প্রিয় সুখ পর্ব-৩৬

0
40

প্রিয় সুখ-৩৬
_________
ফাবিহা এবং তার দুই ভাই এসে হাজির। মায়ের পরিবারের কেউ বাকি নেই। রাত বাজে বারোটা। এই গভীর মধ্যরাতে নীহারিকা বিস্ময় কান্ড ঘটিয়ে ফেলল। মিতু আপুকে সে রাজি করিয়েছে। বিমুগ্ধ হাসল এই ব্যাপারটায়। নীহারিকা কি অসাধারণ! মিতু আপু এখনো কাঁদছেন। তার কান্নার শ্রীহীন শব্দে কান ফেঁটে যাচ্ছে না কিন্তু অসহ্য লাগছে। নীহারিকা মাথায় ওড়না দিয়ে দিল। মিতু আপু বার বার ফেলে দিচ্ছে। পৃথিবীতে সবার দূর্বলতা থাকে। মিতু আপুরও আছে। তার সবচেয়ে বড় কমজোর স্থানটি হচ্ছে একা থাকা। মিতু আপু পরিবার ছেড়ে থাকতে পারে না। পরিবার তার প্রয়োজন। হোক সে মা না হয় খালা। একটা বিয়ের বিনিময়ে সে তার দু’ টো পরিবারই পাবে। সবাইকে পাবে। প্রিয় মানুষগুলোর সাথে বাস করতে হলে যদি একটি বিয়ে করতে হয় তাহলে তো করাই যায়। এটা কি এমন কঠিন বিষয়। অথচ তার বুক কাঁপছে। শরীর ঘামছে। বিয়ের অনুভূতি কি এমনই হয়? কিন্তু এটি তো প্রথম নয়। তার আরও একটি বিয়ে হয়েছিল। যখন তার বয়স ছিল খুবই স্বল্প। সে বিয়েতে নিজের কোন অনুভূতির কথা মনে নেই মিতু আপুর। শুধু মনে আছে তিনি হঠাৎ পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। কলের পুতুলের মত নাচতেন। যা বলতেন তাই করতেন। বাধ্য একটি সত্ত্বা। এই অনুভূতি ভিন্ন। অন্যরকম। চিন্তার বাহিরে। এই যে তার হাত কাঁপছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ঘাম কপাল ছুঁয়ে দিচ্ছে। এখন তো শীত কাল। বসন্ত বসন্ত লাগছে কেন? তাযিন ভাইয়ার এই বাসায় কি অনেক ফুল গাছ আছে? এতো ঘ্রাণ কেন চারপাশে। অথচ রাগে তার অনুভূতি জ্বলে যাচ্ছে। জ্বলে যাচ্ছে চোখ, নাক, মুখ। শাহিন ভাইয়ের জীবন সে শেষ করে ছাড়বে। নীহারিকা একবার তাকাল। সে জীবনে শুনেনি কোন মেয়ের গায়ে এমন কালো পোশাক থাকবে। তার মাথায় লাল টকটকে ওড়না উড়বে। মাথার দু’ পাশের এলোমেলো চুল উড়ে উড়ে গালে লেপ্টে যাবে। ঘামে ভিজা শরীর হবে। মুখে রাগ, চোখে অনুভূতি থাকবে। শুকনো ঠোঁটে মিতু আপুর বিয়ে হবে। ফাবিহা নীহারিকার হাত চেপে ধরে বলল,’ মিতু আপুর বিয়ে! শাহিন ভাই আমাদের দুলাভাই নীহু ভাবতে পারছিস?’
নীহারিকা হাসল। মুখে বলল,’ পারছি। তোরা এলি কিভাবে?’
‘ শাহিন ভাই কুমিল্লায় গাড়ি পাঠিয়েছিল দুপুরের দিকে। একটা সিক্রেট বলি, মা দারুন খুশি কিন্তু।’
‘ কি বললি? এতো বকা দিল কেন তাহলে? সে কি সাংঘাতিক রাগা রাগির পর্ব চলল। এমন কি ছোট আঙ্কেলও সেই ঝারল। এসব কেন হলো?’
‘ ওটা সিক্রেট বলা যাবে না। এগুলো আপুর জন্য পাঠিয়েছে।’ হাতের গহনা দেখিয়ে বলল ফাবিহা। আবার বলল,’ কিন্তু তাকে এখন দিব না। সে জানে সবাই তার উপরে হুলুস্থূল রেগে আছে। ভাবুক। একটু প্যাড়া খাক। যে যেমন তার সাথে তেমন হওয়া উচিৎ। এটা কে বলেছে জানিস?’
বিস্ফারিত চোখে নীহারিকা জিজ্ঞেস করল,’ কে?’
‘ তাযিন ভাই।’
‘ তোকে কবে এই জ্ঞান দিয়েছে উনি?’
‘ আমাকে না। মাকে দিয়েছে।’ ফাবিহা রহস্য হাসি ঝুলাল। তাকে দেখে নীহারিকা আশ্চর্য হলো। তাদের অগচরে কত কি ঘটে! ফাবিহাকে অন্য রকম লাগছে। কি যেন আলাদা! হঠাৎ নীহারিকা একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল,’ তুই এতো সুন্দর ড্রেস পড়লি কেন?’
‘ তো কি হয়েছে? আমার বোনের বিয়ে বলে কথা।’
ফাবিহা অহংকারী হাসল। নীহারিকা কোমড়ে হাত গুঁজে বলল,’ আমার দিকে তাকা?’
‘ তাকালাম।’
‘ এবার বউয়ের দিকে তাকা?’
‘ সেটাও তাকালাম।’
‘ দু’ জনের এই করুন অবস্থায় তুই সেজে গুজে হাজির হয়েছিস?’
‘ হলাম।’
‘ নে আমিও তোরে থাপড়ালাম।’
‘ তোর বড় কিন্তু আমি নীহু।’ কে শুনে এসব। নীহারিকা সব চুল এলোমেলো করে দিল। লিপস্টিক টিস্যু দিয়ে মুছে দিল। চোখের কাজল লেপ্টে দিল। ফাবিহাকে একদম ভুতের মত লাগছে। একপ্রকার চিৎকার শুরু করল দু’ জনে। মিতু আপু এসব দেখে কাঁদতে কাঁদতে হাসলেন। তার বোন গুলো কি পাগল হয়ে গেছে? খুশিতে না কি দুঃখে? আনজুম দ্রুত নিজের মুখ ধুয়ে এসে বলল,’ নীহারিকা আমিও একদম সাধারণ। এবার ঠিক আছে না।’
‘ আছে।’ বলেই নীহারিকা হাসতে লাগল। ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি দিয়ে হাসছে সে আর ফাবিহা। আনজুমও বসল। কিন্তু সে এদের মত করতে পারল না। কিন্তু তার এসব করতে ইচ্ছে করছে। কি বাচ্চামু! বিমুগ্ধ দূরে দাড়িয়ে দেখছে। এই হাসিটা মূল্যবান। অত্যন্ত দামী। চূড়ান্ত চওড়া দামে সে ক্রয় করেছে। হাসি দামি হয়। কিন্তু কিছু হাসি এত বেশিই দামি হয় যে তা ক্রয় করতে পরিশ্রমের প্রয়োজন। বুদ্ধির প্রয়োজন। কিছু সময় প্রয়োজন। প্রয়োজন অনুভূতির। নীহারিকার এই হাসির জন্য বিমুগ্ধ কত মুল্য দিতে রাজি? ঠিক তার হাতের ছুরিতে লেগে যাওয়া রক্তের চেয়েও বেশি কি! বিমুগ্ধের পেয়ারা গলিয়ে হাত কাঁটছে। সে বুঝতে পারছে না। ব্যথা অনুভব হচ্ছে না। তার হাত কেঁটে রক্ত ঝড়ছে ফ্লোরে। সাদা ফ্লোরে বিন্দু বিন্দু করে জমছে রক্ত। নীহারিকা হাসছে। সত্যি কিছু হাসির মূল্য রক্তের চেয়েও অধিক গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের কাছে। বিমুগ্ধের হাতের মাঝ বরাবর কেঁটে গেল। নীহারিকা হাসি থামতেই সে এটি টের পেল। হাসি কি করে এতোটা আকর্ষণীয় মাদকময় হতে পারে? বিমুগ্ধ দ্রুত বেসিনে হাত ধুয়ে নিলো। সে কি উম্মাদ হয়ে গেল না কি!

