মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-৫১+৫২+৫৩

0
8

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৫১
#ইশরাত_জাহান
🦋
সকালবেলা বীরের কবর স্থানের সামনে দাড়িয়ে আছে সরদার বাড়ির সবাই।বীরের বাবা মা কান্না করতে থাকে।মালিনী এসে শান্তনা দিচ্ছে রাজিয়াকে।মায়ার দিকে তাকিয়ে মালিনী বলে,”চিন্তা করোনা ভাবী।বীরের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তারা সবাই শাস্তি পাবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা।”

মালিনীর কথা শুনে হেসে দেয় মায়া।মায়ার নজর এখনও রাজিয়ার আঙুলের দিকে।তারেক ও মিলি আছে সেখানে।মিলি বারবার হামি দিতে থাকে।তারেক ফোন হাতে নিয়ে দেখে।তাতে লেখা,”আমি এখন আশ্রমের দিকে যাচ্ছি।সরদার বাড়ি আজ ফাঁকা দেখতে চাই।আজ থেকে খেলা শুরু।”

ম্যাসেজটি দেখে তারেক হেসে দিলো।ছোট করে মায়াকে লিখে দেয়,”ওকে, ডান।”
সবার শোক পালন করে বাসায় ফিরে আসে।মায়া চলে যায় তার আশ্রমে।রাজ আছে নিজের কাজে।

ক্লাস শেষ করে মাত্র বাইরে এসেছে সিয়া।উদ্দেশ্য তার আদ্রকে খোঁজা।সবাই বাড়ি রওনা দিয়েছে।সিয়া খুঁজতে থাকে আদ্রকে। আদ্রের সাথে করে বাসায় যাওয়ার জন্য সে প্রতিদিন আদ্রের সামনে এসে দাঁড়ায়।আজও সেভাবে দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকালো।কিন্তু আদ্রকে পেলো না।এদিক ওদিক তাকাতেই সিয়ার চোখ যায় একটি গাড়ির দিকে।সেখানে দাঁড়িয়ে আছে আদ্র ও আয়রা।সিয়া ভ্রু কুঁচকে দেখলো তাদেরকে।আয়রা এসে হাত মেলালো আদ্রের সাথে।তারপর ওরা গাড়িতে উঠে চলে যায়।সিয়ার মনে সন্দেহ বিরাজ করে।কি করতে চাইছে এরা এটা দেখার জন্য সিয়া নিজেও একটি অটো ধরে।এই কয়েকদিন আদ্রের সাথে যাওয়া আসা করার জন্য নিজের গাড়ি নিয়ে আসেনা সিয়া।তাই আজ অটো নিতে হলো তার।গাড়ি এসে দাড়ালো একটি ফ্ল্যাটের সামনে।সিয়া নিজেও এসে সেখানে দাড়ালো।আদ্র ও আয়রার পিছন নিতে থাকে।আদ্র ও আয়রা এসে ঢুকলো একটি রুমে।তারপর দুজনে কথা বলতে শুরু করে।আদ্র একটি ড্রয়ার খুলে আয়রাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বলে,”আর মাত্র কিছুদিন।তারপর আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।মোহন সরদার ও সোনালী সরদার শেষ হয়ে যাবে।”

আয়রা তাল মিলিয়ে বলে,”ইয়েস স্যার।বেচারি সোনালী কত চেষ্টা করে আমাকে মোহন সরদারের থেকে দূরে রাখার।কিন্তু আমি তাকে এখন মোহন সরদারের ঘর থেকে আলাদা রেখেছি।আপনার দেওয়া মেডিসিন মোহন সরদারকে পুষ করে মোহন সরদারকে আরো অসুস্থ করেছি।”

“খিলাড়ি হিসেবে তুমি বেস্ট।এটা আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি।এখন তোমার উদ্দেশ্য সরদার বাড়ির লকারটা।ওখানেই আছে আসল সম্পদ।যেই দুটো কাজের জন্য তোমাকে ওই বাড়িতে পাঠিয়েছি ওই কাজগুলো তুমি সফল করতে পারলেই আরো টাকা পাবে।”

“টাকার জন্যই তো আমার এতকিছু করা।আপনি চিন্তা করবেন না।আজ রাতে বাসায় কেউ থাকবে না।শাহমীর রাজ নিজেই আজ ঢাকার বাইরে থাকবেন।মাহমুদ সরদার তার গ্রামের বাড়িতে।রুদ্রকে তো আমরা আগেই ওই বাড়ি ছাড়া করিয়েছি।”
বলেই হাসতে থাকে আয়রা।এতক্ষণ আদ্র ও আয়রার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে সিয়া।আদ্র এতকিছু করেছে জেনে কান্না আসছে তার।তাড়াতাড়ি সেখান থেকে যেতে নিবে তখন দরজার সামনে থাকা ফুলদানিতে ধাক্কা খায় সিয়া।জোরে শব্দ হতেই বাইরে আসে আদ্র।সিয়াকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,”তুমি এখানে?”

রাগী চোখে সিয়া তাকালো আদ্রের দিকে।তারপর রুমের ভিতর আয়রাকে দেখে বলে,”এখানে না আসলে তো জানতেই পারতাম না আমাদের বাসায় এসবকিছুর পিছনে আপনারা আছেন।”

পকেটে হাত গুজে আদ্র বলে,”এখন জেনে গেছো।তো কি করবে তুমি?”

“এক্সপোজ করব আপনাদের।ফিরিয়ে নিয়ে আসবো রুদ্র ভাইকে।আমার বোনটা শুধু শুধু কষ্ট পেয়েছে।ও এসব ট্রমা নিতে পারেনি বলে বাইরে বাইরে ঘুরছে।এই কয়েকমাস ও বাড়ির বাইরে।শুধুমাত্র আপনাদের জন্য।ঘৃণা হচ্ছে আপনাকে।”

বলেই সিয়া বেড় হতে নিলে আদ্র সিয়ার হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসে।সিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগে সিয়ার শরীরে পিছন থেকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেয় আয়রা।সিয়া সাথে সাথেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে।আদ্র সিয়াকে কোলে করে নিয়ে বলে,”আমি ওকে আমার সিক্রেট হাউজে যাচ্ছি।তুমি আজ তোমার কাজটি ঠিকভাবে করো।”

“ওকে স্যার।”
বলেই আয়রা চলে যায় সরদার বাড়ির দিকে। সিয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে সিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আদ্র বলে,”আমার জীবনের দুইটা উদ্দেশ্য।এক তোমাকে পাওয়া আর দুই নাম্বার আমি সফল না করলেও তোমার ভাবী করবে।”
বলেই সিয়ার কপালে হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দেয় আদ্র।ড্রাইভ করতে থাকে নিজের বাড়ির দিকে।

আজ সরদার বাড়ি পুরো নিস্তব্দ।রাজ ঢাকার বাইরে গেছে।মাহমুদ সরদার গ্রামে গেছেন বাবার কবর জিয়ারত করতে।সোনালী তার মতো ঘরে আছে আর মোহন সরদার নিজেই অচল।মালিনী বসে আছে নিজের রুমে।ফোনে বিভান ও রাজিয়ার সাথে কিছু কাজ করছিলেন।ওরা ওদের বাড়িতে আছে।হঠাৎ রুমের লাইট বন্ধ হয়ে যায়।মালিনী ফোনের লাইট অন করতেই সামনে দেখতে পায় মায়াকে।মায়ার মুখে ভয়ংকর হাসি।দেখে একটু ঘাবড়ে যায় মালিনী।মায়া ধীরে ধীরে মালিনীর দিকে এগোতে এগোতে বলে,”ভয় পাচ্ছেন কেনো শাশু মা?”

