#এক_মুঠো_বুনোপ্রেম
পর্ব ২৭ (শেষ পর্ব)
#জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা
” আর্শি দাদুভাই, তুমি এখনো সেই ছোট্ট আর্শির মতোই আছো! চেহারাটা সেই আগের মতোই আছে, তখন সেই ছোটো দেখছিলাম, এখন কত বড় হয়ে গেছো!”
আগন্তক লোকটি তার চোখ দুটির তারা খসিয়ে জ্বলজ্বল চোখে আর্শিকে দেখতে লাগলো আর উক্ত কথাগুলো বলতে লাগলো।
আর্শি তার কথা শুনে মৃদু কেঁপে উঠে ভীত পায়ে পিছিয়ে গেলো। আর্শি যে লোকটাকে নূন্যতমও চিনতে পারেনি তা আর্শির হাবভাব দেখেই বুঝা গেলো। এষ আর্শির হাত লুফে নিয়ে ছোটো ধমকের সাথে বললো,
“উনাকে ভয় পাওয়ার কি হলো? উনাকে ভয় পাচ্ছিস কেনো আর্শি?”
এষের কথা শুনে বৃদ্ধ হেসে উঠলো। সে আর্শিকে উদ্দ্যেশ্য করে পুনরায় বলে উঠলো,
” আর্শি দাদু, তুমি কি এখন আর ছোটো আছো? যে মানুষ দেইখা ডরাও? আর তোমার মা কই?
আর্শি নিরুত্তর।
বৃদ্ধ আবার বলে উঠলো,
” তোমার মা বলতে তো অপরাজিতাকেই বুঝি আমরা! তো অপরাজিতা বউ মা কই? সে আসে নাই?”
আর্শি এ প্রশ্নেরও উত্তর না দিয়ে চুপ থাকায় এষ একটা ছোট্ট খোঁচা দিলো তাকে, কিন্তু আর্শি নিশ্চুপ। তাই এষই আর্শির হয়ে বললো,
” না, উনি তো দেশে নাই, তাই আমরা দুজনেই এসেছি!”
বৃদ্ধ এষকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বললো,
” ও, তুমি বুঝি আর্শির জামাই লাগো দাদুভাই?”
এষ কিছু না বলে হালকা স্বরে সামান্য কেশে উঠলো।
বৃদ্ধ এষের কাশি শুনে হো হো করে হেসে পুনরায় বললো,
” আর্শিরে বিয়া দিছে, এ কথা তো আমারে অপরাজিতা কইলো না? নাকি কইছিলোই? মনে নাই তো? ”
এসব প্রশ্নের জবাবে এষ বললো,
” না, আমাদের বিয়ে হয়নি!”
আজগর হেসে বলে উঠলো,
“ও আইচ্ছা, মনে পড়ছে, বউমা বলছিলো তার ভাইয়ের পোলার লগে আর্শির বিয়া হইবো, তুমি কি সেই ভাইয়ের পোলা?”
এষ ইতস্তত করে বললো,
” জ্বী, হ্যাঁ, আমিই সেই!”
” তোমার কথা অনেক বলছে অপরাজিতা, অনেক ভালা পোলা তুমি, আর্শি দাদুকে বহুত ভালোবাসো!”
এষ লজ্জা পেলো বৃদ্ধের কথা শুনে আর আর্শি যেনো এখনো ভয়েই আছে।
বৃদ্ধ বলে চললো,
” দাদুভাই, আমার নাম আজগর আলী, আমি এ বাড়ি সেই বহু আগে থেকেই দেখাশোনা করে আসছি, আগে আর্শির দাদা দাদী বেঁচে থাকা অবস্থা থেকেই আমি এ বাড়ির একমাত্র কেয়ার টেকার। এখন বয়স হয়েছে, এক পা কবরে ঢুকে গেছে, তাও এ বাড়ি ছাড়ি না, পরিস্কার করে রাখি বাড়ি- ঘর, পুকুর, আঙ্গিনা। অপরাজিতা বউ বছরে এক দুইবার এই বাড়িতে আসে, বাড়ির কোনো জায়গা মেরামতের দরকার লাগলে মেরামত করায়, আমার বেতন সহ ঔষধ পত্র সব দিয়া যায়। আমার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা সবার সব প্রয়োজনও সে ই মেটায়!”
