মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-০৯

0
13

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#ইশরাত_জাহান
#পর্ব_৯
🦋
গাড়ি থেকে নামা যুবকটি তারেক।তারেকের দিকে তাকিয়ে হিয়া বলে,”আপনার নাকের এই অবস্থা কেন?”

উত্তরে তারেক বলে,”অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিলো।”

“ওহ আচ্ছা।”

“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”

“কোচিং আছে আমার।আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

“এমনি ছুটিতে আছি তো তাই ঘোরাঘোরি করছি।আপনি চাইলে আপনাকে ড্রপ করে দিতে পারি।”

“লাগবে না।আমি হেঁটে যেতে বেশি ভালোবাসি।তাই বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে আসিনি।”

“তাহলে আপনার সাথে হেঁটে আপনার সঙ্গী হই।একটু গল্প হয়ে যাবে।”

ইতস্তত করে হিয়া বলে,”ঠিক আছে।কিন্তু আপনার গাড়ি?”

“ওদের বলছি পিছনেই থাকবে।সমস্যা নেই।”

“আচ্ছা।”

বলেই তারেক ও হিয়া হাঁটতে থাকে।কথা খুঁজে না পেলেও প্রকৃতি নিয়ে ভিন্ন কথা তাদের মাঝে হয়েই যায়।হাঁটার মাঝখানে তারেক মায়াকে এসএমএস করে,”পাখি খাছায় পা দিয়েছে ম্যাম।”

প্লেন থেকে মাত্র নামলো মায়া।এয়ারপোর্টের বাইরে দাড়াতেই ফোনে এসএমএস এর শব্দ আসে।এসএমএসটি দেখে হালকা হেসে মায়া লিখে,”Enjoy together.”

রিটার্ন উত্তর পেয়ে তারেক কোনো প্রতিক্রিয়া না করে হিয়ার সাথে গল্প করে।হিয়ার কোচিংয়ের সামনে চলে এসেছে তারেক ও হিয়া।হিয়া বিদায় নিতে যাবে তখন তারেক বলে,”আমরা কি বন্ধু হতে পারি?”

“হ্যা,অবশ্যই।আপনি অনেক ফ্রেন্ডলি মাইন্ডেড।”

“ওকে,আপনার কোচিং শেষ হবে কয়টায়?আমরা না হয় তারপর একটু হেটে হেটেই বন্ধুত্বের যাত্রা শুরু করলাম।একজন সাহিত্য প্রেমীকে নাহয় তার সাহিত্যিক অনুসারেই পথচলার আমন্ত্রণ দিলাম।”

না বলতে চেয়েও হিয়া থেমে যায়।তারেকের পিছন দিকে একটু দুরত্ব রেখে একজন লোক দাঁড়িয়ে।সে আর কেউ না রুদ্রর দলের লোক মন্টু।হিয়া প্রায়ই তাকে রুদ্রের সাথে দেখে।মন্টুকে দেখে হিয়া চেঁচিয়ে বলে,”দেড় ঘণ্টা পর আমার কাচিং শেষ হবে।আপনি আমার সাথে যাওয়া আসা করলে আমি খুশি হব।”

কান ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা তারেকের।তাও টাকার বিনিময়ে সহ্য করতে হবে।একটু হাসি দিয়ে চলে যায় তারেক।হিয়া চলে যায় কোচিংয়ের ভিতর।

মায়া ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে হাটা দেয় নিজস্ব গাড়ির দিকে।দুই পা এগোতে রাজ মায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়।

মায়াকে উদ্দেশ্য করে রাজ বলে,”একই পথের যাত্রী আমরা তাহলে যাত্রাপথ কেন ভিন্ন হবে?”

“আমার ক্যাব বুকিং করা আছে।আমি নিজের মত করে যেতে পারব।”

“বুঝেছি এক কথায় মেনে নেওয়ার পাত্রী তুমি না।”

বলেই রাজ মায়াকে উচু করে কাধে তুলে নিয়ে যায় রাজের গাড়ির দিকে।মায়া লাফালাফি করতে থাকে।কিন্তু কোনো লাভ হয় না।মায়াকে সোজা গাড়ির ব্যাক সিটে বসানো হয়।তারপর রাজ নিজেও বসে সেখানে।

গাড়িতে বসতেই মায়া ক্ষিপ্ত হয়ে রাজের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বলে,”সাহস কত বড় আপনার?হুটহাট কেনো এভাবে আমার উপর অধিকার দেখান।”

রাজ তার দুই পাশের কলারের দিকে তাকিয়ে মায়ার দিকে তাকায়।স্মিত হেসে ড্রাইভারকে বলে,”গাড়ির আয়না কাপড় দিয়ে ঢেকে মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাও।তোমার মন্ত্রী মশাই এখন প্রেম করবে।”

মন্ত্রীর হুকুম পালন করতে বাধ্য ড্রাইভার।ছোট রুমাল দিয়ে গাড়ির সামনের ছোট আয়না ঢেকে গাড়ি চালাতে মনোযোগ দেয় ড্রাইভার।সেই সুযোগে মায়ার মুখ নিজের দুই হাত দিয়ে ধরে আরো কাছে নিয়ে আসে রাজ।মায়া এখন রাজের অতি নিকটে।রাজ মুখ উচু করে মায়ার কপালে এক মিষ্টি ভালোবাসার পরশ একে দেয়।সাথে সাথে চুপ হয়ে যায় মায়া।মায়ার চোখ দুটি নিজের থেকেই বন্ধ হয়ে যায়।রাজ তাকিয়ে থাকে সেদিকে।ঠোঁট কাপছে মায়ার।রাজ লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।কিন্তু কিছু না করে ছোট্ট একটি চিমটি দেয় মায়ার কম্পনরত ঠোঁটে।চোখ মেলে তাকায় মায়া।