মালিনী এতক্ষন পিছিয়ে যেতে থাকে।মায়ার মুখে এমন কথা শুনে পা থেমে যায়।নিজেকে একটু শক্ত রেখে বলে,”আমি ভয় পাচ্ছি না।এভাবে অন্ধকারে হুট করে আমার রুমে এসেছো কেনো?”

“বা রে শাশু মা আর বৌমার কি কোনো কথা থাকতে পারে না?”

“তোমার সাথে কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই।”

“কিন্তু আমার যে আছে।এই মায়ার যে অনেক ইচ্ছা।আর সেই ইচ্ছা মায়া নিজে পূরণ করে।”

বলেই মায়া মালিনীর চারপাশে ঘুরতে থাকে।মালিনী বিরক্ত বোধ করে বলে,”কি বলতে চাও বলো?”

মায়ার সোজা প্রশ্ন,”আমার মাকে মারতে চাওয়ার কারণ?”

মালিনী ভ্রু কুঁচকে নেয়।বলে ওঠে,”তোমার মাকে কোথায় মারলাম।সে তো তোমার বাসায় দিব্যি আছে।”

আলতো হাসে মায়া।মালিনী যে হাসির কথা বলছে এটা মায়া বুঝতে পারে।হো হো করে হেসে দেয় মায়া।হাসতে থাকে অনেক।মায়ার এই হাসি ভয়ানক কিছু প্রকাশ করছে।মালিনী নিজেই এবার ঘামতে থাকে।মায়া এবার রক্তচক্ষু করে বলে,”আমার আসল পরিচয় আপনি জানেন।আর তাই তো আপনার ভাই ভাবীকে এখানে ডেকেছেন।আমার বিনাশ করতে।কিন্তু শাশু মা আপনি তো এটা পারবেন না।এই মায়া তার ইচ্ছার বাইরে কিছু হতে দেয় না।”

বলেই ফুলদানি নিয়ে সোজা মালিনীর মাথায় আঘাত করে।ব্যালেন্স হারা হয়ে যায় মালিনীর।মালিনী পরে যায় নিচে।উঠে দাঁড়ানোর পর যেই মায়াকে অ্যাটাক করবে ঠিক তখন মায়া মালিনীর হাত ধরে মুচড়িয়ে বলে,”আমার মাকে খুন করার প্ল্যান মিসেস সোনালীর এই বাড়িতে এন্ট্রি এই সবকিছুতে আপনার হাত আছে এটা আমি খুব ভালো ভাবেই জানি।এখন আপনাকে এর জন্য ভুগতে হবে।আমার মায়ের জায়গায় আমি আপনাকেও পৌঁছে দিতে চাই শাশু মা।”

বলেই মালিনীকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে তার পায়ে হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে মায়া।মালিনী চিল্লিয়ে ওঠে।কিন্তু কেউ আসে না।আসার উপায় নেই।সোনালী ও মোহন সরদারের খাবারে ঘুমের ঔষধ মেশানো ছিলো।মিলি আজ তারেকের সাথে তার বাসায়।কেউ আসবে না মালিনীকে বাঁচাতে। মালিনীর মুখে বালিশ চাপা দিতে থাকে মায়া।মালিনী ছটফট করতে থাকে।এক সময় অজ্ঞান হয়ে যায় মালিনী।মালিনীর পালস চেক করলো মায়া।এখনও জীবিত।হালকা হেসে জোরে ডাক দিলো আয়রাকে।বলে,”ভিতরে আসো।”

আয়রা ভিতরে আসতেই মায়া বলে,”ওনাকে এমন ট্রিটমেন্ট দেও যাতে মোহন সরদারের থেকেও করুন অবস্থা হয়।”

মায়ার আদেশ পেয়ে মালিনীকে নিয়ে যেতে থাকে আয়রা। হল রুমের কাছে আসতেই গ্লাস ভাঙার আওয়াজ পায় মায়া ও আয়রা।মায়া সামনে তাকিয়ে দেখতে পায় হিয়াকে। হিয়ার হাত পা কাপছে।আজকেই ফিরেছে সে।মনটা পরিবারের জন্য ছটফট করতে থাকে।বাড়িতে এসেই দেখতে পায় তার মাকে নিয়ে আয়রা ও মায়া এসব করছে।হিয়া ছুটে আসে মালিনীর দিকে।মালিনীকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে হিয়া।বারবার বলতে থাকে,”আমার মাকে ছেড়ে দেও।আমার মা কি করেছে?”

হিয়াকে সরিয়ে দেয় মায়া।তারপর বলে,”কি করেনি তোমার মা?ওই বীরকে দেশে এনেছিলো তোমার মা।আমার আর মন্ত্রী মশাইকে আলাদা করতে পাঁয়তারা করেছিলো তোমার মা।আমার জীবন নষ্ট করতে চায় তোমার মা।আমি কি ছেড়ে দিবো?কাউকে ছাড়বো না আমি।সব কয়টাকে শেষ করে দিবো।আমার আর আমার মন্ত্রী মশাইয়ের জীবনে যে যে আসবে সবাইকে শেষ করে দিবো।দূরে সরে যাও তুমি।”

হিয়া এবার চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”পাগল হয়ে গেছো তুমি।তুমি একটা সাইকো উন্মাদ।আমার মাকে মারতে চাও তুমি।আমি তোমার কথা পুরো পরিবারকে জানিয়ে দিবো।”

“সেই সুযোগ তুমি পাবে না।”
মায়ার এই কথার মধ্যেই আয়রা পিছন থেকে হিয়াকে একটি ইনজেকশন পুষ করে দেয়।সাথে সাথে হিয়া অজ্ঞান হয়ে যায়।হিয়াকে ধরে নেয় মায়া।আয়রাকে বলে,”তুমি ওনাকে নিয়ে যাও আমি হিয়াকে দেখছি।”

আয়রা চলে যায় নিজের মতো।হিয়াকে নিয়ে মায়া চলে যায় তার ফ্যাক্টরির সিক্রেট রুমে।হিয়াকে এখানে লুকিয়ে রাখতে হবে আপাতত।হিয়াকে বেধে রাখার পর মায়া ঘুরে তাকালো অন্য চেয়ারে।যেখানে বেধে রাখা আছে সেই যুবকটি যাকে মায়া আটকে রেখেছিলো আর কারেন্টের শক দিতে থাকে।মায়া এসে ছেলেটির সামনে ঝুঁকে বলে,”তোকে আমি বারবার বলতে বলেছিলাম কে করতে চেয়েছে আমার মাকে খুন।কিন্তু তুই বলিসনি।এতদিন তোকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম আমার এই উদ্দেশ্য সফল করতে।কিন্তু আজ আমার কাজ হয়ে গেছে।এখন তোকে মরতে হবে।তোকে বাঁচিয়ে রাখা মানে তো আমার মায়ের খুনিগুলোকে রেহাই দেওয়া।এটা এই মায়া কিছুতেই করবে না।”

