মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-০২

0
27

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#ইশরাত_জাহান
#পর্ব_২
🦋
১৫ বছর পর~~~~

চারপাশে লোকজনের আজ হইহুল্লোড়।বিভিন্ন ধরনের বাজি ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো হচ্ছে পুরো এলাকা জুড়ে।গলিতে গলিতে মানুষ ঢাকঢোল পিটিয়ে মাইকিং করে যাচ্ছে।তাদের খুশির যেনো শেষ নেই।প্রত্যেক বছর এই দিনটি তাদের আনন্দের দিন।হবে নাই বা কেন?আজ যে মিনিস্টার শাহমীর রাজের জন্মদিন।

সরদার বাড়ির বড় ছেলে শাহমীর রাজ।মাহমুদ সরদারের একমাত্র বড় ছেলে।দীর্ঘ পনেরো বছর বিদেশে পড়াশোনা করার পর দেশে এসে রাজনীতিতে যোগ দেয়।মাহমুদ সরদারের স্ত্রী মালিনী ছেলেকে তার নিজের ভাইয়ের সাথে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। শাহমীর রাজের যখন তেরো বছর বয়স তখন সে মামার সাথে চলে যায় লন্ডনে।তখন অবশ্য মায়ার বয়স মাত্র দুই ছিলো।এই জন্য মায়া ও রাজ দুজন দুজনার কেউ কাউকে চিনে না।

রাজের নানাভাই নেতা ছিলেন।সেই গল্পগুলো মামার থেকে শুনে তারও এক আলাদা নেশা লেগে যায়।বিশেষ করে নানাভাইয়ের রাজনীতিতে থাকাকালীন কিছু ছবি দেখে তার কাছে খুব হ্যান্ডসাম লাগে।শুধু কি নানাভাই রাজের বাবা মাহমুদ সরদার নিজেও একজন সৎ রাজনীতিবিদ ছিলেন।সততার সঙ্গে চলতে পছন্দ করেন তিনি।নানাভাইয়ের ও বাবার সততার কথা শুনে রাজেরও ইচ্ছা হয় তাদের মত দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করবে।তার নেতৃত্বে যেনো সফলতা পায় সেই চেষ্টা তার।তাই মন্ত্রী হবার জন্য যা যা করা লাগে সে তাই করতে থাকে।অবশেষে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আসে।পড়াশোনার পাশাপাশি রাজ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিখে আসে।কিভাবে ফাইট করতে হয় নিজেকে ফিট রাখতে হয় ও শত্রুর সাথে কিভাবে মোকাবিলা করতে হয়।

লন্ডনে থাকাকালীন রাজ খবর পেয়েছিলো শাহানা পারভীন ও মায়া এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।রাজের খুব খারাপ লাগে শাহানা পারভীনের জন্য।ছোট মা বলে খুব আদর করতো শাহানা পারভীনকে।এই জন্য মোহন সরদারের উপর আলাদা ক্ষোভ তৈরি হয় রাজের মনে।কিন্তু এটা প্রকাশ করে না।

লন্ডন থেকে এসে নিজের মত করে সবকিছু গোছাতে লাগে রাজ।তারপর নাম দেয় রাজনীতিতে।বাংলাদেশে এসে অনেক খাটাখাটনি করে আজ সে সকলের ভোটের দ্বারা মিনিস্টার হয়েছে। শাহমীর রাজকে সবাই যেমন ভয় পায় ঠিক তেমন ভালোবাসে।

আজ পুরো সরদার পরিবার মিলে মাজারের দিকে যাবে।লোকদের খাওয়ানোর তোড়জোড় শুরু করে।এমনটা হঠাৎ করেই ঠিক করা হয়।সরদার বাড়ির কাছেই এই মাজার আর মাজারের পাশে অনাথ আশ্রম।রাজ বাদে সবাই যায় মাজারে খাবার ও কিছু বস্ত্র নিয়ে।সরদার বাড়ির এটি পুরনো নিয়ম কানুন।কোনো কিছু হলেই মাজারে এসে মানত করা আরো কিছু অন্ধভক্ত তো আছেই।কিন্তু মাহমুদ সরদার এগুলো মানেন না।তার মতে সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে ইসলামিক মন মানসিকতা আসল।কিন্তু বউ ও পরিবারের জন্য তাকেও আসতে হয়।মাহমুদ সরদার ও মিসেস মালিনীর তিন সন্তান। শাহমীর রাজ ও দুই যমজ মেয়ে হিয়া সরদার ও দিয়া সরদার।সন্তানগুলো মন মানসিকতার দিক থেকে মাহমুদ সরদারের মতো হয়েছে।