স্মিত হেসে রাজ বলে,”বেশি জেদ করবে না মায়াবতী। শাহমীর রাজ তোমাকে বৈধভাবে পেতে চায়।তোমার এই রাগী দৃষ্টি যে আমাকে আরো বেশি করে কাছে টানে তোমার দিকে।এই রাগ নাহয় বিয়ে অব্দি আগলে রাখলে।বিয়ের পর যত খুশি রাগ দেখাও সমস্যা নেই।বৈধ স্ত্রীর রাগ ভাঙাতে সুবিধা হবে।”

মায়া রাজের দিকে তাকিয়ে আঙুল উচিয়ে বলে,”আরে এই মন্ত্রী মশাই।এই মায়ার মায়াবতী রূপ দেখে ভুল করছেন।মায়ার তেজ সম্পর্কে বিন্দু মাত্র ধারণা নেই আপনার।যেদিন মায়ার তেজ দেখতে পারবেন সেদিন ভষ্ম হয়ে যাবেন।মন্ত্রী হয়েছেন তো কি হয়েছে।মায়া জানে মেরে ফেলবে আপনাকে।”

“তাহলে মেরে ফেলো আমাকে মায়াবতী।মরতে চাই তোমার মায়াজালে।পূরণ হোক আমার মৃত্যু দ্বারা আমার মায়াবতীর ইচ্ছা।”

আর কোনো কথা বাড়ায় না মায়া।নিজেও জানে রাগে জেদে এসব বলছে সে।একটু হলেও মায়া নিজেও এখন রাজের প্রেমে মত্ব।রাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে।

বেশ কিছুক্ষণ পর হোটেলে পৌঁছায় মায়া ও রাজ।হোটেল রিসিপশনের কাছে যেয়ে নিজেদের রুমের চাবি নেয় মায়া ও রাজ।মায়া ও রাজকে ট্যুরিস্ট এর জন্য আলাদা ট্যুরিজম দেওয়া হয়েছে।রাজের জন্য যে ট্যুরিজম নেওয়া হয় তাকে রাজ পিয়াশ ও মৌয়ের সাথে থাকতে বলে।রাজ তো মায়ার সাথে থাকবে।এমনিতেও রাজ জায়গাগুলো ভালোভাবে চিনে। আর মায়া ও রাজের নিজস্ব গার্ডগুলো তো আছেই পিছন পিছন থাকার জন্য।

মায়া নিজের বুক করা রুমে এসে লক খুলতে যাবে ঠিক তখনই রাজ এসে মায়ার সামনের রুমের লক খুলতে থাকে। মায়া দেখেও কিছু না বলে লক খুলে নিজের রুমে চলে যায়।রাজ হালকা হেসে নিজের রুমে প্রবেশ করে।

হিয়ার কোচিং শেষ হলো মাত্র। কোচিং শেষ করে গেটের সামনে আসতেই দেখতে পেলো তারেককে।ক্ষণিকের জন্য হিয়া ভুলে যায় তারেকের কথা।হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে চোখের চশমা ঠিক করে তারেকের কাছে আসে হিয়া।বলে,”আপনি কখন এসেছেন?”

“এইতো বিশ মিনিট হবে।”

“এত আগে কেনো এসেছেন?”

“ভাবলাম আজকে বন্ধুত্বের প্রথম দিন আর আজকে দেরি হলে আবার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ফাটল ধরতে পারে।”

স্মিত হেসে হিয়া বলে,”এমন কিছুই হত না।”

“চলুন হাঁটতে হাঁটতে গল্প করি।”

“চলুন।”

পাশাপাশি হেঁটে চলেছে দুই মানব মানবী।কিন্তু তাদের কারোর মনেই নেই একে অপরের জন্য কোনো অনুভূতি।দুজনেই নিজ নিজ স্বার্থে রেখেছে সম্পর্কের স্থাপন।তারেক আছে তার ইনকামের জন্য আর হিয়া সে তো রুদ্রের থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য।এই দুইজনের আলাদা স্বার্থের ভিত্তিতে চলা গন্তব্য কি কখনও এক হবে?

মন্টু এসে রুদ্রকে বলে,”গুরু তোমার পাখি তো এখন অন্যের খাঁচায়।”

পিলে চমকে ওঠে রুদ্রর।চোখদুটো লাল রক্তিম হয়ে যায়।অতঃপর তাকায় মন্টুর দিকে।বলে,”কি সব আবোল তাবোল বকছিস?”

“ঠিক বলছি গুরু।তোমার হিয়াপাখির সাথে অন্য এক ছেলেকে একসাথে হাটতে ও কথা বলতে দেখেছি।তাও একবার না দুইবার।ছবি তুলেছি তাদের।”

“কই?দেখা।”

মন্টু ফোন বের করে ছবি দেখায় রুদ্রকে।রুদ্র জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে থাকে ছবিগুলোর দিকে।তারপর বলে,”খাঁচার পাখি খাঁচায় থাকবে।কেউ নিতে পারবে না।দেখতে থাক।”

বলেই শয়তানি হাসি দেয় রুদ্র।মন্টু ও তার লোকেরা হাসে রুদ্রের সাথে।

চলবে…?