মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-১৪+১৫

0
7

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#ইশরাত_জাহান
#পর্ব_১৪
🦋
বারোটার দিকে,
রুদ্র বাসা থেকে না খেয়ে বের হওয়াতে মাহবুব সরদার কষ্ট পায়।এছাড়া হিয়ার নিজের কাছেও খারাপ লাগছে।বাবার কষ্ট সাথে করে নিজের খারাপ লাগা দেখে সুপ রান্না করে টিফিন বাটিতে করে নিয়ে যায় হিয়া।একটি নির্জন ফাঁকা গল্লির ভিতরে ভুতুড়ে পরিবেশ।দুপুর হয়ে এসেছে তাও যেনো গল্লিতে আলো বাতাস নেই। জামার ওড়না কচলাতে থাকে ভয়তে।ড্রাইভার প্রায়ই রুদ্রকে এখানে নিয়ে আসে।তাই হিয়া ড্রাইভারের মাধ্যমে এসেছে।কিছুটা এগিয়ে একটি ফাঁকা বাড়ি পায় হিয়া।বাড়িটি পুড়ে কালি জমানো।দেখলেই বোঝা যাচ্ছে পুরনো বাড়ি। ড্রাইভার বলেছে এখানেই আড্ডা দেয় রুদ্র।এটা নাকি রুদ্রর আড্ডা দেওয়ার আস্তানা।হিয়া ভিতরে ঢুকবার আগে চোখের চশমা ঠিক করে নেয়।তারপর কাপা কাপা হাতে জং ধরা মেইন গেট খুলে।প্রথমে চিকন এক ঘর তারপর বড় ফাঁকা ঘর।সেই ঘরে আছে একটি টেবিল আর কয়েকটি চেয়ার।একটি চেয়ারে বেধে রাখা হয়েছে একটি মেয়েকে।মেয়েটির হাত পা মুখ বাধা।বারবার ছটফট করতে থাকে মেয়েটি রক্ষা পাওয়ার জন্য।চোখ দিয়ে তার পানি পড়তে থাকে।সামনে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে দাত বের করে হাসতে থাকে রুদ্র।হিয়া সাথে সাথে দেওয়ালের আড়ালে দাড়িয়ে দেখতে থাকে রুদ্রর কান্ড।

রুদ্র বলে,”তারপর কি বলেছিলি যেনো? আমার পর্দা ফাঁস করে দিবি।আমার এই কর্মগুলো লোকজন জেনে যাবে? রুদ্রদ্বীপ রুদ্র যতক্ষণ না চাইবে কোনো কিছুই ফাঁস হবে না বেবী।”
বলেই ধারালো ছুরি বসিয়ে দিলো মেয়েটির পেট বরাবর।গড়গড় করে রক্ত বের হয় মেয়েটির পেট থেকে।রুদ্র ছুরিটি আবার বের করে আবারও মেয়েটির পেটে ঢুকিয়ে দেয়।মেয়েটি মুখ উচু করে।চোখ বড় বড় করে তাকায়।মুখে কাপড় গুঁজে রাখার জন্য মেয়েটি চিল্লাতে পারছে না। আস্তে আস্তে মেয়েটির নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।জীবনে প্রথম কোন খুন এভাবে সচক্ষে দেখে হিয়ার হাত পা দুর্বল হয়ে আসে।হিয়া মেয়েটি এত বড় স্বনামধন্য পরিবারের হলেও শিক্ষা দীক্ষা চলাফেরার দিক থেকে খুবই শান্তশিষ্ট।হিয়া সামাজিক ভাবেই চলাফেরা করে।নরম মনের মেয়ে সে।তাই আজ এই খুনের পরিবারে জন্ম নিয়েও খুন দেখে কাপতে থাকে।হুট করে হাত থেকে টিফিন বাটি পড়ে যায়।

কোনো কিছুর শব্দ পেতেই ভ্রু কুচকে পিছনে তাকায় রুদ্র।হিয়াকে দেখে আতকে যায়।সিয়া ও হিয়া একই রুপি হলেও সিয়ার ঠোঁটের নিচে তিল আছে যেটা হিয়ার নেই। আর হিয়া চশমা ব্যাবহার করে।তাই রুদ্র বুঝতে পারলো এটা হিয়া।কিন্তু হিয়া কেনো এখানে এলো!রুদ্র এগিয়ে আসে হিয়ার কাছে।ভয়তে পিছিয়ে যায় হিয়া।খোপ করে হিয়ার হাত ধরে হিয়াকে নির্জন রুমে নিয়ে আসে রুদ্র।বলে,”তুমি কিছুই দেখোনি হিয়াপাখি।”