বলেই পকেট থেকে গুলি বেড় করে শুট করে দেয়।জোরে জোরে তিন চারটা শুট করার ফলে চারপাশে শব্দ হতে থাকে।ফাঁকা রুমে শব্দ বেশি হয়।শব্দের বেগ বৃদ্ধি পেয়ে কর্ণপাত হয় হিয়ার।জ্ঞান ফিরে আসে তার।অন্য চেয়ারে লাশ দেখে হাত পা কাপছে হিয়ার।জোরে চিৎকার করে ওঠে।বলে,”এভাবে আর কত?তুমি একজন খুনি।আমার ভাই তোমাকে ছাড়বে না।আমার মাকে মেরেছো তুমি।ভাইয়া জানতে পারলে তোমাকে শেষ করে দিবে।”

মায়া চোখ বড় বড় করে তাকালো হিয়ার দিকে।হালকা হেসে বলে,”কে জানাবে তোমার ভাইকে?এমন কেউ তো নেই যে জানবে আর জানাবে।তুমিও তো আমার কাছে বন্দী। জানো তো হিয়া।এই সিক্রেট রুমটার ব্যাপারে কেউ জানে না।এখানে আসার রাস্তাও কেউ বেড় করতে পারবে না।কারণ এটা তো মায়ার চাল।এই মায়ার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চললে তার জীবন দ্যা ইন্ড হয়ে যাবে।মাইন্ড ইট।”

বলেই হিয়ার মুখে টেপ লাগিয়ে চলে যায় মায়া।বাইরে আসতেই দেখে তারেক ও তার গার্ড।তারেককে দেখ মায়া বলে,”নতুন বিয়ে করেছ।বউকে রেখে এভাবে বাইরে আসা কি ঠিক?”

“বউকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে এসেছি।এখন আপনার মিশনে আপনার সঙ্গ দেওয়া আমার দায়িত্ত্ব।”

মায়া আলতো হেসে গাড়ির দিকে যেতে থাকে।গাড়ির দরজা খুলে মায়া বলে,”লাশটা কবর দিয়ে রুমটা পরিষ্কার করো।হিয়ার আবার ডাস্ট এলার্জি আছে।ও অনেস্ট।ওকে শাস্তি দিতে চাই না।ওই রুমের পরিবেশটা বদলে দেও।যে কয়দিন আমি আমার মিশনে থাকবো সে কয়দিন ওকে এখানে আটকে থাকতে হবে।ওর কোনো কিছুতে কমতি রাখবে না।কিন্তু ওকে বুঝতে দিবে না আমরা ওর ক্ষতি করব না।”

তারেক মাথা নাড়ালো।মায়া তারেকের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।কিন্তু আমার জীবনের উদ্দেশ্য যে আমার মা দাদুর হত্যাকারীদের শাস্তি দেওয়া।আমার থেকে আমার মন্ত্রী মশাইকে কেড়ে নিতে এখন অনেকে উঠে পড়ে লাগবে।এটা যে আমি হতে দিতে পারি না।”

তারেক মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”বোনের সুখের জন্য ভাই সর্বদা আছে।এগুলো কষ্ট না।বোন যদি কষ্টে থাকে ভাই কিভাবে সুখী জীবন পায়?আমার আসল গার্জিয়ান তো আপনি।”

মায়া ঠোঁট প্রসারিত করে গাড়িতে উঠে পড়ে।চলে যায় সেখান থেকে।অন্ধকার রাস্তায় একা গাড়ি চালাতে থাকে।চারপাশ অন্ধকার আর সে একা।জানালা হালকা খুলে রাখা।বাইরে থেকে প্রাকৃতিক বাতাস আসতে থাকে।মায়ার গাড়িতেও এসি আছে।কিন্তু এই এসির বাতাস মায়ার কাছে ভালো লাগে না।সে প্রাকৃতিক বাতাস উপভোগ করতে ভালোবাসে।ড্রাইভ করতে করতে এদিক ওদিক দেখছে মায়া।গাড়ির গতির সাথে সাথে দুইপাশে থাকা বড় বড় গাছগুলো কেমন যেনো দৌড় দিতে থাকে।এমনটাই ছোট থেকে উপলব্ধি করে এসেছে মায়া।গাড়ি চালানোর মাঝে মায়ার ফোন জ্বলে ওঠে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে রাজের ম্যাসেজ।রাজ লিখেছে,”মন্ত্রী মিস তার বউ।”

উল্টা পাল্টা লেখা দেখে হেসে দেয় মায়া।রাজ আবার লিখে,”একদম হাসবে না।আমি আমার বউকে মিস করছি।এদিকে আমার বউ আমার কল ধরেই না।একবার তোমার কাছে আসি পুরো চব্বিশ ঘণ্টা ঘরের মধ্যে আটকে রেখে আমার কষ্ট উশুল করে নিবো।সবশেষে বাথরুম বিলাস তো আছেই।”

মায়া হেসে দেয় জোরে জোরে।তারপর কিছু লাভ স্টিকার পাঠিয়ে দেয়।তারপর লিখে দেয়,”ঘুমাও মন্ত্রী মশাই।কালকেই তো আসবে।দেখা হবে তখন।”

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৫২
#ইশরাত_জাহান
🦋
শাহানা পারভীনের পাশে এসে বসে মায়া।আজকের রাত মায়া এখানে কাটাবে।মন্ত্রী মশাই না থাকার কারণে মায়া তার মাকে সময় দিতে চেয়েছে।এমনিতে প্রতিদিন সময় করে এখানে আসে।শাহানা পারভীনের হাত ধরে মায়া বলে,”জানো মা তোমাকে যারা যারা মারতে চেয়েছিলো আমি তাদের খুঁজে বেড় করেছি।এক এক করে সবাইকে আমি শাস্তি দিবো।নিজের হাতে খুন করব ওই লোকগুলোকে।দাদুকে যারা খুন করেছে অসহায় মেয়েদেরকে যারা নিজেদের স্বার্থে ব্যাবহার করেছে সবাই শাস্তি পাবে।শুধু তুমি একটু রেসপন্স করো মা।প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয় কাল সকালে তোমাকে সুস্থ পাবো।আবার ঘুম থেকে উঠেই মনে হয় এখনই হয়তো ফোন আসবে তুমি রেসপন্স করেছো।ও মা!তোমার কিসের এত চিন্তা?আমার কথায় একটু রেসপন্স করো।আমাকে তোমার বুকে আগলে নেও।আমি যে তোমার ভালোবাসা খুব মিস করি।আমার দুনিয়া যে তুমি আর আমার মন্ত্রী মশাই।”

বলতে বলতেই মায়ার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ে।শাহানা পারভীনের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে পড়ে মায়ার।কত সুন্দর দিন ছিলো তাদের।সব শেষ হয়ে যায় শুধু মাত্র সোনালীর আগমনে।শুধু তো সোনালী দায়ী না।ওই মোহন সরদারও নারী লোভী ছিলো।সরদার বাড়ি থেকে আসার পরও সুখে ছিলো সবাই।তাহলে কেনো এই দুর্ঘটনা হতে হলো।শাহানা পারভীনকে কেউ মারতে না চাইলে মায়া আজ এই হিংস্র হতো না।মোহন সরদার সহ আরো সকলের বিনাস চাইতো না মায়া।

সকাল বেলা,
চোখ পিটপিট করে তাকায় সিয়া।চোখ মেলতেই দেখতে পায় সামনে বসে আছে আদ্র।এক লাফ দিয়ে উঠে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে সে।খাটের অন্য প্রান্তে পিছিয়ে যায়।আদ্র সিয়ার এক হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে আনে।সিয়ার কপালে কপাল রেখে বলে,”ভয় করছে কি?”

