#তোমাতে_সূচনা_তোমাতেই_সমাপ্তি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০৬
আদনানের এহেন আকস্মিক কথায়ও কোনো ভাবান্তর ঘটলো না রোজার মাঝে, তখনই মাথার ওপর দিয়ে কা কা করে কাক ডাকতে ডাকতে উড়ে গেলো। রোজা মাথা তুলে তাকিয়ে বললো…
‘ শহরে তো কাকই দেখা যায় না এখন, কতোকাল পর বুঝি একটা নজরে পড়লো!’
মেয়েটা আকাশপানে চেয়ে কাক খোঁজার চেষ্টা করছে, আদনান বেশ বুঝেছে যে মেয়েটা ওর কথায় পাত্তা দিলো না! স্মিত হাসলো আদনান, মেয়েটা বেশ ইন্টারেস্টিং! কাকের খোঁজ না পেয়ে এবর্বআদনানের দিকে রোজা বলে বসলো…
‘ আর আপনি, একটু আগে যেটা বললেন! খুবই বাজে জোকস ছিলো’
রোজার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আদনানও মজার ছলে বলে উঠলো…
‘ তাই না? আমি আসলে ভালো জোকস পারিনা ‘
‘ভবিষ্যতে আর এমন জোকস বলার চেষ্টা না করলেই ভালো হয়’
‘ ওকে! তবে আমি শুনেছি মেয়েরা এমন হুটহাট প্রোপোজাল শুনলে চমকে ওঠে, বা লজ্জা পায় কিন্তু তুমি তো সম্পূর্ন উল্টো রিয়্যাক্ট করলে!’
‘ উঠতি বয়সের মেয়েরা এসব শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে, আমি সেই বয়সটা পার করে এসেছি। তাছাড়া আপনার মতো আনসিরিয়াস লোকের বলা এসব কথায় আমি পাত্তা দেইনা ‘
‘ কেনো? কারো কাছে ধোঁকা খেয়েছিলে নাকি?’
‘ পাত্তা না দেওয়া মানেই সে ধোঁকা খাওয়া পাবলিক, এই মন মানসিকতা বাদ দিন। আমি কখনো প্রেম করিনি, অবশ্য তার সময় বা সুযোগ কোনোটাই পাইনি’
‘ গুড! সহজে পটে যাওয়া মেয়ে আমারও পছন্দ নয় ‘
‘ হোয়াট? আপনি আমাকে পটানোর চেষ্টা করছেন?’
‘ অফ কোর্স নট! আমার বিয়ে করার ইচ্ছে নেই তাই মেয়ে পটানোর প্রশ্নই আসেনা। যাই হোক, আমাকে কি দেবে বলো ‘
‘ ব্রেকফাস্ট না করে থাকলে আসুন, ব্রেকফাস্ট ট্রিট দিচ্ছি আর যদি এই ট্রিট না চান তাহলে যেতে পারেন। আপাতত এর বেশি কিছু দিতে পারবো না’
‘ ঠিক আছে, কিন্তু ব্রেকফাস্টের ম্যেনু আর জায়গা আমি চুজ করবো’
রোজা আর আপত্তি করলো না, আপাতত আদনানকে খাইয়ে দ্রুত বিদায় করতে চাইছে। ছুটির সকালটা আদনানের সঙ্গে কাটিয়ে নষ্ট করার ইচ্ছে নেই রোজার! আদনান মোটামুটি অনেক খাবার অর্ডার করেছে, সকালে রোজা যে টাকা নিয়ে বেরিয়েছে আজ সেগুলো সব আদনানকে ট্রিট দিতেই চলে যাবে তা রোজার বোঝা হয়ে গেছে। রোজাও একটু একটু খাবার নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। আদনানের ফোন আসছে, প্রথমবার ফোন বেজে উঠতেই ও সাইলেন্ট করে রেখে খাওয়ায় মন দিলো। টেবিলের উপর ফোন থাকায় রোজা লক্ষ্য করলো আরো দু তিনবার ফোন এসেছে
‘ আপনার ফোন তখন থেকে বাজছে, তুলছেন না কেনো?’
