#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_12
#ইয়াসমিন_খন্দকার
ইভা এগিয়ে এসে আমায়রাকে টেনে তুলে। সারজিস এতক্ষণে আমায়রার দিকে তাকায়। কিছুটা অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,”তুমি ঠিক আছ তো?”
ইভা সামান্য রেগে বলে,”এতক্ষণে তোমার সেটা হুশ হলো? এতক্ষণ অন্যমনস্ক ছিলে কেন?”
সারজিস খানিকটা অপরাধীর সুরে আমায়রাকে বলে,”আমি অনেক দুঃখিত।”
আমায়রা স্মিত হেসে বলে,”আমার তেমন লাগে নি। তোমায় ক্ষমা চাইতে হবে না।”
যদিও আমায়রা বেশ আঘাতই পেয়েছিল। অহনা ও সুনীতি আমায়রার কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে সে ঠিক আছে কিনা। এদিকে সারজিস চারপাশে তাকাচ্ছিল। কারণ তার দুচোখ খুঁজছিল অভীক্ষাকে। একটু আগেও তো মেয়েটা এখানেই ছিল৷ তাহলে হঠাৎ কোথায় গায়েব হয়ে গেল! এই চিন্তাই ভাবাচ্ছিল তাকে।
এদিকে মুকিত অভীক্ষাকে টেনে নিয়ে একটা রুমে চলে এসেছে৷ অভীক্ষা মুকিতকে রাগী কন্ঠে বলে,”এসবের মানে কি মিস্টার মুকিত? কেন নিয়ে এসেছেন এখানে আমায়?”
মুকিত অভীক্ষাকে নিজের অনেক কাছে নিয়ে এসে বলে,”আমি তোমার কাছে কিছু সত্য জানতে চাই৷ তাই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।”
“যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। আমার হাতে বেশি সময় নেই।”
মুকিত হঠাৎ করে অভীক্ষার কপালে কপাল ঠেকিয়ে জিজ্ঞেস করে,”তুমি কেন আমার থেকে দূরে চলে গেলে অভীক্ষা? আমার জন্য কি তোমার মনে কোন অনুভূতি সত্যিই নেই?”
এই প্রশ্নের জবাবে কি বলবে বুঝতে পারছিল না অভীক্ষা। মুকিতের এভাবে কাছে আসাও তার ভালো লাগছিল না৷ তাই তো মুকিতকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয় নিজের থেকে। অতঃপর বেশ রাগী কন্ঠে বলে,”আপনাকে এই ব্যাপারে আমি অনেক আগেই ক্লিয়ারলি বলেছিলাম। আপনি লাইফ নিয়ে সিরিয়াস ছিলেন না জন্যই আমি আপনার থেকে দূরে সরে এসেছিলাম। এখন এসব বলার কোন মানেই হয়না।”
মুকিত ভীষণ রেগে যায়৷ অভীক্ষাকে নিজের আরো কাছে টেনে নিয়ে বলে,”বেশ, মানলাম তোমার কথা। কিন্তু এখন তো আমি লাইফ নিয়ে সিরিয়াস হয়ে গেছি। দেখ, আজ আমি কত ধনী৷ চৌধুরী ইন্ড্রাজির মালিক। এখন তো আমার জীবনে ফিরে আসতে কোন অসুবিধা নেই তোমার? তাই না। তাহলে ফিরে এসো না আবার। আমি অতীত ভুলে তোমায় আপন করে নিতে প্রস্তুত।”
“এটা সম্ভব না।”
“কেন? কেন সম্ভব নয় অভীক্ষা। আমি যে এখনো অব্দি শুধু তোমায় ভালোবাসি৷ তোমার যায়গায় আর কাউকে বসাতে পারিনি। দয়া করে আমার জীবনে ফিরে এসো।”
“তোমার মতো চরিত্রহীন ছেলের জীবনে আমি ফিরব না। সেদিন তুমি আমার সাথে কি ব্যবহার করেছিলে সেটা আমি ভুলিনি। আর কি যেন বলেছিলে? প্রতিদিন তো নতুন নতুন মেয়ের সাথে রাত কাটাও। এত কিছুর পরেও তুমি কিভাবে ভাবলে আমি তোমার জীবনে ফিরব?!”