রুদ্রের চোখ লাল।অতিরিক্ত ভয়ানক এক খুনিকে দেখছে হিয়া।ভয়তে ঘামতে থাকে।রুদ্রর ভয়ানক চাহনিতে কোনো উত্তর না দিয়ে হিয়া মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দেয়, হ্যাঁ সে কিছুই দেখেনি।রুদ্র এবার হেসে দেয়।বলে,”আর যদি বলো তবুও কোনো প্রমাণ নেই তোমার কাছে।এই রুদ্র প্রমাণ রেখে অপরাধ করে না।”

হিয়া দেখলো রুদ্রের হাতের দিকে।রুদ্র গ্লাভস পরে আছে। আর হিয়া সে তো কোনো ছবি তোলা বা ভিডিও করতে পারেনি।কিভাবে করবে প্রমাণ যে রুদ্র একজন খুনি।তাই সে বিষয়টি এখানেই ধামাচাপা দিতে চায়।কিন্তু রুদ্রর দিকে তাকাতে হিয়া ভয় পায়।হিয়ার মনে হচ্ছে এখন রুদ্র তাকেও খুন করে দিবে।চশমা ঠিক করতে করতে হিয়া ফোঁসফোঁস করতে থাকে।হার্টবিট ওঠানামা করছে হিয়ার।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তার।কাপা কাপা ঠোঁট চোখ ফ্লোরের দিকে।রুদ্র দেখতে থাকে হিয়াকে।বলে,”একটা খুনের পরিবারে জন্মগ্রহণ করে তুই কি না খুন দেখে ভয় পাচ্ছিস!”

রুদ্রের কথার শুরুতেই কেপে ওঠে হিয়া।ভয়তে কুচকে যায়।ও ভেবেছিলো হয়তো রুদ্র এখন ওকে বকবে বা মারবে।ওড়নার আচল দুই হাতে ধরে মুঠ করে।নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে কান্না করতে করতে।মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না।এতদিন কত কথা শুনিয়েছে সে রুদ্রকে।কিন্তু আজ খুনি রুদ্রকে কোনো কথা শুনাতে পারছে না।রুদ্র উল্টো দিক ফিরে তাকায়।কি করছে হিয়া জানে না।চশমা চোখে পিটপিট করে তাকায় রুদ্রের দিকে।দেখতে পায় রুদ্র উল্টো ঘুরে হাত দিয়ে চুল সেট করছে। আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।রুদ্র উল্টো দিকে ফিরে আছে বলে হিয়া সাহস পায়।এক পা এক পা করে দরজার দিকে এগোতে যায়।গুটি গুটি করে তিন চার পা এগোতেই রুদ্রের শক্ত হাত খোপ করে ধরে হিয়ার বাহু।হিয়াকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।অনেক জোরেই ধরে রুদ্র।রাগে গর্জন করে ওঠে।হিয়া চোখ বন্ধ করে নেয়।মনে মনে মৃত্যুর দোয়া পড়ছে।এখনই কি না তার মৃত্যু হয়।রুদ্র রাগান্বিত কণ্ঠে গর্জে উঠে বলে,”একদম পালাবি পালাবি করবি না আমার সাথে।তোর এই ডানা আমি কেটে ফেলবো হিয়াপাখি।তোর মন্ত্রী ভাইও কিছু করতে পারবে না।”

হিয়া ছটফট করে না কিন্তু ওর গা কাপছে ভয়তে।ঠোঁট কামড়ে চোখেন পানি ফেলে।এ কোন বিপদে পড়লো সে।কেনো এলো দয়া দেখাতে।জীবনে প্রথমবার দয়া দেখিয়েছিলো রুদ্রকে।শিক্ষা পেয়ে গেলো।এবার আর কোনোদিন আসবে না রুদ্রর সামনে।রুদ্র এবার আরো রেগে গেলো।হিয়ার ঘাড় ধরে ধাক্কা দিয়ে বলে,”উত্তর দে হিয়াপাখি। বল পালাবি আমার থেকে?”

হিয়া উত্তর দিতে না পারলেও মাথা ঝাকিয়ে বুঝিয়ে দেয় “না”।সাথে সাথে রাগের আবির্ভাব কমিয়ে হাসির ঝলক ফুটিয়ে ওঠে রুদ্রের মুখে।বলে,”এখানে কেনো এসেছিলি?”

হিয়া উত্তর না করে মেইন গেটের দিকে তাকায়।রুদ্র হিয়ার অক্ষি দৃষ্টি লক্ষণ করে সেদিকে তাকায়।দেখতে পায় টিফিন বাটি।তখন এটা পড়ে যেয়েই শব্দ হয়। বাটির কাছে যেয়ে বাটিটি এনে হিয়ার সামনে দাড়িয়ে পড়ে। বাটি খুলে দেখে খাবার।কিন্তু সকালে খাবার টেবিলে যে খাবার দেখেছিলো ওগুলো না।এখানে চিকেন সুপ আছে। বাটি পড়ে যাওয়ায় বাটির ঢাকনায় কিছুটা সুপ লেগে গেছে।রুদ্র হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই রেধেছিস হিয়াপাখি?”