‘ ইম্পর্ট্যান্ট নয় তাই, আপাতত শান্তিমতো খাবো ‘
‘ জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কেউ এতোবার কল করে? তাও আবার ছুটির দিনে? তাছাড়া জরুরি হতেই পারে! তুলে দেখুন, আপনার প্রেমিকা ফোন করছে হয়তো ‘
‘ আই ডোন্ট হ্যাভ গার্লফ্রেন্ড, তবে একটু রয়ে সয়ে থাকলে আর নিজের মনমর্জি না করলে কিছুদিনের মধ্যে একটা বউ পেয়ে যেতাম’
‘ মানে?’
‘ কিছুদিন আগে আমি আমার এনগেজমেন্ট ভেঙেছি, সেদিন এনগেজমেন্টটা হলে কিছুদিনের মধ্যে আমার বিয়েও হয়ে যেতো। তাহলে আর আমি তোমার সঙ্গে এখানে বসে ব্রেকফাস্ট করতে পারতাম না ‘
অবাক হলো রোজা, কৌতুহল বশত প্রশ্ন করলো…
‘ এনগেজমেন্ট ভেঙে দিয়েছেন মানে? কেনো?’
‘ আমার ইচ্ছে হলো তাই ভেঙে দিয়েছি ‘
‘ মানেটা কি? আপনার ইচ্ছে হবে বলে এনগেজমেন্ট ভেঙে দেবেন?’
‘ এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? আমার মেয়েটাকে ভালো লাগেনি, আর জোর করে একটা সম্পর্কে জড়ানোর ইচ্ছেও আমার নেই’
‘তাহলে সেটা আগে কথা বলেই জানিয়ে দিতেন, এনগেজমেন্ট অব্দি গেলেনই বা কেনো? জানেন একটা মেয়ে এরকম পরিস্থিতিতে কতোটা মেন্টাল প্রেসারে পড়ে? কেনো ভেঙেছেন আপনি বিয়েটা?’
খাবার রেখে রোজার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো আদনান…
‘ তুমি আমার ব্যাপারে জানার জন্যে আগ্রহ দেখাচ্ছো? একটু আগে আমার সঙ্গে পাশাপাশি হাঁটতেও সমস্যা হচ্ছিলো তোমার সেখানে তুমি এখন আমার সম্পর্কে জানতে চাইছো। প্রোগ্রেশন হচ্ছে বলতে হবে, গুড!’
‘ অদ্ভুত! আমি কখন আপনার ব্যাপারে জানতে চাইলাম? আমি তো..’
‘ আমার এনগেজমেন্ট নিয়েই আলোচনা হচ্ছিলো, সেই হিসেবে তুমি আমার বিষয়েই জানতে চাইছো’
আদনানের এই আত্মপ্রেমী ভাব দেখে রোজা হতবাক! ওর কথাবার্তা কখনোই স্বাভাবিক লাগে না রোজার
‘আমার কি মনে হচ্ছে জানেন? আপনি স্বাভাবিক নন, দ্রুত ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিন নাহলে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়বেন ‘
রোজার কথায় পাত্তা না দিয়ে খাওয়ায় মন দিলো আদনান, সে সময় রোজার ফোনে একটা মেসেজ এলো। নিষাদ মেসেজ করেছে, আজ রোজার বাসায় যাবে সে রোজার বাবার সঙ্গে কথা বলতে। রোজারও সঙ্গে যাওয়ার কথা, ম্যাসেজ পড়েই ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো রোজা…
‘ কোথায় যাচ্ছো? আমার খাওয়া তো শেষ হয়নি ‘
‘ আপনি বাচ্চা নন যে আমার আপনার খাওয়া শেষ হওয়া অব্দি এখানে বসে থাকতে হবে, আমি বিল দিয়ে যাচ্ছি। আপনিও খেয়ে বাড়ি চলে যান ‘
‘ কিন্তু…’
রোজা বিল দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো, আদনান কিছু বলারই সুযোগ পেলো না। খাবার সবে অর্ধেক শেষ হয়েছে, এখন আর খেতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। ভেবেছিলো রোজার সঙ্গে বসেই খাবে কিন্তু মেয়েটা দুম করে উঠে চলে গেলো। আদনানের রাগ হলো বটে, এভাবে কেউ ট্রিট দেয়? ট্রিট দিলে তো দুজনে একসঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়ার কথা। এদিকে বারবার বাবার ফোন আসছে দেখে আদনান আর খাওয়ায় মন দিতে পারলো না, অগত্যা ওখান থেকে সোজা বাড়িতে চলে এলো। বাড়ি আসতেই এনায়েত সাহেবের রোষের মুখে পড়তে হলো আদনানকে, যদিও আগে থেকেই এই পরিস্থিতির জন্যে সে প্রস্তুত ছিলো…
‘ এসব কি শুরু করেছিস তুই আদনান? ইনভেস্টরের দায়িত্ব তুই নিয়ে ফারহানকে এতো মেজর দায়িত্ব দিয়েছিস কেনো?’