মুকিত মলিন হাসে। অভীক্ষা মুকিতকে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। মুকিত অভীক্ষার যাওয়ার পানে মলিন চোখে তাকিয়ে বলে,”এতদিনে তুমি আমায় এই চিনলে অভীক্ষা! আমি শুধু আর শুধু তোমাকে ভালোবাসি। সেদিন তোমায় যা বলেছিলাম সবটাই মিথ্যা ছিল। তুমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে আমি আজ অব্দি তাকাই নি পর্যন্ত আর ওসব তো দূরের কথা…কত মেয়েকেই তো ফেরালাম। কারো মাঝে যে সেই স্বস্তি খুঁজে পাব না যা তোমার মধ্যে পেয়েছি। তুমি আমার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা। আমি জানি, তুমি নিজে থেকে আমার থেকে দূরে সরে যাওনি৷ আর আসল সত্যটা আমি খুব শীঘ্রই খুঁজে বের করব। তখন আর তুমি আমায় এভাবে দূরে ঠেলে দিতে পারবে না!”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কেটে গেল আরো একটি দিন। আজকেই সেই দিন যেদিন আমায়রা ও সারজিসের বিয়ে হবার কথা। বর্তমানে চলছে গায়ে হলুদের পর্ব। গায়ে হলুদ উপলক্ষে আমায়রা একটা হলুদ শাড়ি পড়েছে। যেটায় তাকে অপূর্ব লাগছে। সারজিসের পরণেও হলুদ পাঞ্জাবি। শুধু তাই নয়,গায়ে হলুদের থিম অনুযায়ী সবাইকেই আজ হলুদ ড্রেস পড়তে হয়েছে। যে কারণে অভীক্ষাও একটা হলুদ লেহেঙা পড়েছে।
সারজিসের গায়ে হলুদ মাখানোর সময় সে মলিন মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। অভীক্ষা কাল থেকে সারজিসের থেকে দূরে দূরে আছে। কাল থেকে একবারের জন্যেও সে সারজিসের সামনে আসেনি। এদিকে গতকাল অভীক্ষা ও মুকিতকে একত্রে দেখার পর থেকে সারজিসের মন ভালো নেই। সারজিস তো এই বিয়েটা করতেই চায়না। কিন্তু অভীক্ষা যেভাবে তাকে ফিরিয়ে দিলো এরপর তার আর কিছু করারও নেই।
অভীক্ষা দূর থেকে দাঁড়িয়ে সারজিসের গায়ে হলুদ দেখছিল৷ অজানা কারণে তারও ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল।
আমায়রার গায়েও হলুদ মাখিয়ে দেয়া হচ্ছিল। সে কি হাসি তার মুখে। ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে বোধহয় মানুষ এতটাই খুশি হয়। আমায়রার এই হাসি দেখে অভীক্ষা বলে,”না,আমি এই হাসি কেড়ে নিতে পারব না। আমায়রা ওর ভালোবাসাকে পেয়ে সুখী হোক। আমায়রাও অনেক ভালো মেয়ে। নিশ্চয়ই সারজিসও ওকে পেয়ে অনেক খুশি হবে।”
অভীক্ষার এহেন ভাবনার মাঝেই কয়েকজন মেয়ে তার দিকে এগিয়ে এসে তার গায়ে হলুদ মাখিয়ে দিল। আমায়রার গায়ে হলুদ মাখানোর পর তারা এখন একে অপরকে হলুদ মাখানো শুরু করেছে। এদিকে নিজের গায়ে হলুদ দেখে অবাক হয়ে যায় অভীক্ষা। দ্রুত ছুটে যায় বাথরুমে। নিজের গালে লাগা তোলার চেষ্টা করে এবং বলে,”সারজিস ও আমায়রার বিয়েটা যেন ঠিকভাবে সম্পূর্ণ হয়। ব্যস, এখন এটাই আমার চাওয়া।”
~~~~~~~~~~~~~~