মোহন সরদার ও মিসেস সোনালীর দুই সন্তান।ছেলে রুদ্র ও মেয়ে মিলি।এরা চারজনেই এক রকম।সৌন্দর্যের প্রতীক নিয়ে পরে থাকা ও নিজেদের দাপট দেখিয়ে চলা।কেউ কারো থেকে কম না।তবে রুদ্র ও মিলি এই মাজারে ইন্টারেস্টেড না।তারা তো সারাদিন ডিজে পার্টি ও ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে ব্যাস্ত থাকে।

মাজারে আসার ইচ্ছেটা মিসেস মালিনীর।মাহমুদ সরদারের মা পীর ভক্ত ছিলেন।তিনিও শশুর শাশুড়ির থেকে এসবের ভক্ত হয়েছিলেন।তারপর তিনি মিসেস মালিনীকে এগুলো সেখান।পর পর এভাবে চলার জন্য তাদের মনে এখন মাজারের প্রতি আলাদা টান এসে গেছে।আগেকার মানুষ এগুলোই বেশি বিশ্বাস করতেন।মোহন সরদার ও মিসেস সোনালী তো পারলে মাজারেই তাদের একটি বাংলো বাড়ি করে রাখবেন।এতটা ভক্ত তারা।এদের ইচ্ছা হয়েছে রাজের জন্মদিনে মাজারে এসে দান করবে ও মানত করবে।জাতে সবাই সুখে শান্তিতে থাকতে পারে।

অবশেষে রাজ বাদে বাড়ির সবাই মিলে হাজির হয় মাজারে।রাজ আছে নিজের কর্মে।মাজারে এসে সবাই দেখতে রাস্তাটি পায় ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো।তার পাশ দিয়ে কিনে বেয়ে বসে আছে কিছু পথশিশু।তাদের সামনে দেওয়া হচ্ছে অন টাইম প্লেট ও গ্লাস।তাদের মুখে ঝুলছে হাসির ঝলক।মাহমুদ সরদার খুশি হন।তিনি মনে করেন রুদ্র এই কাজ করেছে।কিন্তু মোহন সরদার নাক সিটকায় বলে,”হোয়াট ননসেন্স!এগুলো এখানে কেনো?”

আসলে এখানে যেসব পথশিশু তাদের বেশিরভাগ বাচ্চাদের কাপড় চোপড় ছেরা তো ছিলোই সাথে ছিলো গায়ে খাচ কাটা দাগ।শীতকালে ফেটে যাওয়া পায়ের গোড়ালি ও ঠোঁট। নাক দিয়ে বের হওয়া সর্দি মুছতে থাকে নিজস্ব ছোট কাপড় দিয়ে।অনেকের হাত কাটা আবার অনেকের হাত নেই পা দিয়ে প্লেট নাড়াচাড়া করছে।মাহমুদ সরদার মিসেস মালিনী ও হিয়া দিয়া বাদে বাকি সবার কাছে ঘৃণা লাগে।

মোহন সরদারের তিক্ত অনুভূতি দেখে মাহমুদ সরদার বলে,”এমন করছিস কেনো ভাই?আমাদের রুদ্র তো খুব মহৎ কাজ করেছে।তোদের মানত পূরণ হবে আবার এখানে কিছু পথশিশুদের খাওয়ানো হবে।”

মাহমুদ সরদারের কথা শুনে অবাক ও ক্ষিপ্ত নয়নে রুদ্রের দিকে তাকালেন মোহন সরদার।সাথে সাথে রুদ্র বলে ওঠে,”কি বলছো এসব বড় আব্বু।আমি কাউকে এখানে আসতে বলিনি।আমি তো আরো কল করে বলেছি আমরা পাঁচ মিনিটে এখানে আসবো।সবকিছু যেনো নিট অ্যান্ড ক্লিন থাকে।ভিড় যা আছে সব যেনো তাড়িয়ে দেওয়া হয়।সিকিউরিটি পাঠানো হয়েছিলো তো।”

