সীমাহীন পর্ব-১৩+১৪+১৫+১৬

0
3

সীমাহীন
#Meherika_Ayat (আরাধ্যা)
পর্ব ১৩
আরিয়ান কল টা রিসিভ করতেই,
ওপাশ থেকে বলে উঠলো কেমন আছো?
নিশ্চয়ই আমাকে চিনতে পারছো না?
আমি মাহিন। পাশের বিল্ডিংয়ে থাকি। প্রায় তোমাকে কলেজ থেকে আসা যাওয়া করতে দেখি।
সেদিন তোমাকে খোলা চুলে দেখে পাগল হয়ে গেছিলাম।
তারপর তোমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে সব জানতে পারলাম।
আর আজ তোমাকে বৃষ্টি ভেজা শাড়িতে যেন অপ্সরীর চেয়ে সুন্দরী লাগছিল।
আমি আর থাকতে পারিনি৷
তাই বিকেলে মিথিলাকে পাঠিয়ে কোনো ভাবে তোমার ফোন নাম্বার জোগাড় করেছি।
মিথিলা আমার ছোট বোন।
শুন আরু,
আমি অন্যান্য ছেলেদের মতো তোমার সাথে ফেবু চ্যাটিং এসব করতে পারবো না।
আমার ক্লিয়ার কথা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আর তুমি বললে কালই
আরিয়ান চৌধুরির বাসায় আমি আমার মাকে পাঠাবো।
তুমি কি চাও বলো?
.সবার আগে গল্প পড়তে আমাদের নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজের সাথেই থাকুন
এতোক্ষণ আরিয়ান চুপ করে সব শুনলো ফোনের এপাশ থেকে।
আরিয়ানের মাথায় তো রক্ত চড়ে আছে। যেন সব দোষ আরাধ্যার। ফোন টা কেটে সোজা আরাধ্যার রুমে চলে গেল আরিয়ান।
দরজা টা লক করে দিল।
.
আরাধ্যা অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে আরিয়ানের। এসির ভেতরে ও অনবরত ঘামছে আরিয়ান।
আরাধ্যা বেশ বুঝতে পেরেছে আরিয়ান খুব রেগে আছে। এবার আরাধ্যা ভয় পাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ আরিয়ান আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে ছিল।
তারপর আরাধ্যার কাছে গিয়ে এক চড় দিল আরাধ্যা কে। এতো জোরে চড় দিল যে আরাধ্যা ছিটকে গিয়ে ফ্লোরে পড়লো।
আরিয়ানঃ তোর খুব ভালো লাগে না ছেলেদেরকে শরীর দেখাতে? আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল তোর চরিত্র এমনই।
যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে থাকিস,
কিছু বলি না বলে ভাবছিস তুই স্বাধীন? আমার বাড়িতে থেকে আমার কথা অমান্য করিস তুই?
যাকে তাকে তুই ফোন নাম্বার দিস?
এগুলো করার হলে আমার ঘরে থাকিস কেন?
যা না পতিতালয়ে।
আজ থেকে তুই এক পাও ঘরের বাইরে রাখবি না।
পড়ালেখা সব অফ।
তোর ফোন আমার কাছে থাকবে বিয়ে পর্যন্ত।
এসব বলেই দরজা টা খুলে বের হলে গেল আরিয়ান।
.
.
.
ফাতেমা বেগম ভাবছেন,
মেয়ে টা কতো ভালো। ছয় বছর এবাড়িতে আছে৷ মা বাবা মরা যাওয়ার পর আরাধ্যার দাদার বাড়ি নানার বাড়ির কেউ তার খবরও নেয়নি।
অলক্ষী বলে অপমান করেছিল আরাধ্যাকে।
কে বলেছে মেয়ে টা অলক্ষী? কতো টা লক্ষী মেয়ে তা আর কেউ না বুঝতে পারলে এই বাসার মানুষ গুলো ঠিক বুঝে।
কিন্তু কতো জনের কতো কথা আরাধ্যাকে নিয়ে।
যতো তারাতাড়ি ছেলের বউ করে আনা যায় ততই ভালো।
.
