#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৩৮
#ইশরাত_জাহান
🦋
ভালোবাসার ব্যাক্তি নিজের না হোক কিন্তু তার সামনে অন্যের হয়ে আছে।এই দৃশ্য দেখা বিষ পান করার সমান অনুভূতি।যেটা এখন বীরের মধ্যে চলছে।বীর বাইরে দাড়িয়ে এক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে ব্যালকনিতে দাঁড়ানো মায়া ও রাজের সংস্পর্শে থাকা দৃশ্য।যেটা সহ্য করতে পারছে না বীর।
রিনিঝিনি শব্দ ভেসে আসছে বীরের কানে।পাশে তাকিয়ে দেখলো সালোয়ার কামিজ পরে দুই হাত ভর্তি চুরি নিয়ে ওড়নার আচল গুটিয়ে দাড়িয়ে আছে জারা।ভ্রু কুচকে এলো বীরের।এই মেয়ের আবার কি হলো?সে কি করছে বুঝতে পারলো না বীর।জারা বীরের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমাকে কেমন লাগছে,হ্যান্ডসাম?”
“নাইস।”
“শুধু নাইস!আচ্ছা যাই হোক আমার সাথে ঘুরতে যাবে?”
“কোথায়?”
“শপিং মলে।হিয়া আর রুদ্র যাচ্ছে বইমেলায়।তুমি আমার সাথে থাকবে।”
“আমার সময় নেই।”
“সময় করে নিতে হয় মিস্টার।আসুন তো।”
বলেই বীরের হাত ধরে টান দেয় জারা।এই দৃশ্য চোখ থেকে এড়ালো না সোনালীর।রাগে ফেটে পড়ছে সে।এই জারা বীরের জন্য এত চেষ্টা কেনো করছে?তার তো রাজের জন্য চেষ্টা করতে হবে।কিন্তু রাজের বেলায় যত কুবুদ্ধি শিখিয়ে দেওয়া লাগতো। আর বীরের সাথে নিজে থেকেই আপন মনে চলছে জারা।
বইমেলায় এসে দুই জোড়া ব্যাক্তি দুইদিকে গেছে।একদিকে মায়া রাজ আরেকদিকে হিয়া রুদ্র।মায়া খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বই দেখতে থাকে।কখনও উপন্যাস পড়া হয়নি তার।রাজ নিজেও এসবে আগ্রহী না।শুধু হিয়া এসব পছন্দ করে।হিয়া বিভিন্ন বই নিয়ে দেখছে।তারপর কয়েকটি বই কিনে নিলো।রুদ্র হিয়ার সাথেই ছিলো।হিয়ার সহ্য হচ্ছে না রুদ্রকে।মায়া হিয়ার মুখ দেখে বুঝতে পারছে এটা।শুধুমাত্র মাহমুদ সরদারের কথাতে এরা জয়েন্ট হয়ে এসেছে।নাহলে হিয়া একাই আসে বইমেলায়।
বইমেলা থেকে বই কিনে সবাই চলে যায় বাণিজ্য মেলায়।সেখানে বীর ও জারা এসেছে।শপিং শেষ তাদের। জারাই জোর করে এনেছে বীরকে।আশেপাশে বিভিন্ন স্টল দেওয়া হয়েছে। জারা বীরের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়।বীর বিরক্ত হলেও কিছু বলে না।শুধুমাত্র রুদ্রের কাজিন সেই খাতিরে।জারা ও বীর মিলে ঢুকেছে টেডি বিয়ার এর দোকানে।বিভিন্ন ধরনের পুতুল আছে সেখানে।জারা একটি পুতুল দেখিয়ে বীরকে বলে,”এটা সুন্দর না?”
“হুম।”
“তাহলে আমাকে কিনে দেও।”
“ওকে।”
“আমাকে আরো কিছু কিনে হবে কিন্তু মিস্টার।”
“ওকে।”
“আচ্ছা এই হুম ওকে ছাড়া কিছু বলতে পারোনা।আমি একাই বক বক করে যাচ্ছি।”
বীর কোনো উত্তর দেয় না।জারা কয়েকটা পুতুল নিয়ে বীরের হাত ধরে চলে যায় অন্য স্টলে।একটা স্টলের সামনে এসে থেমে যায় জারা।ওখানে ছোট ছোট ডিজাইন করা কাঠের আয়না আছে।স্পষ্ট দেখা যায় বীর আর জারাকে।জারা সেদিকে তাকিয়ে বলে,”বীর আর জারার নামের কম্বিনেশনে কি আসে জানো?”
“কি?”
“বীরজারা।সুন্দর না নামটা?”
