#প্রাণপ্রিয়❤️ [পর্ব-১২]
~আফিয়া আফরিন
বিদায় মুহূর্তে অনু গিয়ে সকালের সাথে পরিচয় হলো। আহিরের মা-বাবা, চাচা চাচি, কাজিন’সহ সকলের সাথে কথাবার্তা বলল। সেখানে খানিকটা দেরি হলো, ওরা নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দিতে প্রায় এগারোটা বেজে গেল।
সারাদিনের কাজকর্মের ধকলে সবাই প্রায় ক্লান্ত। অনিতা পরনের কাপড়-চোপড় না পাল্টেই বিছানায় গিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়ল। অনু তা দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘শরীর খারাপ নাকি তোর? চোখ মুখ শুকনো লাগছে কেমন।’
‘তেমন কিছু না। মাথা ব্যথা করতেছে, ঘুম ধরছে কিন্তু ঘুমাতে ইচ্ছা করছে না।’
অনু আর কথা বাড়াল না। তার’ও শরীরটা ক্লান্ত লাগছে। এমনিতেই জার্নি করে এসেছে, তার উপর আবার জীবনের কত ধকল! এত সহ্য করা যায় কীভাবে?
অনিতাকে সাইড করে সে নিজেও শুয়ে পড়ল। আশ্চর্যজনকভাবে, আজ অনেকদিন পর বালিশে মাথা রাখার সাথে সাথেই ঘুমে চোখ বুজে এলো। অনিতা বেশ কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে উঠে গেল। ঘর ছেড়ে বেরোতেই মাকে আর বাবাকে দেখতে পেল। মা কাজ করছে, আর বাবা তার একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। কী সুন্দর মনটা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার মত একটা দৃশ্য! অনিতা আনমনে হাসল। ফুপির ডায়েরী পড়ে জানতে পেরেছে, একসময় বাবার অনেকগুলো গার্লফ্রেন্ড ছিল। তারা এখন কোথায় কে জানে? বাবা তো সব ভুলে মন দিয়ে সংসার করছেন। মাকে ছাড়া তার এক মুহূর্ত’ও চলে না। ভালোবাসার শক্তি হয়তো এভাবেই বেঁধে রাখতে শেখায়।
অনিতা ঘরে এসে চেঞ্জ করে নিল। আহিরের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলল। তারপর মনে পড়ল ফুপির সেই ডায়েরীর কথা। ধীর পায়ে গিয়ে অনুর লাগেজটা খুলতেই দুটো কাপড়ের নিচে কাঙ্খিত জিনিসটা পেয়ে গেল সে। এতক্ষণ ঘুমে চোখ বুজে আসছিল। ডায়েরীটা হাতে পাওয়া মাত্র সব ঘুম কর্পূরের মত উড়ে গেছে। ফুপির জীবনের এই না পাওয়া অধ্যায়ের সাথে যুক্ত হতে তার ভালো লাগে। একটা মানুষের জীবনে কতটা কাহিনীর স্পর্শ থাকে, তা তো কখনো গভীরভাবে বোঝা যায় না। তবে অনিতা যেটুকু বুঝতে পারছে, সেটুকু বুঝলে ক্ষতি কী?
সে আয়েশ করে বসল। সময় বেশি নেই। ফুপি যেই কয়দিন থাকবে, সেই কয়দিনের মধ্যে ডায়েরীটা পড়ে শেষ করতে হবে। বিয়ের পর তার নিজের স্থান’ও হবে শ্বশুরবাড়ি, এরকম স্বাধীনতা পাবে কিনা জানা নেই!
