মন রাঙানোর পালা ২ পর্ব-২২+২৩

0
71

#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_22
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সারজিসের সাথে একসাথে রুমে পাশাপাশি বসে আছে অভীক্ষা। সারজিস কোন কথা বলছে না। অভীক্ষাই নীরবতা ভেঙে বলে, “আপনি এত চুপচাপ আছেন কেন? কিছু কি বলতে চান না?”

“না, আজ আমি কিছু বলতে চাই না। আজ আমি তোমার কথা শুনতে চাই।”

“আমার কথা?!”

“হু, তোমার কথা। আচ্ছা, অভীক্ষা তোমার কি মনে হয় আমি এই সম্পর্কটা জোর জবরদস্তি করে টিকিয়ে রেখেছি, সত্যিই কি তোমার আমার সাথে সংসার করার কোন ইচ্ছা নেই? যা বলার মন থেকে বলবে। তোমার মন যা চাইছে তাই বলবে।”

অভীক্ষা থতমত খেয়ে যায়। তার মনকে যে সে নিজেও বুঝতে পারছে না। সারজিসকে কিভাবে বোঝাবে? সারজিস উত্তেজিত হয়তো বলে,”প্লিজ, তুমি আজ চুপ থেকো না। আমার তোমার উত্তরটা জানার ভীষণ দরকার। মন থেকে বলো তুমি কি চাও।”

অভীক্ষা নিজের দুটি চোখ বন্ধ করে বলে,”আমি এত বেশি কিছু বুঝি না। তবে আমি এখন চাই আমাদের এই বিয়েটা মেনে নিতে..আমাদের যাতে একটা সুস্থ স্বাভাবিক সংসার হয় এটাই আমার চাওয়া…”

সারজিস অভীক্ষাকে নিজের একদম কাছে টেনে নেয়। অভীক্ষা কেপে ওঠে সারজিসের স্পর্শে। সারজিস অভীক্ষাকে বলে,”আমি তোমার মুখ থেকে এটাই শুনতো চেয়েছিলাম।”

অভীক্ষা বলে,”তবে আমার কিছু টা সময় প্রয়োজন। আমি চাই না তাড়াহুড়ো করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে..আর”

সারজিস বলে,”বেশ, আমি তোমায় সময় দেব সবটা মানিয়ে নেবার। কথা দিচ্ছি, তোমার উপর জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চাইব না।”

অভীক্ষা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”আপনি যদি এমনটা করেন সেটাই আমার জন্য অনেক।”

“আমাকে যে একটু ধৈর্য দেখাতেই হবে অভীক্ষা। আশা করি, এই ধৈর্যের ফল আমি পাবো। আমাকে যেন আর নিরাশ হতে না হয়।”

“আমিও আশা করব। এবার যেন আপনি নিরাশ না হন।”

সারজিস অভীক্ষার কাছে কাতর আকুতি করে বলে,”আমি কি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি অভীক্ষা?”

সারজিসের কন্ঠের আকুল আবেদন ফেলতে পারে না অভীক্ষা। তাই তো সেই আবেদনে সায় দিয়ে বলে,”ঠিক আছে..”

অভীক্ষার অনুমতি পেয়ে আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করল না সারজিস। অভীক্ষাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। তাকে একদম নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিল। অভীক্ষা যেন স্পষ্ট শুনতে পারছিল সারজিসের প্রত্যেকটা হৃদস্পন্দনের ধ্বনি। সারজিস অভীক্ষাকে বলে,”আমি বেশি কিছু চাই না অভীক্ষা। শুধু তোমাকে নিজের এই বক্ষের মাঝে আবদ্ধ রাখতে চাই সবসময়। জানি না কখন এবং কিভাবে কিন্তু তোমায় আমি অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আমার এই ভালোবাসা মিথ্যা নয়। তা একদিন তুমিও বুঝবে। তোমার নিজের করে পাওয়া ছাড়া আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। শুধু তোমার কাছে একটাই অনুরোধ আমাকে কখনো ধোকা দিও না। আমি সব সহ্য করতে পারব। কিন্তু ধোকাবাজি সহ্য করতে পারব না। আমাকে শুধু একবার সুযোগ দাও, আমি নিজের ভালোবাসা তোমার মন রাঙাতে চাই।”

“আমিও তাই চাই।”

বলে দুজনেই একসাথে হেসে ওঠে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমায়রা আজ একটু বিষন্ন মনে বাড়িতে ফেরে। আমায়রাকে ফিরতে দেখে অহনা এগিয়ে গিয়ে বলে,”তুই এসেছিস আমায়রা..তা হঠাৎ আমায় না বলে কোথায় চলে গেছিলি? আর তোর মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন?”