.
.
না আর নয়। কালই বিয়ে করবো আরাধ্যাকে। তারপর সে আমার। কেউ আর কিচ্ছু করতে পারবে না।
এক্ষুনি সবার সাথে কথা বলতে হবে। বলেই ড্রইংরুমের দিকে নামলো আরিয়ান।
.
.
.
সবাইকে ডাকলো আরিয়ান।
তোমাদের সবাইকে একটা কথা বলার ছিল।
কী বলবি বল। আমারও সবাইকে একটা কথা বলার আছে। আরিয়ানের উদ্দেশ্যে কথা টা বলেন ফাতেমা বেগম।
আরিয়ানঃ আমি আরাধ্যাকে পছন্দ করি,
তা তোমরা নিশ্চই বুঝতে পারেছো এতো দিনে?
আমি ওকে বিয়ে করতে চাই কালই।
রিধিঃ তোর বোন তো জানতো তুই ওকে ভালোবাসিস। কিন্তু কালকেই বিয়ে? কতো স্বপ্ন আছে তোর বিয়ে নিয়ে জানিস ভাইয়া?
আরিয়ানঃতো,
ধরে রাখছে কে? যা ইচ্ছে করবি।
রিধিঃকিন্ত এতো তারাতাড়ি সব হবে কেমনে?
বিয়ের শপিং করতেই তো এক সাপ্তাহ লাগবে।
রেশমিঃ এতো তাড়ার কি আছে ভাইয়া? একমাস পর বিয়ে করলেই তো হয়।
তা ছাড়া আরু তো কিছুই জানে না।
আরিয়ানঃএক মাস ওয়েট করতে পারবো না।
১৫ দিনের মধ্যে যা করার কর তোরা। ১৫ দিন পর বিয়ে হবে এটাই ফাইনাল।
.

ফাতেমা বেগমঃ আমিও তোদের বিয়ের কথাই বলতে চাইছিলাম৷ যাক ভালোই হলো।
কিন্তু আরুকে একবার জিজ্ঞেস করলে ভালো হবে। ও বিয়েতে রাজি কি না।
আরিয়ানঃ বিয়েতে রাজি থাক আর না থাক,
বিয়ে তো আমি আরাধ্যাকেই করবো।
এমনেই ওকে বলতে পারো তোমরা।
আমি যাচ্ছি আমার রুমে।
যা করার তাড়াতাড়ি করিস,
রেসমী, রিধি।
রেশমীঃ ওকে ভাইয়া।
আমিও যাই রান্না ঘরে কি হচ্ছে দেখে আসি। তোরা আরুকে বলিস।
বলে ফাতেমা বেগম চলে গেলেন ।
.
ভাইয়া কেমন রেগে আছে মনে হয় না রে আপু? রেশমীর উদ্দেশ্যে বলল রিধি।
রেশমীঃ হুম।
আচ্ছা শুন তুই যা আরুর কাছে। ও কি করছে কে জানে?
রিধিঃ ওক্কে৷ বাট আগে রাজকে তো নিউজ টা দিতে হবে।
.
.
.
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে আরাধ্যা,
গালে পাঁচ আংগুলের দাগ বসে গেছে। কেমন বাজে ব্যবহার করলো স্যার আজ। কি দোষ করেছি আমি? মিথিলাকে ফোন নাম্বার দিয়েছি তাতে কি এমন ভুল হয়েছে? এ বাসায় থাকার খোটাও দিল? ছি ছি 😭😭😭😭
আর এই লোককে আমি ভালোবেসেছি? না আজ থেকে শুধু ঘৃনা করি আমি এই লোককে। এই লোকটা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নয়৷
আর এই বাসায় তো আমি এক মুহূর্তও থাকবো না।
শুধু রাতটা পোহালেই আমার রাস্তাই আমি।
কিন্তু কিসের বিয়ের কথা বলল স্যার? আমাকে তাড়াতে বিয়েও ঠিক করে ফেলল আমার? এসব ভাবছে আর কাঁদছে আরাধ্যা।
চলবে……

সীমাহীন
#Meherika_Ayat (আরাধ্যা)
পর্ব ১৪
আরু দরজা খোল তোর জন্য একটা গুড নিউজ আছে।
আরাধ্যা দরজা খুলে দিল।
রিধিঃ কি ভাবী করছিলেন?