সে পড়তে আরম্ভ করল—
“নতুন বছরটাই যেন শুরু হলো মন খারাপ দিয়ে। ওর মা অনেক বেশি অসুস্থ। ও যখন আমার সাথে দেখা করতে আসে, তখন বেশিরভাগ সময়ই মন মরা হয়ে থাকে। আগের মানুষটাকে আমি আর খুঁজে পাচ্ছি না। আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি, ওর মা যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। আর ও আগের মত স্বাভাবিক এবং সহজ একটা মানুষ হয়ে উঠে।
ওর বিষণ্নতা লক্ষ্য করে আমিই বললাম, ‘আন্টি যেহেতু অসুস্থ, তবে তোমার কয়েকদিন এইখানে আসার দরকার নেই। বাড়িতেই থেকে যাও, মায়ের সেবা যত্ন করো।’
ও উত্তরে বলে, ‘সারাদিনের ক্লান্তি শেষে তোমার কাছে আসি একটুখানি শান্তি আশায়। ভাবি যে, চারিদিকে এত দুশ্চিন্তা—মাথা একদম খারাপ করে দেয়। এরমধ্যে তুমি আমার জীবনে একটুখানি আশার আলো, একটুখানি ভালোলাগা, একটুখানি শান্তি। জীবনের ভালো থাকা থেকে তুমি আমাকে বঞ্চিত করতে পারো না অনু!’
এই কথার পর আর কী বলার থাকতে পারে? ওকে আমি কিচ্ছু বলতে পারি না, ও আমাকে ভারিক্কি জবাব দিয়ে থামিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে ওর ভাবনা-চিন্তা দিয়ে ভাবি। আমি সাধারণ ভেবে একটা কথা বললে, ও সেটাকে সবসময় অসাধারণ পর্যায়ে নিয়ে যাবে।”
২৮ জানুয়ারি, ২০০১.
“প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে আমরা একটা বড়সড় পিকনিকের আয়োজন করি। আমরা বলতে আমাদের পরিবারের গুরুজনেরা। এবারও প্ল্যানিং চলতেছে। কিন্তু আমি সেদিকে খুব একটা মনোযোগ দিতে পারছি না। কারণ, এবার নিয়ম করে ওর সাথে আমায় দেখা করতে হয়। ওকে সময় দিতে হয়। দুই দিন আগে ব্লাড দেওয়ার পর আন্টি এখন সুস্থ রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও আবার আমার হাসিখুশি মানুষটাকে ফেরত পেয়েছি। ওকে মন খারাপে একদম মানায় না।
আগে সপ্তাহে একদিন দেখা করতে আসত আমার সাথে, আর এখন যখন তখন। ওর জন্য আমাকে প্রতিদিন ক্লাসে যেতে হয়। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে দেখি গেটে আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। কখনো হাত খালি করে আসে না। গোলাপ, রজনীগন্ধা, শিউলি, সন্ধ্যা তারা, টিউলিপ, রঙ্গন, মল্লিকা, ডালিয়া—কিছু না কিছু আমার জন্য থাকেই। ওর এই ছোট ছোট গিফটগুলো আমার যে কী পছন্দের, তা কোনদিন ওর কাছে প্রকাশ করি নাই। ও আমাকে ফুলের তোড়া এগিয়ে দিত, আমি নির্বিকারে তা গ্রহণ করতাম। অথচ তখন যে আমার অষ্টাদশী মনে আনন্দের জোয়ার উঠত তা শুধু ও কেন, আমি নিজেও বুঝতে পারতাম না!”
০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০১.
অনিতা পরের পৃষ্ঠা উল্টাতেই দেখতে পেল গোলাপ ফুলের কতগুলো শুকনো পাপড়ি, তার উপর কেমন ফাঙ্গাস পড়ে গেছে। পাপড়িগুলো শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গেছে। হাত ছোঁয়াতেই শুকনো পাতার মত মরমর করে ভেঙ্গে যাবে এমন!
