#প্রেমহিল্লোল||১৫||
#তাসনীম_তামান্না
একটা মানুষের জীবনে বাবা-মা’র অবদান অতুলনীয় তারা সবসময় নিঃসার্থ ভালোবেসে যায়। পৃথিবীর সকল আবদার তাদের সাথে নিঃকোচ বলা যায়। যারা কিছু বলার আগেই মন বুঝে যায়। তারা এমন মাঝ পথে সন্তানদের নিঃসঙ্গ করে না ফেরার দেশে চলে যায়। তারা একরাশ মায়া, তাদের সাথে কাটানো সৃতি নিয়ে বাকিটা জীবন পার করতে হয়। মাঝেমধ্যে বাচ্চা হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিযোগের সুর তুলে পরমূর্হুতে মনে পড়ে জন্মালে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
পর পর তিনজনের মৃত্যুতে চৌধুরী বাড়ির লোকজন স্তব্ধ শোকাভিভূত হয়ে গেলো। বাবা-মা’কে হারিয়ে নিঃস্ব অনাথ হয়ে গেছে। বাড়ির সবার এক অবস্থা। কুশান আর কুয়াশা চুপচাপ থাকে কেউ কারোর সাথে কথা বলে না। ঠিকমতো খায় না, ঘুমায় না। বাড়ির সবাই জোর করেও কিছু করতে পারে না। তারা যেনো নিশ্চুপ অনুভূতিহীন পাথর হয়ে গেছে।
গভীর রাতে পাখির পানির তেষ্টায় ঘুম ভেঙে গেলো। পাশে কুশানকে না দেখে বারান্দায় গিয়ে দেখলো সেখানের দোলনাতে বসে আছে। দৃষ্টি তার নিকষ কালো অম্বরিতে। পাখি ওর পাশে গিয়ে বসে বলল “এভাবে বসে আছো কেনো? ঘুম নেই, খাওয়া দাওয়া নেই। এভাবে কী জীবন চলে? অসুস্থ হয়ে পড়ছো। তুমি ছাড়া তোমার ছেলেদের কী হবে ভেবে দেখেছো?”
কুশান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল “তুমি গিয়ে ঘুমাও। তোমার শরীর খারাপ করবে।”
–আর তুমি? কুয়াশা? কী শুরু করছ তোমরা? একটু স্বাভাবিক হও। তুমি এভাবে আছো ছোট বোনটাকে সামলাবে কে? তোমাদেরকে এভাবে মানাচ্ছে না।
কুশান পাখির কাঁধে নিজের ভর ছেড়ে দিয়ে বলল
–চেষ্টা করছি হচ্ছে কিন্তু পারছি না। নিজেকে কেমন অসহায় লাগছে। বাবা-মা’র কথা খুব মনে পড়ছে তারা কীভাবে আমাদেরকে একা করে চলে গেলো?
–তোমরা একা কে বলল? আমরা সবাই আছি। আমাদের জন্য অন্তত স্বাভাবিক হও। কুশুকে স্বাভাবিক করো। এভাবে থাকলে তো ও ম*রে যাবে।
কুশান কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। কুয়াশার রুমে গিয়ে দেখলো সবটা অন্ধকার লাইট জ্বালিয়ে দিলো ও রুমে নেয়। বারান্দার ফ্লোরে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। ও কুয়াশার পাশে গিয়ে বসতে দেখলো কুয়াশা বিড়বিড় করে কী সব বলছে। “আব্বু আম্মু তোমরা খুব খারাপ। এভাবে চলে গিয়েছ। আমার কথা ভাবলে না। আমার যে কেউ নেই।”
কুশান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “আমি আছি তো। সবাই আছে।”
কুয়াশার কোনো সাড়াশব্দ নেয়। কুশান কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো ওর জ্বর এসেছে। ওকে বেডে নিয়ে আসলো। ভীরু মনে কাঁপা হাতে ওকে ঔষধ খাইয়ে দিলো। পানি এনে জলপট্টি দিলো। জ্বর নামছে না। কুশান ফিরছে না দেখে পাখি কুয়াশার রুমে আসলো “কী হয়েছে ওর?”