আদ্রর কপালে মাথা রাখা অবস্থায় আদ্রর চোখের দিকে তাকালো সিয়া।কোনো কথা না বলে চুপ করে আছে।আদ্র বলে ওঠে,”এত ভয় পেলে চলবে!তুমি না মন্ত্রীর বোন হও এত নরম মনের কেনো?আবার সপ্ন দেখো অর্থোপেডিক ডক্টর হবে।”

আদ্রর কথার সাথে তার মুখের গরম নিঃশ্বাস বেড় হতে থাকে।এই নিঃশ্বাস সিয়ার চোখ মুখ ছুঁয়ে নিতে থাকে।সিয়া চোখ বন্ধ করে নেয়।চোখ বন্ধ করা সিয়ার চোখদুটো দেখে আদ্র নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।টুক করে সিয়ার দুই চোখে আলতো চুমু খেয়ে নেয় আদ্র।কেপে ওঠে সিয়া।সিয়ার হাত এখনও ধরে আছে আদ্র।সেই হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে সিয়া।হালকা হেসে আদ্র বলে,”ভয় নেই বেশি কিছু করব না।যা হবে বিয়ের পর।”

বলেই উঠে দাড়ায় আদ্র।একটি প্যাকেট সিয়ার সামনে দিয়ে বলে,”এটা পড়ে নেও।সারাদিন অনেক ঘুমিয়েছো।অবশ্য আমিও তোমাকে বিরক্ত করিনি।এখন জামা কাপড় পাল্টে কিছু খেয়ে নিবে।”

বিছানা থেকে নেমে সিয়া বলে,”আমি এত কিছু চাই না।শুধু বাড়িতে যেতে পারলেই হবে।আপনার মুখও দর্শন করব না।”

আদ্র এক পা এক পা করে এগিয়ে আসতে নেয়।এটা দেখে সিয়া নিজেও পিছিয়ে যেতে থাকে।এভাবে করতে করতে দেয়ালের সাথে সিয়ার পিঠ আটকে গেলে আদ্র নিজেও সেখানে দাড়িয়ে যায়।পকেটে হাত রেখে বলে,”এটুকু মেয়ের এত তেজ?এত তেজ যে ভালো না।চুপচাপ যেটা বলছি ওটা করো।নাহলে কিন্তু আমার মাথা গরম হলে খবর হয়ে যাবে।”

সিয়া এবার ধাক্কা দিলো অদ্রকে। ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে,”কি করবেন আপনি?”

বেশিক্ষণ ধাক্কাতে পারলো না সিয়া।আদ্রর পকেট থেকে একটি গুলি পড়ে যায়।যেটা দেখে সিয়া স্তব্দ হয়ে আছে।ভয় পেতে থাকে সিয়া।আদ্র বুঝলো এখন তার মেডিসিন হিসেবে এই গুলি কাজে লাগবে।তাই গুলিটি হাতে নিয়ে বলে,”দেখতে চাও কি করতে পারি?”

আর কোনো কিছু বলা লাগলো না অদ্রকে।লক্ষ্মী মেয়ের মতো দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় সিয়া।এ যেনো এক ভদ্র মেয়ে।আদ্র হেসে দেয় সিয়ার এমন কাণ্ডে।

বাসায় আসতেই রাজ খবর পেলো মালিনী হসপিটালে ভর্তি।সপরিবারে চলে গেলো হসপিটালে।মায়াও আছে রাজের সাথে।ঘুম থেকে উঠেই খবর পেয়ে চলে আসে হসপিটালে।সোনালী খবর দিয়েছে রাজকে।হসপিটালে এসে আয়রাকে খুঁজতে থাকে মায়া।কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।আয়রার নাম্বারে অনেকবার ডায়াল করতে থাকে।সুইচ অফ আয়রার।এবার মায়ার চোখ গেলো সোনালী দিকে।হাসছে মায়াকে দেখে।মাহমুদ সরদার এসে জিজ্ঞাসা করেন,”কিভাবে হলো এসব?”

সোনালী মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনার গুণধর বউমা করেছে এসব। বড় আপাকে কাল নির্মমভাবে মেরেছে এই মেয়ে আর ওই নার্স মিলে।”

সোনালীর দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”কোনো প্রমাণ আছে আপনার কাছে?”

বিভান এবার বলে ওঠে,”প্রমাণ তো আমার বোন নিজে।ভাগ্যিস রাতের বেলা আমি তোমাদের বাসায় আসতে নেই।ওর সাথে কথা বলছিলাম ফোনে।হঠাৎ কন্টাক্ট কফ হওয়ায় সন্দেহ হয়।বাসায় আসার সময় দেখে ফেলি ওই আয়রা মেয়েটিকে।পুলিশের আওতায় আছে মেয়েটি।ওই বলেছে তুমি ওকে নিয়ে এসেছ এই বাড়িতে মালিনীর ক্ষতি করতে।”

চোখ বন্ধ করে নিলো মায়া।ধরা পড়েছে সে।কিছুক্ষণ পর রাজের মুখের দিকে তাকালো।রাজের চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে।মায়ার এক বাহু ধরে প্রশ্ন করে,”তোমার জন্যই কি আমার মায়ের এই অবস্থা?”

মায়া নিশ্চুপ।মিথ্যা সে বলতে পারবে না এই চোখের দিকে তাকিয়ে।মায়াকে কিছু বলতে না দেখে রাজ বুঝে নেয়।মায়াকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”তোমার থেকে এটা আশা করিনি আমি মায়াবতী।আমার মাকে কিছু করতে বলেছিলাম না তোমাকে।তুমি কথা দিয়েছিলে আমাকে কিছু করবে না আমার মায়ের।”

“আমার কথা শুনো..”

আর কিছু বলার আগে মায়াকে দূরে সরিয়ে দেয় রাজ।বলে ওঠে,”আর কি শুনবো। একের পর এক গোপনীয়তা রেখেছো তুমি।প্রথমে বীর এখন মা।আর কি কি শুনতে বলো তুমি?আমি সবসময় বলে এসেছি পূর্ণ করব আমার মায়াবতীর ইচ্ছা।কিন্তু না।এখন থেকে আমি অপূর্ণ রাখবো মায়াবতীর ইচ্ছা।তোমার ইচ্ছা এখন পূরণ হবে না।আমার থেকে আমার আপনজনদের কেড়ে নেওয়া ব্যাক্তিকে আমি ছেড়ে দিবো না।শাস্তি তো পেতে হবেই।”

বলেই বেড় হয়ে যায় রাজ।নিজের গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে থাকে।মায়া দৌড়াতে থাকে রাজের গাড়ির পিছনে।কিন্তু না লাভ হয়না।রাজ ততক্ষণে চলে যায়।মাহমুদ সরদার নিরব দর্শক হয়ে আছেন আজ।মালিনীকে ভালো না বাসলেও মালিনী তো তার বউ।বউ হিসেবে মনের মধ্যে আলাদা জায়গা গড়ে ওঠে মালিনীর জন্য।সিয়া ও হিয়ার মা সে।রাজের সেবা যত্ন ত্রুটি থাকলেও পরিবারের জন্য একেবারে খারাপ ছিল না।অন্তত রাজ তো তাকে নিয়ে কোনো দাবিদার রাখেনি।সবাই ভালো ছিলো।এখন সিয়া ও হিয়ার কাছে কি বলবে বুঝতে পারছেন না তিনি। মাটিতে হাটু গেড়ে বসে কান্না করছে মায়া।সোনালী এসে দাড়ালো মায়ার পাশে।খোঁচা দিয়ে বলে,”পারলে না তো বরকে আটকে রাখতে!কি বলো তো যে খেলার মাস্টার মাইন্ড আমি বিগত বিশ বছর ধরে সেই খেলা তুমি দুদিনের মেয়ে হয়ে জিতে নিবে এটা তো হতে পারে না।তারপরও তোমাকে আমি রাজের জীবনে ফেরত আনতে পারি।শুধু একটা জিনিষ আমাকে বলে দেও।”

মায়া তাকালো সোনালীর দিকে।বলে,”কি বলব?”

