#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_20
#ইয়াসমিন_খন্দকার
সারজিস অভীক্ষাকে তার রুমে নিয়ে আসে। অভীক্ষা বলে ওঠে, “আপনি এভাবে জোরজবরদস্তি করে আর কতদিন আমাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন? আমি মোটেই এসব কিছু মেনে নিব না। আপনি আমার উপর মোটেই এমন জোরজবরি করতে পারেন না।”
“১০০ বার পারি। কারণ আমি স্বামী হই তোমার।”
“ওহ আচ্ছা, তো এখন আপনি স্বামীর অধিকার দেখিয়ে সবটা করার চেষ্টা করবেন? ভাবলেন কি করে যে আমি তা হতে দেব।”
এমন সময় ইভা সেখানে এসে বলে, “তোমাদের এসব নাটক বন্ধ করো। সারজিস, মাই সন। তুমি এই মেয়েটাকে আটকে অনেক বড় ভুল করলে৷ এটা তুমি আজ বুঝতে না পারলেও একদিন ঠিকই বুঝবে। যাইহোক, বাদ দাও সেসব। তুমি যখন এই মেয়ের সাথেই সংসার করতে চাইছ তখন আমি তোমার সিদ্ধান্ত মেনে নেব। এখন, এই মেয়েকেও বলো যেন ও বাড়ির বউয়ের সকল দায়িত্ব পালন করে। জোর করে শুধু অধিকার দখল করলে হয় না। সব দায়িত্ব পালনও করতে হয়। ”
সারজিস বলে,”সেটা তো অবশ্যই। যেহেতু, ও আমার স্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি এই বাড়ির বউ তাই ওকে সব দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে ”
ইভা বলে,”তাহলে ওকে বলো আমার সাথে আসতে। আমি ওকে এই বাড়ির বউয়ের সকল দায়িত্ব বুঝিয়ে দেব।”
সারজিস ইভার হঠাৎ এমন ভোল বদল দেখে চমকে যায়। তবে মনে মনে খুশিও হয় যে, তার মা এই বিয়েটাকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করছে, অভীক্ষাকেও মেনে নিতে চাইছে৷ তাই সে মৃদু হেসে বলে,”অভীক্ষা তো তোমারই বৌমা। তাই তুমি ওকে সেভাবেই গড়ে পিঠে নাও মম, যেভাবে তুমি চেয়েছিলে।”
অভীক্ষার দিকে তাকিয়ে ইভা বলে,”তুমি আমার সাথে এসো। হিসাব মতে, আজ তোমার আর সারজিসের বৌভাত৷ তাই তোমাকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
অভীক্ষা চায়নি নতুন করে আর কোন অশান্তি হোক। তাই সে বলে,”বেশ, চলুন আমি যাচ্ছি আপনার সাথে।”
বলেই সে রওনা দেয়। ইভা তাকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে আসে। সেখানে সেই সময় কেউ ছিল না। শুধু ছিল বিভিন্নরকম সবজি, মাছ, মাংস সহ নানান রান্নার সামগ্রী। ইভা অভীক্ষাকে এসব দেখিয়ে বলে,”আজ তো তোমার বৌভাত৷ তাই তোমাকে আজ বাড়ির সবাইকে রান্না করে খাওয়াতে হবে৷ এটাই আমাদের বাড়ির রীতি।”
“আমি রান্না করবো?”
“না তো কি আমি করব?”
