#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_18
#ইয়াসমিন_খন্দকার
সারজিস হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে এলো। হাসপাতালে প্রবেশ করেই রিশেপসনিস্টের থেকে আমায়রার কেবিনের সন্ধান পেয়ে সেদিকে যেতে লাগলো। যাওয়ার পথে সোহেলের সাথে দেখা হয়ে যেতেই তাকে জিজ্ঞেস করল,”আমায়রা এখন কেমন আছে সোহেল?”
“তুমি? তুমি কেন এসেছ এখানে? আমার বোন বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে সেটা দেখতে?”
“সোহেল! তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন?”
“বাহ! এভাবে কথা বলব না তো কিভাবে কথা বলব? আর কি চাও তুমি? আমার বোনের আজ এই অবস্থার জন্য দায়ী শুধু আর শুধুমাত্র তুমি। তোমার জন্য আজ আমার বোনটা মৃত্যুর সঙ্গে পাঙা লড়ছে। তুমি যদি আমার চেয়ে বয়সে বড় না হতে তো আমি তোমায় দেখে নিতাম। তুমি এখানে এভাবে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতে না।”
এমন সময় সাগরও সেখানে এসে পড়ে। সাগর এসে সারজিসকে দেখে ভীষণ রেগে বলে,”ওকে এখানে আসার অনুমতি কে দিল?”
সারজিস বললো,”চাচ্চু, আমি আমায়রার খবর নিতে এসেছি।”
“যদি নিজের ভালো চাও তো এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাও। আমি কিন্তু বেশিক্ষণ এটা ভেবে চুপ থাকব না যে তুমি আমার বড় ভাইয়ের ছেলে।”
এমন সময় সাজিদও সেখানে চলে আসে। সাজিদ এসেই সাগরকে বলে,”তুই আমার ছেলের সাথে এভাবে কথা বলতে পারিস না।”
“কোন মুখে তুই এমন কথা বলছিস ভাইয়া? তোর কি একটুও লজ্জা করছে না?”
“সাগর! তোর বাড়াবাড়ি বন্ধ কর। এটা ভুলে যাবি না যে আমি তোর বড় ভাই। আর তোর জীবনে আমার অবদান কত।”
“তোর অবদান? সিরিয়াসলি? থাক, আর কিছু না বলি।”
“আমি আর সারজিস এখানে তোকে সমবেদনা জানাতে এসেছি। এই বিপদের দিন তোর পাশে থাকতে চেয়েছি। আর তুই আমাদের সাথে এমন ব্যবহার করছিস?”
সাগর হাতজোড় করে সবার সামনে বলে,”ওহ প্লিজ, তোদের এই সমবেদনা আমার বা আমার মেয়ের লাগবে না। তোদের সমবেদনা জানানো আর জুতা মে*রে গরুদান একই ব্যাপার। আমার মন মানসিকতা এখন একদম ভালো নেই। তাই এই সমস্ত নাটক দেখার সময়ও আমার হাতে নেই। দূর হয়ে যাও চোখের সামনে থেকে তোমরা। আই রিপিট, এর থেকে ভালো ব্যবহারের যোগ্য তোমরা নও।”
সাগরের এই ব্যবহার দেখে সাজিদ ভীষণ রেগে যায়। সে সারজিসকে বলে,”তুমি কি এখনো এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে? এত অপমান খেয়েও হজম হয়নি? তোমার জন্য আজ আমায় এতকিছু শুনতে হচ্ছে। চলো এখান থেকে। সাগর আর ওর মেয়ে ভাড়ে গিয়ে মরুক আমার কিছু যায় আসেনা।”
বলেই সাজিদ ফোঁসফোঁস করতে করতে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। সাজিদ বেরিয়ে যাবার কিছু সময় পরই সারজিসও তার পিছু পিছু বেরিয়ে যায়। সাগর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। এদিকে অহনা নিজের মেয়ের এই দশা দেখে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সে আমায়রার কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে ক্রমশ কেঁদে চলছে আর বলছে,”কেন আল্লাহ কেন? আমার সাথেই কেন বার বার এমন হয়? কি দোষ করেছি আমি? প্রথমে আরাফাতকে হারালাম আর এখন ওর রেখে যাওয়া শেষ চিহ্ন আমায়রারও এই অবস্থা। আর কত পরীক্ষা নেবে তুমি আমার? আমায়রার কিছু হয়ে গেলে যে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারব না। কখনোই না। এর থেকে তো ভালো হতো যদি আমিই মরে যেতাম।”
বলেই কাঁদতে থাকে অহনা। সাগর এসে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”তুমি একদম চিন্তা করো না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। দেখবা, সব ঠিক হয়ে যাবে।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
“কিচ্ছু ঠিক হবে না, কিচ্ছু না। তুমি এই বাড়িতে পা রাখার পর থেকে আমার বাড়িতে একটার পর একটা অশান্তি শুরু হয়েছে।”
ইভার মুখে এহেন কথা শুনে অভীক্ষা চুপ থাকতে পারল না। প্রতিবাদী কন্ঠে বলে উঠল,”আপনি আমাকে এভাবে বলতে পারেন না। আমার কি দোষ এখানে?”