এষ একথা শুনে “আচ্ছা” বলে হা বোধক মাথা নাড়লো।
লোকটা পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বললো,
” অপরাজিতা মা রে একটা কল দেই? আর সে আমারে একটা কল দিয়া জানাবার পারলো না যে তোমরা আসবা? তাইলে আমি তোমাদের জন্য কিছু খাবার দাবারের ব্যবস্থা করতাম। এখন তোমাদের কই থাকবার দেই? আর কি খাবার দেই? আমি তো দুই বেলা দই চিড়া খাইয়াই কাটাই!”
এষ এগিয়ে এসে লোকটাকে থামালো,
” প্লিজ, উনাকে কল দিবেন না, উনি গুরুত্বপূর্ণ কাজে দেশের বাইরে আছেন, আমাদের নিয়ে ভাববেন না, আমরা সব খেতে পারি। কয়েকদিন এখানে থেকেই আমরা চলে যাবো”
লোকটা হাসিমুখে ‘আচ্ছা’ বলে ফোনটা পকেটে পুরে বললো,
” ধুর! ছাই! আমি বুইড়া মানুষের হুশ কম! বাহির বাড়িতে দাঁড়ায়াই সব আলাপ করছি, ভেতরে আসো, আসো তো ভেতরে আসো, তোমাগোরেই বাড়ি এইটা। যতদিন চাও থাকবা। তবে দেখো, থাকবার পারো কিনা? বহু পুরাতন বাড়ি!”
এষ আর আর্শি লোকটার অনুসরনে ভেতর বাড়িতে পা বাড়ালো।
সময় তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে চারপাশে বেশ নিকষ অন্ধকার পড়ে গেছে। তবে চারপাশে বৈদ্যুতিক বাতির অভাব নেই। সবকিছু ঝমমকেই দেখা যাচ্ছে।
বাড়িটা দ্বীতল, ডুপ্লেক্স। প্রধান গেইটের সামনেই দুসারি করে চারসারি ফুলের গাছ।
ভেতরে যেতেই চমৎকার সুসজ্জিত ড্রয়িং রুম। সব পুরানো আসবাবপত্র, তবে জৌলুসের শেষ নেই।
দেয়ালে কয়েক জায়গায় পলেস্তারা খসে গিয়েছে। ছাদ হতেও চুন ঝড়ছে, তবে ফ্লোর ঝকঝকে, তকতকে!
উঁচু দেয়াল শোকেসে আর সিঁড়ির বাঁকে বাঁকে অনেক ছবি রাখা।
এষ ছবি দেখেই বুঝতে পারলো তারা কারা। আর্শির ডায়িরিতে লিখাই ছিলো, কোনটা তার বাবা আর কোনটা দাদা, দাদী।
আর্শিও ছবিগুলো দেখছিলো। এসব দেখেও আর্শির তখনো কোনো ভাবান্তর নেই। তখনো পর্যন্ত তাকে ভীতু ভীতুই লাগছিলো।
এষ হেসে আর্শিকে স্বাভাবিক করার চেষ্ঠা করলো।
তারপর বললো,
” আরে বোকা, এভাবে চুপসে আছিস কেনো? চিনতে পারছিস না? এটা তোর দাদার বাড়ি। আর এই যে ছবিগুলো দেখছিস না? এটা এই যে এটা.. তোর বাবার ছবি, আর এটা তোর…মে বি এটা তোর দাদার আর এটা তোর দাদীর.. ”
আর্শি আশ্চর্যান্বিত হলো।
এষ কিভাবে এতকিছু জানে?
আর আর্শি সব ভুলে গেছে? এ বাড়িতে তার অতীতের এত স্মৃতি থাকতে সে কেনো আর কিভাবে সব ভুলে গিয়েছে?