রুদ্রের চোখেমুখে হাসির ঝলক।এটা আসল নাকি নকল বুঝতে পারছে না হিয়া।নির্মমভাবে কাউকে খুন হতে দেখার পর খুনিকে নিজের সামনে দেখছে।খুনি আবার তার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।রাগ ঘৃণা সবকিছু কাজ করছে হিয়ার মনে।কিন্তু সে কাউকে বলতে পারবে না।কেউ বিশ্বাস করবে না তার কথা।প্রমাণ ছাড়া বললে সবাই ভাববে মজা করছে বা মিথ্যা বলছে। আর বড় কথা হিয়া এখানে কেনো এসেছে?এটাই আগে প্রশ্ন উঠবে।রুদ্র চামচ নিয়ে সুপ খেতে থাকে।বলে,”এত যত্ন তো আমাকে আমার মা মানে তোর ছোট কাকি করে না।তুই করছিস কেনো হিয়াপাখি?ভালো টালো বাসলি নাকি এই নষ্ট রুদ্রকে?”

হিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে এবার সাহস যুগিয়ে বলে,”বাসায় যাবো।”

হিয়ার কণ্ঠ মিনমিন।কিছুই শুনতে পায়নি রুদ্র।রুদ্র বুঝতেই পারলো না বেচারি হিয়া কিছু বলেছে।হিয়া এবার গলা খাকারি দিলো।রুদ্র তাকালো হিয়ার দিকে।পানির বোতল নিয়ে হিয়াকে দেয়। হিয়া সাথে সাথে বোতল নিয়ে পানি পান করে।গলা ক্লিয়ার করে বলে,”এবার আমি বাড়ি যাবো।”

রুদ্র বলে ওঠে,”হ্যাঁ।চল আমিও তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”

“কোনো দরকার নেই।আমি একাই পারবো।যেভাবে এসেছি।”

“উহুম।আমার রাজ্যে এসেছিস নিজের ইচ্ছায়।রাজ্য থেকে যাবি আমার ইচ্ছাতে।”

হিয়া তাকালো চারপাশে।এই ভুতুড়ে এলাকা রুদ্রের রাজ্য!এটা তো একটা পোড়া বাড়ি।রুদ্র হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”এই পোড়া বাড়ি আস্তে আস্তে হয়ে উঠবে আলিশান বাড়ি। বাড়িতে থাকবে হিয়া ও রুদ্রের জুটি হিয়াদ্র।”

হিয়া তাকায় রুদ্রের দিকে।কিন্তু ভয় পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।রুদ্র জিভে কামড় দিয়ে বলে,”উফ সরি!এখানে থাকবে আরো এক জুটি।কিন্তু তাদের আগমন এখনও অনেক দেরি।”

অবাক হয় হিয়া।রুদ্রের কি কোনো প্ল্যান আছে তাকে নিয়ে।খুব খারাপ ভাবে ফেসে যাচ্ছে সে।তাড়াতাড়ি এখান থেকে যেতে চায়।রুদ্র হিয়াকে বলে,”আমার খাওয়া শেষ।চল বাসায় যাই।এমনিতেও দুপুরের জন্য বাসায় যেতাম।”

হিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে হাটা দেয় রুদ্রের সাথে।রুদ্র ম্যাসেজ করে কাউকে কিছু একটা লেখে।হিয়া দেখেও না দেখার ভান করে।

_____
অন্ধকার রুমে ইজি চেয়ারে বসে কিছু একটার হিসাব কষতে থাকে একজন যুবক। আর মাত্র কয়েক মাস।তারপর সে ফিরবে তার প্রেয়সীর জীবনে।প্রেয়সীর ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে ভালোবাসার নয়নে।বলে,”আমার অপেক্ষার সময় শেষ হতে যাচ্ছে।তুমি রেডি থেকো মাই লাভ।খুব শীঘ্রই তোমার সপ্নের ভুবনে আলাপ হবে আমার সাথে।”

বলতে না বলতেই একটি ম্যাসেজ আসে তার ফোনে।ম্যাসেজটি রুদ্রের দেওয়া।ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,”তোর প্রেয়সী তো তাও ভীতু।কিন্তু আমার প্রেয়সী যে চতুর।ওকে বসে আনা আমার জন্য একটু কষ্টকর।”

রুদ্রের রিটার্ন ম্যাসেজ আসে,”ডোন্ট ওরি। শী উইল বি ইওর।”

যুবকটি হেসে বলে,”শী ইজ ওনলি মাই প্রেয়সী।শুধু আমার হবে। আর কারো না।”
বলেই হাসতে থাকে এই ফাঁকা রুমে।