“এসব নাটক বন্ধ করো। তুমি কি আমাকে কচি খুকি ভেবেছ? কিছু বুঝি না আমি? তুমি প্রথমে আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছ তারপর আমায়রার সাথে ওর বিয়ের দিন সমস্ত সত্যটা সামনে এনেছ যাতে ও তোমাকে অস্বীকার করতে না পারে।”
“আপনি ভুল ভাবছেন আমায়। আমি মোটেই এমন কিছু করিনি।”
“তাহলে ঐ সমস্ত লোকগুলো কিভাবে ঠিকানা চিনে এখানে অব্দি এলো? তোমাদের ভাষ্যমত তো ওনারা অপরিচিত মানুষ ছিল। আর ওনারা জানলোই বা কিভাবে আজ সারজিসের বিয়ে? নিশ্চয়ই কেউ ওনাদের জানিয়েছে।”
ইভার কথায় যুক্তি খুঁজে পেল অভীক্ষা। বললো,”তাইতো! এটা তো আমার মাথাতে আসেনি। ওনাদের তো এখান অব্দি আসার কথা না।”
“সেটাই তো বলছি। সেই সময় বিপদের মুহুর্তে এত কথা আমার মাথায় আসেনি। আর লোকগুলোও তো হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেল। এসব কি সন্দেহজনক নয়? তারপরেও ভাবছ আমি তোমায় বিশ্বাস করব?!”
অভীক্ষা বললো,”কিন্তু আমি তো সত্যিই ওনাদের এখানে আনিনি..তাহলে..”
হঠাৎ করেই অভীক্ষার মনে পড়ে গেলো কিভাবে সারজিস বারবার তাকে সবাইকে সমস্ত সত্যটা জানাতে চাইছিল। কিভাবে তাকে অনুরোধ করে বলছিল সে আমায়রাকে বিয়ে করতে চায়না। অভীক্ষা মনে মনে বলে,”তাহলে কি এসবের পেছনে সারজিসের হাত আছে? উনিই কি এসমস্ত কিছু করলেন?”
ইভা আন্দাজ করতে পারে অভীক্ষার মনে কি চলছে। এটা আন্দাজ করেই সে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে আসে। বাইরে এসেই বাঁকা হেসে বলে,”এবার এভাবেই আমাকে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে। এই মেয়ের জন্য তুমি তোমার মমকে অপমান করলে তাইনা সারজিস? এবার দেখো, এই মেয়ের মনেই তোমার জন্য এমন অবিশ্বাস ঢুকিয়ে দেব যে তোমার মন বিষিয়ে উঠবে ওর উপর। তারপর তুমি নিজে থেকেই এই মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। আর আমি সেই মুহুর্তেরই অপেক্ষায় আছি। আজ আমি যত অপমান আর অবহেলা সহ্য করছি সেদিন তার সবকিছুর জবাব আমি দেব তোমার মুখের উপর। যে কোন কিছুর বিনিময়ে ঐ সুনীতির মেয়েকে আমি আমার ছেলের বউ হিসেবে মানব না। কিছুতেই না।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সারজিস মন খারাপ করে বাসায় ফেরে। সাজিদ একটু আগেই রেগেমেগে নিজের রুমের দিকে গেছে। সারজিস হাসপাতালের সমস্ত ঘটনা ভেবে বিমর্ষ ছিল। উদাস মনে রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে সোফায় গিয়ে বসতেই অভীক্ষা রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলো। সারজিস অভীক্ষাকে দেখে বললো,”আপনি এখনো জেগে আছেন অভীক্ষা?”
