুকুও কথা শুনতে চায়না দুরন্ত ছেলেটা। বিয়ের কথা উঠার পর থেকে অতসী আসছেনা রোদ্রিককে পড়াতে।দৃষ্টি ফোন করে জানতে চেয়েছিলো কেন আসছেনা। উত্তরে অতসী জানিয়েছে ফাইনাল এক্সাম সামনে। এই মুহূর্তে নিজের পড়াশোনায় মন দেওয়াটা তার খুব জরুরি, যার কারণে তার পক্ষে রোদ্রিককে আর পড়ানো সম্ভব না। আগেভাগে কিছু না জানিয়ে এভাবে হুট করে পড়ানো বন্ধ করে দেওয়াই দৃষ্টির ভীষণ রাগ হয়েছিল মেয়েটার প্রতি। মনে হচ্ছিলো পড়ার চাপ এই কথাটা স্রেফ একটা অযুহাত মাত্র।মেয়েটা মূলত তাদের থেকে আড়ালে থাকতে চাইছে। হতে পারে অতসীর দিহানকে পাত্র হিসেবে পছন্দ হয়নি। তাই বলে এভাবে রোদ্রিককে পড়ানো ছেড়ে দিবে? পড়াতে আসলে কী আর কেউ তাকে জোর করে দিহানের সাথে বিয়ে দিয়ে দিতো না কী? সমস্ত কিছু মিলিয়ে দৃষ্টির মনের সাথে মেজাজটাও ঘেটে আছে একদম।

মনমরা হয়ে ছেলেকে পড়াচ্ছে আর শুকনো কাপড় গুলো অলস হাতে ভাজ করছে দৃষ্টি। রোদ্রিক পড়ছে কম ঝিমাচ্ছে বেশি। দিনের বেলায় না ঘুমিয়ে দুষ্টুমি করে বেড়িয়েছে ছেলেটা। এখন রাত নামতেই তার দুই চোখে রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিয়েছে। রোদ্রিক ঘুম জড়ানো স্বরে ইংরেজি ছড়া পড়ছে,

“টুইংকল টুইংকল, লিটল স্টার
হাউ আই ওয়ান্ডার, হোয়াট ইউ আর
আপ অ্যাবাব দ্যা….
“মাম্মা ঘুমাব।”

ছড়ার মাঝেই কাতর সুরে মা’কে ঘুমের কথা বলতে বলতে বইয়ের উপর মাথা রেখে আধো ঘুমে তলিয়ে যায় রোদ্রিক। হাতে থাকা রক্তিমের গেঞ্জিটা পাশে রেখে ছেলের দিকে তাকিয়ে ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে দৃষ্টি। রোদ্রিকের মাথায় হাত বুলিয়ে আস্তে আস্তে ডাকে,

“না খেয়ে ঘুমায়না বাবা। ওঠো, মাম্মা খাইয়ে দিচ্ছি।”

রোদ্রিকের সাড়া নেই কোনো। সে ধীরে ধীরে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে। মাস ছয়েক হবে রোদ্রিক বাবা-মায়ের কাছ ছেড়ে রাতে দাদির সাথে ঘুমানোর অভ্যাস করেছে। অভ্যাসটা মূলত রেহানা বেগমই করিয়েছে। নাতিকে বুকে নিয়ে ঘুমালে রেহানা বেগমের রাতের আঁধারে লুকিয়ে থাকা একাকিত্বটা ঘুচে যায়। এমনিতে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে অভ্যাসগত রোদ্রিক নিজেই দৌড়ে দাদির রুমে চলে যায়। কিন্তু আজ ঘুমের তোড়ে তার দিন-দুনিয়া দেখার সময় নেই। ছেলেকে আলগোছে কোলে তুলে দৃষ্টি বালিশে মাথা রেখে ভালো করে শুইয়ে দিয়ে নিচে চলে যায়। দুধ দিয়ে নরম করে ভাত মাখিয়ে নিয়ে এসে চামচ দিয়ে ঘুমন্ত ছেলেকেই একটু একটু খাওয়াতে থাকে। রোদ্রিকও ঘুমের মাঝেই চুকচুক করে খাচ্ছে। এটা তার ছোট্ট বেলার অভ্যাস।ছেলে ঘুমিয়ে গেলে দৃষ্টি এভাবেই তাকে দুধ দিয়ে নরম করে ভাত মাখিয়ে চামচ দিয়ে খাওয়াতো। এটা নিয়ে রক্তিমের বেশ মতবিরোধ। তার ভাষ্যমতে এভাবে ঘুমের মাঝে খাওয়ালে ছেলের দাঁতে খাবার লেগে থেকে পোকা হবে। আরও অনেক অসুখবিসুখ হতে পারে। কিন্তু দৃষ্টি তার নাকোচে কখনো পাত্তা দেয়নি। তার মতে ছেলের ক্ষিদে নিয়ে ঘুমানোর থেকে এই পদ্ধতিতে তাকে খাইয়ে দেওয়াই ভালো। তাছাড়া সে তো খাওয়ানো শেষে ফিটার দিয়ে পানিও খাইয়ে দেয়। তবে কেন অসুবিধা হবে?

আজও রক্তিম বাড়ি ফিরে ঘুমন্ত ছেলেকে খাওয়াতে দেখে বিরক্ত হয়।মুখে বিরক্তিসূচক শব্দ তুলে শরীর থেকে মুজিব কোর্ট খুলতে খুলতে বলে ওঠে,

“হাজারদিন বারণ করেছি এভাবে ওকে খাওয়াবেনা। তবুও সেই একই কাজ করো।”

জবাব দেয়না দৃষ্টি। এক পলক রক্তিমের দিকে তাকিয়ে ফের ছেলেকে খাওয়ানোই মন দেয়। দৃষ্টির থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে রুক্ষ মেজাজে রক্তিম ওয়াশরুমে চলে যায়। একেবারে গোসল সেড়ে গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে বের হয়ে সেভাবেই ছেলের কাছে এসে ঘুমন্ত মুখটাতেই আদর দিয়ে মায়ের রুমে দিয়ে আসার জন্য কোলে তুলতে চায়। তৎক্ষণাৎ বাঁধা দেয় দৃষ্টি। ম্লান মুখে বলে,

“থাক আজ এখানে।”

রক্তিম দৃষ্টির ম্লান মুখের দিকে সরল চোখে তাকিয়ে থেকে ছেলেকে সেভাবেই রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। নরম সুরে জানতে চায়,

“মন খারাপ?”

উপর-নিচ, ডানে-বায়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ, না নিরবে দুটোই জানায় দৃষ্টি। কপালে ভাজ ফেলে রক্তিম জানতে চায়,

“মুখ ভার করে আছো কেন? হয়েছে কী?”

“আমি কিছুদিনের জন্য বাড়ি যাব।”

“তো এখন কী বাড়িতে না থেকে জঙ্গলে আছো?”

রক্তিম বুঝেও না বোঝার ভান ধরায় অধৈর্য হয়ে দৃষ্টি পূণরায় বলে,

“আমি ময়মনসিংহ বাবার বাড়ির কথা বলেছি।”

শীতল চোখে কতক্ষণ দৃষ্টির উচাটন মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে রক্তিম শান্ত সুরে জবাব দেয়,

“সামনে ইলেকশন। পরিস্থিতি এখনই বিগড়ে আছে। ময়মনসিংহ দূরের কথা, বাড়ির বাইরেও বের হওয়া যাবেনা এখন।”

চলবে…..