“লকারের পাসওয়ার্ড।যেটা তোমার দাদু তোমাকে আর তোমার আগের শাশুড়ি মানে রোহিণীকে বলে রেখেছিলো।ওই পাসওয়ার্ড দিয়ে দেও বাকিটা আমরা বেড় করে নিব।”

অবাক হয়ে তাকালো মায়া।সোনালী শয়তানি হেসে বলে,”কি করে জানলাম তোমার আসল পরিচয়?আসলে একটু কারেকশন করে দেই।তোমার সম্পর্কে আমাদের এমন একজন ইনফরমেশন করেছে যে তোমার অতি কাছের।তার নিজেরও স্বার্থ জড়িয়ে আছে এখানে।সেও সপ্ন দেখছে বিলিয়নার হওয়ার।”

“কে সে?”

“ওহ হো তুমি না আসলেই বোকা।নাহলে প্রশ্ন করতে কে সে?আরে তুমি জিজ্ঞাসা করবে আর আমি বলে দিবো এমনটা হয় নাকি?”

মায়া তেড়ে আসতে নেয় সোনালীর দিকে।মায়ার দিকে হাত দিয়ে থামিয়ে সোনালী বলে,”তুমি আমার কিছু করবে না।আমি জানি এটা।যদি করতে তো প্রথম দিন করতে।যেদিন জানতে পারো রিমুর কিডন্যাপ আমিই করিয়েছি।তোমার যে আমাকে চাই।কারণ আমার কাছে আছে সরদার বাড়ির ব্যাবসার চাবিকাঠি।যেটাতে রয়েছে তোমার দাদুর আর তোমার মায়ের সপ্ন।কি ভাবো তুমি আমি জানি না?তুমি এই বাড়িতে শুধু তোমার মন্ত্রী মশাইয়ের জন্য না পুরো ব্যাবসা নিজের করতে এসেছো।যেটা নিয়ে তোমার মায়ের সপ্ন।তোমার মাকে তো শেষ করাই হয়েছে এখন তুমি এসেছো।মা মেয়ের কি মরতে খুব ইচ্ছা করে বলো তো?যাই হোক তোমাকে এতদিন অনেক খুঁজেছি।পড়ে কোনো এক ভাবে তোমার পরিচয় জানতে পেরে আমি শান্তিতে কাটিয়েছি।পাসওয়ার্ড বলে দেও দেখবে সুখে থাকবে।”

“যদি না বলি?”

“তাহলে আজকে একটা ডেমো দেখবে।তোমার কাছের মানুষ যাকে তুমি করো ভরসা সেই তোমার জীবন থেকে কেড়ে নিবে একেক করে সবাইকে।”

“আমার কাছের মানুষ মানে?”

সোনালী আর কিছু বলতে যাবে তার আগে মায়ার ফোনে কল আসে।মায়া রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে হাসি বলে,”আ আমি জেনে গেছি কে কে তোমার মা ও দাদুকে খুন করতে চায়।”

মায়া একটু অবাক হয়ে বলে,”তুমি এভাবে তোতলাচ্ছো কেনো হাসি?”

“আমাকে ওরা শুট করেছে।একেক করে তোমার কাছের সবাইকে শেষ করে দিবে।অনেক কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে।শুধু এটুকুই বলব হুট করে কারো কথা বিশ্বাস করো না।প্রমাণ আমি রেখে গেছি।একটি ভিডিও ক্লিপ আছে আমার ঘরে।ওটা দেখো।”

হাসিকে শুট করেছে শুনেই দৌড়ে নিজের গাড়ির দিকে উঠে পড়ে মায়া।হাসিকে বলে,”হাসি তুমি অন্য গার্ডকে ডাকো নি কেনো?”

হাসি কোনো কথা বলছে না।ফোনের ওপাশ থেকে শুধু পায়ের শব্দ আসছে।কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ পেলো মায়া।গাড়ির স্প্রিড বাড়িয়ে দিলো।বাড়ির সামনে এসে মায়া দৌড়ে হাসির ঘরে এসে দেখে হাসির চোখদুটো বড় বড় হয়ে মেলে আছে।পেট গড়িয়ে পড়ে তাজা রক্ত।দৌড়ে এসে হাসির মাথা নিজের হাঁটুতে রেখে মায়া বলে,”হাসি কি হয়েছে তোমার?কে করেছে তোমার এই অবস্থা?ও হাসি,হাসি মা কথা বলো।তোমার মায়াবতী মা এসেছে।কিছু হবে না কথা বলো।”

হাসির কোনো সারা শব্দ নেই।মায়া পালস চেক করে দেখে হাসি আর জীবিত নেই।বাড়ি কাঁপিয়ে চিৎকার করে ওঠে মায়া।বলে ওঠে,”তুমি ছিলে আমার দ্বিতীয় মা আমার হাসি মা।এখন আমি কিভাবে আমার মায়ের শূন্যতা পূর্ণ করব?আমার আরেক মা যে তুমি ছিলে হাসি মা।ও হাসি মা ওঠো না।তুমি তো বলেছিলে মা সুস্থ হলে আমরা অনেক মজা করব।তুমি নাকি আমার মাকে খেপাতে থাকবে যে তুমি আমাকে মায়ের থেকেও বেশি যত্ন করেছো।কোথায় গেলো এখন সেই কথা?চোখ মেলো হাসি মা।”

বলেই কান্না করে দেয় মায়া।মায়ার কান্নার মাঝেই সেখানে দৌড়ে আসে মিহির।মায়ার কাছে এসেই হাসির মুখ দেখ পুরোপুরি চুপ হয়ে যায়।হাসির দিকে তাকিয়ে মিহির যেনো থমকে গেছে।কিছু না বলে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।মায়া তাকালো মিহিরের দিকে।মিহিরকে দেখে মায়া বলে ওঠে,”হাসি মা আর নেই মিহির ভাই।কে খুন করতে পারে হাসি মাকে?”

মিহির কোনো কথা না বলে হাসির এক হাত ধরে।মৃত মানুষের হাত শক্ত হয়ে আছে।মিহির চোখের পানি ফেলতে থাকে।মায়া এদিকে ওদিক তাকালো।কিছুটা দূরে হাসির শরীরের রক্ত দেখা গেলো।ঠিক তার পাশেই একটি ঘড়ি।হাসিকে ছেড়ে মায়া ঘড়ির কাছে আসতেই অবাক হলো মায়া।ঘড়িটি হাতে নিয়ে মায়া বলে,”মন্ত্রী মশাই!ও এখানে এসেছিলো?”