বীর এড়িয়ে গেলো জারার কথাটি।জারার মুখে হাসি ফুটে আছে।রাজকে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও কখনও রাজকে পেতে মন থেকে চেষ্টা করেনি জারা।যেটা বীরকে পেতে চেষ্টা করছে।জারার কাছে ভালো লাগছে বীরের আশেপাশে থাকতে।এখন তার মনে হচ্ছে রাজ তার একটা উদ্দেশ্য ছিলো কিন্তু বীর তার ভালোবাসা হয়ে গেছে।
মায়া ও রাজ এসেছে কিছু কসমেটিক্স এর স্টলে।যেখানে রাশি রাশি চুরি দেখা যাচ্ছে ভিন্ন রংয়ের কাচের চুড়ি রেশমি চুরি আছে সেখানে।রাজ কিছু চুরি নিয়ে মায়ার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলে,”আমার মায়াবতীকে সব কিছুতে মানায়।এই যে চুরিগুলো কি সুন্দর হাতের সাথে মিলিয়ে নিলে।”
মায়া হেসে দেয়।তারপর বিভিন্ন লিপস্টিক নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে লিপস্টিক ঠোঁটে দিয়ে দেখতে থাকে।কোনটাতে তাকে মানাবে এটাই দেখছে মায়া।রাজ মায়ার এমন কর্মকান্ড দেখে আশেপাশে তাকালো।আজ মন্ত্রীর বাড়ির লোকজন আসবে বলে আশপাশে গার্ড দিয়ে রাখা।কিন্তু দোকানে তো সেলসম্যান আছে।তারা তো দেখছে মায়াকে।মায়া লিপস্টিক ঠোঁটে দিয়ে ঠোঁট দুটো পাউট করে দেখতে থাকে।ইচ্ছা করেই এমন করছে সে।রাজকে জেলাস করার জন্য মায়ার এই চেষ্টা।রাজ সবার দিকে তাকিয়ে মায়ার কাছে আসে।পকেট থেকে রুমাল বের করে মায়ার ঠোঁট মুছে দেয়।পাশে দাড়িয়ে থাকা ছেলের দিকে রক্ত চোখে তাকিয়ে বলে,”আমার বউয়ের ঠোঁটের দিকে তোমার নজর আমার কাছে বিষের মতো।তোমাকে তো ভুগতে হবে ছেলে।”
বলেই স্টলে থাকা পারফিউম নিয়ে ছেলেটির চোখে ছিটিয়ে দেয়।বেচারা সেলসম্যান।সে তো অপেক্ষায় ছিলো মায়া কখন তাকে লিপস্টিক চয়েজ করে দিয়ে বলবে এটা প্যাক করুন সেই আশায়।মায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”কোনো দোষ ছাড়াই ওকে এভাবে এটাক করলেন কেনো?”
“আমার বউয়ের ঠোঁট আমার জন্য রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি।এই ঠোঁট এখন একান্তই আমার সম্পদ।যেটাতে রাজত্ব করবো একমাত্র আমি।”
“আপনি পাগল মন্ত্রী মশাই।”
“মায়াবতীর প্রেমে আমি পাগল।”
বলেই মায়াকে টান দিয়ে নিয়ে যায় অন্যদিকে।স্টলের পিছনে নিয়ে এসে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে মায়াকে।
ভ্রু কুচকে মায়া বলে,”কি হয়েছে?”
“একটু প্রেম করতে চাই বউ।”
“এহ!”
“ধুর।বউ আমার কিছু বোঝেনা।আমাকেই যা করার করতে হবে।”
বলেই রাজ তার ওষ্ঠ দিয়ে মায়ার মুখের বাকি লিপস্টিক মুছে নিলো।কিছুক্ষণ পর রাজ দূরে সরে যেয়ে বলে,”একদম লিপস্টিক দিবেনা তো।এই লিপস্টিকের রং দেখলে আক্রমণ করতে মন চায় ঠিকই কিন্তু স্বাদ খুবই বাজে।”
“আমার পাগলা বর চলুন।”
বলেই রাজের হাত ধরে ঘুরতে থাকে মায়া।
হিয়া ঘর সাজানোর জিনিস দেখতে এসেছে। লাইব্রেরীর বিভিন্ন জায়গায় ফুলদানি আর কাগজের ফুল দিয়ে সাজাবে তাই।এছাড়া দেওয়ালে কিছু স্টিকার লাগাবে।রুদ্র তার সাথে সাথেই আছে।বিরক্ত হয়ে হিয়া এবার বলে,”আমার পিছু পিছু এভাবে কেনো আসছেন রুদ্র ভাই?”