–জ্বর এসেছে কিছুতেই নামছে না।
ওরা দু’জন মিলে সারারাত কুয়াশার সেবা করলো। জ্বর নামলেও রুমে না গিয়ে ওর পাশে বসে ঘুমালো। কুয়াশা সকালে ঘুম ভেঙে ওদেরকে পাশে দেখে ভড়কে গেলো।
–এই ভাবিপু! এই ভাইয়া!
ওর ডাকে ওরা ধড়ফড়িয়ে উঠে বলল “কী হয়েছে? বাবুইপাখি, কোথায় কষ্ট হচ্ছে?”
–কী বলছ ভাইয়া? আমার আবার কী হবে? আমি ঠিক আছি। তোমরা এখানে কী করছো?
কুশান ওর কথার উত্তর না দিয়ে জ্বর চেক করে বলল “আর কোনো পাকনামি চলবে না। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে হবে। ঘুমাতে হবে কথার যেনো কোনো হেরফের না হয়।”
কুশান চলে গেলো। ও হা করে ভাইয়ের চলে যাওয়া দেখলো। এমন শক্ত কণ্ঠে কখনো কথা বলে নি। প্রথমবার এমন হওয়ায় হজম করলে সমস্যা হচ্ছে। পাখি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “কী খাবি বল? ঝাল ঝাল করে নুডলস বানিয়ে দি। জ্বর থেকে উঠে ওটাই ভালো লাগবে। আর শোন বেশিক্ষণ সাওয়ার নিবি না। নাহলে আবার জ্বর চলে আসবে।”
পাখির কথায় ও বুঝলো ওর জ্বর এসেছিলো তাই কুশান এমনভাবে কথা বলছে। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল “শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না ভাবিপু। আমার ক্ষুদা নেই। তুমি কুশ, শানকে গিয়ে সামলাও ওরা সারারাত একা ছিলো। তোমার এখানে ছিলে। বাচ্চা দুইটা ভয় পেয়েছে কী না কে জানে!”
–ওরা ঠিক আছে। নাহলে এতোক্ষণে কেঁদে বাড়ি মাথায় তুলতো। আর শুনো, তোমার ভাইয়া কী বলে গেলো? তার কথা শুনবে না? তোমার ভাইয়া কিন্তু রেগে যাবে তখন আমাকে বলতে এসো না।
কুয়াশা চুপচাপ বসে রইলো পাখি চলে গেলো।
বাড়ির তিনজন মানুষের মৃত্যুে পুরো পরিবার চুপসে গেছে। আগে বাড়ির বেশিরভাগ কাজ দুই শাশুড়িই করতো। এখন তুতুল আর পাখির উপরেই সব দায়িত্ব এসে পড়েছে। মুন্নিও স্বামী, জা নামক বোন, ভাসুর নামক ভাই হারিয়ে শোকাভিভূত হয়ে আছে। কোনো দিকে তার খেয়াল নেই। পাখি যথাসম্ভব সকালের নাস্তা তৈরি করলো তুতুলের ঘুম থেকে দেরি হয়ে যাওয়ায় নিচে নামতে দেরি হয়ে গেছে এসে দেখলো পাখির সব কাজ করা শেষ মনে মনে অপরাধ বোধ নিয়ে বলল “সরি, ভাবিপু। আসলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। তোমার একা কষ্ট হয়ে গেলো।”
পাখি হেসে বলল “কোনো ব্যাপার না। তোমার তো এমনিতেই নতুন বিয়ে আমাকেও এমন সময় মা, ছোটমা রান্নাঘরেই ঢুকতে দিতো না। কয়েকদিন আগ অব্দি ও রান্নাঘরে আসতাম না। কিন্তু তুমি শাশুড়ি আদর কম পেলে। এমন একটু আধটু দেরি হলে আমি কিছু মনে করবো না তাই বলে প্রতিদিন এমন করো না আমি একা পেরে উঠবো না। ছেলে দু’টোকে নিয়ে হিমসিম খাবো।”
–ঠিক আছে ভাবিপু। তুমি যাও কুশ, শানকে ঘুম থেকে তুলো। আমি টেবিলে খাবারগুলো সার্ভ করছি।