_______
মায়া সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।ঢাকার ফ্যাক্টরির ইনফরমেশন নিতে থাকে তার পিএর থেকে। ইনফরমেশন নেওয়া হয়ে গেলে মায়া ল্যাপটপে কিছু গ্রাফিক্সের কাজ করে।এগুলো তার কোম্পানির হাইপ বাড়ানোর জন্য।কিছু এড এর জন্য পোস্টার লাগবে।মায়া নিজেই এসবে পারদর্শী।এছাড়া আরো ভিন্ন কাজ আছে যেগুলো কেউ জানে না।কোম্পানির ড্রেসের সাথে মিলিয়ে কোন এড ভালো মানাবে এটা চুজ করতে করতে লক্ষ করে তার রুমের দরজায় দাড়িয়ে আছে রাজ।মুখে তার হাসি।মায়ার তাকানো দেখে রাজ বলে,”গুড আফটারনুন মায়াবতী।”

“ভেরি গুড আফটারনুন মন্ত্রী মশাই।”

রাজ মায়ার পাশে এসে বসে।মায়ার ল্যাপটপে না দেখে মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়।তারপর বলে,”চলো,লাস্ট ডেট অফ প্রী হানিমুন কমপ্লিট করি।”

“নট ইন্টারেস্টেড।আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।”

“কাল তো আমরা ঢাকাতে যাচ্ছি।ওখানেই না হয় কাজ শুরু করো।এছাড়া ঢাকাতে তো আছে তোমার চামচা। যা হয় ফট করে কল দিয়ে আমার প্রেমের বারোটা বাজিয়ে বিবিসির নিউজ বলতে থাকে।”

মায়া মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলে,”নিউজ তো আপনাকে আর আমাকে নিয়েও বের হয়েছে।খবর দেখেননি তাই জানেন না।বিভিন্ন চ্যানেলে ও সংবার পত্রিকায় গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,”মন্ত্রী শাহমীর রাজ ও ফ্যাশন হাউজের ওনার মেহেরুন জাহান মায়া এদের মধ্যে কিছু তো আছে বলে ধারণা করা হয়েছে।”

রাজ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”আছে তো আমাদের ভিতর অনেক কিছুই।শুধু তোমার একটা কবুল বলার অপেক্ষা। যা আছে তা আমি দেখে নিবো।”

মায়া তাকায় রাজের দিকে।একটু রসালো সুরে রাজকে বলে,”জনগণদের মুখ বন্ধ না হয় পাওয়ার দিয়ে করবেন।আপনার ঘরের লোকদের কি করবেন?স্পেশালি আপনার জারা বেইবী!”

রাজ সোফায় মাথা হেলিয়ে দেয়।দুই দিকে দুই হাত ছড়িয়ে বলে,”মনে করে দিলে তো আমার জারা বেইবীর কথা!ওর জন্য অবশ্য একটা গিফট নিবো বলেছিলাম। আই থিঙ্ক তোমার থেকে বেটার গিফট ওর জন্য আর কিছু না।”

মায়া কটমট চোখে বলে,”আমি কারো গিফট নই।আমার রাস্তায় কেউ একবার পা দিতে আসলে তার পা আমি ওখানেই আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবো।”

রাজ কিছু চিন্তা করার অভিনয় করে বলে,”আমি ভাবছি না না আমি কল্পনা করছি!তোমার হাতে বড় এক গরম লোহা।তার সাথে আলিঙ্গন করছে আমার জারা বেইবীর পা।অফস!কি ধামাকা এক মোমেন্ট হয়ে যাবে।”

রাজের কথা শুনে মায়া নিজেই এবার হেসে দেয়।রাজ ভুল কিছু কল্পনা করেনি। মায়া কখনও নিজের জিনিস অন্যকে ভাগ করবে না।উল্টো তার জীবনে কেউ তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে আসলে মায়া তাকে শেষ করে দিবে।
রাজ মায়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে অতঃপর বলে,”অনেক হয়েছে চলো।আজ আমরা জঙ্গলের দিকে যাবো।ওখানেই রাতে আনন্দ করবো।আমার পিয়ু বেইবী আছে ওখানে।বেচারা হানিমুন করতে এসে শান্তিমতো বউকে সময় দিচ্ছে না।খালি বসের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে।”

মায়া রাজের দিকে তাকিয়ে একটি তাবু ও কিছু জিনিসপত্র প্যাক করে নেয়।তারপর দুজনে মিলে একসাথে রওনা হয় জঙ্গলের দিকে। পিয়াশ ও মৌ আগেই সেখানে আছে কিছু সংখ্যক গার্ড নিয়ে। আর বাকি গার্ড রাজ ও মায়ার সাথে আছে।মায়া রাজের সাথে হাটতে হাটতেই একটি ম্যাসেজ পায়।সেখানে লেখা,”মোহন সরদার ইজ নাও ইন মিডিল পজিশন।হিজ অল প্রোডাক্টস আর ফ্যাক।এখন তার প্রোডাক্ট কোনো দোকান বা সুপার শপ ক্রয় করতে ইচ্ছুক নয়।”

