প্রেমহিল্লোল পর্ব-০৮

0
22

#প্রেমহিল্লোল||০৮||
#তাসনীম_তামান্না

বিয়ের অনুষ্ঠান জমে উঠেছে। কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বর ও কণে পক্ষের তুমুলঝগড়া চলছে। কে জিতে সেটা দেখার পালা কেউ কাউকে এক বিন্দু ছাড় দেবে না। অবশেষে রিদই মেয়েপক্ষকে জিতিয়ে দিতেই ওর বন্ধু কাজিনগুলো রেগে ওকে ঝাড়লো। তারপর ওরা পদে পদে বিভিন্ন নিয়ম কানুনে টাকা আদায় করলো। জুতা চুরি করে গায়েব করে দিলো। কুয়াশাকে এসবের মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেলো না। বিচ্ছু কাজিনগুলো বড়দের বকা, ধমকের তোয়াক্কা করলো না, গায়ে মাখলো না বরপক্ষকে নাজেহাল করে ছাড়লো।

দুপুরের খাবার দাবার শেষ করে বিয়ে পড়ানো হলো। কবুল বলতে গিয়ে মেঘার কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিলো। রিদ মুখ লটকে পাশে বসে ছিলো। সকলে সাহস দেওয়ার পর বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো। ফটোসেশান হলো। কুয়াশা ক্রিম পার্পেল কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে সাথে হালকা সাজ। তুষার ব্লু কালারের পাঞ্জাবি পড়েছে। দুজনের চোখাচোখি হয়েছে অনেকবার কেউ কারোর সাথে কথা বলে নি। কুয়াশা সিঁড়ি দিয়ে নামছিল তুষার পিছনে ছিলো ও পড়ে যেতে নিলে তুষার ওর বাহু চেপে ধরলো আতংকিত কণ্ঠে বলল “সবধানে! দেখে হাঁটো!”

কুয়াশা নিজেকে সামলে নিয়ে তুষারের দিকে শুকনো ঢোক গিলে তাকিয়ে ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে দ্রুত নেমে গেলো। ওর এমন কাণ্ডে তুষারের ভ্রু কুঁচকে গেলো পিছনে তাকাতে দেখলো মেঘ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তুষার ঘাবড়ালো না বলল “পড়ে যাচ্ছিল তোমার বোন ভালোভাবে হাঁটতে শেখাও নি না-কি!”

মেঘ সে কথার উত্তর না দিয়ে বলল “খেয়েছ? অনেক বেলা হয়েছে।”

–পরে এখন তেমন ক্ষুধা পাইনি।”

মেঘা ওর কথা মানলো না জোর করে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল
–সেসব বললে শুনছি না। চলো চলো আমারও ক্ষুধা পেয়েছে।

আত্মীয় স্বজনদের সকলের খাওয়া দাওয়া শেষ বিয়ে পড়ানো শেষে সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্ত বিদায়ের পালা। যে মেয়েটা ছোট থেকে বড় হলো আজ সে বাড়ি থেকে বিদায়ের কত আয়োজন। মেঘা কাঁদতে কাঁদতে নাজেহাল অবস্থা সেই সাথে ওর কাছের মানুষগুলোও। তুষার তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে তার এই কান্নারত মুখশ্রী দেখে ফেঁসে গিয়েছিলো। বার বার ফেঁসে যায়। কাঁদলে ঠোঁট নাক ফুলে তাকে বাচ্চাদের মতো লাগে। আদর আদর লাগে। মেঘাকে বিদায় দেওয়া হলো।

অধিকাংশ আত্মীয় স্বজনরা রয়ে গেছে রিসিপশনের পরে তারা চলে যাবে। মুন্নি মেয়েকে বিদায় দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে মেঘ কুশান ওনাকে ধরে শুয়ে দিয়ে ডক্টর ডাকলো। কৌশল মেয়েকে বুকে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘা ভাইয়ের মেয়ে হলেও সবসময় নিজের মেয়ের মতো দেখেছে। কুয়াশা ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলল
–আব্বু আমি কখনো বিয়ে করব না কখনো তোমাদেরকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। মরে যাবো তোমাদেরকে ছাড়া থাকতে পারব না।

তুষার তাকিয়ে আছে বাবা-মেয়ের দিকে কি নিঃসার্থ ভালোবাসা। বাবা-মা’রা সার্থ ছাড়া ভালোবাসে। কৌশল কুয়াশার কপালে চুমু খেয়ে বলল “ঠিক আছে। আমি ও তোকে ছাড়া থাকতে পারব না রে মা। কান্না থামা। অসুস্থ হয়ে যাবি। যে ঘরজামাই থাকবে তাকে তোর সাথে বিয়ে দিবো।”