‘ প্রত্যেকবার তো আমিই সামলাই, এবার না হয় ও সামলাক। সব পরিশ্রম আমি করি আর ও গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘোরে, ওকেও একটু গা গতর খাটাতে দাও ‘
‘ তাই বলে এই সময়ে তুই ওর ওপর গুরুতর দায়িত্বগুলো দিয়ে দিবি? জানিস তো, আমাদের এখন সবকিছু শক্ত হাতে সামলাতে হবে। কোথাও কোনো ত্রুটি রাখা যাবেনা ‘
‘আমি ওকে সব বুঝিয়ে দিয়েছি বাবা, আর কোনো ঝামেলা হলে আমি আছি তো সামলানোর জন্যে’
‘ দেখ আদনান আমি জানিনা তোর মাথায় কি চলছে বা কি করতে চাইছিস তুই, দ্রুত ফারহানের থেকে সব দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে কাজে মন দে’
‘ নিজের ছেলের ওপর এইটুকু ভরসা নেই তোমার বাবা? তোমার কি মনে হয় ও কাজ বিগড়ে দেবে? অন্তত চেষ্টা তো করতে দাও ওকে ‘
‘ এতোদিন তো তোর মুখে এমন কথা শুনিনি, হঠাৎ এখন বলছিস কেনো? তুই কি সকল দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিস?’
‘ না বাবা, আমি শুধু নিজের জন্যে কিছুটা সময় বের করতে চাইছি। নিজেকে একটু সময় দিতে চাইছি, তার মানে এই নয় যে তোমার কাজের ব্যাপারে অবহেলা করবো!’
এনায়েত সাহেব ভেবে দেখলেন বিষয়টা, এতোদিন ধরে আদনান কখনো এমন কথা বলেনি। এমনকি অসুস্থ থাকলেও কোনো কাজে গাফিলতি করেনি, নিজের জন্যে আলাদা করে সময়ও চায়নি। এই প্রথমবার চাইছে, তাই এনায়েত সাহেব বললেন…
‘ বেশ তবে, তোকে এক সপ্তাহ সময় দিলাম। নিজেকে সময় দে, যা ইচ্ছে কর কিন্তু সাতদিন পর আবারো আগের মতো কাজে লেগে পড়বি। তখন আমি আর কোনো কথাই শুনবো না’
আপাতত বাবার সঙ্গে তর্কে জড়ানোর ইচ্ছে নেই আদনানের, তাই ও আর কথা বাড়ালো না। আদনান চলে আসতে চাইছিলো কিন্তু ওর বাবা আজ এ বাড়িতেই থেকে যেতে বললো। আজ ছুটির দিন, বিশেষ কোনো কাজ নেই তাই থেকে যেতে রাজি হয়ে গেলো! ওদিকে, রোজা নিষাদের সঙ্গে নিজের বাড়িতে গেলো। আজ এতদিন পর নিজের বাড়িতে পা রেখে খানিকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লো রোজা, মাস দেড়েক এই বাড়ি থেকেই ওর বাবা ওকে বের করে দিয়েছিলো! জামাল সাহেব প্রথমে কথা বলতে চাননি, পরে নিষাদের অনুরোধে কথা বলতে বসেন। নিষাদ জানায় সে রোজাকে বিয়ে করতে চায়, এটা শুনে জামাল সাহেব বেশ অবাক হন তবে উনি জানান রোজার বিয়ে হলে উনি রোজাকে মাফ করে দেবেন। তার মতে বিয়ে হয়ে গেলে অন্তত পূর্বের ঘটনা চাপা পড়ে যাবে। বাবার রাগ ভাঙ্গানোর উপায় পেয়ে রোজাও খুশি, নিষাদকে সে বিয়ে করবেই!