“তোকে দেখে রাখার জন্য।”
“লোকে কি ভাবছে বুঝতে পারছেন আপনি?এভাবে কাছে কাছে আসবেন না।বিরক্ত হচ্ছি আমি।”
“লোকের খাই না পড়ি?তুই চুপ করে তোর কাজ কর আর আমি আমার কাজ করছি।”
হিয়া আর কথা বাড়ায় না।এই রুদ্রকে এখন সে সহ্য করতে পারছে না।মেয়েবাজ নষ্ট পুরুষ একটা।যেখানে সেখানে মেয়েবাজী করে।তার মেয়ের অভাব থাকলে তখন হিয়ার পিছনে লেগে থাকে।এটা ভেবেই হিয়া রেগে ফেটে যাচ্ছে।মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় থাকবেই না এখানে।এখন থেকে অনেক দূরে চলে যাবে।ভার্সিটির নাম করে একটু দূরে কোথাও যাবে সে।কিন্তু এই রুদ্রর আশেপাশে থাকবে না।
অফিসের কাজ শেষ করে মাত্র বসেছে তারেক।একজন লোক এসে তারেকের হাতে টিফিন বক্স আর একটা চিঠি দিলো।তারেক হাতে নিতেই লোকটি চলে যায়।চিঠি খুলে তারেক পড়তে থাকে,
ডিয়ার ব্ল্যাক ডায়মন্ড,
কাল রাতে আমি অনেক অভিমান করেছি।জানি এই অভিমান তুমি ভাঙতে আসবে না।ইনফ্যাক্ট এই অভিমানের মূল্য তোমার কাছে শূন্য।এতে আমার আফসোস নেই।তুমি আমার অভিমান নাই ভাঙ্গালে।আমি তো তোমার টেক কেয়ার করতেই পারি।তুমি যে আমার হবু বাবুদের আব্বু হবে। কবে বিয়ে করে বাবু গিফট করবে বলোতো?অপেক্ষায় আছি আমি।সে যাই হোক এখন বাবুদের রাখি সাইডে।তোমার জন্য রাতের খাবার নিয়ে এসেছি।এখন তোমার সামনে আসছি না ইচ্ছা করে।যদিও তুমি জানো আমি কে।কিন্তু যতদিন না তুমি আমাকে একসেপ্ট করবে আমি আসবো না তোমার কাছে।রাতের খাবার খেয়ে বলবে কিন্তু কেমন হয়েছে। আর হ্যা টিফিন বাটি কাল নিতে আসবো।তাই ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে রাখবে।
ইতি
তোমার হবু বাবুদের আম্মু (মিলি)
তারেক চিঠি পড়ে কোনো রিয়েক্ট করলো না।খাবারগুলো বের করে একটু গালে দিলো।প্রথম গাল নিতেই থু মেরে ফেলে দিলো খাবার।লবণে ভরপুর।তারেক আর খেতে পারলো না।এই সব খাবার এখন ফেলে দিতে হবে।কিন্তু মেয়েটা তার জন্য কষ্ট করে রান্না করেছে।এটাই তো অনেক।
গভীর রাত সবাই ঘুমে বিভোর।রাজের বক্ষে মাথা রেখে মায়া আরাম করে শুয়ে আছে আছে।রাজ আছে গভীর নিদ্রায় কিন্তু মায়া চোখ মেলে ভাবছে কীভাবে কী করবে।হঠাৎ মায়ার কল আসে।মায়া চোখ মেলে রিসিভ করে কল।ওপাশ থেকে বীর বলে,”মিরপুরের এগারো নম্বর গলির ভিতরে তিন নম্বর বাড়ির সাত নম্বর ফ্লোরটা তোমার জন্য কতটা স্পেশাল জানেমান?”
মায়া ভয় পেলো এখন।ওখানে তো তার মা আছে।রাজের দিকে তাকিয়ে দেখে সে গভীর ঘুমে মগ্ন।ব্যালকনিতে এসে মায়া বলে,”আমার মায়ের কিছু করবেন না আপনি।”
“তুমি আমার না হলে কারো হতে পারবে না।তুমি আমার হয়ে যাও।আমি তোমাকে ও আন্টিকে নিয়ে সুখী পরিবার হবো।শুধু আমার হয়ে আসো।”
“কি করতে হবে আমাকে?”
