প্রিয় সুখ পর্ব-০৯

0
5

প্রিয় সুখ-৯
_______________
মাথার উপরে ঘুরছে ঘূর্ণয়মান পাখা।তিন পাখা উড়িয়ে একুই বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ হওয়ার মানে একটাই বাতাস দেওয়া।মানুষকে খুব আরাম দেওয়া।পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল আবিষ্কারের মধ্যে পাখাটা মিতু আপুর বেশি পছন্দ।বরাবরই তিনি সুর টেনে বলেন,’নীহু নীহুরে এই পাখা না থাকলে মরেই যেতাম।যে এই পাখা আবিষ্কার করেছে তাকে সামনে পেলে গভীর চুম্বন দিতাম।মেয়েদের দেওয়া উপহারের মাঝে সবচেয়ে দামি কি জানিস?’
জানতে চায়না নীহারিকা।চোখ মুখ শক্ত করে কিছুক্ষণ বসে থাকে।কিন্তু আপুর খুব মন খারাপ হবে ভেবে সে নিম্ন কন্ঠে জানতে চায়,’কি?’
তিনি খুব অমায়িক হেসে বলে উঠেন,’ চুমু রে চুমু।তুই খুব বোকারে।তোদের সোজা করতে করতে আমার আর বিয়ে করা হবে না।’
আজ এই মুহূর্তে নীহারিকার মনে হচ্ছে সে বোকা।খুব বোকা।যতটা বোকা হলে মানুষ সহজেই বেকুব করে দিতে পারে সে তার থেকেও বেশি বোকা।চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে নীহারিকা।নানু দরজা তালা দিয়েছে।তাও ভিতর থেকে।কারো সাথে কথা বলবেন না তিনি।বেছে বেছে নীহারিকাকে সঙ্গী করেছেন।পালঙ্কের নিচ থেকে ট্রাংকের মত বাক্স বের করে তিনি কি যেন মনোযোগ ঢেলে খুঁজে চলেছেন।চোখ দিয়ে কান্না বেয়ে পড়ছে।আসলে এই কান্না কি?মানুষ কেন কাঁদে?কেন আলাদা আলাদা ব্যাখা এর।কেউ খুব গম্ভীর হয়ে জ্ঞানী ভাব নিয়ে সাহিত্যের ছোঁয়া লাগিয়ে বলেন,’কান্না সে তো মনের অনুভুতি গুলোকে বাহিরের দুনিয়াতে চোখের পানি রূপে প্রকাশ করা।এটা হচ্ছে বেদনা।যখন খুব কষ্ট হয়,সহ্য ক্ষমতা লোপ পায় মানুষ কেঁদে দেয়।বুক হালকা করে।স্তম্ভিত হয়ে নীহারিকা লক্ষ করল তার নানু ফ্রক বের করেছে।বাচ্চা মেয়ের।নানু কেঁদে কেঁটে একাকার।এই কান্না যদি না থাকত?মানুষের কষ্ট গুলোর কি যে বেহাল অবস্থা হত বলার বাহিরে।সামান্য ধন্যবাদ তো দেওয়াই যায়।কান্নাকে।
পালঙ্কের উপরে পা বিছিয়ে বসলেন নানু।বুকে জড়িয়ে নিলেন জামাটা।নীহারিকা পাশে বসে।প্রশ্ন করে না।সাহস হচ্ছে না।কান্নায় রুম ভারী হয়ে আসছে।একটা সময় হালকা রেগে নীহারিকা বলল,’ হয়েছে আর কাঁদতে হবে না।চুপ করো এবার।’
তিনি থামলেন না।কেঁদে চোখের জলে সাদা শাড়ির বুকের অংশ ভিজিয়ে দিচ্ছেন।ঝুলে পড়া গাল গুলো থর থর করে নড়ছে।কুঁচকে আসা হাতের রগ গুলো ভাসা ভাসা হয়ে উঠছে।চামরা নড়ছে।
‘ জামাটা কি বড় খালামনির?’ নরম কন্ঠে জানতে চাইলো নীহারিকা।নানু হেসে ফেললেন।আহ এই মহিলা কত সুন্দর যে ছিল যৌবনে তা তার এই মধুর মত মিষ্টি হাসি দেখেই টের পাওয়া যাচ্ছে।তার খালামনি কি পালিয়ে বিয়ে করেছে?তাই নানু রেগে আছে?দ্বিধা নিয়ে নীহারিকা প্রশ্ন ছুড়ে,’ আচ্ছা উনি কি পালিয়ে বিয়ে করেছেন বলে রেগে আছ তুমি?’
নানু আবার হাসলেন।স্বচ্ছ সেই হাসি।দারুন সুন্দর।মুখে বললেন,’ আরে না।পালাই বিয়া করে নাই।বিয়া তো আমার সামনেই হইছে।কিন্তু এতক বছর খবরই রাখে নাই।বিয়া মাইয়া গোরে অনেক দূরে ঠেল্লা দেয়।স্বামী পাইয়া মারে ভুল্লাই গেছে।তাই কথা কমুনা।’
অভিমানের লম্বা সুর।চোখে পানি।বুকে জামা।একবার নীহারিকার দিকে তাকায়।চোখে চোখ পড়তেই তিনি অশ্রুসিক্ত চোখে হাসেন।
দরজায় খুব কড়াঘাত হচ্ছে।নীহারিকা খুলতে চাইলেই পারে।কিন্তু সে খুলছে না।কি দরকার।বাহিরের সবাই একটু জ্বলুক।প্রায় ঘান্টা খানের বসে থাকে তারা।নীহারিকা ফিসফিস করে নানুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,’ তোমার ছেলের আজ আর বিয়ে করা হলো না।অলরেডি বারোটার বেশি বাজে।’
নানু হেসে ফেললেন।এই মেয়ে এখনো বিয়েতে থেমে আছে!