পাপড়িগুলোর ঠিক নিচেই লেখা রয়েছে—
“ভালোবাসা নিদর্শন! তুমি আমায় প্রথম গোলাপ দিয়েছিলে, মনে আছে? আচ্ছা গোলাপটা দিয়ে কি বলেছিলে সেটা মনে আছে? তা থাকবে কেন? আমি হান্ডেট পার্সেন্ট সিওর তুমি ভুলে বসে আছো। থাকবেই তো, তুমি যে বড্ড ভুলোমনা। আমতা আমতা করে বলেছিলে যে, ‘অনু! আমাদের ভালোবাসাটা আজীবন টিকে থাকুক যেভাবে টিকে থাকে গোলাপের পাপড়ি। এই ফুলটা তোমাকে দিলাম আমি হিসেবে। তুমি যত্ন করে রেখে দিও। মনে করো, এটা আমি। সে হিসেবে তোমার ভালোবাসা দিয়ে বেঁচে থাকার শেষ দিন পর্যন্ত মুরিয়ে রেখে দিও।’
কী সাহেব, এখন মনে পড়ছে তো? আপনি আসলেই একটা আশ্চর্যজনক মানুষ।”
এখানে আর দিন তারিখ কিছুই লেখা নেই। অনিতা লেখাটার উপর কয়েকবার হাত বুলালো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পরের পাতা উল্টাল—
“আমার অপদার্থ, গর্দভ ভাইজান চাকরী পেয়েছে। সেই উপলক্ষ্যে বাড়িতে সে ছোটোখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে, নিজেদের নিয়েই। সেই অনুষ্ঠান নিয়ে ভাইয়ার কি আয়োজন! এই করতেছে, সেই করতেছে। বাবা মাকে ডেকে বলল, ‘মিনু তোমার দামড়া ছেলের কান্ডকারখানা দেখেছ?’
মা আর আমি খালি হাসি। বাবা ভাইয়াকে ডেকে বলল, ‘এই যে এতসব আয়োজন চাকরী উপলক্ষ্যে করছিস, সব তো বাপের টাকায়’ই করছিস।’
ভাইয়া মোটেও কিছু মনে করল না। তার জানাই আছে, বাবা নিতান্তই দুষ্টুমি করে বলছে। সে হো হো করে হেসে উঠল। বলল, ‘আমার’ই তো বাপ! বাপের টাকায় করব না তো কার টাকায় করব? হাহাহা!’
ভাইয়া নিজেই গিয়ে রান্নাবান্না করল। কী রাঁধল, আল্লাহ ভালো জানে! একটুও মুখে দিতে পারলাম না।”
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০১.
“চলো, একটা ডিল করি! তোমার কাছে আমি আমার ওই মানুষটাকে তুলে দিব, তুমি যত্ন করে রেখো কেমন! তোমাতেই আমি তাকে লিপিবদ্ধ করি, নিজের অনুভূতিগুলো মন খুলে বিছিয়ে দিই।”
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০১.
“মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, ওর সাথে ওর বাসায় চলে যাই। একগুঁয়ে এই শহর ভালো লাগছে না। আজকাল ঢাকা শহরটা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত রহস্যময়! ভালো লাগে না। রাস্তাঘাটে চলতে গেলে শান্তি পাই না, সবজায়গাতেই ভীড় লেগে থাকে। অতিরিক্ত জনগণের কারণে মাঠ-ঘাট, খোলা জায়গা’সহ সবজায়গাতেই বড় বড় দালানকোঠা গড়ে উঠছে। ইশশশ, আমার চেনা শহরটা কত দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ভাবছি, আর ১০ টা বছর পর এই শহরটার কীরকম পরিবর্তন ঘটবে!”
০১ মার্চ, ২০০১.