“কিন্তু আমার তো আগুনে…”
“কি?? আগুনের তাপে রান্না করতে পারো না, তাইতো? নিজেকে কি মহারাণী ভেবেছ তুমি? আমি নিজেও বিয়ের আগে কখনো সেভাবে রান্না করিনি। তুমি হয়তো জানো না, আমি একজন আমেরিকান নাগরিক ছিলাম। ছোটবেলা থেকে কত আভিজাত্যে বেড়ে উঠেছি। তবুও এখানে এসে সব শিখে নিয়েছি। আর তুমি কোথাকার কোন নবাবকন্যা যে তোমার রান্না করতে অসুবিধা? যা বলছি চুপচাপ তাই করো।”
অভীক্ষা আর বলে উঠতে পারে না যে আগুনে তার ফোবিয়া আছে। ইভা তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলে,”তোমাকে আগামী ৫ ঘন্টা সময় দিলাম, তার মধ্যেই যেন সব রান্না কমপ্লিট হয়ে যায়। আর যদি সেটা না হয় তো আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
বলেই সে চলে যায়। অভীক্ষা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সে মোটেই চায়না আর কোন ঝামেলা হোক এই বাড়িতে। তাই সে বলে,”প্রয়োজনে, আমি নিজের ফোবিয়া দূর করার চেষ্টা করবো তবুও আমি আর কোন নতুন অশান্তি চাই না।”
বলেই অভীক্ষা সব শাক সবজি একসাথে নেয়। ইউটিউবে একটা রান্নার ভিডিও চালু করে। সব্জিগুলো ঠিকঠাক কাঁটতে পারলেও বিপত্তি বাঁধে গ্যাস অন করার সময়। ফোবিয়া থাকার কারণে গ্যাসের কাছে যেতে না যেতেই অভীক্ষার কাপ কাপতে থাকে। তবুও সে আল্লাহর নাম নিতে নিতে গ্যাস চালু করার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই পারে না। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর আগুন জ্বলে উঠলেও অভীক্ষার ভয় যেন আরো বেড়ে যায়। অভীক্ষা ভয়ে কাপতে কাপতে দূরে সরে আসে। তবুও তার আরো বেশি ভয় বাড়তে থাকে। অভীক্ষা ভয়কে জয় করে উঠে দাঁড়ায় কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখা তার ভয়কে বাড়িয়ে দিচ্ছিল। অভীক্ষা সাহস করে সামনে এগিয়ে গিয়ে আগুনের উপর কড়াই বসানোর চেষ্টা করে আর সফলও হয়৷ এরপর সে কোনরকমে রান্না শুরুর চেষ্টা করে কিন্তু এরমধ্যে তার ভয় তাকে দিয়ে একটি ভুল করিয়ে দেয়। যার ফলে মুহুর্তের মধ্যেই গোটা ঘরজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অভীক্ষা ভয়ে চিৎকার করতে থাকে।
অহনা রান্নাঘরের দিকেই আসছিল। অভীক্ষার চিৎকার শুনে সে ছুটে আসে। অহনা জানে অভীক্ষার আগুনে ফোবিয়া। তাই তো সে অভীক্ষাকে এই অবস্থায় দেখে ভয়ে শিউরে ওঠে। আগুন এমন ভাবে মুহুর্তের মধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে যায় যে অহনাও অভীক্ষাকে বাঁচাতে এগোতে পারছিল না।