পাখি চলে গেলো। তুতুল শাশুড়ির খাবার তার রুমে নিয়ে গেলো। তিনি অতিরিক্ত প্রেশারে বিছানা সোজ্জায়। তুতুল ওনাকে জোর করে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো। মুন্নি আগে কখনো বউদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো না তবে ইদানিং অসুস্থতায় তিনি খারাপ ব্যবহার করে ফেলে ওরা দুবউ সেটা বুঝতে পারে। ওরাও সে কথা গায়ে মাখে না। মেঘ, কুশান মুন্নির হয়ে বার বার বউদের কাছে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চায়।
সকালে সকলে খাবার টেবিলে উপস্থিত হয়েছে অনেকদিন পর এমন দৃশ্য তবে সেখানে চারজন মানুষ অনুপস্থিত। খালি চেয়ারগুলোর দিকে তাকিয়ে তারা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। দোয়া ছাড়া কিছু করার নেই তাদের। কুয়াশা তেমন খেতে পারলো না কুশানের খাবার শেষে ও বলল “ভাইয়া, আমি বিয়ে করতে চাই!”
উপস্থিত সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এমন পরিস্থিতিতে কুয়াশার এমন কথা কেউ আশা করে নি। কুশান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল “হুম, দিবো।”
–যত তাড়াতারি সম্ভব
–সুপাত্র খুঁজতে তো সময় লাগবে। তেমন ছেলে পেলে, তোর পছন্দ হলে রাজী থাকলে বিয়ে হবে।
–ছেলে খুঁজেতে হবে না। রাজকেই বিয়ে করবো।
সকলের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। যে মেয়েটা রাজকে বিয়ে করবে না বলে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়ে ছিল আজ তাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেলো কী কারণে এমন পরিবর্তন? কেউ বুঝতে পারছে না কুয়াশার কী হয়েছে? এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী? কুয়াশা কী শোকে পাগল হয়ে গেলো?
চলবে ইনশাআল্লাহ
#প্রেমহিল্লোল||১৬||
#তাসনীম_তামান্না
পরিবেশ কয়েক মুহুর্তের জন্য থমথমে হয়ে উঠলো। কারোর মুখে কোনো শব্দ নেই। তারা আসলে বুঝতে পারছে না কুয়াশার এমন সিদ্ধান্তে কী বলা উচিৎ। কিন্তু কুশান মেজাজ হারিয়ে তেতে উঠে বলল “তুই যা চাইবি তাই হবে না-কি? একবার বলেছিস রাজকে বিয়ে করবি না মেনে নিয়েছি। আবার রাজকে বিয়ে করবি বলে লাফাচ্ছিস। কী চাইসিস তুই?”
–বললামই তো রাজকে বিয়ে করতে চাই। তোমাদের কষ্ট কমিয়ে দিতে চাইছি। তা-ও এমন করছ কেনো? রাজ একটু খারাপ তবে মানিয়ে নিবো সমস্যা নেই।
–তোর সমস্যা না থাকলেও আমার সমস্যা আছে। ওমন ছেলের সাথে আমি তোর বিয়ে দিব না। আর না তুই বিয়ে করবি।
পাখি অবস্থার বেগতিক দেখে ওদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল “প্লিজ শান্ত হও তোমরা। কুয়াশার এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী? সেটা না জেনে চিৎকার চেচামেচির করে কোনো লাভ আছে?”
কুশানের কাছে পাখির কথা যুক্তি সংযত মনে হলো বলল “রাজকেই কেনো বিয়ে করতে চাস?”
কুয়াশা রোবটের মতো করে বলল
–তোমাদের কষ্ট কমাতে যত দ্রুত সম্ভব চলে যেতে চাই।
কুশান আবারও মেজাজ হারিয়ে ফেললো
–দেখছো নাটক করছে ও সবসময় কাহিনী না করা অব্ধি ওর মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। কার কাছে কী জিজ্ঞেসা করবো? ও যা মনে করবে সেটাই ও করবে। এখন তো বাবা-মা ও নেই। আমি ও ওর কেউ না। আমার কথা কেনো মানবে ও?