“ড্রেসিং টেবিলের সেকেন্ড ড্রয়ারে দেখো একটি পেপার।তোমার আর রাজের ডিভোর্সের পেপার।আমি রেডি করে রেখেছি।আজকে সকালে তোমাকে ঔষধ দেওয়ার সময়ই রেখেছিলাম।ওটাতে সই করে আমার কাছে চলে আসো।”
মায়া কোনো দ্বিমত করে না।এখন তার মা তার কলিজা বিপদে আছে।তাই বীরকে বলে,”কোথায় আসতে হবে অ্যাড্রেস টেক্সট করে দিন।আমি সই করে আসছি।”
বলেই কল কেটে দেয় মায়া।রুমের ভিতরে এসে রাজের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলে।ঘুমন্ত রাজের দিকে এগিয়ে এসে বলে,”আপনাকে আমার চিরতরে পাওয়া হলোনা মন্ত্রী মশাই।তবে এই মায়া আপনার নয় তো আর কারও নয়।”
বলেই আয়নার সামনে দাড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে মায়া। ড্রয়ার খুলে ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে তাতে সই করে দেয় মায়া।হাত কাপছে তার।কিন্তু মাকে জীবিত পেতে এই কাজটা জরুরি।পেপারে সই করে একটি ছবি তুলে বীরকে পাঠালো। মেসেজে এই পিক চেয়েছিলো বীর।।মায়া আবার রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”হয়তো আমি আজ জীবিত অবস্থায় ফিরে আসবো না।হয়তোবা আমি সবার স্মৃতিতে থেকে যাবো কিন্তু আমি অন্যের হতে পারবো না।এই মায়ার সর্বস্ব জুড়ে একমাত্র শাহমীর রাজের বসবাস।এখানে তৃতীয় ব্যাক্তির স্থান আমি দেইনি আর দিবো না।জীবিত ফিরলে আবারও আপনার জন্য ফিরবো নাহলে এই মায়ার জীবনের পথ আজকেই থমকে যাবে।”
চোখের পানি মুছে বের হয়ে যায় মায়া।তারেককে কল করে আসতে বলে।মায়া বের হতেই চোখের পলক মেলে তাকিয়ে ডেভিল হাসি দেয় রাজ। শোয়া থেকে উঠে বসে দুই হাত এক করে টানটান করে অলসতাকে দূর করলো। আঙুলগুলো ফুটিয়ে মাথা দুই দিকে হেলিয়ে নেয়।তারপর বলে,”খেলা তো এখন শুরু হলো মায়াবতী।”
বলেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসে রাজ। রক্ত চোখে ডিভোর্স পেপারটা মুড়িয়ে পকেটে ঢুকিয়ে নেয়।ড্রয়ার থেকে গুলি নিয়ে পিছনের পকেটে রেখে বলে,”প্রতারকদের স্থান এই শাহমীর রাজ কখনই তার নিকটে রাখে না।সে যতই রাজের কাছের কেউ হোক বা অতি প্রিয় কেউ।তোমার এই খেলার দ্যা এন্ড হবে আজ।”
বলেই রাজ বেরিয়ে যায় মায়ার পিছনে।মায়ার লোকেশন ট্র্যাক করে রেখেছে রাজ অনেক আগে থেকেই।কারণ রাজের দৃষ্টির বাইরে যায়নি কিছুই।গাড়ি চালাতে চালাতে রাজ কল্পনা করে দুইদিন আগের কথা।
বীর যখন গান গাইতে গাইতে সবার দিকে এগিয়ে আসে মায়া তখন পিছিয়ে যেতে থাকে। আর ঠিক সেই দৃশ্য নজরে আসে রাজের।রাজ সোজা তাকিয়ে থাকলেও পাশ থেকে মায়ার পিছিয়ে যাওয়া উপলব্ধি করে।বীর হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড শেক করতে নিলে মায়ার ভিতরে ভীতু ভাব রাজের নজর এড়ায়নি।বীরের চোখে মায়ার জন্য এক আলাদা অনুভুতি বুঝতে পারে রাজ।বীর যখন কথা বলে তার চোখ থাকে মায়ার দিকে।এটা রাজ প্রতিবার লক্ষ্য করে রেখেছে।রাজ বুঝতে পারে এদের মধ্যে কোনো এক রহস্য আছে।যেটা জানতে রাজ বীরকে ছার দিয়ে রেখেছিলো। বীর সেদিন গ্যারেজের কাছে এসে মায়ার সাথে কথা বলেছিলো এটা রাজ তার ব্যালকনি থেকে দেখতে থাকে।হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে। রাজের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়।মনে চায় এখনই সে যাবে আর বীরকে ওখানেই শেষ করে দিবে।কিন্তু বীর তার মামার একমাত্র ছেলে।রাজ আর বীর একসাথে পড়াশোনা করেছে একসাথে ঘুমিয়েছে।একসাথে অনেক খুনসুটি করেছে। যার কারণে রাজ আসল সত্যটা জানতে অপেক্ষা করে।রাজ তার ঘরে সিসি ক্যামেরা সেট করে রেখেছে।বীর যে তার ঘরে আসতে পারে এটা সে শিওর।কারণ বীরের নজর মায়াকে একা পাওয়া।যেটা বীরের দৃষ্টি ভঙ্গিতে প্রকাশ পায়।সেদিন সিসি ক্যামেরার জন্য ঘরের ভিতরের দৃশ্য দেখতে থাকে রাজ।জানতে পারে অনেক কিছুই।
চলবে…?