(চোখ মেরে😜)
আরাধ্যাঃ কিহহহহহ?
কিসের ভাবী? কই ভাবী?
রিধিঃ ওলে পনেরো দিন পর তুই তো আমার ভাবীই হবি।
আরাধ্যাঃ কি বলছিস এগুলো?
রিধিঃ শুন তাহলে।
তোর বাবা মা আর আমার আব্বু আম্মু তোর আর ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করছিলেন। কিন্তু এখন তো ওরা….
থাক ওসব কথা।
ভাইয়া একটু আগেই বলল ১৫ দিন পর তোকে বিয়ে করবে। আসলে ভাইয়া অনেক আগ থেকেই তোকে ভালোবাসে। তুই বলতি না তোকে এতো শাসন করে কেন? কারণ তোকে অনেক ভালোবাসে তাই৷
আর তোকে কখনও বলেনি, তুই তো পিচ্চি কিচ্ছু বুঝিস না। ভাবছিল তুই নিজেই বুঝে নিবি।
আরাধ্যাঃ ও তাই? ভালোবাসা? বিয়ে?
তাও তোর ভাইয়ার সাথে আমার? কখনোই পসিবল না।
রিধিঃ মানে কি আরু?
এমন কেন বলছিস?
আমার ভাইয়ার কোন সাইড তোর কাছে খারাপ লাগে বল?
কতো টা পাগল তোর জন্য ভাইয়া জানিস তুই?
আরাধ্যাঃ তুই ভুল ভাবছিস?
তোদের কোনো দোষ নেই আসলে। এসব ওই লোকটার চাল। তোরা এখনও বুঝতে পারিস নি যে ওই লোকটার গফ আছে। এসব করছে যাতে আমি নিযে এ বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই৷ আমি তাই করবো। তোর ভাইয়া কে বলে দিস এতো নাটক করতে হবে না তার।
রিধিঃ আরু তুই আমাদের কথা একবারও ভাবলি না?
সবাই তোকে কতো টা ভালোবাসে। আর ভাইয়ার গফকে বল আমাকে? আমি দেখবো সব।
আরাধ্যাঃ সরি রিধি।
আমি জানি সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। আর তুই আমার বেস্টু। খুব মিস করবো তোদের। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই।
আর আমি জানি না কে স্যারের গফ। তবে ওর দিন সকালে দেখিস নি স্যার কোথা থেকে এসেছিল।
ওনার ঠোঁট ঘাড়ে নখের আঁচড় এসব দেখলে তো যে কেউ বুঝবে রাতে উনি কোথায় ছিল। তুই একটু ভেবে দেখ রিধি।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রিধি বলল,
হুম হয়তো। তাহলে ভাইয়া তোকে কেন বিয়ে করতে বলবে?
আরু তোর গালে কি হইছে?
আরাধ্যাঃ ও কিছু না।
রিধিঃ মিথ্যা বলছিস?
ভাইয়া তোকে আবার মারছে তাই না?
আমি জিজ্ঞেস করবো যাচ্ছি।
আরাধ্যাঃ রিধি প্লিজ,
আর অশান্তি করিস না বাসায়, থাক না এসব৷
রিধি চলে গেল।
.
.
.
কেন যে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারি না?
কি করবো এখন? আরু কি আদো রাজি হবে বিয়ের জন্য? কি ভাবে মানাবো ওকে? ইসসস ওর তো কোন দোষই ছিল না। বেশি ভালোবাসি ওকে। কেন যে বোঝে না মেয়ে টা?