আর্শি তার সকল সার্টিফিকেটে তার বাবার নাম মৃত আরশ মাহমুদ নাম লিখেছে । তবে তার ছবি তার মা তাকে কোনোদিন দেখায়নি! কেনো দেখায়নি সেটাও সে কোনোদিন তেমন ভাবে জিজ্ঞেস করেনি। অপরাজিতা একা একাই একবার বলেছিলো যে, আর্শির বাবার কোনো ছবি তার কাছে নেই। আর আর্শি বাধ্য মেয়ের মতো সেটাই মেনে নিয়েছিলো।
আর এখানে তাদের এত এত ছবি দেখা যাচ্ছে। এষ যাকে তার বাবার ছবি বলছে তার চেহারার সাথে আর্শি নিজের চেহারার অবিকল মিল খুঁজে পেলো।
আর্শির মনে প্রশ্নেরা জাগতে শুরু করলো,
” মা তাহলে আমাকে মিথ্যে বলেছে? তাহলে না জানি আরো কতশত মিথ্যে সে বলেছে?”
অপরাজিতার প্রতি একরাশ ক্ষোভ এসে জমা হলো আর্শির হৃদয়ে।
বৃদ্ধ লোকটি আর্শিকে ওয়াশ রুম দেখিয়ে ফ্রেশ হতে বললো, দুজনেই ফ্রেশ হয়ে বসে গোটা বাড়ি পর্যবেক্ষণে লেগে গেলো।
হঠাৎ ই আর্শি বেঁকে বসে।
” আমি এখানে আর এক মুহূর্তও থাকবো না এষ! আমি মায়ের কাছে যাবো? মায়ের সাথে আমার একটা বোঝাপড়া করা দরকার!”
এষ অবাক হলো,
” আর্শি! তুই হুঁশে আয়! আগে তুই তোর অতীত মনে কর, তারপর বোঝাপড়া হবে। তোর অতীত যে তোকে মনে করতেই হবে! তাছাড়া তুই শুধু অতীত নয়, বর্তমান ও ভুলে যাবি!”
আর্শি একথা শুনে স্তব্ধ হলো।
” কি বলছিস এসব? আমি এই বাড়ি আর এত কিছু দেখেও কোনো কিছু মনে করতে পারছি না, তার মানে আমি হয়তো কোনোদিনই আগের কোনো কিছু মনে করতে পারবো না!”
আর্শি মাটিতে ধপ করে বসে পড়লো এটা বলে।
এষ আর্শির কাছে আসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলো তারপর উঠিয়ে বললো,
” ভাবিস না আর্শি, তোর সব মনে পড়বে, ডক্টর লিও আমাকে যেভাবে ডিরেকশন দিয়েছে, আমি সেভাবেই করছি, সবকিছু মনে করার জন্য তোর নিজেকে প্রেশার দেওয়ার কোনো দরকার নেই। কয়েকদিন এখানে থাকলে নরমালিই তোর সবকিছু মনে পড়ে যাবে, লক্ষীটি প্লিজ, ধৈর্য্য ধরে কয়েটা দিন এখানে থেকে যা!”
আর্শি এষের হাত হতে নিজের হাত চটে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
” তার আগে বল, আমার মা কি কোনো দোষী? সে আমাকে কেনো সব সত্যি লুকিয়েছে? সে আমার বাবা সম্পর্কে প্রশ্নে সবসময় চুপ থেকেছে কেনো? কি সে কারন?”
এষ আর্শির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
” আই থিংক সি ইজ গিলটি! তবে সবকিছু প্রমাণ হওয়ার আগে তাকে কিছুই বলা যাবে না। আর আই থিংক এসব কিছুর কারন তুই ই জানিস, তোর যখন সবকিছু মনে পড়বে তখন, তুইই বলতে পারবি, কি হয়েছিলো সেদিন!”