ধম করে শব্দ হয়ে দরজা দুভাগ হয়ে পড়ে।একটি অংশ নিচের ফ্লোরে উপুত হয়ে লুটিয়ে যায়।আঁৎকে উঠে নীহারিকা কান চেপে ধরে।চোখ বুজে নেয়।চিৎকারে করে মা মা করে ডাকে।একটু চোখ খুলে সে আবিষ্কার করলো দরজা দ্বিখন্ডিত হয়ে ভেঙ্গে পড়েছে।কি সর্বনাশ!
বাহিরের সবার মুখ হতভম্ব।মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়ায় তাযিন।বাহুতে হাত ঘঁষে ।তীব্র ক্ষোব শান্ত ভাবে মুখ চেপে প্রকাশ করে বলে,’জাস্ট অসহ্য।’
লাফিয়ে পালঙ্ক থেকে নেমে দাঁড়ায় নীহারিকা।চোখে মুখে প্রকান্ড কৌতুলহলে ভরা।এটা কি হল?ক্ষীন চোখে দরজার দিকে সে তাকিয়ে রইল।তাযিন এক পা দিয়ে ভাঙ্গা অংশ ঠেলে দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ল।বাহিরের সবাই এখন ঘোরের মাঝে তলিয়ে।অত্যন্ত স্বাভাবিক কন্ঠে তাযিন তাক লাগিয়ে বলল,’ শুধু শুধু কষ্ট করে দরজা লাগিয়েছ।আগে জেনে নেওয়া উচিৎ ছিল প্রেমিক তোমার বলিষ্ঠ।’
প্রেমিক!নীহারিকা থ হয়ে চেয়ে থাকল।তাযিন দু’হাতে নানুমনিকে পাঁজাকোলা করে নিল।সাথে সাথে বৃদ্ধা চিৎকার করে উঠে,’ আয় হায় করো কি?নামাও নামাও।আমি পইড়া যামু তো!’
মুখশ্রী,আঙ্গভঙ্গী দেখে নীহারিকা স্তম্ভীত হয়ে গেল।খুবই স্বাভাবিক সে।একটা মানুষ দরজা ভেঙ্গে নানুকে কোলে তুলে নিল!এত ভয়ংকর কান্ড করে ঠান্ডা মানুষ হয়ে আবার বের হয়ে গেল রুম থেকে।সোফার রুমে বসিয়ে দিয়ে সে সামনের সোফায় বসে পড়ল।তারপর নীরব সব।নীহারিকা অনেক সময় একুই জায়গা জুড়ে নিজের একজোড়া পা বিছিয়ে রেখেছিল।তারপর টিপ টাপ পা বাড়িয়ে সেও উপস্থিত হয় রুমে।আবার কান্নাকাঁটি।কি যে অসহ্য!নীহারিকা এক কোণে দাঁড়ায়।আড়চোখে সে তাযিন নাম ব্যক্তিকে দেখে।জ্ঞানী মানুষ!ভারী জ্ঞানে সমৃদ্ধ চেহেরা।কি একটা ভাব?এটা বিমুগ্ধ তো?না কি তাযিন?শুধু তাযিন?
কামরুন শামা কেঁদে কেঁদে বললেন,’ আম্মা আমি আপনার সাথে অনেক যোগাযোগ করতে চাইছিলাম।রোজ চিঠি দিতাম কিন্তু চিঠি গুলো যে কেন আপনার কাছে আসে নাই বুঝতে পারতাছি না।আপনার কোন উত্তর আসে না দেখে রাগ করে চিঠি দেওয়া বন্ধ করেছি।পরে পরে সময়ের সাথে হারিয়ে গিয়েছি।মাফ করেদিন না।’
হাউ মাউ করে তিনি পায়ের কাছে বসে পড়লেন।মা তো আরো বেশি কাঁদছে।একটা সময় জড়িয়েও নিয়েছে।মায়েদের মন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে নরম বস্তু!বিশাল উদার হৃদয় তাদের।
_____________
মামার বিয়ে শেষ হয় মধ্য রাতের দু’টো বাজে।এই জীবনে নীহারিকা এমন অদ্ভুত বিয়ে নিজের চোখে বা কানে কিছুতেই শুনেনি বা দেখেনি।নিজের মামার এমন অবাক করা বিয়ে নিয়ে তার একটা সিনেমা তৈরি করার ইচ্ছে জেগেছে।বোন না আসলে তিনি চিরকুমার থাকবে বলে শপথ করেছেন।অন্যদিকে আজই বিয়ে করবে বলে শপথ করেছেন।এক সাথে দুই শপথ তিনি খুবই দক্ষতার সাথে শেষ করে উদ্ধার হয়েছেন।বউ হাই দিতে দিতে কবুল বলেছেন।কাজি ঘুমে ঝুরে ঝুরে সব কাজ শেষ করেছেন।শুধু মামা আর তার বোনেদের মাঝে ছিল টানটান উত্তেজনা আর আনন্দ।মামুনি তাদের বাড়িতে থাকবে অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত।
উঠানে এসে নীহারিকা লক্ষ করল ভুতের মত ছায়া।ভয়ে পেয়ে দোয়া পড়ে সে ঘরের দিকেই যাবে তখন ভালো করে একবার তাকিয়ে বুঝতে পেরেছে এটা তাযিন।সে পকেটে হাত রেখে আর এক হাতে খুব রাজকীয় ভঙ্গীতে সিগারেট ধরেছেন।একটু দূর থেকেই নীহারিকা না চিনার ভান করে বলল,’ কে ওখানে?কে?’
