সীমাহীন পর্ব-৬+৭+৮+৯

0
3

সীমাহীন
#Meherika_Ayat (আরাধ্যা)
পর্ব ৬
আরিয়ান
আরাধ্যার রুমে আর গেল না।
থাক আজ অনেক হয়েছে,
মনে মনে কথা টা বলল আরিয়ান।
ফাতেমা বেগম সবাই কে খাওয়ার জন্য ডাকলো।
খাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে যায়।
.
.
.
খুব রাগ করেছে আজ রাজের সাথে। এতো কিসের বিজি রাজ। সারাদিনে একটা ফোন ও দিতে পারলো না?
এ সব ভেবে কাঁদছে রিধি।
.
.
.
আরাধ্যাঃ উফফফ কে আপনি?
এই রুমে কি করতেছেন?
আউউউউউচ।
আরিয়ানঃ আমার রুম,
আমি কি করছি মানে?
আরুঃ আপনার মানে?
6 ফিট লম্বা, ফর্সা গায়ের রঙ,ঠোঁট গুলো হালকা লালছে।
ইসসস একদম হিরো।
ভাবতে থাকলো আরাধ্যা।
এক ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে আসে আরু।
কি ভাবছো আরু?
আরিয়ান বলে।
আপনি কে বলেন তো। আমার নাম কি ভাবে জানেন?
আরে এটা ভাইয়া। তুমি চিনো নি ভাইয়াকে? পিছন থেকে বলে উঠে রেশমী।
আরিয়ান ভাইয়া? অবাক চোখে তাকিয়ে বলে আরাধ্যা।
ফোনের শব্দে ঘোর কাটে আরাধ্যার। সেদিন আরিয়ান তিন বছর পর লন্ডন থেকে ফেরে ছিল।
ছিনতে নি পারে ও আরিয়ানকে।
তিন বছরে কোনো ছবি বা যোগাযোগ করে নি আরিয়ান আরুর সাথে। সাবাই কে বারণ করেছিল যাতে ওর কোন ছবি না দেখায় আরুকে।
যেন সারপ্রাইজ দিতে পারে আরিয়ান ওকে।
সে কথা গুলোই ভাবছিল এতক্ষন ধরে আরাধ্যা।
.
.
.
সকাল হয়ে গেল। নাস্তা সেরে আরাধ্যা আর রিধি কলেজের জন্য বের হচ্ছিল। আর আরিয়ান অফিসের জন্য।
আরিয়ানঃ আসো,
তোমাদেরকে আমি কলেজে ড্রপ করে দেই।
.
.
.
সবাই কলেজের সামনে এসে থামলো। আরাধ্যা ভাবছে আজ আকাশের সাথে কথা বলবে। কিন্তু কই আকাশ? ও তো রোজ কলেজের সামনেই থাকে।
আজ কই গেল?
মনে মনে কথা টা বলল আরাধ্যা।
চলবে……

সীমাহীন
#Meherika_Ayat (আরাধ্যা)
পর্ব ৭
কলেজ শেষ করে বাসায় আসলো আরাধ্যা ও রিধি।
আরধ্যা ভাবছে একমাস ধরে যে ছেলে পাগল হয়ে গেছে কথা বলতে,
কলেজ গেলে যার জ্বালায় শান্তিতে কোথাও বসতে পারতো না। সারাক্ষণ যে চোখের সামনে ঘুর ঘুর করতো।সে কাল হঠাৎ অন্য কলেজে ট্রান্সফার হয়ে গেল কেন?
আজ কলেজে গিয়ে অনেক খুজেছিল আরাধ্যা আকাশ কে। পরে জানতে পারলো। সে নাকি পারিবার সহ অন্য জায়গায় চলে গেছে।
ভেবে ভেবে পাগল হয়ে গেছে আরাধ্যা।
.
.
.
সকাল থেকে রাজ 100+ কল দিল রিধিকে। আর মেসেজের তো হিসেব নেই।
ফোন বেজেই চলেছে রিসিভ করার নাম নেই।
এখন কল দিছে আর সুইচড অফ বলছে। ব্যাপার কি সব ঠিক আছে তো? এমন তো কখনও করে না রিধি।
ভাবছে রাজ। বাসায় যাবে ঠিক করলো রাজ। 5 দিন হল তার বেস্ট ফ্রেন্ড আরিয়ানের সাথেও দেখা না। এখন যাওয়াই দরকার। হুম যাবে রাজ।
.
.
.
এদিকে আরিয়ান ও অফিস থেকে এসেছে।
সাবাই লাঞ্চ শেষ করলো।
.
.
.
বিকালে হঠাৎ গানের শব্দে আরাধ্যার ঘুম ভাংলো।
কে গান গাইছে এভাবে?
রুমে থেকে বেরিয়ে, যে দিক থেকে গানের শব্দ আসছে সে দিকে যেতে লাগলো আরাধ্যা।
আরিয়ানের রুমে দরজার সামনে গিয়ে থামলো আরু।
দেখলো আরিয়ান বারান্দায় বসে গিটার বাজাচ্ছে আর গান করছে।
.
Talab he tu, tu he nasha
Gulam he dil ye tera
Khulke zara jiii lu tujhe
Ajaa meri sanson me aa
Marije ishk ho, kar lee dawaa
Haat rakh de tu dil pe zaraa…
ইসস কি সুন্দর করে গান করে।
এমন যদি আমার একটা বফ থাকতো। মনে মনে ভাবলো আরাধ্যা।
এই যে মিস?
কি করছেন এখানে?
গান শুনতে ইচ্ছে হলে রুমে এসে বসতেন। বাইরে কষ্ট করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
আরিয়ান কথা গুলো বলে হালকা করে একটা ধাক্কা দিল আরুকে।
কি ভাবছিলাম এতক্ষণ আমি? বাস্তবে ফিরে আসে আরু। জোরে কথা টা বলে ফেলে।
তুমি ভাবছ তা তো তুমিই জানো।
আরুর উদ্দেশ্যে কথা টা বলে আরিয়ান।
.
.
.
দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে আরাধ্যা।
ইসস কি করছিলাম আমি?
কি ভাব্বে স্যার আমকে?
হঠাৎ আরাধ্যার ফোন বেজে ওঠে।
চলবে….