আমায়রা বলে,”আমি চাচির সাথে দেখা করতে গেছিলাম আম্মু।”

“চাচি মানে? তুই কি ইভা ভাবির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি?”

“হুম।”

অহনার বুক কেপে ওঠে। না জানি ঐ পাজি মহিলা আবার তার সরল মেয়েটাকে কি কুবুদ্ধি দিল। এর আগে তার জন্যই তো অহনা মরতে বসেছিল। তাই তো তিনি রেগে বলেন,”তুই আমাকে না জানিয়ে কেন ঐ মহিলার সাথে দেখা করতে গেলি? জানিসই তো উনি কেমন কুটিল। আবার নিশ্চয়ই তোকে কোন কুবুদ্ধি দিয়েছে?”

আমায়রা বলে,”হুম, দিতে তো চেয়েছিল কিন্তু আমি তার কোন কুবুদ্ধি শুনিনি।”

“তা কি বলেছেন উনি তোকে?”

আমায়রা অহনাকে ইভার বলা সমস্ত কথা খুলে। সব শুনে অহনা ভীষণ রেগে যায়। সাথে তার এটা ভেবে স্বস্তিও হয় যে তার মেয়ের এখন সুবুদ্ধি হয়েছে। সে আর ইভার পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। অহনা বলে,”এই মহিলা কখনো শোধরাবে না। সবসময় এনার মনে কূটিলতা চলতেই থাকে! হায় আল্লাহ! আমি খুব খুশি হয়েছি যে তুই ওনার কথায় গলে যাসনি।”

আমায়রা হেসে বলে,”তুমি তো চেনো তোমার মেয়েকে আম্মু। আমি এতটাও বোকা নই যে কারো কথায় গলে যাব। আর আমার সাথে যত যাই হোক না কেন আমি কখনো সারজিস ভাইয়া বা অভীক্ষার কোন ক্ষতি চাইবো না। ওরা যদি একে অপরের সাথে সুখী হতে পারে তো সুখী হোক। আমার তাতে কোন অসুবিধা নেই। আমি তাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে চাই না। ওরা নিজেদের মতো জীবন কাটাক। আমিও আমার মতো মুভ অন করার চেষ্টা করি। এতে আমাদের প্রত্যেকেরই ভালো হবে। কারণ আমি জানি, সারজিস ভাই সবসময় আমাকে নিজের বোনের নজরেই দেখেছেন তাই আমাকে কখনো উনি ভালোবাসবেন না। তাই আমিও মরীচিকার পেছনে ছুটে নিজের সময় নষ্ট করতে চাই না।”

অহনার পরাণ একদম জুড়িয়ে যায়। সে বলে,”আমি খুব খুশি হলাম তোর এই আত্মোপলব্ধি দেখে। কিন্তু এই ইভা ভাবি যা প্ল্যান করছে তাতে তো মনে হয় সারজিস আর অভীক্ষার মধ্যে কোন সমস্যা সৃষ্টি না করে শান্ত হবে না।”

“আমারও তাই মনে হচ্ছে।”

এমন সময় সাগর সেখানে এসে বলে,”তোমরা দুজন মা-মেয়ে কি নিয়ে কথা বলছ?”

আমায়রা বলে ওঠে,”জানো আব্বু আজ কি হয়েছে চাচি আমায় একটা ক্যাফেতে ডেকে পাঠিয়েছিল আর তারপর..”

আমায়রা সব ঘটনা খুলে বলে। এসব শুনে সাগর বলে,”খুব ভালো হয়েছে তুমি ওনার কথায় গলে যাওনি৷ আমি তোমাকে এমনই শক্ত দেখতে চাই।”

অহনা বলে,”কিন্তু আমার খুব ভয় হচ্ছে অভীক্ষা আর সারজিস এর জন্য। ইভা ভাবি আবার তার স্বার্থের জন্য না আবার ওদের কোন ক্ষতি করেন।”

সাগর রাগী কন্ঠে বলে,”তোমাকে আর ওদের কথা এত ভাবতে হবে না। ওদের সমস্যা ওরাই বুঝে নিবে।”

“এটা তুমি কি বলছ সাগর? ওরা আমাদের পরিবারের সদস্য..আমরা ওদের কথা ভাবব না তো কে ভাববে?”

“পরিবার? হাসালে আমায়। ঐ সারজিস আর অভীক্ষার জন্য আমাদের মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছিল সেটা ভুলে গেলে তুমি? এরপরও কিভাবে এই কথা বলছ?”

“পুরাতন কথা এত ধরে বসে থাকলে চলবে নাকি?!”

