বুকপকেটে তুমি পর্ব-০৬

0
22

#বুকপকেটে_তুমি
#লেখায়_জান্নাতুন_নাঈম
#পর্ব_৬

সরোয়ার বলল, “জানো আমি ও তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু আমি জানি ভালোবাসা জোর করে পাওয়া যায় না। ভালোবাসা কোন গোল্ড মেডেল না যে প্রতিযোগিতা করে জিতে নেব। ভাইয়া কে অনেক দিন ধরে কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখিনা। আমি জানতাম না তুমি সেই মেয়ে যাকে ভাইয়া মন দিয়ে ফেলেছে। ভাইয়া অনেক লাকী যে তোমার মতো লাইফ পার্টনার পাচ্ছে”

নীলাঞ্জনা বলল, “আমার আপনার জন্য খারাপ লাগছে কিন্তু আমার হাতে কিছু নেই”

সরোয়ার বলল, “তুমি মন খারাপ করো না। আমি তোমার আর ভাইয়ার বিয়ে আমি দিব আর ২৮ তারিখেই। আমি এই বিষয়ে তোমার বাবার সাথে কথা বলব”

নীলাঞ্জনা কোন কথা বলল না। চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইল। একটা ছেলে এসে দুই কাপ কফি দিয়ে চলে গেল। সরোয়ার কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “এখানে কফিটা অনেক ভালো বানায়। তুমি ট্রাই করে দেখো”

নীলাঞ্জনা সরোয়ারের দিকে তাকালো।বলল, “আমি একটু ওয়াশ রুমে যাব”

সরোয়ার বলল, “কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে তো। আচ্ছা যাও । আমি দরকার পড়লে নতুন করে আরেকটা অর্ডার দিয়ে দিব”

নীলাঞ্জনা উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেল। ওয়াশ রুমে গিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে বলল, “কোথায় আছেন?”

সেলিম বলল, “সামনেই তো নির্বাচন।ওই জন্য কাজ করতে হচ্ছে”

নীলাঞ্জনা বলল, “আমাকে একটু সময় দিতে পারবেন?”

সেলিম বলল, “তুমি কি কান্না করছো?’

নীলাঞ্জনা বলল, “কই না তো?”

সেলিম বলল, “মনে হলো কান্না করছো। আচ্ছা তুমি কখন ও কোথায় আসতে হবে বলো। আমি চলে আসবো।”

নীলাঞ্জনা বলল, “এখন আসতে পারবেন। আমি সরোয়ারের হাসপাতালের এইদিকে একটা নতুন ক্যাফে খুলেছে আমি ওখানেই আছি”

সেলিম বলল, “সরোয়ারে সাথে দেখা করেছে তাই না।ও কি বলল।”

নীলাঞ্জনা বলল, “আপনি আসুন। তারপর সব খুলে বলবো।”

সেলিম বলল, “আমি তোমার আশেপাশেই আছি, বেশি সময় লাগবে না। তুমি ক্যাফে থেকে বের হয়ে কলেজের দিকে হালকা এগিয়ে এসো।”

নীলাঞ্জনা বলল, “আচ্ছা।”

কথাটা বলেই নীলাঞ্জনা সাথে সাথেই ফোন রেখে দিল। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে আবার খাবারের টেবিলে ফিরে গেল।

সরোয়ার বলল, “তোমার জন্য নতুন করে কফি অর্ডার দিয়েছি।খেয়ে নেও”

নীলাঞ্জনা বলল, “ধন্যবাদ।”

সরোয়ার বলল, “কিসের জন্য?”

নীলাঞ্জনা বলল , “আপনি যে আমার পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছ তার জন্য”

সরোয়ার বলল, “আমি শুধু আমার ভাইয়ের জন্য এইসব করেছি।সে তোমাকে না পেলে ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যেত। তাছাড়া সে যখন দেখত তার ভালোবাসার মানুষটি তার ছোট ভাইয়ের সাথে সংসার করছে । ভাইয়া এইসব সহ্য করতে পারতো না। আমার একমাত্র বড় ভাই।হয়তো আপন নয় কিন্তু আমি সবসময় ওকে নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবেসেছি”

নীলাঞ্জনা কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলল, “আমি আজ আসি। আপনার সাথে ভালো সময় কাটলো। আপনি আমার চেয়ে ভালো জীবনসঙ্গী পাবেন”