আর্শি মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লো। তার নিজের মাথা ঠুকতে মন চাইছে।
এষ আর্শিকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে সামলে নিলো।
রাতে খাওয়া শেষ করে দুজনকে একই ঘরে শুতে দিয়ে চলেই যাচ্ছিলো সেই বৃদ্ধ আজগর আলী।
আর্শিকে বরাবরের মতোই ঘন্টা দুই মাথা মাসাজ করে ঘুম পাড়িয়ে দিলো এষ।
আজগর সবকিছু গুছিয়ে লাইট অফ করে নিজের কক্ষে যাচ্ছিলো।
এষ লোকটাকে থামালো।
” আসলে আমি আর্শির জামাই না দাদু, আমাকে আরেকটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিন প্লিজ”
আজগর বললো, ” আসো আমার সাথে!”
এষ তার হাত ধরে বললো,
” আপনার ঘরেই থাকবো আজ, কথা আছে!”
.
.
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ভূত দেখার মতোই চমকে উঠলো এষ।
এষ কিছু বলবে তার আগেই অপরাজিতা বলে উঠলো,
” তুই এখানে কেনো এনেছিস আর্শিকে?”
এই প্রশ্নের উত্তরে এষ যেনো একটা বোম ফাটালো।
” বাহ! মিসেস অপরাজিতা, এখানে এসে সব সত্য জেনে গেছি দেখে আপনার এতো জ্বলছে? ”
অপরাজিতা চুপ!
এষ নিজের রাগ ঝাড়তে লাগলো,
” তোমাকে আমার ফুপি বলতেও ঘৃণা হচ্ছে, মিস না মিসেস অপরাজিতা বলবো তাও জানি না। আর্শিকে তুমি এতদিন ভুল মেডিসিন খাইয়ে পাগল বানাতে ধরেছিলে কেনো?”
অপরাজিতা মাটিমুখি হয়ে ছলোছলো চেয়ে আছে।
এষ আবার বলে উঠলো,
” বাহ! অপরাজিতা, আবার মায়াকান্নাও কাঁদে? নাটক কম পারো না তুমি? আর্শি নিজের বাবা দাদার ভিটা জীবনেও দেখাওনি, ওর নিজের মায়ের কাছেও যেতে দাওনি কোনোদিন? সব লুকিয়ে তুমি পেয়েছো টা কি? শুনি? নাকি সমাজকে নিজের আসল রুপ দেখাতে লজ্জা করে? তুমি তো কোনোদিন আরশ নাংজু নামে ঐ আধা কোরিয়ান খ্রীষ্টান ভদ্রলোককে বিয়েও করোনি, বরং তার সাথে লিভ টুগেদার করেছিলে..”
এষের মুখে এসব কথা শুনে অপরাজিতা দৌড়ে চলে গেলো ভেতর অন্য একটা রুমে।
এষও তার পিছু পিছু দৌড়ে গেলো।
অপরাজিতা একটা রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
এষ আর তাকে ডাকলো না, ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না তার অপরাজিতার প্রতি। বরং আজগরের ডাকে সে দৌড়ে গেলো, আর্শি যে কক্ষে ঘুমিয়েছিলো সেই কক্ষে।
আজগর এদিকে আর্শিকে চিরুনী তল্লাসী চালাচ্ছে।
আর্শি নেই! কোথাও নেই, সারাবাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে আজগর।
তার মানে? আর্শি আবার পালিয়েছে?
এবার আর এষ ভুল করলো না। সরাসরি আগের বার প্রাপ্ত সেই কানাড়ার নাম্বারটায় কল দিলো।
তিন চারবার রিং হওয়ার পর এক পুরুষকন্ঠ শোনা গেলো।
” আপনি কে? আপনি কি প্রহ?” কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো এষ।
“জ্বী, আমিই প্রহ! কি ব্যাপার বলুনতো?”
” আমি আসলে আর্শি আর আপনার ব্যাপারে জানতে চাচ্ছিলাম!”