ম্যাসেজটি দেখে স্মিত হাসে মায়া।যে কাজটি সে করতে পারেনি সেই কাজটি অন্য কেউ করে দিচ্ছে।কিন্তু কে করছে এটা জানতে হবে।মায়ার শুভাকাঙ্ক্ষী যে সে এখন দেশের বাইরে।আপাতত তাকে মায়া এসবের থেকে দূরেই রেখেছে।মায়া রিপ্লাই দেয়,”ট্রাই টু ফাইন্ড হার ওর হিম। আই ওয়ান্ট টু নো অল ইনফরমেশন।”

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_১৫
#ইশরাত_জাহান
🦋
হিয়ার জ্বর এসেছে। জ্বরে কাপাকাপি করে রাতে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।হিয়ার দুই পাশে দুই বোন সিয়া ও মিলি বসে আছে।রুদ্র হিয়াকে বাসায় দিয়ে গেছিলো আর ফিরেছে রাতে।বাসায় এসে সোনালীর কাছে শুনতে পেলো হিয়া অসুস্থ।তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে চলে গেলো হিয়ার ঘরে।হিয়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় মায়াবী লাগছে।রুদ্র তাকিয়ে থাকে হিয়ার মুখপানে।অতঃপর মিলিকে বলে,”কতক্ষন ধরে ওর এই অবস্থা?”
মিলি রুদ্রকে দেখে বলে,”বিকাল থেকেই।ওই যে তোমার সাথে বাসায় এসেছিলো তখন থেকেই এই অবস্থা।”
“ডক্টর দেখিয়েছে?”
“আরে না।জ্বরের ঔষধ দেওয়া হয়েছে।ঠিক হয়ে যাবে।”
“খুব বড় ডক্টর হয়েছিস তুই?”
মিলি ক্ষেপে গিয়ে বলে,”আমি ডক্টর না হই হবু ডক্টর।তাও আমি না হলেও সিয়া।”
“ডক্টর আর হবু ডক্টর আলাদা।”
সিয়া এবার মুখ খুলে।বলে,”এক্সকিউজ মি ভাইয়া। আমাকে কি কোনোভাবে অপমান করলে?আমি খুব ভালো ভাবেই স্টাডি করছি।এসব বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা রাখি।”
“আমি কখন তোকে অপমান করলাম? যা সর দেখতে দে আমার হিয়াপাখিকে।”
মিলি উঠে দাড়ায় তারপর টিটকিরি দিয়ে বলে,”আসছে আমার হিয়াপাখি বলতে!তোকে দুচোখে সহ্য করতে পারে না ও।”
“তোর কাছে জিজ্ঞাসা করেছি?”
“জিজ্ঞাসা করবে কেনো?সত্যিটা আমি নিজেই বলে দিলাম।”
“একটু বেশি বলিস তুই।দেখিস তোর কপালে সাইকো জুটবে।”
মিলি চোখ ছোট ছোট করে বলে,”যেনো তুমি জেনে রেখেছো আমি কাকে বিয়ে করবো?”
“ভাই হই তোর খোঁজ তো নিতেই হবে।”
“লিসেন ব্রো আমি কোনো সাইকো টাইকো বিয়ে করবো না।আমি বিয়ে করবো কোনো এক সুপার হিরোকে।”
রুদ্র হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”সাইকো জীবনে এন্ট্রি নিলে তার থেকে নিজেকে ছাড়ানো অনেক কঠিন রে বোন।”
মিলি সন্দিহান কণ্ঠে বলে,”তুমি কি সাইকো?”
“সময় বলে দিবে।”
সিয়া দুই ভাই বোনের কথা শুনে বলে,”জীবনে সাইকো কি একমাত্র সত্যিকারের ভালোবাসা?সাইকো না হয়ে কেয়ারিং হওয়া বেশি জরুরি।”
রুদ্র সিয়ার কথা শুনে হেসে দেয়।মিলি বলে ওঠে,”সহমত,আমি তো এমন একজনকে বিয়ে করবো যে আমার সব কাজ করে দিবে।ওসব সাইকো টাইকো না।”
রুদ্র উঠে দাড়ায়।মিলির মাথায় টোকা দিয়ে বলে,”করতে হবে না তোদের ওসব সাইকো বিয়ে।সাইকো নিজেই এসে বিয়ে করে নিবে।”
বলেই চলে যায় রুদ্র।সিয়া ও মিলি তাকিয়ে থাকে সেদিকে।

রুদ্র বাইরে এসে নিজের ঘরের দিকে যায়।কানে তার ব্লুটুথ ছিলো।বাইরে এসে বলে,”শুনেছো ব্রো!তোমার প্রেয়সী কিন্তু সাইকো চায় না।”