তাযিন জবাব দিলো না।কিন্তু নীহারিকা নিশ্চিত সে শুনেছে।এই লোকের মতলব কি?চায় কি?আবার নাকি তার উড়ে এসে জুড়ে বসা খালাত ভাই সে।বাপরে!ভাবা যায়।পৃথিবী কত ছোট আর কত গোল।সবাই যেন এখানে আত্নীয়।জবাব না দিলে নেই।নীহারিকাও এই মানুষটাকে চিনে না।উল্টো পথে হাঁটতে গিয়ে ধাক্কা খায় শামার সাথে।নীহারিকা হাসার চেষ্টা করে বলল,’ স্যরি খালামনি।’
তিনি যেন ভূত দেখেছেন এমন ভাব করে তাকিয়ে রইলেন।হঠাৎ কি হল চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে শুরু করলেন।আকর্ষিক কান্ডে নীহারিকা ভড়কে গিয়েছে।সবাই জড়ো হলো নীহারিকে কেন্দ্রবিন্দু করে।নীহারিকার মুখটা চিন্তিত হয়ে উঠে।মাকে বেরিয়ে আসতে দেখে দ্রুত সে মায়ের পিছনে লুকিয়ে পড়ে।উদ্বেগী হয়ে বলল,’উনি এমন করছে কেন?’
আফিয়া বেশ অবাক হয়ে বললেন,’ কি হয়েছে বড় বুবু?’
শামা খালামনি চেঁচিয়ে বললেন,’ উঠানের লাইট জ্বালা রাসেল।’
মামা ছুটে লাইট জ্বালালেন।সব আলো এসে উপচে পড়ছে নীহারিকার কোমল মুখশ্রীর উপরে।বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে তার হিজাব,ওড়নার অংশ বিশেষ।এখনো জামা পরিবর্তন করেনি কেউ।মাত্র এসেছে।নীহারিকার চোখ গুলো হরিণীর চোখের নেয় উজ্জ্বল ভীতু হয়ে গিয়েছে।ভয়ে তার কেমন যেন লাগছে।কিন্তু তার জানা মতে সে কিছুই করেনি।এমন উদ্ভট ভাবে তাকে নিয়ে হুঙ্কার করার মানে কি?
শামা এক হাতে নীহারিকার হাত টেনে ধরলেন।তাযিন ততক্ষনে নিজের সাদা শার্টের হাতা গুঁজতে গুঁজতে এসে হাজির।সাথে বাকিরাও।শামা একবার তাযিনের চোখে চোখ রাখলেন।তারপর পুলকিত হয়ে বললেন,’কে ও?এতক্ষণ চোখে পড়েনি কেন?’
মা বিগলিত হেসে বললেন,’আমার মেয়ে নীহারিকা।
শামাখালামনি বেশ আহ্লাদি গলায় বললেন,’অবিকল এক না রে আফিয়া?’
মায়ের কি যেন হল,তিনিও খুব উৎফুল্ল হয়ে বললেন,’ হ বুবু।একদম একুই দেখতে।শুধু চোখগুলো নাফিসের মত হয়েছে।নাফিসের চোখ তো মেয়েদের মত।
দু’জনেই হাসতে লাগলেন।শামা খালামনি হাতের আলত ছোঁয়া মুখে,চোখে,ঠোঁটে লেপ্টে দিলেন।ভালো করে দেখছেন।কখনো চোখের উপরের পাতায় হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছেন, তো কখনো পাতলা ঠোঁটে কোমল হাতের ঠান্ডা ছোঁয়া দিচ্ছেন।অস্বস্তি লাগছে নীহারিকার।ভাবছে,যে চিনার সে তো চিনলই না উল্টো যাদের সে জীবনে দেখেনি।তারাই তাকে চিনে নিচ্ছে।কি আশ্চর্য!
আনজুম এগিয়ে এসে বলল,’ছোট আন্টি পরিচয় করিয়ে দিবেন না??কে কে আমাদের কেমন কাজিন হয়?’