#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৩৯
#ইশরাত_জাহান
🦋
সূর্যের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।সেই সাথে অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে বীরের।মায়াকে যে জায়গার অ্যাড্রেস দিয়েছিলো সেই জায়গাটি রাজের বাড়ি থেকে বেশ দূরে।প্রায় এক দেড় ঘণ্টা সময় লাগে।উচু নিরিবিলি পরিবেশ।আশেপাশে নেই কোনো ঘরবাড়ি।।কিছুটা দূরেই অবস্থিত একটি বড় খাদ।এখান থেকে পড়ে গেলে খুঁজে পাওয়া যাবে না কাউকে।এমন এক পরিবেশে একটি ছোট বাড়ি বানিয়েছিলো বীর।মায়াকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।ভেবেছিলো মায়া আর সে এখানে সংসার পাতাবে।এখন খাদের উপর দাড়িয়ে মায়ার জন্য অপেক্ষা করছে বীর।বাড়ির ভিতরে একটি ঘরে শুইয়ে রাখা হয়েছে শাহানা পারভীনকে।সাথে নার্সটিও আছে।এক ধেনে বসে অপেক্ষা করছে বীর।সারারাত ঘুম হয়নি তার।চোখমুখ শুকিয়ে গেছে।চোখ লাল হয়ে আছে।অপেক্ষায় আছে মায়া আসবে আর তাকে বিয়ে করবে।তার হয়ে যাবে মায়া।
বীরের অপেক্ষায় মাঝেই শো করে চলে এলো একটি গাড়ি।বীর বুঝতে পারলো কে এসেছে।মুখে তার ফুটে উঠলো বিজয়ের হাসি।আজকে সে তার জানেমানকে আপন করে পাবে।গাড়ি থেকে বের হয় মায়া।দৌড়ে আসতে থাকে বীরের দিকে।বীরের কাছে এসেই মায়া বলে,”আমার মা কোথায় মিস্টার খান?”
“রিলাক্স জানেমান।তোমার মা মানে আমার শাশুড়ি মা।ওনার কোনো ক্ষতি আমি করিনি।একদম সুস্থ আছেন উনি।চলো বিয়ে করতে হবে আমাদের।”
“আমি আগে মাকে দেখতে চাই।”
“ওকে।”
বলেই ঘরের দিকে হাটা দিলো বীর।মায়া পিছু নিলো বীরের।ঘরের ভিতর ঢুকে মায়া ওর মাকে দেখে শান্তি পেলো।বীর মায়ার হাতে একটি প্যাকেট দিয়ে বলে,”এই লাল শাড়ি পরে রেডি হও জানেমান।বিয়ের সময় হয়ে এসেছে তো।”
মায়া কোনো কথা না বলে শাড়ি নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে।সাজাতে থাকে নিজেকে।মায়ার এখন একটাই উদ্দেশ্য বীরকে ব্যাস্ত রাখা।বীর তার দিকে মগ্ন থাকলে শাহানা পারভীনকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে তারেক।
সকাল সকাল নিজেকে গোলাপী রঙের শাড়িতে সাজিয়ে তুলছে জারা।ইউটিউবে দেখে সুন্দর করে খোঁপা করেছে।সেই খোঁপায় দিয়েছে বেলি ফুলের গাজরা।এই সবকিছু কাল বীরকে পাশে রেখে কিনেছিলো সে।আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখছে আর ভাবছে পাশে বীর আছে।একটু পর বীর আসবে ব্রেকফাস্ট করতে কালকের মতো।তাই তো এখন বীরকে দেখাতে সাজতে বসেছে সে।এত সকাল করে কখনও ঘুম ভাঙ্গেনি জারার।আজ নিজে থেকে উঠেছে।বীরের প্রেমে পড়ে সে নিজেকে এতটা পরিবর্তন করেছে।এখন ভাবছে এই বীর আগে কেনো এলোনা তার জীবনে।আগে আসলে হয়তো রাজের সাথে এসব ড্রামা করতো না।নিজের আসল ভালোবাসা আগেই উপলব্ধি করতে পারতো।
“এত সকাল সকাল কার জন্য সেজেছো তুমি?ওই বীরের জন্য বুঝি?”
সোনালীর কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো জারা।ঘুরে তাকালো সোনালীর দিকে।মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,”আমাকে মানাবে তো বীরের সাথে? জানো খালামণি আমি ভেবেছি আমাদের দুজনের নামে কিন্তু বেস্ট জুটি হয়।বীর আর জারা মিলে হয় বীরজারা।শাহ রুখ খান আর প্রীতি জিন্তার মত।তাই না বলো?”