____________________________
কিছু কাজের ব্যাপারে আদনানের অফিসে এসেছিলো তানভীর, কাজের কথার ফাঁকে তানভীর জানলো যে এনায়েত সাহেব ওকে ছুটি দিয়েছে…
‘ ছুটি পেয়ে তুই অফিসে কি করছিস? বাড়িতে থাকা উচিত ছিলো তোর, টাইমটা ইনজয় কর! আঙ্কেল তোকে কখনো এভাবে ছুটি দেয়নি ‘
‘ ছুটি পেয়েই ঘরে বসে থাকলে হবেনা, কিছু পেন্ডিং কাজ আছে আমার সেগুলো শেষ করতে হবে ‘
‘ আদনান, চল পিকনিক করে আসি ‘
‘ বাচ্চা নাকি আমরা যে পিকনিকে যাবো?’
‘ বড়রা পিকনিকে যায়না?’
‘ আমি যাইনা, তোর এতো ইচ্ছে একা হলে যা ‘
তানভীর পিকনিকের জন্যে জোরাজুরি করছে কিন্তু আদনান রাজিই হচ্ছেনা, তখনই সাদিক হুড়মুড় করে আদনানের কেবিনে এলো।
‘ বস, একটা কথা ছিলো। এখন বলবো নাকি…’
‘ কোন ব্যাপারে?’
তানভীর ওখানে উপস্থিত দেখে সাদিক কিছু না বলে চুপ ছিলো, কারণ আদনান বলেছিলো রোজা সম্পর্কিত ব্যাপারে কারো সামনে কিছু না বলতে! সাদিকের নীরবতা দেখে আদনান বুঝলো রোজা সম্পর্কিত কোনো কথা হবে হয়তো। যদিও তানভীর ওর বেস্টফ্রেন্ড তবুও ওর সামনেও আপাতত রোজার প্রসঙ্গ তুলতে রাজি নয় আদনান…
‘ যা বলার পরে বলিস, আমি এখন ব্যস্ত আছি ‘
সাদিক মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলো, ঘন্টাখানেক পর তানভীর বেরিয়ে যেতেই সাদিককে ডাকলো আদনান…
‘ বল, কি বলতে এসেছিলি তখন?’
‘ বস, ডা. রোজার সঙ্গে সেদিন রেস্টুরেন্টে একটা লোকটা দেখেছিলাম। আপনাকে বলেছিলাম না?’
‘ তাতে কি হয়েছে?’
‘ আই ওয়াজ রাইট বস, ওই লোকটা তার বাগদত্তা। তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু সেটা ভেঙে গেছিলো ‘
চমকে উঠলো আদনান, কারণ রোজার সঙ্গে কথা বলার সময় এমন কিছু বুঝতে পারেনি আর রোজাও বুঝতে দেয়নি যে ওর বাগদত্তা আছে! আদনানের কেনো যেনো বিশ্বাস হচ্ছিলো না…
‘ তুই কি ঠিকঠাক খোঁজ নিয়েছিস?’
‘ হ্যাঁ বস, আরো আগেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। সম্ভবত আরো প্রায় দুই মাস আগে, কিন্তু সেটা ভেঙে গেছিলো। আর আশেপাশে খোজ নিয়ে যা জানলাম ডা. রোজা নাকি কয়েকদিন নিখোঁজ ছিলো এটা জানার পর পাত্রপক্ষ বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলো আর তারপর থেকেই ডা. রোজা বাড়িতে না থেকে নিজের কলিগের সঙ্গে থাকে’
‘ প্রায় দুই মাস আগে বিয়ে ভেঙে গেছিলো?’
আদনান পুরো বিষয়টা নিয়ে অঙ্ক কষতে শুরু করলো, দেড় মাস আগেই আদনানের জন্যে রোজাকে তানভীর তুলে নিয়ে গেছিলো। তিনদিন রোজা ওর সঙ্গে ছিলো…
‘ বিয়ে ভাঙার পর রোজা নিজের কলিগের সঙ্গে থাকা শুরু করেছে, এ বিষয়ে তুই শিওর?’