আফিয়া একে একে দেখিয়ে দিয়ে বলল,’ও মিতু তোমার বড়।আর ও ফাবিহা,ও ফাহাদ,ও সবার ছোট রাজু।এ নীহারিকা।সেও তোমার ছোট মনে হচ্ছে।প্রিয়াস আমার ছেলে।নীহারিকার ভাই।’
মেয়েটা দারুন মিশুক।খুব আনন্দের সাথে কথা বলতে পছন্দ করে।গলায় জড়িয়ে ধরে।একে একে সবার সাথে পরিচিত হয়ে সে খুব খুশি।এত গুলো কাজিন পেয়ে তার আনন্দ আকাশে বাতাসে উড়ছে।
_________________
ফাবিহা রুম থেকে বের হতেই শান্তর সাথে বেশামাল ভাবে ধাক্কা খেয়ে বসে।ধাক্কা প্রেমের শুরু তাই ফাবিহার বরাবরই এই জিনিসটা ভালো লাগে।কিন্তু আজ তার মেজাজ খারাপ।মায়ের কাছে ফ্রীতে খুবই বাজে ভাবে বকা খেয়েছে সে।দোষ ছিল মিতু আপুর।তাকে ছাঁদের জামা কাপড় নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল।কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছেন।মা ধরতেই বলে দিলেন সে না কি ফাবিহাকে নিয়ে আসতে বলেছে।ব্যস শেষ সে!খুব বকা খেয়েছে।শান্তকে না দেখেই সে চেঁচিয়ে বলে উঠল,’ গাঁধার বাচ্চা চোখে দেখস না?’
শান্ত খুবই ভদ্র ভাষায় বলল,’ দুঃখিত।আমার না হয় চোখ নেই আপনার তো ছিল।ওটা কাজে লাগালেই পারতেন।’
ফাবিহা চোখ তুলে তাকালো।চিকনা একটা ছেলে।ফু দিলে উড়ে চলে যাবে বহু দূরে।শরীরে মাংসের অভাব।হাড্ডিরা হা ডু ডু খেলছে শরীরময়।চোয়াল ডেবে আছে।কিন্তু গায়ের রংটায় বিদেশিভাব।তবুও ফাবিহার চোখে ভালো লাগলো না।বিরক্তিতে সে বলে উঠল,’ আজ মেহমান বলে বেঁচে গিয়েছেন।তা না হলে দেখিয়ে দিতাম ফাবিহা কি।হুহ।’
ফাবিহা চলেই যাবে শান্ত কপালে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,’ফাবিহা কি??’
‘ মানে?’
‘ মানে বললেন না ফাবিহা কি সেটা দেখিয়ে দিবেন?দেখিয়ে দিন প্লিজ?আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।খুব খুব খুব বেশি।না দেখলে মরেই যাবো।’
অবাক হয়ে ফাবিহা থেমে গেল।চোখ বড় বড় করে শান্তর দিকে তাকিয়ে রইল।শান্ত নিচের ঠোঁট উপরের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে বলল,’ওহ আপনার ওড়নাটা সুন্দর তো।দেখি দেখি।’বলেই শান্ত অদ্ভুত কান্ড করে বসে।ওড়নার একটা ছোট অংশ দিয়ে সে তার চশমাটা পরিষ্কার করে নেয়।তারপর বিনয়ী হয়ে বলল,’ অসংখ্য ধন্যবাদ ফাবিহা কি।’
মনে মনে শান্তর দারুন লাগছে।অনেক দিন পরে সে কাউকে অবাক করে দিয়েছে তার কান্ডে।সব অবাক শুধু বিমুগ্ধ না সেও করতে পারে।ফাবিহা অবাক হয়ে চেয়ে রয়।কি হলো?তারপর নিজের ওড়না হাতে নিয়ে দেখে।শান্ত পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলল,’ গাঁধার বাচ্চা বলার শাস্তি।’

তিশা হাতে তালি বাজিয়ে বলল,’ শান্ত তুই এখনো শান্ত কিভাবে?’
মিতু আপু খুবই কৌতুহলি।সোফার বালিশ পেটে গুঁজে তিনি শান্তর দিকে খুবই নাজুক চোখে তাকিয়ে রইল।তিশা হাক লাগিয়ে বলল,’ শান্ত হচ্ছে আমাদের বন্ধুমহলের সবচেয়ে শয়তান ছেলে।দুনিয়ার সব কিছুতে তার অশান্তিপনা কাজ করে।এই বাড়িতে আসার পরে সে তেমন কিছুই করছে না।তাই অবাক হচ্ছি আমরা।’
শান্ত মুখে ভারী একটা ভাব টেনে বলল,’ শুন আমি খুবই ভদ্র ছেলে।শুধু শুধু অসভ্যের খেতাব দিবি না।’
ফাবিহা একটা কোনায় বসে ছিল।শান্তর কথার উত্তরে সে টপ করে বলল,’ উনি সত্যি অসভ্য ছেলে।’
‘ কেন কেন?আমি কি তোমার সাথে কিছু করেছি?যেমন ইভটিজিং টাইপের?’ শান্তর হঠাৎ তুমিতে লাফ দেওয়া চোখে পড়লনা ফাবিহার।
‘ আপনি আমার ওড়না দিয়ে চশমা পরিষ্কার করেছেন।এটা কি পরিষ্কারের জিনিস?’
শান্ত দাঁত বের করে হেসে বলল,’ তাহলে পরিষ্কারের জিনিস গুলো হাতে নিয়ে নিয়ে ঘুরবেন।মেহমান তো।এদের একটু দেখা শুনা করা উচিৎ।কি বলো সবাই?আর হ্যা আমি খুব ভদ্র ছেলে।’ শান্ত লাজুক হাসলো।ভাব এমন সে নববধূর ন্যায় লজ্জিত!