ছেলেকে রাগ দেখিয়ে মোহন সরদার বলে,”তোমার সিকিউরিটি গুলো তোমার মতোই অকর্মা। কোথায় এখন তারা? যাও তাড়াতাড়ি মাজারের কর্মীর সাথে কথা বলো।এদের দুর করতে বলো।”

বাবার আদেশ পেয়ে রুদ্র কথা বলতে যায় মজার কর্মীর সাথে।মাহমুদ সরদার বাধা দিতে চায় কিন্তু পরিবারের জন্য চুপ থাকে।

রুদ্র মাজার কর্মীকে বলে,”এখানে এরা কেনো?আমি তো ফোন দিয়ে বলছিলাম পুরো মজার ফাঁকা রাখতে।সরদার বাড়ির লোকজন আসবে।মিনিস্টার শাহমীর রাজের পরিবার আসবে জেনেও এখানে এই অবস্থা কেনো?”
মাজারের কর্মী ভয় পেয়ে যায়।সরকার কর্তৃক ভাবে এখানে তার কাজ করতে হয়।এখন শাহমীর রাজ হলেন একজন মন্ত্রী।যে সরকারের অধীনে আছে।ভয়তে কেপে কেপে মজার কর্মী বলে ওঠে,”আসলে এই ঢাকা শহরের নামকরা ব্যাবসায়ীর আজ তিন নম্বর ফ্যাক্টরির উদ্বোধন।এর সাথে তিনি ঢাকায় অনেক বড় বাড়ি করেছেন।তার একটাই ইচ্ছা মিলাত দেওয়ার সময় পথশিশুদের খাওয়ানো।উনি প্রায় এসে কবর জিয়ারত করে যান।খুব প্রভাবশালী তিনিও।অনেক আগে থেকে কন্টাক্ট করে রেখেছিলো এখানে আসবে আজকের দিনে।আপনারা তো হঠাৎ করে কল দিয়েই চলে এসেছেন।তাকেও আমি কল দিয়েছি আসছে খুব তাড়াতাড়ি।”

রুদ্র তেজ দেখিয়ে বলে,”আগে বলিনি তো কি হয়েছে?আজকে তো বলেছি। আর আমরা কারা জানোতো? শাহমীর রাজ যে এখন বর্তমান মিনিস্টার তার পরিবারের লোকজন আমরা।”

“কিন্তু আপনারা আসার কিছুক্ষণ আগে আমাদের ফোন দিয়ে বলেছিলেন।তাও আবার নিজেদের মত করে বলে ফোন কেটে দেন।”ঘামতে ঘামতে বলে লোকটি।

মাহমুদ সরদার তাকান ভাইয়ের ছেলের দিকে।ছেলেটা ভাইয়ের মত ঘাড়ত্যারা।মন মানসিকতা একদম নিম্নমানের।কাউকে সম্মান দেওয়া বা ভালোবাসা এসবে তারা নেই।কিসে লাভ হবে এটাই দেখে।এত বেশি বুঝতে যেয়ে পস্তাতে হচ্ছে এখন।মান সম্মানের ভয়তে চুপ থাকেন মাহমুদ সরদার।

হঠাৎ মিলি বলে ওঠে,”ওয়েট ব্রো,আমি রাজ ভাইকে কল দিচ্ছি।”

বলেই কল দেয় রাজকে।রাজের সাথে কথা বলা শেষ করে মিলি।রুদ্র বলে,”বিগ ব্রো আসুক এদের প্রত্যেককে আজ মজা দেখাবে।সে যত বড়ই ব্যাবসায়িক হোক না কেনো?”

রুদ্রর কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে পিছন থেকে কেউ বলে ওঠে,”আমি কখনও হার মানতে শিখিনি।নিজের ইচ্ছা ও সৎ সাহস নিয়ে এগিয়ে গিয়েছি এবং সব সময় এগিয়ে থাকব।”

সফট নারী ভয়েস শুনতে পেয়ে সবাই মিলে পিছনে তাকায়।দেখে নীল রঙের গাউন পরিহিত এক মায়াবী মেয়ে।মাথায় ওড়না,চোখে সানগ্লাস ঠোঁটে মিষ্টি হাসি।মেয়েটির পিছনে রয়েছে একাধিক দেহরক্ষী।মেয়েটি আর কেউ না ‘মেহরুন জাহান মায়া’।