বিদ্রুপের হাসি ফুটিয়ে সোনালী বলে,”তোমার বীর তো তোমার না জারা।”
“কেনো?”
“কারণ বীর তোমাকে না মায়াকে ভালোবাসে।মায়ার হয়েই থাকতে চায় সে। আর এখন বীর কোথায় জানো?”
“কোথায়?”
“মায়াকে বিয়ে করতে গেছে।”
“কিন্তু বেইবী তো ওকে ভালোবাসে। আর মায়া নিজেও বেইবীকে ট্রু লাভ করে।তাহলে কেনো?”
“সে অনেক কথা আছে।কিন্তু আসল কথা হলো বীর মায়াকে পেতে এসেছে।শুধু তাই না এখন ওরা দুজন একসাথে। আর ওদের দুজনকে শেষ করতে কে গেছে জানো?”
“কে?”
“শাহমীর রাজ নিজে।রাজ নিজে শেষ করবে বীর আর মায়াকে।”
“হোয়াট?না না এটা হতে পারে না।আমি বীরকে ভালোবাসি।ওর জন্য আমি নিজেকে পাল্টে নিয়েছি খালামণি।আমাকে যেতে হবে।”
“কোথায় যাবে?”
“বীরের কাছে।ওর কিছু হতে দিবো না আমি।”
“পাবে কোথায় ওকে?”
“প্লিজ খালামণি বলে দেও ওরা কোথায়?”
কান্না করতে করতে বলে জারা।আজ জারার কণ্ঠে ন্যাকা কান্না নেই।বীরের জন্য সে আজ বাস্তবে কান্না করছে।সোনালী বলে দিলো অ্যাড্রেস।সাথে বলে,”তুমি দেরি করেছো জারা।তুমি যেতে যেতে বীর আর মায়া শেষ।তাই তুমি নিজের চোখের শেষ দেখা না হয় দেখেই আসলে, যাও।”
জারা কোনো কথা না বলে চোখের পানি মুছতে মুছতে দৌড় দেয় বীরের কাছে যাওয়ার জন্য।এতগুলো বছর সে কারো লাটাই হয়ে ছিলো।তাকে যেটা বুঝিয়ে দেওয়া হতো সে তাই করতো।।আজ সে বাস্তবে ফিরেছে।ভালোবাসা বুঝতে শিখেছে।রাজকে পেতে যা যা করতো ওগুলো তাকে শিখিয়ে দেওয়া হতো।কিন্তু বীরকে পেতে যা যা করা লাগে এগুলো তাকে শিখিয়ে দিতে হয় না।কোনো রকমে দৌড়ে গ্যারেজ থেকে গাড়ি নিয়ে ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালাতে থাকে জারা।মনে মনে প্রার্থনা করে,”আল্লাহ বীরের কিছু করোনা।আমি ওকে নিয়ে বহুদূরে চলে যাবো। আর কোনো অসৎ কাজ করবো না।বীর আর আমি একসাথে বীরজারা হয়ে সৎ পথে চলবো।দেখে রাখো আমার বীরকে।”
চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে জারার।তারপরও সে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে থাকে।তাকে তার বীরকে বাঁচাতে হবে।বীরকে আজ সে তার মনের কথা বলতে চায়।সে এতদিন যতই খারাপ থাকুক ভালোবাসার টানে ভালো হতে চায় সে।সে নিজেও তো এই ভালোবাসা নিয়ে ভালো পথে থাকার সুযোগ ডিজার্ভ করে।
লাল শাড়ির সাথে কিছু গহনা পরে নিলো মায়া।ছেড়ে দেওয়া চুলে কপালে একটি টিকলি গলায় একটি হার আর কানে ছোট ছোট হারের সাথে মিলিয়ে দুল। বেচ এতেই যেনো মায়াবতীর রূপ ধারণ করেছে মায়া।বাইরে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে মায়ার দিকে চোখ যায় বীরের।বীর ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে।মায়াও আজ তাকিয়ে আছে বীরের চোখের দিকে।এক পা দু পা করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বীরের দিকে এগিয়ে যায় মায়া।বীরের কাছে এসে বীরের চোখে চোখ রেখে হাস্যোজ্বল মুখ করে রাখে মায়া।
বীরের আর কি লাগে?সে তো চায় মায়া তার সামনে থাকুক।এভাবেই হাসিখুশি থাকুক। আর কিছু বীর চায় না।মায়া বলে,”কাজী কোথায় মিস্টার খান?”
