#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_13
#ইয়াসমিন_খন্দকার
অভীক্ষা নিজের মতো করে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ কেউ একজন তার হাত টেনে ধরে তাকে একটি রুমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। অভীক্ষা ঘাবড়ে যায়। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে,”কে?”
রুমের লাইট অফ থাকায় সে তার সম্মুখে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির মুখ দেখতে পারছিল না। হঠাৎ করেই ব্যক্তিটি রুমের লাইট অন করায় তার চেহারা দৃশ্যমান হয়। অভীক্ষা পুরোপুরি অবাক হয়ে যায় সেই মুখশ্রী দেখে। হতবাক স্বরে বলে,”সারজিস,আপনি!”
“আপনার সাথে আমার ভীষণ জরুরি কিছু কথা আছে। যা বলার জন্য আমায় আপনাকে এভাবে নিয়ে আসতে হলো..আমায় ভুল বুঝবেন না প্লিজ,,লেট মি এক্সপ্লেইন।”
“আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাই না। ভালোয় ভালোয় আমায় এখান থেকে যেতে দিন নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করে লোক জড়ো করবো। আপনি কেন বুঝতে পারছেন না, কেউ আমাদের এভাবে দেখে নিলে কেলেংকারী হয়ে যাবে।”
সারজিস দায়সারা ভাবে বলে,”আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। আমি আজ এখানে আপনাকে কিছু জরুরি কথা বলতে এসেছি এবং সেসব কথা বলেই এখান থেকে যাব, তার আগে নয়। আপনাকে আমার কথা শুনতেই হবে।”
“আচ্ছা, যা বলার জলদি বলুন। আপনার বিয়ের সময় হয়ে গেছে। যেকোন মুহুর্তে আপনার খোঁজ শুরু হবে।”
“আমি এই বিয়েটা করতে চাইনা।”
অভীক্ষা চূড়ান্ত অবাক হয়ে বলে,”কি বলছেন কি এসব? আপনার মাথাটাথা ঠিক আছে তো? একটা মেয়েকে এত আশা দিয়ে বিয়ের আসরে নিয়ে এসে এখন আপনি বলছেন তাকে বিয়ে করতে পারবেন না?”
সারজিস অভীক্ষার হাত ধরে বলে,”আমার আমায়রার প্রতি সত্যি কোন অনুভূতি নেই অভীক্ষা। কিন্তু আপনার প্রতি আমার অনুভূতি রয়েছে। জানিনা,আপনি ৩ মাস আগের ঐ ঘটনাকে কিভাবে নিয়েছেন কিন্তু আমি ঐ বিয়েটাকে মিথ্যা মনে করিনা। যতোই বিয়েটা আমার অনিচ্ছায় হোক কিন্তু আমরা তো কবুল বলেছি, ইসলামি নিয়ম অনুসারে আমাদের বিয়ার হয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।”
অভীক্ষা যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না এহেন কথা শুনে। সে বিস্ময় নিয়ে বলে,”এখন আপনি কি চান?”
“আমি চাই, আমরা বাড়িতে সবাইকে আমাদের সত্যটা বলে দেই। যাতে করে আমায় আর আমায়রাকে বিয়ে করতে না হয়৷ ওকে বিয়ে করলে আমি সুখী হতে পারব না, ওকে সবসময় আমি নিজের বোনের নজরে দেখেছি। শুধুমাত্র পারিবারিক চাপে…দয়া করে আমায় ফেরাবেন না অভীক্ষা। ট্রাস্ট মি..যখনই আমি আপনাকে ঐ মুকিতের সাথে দেখি আমার ভীষণ রাগ হয়। আমি আপনার পাশে কাউকে মেনে নিতে পারি না। এই অনুভূতির কি কোন মূল্য নেই অভীক্ষা?”
অভীক্ষা বলে,”বাহ, সারজিস সাহেব বাহ! আপনার কাছে নিজের অনুভূতির মূল্য আছে কিন্তু আমায়রার অনুভূতির কোন মূল্য নেই? মেয়েটা আপনাকে কতো ভালোবাসে, কত আশা নিয়ে কনের সাজে বিয়ের আসরে বসে আছে আর আপনি আমায় এসে এধরণের কথা বলছেন? একটুও বিবেক বলে কোন বস্তু নেই আপনার মাঝে? যদি আমায়রাকে পছন্দই না করতেন, তাহলে ওকে বিয়ে করতে রাজি হলেন কেন? এখন ওকে স্বপ্ন দেখিয়ে সেই স্বপ্ন ভেঙে দেবেন? সবটা কি এতোই সোজা? না৷, মিস্টার সারজিস খন্দকার। আমি আপনার এসব পাগলামীকে প্রশ্রয় দেবো না। আর এমনিতেই আমার মনে আপনার জন্য কিছু নেই।”
সারজিস অভীক্ষাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,”এই কথাটা আমার চোখে চোখ রেখে বলুন।”
অভীক্ষা সারজিসের চোখের সাথে চোখ মেলাতে পারে না। তাতেই সারজিসের যা বোঝার বুঝে যায়। হেসে বলে,”আপনার চোখ তো অন্য কথা বলছে অভীক্ষা।”
অভীক্ষা এবার সারজিসের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি যদি সত্যিই আমায় ভালোবাসতেন তাহলে আমায়রাকে বিয়ে করতে রাজি হলেন কেন? আর এখন আমায় এখানে দেখে আপনার ভালোবাসা উতলে পড়ল? আচ্ছা, যদি এমনটা হতো যে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি না এলাম তাহলে আপনি কি করতেন? নিশ্চয়ই আমায়রাকেই বিয়ে করে নিতেন। কি তাইনা?”