মায়া এগিয়ে আসে সরদার বাড়ির লোকেদের সামনে।সানগ্লাসের ভিতর থেকে দেখতে থাকে নিজের বাবাকে।কি সুন্দর বউ সন্তানদের নিয়ে একসাথে আছে।কিন্তু এই সুখ তো থাকবে না বেশিদিন।করুক আপাতত সুখ।চোখ সরালো বাবার দিক থেকে।মাহমুদ সরদারের দিকে তাকিয়ে বলে,”আসসালামু আলাইকুম,আমি মেহেরুন।পুরো নাম মেহেরুণ জাহান মায়া।”বলেই হাত বাড়িয়ে দেয় মায়া।

মায়ার সাথে হাত মিলিয়ে মাহমুদ সরদার বলে,”আমি মাহমুদ সরদার।আসলে আমার ছেলের আজ জন্মদিন।তাই আমার স্ত্রীর ইচ্ছা ছেলের জন্য মানত করা।এজন্য পুরো পরিবারসহ এসেছি।আমরা আগে থেকে না জানিয়েই এসেছি।হঠাৎ এসে এই অবস্থা দেখে ও একটু রেগে যায়।”রুদ্র ও মিলিকে দেখিয়ে বলে।

স্মিত হেসে মায়া বলে,”নো প্রব্লেম আংকেল।বাচ্চা মানুষ তাই একটু হাইপার হয়েছে।এগুলো ব্যাপারনা।”

রুদ্র ও মিলি রেগে যায় নিজেদের বাচ্চা বলার জন্য।কিন্তু মাহমুদ সরদার এই মেয়েকে সহানুভূতি দেখাচ্ছে তাই তারা কিছু বলে না।

মায়া আবার বলে ওঠে,”আপনারা আপনাদের মতো নিজেদের কাজ করতে থাকুন।আমি আমার মতো নিজের কাজ করি।”

মাহমুদ সরদার মায়াকে বলেন,”আচ্ছা ঠিক আছে।”
তারপর সবাইকে কবর জিয়ারত ও মানত করতে যেতে বলেন।

সবাই চলে যায় নিজেদের কাজে।মাহমুদ সরদার আবার বলে ওঠে,”তোমার বাড়ির জন্য মিলাত দিচ্ছো শুনলাম। তা তোমার মা বাবা কোথায়?”

মন খারাপ হয়ে যায় মায়ার।মুখ শুকনো করেই বলে,”মা বাবা আপাতত ঢাকার বাইরে আছেন।দাদু বাড়িতে থাকেন তারা।আমি আমার মতো উন্নতি করার চেষ্টায় আছি।”

“বাহ নিজে সফলতা অর্জন করে আজ বাড়ি বানিয়েছো। তা কি কর তুমি?”

“আমি ফ্যাশন ডিজাইনার নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে এখন নিজে ফ্যাশন হাউজের সিইও হয়েছি।”

“জীবনে অনেক সফলতা অর্জন করতে পেরেছো তোমার চলাফেরা ও কথার ধরণে বোঝা যাচ্ছে।”

“সবে তো সফলতা শুরু।সফলতা পূরণ করতে এখনও অনেক কিছু করতে হবে।”বলেই বাকা হাসি দিলো মায়া।

বাচ্চাদের সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। মায়া এবার সবাইকে শীতের কম্বল ও সোয়েটার উপহার দেয়।এগুলো সবই মায়ার ফ্যাক্টরি থেকে বানানো।তারপর কবর জিয়ারত করে মায়া।

কবর জিয়ারত করে মায়া চলে যেতে নেয়।এমন সময় মাজারের কর্মী মায়াকে বলে,”শুধু কবর জিয়ারত করলেন!কোনো কিছু মানত করবেন না?”

“এই মুহূর্তে আপনাকে খুন করার মানত করতে চাই।পূরণ হবে কি আমার এই মানত?”

ভয় পেয়ে যায় মাজারের কর্মী।মায়ার এই কথাটা শুনতে পায় রাজ।মিলির ফোন পেয়ে ছুটে আসে রাজ।এখানে এসেই মায়ার মুখে এমন কথা শুনে তাকায় মায়ার দিকে।মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ। এই চেহারায় এক আলাদা মায়া লেগে আছে।

মায়া আবার বলে ওঠে,”যেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে যেমন কর্ম তেমন ফল সেখানে আমি মানত কেনো করতে যাবো?একজন মৃত ব্যাক্তির কবর জিয়ারত করে তার ভালো চাওয়া যায়,কিন্তু মৃত ব্যাক্তি যে কি না নিজেই আল্লাহর কাছে তার কাজ কর্মের হিসাব দিবেন তার কি সময় আছে আমার মনের কামনা পূর্ণ করার?”