তাই অহনা সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে। যার ফলে সারজিস, সাজিদ, সাগর, আকাশ, আমায়রা, সোহেল, ইভা সবাই ছুটে আসে। সারজিস তো এসেই অভীক্ষাকে এই অবস্থায় দেখে কোন কিছু না ভেবে ঝাপিয়ে পড়ে আগুনের মধ্যে। ইভা তাকে বাঁধা দিতে চায় কিন্তু সে কিছু করার আগেই সারজিস অভীক্ষার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। অতঃপর আগুন থেকে অভীক্ষাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এহেন পরিস্থিতি দেখে সবার গা শিউরে যায়৷ সবাই পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে শেষ অব্দি ফায়ার সার্ভিসের লোক দের ডাকতে হয়। তবে সৌভাগ্যবশত আগুন সাড়া বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ার আগেই আগুন নেভানো সম্ভব হয়।
~~~~~~~~~~
অভীক্ষার জ্ঞান এখনো ফেরেনি৷ সারজিস ডাক্তারকে দেখেছে। ডাক্তার এসে তাকে দেখছে। এদিকে ইভা বলে চলেছে,”সব দোষ এই মেয়ের। আমি তো আগেই বলেছিলাম, এই মেয়ে এই বাড়ির জন্য অমঙ্গলের। কেউ আমার কথা শোনেনি, আজ ভাগ্যিস অহনা ঠিক সময় সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল নাহলে তো এই মেয়ে নিজেও আগুনে পুড়ে মরত আর আমাদের কেও মারত।”
অহনা বলে ওঠে,”কিন্তু আমি তো বুঝতে পারছি না অভীক্ষা রান্নাঘরে কেন গেল? ওর তো আগুনে ফোবিয়া এজন্য তো সুনীতি ওকে আগুনের পাশেও ঘেষতে দেয় না।”
ইভা এবার ভয় পেয়ে যায়। সেই যে অভীক্ষাকে রান্নাঘরে নিয়ে গেছিল এটা জানাজানি হলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। সাজিদ ইভাদ এই ভীত মুখ দেখে বলল,”আমি বোধহয় বুঝতে পারি এসব কিভাবে হয়েছে।”
একটু পর সারজিস অভীক্ষার পাশ থেকে উঠে এসে বলে,”মম, তুমিই তো অভীক্ষাকে নিজের সাথে নিয়ে গেলে…তারপর কিভাবে কি হয়ে গেল?”
অহনা ইভার দিকে তাকিয়ে বলে,”ভাবি, তুমি এমনটা কিভাবে করলে? অভীক্ষাকে মেনে নিতে পারো নি, সেটা ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে ওকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে?”
সারজিস হতবাক স্বরে বলে,”মানে?!”
“অভীক্ষার তো আগুনে ফোবিয়া।”
সারজিস এবার রাগী স্বরে ইভাকে বলে ওঠে,”মম, তুমি অভীক্ষাকে জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলে?”
“তোমরা বিশ্বাস করো, আমি জানতাম না ঐ মেয়ের আগুনে ফোবিয়া। আর ও তো আমায় কিছু বলেও নি।”
অহনা বলে ওঠে,”তুমি তো কিছুই জানো না ভাবি। না জেনেই তো এত অশান্তির সৃষ্টি করো।”
সারজিস বলে,”ব্যস, অনেক হয়েছে। এখানে থেকে আমি আর নিজের স্ত্রীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারব না। আমি এক্ষুনি অভীক্ষাকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায়।”
বলে সারজিস বেরোতে নিতেই সাজিদ বলে ওঠে,”দাঁড়াও, তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। যদি কারো যাবার হয় তো তোমার মা যাবে!”
ইভা হতবাক স্বরে বলে,”সাজিদ!”