মুহিতা রুটি মুখে পুড়ে নিয়ে ভর্তি মুখে গো গো শব্দ করে বলে উঠল,’ হ তুই হইলি দুনিয়ার সবচেয়ে ভদ্র পোলা।’খুব টেনে টেনে সে বলল কথাটা।শান্ত শয়তানি হাসি দেয়।অর্পন খুব বিরক্ত।খুব ব্যস্ত মানুষ সে।তার মাঝে ছুটি নিয়ে আসতে হয়েছে।বন্ধুত্বের কসম টাইপ ব্যাপার।এখানের পরিবেশ তার ভালো লাগছে না।বাড়ির চারপাশে কত গুলো বাড়ি।কত মানুষ।কেমন কেমন ভাষায় কথা বলে।অগোছালো চলাফেরা।ছোট থেকে সে কখনো গ্রাম দেখেনি।তাই গ্রামের এসব তার ভালো লাগছে না।অন্যদিকে এটা ভেবে সে আরো অবাক হচ্ছে তাযিন খুব আয়েশে রয়েছে।যেখানে তাযিনের তো নিজের শৈশব বিদেশেই কাঁটিয়েছে।গ্রামের মত নোংরা পরিবেশে তার কোন সমস্যা হচ্ছে না।দিব্বী সে রান্না ঘরে মহিলাদের ভীরে বসে কি যেন করছে।ফাবিহা পিছন থেকে চুল গুলো সামনে নিয়ে আসতে গিয়ে বুঝতে পারল তার চুলে কিছু লেগেছে।ভালো করে ধরে বিশাল এক চিৎকারে সে ঘরময় উপরে তুলে নিচ্ছে যেন।চুলে চুইংগাম লেগেছে।কেঁদে কেঁটে তার অবস্থা খারাপ।সবাই শান্তর দিকে তাকাল।খুবই ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে সে বলল,’ এভাবে তাকাইয়া আছস ক্যান?’

মিতু আপু টেনে টেনে নীহারিকাকে উঠে বসালেন।চোখ মুখ কুঁচকে নিয়ে নীহারিকা লক্ষ করল বাহিরে কোমল রোদের আলত স্পর্শ পড়েছে।কালকের বৃষ্টির পরে পরিবেশ ঝকঝকে হয়ে উঠেছে।একেবারে কাঁচের নেয় সচ্ছ।গায়ের উপরে মিতু আপু পড়ে বললেন,’ তোর বিমুগ্ধ তো সবাইকে মুগ্ধ করে ফেলেছে রে নীহু।’
ভ্রু দু’টি খাদে নামিয়ে নিয়ে নীহারিকা তাকিয়ে রইল।’তার’মানে কি?চুল গুলো হাত দিয়ে পেঁচিয়ে নিয়ে হাত খোঁপা করতে করতে বলল,’আমার মানে কি?’
‘ তোরই তো।বিমুগ্ধ বিমুগ্ধ করে তো তুই পাগল হচ্ছিলি।’
‘ দেখ আপু ফালতু কথা বলবি না।উনি সেই বিমুগ্ধ না যাকে আমি চিনতাম।তা এই তাযিন না ফাজিন কি করেছে?’
‘ কি করেনি বল।মামার সাথে মাছ ধরেছে।তাও ফজরের নামজ পড়ে।ছোট খালামনির সাথে সেই মাছ কেটেছে।এখন আবার রান্নাও করছে।’
চোখ বড় বড় করে নীহারিকা বলল,’ মাছ কাঁটতেও জানে এই ছেলে?’
‘ শুধু কাঁটতে নয় রে নীহু, রাঁধতেও জানে।দারুন ঘ্রাণ ছড়িয়েছে চারপাশে।আরো কত কি করছে দেখতে হলে দ্রুত রান্নাঘরে আয়।সবাই তো নিজেদের কাজ ফেলে উনার কাছেই বসে আছে।গল্প শুনছে।কি সুন্দর করে যে গুঁছিয়ে গুঁছিয়ে কথা বলে।ভাবতেই আমার অবাক লাগছে।’
‘ কথাও বলছে?কালকে তো এসেই গম্ভীর গম্ভীর হয়েছিল।’
‘ ছেলেটা বড্ড কম কথা বলে।জ্ঞানী মানুষরা বরাবরই কম কথার মানুষ।সেও কমই বলে।কিন্তু যা বলে তাই সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।একে বারে ম্যাজিকের মত।’
নীহারিকা চমকে উঠে।বেশ রেগে বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলল,’ একদম ম্যাজিক বলবি না আপু।উনার মাঝে কোন ম্যাজিক নেই।’
‘ আছে আছে তুই গেলেই বুঝবি।’
‘ আমি যাচ্ছি না।তুই যা।ফালতু।’
মিতু আপু নখে নিলপালিশ দিয়েছে।তাদের সব বোনেদের মধ্যে মিতু আপু একটু সাজতে পছন্দ করে।সব সময় সেজে গুঁজে পরিপাটি হয়ে ঘুরে বেরানো তার কাজ।হাতের নখ পায়ের নখে তার বিশেষ যত্নের।

যাবে না বলেও নীহারিকা চুপি চুপি একবার রান্না ঘরের দিকে উঁকি দিয়ে এসেছিল।কিন্তু কথা ছাড়া কিছুই চোখে পড়লো না।তাই সে উপস্থিত হয়েছে রান্নাঘরের চৌকাঠে।বাহিরে রান্না হয় সব সময়।মাটির চুলায়।কিন্তু আজ রান্না হচ্ছে ঘরের ভেতরে।নীহারিকাকে দেখে কিছু সময় হা করে তাকিয়ে রইল শামা খালামনি।কি যেন অদ্ভুত প্রানীর মত তাকে দেখেন তিনি।নীহারিকার ছোট খালামনি মিতু আপুর আম্মু বললেন,’ তোরা মেয়েরা কোন কাজের না।শুধু পরে পরে ঘুমাস।কিছুই তো পারিস না।দেখ ছেলেটা কত কিছু পাড়ে।বুবুরে তুই সত্যি বলছিস তোর ছেলে আমেরিকায় জন্মেছে?দেখ পুরো দমে বাঙ্গালী লাগে।’
নীহারিকা একটু ঘুরে না দেখে মত করে তাকায়।তাযিনের গলায় ঝুলছে সাদা এপ্রোন।মা এটা নিয়ে এসেছিলেন নানুর জন্য।নানু সবসময় রান্না করতে এসে নিজের শাড়ি হলুদ,লাল করে ফেলে।মরিচের গুড়া লেগে তার শরীর জ্বলে।কাউকে তো এই এপ্রোন তার নানু হাতও লাগাতে দেয়না।এই ছেলেকে দিয়ে দিল?আশ্চর্য রকমের রাগ হচ্ছে নীহারিকার।তাযিন ছুরি ঘুরিয়ে বলল,’ আজ আমি সবার পছন্দের একটি করে খাবার তৈরি করছি।আপনার পছন্দ জানতে পারি?’