“তোমার যদি এত মহানুভবতা দেখানোর শখ হয় তো দেখাও কিন্তু আমাকে এসব কিছু বলতে আসবে না। আমি কখনো ভুলব না ওদের জন্য আমার মেয়েটা মরে যেতে বসেছিল।”

বলেই সাগর চলে যায়। অহনা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আমায়রা বলে,”আব্বু হয়তো একটু বেশিই রেগে আছে। তুমি চিন্তা করো না, আম্মু।”

“চিন্তা তো করতে চাই না কিন্তু তবুও মাথার মধ্যে অটোমেটিক চিন্তা চলে আসে।”

~~~~~~~~~~
ইভা বসে বসে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। একটু পরই তার সামনে এসে উপস্থিত হয় একজন বিশালদেহী পুরুষ। সে আসতেই ইভা বলে,”তোমাকে যে ফেমাস “ফ্যাশন ডিজাইনার” অভীক্ষার ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেছিলাম তুমি কি সেটা করেছ? তার অতীতের ব্যাপারে এমন কোন খবর এনেছ যা আমার কাজে লাগতে পারে?”

“জ্বি, ম্যাম।”

“তা কি সেই খবর?”

“এটা বেশ ইন্টারেস্টিং। আর আপনার কাজেও লাগতে পারে। মিসেস অভীক্ষার প্রাক্তন হলো চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ড্রাজির বর্তমান ওনার মুকিত চৌধুরী। ওনাদের মধ্যে দুই বছরের গভীর প্রেম ছিল। যদিও এরপর কোন কারণবশত তারা দুজনে আলাদা হয়ে যান।”

ইভা বাকা হেসে বলে,”বাহ কি খবর দিলে। এই নাও এত ভালো নিউজ দেয়ার জন্য তোমার উপহার। এই খামটায় ৫ লাখ টাকা আছে।”

ইভা এবার হেসে বলে,”এবার দেখো অভীক্ষা তোমার এই প্রাক্তনকে ব্যবহার করে তোমার কি হাল করি। হা হা হা।”

To be continue……

#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_23
#ইয়াসমিন_খন্দকার

অভীক্ষা এখন সারজিসের সাথে মানিয়ে নিয়ে সংসার করার কথা ভাবছে। সে চায় এই বিয়েটাকে মান্যতা দিতে। সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে সে সারজিসের জন্য তার ঘরেই ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসে। অতঃপর সারজিসের উদ্দ্যেশ্যে বলে, “নিন,এক ব্রেকফাস্ট করে নিন।”

“তুমি খেয়েছ?”

“হুম, খেয়েছি।”

সারজিসও খাওয়া শুরু করে। অভীক্ষা বলে, “গত কয়েক দিন থেকে তো নানান ঘটনায় আমি সেরকম ভাবে নিজের কাজে যেতে পারিনি৷ তবে আজকে খুব বড় একটা ডিল ফাইনাল করতে হবে একটা বিদেশী কোম্পানির সাথে। সেজন্য আমায় একটু বনানীর দিকে যেতে হবে।”

সারজিস হেসে বলে, “তো, যাও। এখানে এত অনুমতি নেয়ার কি আছে?”

“না, মানে এখন তো আপনি আমার স্বামী তাই..”

“দেখো, অভীক্ষা। আমি সেসব স্বামীদের মতো একদমই নই যারা তাদের স্ত্রীকে অবনমিত করে রাখতে চায়। আমাকে বিয়ে করেছ মানে এই নয় তোমাকে নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হবে। আমি তোমাকে নিজের জীবনে পূর্ণ স্বাধীনতাই দেব।”

সারজিসের থেকে এমন কথা শুনে অভীক্ষার অনেক ভালো লাগে। সারজিস খেতে খেতেই বলে,”শুধু আমার একটাই কথা,আমার তোমার প্রতি রয়েছে অগাধ বিশ্বাস,অন্তত সেই বিশ্বাসটা ভেঙো না।”

অভীক্ষা মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমি মোটেই আপনার বিশ্বাস ভাঙবো না।”

দরজার আড়াল থেকে তাদের এসব কথা শুনে নেয় সোহেল। অতঃপর সে বাঁকা হেসে বলে,”আমার আপুকে কষ্ট দিয়ে তোমরা এত শান্তিতে সংসার করবে সেটা তো হতে পারে না। সারজিস ভাই, এই মেয়ের জন্য তুমি আমার আপুকে কষ্ট দিয়েছিলে তো। এবার দেখো, এই মেয়ে কিভাবে তোমার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”