“চুপ, আর একটা কথাও না। তোমার জন্য আজ আমার বাড়িতে এত অশান্তি। তোমাকে নিজের জীবনে জড়ানোই বুঝি আমার জীবনে সব বড় ভুল ছিল৷ কিন্তু আজ তুমি যা করলে সব সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে। নিজের স্বার্থের জন্য একটা মেয়েকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলে! এটা আমি বরদাস্ত করব না। আজ আমি এই মুহুর্তে তোমায় আমি এই বাড়ি থেকে বের করে দেব। আমাদের সাথে তোমার আর কোন সম্পর্ক থাকবে না।”
সবাই সাজিদের কথা শুনে হতবাক হয়ে যায়। সাজিদ এতেই ক্ষান্ত হয়না। ইভাকে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বলে,”এবার তুমি নিজের রাস্তা নিজে বেছে নাও। আমাদের কারো জীবনে তোমার কোন স্থান নেই।”
To be continue……
#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_21
#ইয়াসমিন_খন্দকার
অভীক্ষার জ্ঞান ফিরতেই সে নিজের চোখের সামনে সারজিসকে দেখতে পায়। তার মনে পড়ে যায় জ্ঞান হারানোর আগের সমস্ত কথা। আগুনের সেই লেলিহান শিখার কথা মাথায় আসতেই সে ভীত হয়ে পড়ে আর ভয়ে সারজিসকে জড়িয়ে ধরে। সারজিস অভীক্ষাকে নিজের বুকে জড়িয়ে বলে,”তুমি একদম চিন্তা করো না অভীক্ষা। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার কাছে তুমি সবথেকে বেশি নিরাপদ।”
এমন সময় সুনীতি ছুটে চলে আসে। অহনা তাকে ফোন করে সমস্ত কিছু জানিয়েছে। সুনীতি এসেই অভীক্ষার কাছে ছুটে চলে আসে। সারজিস অভীক্ষাকে ছেড়ে দেয়। সুনীতি বলে ওঠে,”তুমি ঠিক আছ তো, মামনী? অহনার মুখে সব শুনে তো আমার আত্মা শরীর থেকে প্রায় বিছিন্নই হয়ে যাচ্ছিল। ছোটবেলা থেকে তোমার এই ফোবিয়ার জন্য আমি তোমাকে কত সাবধানে মানুষ করেছি আর আজ..!”
সারজিস বলে ওঠে,”আমি অনেক লজ্জিত এই ঘটনার জন্য। আমি ভাবতেও পারিনি যে মম এমন কিছু করবে!”
সুনীতি এবার সারজিসকে বলে,”তোমার মম যে এত জঘন্য কাজ করেছে ভেবেও আমার মাথায় আগুন জ্বলছে। এরপর আমি কোন ভরসায় আমার মেয়েকে এই বাড়িতে রাখব?”
এমন সময় সাজিদ সেখানে এসে বলে,”তুমি তোমার মেয়েকে নিশ্চিন্তে এখানে রাখতে পারো৷ কারণ ইভাকে আমি এই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। এখন তাই, তোমার মেয়ে এখানে সম্পূর্ণ নিরাপদ!”
সাজিদের কথা শুনে সুনীতি এবং অভীক্ষা দুজনেই অবাক হয়ে যায়। অভীক্ষা বলে ওঠে,”এসব আপনি কি বলছেন আঙ্কেল?! আপনি আন্টিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন মানে..!”
সারজিস বলে,”মম যা করেছে তাতে করে তাকে নিজের মা ভাবতেও আমার লজ্জা করছে। ড্যাড একদম ঠিক ডিশিসন নিয়েছে।”
“কিন্তু আন্টি এখন কোথায় যাবেন আর কোথায় থাকবেন? আমার নিজেকে ভীষণ অপরাধী লাগছে। আমার জন্যই সবকিছু হলো। আন্টি তো আর জানতেন না যে আমার আগুনে ফোবিয়া। জানলে নিশ্চয়ই এমন করতেন না। আমি তো স্বেচ্ছায় রান্না করতে..”
সুনীতি রেগে বলে,”কি তুমি নিজেই স্বেচ্ছায় রান্না করছ? কেন তুমি জানতে না যে তোমার আগুনে ফোবিয়া? এত বড় ব্লান্ডার তুমি কিভাবে করলে?”