সব কিছুর মূল ওই মাহিন।
খুন করতে ইচ্ছে করছে৷
নিজে নিজে কথা গুলো বলছে আরিয়ান৷
.
.
.
রিধি রাজকে কল দিয়ে সব জানালো।
রাজঃ তোমরা আরিয়ানাকে চিনতে ভুল করছো। ওর কোনো গফই নেই। থাকলে সবার আগে আমি জানতাম। আর ওই রাতের ব্যাপারে আমি সব জানি৷
রিধিঃ কি জানো?
বলো না প্লিজ।
রাজঃ তুমি এখনো ছোট,
ওসব তোমার না জানলেও চলবে। তবে যা হয়েছে আরিয়ান আর আরাধ্যার মাঝেই হয়েছে। সেটা আরু নিজেও জানে না।
রিধিঃ বলবে না তো?
(রেগে গিয়ে 😡)
রাজঃ দূর পাগলি তোমার ভাইয়া কি করছে ভাবীর সাথে ওটা তোমার জানা টা কি ঠিক হবে?
রিধিঃ হুম।
কিন্তু আরুকে কে বোঝাবে?
রাজঃ ওটা আরিয়ানের উপর ছেড়ে দাও।
আসো পাখি আমরাও
একটু রোমান্স করি।
রিধিঃ আমি আছি টেনশনে আর তোমার রোমান্স করতে মন চায়।
.
.
.
স্যার আমাকে বিয়ে করতে কেন চাচ্ছে? কি চায় আসলে স্যার? ভালোবাসে মানে সত্যিই কি আমাকে?
না আমি আর দুর্বল হবো না ওই লোকটার প্রতি। অনেক সহ্য করেছি আর না। কাল সকালেই চলে যাব এখান থেকে।
ভাবছে আরাধ্যা।
.
.
.
সব শুনে আরিয়ানের মাথা গরম হয়ে আছে। রাজ ওকে সব জানিয়েছে।
আরিয়ান ভাবছে,
না আর মাথা গরম করবে না সে। আরাধ্যাকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে।
কিন্তু কি ভাবে বললে?
আর আরাধ্যাও কি বিশ্বাস করবে তাকে?
রাজকে একটা কল দেওয়া যাক। ও কোন আইডিয়া দিতে পারে। লক খুলতেই আরাধ্যার ছবি স্ক্রিনে ভেসে আছে। সেদিন পার্টিতে যে গাউন টা দিয়েছে ওটা পরা ছবি টা।
ও সেদিনের পিকচার গুলো তো দেখাই হলো না। দেখি সেখানে কিছু পাওয়া যায় কি না। গ্যালারি তে গিয়ে একদম ফাস্টেই ভিডিও দেখতে পেল।
অন করে যা দেখলো আরিয়ান তো খুশিতে পাগল প্রায়। সে যা চেয়েছে তাই পেয়ে গেছে।
ভিডিওতে প্রথমে কিছুক্ষণ আরুর ফেইস দেখা গেলেও পরে শুধু কথা গুলো শুনা যাচ্ছে। আর মাঝে মাঝে ওদের রোমান্স গুলো দেখা যাচ্ছে। আর ভিডিও টা যে আরু করছে তা তো একদম ক্লিয়ার।
উফফফ আরুউউউউ বেবি তুমি নিজেই নিজেকে আমার কাছে নিয়ে এলে।
বলল আরিয়ান।
.
.
আরাধ্যা সব গুছিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কোথায় যাবে ভেবে পাচ্ছে না।
বিকেল হয়ে গেছে কি করবো কই যাবো আমি?
সকালেই চলে যাওয়ার কথা আর এখনও আছি এখানে? মিতুকে কল দি।
ভাবছে আরাধ্যা।
.
.