সরোয়ার বলল, “আমার তোমার চেয়ে ভালো কাউকে লাগবে না। তোমার মতো কাউকে পেলেই হবে। জানি না তোমার মতো কেউ এই পৃথিবীতে আছে কিনা”

নীলাঞ্জনা কোন উত্তর দিলো না। সোজা ক্যাফে থেকে বেরিয়ে গেল। ক্যাফে থেকে বেরিয়ে রাস্তার একপাশ দিয়ে হাঁটতে লাগলো। হঠাৎ নাদিয়া ফোন দিল। নীলাঞ্জনা ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে নাদিয়া বলল, “অনামিকার আপডেট পাইছি”

নীলাঞ্জনা বলল, “রুহানি আর দিবা কেউ অনামিকা না। আমি খোজ নিয়ে দেখেছি”

নাদিয়া বলল, “আমি জানি। অনামিকা হলো আমাদের নতুন জুনিয়র।অর্কর এসিস্ট্যান্ট তাসনিম।তাসনিম চাকরিতে জয়েন করছে ছয় মাস হলো। আমি ওর খোঁজ পেয়েছি তবে ওর সাথে এইসব বিষয়ে কথা বলিনি। আমি চাই তুমি ওর সাথে কথা বলো।যেহেতু ও তোমাকে গোপন ভাবে মেইল করেছে। আমি কিছু বলতে গেলে ও অস্বস্তিতে পড়তে পারে”

নীলাঞ্জনা বলল, “ভালো করেছ।এখন আমার ভালো লাগছে না। তাছাড়া এখন আমার একটা কাজ আছে। তুমি অনামিকার মানে তাসনিমের নাম্বার টা মেসেজ করে দিও। আমি ওর সাথে আজ রাতে কথা বলতে চাই”

নাদিয়া বলল, “সরোয়ার কি বলল”

নীলাঞ্জনা বলল, “ওকে বোঝাতে পেরেছি এই বিয়েতে আমার মত নেই”

নাদিয়া বলল, “তাহলে ২৮ তারিখ বিয়ে হচ্ছে না”

নীলাঞ্জনা বলল, “বিয়ে হবে”

নাদিয়া অবাক হয়ে বলল, “বিয়ে হবে মানে?”

নীলাঞ্জনা বলল, “বিয়ে হবে। সরোয়ারের সাথে হবে না এই আরকি। আমি সেলিম রহমান কে বিয়ে করছি”

নাদিয়া যেন আকাশ থেকে পড়লো। নীলাঞ্জনা নাদিয়া কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল, “আমি রাখছি।পরে তোমার সাথে কথা বলব”

নীলাঞ্জনা ফোন রেখে দিতেই নাদিয়া সবার কাছে গিয়ে নীলাঞ্জনা আর সেলিম রহমানের বিয়ের সুখবর দিতে লাগল। সাথে সাথে চ্যানেলের ফেসবুক পেজে পোস্ট হয়ে গেল ২৮ তারিখ উপস্থাপিকা নীলাঞ্জনা রহমানের সাথে সেলিম রহমানের বিয়ের হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগেই বিয়ে করছেন সেলিম রহমান।

নীলাঞ্জনা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। সেলিম গাড়ি নীলাঞ্জনা সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নীলাঞ্জনা গাড়ির ভেতরে উঠে বসল। সেলিম বলল, “কোথায় যেতে চাও”

নীলাঞ্জনা বলল, “আপনার পছন্দের জায়গায় যাবো”

সেলিম বলল, “আমার পছন্দের জায়গা হলো আমার খাট। আমার তো এত সময় নাই। সারাদিন অনেক কাজ করতে হয়। তাই যখন সময় পাই বাসায় গিয়ে আরাম করে ঘুমাই”

নীলাঞ্জনা সেলিমের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। সেলিম বলল, “আচ্ছা আমার পছন্দের জায়গায় যাবো চলো”

সেলিম গাড়ি চালাতে লাগল। নীলাঞ্জনা গাড়িতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সেলিম গাড়ি চালানোর মাঝে একটু পর পর আড়চোখে নীলাঞ্জনার দিকে তাকাচ্ছে। সেলিম একটা বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করাল। নীলাঞ্জনা কে আস্তে করে ডাক দিল। নীলাঞ্জনা চোখ খুলে দেখল গাড়ি একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নীলাঞ্জনা বলল, “এটা কোথায়?”