সাজিদ বলে ওঠে,”তোমার আন্টিকে নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না। সে এতোটাইও অসহায় নয়। তার নিজস্ব বিজনেস আছে, যথেষ্ট প্রভাবশালী সে। নিজের খেয়াল নিজেই চালিয়ে নিতে পারবে। আমি নিজেও ইভাকে নিয়ে বিরক্ত ছিলাম। বিয়ের পর থেকে এতগুলো বছর শুধু সারজিসের মুখ চেয়ে ওকে সহ্য করেছি। কিন্তু এখন ও যা করছে তা সহ্যের বাইরে। আর ও এটা অবশ্যই জানত যে তোমার আগুনে ফোবিয়া আছে। তোমার মা তো সেদিন নিজেই ওর সামনেই আমাকে বলে গেছিল, তোমায় যাতে রান্না করতে না দেই কারণ তোমার আগুনে ফোবিয়া। তাও সে জেনেশুনে এসব করেছে শুধু নিজের জেদ মেটাতে। সে যদি এখানে থাকে তো তোমার আরো ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। তাই আমি একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি তো আরো ভেবে নিয়েছি যে, আমি ওকে ডিভোর্স দিব।”
সুনীতি ভয়ে কেপে ওঠে। অভীক্ষাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তবুও যে আমার নিজের মেয়েটার জন্য চিন্তা হচ্ছে। ইভা যদি বাড়িতে থেকেই এত কিছু করতে পারে তাহলে না জানি বাড়ির বাইরে গিয়ে আরো কত ভয়াবহতা দেখাবে।”
সারজিস বলে ওঠে,”আপনি কোন চিন্তা করবেন না। মম যাই করার চেষ্টা করুক না কেন, আমি তার সব প্ল্যান ভেস্তে দেব। আমি অভীক্ষার গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দেব না। এটা আমার ওয়াদা।”
সুনীতি এবার একটু নিশ্চিত হয়।
একটু পর অহনা সেখানে আসে। সুনীতির উদ্দ্যেশ্যে বলে,”সেদিন রাগের মাথায় তোকে অনেক কথা শুনিয়ে ফেলেছিলাম। আসলে চোখের সামনে নিজের মেয়ের ওমন অবস্থা দেখে নিজেকে আমি সামলাতে পারিনি। তুই পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।”
অহনার থেকে এহেন কথা শুনে সুনীতি বলে,”তুই যে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিস এটাই অনেক। যদিও আমি তোর অবস্থাটা বুঝতে পেরেছি কিন্তু তবুও আমি বলব সেদিন তুই একটু বেশিই রিয়্যাক্ট করে ফেলেছিলি। সে যাইহোক, তোকে অনেক সাধুবাদ জানাই যে তুই এখন সবটা বুঝেছিস। খুব ভালো হতো, যদি সাগর আর আমায়রাও সবটা বুঝত। যা হয়েছে তাতে আমার মেয়েটার কোন দোষ নেই। ও কখনো আমায়রার সাথে এমন করতে চায় নি। বরং আমায়রা সুখের কথাই ভেবেছিল। কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেল আর..!”
অহনা বলে,”বাদ দে সেসব কথা, ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে। ভাগ্যের লেখা তো আর বদলানো যায়না। এখন আমার মেয়েটা নিজেকে একটু সামল নিলেই হয়। তাহলে দেখবি সাগরের রাগটাও কমে যাবে।”
“তাই যেন হয়।”
এরপর সুনীতি অভীক্ষা ও সারজিসের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”যেভাবেই হোক না কেন, তোমাদের বিয়েটা কিন্তু হয়েছে আর এটা মিথ্যা নয়৷ তাই তোমরা দুজনেই এই সম্পর্কটাকে সিরিয়াস ভাবে নাও। যদিও তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারে আমার কথা বলা সাজে না তবুও আমি তোমাদের পরামর্শ দেব একে অপরের সাথে মানিয়ে চলতে৷ বিশেষ করে অভীক্ষা, তোমায় বলব তুমি সারজিসের সাথে খারাপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকো। এখানে তুমি যেমন নির্দোষ তেমনি সারজিসও। আমার বারবার মনে হয়, এখানে কোন তৃতীয় পক্ষ নিজের স্বার্থে কাজ করেছে। আমাদের উচিৎ নয় তার ফাঁদে পা দেওয়া। তাই তোমরা নিজেদের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝি রেখো না।”
~~~~~~~~~
ইভাকে সাজিদ বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর থেকেই সে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে আছে। ইভা বর্তমানে একটি ফ্ল্যাটে উঠেছে। সেখানে উঠেই সে সারজিস ও অভীক্ষাকে আলাদা করার জন্য নতুন পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। ইভা বলে,”ঐ অভীক্ষার জন্য আমার এতদিনের তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসারের এই অবস্থা! বিয়ের পর থেকে আমি যেভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছি সেটা আর হচ্ছে না..এমনকি সাজিদের সাহস এত বেড়ে গেছে যে ও আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল। এটা আমি কিছুতেই সহজ ভাবে নেব না। আমি যতটা না অপমানিত হয়েছি তার থেকে কয়েকগুণ বেশি অপমানিত করব ঐ অভীক্ষাকে। আর এটাই আমার প্রতিজ্ঞা।”
বলেই সে কাউকে একটা ফোন করে।
কিছুক্ষণ পর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে একটা ক্যাফেতে যায়। একটু পর সেই ক্যাফেতেই প্রবেশ করে আমায়রা। আমায়রা এসে ইভার সামনাসামনি বসে। আমায়রাকে দেখে ইভা বলে,”তুমি এখন কেমন আছ আমায়রা?”