মায়ার কথাগুলো কানে আসলো মিহিরের।চোখের পানি মুছে মিহির বলে,”শাহমীর রাজ এখানে কেনো এসেছিলো?”

“জানি না তবে ওর ঘড়ি এটা আমি শিওর।এই ঘড়ি আমি ওকে গিফট করেছিলাম।আমার স্পষ্ট মনে আছে।”

মিহির এবার মায়ার কাছে এসে বলে,”তারমানে ওই আমার মাকে মেরেছে। খুন করেছে আমার মাকে।তোমার মন্ত্রী মশাই আমার মায়ের খুনী।”

মায়ার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়।মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,”কিন্তু এতে লাভ কি?হাসির খুন করে কি হবে ওর।ও তো বলে..”

বলতে না বলতেই মায়ার মনে পড়ে রাজের বলা কথাগুলো।রাজ বলেছিলো মায়ার পূর্ণতাকে অপূর্ণ করে দিবে আবার সোনালী বলেছিলো এমন ব্যাক্তি মায়ার পতন চায় যে মায়ার খুব কাছের।মায়া চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে রাজকে।এটাই তো দুইয়ে দুইয়ে চার হয়।আর তার থেকেও বড় কথা হাসিকে মারতে রাজ এখানে না আসলে রাজের ঘড়ি এখানে আসতো না।এর মধ্যে মায়ার ফোনে কল আসে।নার্স কল করেছে।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে,”আপনার মাকে ওরা নিয়ে গেছে ম্যাম।আমি আটকাতে পারিনি।”

কল কেটে দিলো মায়া।চোখের মধ্যে পানি জমাট বেঁধেছে।চোখের পাতাগুলো বুঝতেই পানিগুলো গড়গড় করে পড়তে থাকে।কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে চোখের পানি মুছে মায়া বলে,”আমি তোমাকে ছাড়বো না।এতদিন এই মেহেরুন জাহান মায়ার মায়াবতী রূপ ছিলো তোমার জন্য।এখন এই মায়ার রক্তবতী রূপ তোমার জন্য শুধুমাত্র তোমার জন্য।”

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৫৩
#ইশরাত_জাহান
🦋
হাসিকে কবর দেওয়া হলো মাত্র।মায়া শাহানা পারভীনকে খুঁজতে লোক পাঠিয়েছে।মিহির চুপ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ।মায়ার দিকে ফিরে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমার মায়ের মৃত্যুর বদলা আমি চাই।এটা তুমি করবে কি না আমি জানি না।তুমি না পারলে আমি নিবো।”

মায়ার চোখ লাল হয়ে আছে।কিছু একটা ভেবে বলে ওঠে,”চলো মিহির ভাই।হাসি মায়ের খুনিকে শেষ করে দিবো।”

বলেই উঠে দাড়ায় মায়া।একটি কালো ব্লেজার সাথে গুলি নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটতে থাকে।মিহির আসে মায়ার পিছনে।গাড়িতে উঠে বসতেই মায়া ড্রাইভিং শুরু করে।

সিয়া বসে আছে চুপচাপ।কিছু ভালো লাগছে না তার।আদ্র তাকে সকালের খাবার দিয়ে গেছে।কিন্তু না খেয়ে পাশে রেখে চুপচাপ বসে আছে সিয়া।সকাল গড়িয়ে দুপুর তারপর দুপুর গড়িয়ে এখন বিকাল।কিন্তু একটা দানা মুখে উঠায়নি সিয়া।বারবার মাথায় আসছে তার পরিবারের কিছু হলো না তো।

“না খেয়ে এভাবে খাবার জমিয়ে রেখেছো কেনো?টাকা আর ভালোবাসা জমিয়ে রাখলে তা বাসি হবে না কিন্তু খাবার জমিয়ে রাখলে বাসি হবে আর তা থেকে ব্যাকটেরিয়া হবে।”
বলতে বলতে সিয়ার পাশে বসে আদ্র।সিয়া তাকালো না আদ্রর দিকে।সোজা তাকিয়ে থেকে বলে,”কবে মুক্তি পাবো আমি এই জেল থেকে?”

“যেটাকে তুমি জেল বলছো একদিন এটাই তোমার জন্য ফুলের সজ্জায়িত স্থান মনে হবে।”

“মিথ্যা আশা নিয়ে বাঁচতে চাই না আমি।”

“আচ্ছা সেসব কথা ছাড়ো।কিছু খেয়ে নেও।ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখো আর নিজে না খেয়ে বসে আছো এটা কি উচিৎ?”

এবার সিয়া তাকালো আদ্রর দিকে।বলে,”আপনি কি আদৌ হতে দিবেন আমাকে ডাক্তার?”

সিয়ার মুখে হাত রাখতে যায় আদ্র কিন্তু সিয়া দূরে সরে যায়।আলতো হেসে আদ্র বলে,”কেনো দিবো না ডাক্তার হতে?তোমার সপ্ন পূরণ করতে আমি তোমাকে বাধা দিবো না।”

“তাহলে আটকে রেখেছেন কেনো?আমার পরিবারের ক্ষতি করছেন কেনো?”

“কে বলেছে আমি তোমার পরিবারের ক্ষতি করছি?আমি তো শুধু আমার বাবা মায়ের খুনিকে শাস্তি দিতে এসেছি।আমার চোখের সামনে বাবা মাকে পুড়ে মরতে দেখেছি আমি।পূরন্ত বাড়ির চারপাশে ছোটাছুটি করেও নিজেকে বাঁচানোর সুযোগ পায়নি আমার বাবা মা।যে এসবের জন্য দায়ী আমি কেনো তাকে শাস্তি দিবো না?”

সিয়ার মাথা ঘুরছে।না খাওয়া শরীর।বলতে গেলে দুইদিন না খাওয়া সে।আদ্রর মা বাবাকে কেউ খুন করেছে।পুড়িয়ে মেরেছে তাদেরকে।অদ্রকে প্রশ্ন করে,”কে মেরেছে আপনার মা বাবাকে?”

“মিসেস সোনালী তোমাদের কাকি।”

“প্রমাণ কি?”

আদ্র ফিচেল হেসে বলে,”প্রমাণ আমার একাকিত্ত জীবন।আর বাস্তব প্রমাণ দেখাচ্ছি।”

বলেই আদ্র উঠে যায়।কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে হাতে কিছু ছবি নিয়ে।যেগুলোতে দেখা যাচ্ছে সোনালীর কিছু কর্মকান্ড।সিয়া এখন পুরো নিঃস্তব্ধ হয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।এই সময়ে কাউকে কিছু বলা যায় না।খানিক চুপ থেকে সিয়া বলে ওঠে,”তাহলে রুদ্র ভাইকে কেনো বদনাম করলেন?শুধু কাকিয়াকে নিয়ে যা খুশি করতেন।কাকাই কি দোষ করেছে?”

“তোমার কাকার চাহিদা আর তার ট্র্যাপ রুদ্র তাই দুজনকে ফেস করতে হয়েছে।এছাড়াও আরো একজন চায় মোহন সরদার ও সোনালীর পতন।বলতে গেলে আমাদের কাজ আমাদের উদ্দেশ্য সব এক।”

“কে?”

“মেহেরুন জাহান মায়া।”

“ভাবী!”