নীহারিকা কটকট করে বলে উঠে,’ ধন্যবাদ ভাইয়া।আপনি যে এত ভেবেছেন আমি খুবই খুশি হয়েছি।আমার পছন্দের কিছু নেই।আমি সবই পছন্দ করি আবার সবই অপছন্দ করি।’
তাযিন চোখ ছোট করে নিয়ে আফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,’ ছোট আন্টি মেয়ে খুব রাগী তাই না?’
মা উঁচু গলা করে বললেন,’ একে বারে সত্যি বাবা।’
নীহারিকা চোখ রাঙ্গীয়ে তাকায়।শামাখালামনি নীহারিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,’ তোর থেকে কমই থাকবে।তুই রাগ করলে কি কি করিস বলতাম?’
‘ তুমি আবার শুরু করবে?’
‘ হুম করবো।’
তাযিন নিজের কাজে মন দিল।কথা বললো না।শামা খালামনি বললেন,’ উনি রেগে গেলে ভাঙ্গচুর করে।প্রচন্ড রাগে নিজের হাত পা কেঁটে ফেলে।ছোট থেকেই এমন।শুন আফি রাফি বিমুগ্ধ তখন অনেক ছোট।স্কুলের এক ছেলে তাকে কি যেন বলেছিল।সে তখন এত লম্বা ছিলো না।ছেলেটা লম্বা ছিল।চেয়ারের উপরে উঠে সেই ছেলেকে আর একটা চেয়ার দিয়ে মেরে একটা দাঁত ফেলে দিয়েছিল।অনেক ডলার জরিমানা হয়েছে।এক ছেলে তাকে ধাক্কা দিয়েছিল।তাকে তো রিতিমত উড়াধূনা পিটিয়েছিল।আমার কাছে বিচার নিয়ে আসলে তাকে আরো পিটাতো।যদি শাসন করতাম তখন ব্লেট, ছুরি দিয়ে নিজের হাত পা কেঁটে আমাদের ভয় দেখিয়ে ছাড়ত।কিছু বলাও যায় না একে।এখন অবশ্য অনেক ঠান্ডা।’
নীহারিকা বিড়বিড় করে বলল,’ ঠান্ডামাথার গুন্ডা।’
‘ একদম ঠিক ধরেছ মামনি।’
কেশে উঠে নীহারিকা।তাযিন পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।নীহারিকা হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়।খালামনি কথাটা শুনে নিয়েছে বলে তার লজ্জা লাগছে।মা যেতে যেতে বললেন,’শুন হলুদ মরিচ কোথায় আছে তাযিন জানে না।তুই একটু দেখিয়ে দে তো।’
নীহারিকা শ্বাস রুদ্ধ কন্ঠে বলল,’ আমি?’
‘ হুম।আমরা সবাই একটু বাহিরে যাচ্ছি।আরো অনেক মাছ আছে।বাজারের লিস্ট করতে হবে।অনেক কাজ।তুই থাক ওর কাছে।’
নীহারিকা পারবো না বলতে চাইলো কিন্তু তার আগেই অপরিচিত এক মেয়ে এসে হাজির।হেসে হেসে সে বলল,’ আমিও আছি।ভয় নেই।’
‘ ভয় কেন পাবো।এখানে তো জ্বিন ভুত কাজ করছে না।’
আড়চোখে তাযিনের দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে।চোখ সরিয়ে সে মোড়া টেনে বসে।মেয়েটি আহ্লাদি হয়ে বলল,’ কি করছ তাযু।’
তাযু’নীহারিকা মুখ চেপে হাসলো।খুব হাসি পাচ্ছে।তাযিন খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,’ রূবাইদা আমার নাম তাযিন।আপনি মনে হয় পুরো নাম ভুলে যাচ্ছেন।’
‘ তোমার নাম ভুলতে যাবো কেন?আমি তো আদর করে ডেকেছি।তুমি বড্ড নিরামিষ তাযু।’
‘ তাযিন।’ ছোট করে বলল সে।নীহারিকা দেখছে।পা নাচাচ্ছে।মেয়েটা এত সুন্দরী যে নীহারিকা নিজেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য আশ্চর্য হল।আহা কি চুল,কি ঠোঁট।এই মেয়ে উনার কি হয়?নীহারিকা একটু উঁচু গলায় বলল,’ উনি আপনার বন্ধু?’