“কেমন আছি সেটা তো দেখতেই পাচ্ছ। এখন বলো আমায় কিজন্য ডেকে পাঠিয়েছ!”
ইভা বলে,”ঐ অভীক্ষার জন্য আমাদের পরিবারে কি কি অশান্তি নেমে এসেছে সেটা তো তুমি দেখলেই। প্রথমে ও তোমার থেকে সারজিসকে কেড়ে নিয়ে সারজিসকে বিয়ে করে নিল আর তারপর কৌশলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করল। কেন জানো? কারণ আমি ওর পথে সবথেকে বড় বাঁধা। আমি চেয়েছি তোমাকে আর সারজিসকে পুনরায় এক করতে সেইজন্য।”
আমায়রা কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। ইভা আরো বলে,”এখন তো আমি ঐ বাড়িতে নেই তাই যা করার এখন তোমাকে করতে হবে। আমার উপর ভরসা করে আমার সাথে হাত মেলাও। তারপর আমরা দুজনে মিলে ঐ অভীক্ষাকে খন্দকার বাড়ি থেকে বের করব। তারপর তুমি সারজিসকে সম্পূর্ণ নিজের করে পাবে।”
আমায়রা রাগী কন্ঠে বলে,”তোমার ফালতু কথা বলা শেষ হয়েছে, চাচি? যদি হয় তো এবার আমায় বলতে দাও। আমি মোটেই তোমার পাতা ফাঁদে পা দেব না। হ্যাঁ, সারজিস ভাইয়ের প্রতি আমার অনুভূতি রয়েছে এটা আমি অস্বীকার করবো না। কিন্তু তার মানে এই নয়, সে সবার সামনে অভীক্ষাকে পছন্দ করে আমার প্রতি কোন অনুভূতি নেই বলার পরেও আমি তাকে পাওয়ার আশা রাখব৷ আর এজন্য অভীক্ষার ক্ষতি চাইবো। এটা ঠিক, এই বিয়েটা আমি মানতে পারিনি নাতো সারজিস ভাই আর অভীক্ষার সবটা লুকানোর জন্য তাদের ক্ষমা করতে পেরেছি কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি তাদের আলাদা করার জন্য ষড়যন্ত্র করব। এমন কূটনীতি আমার মনে নেই।”
“তুমি বোকামি করছ আমায়রা! আমার সাথে হাত মিলালে তোমারই লাভ! আমি তোমার ভালোর কথা ভেবেই..”
“তুমি আমার অনেক ভালো ভেবে নিয়েছ, চাচি। আর তোমায় ভাবতে হবে না।”
বলেই আমায়রা উঠে দাঁড়ায় এবং ক্যাফে থেকে বেরিয়ে যায়। ইভা ব্যর্থতা মেনে নিতে না পেরে চিৎকার করে ওঠে।
To be continue……