মাত্র অফিস থেকে এসেছে আরিয়ান। সোফায় বসে আছে সে। ভাবছে এখনি আরুর সাথে কথা বলবে।
কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে যা দেখলো আরিয়ান মাথায় রক্ত চড়ে গেছে।
চলবে………

সীমাহীন
#Meherika_Ayat (আরাধ্যা)
পর্ব 15+16
আরিয়ান দেখলো দরজার সামনে মাহিন দাঁড়িয়ে।
হাতে একগুচ্ছ গোলাপ।
আরিয়ান রাগে লাল হয়ে আছে, আর ঘামছে।
আরিয়ানঃ কি চাই?
মাহিনের উদ্দেশ্যে।
মাহিনঃ আমি আরুর সাথে দেখা করতে এসেছি।
প্লিজ ওকে একটু ডেকে দিতে পারবে?
আরিয়ানঃকেন? কি দরকার ওর সাথে?
মাহিনঃ আসলে কালকে আমি ওকে কল করছিলাম,
ও রিসিভ করছিলো। আমার কথাগুলো ও শুনছিল হয়তো। তারপর কল টা কেটে দিল।
এরপর আমি এক হাজারের উপরে কল দিছি না রিসিভ করছে। আর এখন ফোন অফ।
আরিয়ানঃ আচ্ছা।
ওর হয়তো তোমার কথা ভালো লাগেনি।
মাহিনঃ ওকে একবার ডাকো। আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই প্লিজ।
আরিয়ানঃ ও আসবে না।
.
কি দরকার আমার সাথে?
পিছন থেকে বলে উঠলো আরাধ্যা।
আরাধ্যা উপরে যাও। তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
আরাধ্যার উদ্দেশ্যে বলল আরিয়ান।
মাহিনঃ আরু প্লিজ পাঁচ মিনিট শুধু,
একটু কথা বলবো৷
আরাধ্যা এগিয়ে গিয়ে বলল ভেতরে আসেন।
কি বলবেন বলেন।
(মাহিনের উদ্দেশ্যে)।
আরিয়ান তো রাগে জ্বলে
যাচ্ছে। যা করার করে নাও আরু বেবি,
কয়দিন পর তো তুমি শুধু আমারি। মনে মনে বলল আরিয়ান।
.
মাহিনঃ আরু তোমাকে কালকে আমি কল দিছিলাম তুমি রিসিভ করে কথা বললে না। কাল থেকে 1000+ কল দিলাম ধরলে না কেন? আমার কি কোনো ভুল হয়েছে?
আরাধ্যাঃ সরি,
আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। কে আপনি?
মাহিনঃ কালই তো সব বললাম।
আরাধ্যাঃ আবার যদি বুঝিয়ে বলতেন প্লিজ?
মাহিন কালকে থেকে আজ পর্যন্ত সব বলল আরাধ্যাকে।
আরাধ্যা এবার বুঝতে পারলো আরিয়ানের এমন করার আসোল কারণ।
আরিয়ানঃ ওর বিয়ে আলরেডি ঠিক হয়ে গেছে।
আশা করি,
এরপর তোমার আর কোনো কথা থাকতে পারে না।
মাহিনঃ মানে কি আরু?
এসব কি শুনছি আমি?
কার সাথে? কখন? আর কি ভাবে?
আরাধ্যা কিছু বলতে যাবে,
তখনই আরিয়ান বলে উঠলো,
আমার সাথে।
মাহিনঃ আমি আরুকে জিজ্ঞেস করছি। প্লিজ আরু তুমি বল আসলেই কি তোমার বিয়ে?
আরিয়ান রেগে চেচিয়ে উঠে বলল আরাধ্যা তোমাকে আমি রুমে যেতে বলছিল? এখন এখানে কেন? ওর সামনে থাকা দামি ফুলদানি টা ভেংগে ফেললো।
আরাধ্যা ভয়ে কাঁপতে লাগলো। রিধি এসে আরাধ্যাকে রুমে নিয়ে গেল৷
আরিয়ান আসা করি তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করার আগেই তুমি চলে যাবে৷
(মাহিনের উদ্দেশ্যে)
মাহিনঃ আরিয়ান চৌধুরী আজ আমি ঠিকই চলে যাচ্ছি কিন্তু খুব জলদি আবার দেখা হবে,
আর তখন আরু আমার সাথে থাকবে।
গুড বাই।
মাহিন চলে গেল।
.