ওপাশ থেকে স্মিত হেসে আগন্তুক ব্যাক্তি তার প্রেয়সীর ছবি দেখছে।ছেড়ে দেওয়া চুল বাতাসে উড়ছে কিছু চুল ঠোঁটের সামনে এসে হাসি গুলোকে ঢেকে রাখছে এমন একটি ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,”ভালোবাসা পেলে এই সাইকোর জন্য সে ব্যাকুল হয়ে যাবে ভাই।”

রুদ্র মৃদু হেসে বলে,”বলা যায় না।সরদার বাড়ির মেয়েরা একেকটা নরম মনের মানুষ।”

ওপর প্রান্তের ব্যাক্তি হেসে বলে,”একটু ভুল বললি।কোনো একজন আছে যে নরম নয় বরং তোর আর আমার থেকেও ভয়ংকর।”

রুদ্র ফিচেল হেসে বলে,”Oh yeah.You are right.”

ওপাশ থেকে আগন্তুকটি বলে,”দেশে আসবো আর তিন মাস পর।তখন থেকেই শুরু হবে আমাদের আসল খেলা।”

“ইয়া কামিং সুন,বাই।”
বলেই কল কেটে দেয় রুদ্র।নিজের ঘরের দরজার কাছে আসতে যাবে ওমনি দেখতে পায় বাড়ির বড় গেট দিয়ে লাগেজ নিয়ে বাড়িতে এন্ট্রি নেয় জারা।সোনালী এসে জারাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”I miss you.”
জারা ঢং করে বলে,”I miss you too,খালামণি।”

রুদ্র এদের ঢং দেখে বাকা হেসে বলে,”এই এলো আরেক নর্তকী। ওফস মন্ত্রী মশাই এর জারা বেইবী।”
বলেই ঘরে ঢুকে যায়।

_____
তাবু দিয়ে জঙ্গল সাজানো হয়েছে।আজ মায়া রাজ ও অন্যান্যরা এই জঙ্গলে থাকবে।মিউজিক বক্সে গান বাজছে।অন্যদিকে সি ফিস পোড়ানো হচ্ছে।সবাই একসাথে হয়ে মাঝখানে আগুন জ্বালানো হয়েছে।মায়া মৌ ও রাজ পিয়াশ এক জায়গায় বসে আগুনের তাপ নিতে থাকে।
রাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”শুনো পিয়ু বেবী এখানে তোমরা হানিমুন করতে এসেছো।এভাবে ফ্যামিলি গেট্টুগেদার না।তুমি এমন হলে তো তোমার বউ অন্যের হয়ে যাবে।”

পিয়াশ মিনিট দুই রাজের দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝতে পারে রাজ কি বলতে চাইছে।আশেপাশে গার্ডরা দূরে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। পিয়াশ এসে মৌকে নিয়ে একটু অন্য দিকে যায়।ওদের যাওয়ার পর পরই রাজ মায়ার গা ঘেসে বসে।মায়া রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”এভাবে গা ঘেসে বসার মানে কি?দূরে গিয়ে বসুন।”

রাজ মাথা ঝাকিয়ে বলে,”উহুম।আরো কাছাকাছি আসবো।তোমার আমার যত দিন যাবে তত দূরত্ব ঘোচাবে।”

“আপনার ভুল ধারণা একদিন ভেঙ্গে যাবে।”
“আমি ভুল ধারণা নিয়ে বাঁচি না।ভুল ধারণা কার ভেঙ্গে যায় এটা শুধু সময়ের অপেক্ষায় বুঝবে।”

মায়া রহস্য জনক হাসি দিয়ে আগুনের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনার কি মনে হয় মন্ত্রী মশাই?আমি মায়া অবুঝ?”

“তুমি অবুঝ হলে তোমার প্রেমে আমি পড়তাম নাকি!আমি তো ভালোবাসি এক প্রমত্ত অঙ্গনাকে।”

বলেই মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে রাজ।রাজের এহেন কথা শুনে রাজের মুখপানে তাকিয়ে থাকে মায়া।তাকে প্রমত্ত অঙ্গনা বললো রাজ।এর মানে কি?এই রাজ কি সব জানে?না তো,রাজের কিছুই জানার কথা না।রাজ হেসে গলা উঁচিয়ে ডাক দেয় পিয়াশকে।বলে,”তাড়াতাড়ি আমার গিটার নিয়ে আসো।”

মায়া অবাক হয়।এই মন্ত্রী মশাই গিটার আনতে বলছে কেনো? পিয়াশ গিটার আনতেই রাজ গিটার বাজাতে থাকে।তারপর গায়,
বেঁচে থাকার জন্যে,
দু হাত রাখার জন্যে,
অভিমানের জন্যে,
কেউ একজন লাগে।(২)

ধরে রাখার কেউ নেই,
মনে করার কেউ নেই,
মাঝে মাঝে তাই,
ভীষন একা লাগে।

বেঁচে থাকার জন্যে,
দু হাত রাখার জন্যে,
অভিমানের জন্যে,
কেউ একজন লাগে(২)…..