প্রহ নামে সেই ক্যারেক্টার ফোন কানে নিয়েই হা হা করে হেসে উঠলো।
” আরে! আর্শি, আমার ঐ পাগল ফুপির মেয়ে আর্শি। আমি তো ভাবি ওও একটা পাগল। সেই কবে আমি ওকে রিজেক্ট করেছি, তারপরো ও আমার পেছনেই পড়ে থাকে। সারা বছর খোঁজ নাই, হঠাৎ একদিন কোথা থেকে উদয় হয়ে আমাকে কল করে বসে। আমার সাথে দেখা করতে চায়, আমার সাথে পাগলামী করে। আমি তো থাকি কানাড়ায় সেই কত বছর ধরে। আমি ম্যারিড। এখানে আমার ওয়াইফও আছে। আই থিং আপনি বুঝতে পেরেছেন!”
এষ বিস্মিত হয়ে সুধালো,
” তার মানে আপনি তাকে রিজেক্ট করেছিলেন?”
” ইয়া মিস্টার, আমি তাকে সেই কবেই রিজেক্ট করেছিলাম, একদম ছোটোবেলায়! ঐ সব পাগল বুদ্ধিহীন মেয়েছেলে আমার পক্ষে সম্ভব নয়..”
এষ এবার দ্রুত আর্শির সেই ডায়রিটা খুললো,
প্রহ তাকে ডেকেছে, কি জানি বলবে, এরপর ডায়রিতে আর কিছুই লেখা নেই। তার মানে প্রহ তাকে ডেকেছিলো রিজেক্ট করার জন্যই?
সেই প্রহ নামক লোকের আর কোনো কথাও না শুনে এষ দ্রুত চললো, এয়ারপোর্টের দিকে।
আর্শিকে এর আগেতো সেই এয়ারপোর্টেই পাওয়া গিয়েছিলো।
ঘন্টা খানেকের মধ্যেই এষ এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলো।
সেখানে সত্যিই আর্শি বসে ছিলো।
এষ যেতেই তাকে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আর্শি।
মানুষ জনের উপেক্ষা না করেই তাকে চুমুতে ভরে দিলো আর্শি।
এষ লজ্জায় লাল হয়ে আর্শিকে সরিয়ে বললো,
” আর ইউ ক্রেজি আর্শি?”
” হুউম, আমি ক্রেজি, আমার সবকিছুই মনে পড়ে গেছে রে? অতীত, বর্তমান সব!”
“তাহলে তুই এখানে যে?”
” তুই বাংলাদেশে এসেছিস প্রায় বছর হতে চললো, তুই যেদিন এসেছিলি, তুই খুব করে চেয়েছিলি যে আমি তোকে রিসিভ করি, কিন্তু আমি তোকে রিসিভ তো দূরে থাক, বাসায় এলে দূর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম! তাই আজ তোকে রিসিভ করতে এসেছি! ঐদিনের প্রক্সি এটা! ”
এষ হাসলো, আর প্রশ্ন করলো,
” আর তোর ঐ প্রহ?”
আর্শি এষের গলা জড়িয়ে বললো,
” ধুর! ও কেউনা আমার, যে আমাকে কোনোদিন ভালোইবাসেনি, তাকে নিজের জামাই বানিয়ে তোকে আমি দূরে ঠেলে দিতে বসেছিলাম, আই একচুয়ালি ডোন্ট লাভ এনি প্রহ এনিমোর। ওর প্রতি যা ছিলো তা হলো ছোটোবেলার অপরিপক্ক মস্তিষ্কের বোকামী, তাছাড়া আর কিছুই নয়। আই ডু লাভ ইউ এষ! আই লাভ ইউ ক্রেজিলি!”
এষ স্বস্তির নি:স্বাস ফেললো।
আর্শিকে জড়িয়ে বললো,
” আই লাভ ইউ অলসো!”
আর্শি আবদারের স্বরে বললো,
” চল এষ, মাম্মীর কাছে যাই!”
এষের এতক্ষণ ভুলেই ছিলো অপরাজিতার কথা।
সে এক্ষণে রেগে গিয়ে বললো,
” ডোন্ট কল হার মাম্মী, সে তোর মা নয়, তোর বাবার সাথে সে লিভ টুগেদার করেছিলো। সে মা নামে কলঙ্ক! ”
” ওসব বানানো কথা এষ, আমি নিজে তাদের বিয়ের স্বাক্ষী ছিলাম!”