‘ হ্যাঁ বস, আমি ভালোভাবেই খোঁজ নিয়েছি ‘
আদনান চিন্তিত হয়ে বিড়বিড়য়ে বললো..
‘ তারমানে কি ওকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো?’
‘ কিছু বলছেন বস?’
সাদিকের কথা যেনো আদনানের কানে পৌঁছালোনা। রোজার বিষয়ে মোটামুটি সব জানার পর আদনানের কাছে এবার বিষয়টা অনেকটা পরিষ্কার হলো যে কেনো রোজা ওকে এতোটা অপছন্দ করে..
চলবে…
#তোমাতে_সূচনা_তোমাতেই_সমাপ্তি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#বোনাস_পর্ব
রোজার বিষয়ে সব জানার পর আদনান আরো খবর সংগ্রহ করার জন্যে সাদিককে কাজে লাগিয়েছে। সাদিক বসের কথামতো খোঁজখবর নিয়েছে। সব শেষে আদনান জানতে পেরেছে যে ছেলের সঙ্গে বিয়ে ভেঙেছিলো তার সঙ্গেই আবার রোজার বিয়ে হচ্ছে আর ও বাড়িও ফিরে গেছে। এটা শোনার পর থেকেই কেমন খটকা লাগতে শুরু করেছে আদনানের! কাজের ফাঁকে বন্ধুর সঙ্গে ক্যাফেতে এসেছিলো আদনান, কিন্তু মাথায় রোজার বিষয়টাই ঘুরপাক খাচ্ছে। তানভীর লক্ষ্য করলো বন্ধু তার কফি না খেয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে এক ধ্যানে কিছু একটা ভেবে চলেছে….
‘ তোকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো আদনান? ইজ এভরিথিং অলরাইট?’
‘ আই ডোন্ট থিঙ্ক সো, কিছু একটা ঝামেলা তো আছেই ‘
‘ মানে?’
‘ লেট মি আস্ক ইউ সামথিং! আচ্ছা, ধর একটা মেয়ের সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে আর মেয়েটা তোদের বিয়ের আগে হুট করে কিছুদিনের জন্যে গায়েব হয়ে গেলো। কিছুদিন পর ফিরেও এলো, তুই জানিস না মেয়েটার সঙ্গে কি হয়েছে। অনেককিছুই হতে পারে রাইট? সেই মেয়েকে কি তুই সহজেই বিয়ে করতে রাজি হবি? একজন পুরুষ হিসেবে তোর কি অভিমত’
‘ আজ তোর কি হয়েছে বলতো আদনান, এমন অদ্ভুত কথাবার্তা বলছিস কেনো?’
‘ তানভীর! যা প্রশ্ন করলাম সেটার উত্তর দে। সেই মেয়েকে বিয়ে করতে গেলে কি তুই দুবার ভাববি না? সহজেই রাজি হয়ে যাবি?’
‘ অবশ্যই ভাববো, মেয়েটা স্বেচ্ছায় গায়েব হয়েছে না কারো সঙ্গে সেটা তো আমার জানা নেই আর বর্তমান যুগে তো ভরসাই করা যায়না। তাছাড়া এমন মেয়েকে বিয়ে করবো কিনা সন্দেহ। আমি তো বিয়ে ভেঙে দেওয়াই উত্তম সিদ্ধান্ত মনে করবো’
‘ রাইট? তাহলে ঐ ছেলে এতো সহজেই কিভাবে সব মেনে রাজি হয়ে গেলো? সামথিং ইজ ডেফিনিটলি ফিশি!’