.
.
আরিয়ান নিজের রুমে বসে আছে। রাগে মাথা টা ফেটে যাচ্ছে ওর। কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না আরিয়ান৷
না এই সময় আরাধ্যার কাছে যাওয়া যাবে না,
রেগে কি করে ফেলে নিজেও বুঝতে পারবে না।
ভাবলো আরিয়ান।
.
.
.
আজ তো দেখলি ভাইয়া তোকে কতো টা ভালোবাসে আরু।
আরাধ্যার উদ্দেশ্যে বলল রিধি।
আরাধ্যাঃ জানি না।
কিন্তু ভালোবাসলে কেউ কারো সাথে এমন করতে পারে না। খুব বেশি অত্যাচার করে আমার উপর তা তো দেখিস নি।
রিধিঃ ওকে,
তুই যা বোঝার বুঝ। কিন্তু বাসা থেকে চলে যাবি না প্লিজ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে এমনিতেই।
রিধি চলে গেল।
.
.
স্যার আমাকে ভালোবাসলে সেদিন রাতে কোথায় ছিল৷ অর্জুন স্যারদের বাসায়?
অসম্ভব,
এটা তো সম্পুর্ণ মিথ্যা কথা। তা আমি বুঝতে পেরেছি।
আর সত্যি হলেও স্যার কে বিয়ে করা মানে, নিজের যমকে ডেকে আনা। যে আমার উপর এখন এতো অত্যাচার করে, না জানি বিয়ের পর কি করবে।
.
দরজায় কেউ নক করলো।
আসবো আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলল আরিয়ান।
আরাধ্যা তখন মাত্র গোসল করে বেরিয়ে এলো। সারাদিন যা দকল গেছে তাই গোসল করে নিল আরাধ্যা। যাতে একটু শান্তিতে ঘুমানো যায়। সবাই শুয়ে পড়েছে।
জেগে আছে শুধু আরাধ্যা আর আরিয়ান৷ আরাধ্যা চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি পরছে। কালো শট কামিজ আর পালাজ্জো পরেছে আরাধ্যা। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। আরিয়ান তাকিয়ে আছে আরাধ্যার দিকে।
আসেন ভয়ে ভয়ে বলল আরাধ্যা।
আরুর কথায় ঘোর কাটে আরিয়ানের।
আরিয়ান রুমে ডুকে দরজা টা লক করে দিল।
আরাধ্যার তো এবার ভয়ে কলিজায় পানি চলে এসেছে। দ দর দরজা কেন লক করলেন স্যার? বলল আরাধ্যা।
চলবে……….

সীমাহীন
#Meherika_Ayat (আরাধ্যা)
পর্ব ১৬
আরিয়ান আরাধ্যার কাছে আসছে,
আরাধ্যা পিছাচ্ছে।
পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে মিশে গেল আরাধ্যা।
আরিয়ান ওর একদম কাছে চলে এসেছে।
আরাধ্যা ভয়ে কাঁপছে,
আরিয়ানঃ তুমি নাকি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?
আরাধ্যাঃ আ..আমি,
আ…আসলে। (তুতলিয়ে)
আরিয়ানঃ তুমি আসলে কি?
আমার গার্লফ্রেন্ড আছে তাই?