সেলিম বলল, “এটা আমার বাড়ি। আমার মন খারাপ হলে এখানে চলে আসি।এটা এক সময় পার্ক ছিল।পরে পার্কটা বিক্রি করে দিলে আমি কিনে ফেলি। পার্কে আগের সবকিছু আছে। আমি নিজেও নতুন করে অনেক কিছু তৈরি করেছি।যেমন সুইমিং পুল এই ছোট্ট বাড়িটা । সেইসাথে আরো অনেক কিছু”

নীলাঞ্জনা বলল, “বাড়িটা সুন্দর”

নীলাঞ্জনা দোলনায় গিয়ে বসলো। সেলিম পাশে গিয়েই বসলো।বলল, “সরোয়ার কি বলল”

নীলাঞ্জনা বলল, “আমি বলেছি এই বিয়ে করতে পারবো না।এই বিয়েতে আমার মত নেই”

সেলিম বলল, “আমার সম্পর্কে কিছু বলেছ”

নীলাঞ্জনা বলল, “হ্যা আমি সব বলে দিয়েছি।”

সেলিম বলল, “সরোয়ার আমাকে ফোন দিয়েছিল। তুমি ফোন দেয়ার একটু পরেই আমাকে ফোন দিয়েছিল।আমাকে নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানাল। আমি বুঝতে পারলাম যে মন থেকে।হয়তো কান্নাকাটি করবে। তবে ও মুভ অন করে নিতে পারবে”

নীলাঞ্জনা বলল, “আমার সাথে কথা বলার সময় আমি বুঝতে পেরেছি উনি কষ্ট পেয়েছেন। আমি কখনো ভাবিনি আমার জন্য কেউ কষ্ট পাবে”

সেলিম বলল, “আরে চিন্তা করো না।এই রকম পরিস্থিতি ও অনেক বার পড়ছে। তবে বিয়ে ঠিক হয়নি এই আরকি। তুমি ফাইনালি আমার বউ হচ্ছো। ওইদিন তোমাকে নিয়ে যাওয়ার পর আব্বা আর আয়শা খুব মজা করেছে।বলছে তোমার সাথে আমাকে ভালো মানাবে।”

নীলাঞ্জনা বলল, “সরোয়ার বলল ২৮ তারিখ আমার সাথে আপনার বিয়ে দিবে”

সেলিম হেসে বলল, “আমাকে এইসব কিছু বলেনি।হয়তো আব্বুর সাথে এই নিয়ে আলোচনা করবে। তবে আমি তোমাদের চ্যানেলের খবর দেখে পুরোই হতবাক।”
নীলাঞ্জনা বলল, “কেন?”

সেলিম বলল, “ওরা ওদের পেজ থেকে আমাদের বিয়ের বিষয়ে জানিয়েছে।বলছে ২৮ তারিখ আমাদের বিয়ে।এই দেখে কয়েকটা চ্যানেলে খবর দেয়া শুরু করে দিছে।কত রঙ মেখে যে দিচ্ছে আমি শুধু দেখছি আর মজা নিচ্ছি। আমাকে সরোয়ারই এইসব দিয়েছে”

নীলাঞ্জনা বলল, “আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?”

সেলিম কিছু বলল, “তোমার কি মনে হয়?”

নীলাঞ্জনা বলল, “সরাসরি উত্তর দিন”

সেলিম বলল, “আমি এত বোকা না যে তোমার মতো চমৎকার একজন মানুষ কে পেয়েও হাতছাড়া করে ফেলবো।কালরাতে তুমি যখন বললে যে তুমি আমাকে পছন্দ করো বিশ্বাস করো আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি।”

নীলাঞ্জনা বলল, “আমি ও ঘুমাতে পারিনি। একটা বাজে পরিস্থিতির মধ্যে পার করছিলাম।এখন বাসায় গিয়ে আব্বুকে কীভাবে বোঝাবে জানি না”

সেলিম বলল, “তোমার কিছু বলতে হবে না। আমি আব্বুকে বলবো তোমার পরিবারের সাথে কথা বলতে। উনি সবকিছু বুঝিয়ে বলবে। সরোয়ার হয়তো এতক্ষণে বাসায় গিয়ে বলেও দিয়েছে যে আমি তোমাকে বিয়ে করছি”

(চলবে)