“হুম।জীবনে অনেক কিছু সহ্য করে এসেছে বেচারি।আমি তো তাও বাবা মাকে হারালেও সমাজের মুখে অপমানিত হইনি।আমার মাথার উপর আমার সপরিবার ছিলো।আমি আজ সফল হয়েছি আমার দাদীর ভালোবাসা পেয়ে।বাবা মা না থাকলেও আমি জীবনে কোনো কিছুর অভাব বোধ করিনি।অন্তত এটুকু বলতে পারি আমার বাবা মা আমাকে তাদের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।কিন্তু ওই বেচারি তার বাবার প্রত্যাখ্যাত পেয়েছে।শুধু তাই না মাকে নিয়ে ফেস করতে হয়েছে অনেক কিছু।একা দুই মেয়ে মানুষ কত শত শেয়াল কুকুরের হামলার শিকার হয়েও বেচে গেছে।নিজেদের অনেক কষ্টে রক্ষা করেছে।”

“আপনি এতকিছু কিভাবে জানেন?”

“আমার মা আর আণ্টি মানে মায়ার মা দুই বান্ধবী ছিলেন।খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল না।ওই একসাথে এক কলেজে পড়তেন তারা।আমার মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো ওই সোনালীর বড় বোন।”

“জারা আপুর আম্মু?”

মাথা নাড়ালো আদ্র।যার অর্থ না।সিয়া বলে ওঠে,”কিন্তু কাকিয়ার বোন তো জারা আপুর আম্মু।”

হালকা হেসে আদ্র বলে,”পাপের ভার বেশি হয়ে গেছে ওই সোনালীর।নিজের আপন বড় বোনকে খুন করেছে।তাই তো তাকে চেনো না তোমরা।সেই বড় বোন আমার মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো।সোনালী যখন আমার মায়ের পথের কাটা হয়ে আসে তখন মা কোনোভাবে জেনে যায় মায়ার ব্যাপারে।ওই যে তোমার কাকা মায়ার মাকে ঠকিয়েছে তাই।খোঁজ নিয়ে যখন মা জানতে পারে যে সোনালী যাকে বিয়ে করেছে তার বউ শাহানা পারভীন তখন মা আণ্টির সাথে কথা বলে।তারপর ঘটে যায় অনেক কিছু।মরে যেতে হয় আমার বাবা মাকে।”

কথাগুলো বলতে বলতে আদ্রর চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে।যেনো সে এখন পুরনো অতীতগুলো কল্পনা করছে।সিয়া এবার নিজ দায়িত্বে আদ্রর কাধে হাত রাখে।চোখ মুছে আদ্র তাকালো সিয়ার দিকে।সিয়া বলে ওঠে,”আমাকে এগুলো আগে বললে তো এত সমস্যা হতো না।আগে কেনো বলেননি?”

“তার একমাত্র কারণ তোমাকে এখানে আটকে রাখা।এই সময়টা সরদার বাড়ির উপর দিয়ে ঝড় যাবে।”

“মানে?”

“সোনালী দেখতে যেমন ও আসলে তেমন না।ওর নিজেরও আলাদা পাওয়ার আছে।ও হলো ড্রাগ সাপ্লাইকারি ও নারী পাচারের সাথে যুক্ত।”

হাত পা কাপতে থাকে সিয়ার।এতদিন খারাপ এক মহিলার সাথে এক ছাদের নিচে ছিলো ওরা।সিয়া বলে ওঠে,”তাহলে তো তাকে পুলিশে দিতে হবে।এভাবে বসে আছি কেনো আমরা?”

“এতই কি সোজা?জেলে দিলে উনি নিজের ক্ষমতায় বেড়িয়ে আসবে।কারণ সোনালীর সাথে আছে আরও এক গ্যাং।যার দ্বারা সোনালী সকল দুই নাম্বার কাজ ও নোংরামি করতে থাকে।আর তাকে হাতে নাতে ধরতেই আমাদের এত নাটক।বলা চলে চিনি ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে এখন পিঁপড়া নিজে থেকে আসবে।আর তখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো আমরা।”

“এত নিকৃষ্ট এক মহিলা কোন স্বার্থে আমাদের পরিবারে আসতে গেলো?কেনো আমাদের ক্ষতি করতে চায় সে?”

“তোমাদের বাসায় একটি সিক্রেট রুম আছে।যেটা কেউ জানে না।আমিও জানতাম না।জেনেছি কারণ মায়া আমাকে বলেছিলো।ওখানে একটি লকার আছে।যেটাতে আছে অর্গানিক ফুড প্রসেসিংয়ের ফর্মুলা।যেটা তৈরি করতে লাগবে বছরের পর বছর।এমনকি এটার পিছনে অনেক টাকা খরচ করতে হয়।যেগুলো সবকিছু কমপ্লিট করত সক্ষম হয় মিসেস রোহিণী মানে শাহমীর রাজের মা।”

সিয়া অবাক হয়ে বলে,”ভাইয়ার মা মানে?”

“মিসেস মালিনী তোমার আর হিয়ার মা হলেও মিসেস রোহিণী শুধু শাহমীর রাজের মা।তোমার মায়ের যমজ বোন মিসেস রোহিণী।তিনি ছিলেন একজন কৃষি বৈজ্ঞানিক।যার সপ্ন ছিলো দেশের মানুষ যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করবে তা যেনো ফ্রেশ রোগমুক্ত খাবার হয় এটার ব্যাবস্থা করা।দিন রাত পরিশ্রম করে তিনি একটি ফর্মুলা তৈরি করেন।যেটা সার হিসেবে ব্যাবহার করলে খাবারগুলোতে কোনো পোকামাকড় তৈরি হবে না।আবার খাবার খেয়ে কোনো রোগের সৃষ্টি হবে না।কিন্তু ওই ফর্মুলা পাবলিক হওয়ার আগে দেশে ড্রাগ সাপ্লাই বৃদ্ধি হয়।সেই ড্রাগ বিভিন্ন খাদ্যে মিশিয়ে দেন সোনালী।গোপন সূত্রে খোঁজ পায় রোহিণী একটি ফর্মুলা তৈরি করে। যেটার মূল্য কোটি টাকার সমান।বিদেশে এটা বিক্রি করতে পারলে সে হবে কোটি টাকার মালিক।কিন্তু মিসেস রোহিণী চান ওই ফর্মুলা দেশের মানুষের কাজে লাগাতে।নিজেকে নিয়ে ভাবেন নি তিনি।তিনি চাইলে সবার সামনে ফর্মুলা নিয়ে বলে আগে থেকেই জনপ্রিয় হতে পারতেন।কিন্তু না তিনি চান ফর্মুলা দিয়ে দেশের সবার ভালো করতে।আর ওটা তিনি মারা যাওয়ার আগে তোমার দাদুকে দিয়ে যান।তোমার দাদু নিজে থেকে সুরক্ষিত রাখেন।লকারের পাসওয়ার্ড মায়াকে ও আণ্টি(শাহানা পারভীনকে) বলে রেখেছেন।রাজ তখন দেশে ছিলেন না।তাই রাজকে কিছু বলে নি।দূর্ভাগ্য বশত তোমার দাদুকে এর জন্য জীবন দিতে হয়।শুধু তাই না তোমার নানুকেও জীবন দিতে হয়।কিন্তু তাদের কে খুন করেছে এটা আমরা জানি না।আমাদের ধারণা এটা যেই করুক সোনালীর সাথে জড়িত।তাই আমরা এখনও সোনালীর কিছু করিনি।”

সিয়া এবার নিজেই কান্না করে দেয়।আদ্র সিয়াকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,”কান্না করছো কেনো?”