সেদিন রাতে আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের কাছে ছিলাম তাই? ( একটু সরে গিয়ে)
আরাধ্যাঃ হুম তাই।
আরিয়ানঃওকে,
তাহলে দেখে নাও আমার গফকে। কতো টা হট সে।
আমি কি করবো বলো? সে ই তো আমাকে….(দুষ্টু হাসি দিয়ে)
আরাধ্যাঃআমি জানতে চাই না,আপনি কার সাথে কি করেছেন। (রেগে গিয়ে)
আরিয়ানঃ না তোমাকে তো জানতেই হবে। বউ হবা তুমি আমার। তোমার এসব জানার পুরো অধিকার রয়েছে। আরে দেখো না,
আমার ঘাড়ে কিন্তু এখনও ওর নখের আঁচড়ের দাগগুলো আছে। ইসসস কেমন লাল হয়ে আছে দেখো। আচ্ছা তোমার নখ দেখি।
আরিয়ান আরাধ্যার হাত ধরে বলল,
ও মাই আল্লাহহহহহ
তোমার নখগুলোর মতই ওর নখ। এতো বড় বড় আর ধারালো। এই তুমি শাকচুন্নি নয়তো?
আরাধ্যাঃমানে কি? কি বলতে চান আপনি? ওই দিন আমি আপনার ঘাড়ে আঁচড় কাটছি?
আরিয়ানঃ তুমি তো দেখি অনেক ইন্টেলিজেন্ট।
হতে ও তো পারে যে তুমি ওইদিন……..
আরাধ্যাঃ কি করে ভাবলেন,
আমাকে নিয়ে এসব বাজে কথা? 👹👹👹👹👹👹
আরিয়ানঃ এটা যদি সত্যি হয়? তাহলে কি করবে তুমি?
আরাধ্যাঃ এটা কখনো সত্যিই হবার নয়।
আরিয়ানঃ ওহ রিয়েলি?
দেখো তাহলে,
বলেই ভিডিও টা অন করে দিল।
নিজের কথা গুলো কানে আসতেই, আরিয়ানের হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে ভিডিও টা দেখতে থাকলো আরাধ্যা।
সে তো একদম নির্বাক,
কি বলবে বুঝতেই পারছে না।
আরিয়ানঃ হেই বেবি,
চুপ কেন বউ সোনা? শক লাগছে? আসলে আমি নিজেও ভাবতে পারিনি,
আমার পিচ্ছি বউ টা এত্তোওওওও রোমান্টিক + হট। তাই তো বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছি।
আরাধ্যাঃদেখুন স্যার,
আমি বিয়ে টা করতে চাই না। সেদিন যা করছি নেশার ঘোরে।
আরিয়ানঃ তোমাকে আমি ভালোবাসি আরাধ্যা।
সীমাহীন ভালোবাসি।
(আরাধ্যার হাত দুটো ধরে)
দুষ্টু লোকের মিষ্টি কথা গলতে নেই,
আমি এই লোকটার কথা গলবো না। বিয়ের পর যে আমার উপর কি অত্যাচার করবে, তা আমি হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছি।
মনে মনে বলল আরাধ্যা।
আরিয়ানঃ কি ভাবছো?
আরাধ্যাঃ আমি বিয়ে করবো না।
আরিয়ানঃ তুই চাস আর না চাস এই বিয়ে তো হবেই।
মনে রাখিস তুই শুধু আমার।
আর যদি তুই এই বিয়েতে অমত করিস তাহলে এই ভিডিও টা……(রেগে গিয়ে)
বুঝতেই পারছো ।
দেখো আমি তোমার সাথে রাগ করতে চাই না আরু,
কিন্তু তুমি যদি বাড়াবাড়ি করো,
তাহলে আমি কিন্তু খুব খারাপ হব।
গুড নাইট,
কাল কথা হবে বলে আরিয়ান চলে গেল।
.
আরাধ্যা ভাবছে কি জন্য বিয়ে করতে চায় স্যার আমাকে? ভালোবাসলে দিন রাত আমার সাথে এমন করতো না।
কিন্তু কি করবো? এখন বিয়ের জন্য না করলেও আমার বিপদ। না জানি ওই ভিডিও টা দিয়ে কি কি করবে। কি যে ভুল করেছিলাম সেদিন।
.
.
.