রূবাইদা বলল,’ আমি ওর গার্লফ্রেন্ড।’
হা হয়ে যায় নীহারিকার মুখ।এই ছেলের কি সাহস!নিজের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে তাদের বাড়িতে?অসভ্য,বজ্জাত ছেলে।রাগে নীহারিকার নাক জ্বলে উঠেছে।তবে একটা ব্যাপার নীহারিকা লক্ষ করেছে মানুষটা নিজের মা ছাড়া সবাইকে আপনি করে ডাকে।সে ছোট হোক বা বড়।তুমি শুধু নিজের মায়ের জন্য বরাদ্ধ।নিচের দিকে তাকিয়ে নীহারিকা হাসলো।রান্নার শব্দ হচ্ছে দ্বিগুন।অসাধারণ ঘ্রানে চারপাশ ভরে উঠছে।তাযিন খুব সফট ভাবে সব কাঁটছে,ঢালছে।আহা কি রাঁধুনি।একেবারে মাষ্টার শেফ।কয়েকদিন পরে মেয়েদের আর কাজ করতে হবে না।জাওয়াদ এসে হাজির।নীহারিকার দিকে তাকিয়ে সে বলল,’ তুমি এখানে?আমি সারা বাড়ি খুঁজে হয়রান।নাস্তা করেছ?’
অসহ্য!নীহারিকা বলল,’সেটা আমার যখন ইচ্ছে হবে করবো।আপনি যেতে পারেন।’
‘ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।এখনো নাস্তা করিনি।’ অসহায় কন্ঠে বলল জাওয়াদ।বিরক্তি নিয়ে নীহারিকা বলল,’আমি আপনাকে অপেক্ষা করতে বলেছি?’
মিতু আপুকে দেখে নীহারিকা ডাক দিল।বলল,’ আপু উনাকে খেতে দেওনি কেন?মা কোথায়?বাবা তো পরে আমাকেই বকা দিবে।’
‘ খাবার টেবিলেই রয়েছে।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’
‘ আপনি খেয়ে নিন।আমি আরো পরে খাবো।’
জাওয়াদ রেগে তাকিয়ে চলে গেল।এই লোকের কিছুই বুঝে না নীহারিকা।হাত ধুয়ে পিছনে পড়ে আছে।যতসব।
সামনে তাকিয়ে দেখে রূবাইদা নেই।তাযিন কি যেন খুঁজচ্ছে।নীহারিকা আস্তে করে প্রশ্ন করে,’আপনার কিছু প্রয়োজন?আমাকে বলুন আমি দিচ্ছি।’
তাযিন কিছু বললনা।খুঁজে চলেছে সে।একটা একটা করে জিনিস ফেলে দিচ্ছি।কখনো ছুরি,কখনো বোর্ড,কখনো পাতিল,কখনো প্লেট,চামুচ।নীহারিকা উঠে আসে।কাছে এসে আবার প্রশ্ন করে,’ আপনার কিছু কি প্রয়োজন?আমাকে বলুন।আমি খুঁজে দিচ্ছি।’
তাযিনের শরীর কাঁপছে।নীহারিকা দুরত্বে থেকেও অনুভব করছে সেই কাঁপনি।ক্রমান্বয়ে সে কি যেন খুঁজে চলেছে।নীহারিকা কিছুই বুঝতে না পেরে একটু আতঙ্কিত।হঠাৎ তাযিনের কি যেন হল,হুট করে সে নীহারিকার উপরে ঝুঁকে পড়ে।সাথে সাথে নীহারিকা আরো হেলে পড়ে পিছনে।তাযিনের দু’হাত নীহারিকার দু’পাশে।গাঢ় লাল চোখ গুলো দিয়ে তাকিয়ে শান্ত স্বাভাবিক গম্ভীর কন্ঠে বলল,’ হলুদ পাচ্ছি না কেন?’
স্তম্ভীত হয়ে গেল নীহারিকা।তাযিন সরে দাঁড়াল।কন্ঠ দিয়ে নাড়িয়ে দেওয়ার মত প্রকান্ড শক্তি আছে এই ছেলের।হলুদের বক্স হাতে দিতে দিতে নীহারিকা বলল,’ আপনার শরীর খারাপ করছে?’
তাযিন হঠাৎ ছুরিটা মুরগীর বুক বরাবর বসিয়ে দিল।ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল নীহারিকা।মনে হচ্ছে এই ছুরি তার বুকেই আঘাত করত যদি মুরগী না থাকত।ভুলে মুরগীতে লেগেছে।তাযিন মৃদূ হেসে বলল,’ ওহ স্যরি।আপনি ভয় পেয়েছেন?’