একলা জীবন সত্যি অনেক কঠিন,
চাই আমিও থাকি কারো অধীন।(২)

মনকে বোঝার জন্যে,
ভালো থাকার জন্যে,
কেউ একজন লাগে।

(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)
রাজের এই গান মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে মায়া।মায়ার কাছে গানটি এমনিতেই প্রিয়।কারণ গানের কথাগুলো মায়ার সাথে মিশে আছে।মায়া নিজেও তো একা।তার জীবনেও কোনো একজন প্রয়োজন।কিন্তু সে চায় না এমন হোক।

রাজ চোখ বন্ধ করে গান গাইতে থাকে।গান গাওয়া শেষ করেও চোখ বন্ধ রেখেই নিঃশ্বাস নেয়।মায়া তাকিয়ে আছে সেদিকে।রাজ চোখ বন্ধ অবস্থায় দুষ্টু হেসে বলে,”এভাবে তাকিয়ে থেকো না মায়াবতী।দুর্বলতা তোমাকে গ্রাস করবে।এমনিতেও অজান্তে তুমিও রাজের প্রেমে ফেসেছো কিন্তু তুমি তো তুমি।আমার জিদ্দি মায়াবতী।”

মায়া চোখ সরিয়ে নেয়।বলে,”আপনার প্রতি দুর্বলতা হওয়ার মতো একটি কাজও আপনি করেননি মন্ত্রী মশাই।”

চোখ খুলে রাজ মায়ার দিকে ঝুঁকে করুন কণ্ঠে বলে,”এভাবে বলতে পারলে তুমি?গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে এক সপ্তাহের জন্য সুপার গ্লু হয়ে ঘুরছি তোমার পিছনে।গরম পানি ঢেলে ছাড়িয়ে নিচ্ছো তুমি।আবার বলছো কিছুই করিনি।”

মায়া ঠোঁটে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে রহস্য জনক লুক নিয়ে বলে,”মায়াকে সস্তা ভাবছেন আপনি।”

রাজ মায়ার চোখে চোখ রেখে বলে,”মায়াবতীকে আমি কোনো পণ্য মনে করি না।সে একমাত্র নিখুঁত ভালোবাসার উত্তরাধিকারী।কাউকে পণ্য মনে করলেই তার দামদর করা যায়।আমি তোমাকে পণ্য নই বরং আমার জীবনের ধন্য হিসেবে পেতে চাই।”

মায়া এবার কোমল চাহনি দিলো রাজের দিকে।এই রাজ তার জন্য খুন করেছে আবার এই রাজ তার জন্য কাজ বাদ দিয়েছে এই রাজ তার জন্য অনেক কিছুই করছে।যেটা কেউ করেনি।রাজের চোখে নিজের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা দেখছে মায়া।কিন্তু সে নিরুপায়।ওই বংশে যেতে চায় না সে।সে তো দূর থেকেই করতে চায় তাদের ধ্বংস।কিন্তু উপায় নেই বলেই রাজকে নিজের চাবিকাঠি হিসেবে বেঁচে নিলো।কিন্তু রাজের জন্য বানানো ফাঁদে সে নিজেও পা দিচ্ছে।এটা কিভাবে মেনে নিবে?

রাজ মায়ার এই শীতল চাহনি দেখে।এখনই মায়ার চোখ থেকে অশ্রু বর্ষণ হবে।যেটা মায়া কাউকে দেখাতে চায় না।তাই রাজ সবাইকে বলে,”বাচ্চারা চোখ বন্ধ করো।তোমাদের মন্ত্রী মশাই এখন প্রেম করবে।”

কিছুটা রসিক সুরেই বলে কথাটি।সবাই সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে।রাজ মায়ার মাথার পিছনে হাত দিয়ে মায়ার মুখ এগিয়ে নিয়ে আসে।অতঃপর মায়াকে নিজের বক্ষে লুকিয়ে রেখে বলে,”মায়াবতীর কান্না পাচ্ছে এখন।যেটা সে কাউকে দেখতে দিবে না।তাহলে আমি কি করে পারি মায়াবতীর ইচ্ছা অপূর্ণ রাখতে।কান্না করো মায়াবতী।মন খুলে কান্না করো।তোমার এই কান্না দেখবে না কেউ তোমার মন্ত্রী মশাইও দেখবে না।তোমার মন্ত্রী মশাই পূরণ করবে তার মায়াবতীর ইচ্ছা।”

রাজের কথাগুলো শুনে মায়ার চোখ থেকে সত্যি সত্যি পানি বের হয়।কিন্তু রাজের শেষ কথাতে রহস্যের আভাস পায় মায়া।রাজ পূরণ করবে তার মায়াবতীর ইচ্ছা।এই কথাটির উদ্দেশ্য কি?রাজ মায়ার মাথায় হাত দিয়ে বলে,”আমার পাঞ্জাবি ভিজিয়ে দিলে তো তোমার চোখের পানিতে।এখন যে আমার বুকে শীতল উষ্ণতার বৃদ্ধি পাচ্ছে।প্রাকৃতিক বাতাস ও মায়াবতীর চোখের পানির মিশ্রণে তৈরি এই শীতল অনুভূতি।আমার যে এবার প্রেমের আবির্ভাব বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