সারজিস অভীক্ষার এই প্রশ্নের জবাবে কি বলবে বুঝতে পারে না। অভীক্ষা বলে,”কি হলো জনাব? এখন আপনার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না কেন? ও বুঝতে পেরেছি। সত্যটা হজম হচ্ছে না, তাইতো? আমি বলছি সত্যটা। এটা আপনার ভালোবাসা, টালোবাসা কিছু না। এটা সাময়িক আবেগ। যা অল্প সময়েই কেটে যাবে। বাদ দিন এসব, মনে করেন আমি পুরো সময়টাতে আপনার জীবনে অনুপস্থিত। এখন আমায় ভুলে আমায়রার সাথে একটা সুন্দর জীবন শুরু করুন। আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শুভকামনা রইল।”
কথাটুকু বলেই বেরিয়ে এলো অভীক্ষা। সারজিস এবার আর তাকে আটকানোর চেষ্টা করল না। অভীক্ষাও একবার ফিরে তাকালো না। যদি ফিরে তাকাতো তাহলে সারজিসের চোখের অশ্রু দেখে কখনো বলতে পারত না তার অনুভূতি মিথ্যা। সারজিস নিজের চোখের জলটুকু মুছে বলে,”বেশ, তুমি যা চাও তাই হবে। আমি আমায়রাকে বিয়ে করলে যদি তুমি সুখী হও তো আমি তাই করব।”
এদিকে আমায়রাও যে সুখী নেই। সারজিসকে এসব বলে বাইরে আসার পর সে একটি রুমে ঢুকে হু হু করে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,”কেন আল্লাহ কেন? কেন আমাকে এমন পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করালে?”
এদিকে পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো এক আগন্তুক কুটিল হেসে বললো,”বাহ, এটাই বুঝি টুরু লাভ। যাইহোক, আসল ড্রামা তো জমবে একটু পর। একটু একটু করে যা প্রমাণ জোগাড় করেছি তাই এই খন্দকার বাড়িতে আগুন জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট। আমি তো শুধু অপেক্ষা করছি ক্লাইম্যাক্সের জন্য। যার সাক্ষী সবাই একটু পরেই হবে। হা হা হা।”
~~~~~~~~~~~~
সুনীতি গোটা বাড়িজুড়ে অভীক্ষাকে খুঁজে চলেছেন। অনেক খোঁজার পর যখন একটা রুমে তাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পেলেন তখন তার বুক কেঁপে উঠল। তিনি অভীক্ষার কাছে এসে বললেন,”কি হয়েছে মামনী? তুমি এভাবে কাঁদছ কেন?”
অভীক্ষা তার মাকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কাঁদতে লাগল কিন্তু কিছুই বলল না। সুনীতি অনেক বেশি চিন্তিত হয়ে উঠল। কোন উপায়ন্তর খুঁজে পেল না। অভীক্ষা বলল,”আমাকে এখনই এখান থেকে নিয়ে চলো মা। আমি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকতে চাই না?”
‘কেন মামনী? কি হয়েছে তোমার? কেউ কি কিছু বলেছে?’
“আমার কিছুই হয়নি, মামনী। তুমি প্লিজ আমার কথাটা রাখো। এখানে থাকতে আমার দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমায় নিয়ে চল প্লিজ।”
” এখন গেলে তো অহনা মন খারাপ করবে। আমায়রা ও সারজিসের বিয়েটা হয়ে যাক। তারপর নাহয় আমরা এখান থেকে যাব।”
অভীক্ষা আর কথা বাড়ায় না। সুনীতি অভীক্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমি জানিনা কোন জিনিসটা তোমায় এত কষ্ট দিচ্ছে তবে আমি আশা করব তোমার সব সমস্যার কথা আমায় খুলে বলবে। যাতে করে আমি তোমায় সাহায্য করতে পারি।”
“এখান থেকে ফিরে গিয়ে আমি তোমায় সব বলব মা।”
“ঠিক আছে৷ এখন তাহলে একটু বাইরে চলো। বাইরে গেলে মন ভালো হবে।”
অভীক্ষা আর মানা করল না। সুনীতি অভীক্ষাকে নিয়ে বিয়ের আসরে উপস্থিত হলো। আমায়রা ও সারজিসকে পাশাপাশি বসিয়ে তাদের মাঝে একটি পর্দা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করেছেন। এই দৃশ্য দেখেই অভীক্ষার কষ্ট বাড়লো। না চাইতেও চোখের জল বাঁধা মানল না। সারজিসও দূর থেকে অভীক্ষাকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কাজি বিয়ের দোয়া পড়া শেষ করে বললেন,”এবার কবুল বলো।”
আমায়রা কবুল বলতেই যাবে এমন সময় হঠাৎ করে কোথা থেকে কয়েকজন লোক এসে বলল,”থামাও এই বিয়ে। এটা হতে পারে না। এই ছেলে তো আগে থেকেই বিবাহিত।”
লোকগুলোর কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে গেল। সাগর ও সাজিদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। সাথে সারজিসও। ইভা সাজিদকে জিজ্ঞেস করল,”কারা এরা? এসব কি বলছে?”
সাজিদ এগিয়ে এসে বলল,”আপনারা কে? এখানে ঢুকলেন কিভাবে আর কিসব যাতা কথা বলছেন? সিকিউরিটি বের করে দিন এনাদের।”
এরমধ্যেই ঐসব লোকের মধ্যে একজনের নজর যায় অভীক্ষার দিকে। তিনি অভীক্ষার দিকে আঙুল তুলে বলেন,”আরে ঐ মেয়েটাই তো এই ছেলের বউ! ওর সামনেই কিনা দ্বিতীয় বিয়ে করছে?”
To be continue…….