সীমাহীন
#Meherika_Ayat (আরাধ্যা)
পর্ব ৮
অচেনা নাম্বার টা কার?
ভাবতে থাকে আরু।
আকাশ নয় তো?
রিসিভ করার আগেই ফোন টা কেটে যায়।
দ্বিতীয় বার রিং হতেই কল রিসিভ করে আরাধ্যা।
কিরে? কি হয়েছে? কল ধরছিস না কেন? আমি মিতু। এটা আমার নিউ নাম্বার।ফোনের ওপাশ থেকে এক ঢোকে কথা গুলো বলে মিতু।
ও আমি তো ভাবছিলাম কে না কে। বলল আরাধ্যা।
.
.
.
কলিংবেলের শব্দ শুনে,
দরজা খুলে দেয় রিধি।
দেখে দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে রাজ।
আর এক মিনিট না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে আসে রিধি। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। খুব অভিমান করে আছে রিধিতা আজ। একদম কথা বলবে না রাজের সাথে।
.
আরে রাজ নাকি?
ভেতরে আসো।
রাজের উদ্দেশ্যে কথা টা বলেন ফাতেমা বেগম।
সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকে রাজ।
ফাতেমা বেগমঃআরিয়ানাকে ডেকে দিব নাকি?
রাজঃ না তার দরকার নেই। আমিই যাচ্ছি ওর রুমে।
.
রাজ আর রিধির ভালোবাসার কথা বাসায় সবাই জানে। কিন্তু তা রিধি কে বুঝতে দিতে বারণ করেছে আরিয়ান।
রিধি জানে যে শুধু রেশমী আর আরাধ্যা জানে ওদের কথা।
.
আসবো?
আরে রাজ নাকি? আমার রুমে আসতে তোর আবার অনুমতি লাগে নাকি শালা।
বলল আরিয়ান।
রাজঃ কে শালা? আমি নাকি তুই? তোর বোন মনে হয় রাগ করছে। কি যে করি? এতোওওও বার কল দিলাম রিসিভই করে না।
আরিয়ানঃ আমার বোন রাগ করছে,
কি ভাবে রাগ ভাংগাবি তাও আমাকে বলে দিতে হবে? বোন দিছি যে হয় নি?
রাজঃ আরেহ তা নয়।
আরিয়ানঃ তাহলে আর কি?
যা রিধির সাথে কথা বলে আয়।
রাজঃ হুম, যাচ্ছি।
.
.
.
তখন যে কথা টা জোরেই বলে ফেললাম। স্যার শুনেনি তো।
আমার যে কি হয় মাঝে মাঝে। আসোলে স্যার কে কি আমার ভালো লাগে?
আমি কি স্যার ভালোবাসি…..?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকে আরু।
.