বলেই সে একটু দূরে গিয়ে ইভাকে ফোন করে। ইভা সোহেলের কল দেখেই হেসে ওঠে। তার আন্দাজ একদম ঠিকঠাক কাজ করেছে। ইভা জানত, আর কেউ তাকে সাহায্য না করলেও সোহেল করবে। কারণ একেই তার বয়স কম হওয়ার দরুণ ম্যাচুরিটি কম তার উপর নিজের বোনকে অসম্ভব ভালোবাসে। তাই সোহেলকেই টোপ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বেছে নিয়েছে ইভা৷ ইভা ফোনটা রিসিভ কর‍তেই সোহেল বলে,”চাচি, তুমি ঐ অভীক্ষার উপর নজর রাখতে বলেছিলে না, আমি নজর রেখেছি।”

“তো কি খবর পেলে?”

“আজকে অভীক্ষা বনানীতে একটা বিদেশী কোম্পানির সাথে ডিল ফাইনাল করতে যাচ্ছে। এটাই সুবর্ণ সুযোগ। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে তুমি কিছু একটা করো। আমার আপুর কষ্ট যে আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”

ইভা বলে,”তুমি একদম চিন্তা করো না। আমার উপর ভরসা করে তুমি ঠকবে না। এবার শুধু দেখে যাও, আমি কি করি।”

বলেই ইভা ফোনটা রেখে দেয়। তার মাথায় খেলতে থাকে শয়তানী বুদ্ধি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
অভীক্ষা বেরোনোর আগে বেশ লম্বা একটা লাল গাউন পড়ে নেয়। এই পোশাকে তাকে বেশ শালীন লাগছিল। সারজিস এটা দেখে খুশি হয় যে অভীক্ষা শালীনতা বজায় রাখছে। সারজিস অভীক্ষার পাশেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। এতে করে অভীক্ষা লজ্জা পেয়ে বলে,”এভাবে কি দেখছেন?”

“তোমাকে দেখছি..তুমি এত সুন্দর কেন বলতে পারো?”

অভীক্ষা বলার মতো কিছু খুঁজে পায়না। সারজিস অভীক্ষার কাছে এসে তার গালে হাত বুলিয়ে বলে,”তুমি এখন আমার স্ত্রী..তাই আমি আর আমাদের মধ্যে কোন দূরত্ব রাখতে চাই না। আজ তোমার কাজ শেষ করে জলদি ফিরে এসো। আজকের দিনটা আমাদের জন্য স্পেশাল হবে আর রাতটাও।”

সারজিসের এহেন কথায় অভীক্ষার পুরো শরীরে শীতল স্রোত বয়ে যায়। অদ্ভুত অনুভূতিতে ছেয়ে যায় পুরো দেহ। সারজিস অভীক্ষার এই অনুভূতি বুঝতে পেরে হালকা হেসে বলে,”জলদি ফিরো, কেমন?”

অভীক্ষা দুপাশে মাথা নাড়ায়। অতঃপর বেরিয়ে যায়। পর্দার আড়াল থেকে সবটাই পর্যবেক্ষণ করে সোহেল৷ বাঁকা হেসে বলে,”আজকের দিনটা সত্যিই তোমাদের জন্য অনেক স্পেশাল হবে। সেটা আর একটু পরেই টের পাবে।”

অভীক্ষা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে বনানীতে পৌঁছে যায়। সে বিদেশী ক্লাইন্টদের সাথে কয়েক ঘন্টা ধরে মিটিং করতে থাকে। এদিকে ইভা নিজের চাল চালে। প্রথমে তো সে মুকিতকে ফোন করে। মুকিত ফোন রিসিভ করে বলে,”কে আপনি?”

ইভা হেসে বলে,”আমাকে চিনে তোমার কাজ নেই। আমি অভীক্ষা আর তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী। অভীক্ষার একটা ম্যাসেজ তোমার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যই ফোন করেছি।”

“আমি ঠিক বুঝলাম না!”

“অভীক্ষা সারজিসকে বিয়ে করে মোটেই সুখী নয় মুকিত। কারণ ওর মনে তো আজও তোমার জন্য অনুভূতি রয়েছে। এজন্য ও এই বিয়েটা করলেও মন থেকে এটা মানতে পারছে না। ওর মন জুড়ে যে শুধু তুমিই রয়েছ।”

“আপনি কি বলছেন এসব?”