অবশেষে সেই শুভক্ষণ চলে এসেছে। আমায়রা ও সারজিসের বিয়ে আর একটু পরেই। আমায়রা একটি লাল বেনারসি শাড়িতে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে। বধূবেশে যেন তাকে অপূর্ব লাগছে। অহনা আমায়রার চোখে কাজল লাগিয়ে বলে,”কারো নজর না লাগুক।”
ইভা বলে,”আমাদের আমায়রা যা সুন্দর। না চাইতেও সবার নজর ওর দিকেই যাবে।”
আমায়রা লজ্জা পেয়ে যায়। সুনীতিও অভীক্ষাকে ধরে নিয়ে আসে এখানে। সুনীতিও আমায়রার প্রশংসা করে। আর অভীক্ষা ঘরের এককোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। অহনা অভীক্ষাকে চুপচাপ দেখে এগিয়ে এসে বলে,”কি হলো অভীক্ষা? তুমি এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও আমায়রার পাশে যাও।”
অভীক্ষা আমায়রার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আমায়রাকে বলে,”তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আমায়রা। ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অসংখ্য শুভেচ্ছা রইল।”
আমায়রা স্মিত হেসে বলে,”তোমাকে ধন্যবাদ, অভীক্ষা। তোমাকেও কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে।”
আমায়রা নিজের দিকে তাকায়। তার পরনে একটি গোলাপী লেহেঙা। হালকা মেকআপ করেছে সাথে। এরইমধ্যে ইভা এগিয়ে এসে আমায়রার গলায় একটি সোনার বালা পড়িয়ে দিয়ে বলে,”এটা আমার শাশুড়ী মানে তোমার দাদির হাতের বালা। এটা আমাদের বংশের গহনা। আমাকে আমার শাশুড়ী এটা দিয়েছিল। আর আজ আমি তোমাকে এটা দিচ্ছি।”
আমায়রা এটা পেয়ে ভীষণ খুশি হয়। এদিকে বিয়ের সময় যত ঘনিয়ে আসছিল, অভীক্ষার কেন জানি কষ্টের মাত্রা ততই বাড়ছিল। অভীক্ষা কি তাহলে সারজিসের প্রতি কোন অনুভূতিতে জড়িয়ে গেল? নিজের মনে এমন ভাবনা আসতেই ঘাবড়ে গেল অভীক্ষা৷ নিজেকেই নিজে শাসিয়ে বলল,”এমন চিন্তা আমি কিছুতেই করব না। একটু পরেই সারজিস অন্য কারো হয়ে যাবে। ৩ মাস আগে যা হয়েছিল তা দূর্ঘটনা, আজ যা হচ্ছে সেটাই সত্য। প্রয়োজনে আমি সারজিসকে ডিভোর্স দিয়ে দিব। কিন্তু এসব নিয়ে আমি আর ভাবব না।”
এদিকে পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো কোন এক ছায়ামূর্তি বলে,”আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। আমায়রা ও সারজিস শুধু একবার বিয়ের আসরে উপস্থিত হোক। তারপর এমন ড্রামা হবে যা হবার চোখ ধাধিয়ে দেবে। এই যে অহনা, সুনীতির এতদিনের বন্ধুত্ব সেটা আর আগের মতো থাকবে না। আর এখানে দাঁড়ানো আমায়রা ও অভীক্ষা যাদের মোটামুটি ভালো সম্পর্ক, তারা একে অপরের সবথেকে বড় শত্রু হয়ে উঠবে। খন্দকার বাড়িতে একটা ছোটখাটো বিস্ফোরণ হবে। হা হা হা।”
বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
To be continue…….