“আজ শহর ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়েছিলাম। নদীর পাড়ে, হাওয়া খেতে। কিন্তু হঠাৎ ও বলল, ‘চলো নৌকা করে ওই পাড় থেকে ঘুরে আসি।’ আমার একটু ভয় ভয় করছিল। এমনিতে কখনো নৌকায় উঠি নাই, তার উপর এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে যেতে হবে! সবমিলিয়ে ভয় লাগছিল। তবে, ও যেই মুহুর্তে আমার হাত মুঠোবন্দী করল; সব ভয় কোথায় যেন উড়ে গেল। ও পাশে থাকলে দুনিয়ার কিছুই আমার গায়ে লাগে না। তখন কোথা থেকে সাহস এসে ভর করে মনে। কেউ আমাদের একসাথে দেখে ফেললেও কিছু যায় আসে না। ওর সাথে নৌকায় উঠলাম। কী একটা অনুভুতি! ভালো লাগাও আছে আবার একটু একটু ভয় ভয়ও করছিল। যদি ডুবে যাই? নৌকা যেই হারে দুলছিল। মাঝ নদীতে অনেক অনেক কচুরিপানার দেখা পেলাম। কী মনমাতানো সেই দৃশ্য। ও নৌকা থেকে যতটুকু সম্ভব, আমাকে কচুরিপানা তুলে দিল। ওই পাড় গিয়ে আর বেশিক্ষণ দেরি করি নাই। বাড়ি ফিরতে হবে, বারবার সময় দেখছিলাম। এখনই সাড়ে বারোটা পার হয়েছে, অথচ আমি প্রতিদিন বাড়ি যাই একটার ভিতরে। ফিরতে ফিরতেও এক ঘন্টা লাগবে। ফেরার পথে নৌকা পাচ্ছিলাম না আমরা। অবশেষে ছোট্ট একটা ডিঙি নৌকা ভাড়া করল ও! সেটায় উঠে বসলাম। এইবার আর নৌকায় চড়ে ভয় হচ্ছে না। বাসায় গিয়ে মা-বাবার কাছে কিভাবে জবাবদিহি করব সেটার ভয় হচ্ছে। আমার চিন্তা ও বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু কী করবে? চুপচাপ আমার হাত ধরে বসে ভরসা দিচ্ছিল। নৌকা থেকে নেমে আর কোনদিকে দেরি করলাম না। যত দ্রুত সম্ভব ও আমাকে বাসায় পৌঁছে দিল। তখন প্রায় দু’টো বাজে। ও বলল, ‘মা-বাবা জিজ্ঞেস করলে বিশ্বাসযোগ্য কোন একটা কথা বলে দিও।’
আমি বোকার মত বলে বসলাম, ‘কি বলব আমি?’
‘বলবে যে, নোট নিতে কোনো বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিলে অথবা সবার সাথে তোমার কোনো বান্ধবীর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে। আবার এটাও বলতে পারো, সামনে পরীক্ষার কারণে এক্সট্রা ক্লাস ছিল। আবার এমনও হতে পারে, তুমি তোমার বান্ধবীদের সাথে কোথাও ঘুরতে বেরিয়েছ এই কারণে দেরি হয়েছে। যাইহোক, তুমি এরমধ্যে থেকে বিশ্বাসযোগ্য কিছু একটা বলে দিও। এখন যাও তাড়াতাড়ি, আর দাঁড়িয়ে থেকো না।’
আমি তাই করলাম। দ্রুত বাড়ি এলাম। যেরকমটা ভেবেছিলাম, একদম সেরকম হলো না। মা আমাকে দেখে কোন প্রতিক্রিয়াই করল না। বাবা শুধু বলল, ‘আজ এত দেরি হলো যে মা? আচ্ছা যাও ঘরে গিয়ে কাপড় বদলে এসে খেয়ে নাও।’
আমি সত্যিই অবাক হলাম! ভেবেছিলাম খুউব বকা খাব। ভাইয়া বলছিল, ‘তুই যে আসতে দেরি করলি, নিশ্চয়ই বান্ধবীদের সাথে আড্ডা মারতে গিয়েছিলি কোথাও। হয় হয়, এই বয়সে এসব হয়! যা করিস কর, কিন্তু প্রেম করতে যাস না। প্রেম হচ্ছে কাঁঠালের আঠার মত, লাগলে সহজে ছাড়াতে পারবি না; আবার তার থেকে বাঁচতেও পারবি না।’
ভাইয়াকে কিছু বললাম না। ভেংচি কেটে নিজের ঘরে চলে এলাম। উফফ, এই যাত্রায় জোর বাচা বেঁচে গেছি। আপনমনে আজকের দিনটা কল্পনায় এঁকে ফেললাম। কত সুন্দর মুহূর্ত!”
০৮ মার্চ, ২০০১.