ভাইয়ের কথার বাণে কুয়াশার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল “আব্বুর শেষ ইচ্ছা ছিলো রাজের সাথে আমার বিয়ে দিবে। আব্বুর ইচ্ছা আমারও সেটাই ইচ্ছা।”
কুশান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল “তোর মাথায় এসব ফালতু কথা কে ঢুকিয়েছে?”
–কেউ না আমি নিজের ইচ্ছেতেই বলছি।
–পাখি তোমার ননদ যে পাগল হয়ে গেছে সেটা প্রমাণ করতে বারণ করো আমি কিন্তু বারবার মেজাজ ঠিক রাখতে পারব না। যা বলার সরাসরি বলতে বলো এমন অর্ধেক কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না। আর বলতে ইচ্ছে না করলে আমার চোখের সামনে থেকে যেতে বলো। কোনো রাজ টাজের সাথে বিয়ে হবে না।
কুয়াশা হুট করে চিৎকার দিয়ে বলল “তোমার ভাব বেড়ে গেছে ভাইয়া? এমনভাবে কথা বলছ কেনো? আমার জীবনের সব সিদ্ধান্ত কী তুমি নিবে? আমার কোনো দাম নেই মতামত নেই?”
–না নেই তোর এমন ফালতু, ভেল্যুলেস সিদ্ধান্ত কেউ জানতে চাই নি। আর বাবা কখনো বলে নি রাজের সাথেই তোর বিয়ে হবে। বাবা আমাকে যা বলার বলে গেছে আর সেটাই হবে।
কুয়াশা চোখের পানি মুছে ভুরু কুঁচকে বলল “কী বলে গেছে আব্বু? আমাকে নিয়ে বলেছে? কী বলেছে?”
–তোকে বিয়ে দিতে বলেছে কিন্তু সেটা রাজের সাথে নয়।
–তুমি মিথ্যা বলছ! রাজের সাথে বিয়ে করতে দিবে না বলে মিথ্যা গল্প বানাচ্ছ! আমি বুঝতে পারবো না ভেবেছ? বোকা বানাচ্ছ আমাকে?
–তোকে কিছু বলার নেই আমার। যে বোঝে না তাকে শত বুঝিয়েও লাভ নেই।
কুশান চলে গেলো রুমে। পাখিও স্বামীর পিছনে পিছনে গেলো। মেঘ এগিয়ে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল “কী হয়েছে সোনা? এমন বিহেভ করছিস কেনো? ভাইয়া কষ্ট পেয়েছে না? মাথাটা ঠান্ডা করে ভাব। মৃত মানুষের নামে ভাইয়া মিথ্যা কথা বলবে? তা-ও কিনা সে বাবা। ভাইয়াকে এতোটাও অবিশ্বাস করিস না।”
তুতুল বলল “একজ্যাক্টলি! ভাইয়া তুমি বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছ। বাড়ির কারোরই মনমেজাজ ভালো নেই। ভাইয়াও তোমার এমন ব্যবহার নিতে না পেরে একটু রাগ করেছে। তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো অবুঝের মতো করছ কেনো? হঠাৎ!”