এষ রেগে বললো,
” আর তোর ধর্ম কি? সেটা আমাকে কেনো লুকিয়েছিলো অপরাজিতা?”
” আরে! বাবা মারা যাওয়ার পর আমিও মাম্মীর ইসলাম ধর্মই গ্রহণ করি, অপরাজিতাই তার সব স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে আমাকে বড় করেছে, তার ঋণ আমি কোনোদিন পরিশোধ করতে পারবো না!”
” তুই ভুল বুঝছিস আর্শি, অপরাজিতা তোকে ভুল ঔষধ খাইয়ে পাগল বানিয়ে রেখেছিলো…”
শেষ কথাটায় আর্শি থেমে গেলো। আর কোনো উত্তর সে দিতে পারলো না।
দুজনেই আবার চললো, নারায়ণগঞ্জ। আর্শিদের সেই বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে।
হায় হায়! এতক্ষণে ঐ বাড়িতে লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছে বেশ।
লোকজন বলাবলি করছে অপরাজিতা পয়জন খেয়ে নিয়েছে।
আর্শি দৌড়ে অপরাজিতার কাছে গেলো।
অপরাজিতার মুখ নীল হয়ে আছে।
বিষের প্রভাব তার সারা শরীরে ছড়িয়ে গিয়েছে।
আর্শি এষ কে কেঁদে কেটে অনুরোধ করলো তার মা কে হসপিটালে নিয়ে যেতে।
কিন্তু এষ নিশ্চল।
অপরাজিতা আর্শিকে কাছে ডেকে নিলো।
আর্শি কাঁদছে।
শেষ কথাগুলো বলতে লাগলো অপরাজিতা।
” আর্শি মা, তোমাকে আমি তোমার অতীত ভুলিয়ে রেখে যে পাপ করেছিলাম, আজ আমি তার প্রায়শ্চিত্ত করছি। এখন আমাকে হসপিটালে নিয়েও কোনো লাভ নেই। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমার ভয় ছিলো তোমার আসল মা তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নেবে, সেই ভয়েই আমি তোমাকে অতীত ভুলে যাওয়ার মেডিসিন দিতাম। আসলে বন্ধ্যা! আমি মা হওয়ার অপারগ ছিলাম। তোমার চেহারার মাধ্যমে আমি আরশ কে খুঁজে নিতাম। তাকে আমি ভীষণই ভালোবাসতাম। কিন্তু তোমার মা তাকে বাঁচতে দেয়নি। কিন্তু পাগল বলে তোমার মায়ের তেমন কোনো সাজা হয়নি। সে জেল থেকে বের হয়ে তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার পায়তারা করে, আমার নামে মামলা দেয়। ঠিক তখনি তোমাকে আমি সেই মেডিসিন গুলো খাওয়ানো শুরু করি, আর তাতেই তুমি সব ভুলে কোর্টে এমন স্বাক্ষ্য দাও যে, তুমি ঐ মহিলাকে চেনোই না। আর আমি জিতে যাই, সাথে তোমাকেও পেয়ে যাই! ”
এবার অপরাজিতা এষের দিকে মুড়ে বলে,
” আমাকে পারলে ক্ষমা করো এষ! আমি চরম অপরাধ করেছি, আমি জানি, আর্শিকে তুমি স্বর্বোচ্চ ভালোবাসায় রাখবে.. এখানে আমার আর কিছুই বলার নেই…
অপরাজিতা শেষ নি:স্বাস ত্যাগ করলো।
ডক্টর লিও এবারে উত্তর পেলো, কেনো অপরাজিতা মিথ্যা বলেছিলো”
শুধুই মা ডাক শোনার জন্য..!
অপরাজিতার শোক ভুলে আর্শির স্বাভাবিক হতে বহুদিন সময় লাগলো।
এষ আর আর্শির বিয়ে মহা ধূমধাম করে হলেও তারা থেকে গেলো আর্শির সেই দাদা বাড়িতেই বহুদিন।
এষ আর্শিকে নিজের করে নিলো এভাবেই।
(সমাপ্ত)