বীর আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয়।অন্য এক রুমে আছে কাজী।মায়া বীরকে নিয়ে সেদিকে যায়।এটাই সুযোগ।এই সুযোগে তারেক ঢুকে পড়ে রুমে।বীরের বডিগার্ডগুলোকে স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে দিলো।তারপর তারেক আর দুই জন লোক মিলে শাহানা পারভীনকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে।মায়ার কানে ব্লুটুথ আছে।তারেক তার কাজ কমপ্লিট করেই মায়াকে বলে,”আমাদের কাজ কমপ্লিট ম্যাম।এখন আপনি আপনার অ্যাকশন শুরু করে দিন।”
মায়া ডেভিল হাসি দিলো।বীরের দিকে তাকিয়ে বলে,”বেকার কাজী ডাকা।”
বীর ভ্রু কুঁচকে বলে,”মানে?”
“বিয়ে তো হচ্ছে না।”
“মজা করোনা জানেমান।এখনই আমাদের বিয়ে হবে।তোমার আর আমার বিয়ে।নাহলে তোমার মা…”
আর কিছু বলার আগে মায়া বলে,”কোথায় আমার মা?দেখান তো।”
বীর গেলো শাহানা পারভীনকে আটকে রাখা রুমে।দেখতে পেলো না শাহানা পারভীনকে।মায়া ডেভিল হাসি ফুটিয়ে রেখেছে।বীর এবার মায়ার কাছে এসে বলে,”সে তুমি যেভাবেই আন্টিকে বাঁচিয়ে নেও।বিয়ে তোমার আমাকেই করতে হবে।”
“জোর করে কখনও ভালোবাসা যায় না। এট লিস্ট এই মায়ার সাথে কখনই না।আমি যাচ্ছি আমার মন্ত্রী মশাইয়ের কাছে।”
বলেই যেতে নেয় মায়া।হো হো করে হেসে দেয় বীর।মায়া ঘুরে তাকায় তার দিকে।বলে,”এভাবে পাগলের মতো হাসার মানে কি?”
“তোমার প্রেমে পাগল হয়েছি আমি।অ্যাকশন তো দেখাতেই হয়। যাই হোক তোমাকে আর তোমার মন্ত্রী মশাইয়ের কাছে যেতে হবে না।সে নিজেই আসছে।”
“কি বলতে চান আপনি?”
“ওহ জানেমান!তুমি জানো না তোমার ঘরে ক্যামেরা সেট করে রাখা।যেখানে তোমার দিকে নজর থাকে শাহমীর রাজের।আমার ছোট এক নাটকে তোমার আর রাজের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি শুরু আর শুধু তাই না ডিভোর্স পেপার তো আছেই।”
মায়া তাকিয়ে আছে বীরের দিকে। বীর হাসতে থাকে।হাসি থামিয়ে বীর বলে,”তোমার ঘরে বসে ওই খুনের কথাগুলো কেনো বলেছিলাম জানো?কারণ আমি ক্যামেরা দেখে ফেলেছিলাম। সো সরি জানেমান।আমি ইচ্ছা করেই এটা করেছি।ডিভোর্স পেপার তোমার পার্সোনাল ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলাম তো এই জন্যই।তোমার মন্ত্রী মশাই তোমার অর্ধ সত্যিটা জেনে তোমাকে ঘৃণা করবে আর এদিকে তুমি আন্টির জন্য বাধ্য হয়ে সই করবে আর ফিরে আসবে আমার কাছে।আজ তুমি আমার না হলেও ওই রাজের হতে পারবে না।”
কথাগুলো বলেই মায়ার দিকে এগিয়ে আসে বীর।হাঁটু গেড়ে মায়ার কাছে বসে নরম সুরে আবেদন করে,”আমার হয়ে যাও জানেমান।দেখো তোমার জন্য এই মহল বানিয়েছি।তুমি তো সাধারণ জীবন চাও।এই জীবনটা তুমি পাবে। আর ওদিকে শাস্তি পাবে মোহন সরদার।আমি নিজে তাকে শাস্তি দিবো।দেখিয়ে দিবো তার মেয়ে আর বউ কতটা সুখে আর সে সবকিছু পেয়েও আজ অসুখী।শুধু আমার হয়ে যাও।”
মায়া পিছিয়ে যায় তারপর বলে,”আমার জীবন নিয়ে নিন কিন্তু মন্ত্রী মশাই ব্যতীত অন্য কারো হতে বলবেন না।আমি পারবো না আপনার হতে।বারবার বলছি আমার থেকে দূরে থাকুন।আপনার জীবনে অন্য কাউকে আনুন। আপনিতে আমি আমার সুখ পাই না মিস্টার খান।”
মায়ার শেষ কথাটি যেনো তীরের মতো আঘাত করলো বীরের বুকে।চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি বের হলো তার।মুখে ফুটে ওঠে অসহায়ত্বের হাসি।মায়ার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,”আমার দোষটা কোথায় বলতে পারো?তোমাকে অতিরিক্ত ভালোবাসায় নাকি তোমাকে অতিরিক্ত চাওয়ায়?