–তুই নিজের মাথায় ভাব। কী চাস? কোথায় ভুল হচ্ছে। তারপর যদি তোর মনে হয় তুই ভুল করেছিস। ভাইয়ার কাছে গিয়ে সরি বলে আসিস। ভাইয়া বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারবে না।
মেঘ বাড়ির বাইরে চলে গেলো। মেঘা দুদিন আগে শশুড়বাড়িতে চলে গেছে। তুতুল এঁটো থালাগুলো জড়ো করে রান্নাঘরের কাজে লেগে পড়লো। কুয়াশার কী যেনো হলো। দাঁড়িয়ে থেকে দুনিয়ার সব কথা ভেবে ফেললো। তার যে ভুল হয়েছে সেটাও বুঝতে পারলো। ভাইকে কীভাবে দোষারোপ করলো! কথা শোনালো! নিশ্চয়ই সে কষ্ট পেয়েছে তার এমনভাবে কথাগুলো বলা ঠিক হয় নি। চোখ দিয়ে অর্নগল পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। পানি মোছার বৃথা চেষ্টা করে ভাইয়ের রুমের উদ্দেশ্য গেলো।
কুয়াশা ওদের রুমের সামনে এসে ওদের কথোপকথন শুনে দাঁড়িয়ে গেলো। পাখি কুশানকে বলছে “বাবা তো একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে গেছে। তুষার ছেলে হিসাবেও ভালো কোনো খারাপ দিক চোখে পড়ে নি আজ অবধি।”
–কিন্তু এটা কখনো সম্ভব নয় পাখি।
–কেনো সম্ভব নয়? চাইলে সবই সম্ভব!
–তুমি বুঝতে পারছো না। বাবা প্রথমে ওদেরকে রিজেক্ট করে দিয়েছিলো। কুয়াশাকে দূরে পাঠাবে না বলে আমিও আমার বোনকে অতো দূরে পাঠিয়ে ঠিক থাকবো?
–দেখো কুশান চাইলে সবই সম্ভব। আজকালর যুগে ভালো ছেলে খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। সেখানে আত্মীয়দের মধ্যে আত্মীয় করলে আরো সেটা ভালোই হবে তুষার ভালো ওর বাবা-মা সবাই ভালো কুয়াশা ওদের সাথে ভালো থাকবে। তুষারের বাবা-মা’কে দেখলে না বিয়ের প্রস্তাব না করে দেওয়ার পরও কেমন স্বাভাবিক ব্যবহার করছিলো। তাছাড়া বাবাও শেষ মুহূর্তে এসে তুষারকে কুয়াশার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
–আমরা মেয়ে পক্ষ হয়ে প্রস্তাব পাঠাবো? কুশুও তো রাজি ছিলো না।
–আচ্ছা, আমি বলি এখনই বিয়ে বিয়ে করে লাফিয়ো না। বিয়ে দেওয়া তো পালিয়ে যাচ্ছে না। তোমরা নিজেদেরকে একটু সামলিয়ে উঠো। তারপর বিয়ের কথা ভেবো। তাছাড়া পরপর তিনজনের মৃত্যুর পর বিয়ের কথা উঠালে বাইরের লোকজন জানলে কী বলবে? অফিস নিয়ে কিছু ভেবেছ? তুমি আর মেঘ দুজনেই এবার বাবাদের ব্যবসাটা ধরো। নাহলে তো ব্যবসা ডুববে।
–ঠিকই বলেছো। তোমরা কুশুটাকে বুঝিও পাগলিটার মাথায় যে মাঝেমাঝে কী পাগলামি চাপে। এসবের জন্য না ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে জীবনটা নষ্ট করে না ফেলে।
–তুমি চিন্তা করো না আমরা সবাই আছি কুয়াশাকে সামলে নিবো। বাচ্চা অবুঝ ঠিক হয়ে যাবে। শোকে আছে কী থেকে কী করবে বুঝতে পারছে না জ্বরে ভুল বকছে। ওর কথায় কষ্ট নিও না।
–আমি ওর কথায় কষ্ট পাই নি। শুধু ওকে নিয়ে টেনশন হয়। আমারই তো বোন। ওকে বুঝি আমি। বাবা-মা ছাড়া সব কিছু এলোমেলো লাগছে। কী থেকে কী করবো বুঝতে পারছি না কিছু। খুব অসহায় লাগছে।
কুয়াশা আর কিছু শুনতে ইচ্ছে করলো না। ধীর পায়ে প্রস্থান করলো রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। কী হচ্ছে তার সাথে? ভাগ্য তার সাথে লুকোচুরি খেলছে। এর শেষ কোথায়? কার সাথে জুড়বে ভাগ্য?
চলবে ইনশাআল্লাহ