তানভীর বুঝলো না আদনান কোন ব্যাপারে কথা বলছে, প্রশ্ন করেছিলো বটে কিন্তু উত্তর পায়নি! সপ্তাহ দুয়েক পর… পারিবারিকভাবে রোজা ও নিষাদের আংটি বদল সম্পন্ন হয়েছে। নিষাদ এ মাসেই বিয়েটা সারতে চাইছে, শুভ কাজে রোজার বাবাও আর দেরি করতে চাইছেন না। নিষাদের পরিবার প্রথমে মানতে রাজি হচ্ছিলো না, কিন্তু পরে মেনে নেয়। তারা জানায় ছেলের খুশিতেই তারা খুশি। সবকিছু যেনো খুব দ্রুত হয়ে যাচ্ছে, রোজার কাছে কেমন অদ্ভুত লাগছে সবটা। এতো বড় একটা ঝামেলার পর হুট করেই যেনো সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে, সত্যিই কি সব ঝামেলা সহজেই মিটে যায়? ভেবে পাচ্ছেনা রোজা, একটা ছেলে এমন ঘটনার পরও নিজে থেকে বিয়ের জন্যে এগিয়ে এলো? অন্য ছেলেরা হলে তো ফিরেও তাকাতো না, তাহলে নিষাদ কি অন্য ছেলেদের চেয়ে আলাদা? সে কি সত্যিই রোজাকে খুব পছন্দ করে বলেই সব মেনে নিচ্ছে? মাঝে মাঝে এমন বহু ভাবনা রোজার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায়, কিন্তু পরিবারের খাতিরে সবকিছুই এক প্রকার মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে মেয়েটা। নিষাদের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর রোজা বাড়ি ফিরেছে, এখন পূর্বের ন্যায় বাড়ি থেকেই হসপিটালে যায়। আজ হসপিটাল থেকে বেরোতে রাত প্রায় দশটা বেজেছে, আগে এতো রাগ হলেই রোজার বাবা ফোন করে মেয়ের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ নিতেন কিন্তু এখন আর তা করেন না। হসপিটালের গেট পেরিয়ে একটু হেঁটে সামনে আসতেই থমকে গেলো রোজা, ওর থেকে দু – তিন হাত সামনে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদনান! রোজা ওকে দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যাচ্ছিলো, তৎক্ষণাৎ ওর হাত ধরে ফেলে আদনান…
‘ ইগনোর করছো?’
‘আপনার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাইনা, দয়া করে আমার পিছু নেবেন না’
‘ কিন্তু আমার যে তোমার সঙ্গে কথা আছে ‘
রোজা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু আদনানের শক্তির সঙ্গে পেরে উঠছে না! আদনান রোজার হাতটা তুলে দেখলো ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুলে একটি সোনার আংটি চকচক করছে, আংটিতে আঙ্গুল বুলিয়ে হাসলো আদনান…
‘ ওয়াও! নাইস রিং! এনগেজমেন্টও হয়ে গেছে দেখছি’
রোজা যতো হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আদনান ততোই শক্ত করে ধরছে, এক পর্যায়ে রেগে গেলো রোজা…
‘কি শুরু করেছেন আপনি রাস্তার মধ্যে? রাত বিরাতে একটা মেয়ের হাত ধরে রেখেছেন, আশেপাশের মানুষ দেখলে কি ভাববে! অবশ্য, আপনি মনে হয় না কিছু করার আগে ভাবনা চিন্তা করেন ‘
‘ ইউ আর রাইট, আমি অতো ভেবে কিছু করিনা ‘
‘দেখুন, আপনি যা ইচ্ছে করুন তাতে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই কিন্তু আপনার জন্যে আমার জীবনে ঝড় উঠে গেছিলো। বহু কষ্টে সবকিছু ঠিক হচ্ছে, আমি আপনার জন্যে নতুন করে কোনো ঝামেলায় পড়তে চাইনা। প্লিজ আমাকে একলা ছেড়ে দিন’
‘তোমাকে একলা ছেড়ে দিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?’
‘ হ্যাঁ হবে ‘
‘ আমার তো সেটা মনে হচ্ছে না। তোমার সঙ্গে এতদিন ধরে আমার পরিচয়, তবুও তুমি একবারের জন্যেও আমায় কেনো বলোনি যে আমার জন্যে তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো?’