“ভালোবাসা আটকে রাখা যায় না।কিন্তু চাওয়া পাওয়াগুলো আটকে রাখা যায়।এ
আপনি একতরফা ভালোবেসেছেন।যেটা আপনি হাজার চাইলেও ব্যার্থ।”
মায়ার মুখে এমন কথা শুনে বীর এবার মায়ার পা ধরে বসে পড়ে।অনুনয় করে বলে,”সারাটা জীবন আমার স্থান তোমার পায়ের নিচে রেখে দিও।তবুও আমার হয়ে থাকো।ভালোবাসতে না পারো অন্তত ভালোবাসার মানুষ হয়ে পাশে থেকে সুখ দিও।এটুকু কি চাইতে পারি না?”
“আপনি যার থেকে ভালোবাসা চান সেও যে অন্যের ভালোবাসা পেতে চায়।আপনার কাছে থাকলে আমি ভালো থাকবো না।আমার সুখ আমার ভালো থাকা আমার মন্ত্রী মশাই।আপনি না।”
“তবে এটাই কি তোমার শেষ কথা?”
“হ্যাঁ।আপনি যত চেষ্টাই করুন না কেনো।আমি আমার মন্ত্রী মশাইয়ের হয়েই থাকবো।”
“তোমার মন্ত্রী মশাইও সবসময় তোমার হয়ে থাকবে,মায়াবতী।”
পিছন থেকে রাজের কণ্ঠ শুনে ঘুরে তাকালো মায়া।রাজকে দেখে খুশি হলো মায়া।রাজ মিষ্টি হেসে তার দুই হাত দুইদিকে মেলে দিয়ে বলে,”আমার বক্ষে তোমাকে স্বাগতম,মায়াবতী।”
মায়া খুশি হয়ে দৌড় দেয় রাজের দিকে।শাড়ির কুচি উচু করে ধরে দৌড়ে যায় রাজের দিকে।রাজকে জাপটে জড়িয়ে ধরে মায়া বলে,”আমার মন্ত্রী মশাই।”
বলেই রাজের কপালে গালে মুখে ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে মায়া।মুখে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে রাজ বলে,”এভাবে আমার ইজ্জত হরণ করে দেও কেনো বলোতো?জনগন কি মেনে নিবে এমন মন্ত্রী মশাইকে।যে তার বউ দ্বারা অপহরণ হয়।”
মায়া হেসে দেয়।বলে,”জনগন মানতে বাধ্য।বর তার বউ দ্বারা অপহরণ হচ্ছে এতে জনগণের কি?আমি আমার বরকে ইচ্ছামত ভালোবাসবো।”
বীর অসহায় চোখে দেখতে থাকে রাজ ও মায়ার এই প্রেম নিবেদন।তার সহ্য ক্ষমতার বাইরে এই ভালোবাসা।সে তো মায়াকে ভালোবাসে।কিন্তু তার মায়া ভালোবাসে অন্য কাউকে।বীর অনুভব করতে থাকলো তার ভালোবাসা এক তরফা।এই ভালোবাসার কোনো মূল্য দুনিয়া তাকে দিবে না।এই পৃথিবী তার ভালোবাসাকে ব্যার্থ করে দিলো।বুকের ভিতর আলাদা ব্যাথা অনুভব করছে সে।নিজের জানেমানকে অন্য ব্যাক্তির সাথে সুখে থাকতে দেখে চোখ জ্বলে উঠছে বীরের।বীরের ঠোঁট দুটো আপনা আপনি প্রসারিত হতে থাকে।
রাজ এতক্ষণ মায়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো।এবার রক্ত চোখে তাকালো বীরের দিকে।বলে,”ভাই বলে ছার দিয়েছিলাম।কিন্তু তুই তো ভাই হওয়ার যোগ্য নেই রে।আমার বউয়ের দিকেই নজর দিতে হলো তোর?”
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে বীর বলে,”ভালোবাসা বলে কয়ে আসে না। আর কি বলতো কারো জীবনে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে আসলেও ভালোবাসাটা কিন্তু মন থেকেই থাকে।আমার ভালোবাসা অপবিত্র ছিলো না।সারা পৃথিবী এই ভালোবাসাকে অপবিত্র বললেও আমি জানি আমার মন থেকে এটা ছিলো পবিত্র।”
চলবে…?