“জেগে তো আমাকে থাকতেই তো। অনেক বোঝাপড়া যে এখনো বাকি!”
“মানে? কিসব বলছেন আপনি?”
“কেন করলেন আপনি এমন? কি ভেবেছিলেন আমি আপনার চালাকি ধরতে পারবো না? আমি সবটাই বুঝতে পেরেছি। আপনিই ঐ সমস্ত গ্রামের লোকদের এখানে নিয়ে এসেছিলেন তাইনা? যাতে করে এই বিয়েটা ভাঙতে পারেন? কি পেলেন এসব করে? আমার আর আমায়রার জীবনটা একেবারে নষ্ট করে দিলেন আপনি। আপনার জন্য আমায়রা আজ মরতে বসেছে আর সবার এত অপমানজনক কথা আমায় সহ্য করতে হচ্ছে। এসব কিছুর জন্য আপনি দায়ী সারজিস শুধু আর শুধুমাত্র আপনি।”
সারজিসের মন মেজাজ এমনিতেই ভালো ছিল না। তার উপর অভীক্ষার থেকে এমন কথা শুনে সে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না। দৌড়ে এসে অভীক্ষাকে শক্ত করে ধরে বলে,”চুপ,একদম চুপ। তোমার অনেক বাড়াবাড়ি আমি মেনে নিয়েছি কিন্তু আর না। যেখানে আমি তোমার জন্য গোটা দুনিয়ার সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত সেখানে তুমি আমার সাথে এমন ব্যবহার করবে!”
“আপনি আমাকে ” তুমি” করে বলবেন না।”
“১০০ বার বলবো। এটা আমার ব্যাপার। তুমি আমার বউ। পারলে নিজের অধিকারও আদায় করে নেব।”
বলেই অভীক্ষার পরনের শাড়ির আঁচল নামিয়ে দেয়। অভীক্ষা ক্রন্দনরত চোখে বলে,”ছি! আপনি এত নীচ!”
সারজিস অভীক্ষার কোন বারণ শুনল না। অভীক্ষাকে বিছানায় ঠেলে ফেলে দিয়ে বলল,”তুমি আমায় এটা করতে বাধ্য করল। কিন্তু আমি যা কথা দিয়েছিলাম তা রাখব। যতদিন না তুমি আমায় মন থেকে মেনে নাওনি ততদিন তোমায় স্পর্শ করব না।”
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।
To be continue…….
#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_19
#ইয়াসমিন_খন্দকার
অভীক্ষা সারাটা রাত জেগেই কাঁটিয়ে দিলো। তার কাছে মনে হলো তার সাথে অনেক বড় প্রতারণা হয়েছে। অভীক্ষার চোখে জল ছলছল করছে। অভীক্ষা সেই চোখের জল মুছে বলে,”আপনাকে আমি কক্ষনো ক্ষমা করব না সারজিস। কক্ষনো না।”
সারজিসও রুম থেকে বেরিয়ে বলে,”আমাকে কি একটু বিশ্বাস করা গেল না অভীক্ষা? আপনাকে তো ভালোবেসে ফেলেছিলাম। চেয়েছিলাম এই খারাপ সময়ে আর কেউ আমার পাশে না থাকলেও আপনি থাকবেন কিন্তু….হাহ! আপনিও আর সবার মতো আমাকেই দোষী করে দিলেন। গোটা পৃথিবীর কাছে আজ আমিই দোষী!”
বলেই সারজিস ছাদে উঠে চাঁদের দিকে তাকালো। সারাটা রাত এভাবেই কাটালো।
~~~~
নতুন সকালের সূচনা হলো। আমায়রার খুব একটা বেশি সিরিয়াস কিছু হয়নি। তাই তাকে সকালেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হলো। অহনা আর সাগর আমায়রাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে এলো। বাসায় আসতেই ইভা তাদের সম্মুখীন হলো। আমায়রাকে দেখামাত্রই তার কাছে গিয়ে বলল,”এখন কেমন আছ তুমি আমায়রা? এত বড় একটা বোকামি তুমি কি করে করলে? আমি তো তোমায় আশ্বাস দিয়েছিলাম, যেকোন মূল্যে সারজিস আর তোমাকে এক করবো। আমার উপর একটু বিশ্বাস রাখতে পারলে না?”