থ খেয়ে গেলো রোজা কারণ বাইরের কারো এটা জানার কথা নয় আর একমাত্র সুজানা ব্যতীত আর কেউই জানতো না যে ওকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো…
‘ আপনি কিভাবে…’
‘ অবাক হওয়ার কিছু নেই, আমি আরো অনেককিছুই জানি যা হয়তো তুমি কাউকেই জানাওনি ‘
ভীষণ অবাক হচ্ছে রোজা, আদনান এমন আচরণ কেনো করছে ভেবে পাচ্ছেনা। এ মুহূর্তে আদনানের জন্যে ওর মনে জমে থাকা রাগটা আরো তীব্র হচ্ছে!
‘হোয়াট! আপনি আমার সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার জন্যে লোক লাগিয়েছেন নাকি! আপনার সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর আপনাকে একটু হলেও ভদ্রলোক ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি তো…’
‘ কথা ঘুরিও না রোজা, বলো আমাকে! এটা সত্যি আমার জন্যে তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো তাইনা? আর তোমার বিয়েটাও…’
‘ পুরোনো বিষয় নিয়ে আমি আর আলোচনা করতে চাইনা, অতীতে যা হবার হয়ে গেছে এখন আমি বর্তমান নিয়ে ভাবতে চাই ‘
‘ বর্তমান? বিয়ের কথা বলছো?’
‘ হ্যাঁ তাই! আর আমার হাতে আংটি দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে আমি ইতিমধ্যেই অন্য এক পুরুষের স্ত্রী হওয়ার জন্যে তৈরী, আর আপনি পরপুরুষ হিসেবে আমার হাত ধরে আছেন। এটা কি চরম অভদ্রতা নয়?’
“পরপুরুষ” শব্দটি কর্নকূহরে পৌঁছানো মাত্রই রোজার হাত ছেড়ে দিলো আদনান! কিছুটা সরেও দাড়ালো বটে, পরপুরুষ কথাটা যেনো ভীষণ গায়ে লাগলো আদনানের
‘ ভবিষ্যতে আমাদের দেখা হওয়াই উত্তম। আপনার জন্যে আমার যা ক্ষতি হয়েছে সেগুলো পুষে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনাকে আমি ক্ষমা করে দেবো। আপনাকে আমি কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না’
আদনান কোনো উত্তর দিলো না, এ মুহূর্তে রোজারও এখানে আর এক মুহুর্ত দাড়ানোর ইচ্ছে নেই। সামনে দু কদম পা বাড়াতেই আদনান বললো…
‘ আমার তোমার ক্ষমা চাইনা রোজা, আমাকে ক্ষমা করতে হবেনা তোমার তবে তুমি বিয়েটা করো না ‘
ঘুরে তাকালো রোজা…
‘ এই বিয়ের জন্যেই এতো ঘটনা ঘটেছে, বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় আমার বাবাকে পাত্রপক্ষের সামনে অপদস্ত হতে হয়েছে। কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও আমাকে দোষী হতে হয়েছে। আমার বাবার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে কিন্তু এখন সব ঠিক করার সুযোগ পেয়েও আমি হাতছাড়া করবো না, এই বিয়ে আমি করবো’
পরিবারের কথা ভেবে, বাবার রাগ ভাঙ্গাতে রোজা বিয়েতে রাজি হয়েছে তা বুঝতে আর বাকি নেই আদনানের। মেয়েটা ভীষণ সিরিয়াস, শেষ অব্দি বিয়ে হয়তো করেই ছাড়বে কিন্তু সব জানার পর আদনান যে পারছে না রোজাকে একা ছেড়ে দিতে আর এ কদিনে আদনান সবচেয়ে বড় একটা বিষয় উপলব্ধি করেছে…রোজার অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গিনী হওয়াটা ও মানতে পারবে না! আদনান ভেবেছিলো ঠান্ডা মাথায় রোজার সঙ্গে কথা বলবে কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই বিধায় আদনান আর না ভেবেই সপাটে বলে বসলো…
‘ বিয়ের পর তোমার হাসবেন্ড প’র’কীয়া করলেও মেনে নেবে?’
চমকে গেলো রোজা!
‘ কি বাজে কথা বলছেন!’
‘ বাস্তবতা তোমার সামনে তুলে ধরছি, তুমি কি জানো তোমার হবু হাসবেন্ডের অলরেডি আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে? আই ডোন্ট থিঙ্ক সে তোমাকে এটা বলেছে ‘
চলবে…
[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]