মায়া সাথে সাথে রাজের বুক থেকে উঠে বলে,”লু চু মন্ত্রী মশাই।”

“এই দেখো!কতশত মন্ত্রী তার বউ থুয়ে এদিক ওদিকে দৌড়ায়।তারপরও তাদেরকে কেউ লু চু বলতে পারে না। আর আমি আমার এক আসক্তি মায়াবতীর পিছনে দৌড়িয়েও শুনছি লু চু।এই দুঃখ আমি কই রাখবো!”

মায়া এবার জোরে জোরেই হেসে দেয়।রাজ তাকায় সেদিকে।অতঃপর তাকায় বাকি গার্ডদের দিকে।সবাই চোখ বন্ধ করে আছে। পিয়াশ ও মৌ তারাও চোখ বন্ধ করে আছে।এদিকে যারা মাছ পোড়াতে থাকে তারা চোখে হাত দিয়ে আছে।রাজ তাদের দিকে তাকিয়ে বলে,”এভাবে মন্ত্রীর প্রেমের জন্য অপেক্ষা করতে করতে তো মন্ত্রীর রাতের ভোজ নষ্ট করছো।মাছ তো একেবারে কয়লা হয়ে যাবে।”

রাজের কথাগুলো শ্রবণ হতেই সবাই বুঝতে পারলো মন্ত্রী মশাই এর প্রেম শেষ।এখন তারা প্রকৃতি দেখতে পারবে।সবাই চোখ খুললেও পিয়াশ খুলে না।বলে,”আপনার প্রেম করা কি শেষ বস?”

মৌ মিটিমিটি হাসতে থাকে। পিয়াশ যে রাজকে খেপাতে এটা বলেছে এই বিষয়ে রাজ ও সবাই ধারণা রাখে।পাশে থাকা কমলা লেবু হাতে নিয়ে ছুড়ে মারে পিয়াশের মাথায়।বলে,”মন্ত্রীর প্রেম নিয়ে রসিকতা করো তুমি।তোমাকে তো হানিমুন থেকে বয়কট করা উচিত।”

পিয়াশ চোখ খুলে।লেবু ছুড়ে মারাতে ব্যাথা পায় না পিয়াশ।কিন্তু রাজের এমন কথা শুনে সে হেসে দেয়।বলে,”আমাকে মধুচন্দ্রিমা করতে দিবেন না বলে বলেও মধুচন্দ্রিমায় নিয়ে এলেন।বয়কট করেও বা কি?সব তো হয়েই গেছে।”

মৌ পিয়াশকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,”ঠোঁটকাটা কথাবার্তা না বললেই কি নয়?”

রাজ বলে,”ভাবছি ঢাকায় ব্যাক করে তোমাকে আমার সাথে একমাস রাখবো।এক ছাদের নিচে তুমি আর আমি পুরো একটি মাস সংসার করবো।”

পিয়াশ মুখ ভোতা করে বলে,”আর আমার বউ?”

রাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার বউ তার বোনের কাছে থাকবে।”
মায়া ও মৌ তাকায় রাজের দিকে।রাজ স্মিত হেসে বলে,”না মানে মৌ তো একা এক বাড়িতে সেফ না।তাই ভাবলাম পিয়ু বেবী আমার সাথে সংসার করলে তার বউ তোমার সাথে সংসার করবে।”

মায়া রাজকে প্রশ্ন করে,”এভাবে ভালোবাসার দূরত্ব করিয়ে কি লাভ?”

“ভালোবাসায় দূরত্বের দরকার পড়ে মায়াবতী।এতে অ্যাট্রেকশন বাড়তে থাকে।তুমি দূর থেকে তার অনুভূতি বুঝতে না পারলে কখনই সারা জীবনের জন্য পেতে চাইবে না।একবার ভালোবেসে দূরে থেকে দেখবে।এই ভালোবাসা আর হারাতে মন চাইবে না।”

মায়া অবাক হয়ে বলে,”আপনি কি কাউকে ভালোবেসে দূরে ছিলেন?”

রাজ মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলো। যার অর্থ হ্যাঁ।মায়া এমন ইঙ্গিত দেখে অন্যরকম এক অনুভূতি পায়।তার মনে হয় কেউ তার হৃদয়ে পাথর নিক্ষেপ করছে।সে যেনো আবারও একাকিত্ব বোধ করছে এখন।মনে মনে আওড়ায়,”তাহলে কি আমি মন্ত্রী মশাইয়ের জীবনে দ্বিতীয় নারী?”

চলবে…?