অহনা রাগী কন্ঠে বলে,”খবরদার ভাবি,আপনি আমার মেয়েকে আর এমন মিথ্যা আশা দেবেন। এমনিতেই আপনার এসব মিথ্যা আশার জন্য ওর অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এবার একটু ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আমি একজন মা হিসেবে আপনার সামনে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি।”
“আমি আমায়রাকে কোন মিথ্যা আশা দিচ্ছি না অহনা। তোমার কি মনে হয় ঐ অভীক্ষাকে আমি নিজের ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেব? মরে গেলেও না।”
এবার সাগর বলে ওঠে,”আপনি মেনে নেবেন কি নেবেন না সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার ভাবি। তবে আমার মেয়েকে এরমধ্যে টানবেন না। ওকে অনেক কষ্টে আমরা বুঝিয়েছি যাতে ও এবার মুভ অন করার চেষ্টা করে। দয়া করে আপনি সেই চেষ্টায় পানি ঢেলে দেবেন না। এমনিতেও আর কিছুদিনের মধ্যে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চট্টগ্রামে গিয়ে উঠব। অন্তত সেই কয়টা দিন আমাদেরকে একটু নিজেদের মতো শান্তিতে থাকতে দিন।”
“এসব তুমি কি বলছ সাগর? তোমরা কেন এই বাড়ি ছেড়ে যাবে? তাও আবার একটা বাইরের মেয়ের জন্য! যদি কেউ এই বাড়ি থেকে বের হয় তবে সেটা হবে অভীক্ষা। প্রয়োজনে আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে এই বাড়ি থেকে বের করে দেব।”
এমন সময় অভীক্ষা নিজের সমস্ত কাপড়-চোপড় ট্রলি ব্যাগে করে গুছিয়ে নিয়ে এসে বলে,”আপনাদের কাউকেই আমায় এই বাড়ি থেকে বের করে দিতে হবে না। আমি নিজে থেকেই এখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি।”
অভীক্ষাকে এভাবে সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে আসতে দেখে ইভার চোখ চকচক করে ওঠে। সে মনে মনে বলে,”অবশেষে আমি যা চেয়েছি তাই হতে চলেছে। আমার পরিকল্পনা সফল।”
অহনা অভীক্ষাকে এভাবে সব জিনিসপত্র নিয়ে বের হতে দেখে বলে,”তুমি এখান থেকে চলে যাবে মানে? তোমার সাথে সারজিসের বিয়ে হয়েছে। তুমি এখন এই বাড়ির বউ।”
“আমি কখনোই এই বিয়েটা করতে চাইনি৷ বাধ্য হয়ে করেছি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমি কিছুতেই এই বাড়িতে থাকব না। আমার জন্য আপনাদের ফ্যামিলিতে কোন সমস্যা হোক সেটা আমি চাই না।”
আমায়রা বলে ওঠে,”তোমার এসব ভালো মানুষির নাটক অন্য কোথাও গিয়ে করো। আমার এসব নাটক দেখার সময় নেই, রিয়ালি বলছি আমার গা জাস্ট জ্বলে যাচ্ছে। আম্মু, আব্বু তোমরা আমায় এখান থেকে নিয়ে চলো প্লিজ।”
সাগর বলে,”হ্যাঁ, আম্মু। তুমি আমাদের সাথে চলো। এসব ফ্যামিলি ড্রামা তোমায় দেখতে হবে না।”
বলেই আমায়রাকে নিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু অহনা সেখানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়। যতই সে সুনীতিকে কথা শোনাক বা রাগ করে থাকুক, তার জীবনে সুনীতির অবদানকে সে অস্বীকার করতে পারবে না। হ্যাঁ, নিজের মেয়ের এরকম পরিস্থিতি দেখে তার মেজাজ গরম হয়ে যাওয়ায় সুনীতি আর অভীক্ষাকে অনেক কথা শুনিয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, অহনা তাদের খারাপ চায়।
সাগর অহনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,”কি হলো? তুমি হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে যে?”