মুখের ভঙ্গী দেখেই নীহারিকা আরো ভয় পেয়ে গেল।কেমন করে যেন তাকাল।সে দ্রুত সরে আসে রান্নাঘর থেকে।বাহিরে এসে সোজা মায়ের কাছে চলে যায়।
জাওয়াদ সিঁড়ি বেয়ে নাম ছিল।দরজার বাহিরে তিনটি সিঁড়ি আছে মাত্র।উঠানে নামার জন্য।কিন্তু সিঁড়ি গুলো বেশ উঁচু উঁচু।হঠাৎ কলার খোসা এসে পড়ে পায়ের নিচে।পিছলা খেয়ে জাওয়াদ একে বারে নিচে পড়ে কপোকাত।জোড়ে একটা চিৎকারে সবাই ছুটে আসে।জাওয়াদ এক হাতে পা চেপে ধরে বসে আছে।চোখমুখ শক্ত করে।পায়ে প্রচন্ড না হলেও অনেক আঘাত পেয়েছে।ভেঙ্গেছে বলেই মনে হচ্ছে সবার।রাসেল মামা অর্পন,মুহিব ভাইয়া শান্ত এগিয়ে এসে তুলে দাঁড় করাতে চায়।কিন্তু সে ভালো করে দাঁড়াতে পারছে না।নীহারিকা তো ভয় পেয়ে যায়।একেই বাবা কোন বিশেষ কারণে নানুর বাড়ি পছন্দ করে না ছোট থেকে দেখে এসেছে।বাবা ভুলেও এই বাড়িতে আসেন না।যদিও সবার সাথেই কথা বলে।শুধু এই বাড়িতে আসেন না।এখন যদি জানতে পারে তার প্রিয় পাত্রের পায়ে ব্যথা পেয়েছে এই বাড়িতে এসে তাহলে তো মায়ের সাথে খুব রাগ করবে।সাথে তার মামার সাথেও।তাকেও যে ছেড়ে দিবে না সে জানে।আহা বেঁচারা।নীহারিকা খুবই দুঃখিত হয়ে বলল,’ কিভাবে পড়লেন?’
জাওয়াদ ব্যথায় বলার মত অবস্থাতে নেই।তবুও নীহারিকার খাতিলে সে বলল,’ বুঝতে পারছি না।তবে চিন্তার কিছু নেই পা ভাঙ্গেনী।মচকেছে শুধু।
নীহারিকা ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখে উপরে তাযিন দাঁড়িয়ে।সে দ্রুত চোখ নামিয়ে নিল।মিতু আপু জাম গাছের দোলনা থেকে সব দেখেছেন।তিনি বেশ সন্দিহান চোখে তাকিয়ে ভাবছেন,এই তাযিনের রহস্য কি?সে নিজের চোখে দেখেছে তাযিন উপর থেকে জাওয়াদকে দেখেই কলার খোসা ফেলেছে।আহারে বেচারা জাওয়াদ।একে বারে গড়িয়ে নিচে।তবে সেই দৃশ্য মিতু আপুকে খুব হাসিয়েছে।মানুষ এখন অন্যের কষ্টে হাসে।দুঃখ পায় কম।
জাওয়াদের সাদা মুখ লাল হয়ে আছে।তার পায়ে পানি দেওয়া হচ্ছে।অর্পন খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।তাযিন এসে পাশে বসতে বসতে বলল,’ দেখলাম আপনি পড়ে গিয়েছেন?বেশি লেগেছে?’
মিতু আপু মিটমিট করে হেসে উঠে।হাসির শব্দে সবাই অবাক।নীহারিকা হাত চেপে বলল,’ চুপ কর আপু।হাসছিস কেন?’
মুখটা নীহারিকার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে মিতু আপু বললেন,’ জাওয়াদ বেচারাকে কে ফেলেছে জানিস?’
‘ নিজে নিজেই পড়েছে আপু।তুই চুপ কর।’
‘ তাযিন ভাই ফেলে দিয়েছে।’
নীহারিকা চমকের চোখে তাকায়।তাযিন খুব স্বাভাবিক।চিন্তিত ভঙ্গীতে সে হাল চাল জিজ্ঞেস করছে।আহা জাওয়াদ বলে বলে দুঃখ প্রকাশ করছে।সে এটা কেন করবে?অসম্ভব।তাযিন পায়ের কাছে এসে বলল,’ সর তোরা।আমি দেখি।’
বলেই সে পা টাকে এদিক সেদিক ঘুরিয়ে দেয়।চিৎকার করে উঠে জাওয়াদ।নীহারিকা উত্তেজিত হয়ে বলল,’ কি করছেন?উনার পা তো ভেঙ্গে যাবে।’
‘ সেট আপ।’
জাওয়াদ পা নাড়িয়ে দেখল এখন তার আগের মত ব্যথা লাগছে না।সে খুব আরাম অনুভব করছে।মিতু আপু বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে নীহারিকাকে বলল,’ নিজে ব্যথা দিয়ে আবার নিজেই সারিয়ে দিচ্ছে।কাহিনী কি রে??’
তাযিন গম্ভীর ভঙ্গীতে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।অবাক মিতু আপু আর নীহারিকা।নীহারিকা মনে মনে নিরুচ্চারে বলল,’এই ছেলেকে বুঝা অসম্ভব।’
মিতু আপু হঠাৎ বলে উঠল,’ এই জাওয়াদের সাথে না তোর বিয়ে ঠিক হয়েছিল দু’বছর আগে?’
____________________
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
#চলবে…………
@হাফসা আলম……………..