“এই সপ্তাহে আর ওর সাথে দেখা হলো না। নিশ্চয়ই বাড়ি গেছে। ও বাড়ি গেলে আমার খুব চিন্তা হয়, ওর মায়ের জন্য। মন খারাপ হয়, ওর সাথে দেখা হচ্ছে না বলে! ও অবশ্য সেই মন খারাপ প্রতিদিন দেখা দিয়ে পুষিয়ে দেয়। তবুও নগদের আলাদা একটা ভাব আছে না! ওগুলা তো আজকের দিনের বাসি দেখা।”
১৫ মার্চ, ২০০১.
“ভালোবেসে আমি একদম ভালোবাসা বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছি। যাকে পাই, তাকেই জ্ঞান দিই। আজকে আমার এক ছোট বোনকে প্রেমের প্রসঙ্গে বলছিলাম, ‘ভালোবাসা জিনিসটা হচ্ছে আপেক্ষিক বিষয়! মনের অজান্তে কখন মনের ঘরে এসে হানা দিবে বোঝাই যাবে না। যখন বোঝা যাবে তখন, মন শুধু মাত্র তার জন্য উথাল পাথাল করবে। তাকে ছাড়া কিছু ভালো লাগবে না। পরিষ্কার দিনটাও রাতের মত অন্ধকার মনে হবে।’
ও অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছে, ‘ওমা! তুমি এত কিছু কীভাবে জানো আপু? তুমি কি প্রেম করো নাকি?’
আমি তো থতমতো খেয়ে গেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, ‘ওসব জানার জন্য প্রেম করতে হয় নাকি পাগল? আমি এখন বড় হয়েছি না, আমি তো জানবই। তুইও জেনে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’
আমি তো ওকেও ভালোবাসা নিয়ে রঙ-বেরঙের জ্ঞান দিই। আচ্ছা জনাব, আপনি কি আমার জ্ঞান গ্রহণ করে আমাকে সারা জীবন সহ্য করতে পারবেন?”
০২ এপ্রিল, ২০০১.
“আচ্ছা, তোমাকে একটা চিঠি লিখি! এটা কখনোই তোমাকে পড়তে দিব না বা বলব না। তবে আমি লিখে রাখব—
জনাব,
ভালো আছেন তাইতো? থাকবেন’ই তো। আমি আছি না আপনার জীবনে, হিহিহি! আচ্ছা আপনি এরকম কেন? এত ভালো হওয়ার প্রয়োজন ছিল কি? জানেন না, ভালো মানুষের দাম নেই পৃথিবীতে। তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ করুন তো, বিয়ে করব। ভালো লাগে না একা থাকতে। ইচ্ছে করে, আপনার কাঁধে মাথা রেখে আমার সকাল সন্ধ্যা কাটিয়ে দিতে। আপনার বুকে মাথা রেখে পুরো একটা রাত কাটিয়ে দিতে। আপনার হাত ধরে আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে ইচ্ছে। আপনাকে ছাড়তে ইচ্ছে করে না, জানেন? যোজন যোজন দূরত্বকে কবে কাছাকাছি নিয়ে আসবেন বলেন তো? আপনি সেইদিন আমার কানের পাশে চুল গুঁজে দিয়ে তাতে গোলাপ গুঁজে দিলেন। জানেন, কত লজ্জা পেয়েছি। এরকম আর কখনো করবেন না। আরোও অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে আপনাকে। কিন্তু ওসব লিখব না। সিরিয়াস পর্যায়ের কথাবার্তা। ওগুলো বরং আপনাকে মুখে বলব। তবে এখন না, আমাদের বিয়ের রাতে। কানে কানে…. ফিসফিস করে! শুনবেন তো? ঠিক আছে, অপেক্ষায় থাকুন তবে!
লেখাটা শেষ করে, ওইটুকু পড়ে নিজেরই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু ছিঁড়লাম না। স্মৃতি জমিয়ে রাখতে বরাবরই আমার ভালো লাগে।”
১৭ এপ্রিল, ২০০১.
.
.
.
চলবে…..
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৮১২