“আমি ঠিকই বলছি….অভীক্ষা তো কোন সুযোগই পাচ্ছে না তোমার সাথে যোগাযোগ করার। ওর স্বামী সারজিস তো সবসময় ওকে নজরবন্দী করে রাখে৷ এজন্য তো আমায় দিয়ে তোমার কাছে খবর পাঠালো। অভীক্ষার তোমার সাথে অনেক কথা বলার আছে। তাই তো আজ ও বনানীতে গ্রান্ড হোটেলের এড্রেসে তোমায় ডেকে পাঠিয়েছে।”

মুকিত আবেগপ্রবণ হয়ে বলে,”ঠিক আছে, আপনি অভীক্ষার কাছে খবর পাঠিয়ে দিন যে আমি আজ ওখানেই ওর সাথে দেখা করব।”

“ঠিক আছে।”

বলেই ফোন কেটে দেয় ইভা। কুটিল হেসে বলে,”অর্ধেক কাজ তো হয়ে গেল এবার বাকি অর্ধেক কাজ বাকি।”

বলেই সে সারজিসের কাছে ফোন দিল। সারজিস ফোনটা রিসিভ করেই বলে,”হ্যালো, কে বলছেন?”

“আমি তোমার মা বলছি মাই সন।”

সারজিস রেগে বলে,”তুমি কেন ফোন করেছ আমায়? এত কিছু করেও কি তোমার শখ মেটেনি?”

“তুমি আমাকে সব সময় ভুলই বুঝে গেছ মাই সান। আমি তোমার মম হই। আমি কি কখনো তোমার খারাপ চাইতে পারি? আমি সবসময় তোমার ভালোর জন্যই চিন্তা করি মাই সন। কিন্তু আফসোস তুমি সেটা বুঝলে না।”

সারজিস বিরক্ত গলায় বলে,”এত আবোল তাবোল কথা না বলে যা বলতে চাও স্পষ্ট করে বলো তো।”

ইভা বলেন,”অভীক্ষা একদম ভালো মেয়ে নয় সারজিস। ও তোমায় ঠকাচ্ছে। ও একটা চরিত্রহীন মেয়ে।”

“মম! তোমার মুখে আমি অভীক্ষার সম্পর্কে আর একটাও বাজে কথা শুনতে চাইনা। তুমি অভীক্ষাকে পছন্দ করো না, ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সম্পর্কে এত বাজে কথা বলতে কি তোমার একবারও বাঁধল না? গলা কাপল না একটুও।”

“জানি আমার মুখের কথায় তোমার বিশ্বাস হবে না। এজন্য আমি তোমার ফোনে কিছু ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি। এসব দেখে তারপর নাহয় যাচাই করো।”

এই বলে ইভা সারজিসের ফোনে মুকিত ও অভীক্ষা রিলেশনে থাকার সময় তাদের ঘনিষ্ঠ অবস্থার কিছু পিক পাঠিয়ে দেয়। ইভা কিছু সাইবারের লোকদের দিয়ে এসব ছবি কালেক্ট করেছে। এসব ছবি দেখে তো সারজিসের হুশ উড়ে যায়। তার নিজের চোখকেও বিশ্বাস হচ্ছিল না। তার মনে পড়ে যায় সে যতবার মুকিত ও অভীক্ষাকে একসাথে দেখেছিল সেসব ঘটনা। তবুও সারজিস শান্ত মাথায় চিন্তা করে বলে,”এসব ছবি তো ফেকও হতে পারে। আর তাছাড়া যদি অরিজিনালও হয় তাও তো দেখে মনে হচ্ছে কয়েক বছর আগের ছবি। হয়তো আগে ওদের মধ্যে কিছু ছিল কিন্তু সেসব তো অতীত। এই নিয়ে আমি বর্তমানের অভীক্ষাকে কেন ভুল বুঝছ? বর্তমানে অভীক্ষা শুধু আমার স্ত্রী। আমি ছাড়া অন্য পুরুষের জন্য ও নিষিদ্ধ।”

“তুমি সত্যিই অনেক সরল। অথবা এই অভীক্ষার প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছ। কিন্তু আমি মম হয়ে তো তোমার ভালোটাই চাইব। তুমি একটা কাজ করো, এখনই বনানীর গ্রান্ড হোটেলে চলে যাও। এরপর যা কিছু হবে নিজের চোখের সামনেই দেখতে পারবে। তারপর বিচার করো, আমি ঠিক না ভুল
আর অভীক্ষার আসল চেহারাও দেখতে পারবে।”

“বেশ, তুমি যখন বলছ আমি যাব। কিন্তু একটা কথা শুনে রেখো, যদি তুমি ভুল প্রমাণিত হও তাহলে আমি তোমার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করব।”

“আর যদি অভীক্ষা ভুল প্রমাণিত হয় তাহলেও কিন্তু তোমায় একই কাজ করতে হবে।”

“অবশ্যই। আমি সব সহ্য করলেও বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করবো না।”‘

To be continue…….