এটুকু বলে সানগ্লাস চোখেই মোহন সরদারের দিকে তাকায় মায়া।দেখছে কি সুন্দর সারিবদ্ধভাবে তারা পীরের কবরের পাশে দাড়িয়ে মনোযোগ সহকারে মানত করছেন।মায়া একটু গলা উচিয়ে ইচ্ছা করে বলে,”কি লাভ এখানে মানত করে ওই দানবাক্সটিতে কিছু টাকা পয়সা ফেলে?রাতের আধারে তো দানবাক্স থেকে পীর বাবা এসে টাকা নিবেন না।কে নিবে সেটা নিশ্চয়ই আপনাকে খোলসা করে বলতে হবে না!আমার কাছে আবার লাভ লস জিনিসটি আগে।আমি নিজের স্বার্থ নিয়ে চলি।এই যেমন এখন কিছু অনাথ বাচ্চাদের খাওয়ালাম এখন তারা আমাকে দোয়া করবে আমি আরো বড়লোক হবো।তাদেরকে কম্বল সোয়েটার দিয়েছি।শীতে কাঁপতে থাকা শরীরে যখন ওগুলো পরিধান করবে তখন আমার কথা স্মরণ করবে আর আমার ফ্যাক্টরির উন্নতি হবে।যেখানে এতগুলো মানুষের থেকে লাভবান হচ্ছি সেখানে কেনো আমি মৃত ব্যাক্তির কাছে হাত পেতে ভিক্ষা নামক মানত করবো?আমি তো বেনিফিট পাচ্ছি।”

মায়ার কথাতে মোহন সরদার তাকায় মায়ার দিকে।এতগুলো বছর পর মেয়েকে দেখেও চিনতে পারলেন না তিনি।মোহন সরদার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন তারদিকে।মাহমুদ সরদার মিটিমিটি হাসতে থাকেন।রাজ সে তো মায়ার কথা কি শুনবে!মায়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মায়ার মোহে পড়েছে রাজ।

মোহন সরদারের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিয়ে বেড়িয়ে যেতে থাকে মায়া।মায়ার কথা বলার সময় ঠোঁট নাড়ানোর ভঙ্গিটা ছিলো ভিন্ন।এখনও মায়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজ।মায়া বের হওয়ার সময় রাজকে ক্রস করতে যায়।ঠিক সেই সময় মায়ার কানে ভাসে রাজের বলা কথা,”মায়াবতী।”

‘মায়াবতী’ ডাকটি শুনেই মায়া তাকায় রাজের দিকে।সানগ্লাসের ভিতর থেকে রাজের চোখের দিকে তাকিয়ে আবার চলে যায় ওই জায়গা থেকে।ছোটখাটো ক্রাস খেয়েছে রাজ এই মায়ার উপর।

গাড়িতে বসে আয়নার দিকে নিজেকে পরখ করে মায়া।তারপর আবার তাকায় পুরো সরদার পরিবারের দিকে।রাজ বাদে সবাইকে দেখতে থাকে।রাজ যে তাদের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে।সবাইকে দেখে মায়া নিজেকে নিজে বলে ওঠে,”যত খুশি আনন্দ করে নেও।আমিও দেখতে থাকি এই আনন্দ। আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাবে তোমাদের আনন্দ।মায়া এসেছে তোমাদের হাসিখুশি জীবন নষ্ট করে দিতে।”
বলেই গাড়ি স্টার্ট দেয়।

মায়া এখন সাতাশ বছরের সফল ব্যাবসায়ী।নিজেদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিকেই এখন সে আরো বড় উন্নত করেছে।ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেছে মায়া।তার সাথে দেখেছে নিজেদের ব্যাবসা বাণিজ্য। এখন মায়ার তিনটি ফ্যাশন হাউজ আছে।জার সিইও মায়া নিজে।মায়ার গার্মেন্টস/ফ্যাশন হাউজের নাম মায়া ট্রেডিশনাল ফ্যাশন হাউজ।

চলবে…?