“আপনারা এত ভালো কাজ করছেন আর আমি আপনাকে ভুল বুঝেছি। আর কাকিয়া যদি কোনো ক্ষতি করে দেয়।আমার তো ভয় করছে এসব শুনে।”

“আরে পাগলী ভয় নেই।মায়া নিজে আছে তো।সে ঠিক করে দিবে সব।সবকিছুর মাস্টার মাইন্ড যে সে।আর মায়ার ঢাল হয়ে আছে শাহমীর রাজ যে পূরণ করবে তার মায়াবতীর ইচ্ছা।তাছাড়া ভাই হিসেবে আমরা তো আছি।এবার কিছু খেয়ে নেও।”
মাথা নাড়িয়ে খাবার খেতে বসলো সিয়া।

রাজের খোঁজ পেয়ে সেখানে হাজির হলো মায়া ও মিহির।চোখমুখে হিংস্রতা প্রকাশ পেয়েছে।একভাবে নিজের মতো করে হেঁটে যাচ্ছে মায়া।পিছনে মায়াকে ফলো করে হাঁটতে থাকে মিহির।এক লাথি দিয়ে রাজের রুমের দরজা খুলে দেয় মায়া।রুমে ঢুকে দেখতে পেলো ল্যাপটপে কাজ করছে রাজ।সোফা থেকে উঠে এগিয়ে আসে মায়ার কাছে।মায়ার পাশে মিহিরকে দেখে রগ ফুলে এলো রাজের।বলে ওঠে,”এই ইডিয়েট টা এখানে কি করছে?”

বলেই মিহিরকে মারতে গেলে মায়া আটকে দেয় রাজের হাত।রাজকে ধাক্কা দিয়ে বলে,”ভুলেও ওর দিকে হাত বাড়াবেন না।”

“কেনো গায়ে লাগছে তোমার?”

“আমার মা কোথায়?”

“তোমার মাকে কল করে দেখো।”

“হেয়ালি করবেন না।আমার মাকে আপনি আটকে রেখেছেন।ভালোয় ভালোয় আমার মাকে ছেড়ে দিন নাহলে ওপারে পাঠিয়ে দিবো আপনাকে।”

“রিয়েলী!তুমি আমাকে ওপারে পাঠিয়ে দিবে?দেও দেখি।”

রাজের দিকে তেড়ে আসে মিহির।রাজের মুখে ঘুষি দিয়ে বলে,”আমার মাকে খুন করছিস তুই।তোকে আজ খুন করে ফেলবো।”

মিহিরকে আটকিয়ে মায়া বলে ওঠে,”ওকে ছেড়ে দেও মিহির ভাই।হাসির খুনিকে শাস্তি আমি দিবো।অন্য কেউ না।হাসির জীবন আমার জন্য গেছে।আমাকে বাঁচাতে হাসির জীবন চলে গেছে।আমি কিভাবে ছেড়ে দেই তাকে।”

বলেই শুট করে দেয় মায়া।কথাগুলো বলে অপেক্ষা করেনি সে।হাত উচু করেই শুট করে দেয়।যার কারণে দিশেহারা হয়ে যায় রাজ ও মিহির।এ যেনো কথার চেয়ে কাজে করে দেখিয়ে দিলো।গুলি ছোড়ার কারণে কিছু রক্ত এসে ছিটে লাগলো মায়ার চোখমুখে।কষ্ট হতে থাকে মায়ার।চোখ দিয়ে পড়তে থাকে পানি।বলে ওঠে,”কখনও ভাবতে পারিনি আমি এই দিনটা আমার জীবনে আসবে।সম্পর্কের মূল্য এভাবে না দিলেও পারতে।”
বলেই চোখ বন্ধ করে শুট করে দেয় মায়া।রাজ নির্লিপ্ত হয়ে আছে।কোন কথা আসছে না তার মুখ থেকে।শুধু মুখে ফুটে ওঠে এক মায়াবী হাসি।মুখ থুবড়ে নিচে পড়ে যায় মিহির।বুক দিয়ে তার গড়গড় করে রক্ত পড়ছে।মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

মায়া হিংস্র রূপ ধারণ করে বলে,”সন্তান হয়ে নিজের মাকে খুন করেছো তুমি।কি ভেবেছো আমি কিছু বুঝি না।ফর্মুলা পেতে আগে মন্ত্রী মশাইকে আমার মাধ্যমে মারতে চাও তারপর আমাকে জেলে পাঠাতে।কিন্তু এমনটা তো হবার না।”

মিহির এবার হাঁফাতে হাঁফাতে প্রশ্ন করে,”তুমি কিভাবে জানলে এতকিছু?”

“ওহ কাম অন মিহির ভাই!তুমি কৃষি বিষয়ে আগ্রহী। আর আমার শাশুড়ি মা যেটা তৈরি করে গেছে ওটা তো তোমার কাজে খুব ভালো ভাবে লাগবে।শুধু কি তাই?আমার আসল পরিচয় সবাইকে তুমি বলেছো।যেটা আর কারও বলার কথাই না।যেখানে আমার মন্ত্রী মশাই আমার ঢাল হয়ে আছে সেখানে কি করে সে আমার শত্রু হবে?”

রাজ এবার তার দুই হাত দুইদিকে মেলে দিয়ে বলে,”আমার বক্ষে তোমাকে স্বাগতম,মায়াবতী?”

দৌড়ে রাজের বুকে ঝাঁপ দেয় মায়া।রাজকে জড়িয়ে ধরে।রাজ মায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে বলে,”টানা দুইদিন বউ ছাড়া বুকটা আমার শূন্যতা পেয়েছিলো।কবে যে এদের সবগুলোকে শেষ করে আমার শূন্যতা দূর হবে অপেক্ষায় আছি।”

বলেই রাজ এবার নিজে শুট করে দেয় মিহিরকে।মিহির ওখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।মায়া সেদিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”নাও ইউ হেভ টু পেয় সোনালী।”

হিয়াকে কেউ কিডন্যাপ করে নিয়েছে সোনালীর লোক।মায়ার সমস্ত গার্ড অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে।তাদেরকে অজ্ঞান করে ওখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় হিয়াকে।হিয়া ছট ফট করছে।হামলাকারী হিয়াকে নিয়ে বেশিদূর এগোতে পারে না।তার আগে গাড়ি থামিয়ে দেয় ড্রাইভার।বাইরে উকি দিয়ে দেখে সামনে একটি প্রাইভেট গাড়ি।গাড়ির উপরে হেলান দিয়ে আছে এক যুবক।গাড়ি থেকে কিডন্যাপাররা বের হয়ে যুবকটির দিকে এগিয়ে আসে।তেড়ে এসে বলে,”রাস্তার মাঝখানে এভাবে গাড়ি নিয়ে আছিস কেনো?সরে যা এখান থেকে।”

হিয়া নিজেও গাড়ি থেকে বের হয়।কাপা কাপা হাতে চশমা ঠিক করে নেয়।যুবকটি মাথা উঠিয়ে বসে পড়ে।হিয়া তাকে দেখে হা হয়ে বলে,”রুদ্র ভাই!”

চলবে…?