সেদিন শাড়ি পরেছিল আরাধ্যা। কালো শাড়ি,
সাথে লাল লিপ্পি, লাল কাচের চুড়ি।
বাসায় কেউ নেই। কাকে জিজ্ঞেস করবো আমাকে কেমন লাগছে? মনে মনে বলল আরাধ্যা। আরিয়ান ভাইয়া তো আছেই।
ওনাকেই জিজ্ঞেস করি।
আরুঃ আমাকে কেমন লাগছে?
আরাধ্যার কথায় পিছনে ফিরে আরিয়ান। শাড়ি, চুড়ি, খোলা চুল।
উফফফফফ মেয়ে টা কি আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না।
আরুঃ চুপ কেন?
আরাধ্যার কথায় ঘোর কাটে আরিয়ানের।
আরিয়ানঃ তোমাকে শেওড়া গাছের পেত্নীর মতো লাগছে।
আরাধ্যাঃ কিইইইইহহহহহ😡😡😡😡😡😡😡
এইতো দৌড়ানি দেয় আরিয়ানাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে পা পসকে পড়ে যায় আরিয়ান আরাধ্যার উপর।
চলবে…….

সীমাহীন
#Meherika_Ayat (আরাধ্যা)
পর্ব ৯
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ানার আলতো করে আরাধ্যার মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিল। আস্তে আস্তে আরাধ্যার ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেল নিয়ে গেল নিজের ঠোঁট গুলো। আরাধ্যা ও যেন চাইছিল এমন কিছু হোক,
শক্ত করে জোড়িয়ে ধরলো আরিয়ানাকে। এতো টা কাছে চলে এলো দুজন দুজনের যে একে অপরের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। ঘোরের মধ্যে আছে দুজনেই। ঠোঁট গুলো এক সাথে হবে, ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠল আরিয়ানের৷ আরাধ্যাকে ছেড়ে উঠে গেল আরিয়ান,
কি করছিলাম আমি?
এভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অপবিত্র করছিলম? ছি ছি ছি। নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে আমার। মনে মনে বলল আরিয়ান।
আরাধ্যা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
অতীতের কথা আজকাল বেশি মনে পড়ছে আরাধ্যার।
আমিই হয়তো ভাবি শুধু স্যারকে নিয়ে। স্যার কী আদো ভাবে আমার কথা?
আমি স্যারের যোগ্যই নই,
উনি কোথায় লন্ডন থেকে পড়াশোনা করে এলেন,
আর আমি কি বা করলাম?
মাত্র ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। নিজে নিজেকে বলতে থাকে আরাধ্যা।
.
.
.
রিধিতার রুমের সামনে এসে নক করলো রাজ।
রিধু দরজা খুলবে না? রাগ করছে আমার পাখিটা?
আদর লাগবে? আসো আদর করবো। রিধির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বলছে রাজ।
পাশে দিয়ে যাচ্ছিল রেশমী।
একটু আস্তে দেবর জী।
আমরাও মিস করি কাউকে।
দেখলে তো সবাই শুনছে।
প্লিজ দরজা টা খোলো না পাখি।
না খুলবো না যাও তুমি।
কোনো কথা নাই আমার তোমার সাথে। রাজের উদ্দেশ্যে বলল রিধি।
সরি তো পাখি। ভুল হই গেছে, বলল রাজ।
রিধি দরজা খুলে বারান্দায় চলে গেল।
রাজ রুমে ডুকে দরজা টা বন্ধ করে দিল। আস্তে আস্তে রিধির কাছে গিয়ে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আর ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে বলতে লাগলো বুঝছি তো আমার পাখিটার আদর লাগবে।
কিচ্ছু লাগবে না বলেই রিধি ঘুরে রাজকে জড়িয়ে ধরে। তুমি বোঝোনা ভালোবাসি তোমাকে?
রাজের উদ্দেশ্যে বলল রিধি।
.
.
.
আরে রিধি দরজা খোল কথা আছে তোর সাথে। রিধির দরজার সামনে এসে কথা টা বলল আরাধ্যা। ওই কি হইছে?
আরে ওদেরকে একটু একা থাকতে দাও তো। আরিয়ান এসে বলল আরাধ্যাকে। ওদেরকে মানে? বলল আরাধ্যা।
রাজ আসছে, রিধির রুমে আছে,
ওওওও তাই বলেন।
আরিয়ানঃ হুম চলো।
আরাধ্যাঃ হুম।
.
.
.
ফাতেমা বেগম সাবাইকে খেতে ডাকলেন। রাজও বসলো সবার সাথে।
খাওয়ার পর্ব শেষ হলে,
রাজ বলল তাহলে এবার আমি উঠি? আজ থাক না এখানে বলে উঠলো আরিয়ানার। না থাক আরেক দিন বলল রাজ।
আচ্ছা।
.
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে আরাধ্যা তো অবাক।
চলবে…..