আরু কেন এমন করছে? সে তো আমাকে ভালোবাসতো, তাহলে কি হয়েছে ওর এখন? নাকি ওই মাহিনের জন্য এরকম করছে। যাই করুক,
এখন তো আর বিয়ের জন্য না করতে পারবে না।
আর একবার বিয়ে টা হয়ে গেলেই, সব ঠিক হয়ে যাবে।
উফফফ ১ টা বেজে গেছে
এবার একটু ঘুমাতে হবে।
ভাবছে আরিয়ান।
.
সকালে সবাই নাস্তার টেবিলে নাস্তা করছিল।
আর ১৪ দিন আছে,
সব ব্যবস্থা করতে হবে তো।
কারো কোনো প্রব্লেম নেই তো আর?
বলল আরিয়ান।
রিধিঃ আমি তো একদম রেডি। আমি কিন্তু অনেক শপিং করবো ভাইয়া।
আমি মনে হয় যে করবো না। রিধির উদ্দেশ্যে বলল রেশমি।
রিধিঃ তুই উদয় ভাইয়াকে
বল,
রেশমীঃ হুম উদয় তো অস্ট্রেলিয়া গেছে একটা কাজে।
রিধিঃ মানে?
উদয় ভাইয়া বিয়েতে থাকবে না?
আরিয়ানঃথাকবে না মানে আলবাত থাকবে।
আমি উদয়ের সাথে কথা বলেছি ও ৫ দিনের মধ্যেই দেশে আসছে।
উদয় আমার ভাই + বন্ধু বেস্ট ফ্রেন্ড, রাজের ভাই,
রেশমীর হাসবেন্ড। কতো গভীর সম্পর্ক ওদের ফ্যামিলির সাথে আমাদের ভাবতে পারিস? আর যা শপিং করবে সবাই আমার টাকা দিয়ে হবে।
রেশমীঃ হুম ভাইয়া।
রিধিঃ উফফফ কি যে মজা হবে বিয়েতে,
আমার তো নাচতে ইচ্ছে করছে।
আরিয়ানঃ হুম নেচে নে ভালো করে,
আমার বিয়ের পরই তোকে এ বাসা থেকে বিদায় করবো। ছেলে ঠিক করে রেখেছি,
খুব ভালো। দেখতে শুনতে,
পড়াশোনা সব দিকে বেস্ট।
রিধিঃ মানে? কিন্তু আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি।
(মন খারাপ করে)
আরিয়ানঃ তোকে জিজ্ঞেস করে তোর বিয়ে দিব নাকি?
রিধিঃ কিন্তু আপুর সময় তো।
রেশমীঃ ছাড় না ওসব,
আমাদের ভাবী তো দেখি একদম চুপ হয়ে আছে?
কি ভাবী? এখন থেকে ভাইয়াকে নিয়ে ভাবতে শুরু করছেন নাকি?
থাক মেয়েটা কে আর লজ্জা দিস না। বললেন ফাতেমা বেগম।
.
৭ দিন পর…. সবার আগে গল্প পড়তে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজের সাথেই থাকুন, অন্য পেজে দেখলে ভাববেন চুরি করে পোস্ট করছে।
শপিং করতে বেরিয়েছে,
আরাধ্যা, রিধি, রেশমি,
বড় মলে ঢুকেছে সবাই,
রাজ রিধির সাথে,উদয় এসেছে দুদিন আগে।
সে আর রেশমি এক সাথে ড্রেস দেখছে।
কিছুক্ষণ পর আরিয়ানও আসবে,অফিসের জরুরী মিটিং আছে বলে একসাথে আসতে পারেনি।
আরাধ্যার একটা লেহেঙ্গা খুব পছন্দ হয়েছে গোল্ডেন আর রেড কালারের ও লেহেঙ্গার ওড়না টা মাথায় দিয়ে আয়নায় দেখছে।
পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো তোমাকে দারুন মানাবে এটাতে।
পিছন ফিরে আরাধ্যা চমকে গেল,
আপনি এখানে?
বলে উঠে আরাধ্যা।
চলবে……..