কুয়াশার ধীরে ধীরে কান্না থামলো। সকলে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কেঁদে কেটে সকলের মুখ ফুলে গেছে। কুশ, শান কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ছে। তাদের ফুপিকে কাঁদিয়ে নিয়ে গেছে বলে তারাও কাঁদছে সবাই কাঁদছে তাই তাদেরও কান্না পাচ্ছে। সে কান্না না ঘুমানো পর্যন্ত থামলো না।

রাত অনেক অনেকে ঘুমিয়ে পড়ছে আবার অনেকে গল্পগুজব করছে। কুয়াশা ছাদে দোলনায় বসে আছে মেঘাকে খুব মনে পড়ছে এই তো কাল অবধিও দু’জনে জড়াজড়ি করে ঘুমাচ্ছিল। অথচ আজ কতদূরে চাইলেও কেউ কাউকে ছুঁতে পারবে না। আকাশে তারার মেলা। গেদাগেদির মধ্যে ঘুমাতে পারে না। বসে বসে ঝিমাচ্ছে। তুষার ছাদে এসে কুয়াশাকে দেখলো ও কুয়াশার উদ্দেশ্যেই ছাদে এসেছিলো পেয়েও গেলো। ওকে ঝিমাতে দেখে বলল
–নিচে গিয়ে ঘুমাও তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

কুয়াশা ভয়ে চমকে উঠলো।
–আপনি?

–ভয় পেলে? এতো ভিতু কেনো তুমি?

–আমাকে না খোঁচালে শান্তি হয় না আপনার?

তুষার হেসে ওর পাশে বসে বলল
–সত্যি বলতে না। তোমাকে জ্বালাতে খুব ভালো লাগে। শান্তি শান্তি লাগে। তোমার কান্নারত মুখটা দেখতে খুব আদুরে লাগে আদর করতে ইচ্ছে হয়।

কুয়াশা ওর দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইল। ওর দৃষ্টি দেখে তুষার ভ্রু নাচিয়ে বলল
–আমাকে কী আজ বেশি হ্যান্সাম লাগছে? তোমারও কী আমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে?

কুয়াশার কান ঝা ঝা করে উঠলো বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল
–অসভ্য লোক! মুখে কিছু আটকায় না? লুজ ক্যারেক্টার।

–তোমাকে দেখলে আমার ক্যারেক্টর খারাপ হয়ে যায়। কি করব বলো?

–একদম বাজে কথা বলবেন না। যারা বিদেশে থাকে তাদের ক্যারেক্টর আগে থেকেই খারাপ থাকে আপনার ও তেমনটাই হয়েছে। শুধু শুধু আমাকে আজেবাজে বকবেন না।

তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল
–ওহ তুমি আমাকে এমন ভাবো তাই তোমার ঐ কাজিনকে আমার নামে উল্টো পাল্টা বলছ?

কুয়াশা আমতা আমতা করে বলল
–ভুল কী বলেছি? আপনি আমার সাথে অসভ্যতা করেন নি?

তুষার ভ্রু উঁচু করে বলল
–কী করেছি? চুমু খেয়েছি? কোথায় তোমার ঠোঁটে?

কুয়াশা চেচিয়ে উঠে বলল
–চুপ করুন অসভ্য লোক একদম বাজে কথা বলবেন না। আপনি আমাকে দেওয়ালে চেপে ধরেন নি?

তুষার চোখ মুখ শক্ত করে বলল
–তোমার সাথে এভাবে কথা বলার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলো না জাস্ট আমার ক্যারেক্টর নিয়ে বাজে কথা বলেছো আমার ইগো হার্ট করেছ। তুমি বলতে পারবে আমি তোমাকে বাজে ভাবে ছুয়েছি? তুমি ফিল করেছো? করো নি তবুও আমাকে খারাপ ভাবো আমার নামে খারাপ কথা বলো। তোমার কথায় আমি হার্ট হয়েছি কুয়াশা। আমি ভেবেছিলাম তোমাকে পাওয়া সহজ হবে চাইলেই পেতে পারবো ভেবেছিলাম এবার তোমাকে নিজের করে নিবো কিন্তু তুমি আমার সাধ্যের বাইরে তুমি চাঁদ আর আমি বামন যাদের কখনো পাশাপাশি হাঁটা হয় না। এই ক’দিনে তুমি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছ। তুমি আমার নও হবেও না কখনো। বাট ট্রাস মি তুমি ছাড়া কোনো মেয়েকে এতোটা ফিল করি নি। তোমাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে তোমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেললাম বুঝতে পারি নি। তবে তোমাকে আর ডিস্টার্ব করব না।

তুষার আর দাঁড়ালো না তার চোখ জ্বালা করছে ভীষণ কুয়াশাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে। কুয়াশা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল ভিতর থেকে কিছু নড়ে উঠলো বোধ হয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