“তুমি আমায়রাকে নিয়ে যাও। আমি একটু পরে আসছি।”
সাগর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমায়রাকে নিয়ে তার রুমের দিকে যায়। অহনা অভীক্ষার কাছে এসে বলে,”যা সিদ্ধান্ত নেবার একটু ভেবে নিও। এমনিতেই তোমার একটা ভুলের জন্য আমাদের সবাইকে অনেক অপদস্ত হতে হয়েছে। এখন এভাবে বিয়ের পর তুমি শ্বশুর বাড়ি থেকে গিয়ে সুনীতির বিড়াম্বনা আর বাড়িও না। এমনিতেই বেচারি অনেক কষ্ট পেয়েছে জীবনে তোমার বাবার জন্য। এখন তুমিও কি তাকে আরো কষ্ট দেবে।”
অভীক্ষা মলিন হেসে বলে,”আমি এখানে থাকলেও তো তোমরা কষ্ট পাবেন। তো কোথায় যাব আমি? আমার ভাগ্যটা এত খারাপ কেন অহনা আন্টি? হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাকে সৃষ্টিই করেছেন অন্যের কষ্টের কারণ হতে।”
এদিকে অহনার হঠাৎ ভোল বদলে ইভা চিন্তিত হয়ে উঠে। সে এগিয়ে এসে বলে,”তুমি ওকে আটকাচ্ছ কেন অহনা? ও তো একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ও বুঝে গেছে যে, এখানে আমরা কেউই ওকে এই বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নেব না। তাছাড়া সারজিস এখন মুখে যাই বলুক, ওর প্রতারণার কথা জানতে পারলে এমনিতেই ওকে ছেড়ে দেবে। তাই ওর চলে যাওয়াই ভালো। এই মেয়ে তুমি আর এখানে থেকে সময় নষ্ট করো না, এক্ষুনি বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে।”
অভীক্ষা বাড়ি থেকে বের হতে পা বাড়ায় এমন সময় সারজিস সেখানে চলে এসে গর্জে উঠে বলে,”খবরদার! আর এক পাও যদি সামনে বাড়াও তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না!”
অভীক্ষা সারজিসের থেকে এহেন হুমকি পেয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সারজিস এগিয়ে এসে অভীক্ষার হাত টেনে ধরে বলে,”এত বড় সাহস কে দিলো তোমায়? কোন সাহসে তুমি এই বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলে?”
অভীক্ষাও প্রতিবাদ করে বলে,”আমি যদি যেতে চাই তাহলে আমাকে আটকানোর অধিকার কারো নেই।”
“আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তোমাকে আটকানোর। কারণ আমি স্বামী হই তোমার। ইসলাম আমাকে এই অধিকার দিয়েছে। এখন ভালোয় ভালোয় আমার সাথে ভেতরে চলো। নাহলে..”
“নাহলে কি করবেন আপনি?”
“তুলে নিয়ে ঘরে নিয়ে যাব। আর তোমার বাইরে বের হওয়া একদম বন্ধ করে দেব।”
“সারজিস!”
অবস্থা বেগতিক দেখে ইভা মনে মনে বলে,”না, এমনটা চলতে দিলে তো হবে না। তাহলে তো আমার সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে। এবার আমাকেই কিছু করতে হবে।”
এমন ভাবনা থেকেই ইভা বলে ওঠে,”ও যখন যেতে চাইছে তখন তুমি ওকে কেন আটকাচ্ছ সারজিস? ওকে যেতে দাও, তাতেই সবার ভালো হবে।”
সারজিস আবারো গর্জে উঠে বলে,”খবরদার মম, তুমি আমাদের মধ্যে আসবে না। মনে রেখো যদি অভীক্ষা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তাহলে আমিও চিরকালের মতো এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাব।”
“সারজিস!”
সারজিস আর কথা না বাড়িয়ে অভীক্ষাকে একপ্রকার টেনে টেনে তাদের রুমে নিয়ে যায়। অহনা এসব দেখে বলে,”তুমি যতই যাই করো ভাবি, সারজিসের চোখে অভীক্ষার জন্য যা অধিকারবোধ দেখলাম, আমার মনে হয় না তোমার পক্ষে ওদেরকে আলাদা করা সম্ভব। তাই এই চেষ্টা না করাই ভালো। এমনিতেই এত অশান্তি হয়ে গেছে এবার একটু শান্ত হতে দাও সবকিছু।”
বলেই অহনা নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। এদিকে ইভা বলে,”যে যাই বলুক আমি কিছুতেই হার মানবো না। শেষ নিঃশ্বাস অব্দি চেষ্টা করে যাব ওদের আলাদা করার। এবার আমাকে ভিন্নভাবে কাজ করতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে সারজিস নিজেই অভীক্ষাকে এই বাড়ি থেকে বের করে দেয়।”
To be continue…….