মিতু আপুর বিয়েতে স্বয়ংদ্রষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে তার কাজিন বৃন্দ। বিস্ময়ের ব্যাপার হলেও সত্য মিতু আপুর বিয়ে কাজিনময় বিয়ে। বিয়েতে তার সকল খালাত ভাই বোন সহ নিজের ভাই বোন উপস্থিত। অথচ পরিবারের একটি বড় সদস্য নেই। কেউ নেই। কোথায়ও নেই। এভাবে বিয়ে হয়! কাজিনময় এই বিয়ে সত্যি অন্যরকম। বিমুগ্ধ নীহারিকার দিকে কাগজ এগিয়ে দিতেই নীহারিকা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। সন্দিহান দৃষ্টি তার। বিমুগ্ধ ফিচেল হাসল। নীহারিকা অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল,’ কিসের কাগজ?’
‘ সাইন করো।’
‘ কেন?’ নীহারিকা দাড়িয়ে গেল। বিমুগ্ধ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে মনে মনে। মেয়েটা এতো ভীতু? মারাত্মক অস্থির লাগছে এই মুহূর্তে তাকে। বিমুগ্ধ বলল না কেন। শুধু বলল,’ দ্রুত সাইন করো।’
‘ করব না।’
‘ করবে না তো?’ বিমুগ্ধ টেবিলে দু’ হাত গুঁজে রাখল। প্রিয়ম লাফিয়ে এসে বলল,’ আরে সাইন কর। আমরাও করেছি। মিতু আপুর বিয়ের স্বাক্ষী আমরা সবাই। এই দু’ চোখে এই বলদের বিয়ে দেখেছি। মনে রাখার পদ্ধতি হচ্ছে এই সাইন। বলা তো যায় না আবার পালাবে কবে। যাতে অন্য কাউকে পালিয়ে বিয়ে করতে না পারে তাই শাহিন ভাই এই প্ল্যান করেছে।’
মিতু আপু কান টেনে ধরল প্রিয়মের। ব্যথায় শব্দ করতে লাগল সে। মিতু আপু আরও জোড়ে মুচড়ে দিতেই সে দু’ হাত জোড় করে বলল,’ স্যরি স্যরি। ছাড় মিতু আপু।’
‘ তোদের সবাইকে আমি দেখে নিব।’
‘ দেখে নিবি কি? এখনই দেখ। এই যে আমি প্রিয়ম।’
প্রিয়ম মুখ গম্ভীর করে বলল। মিতু আপু আবিষ্কার করল এরা কেউ তাকে সম্মানই করে না। সব তাকে উপেক্ষা করে। মিতু আপু ভাউ ভাউ করে কেঁদে উঠল। বাবা মা কি খুব রেগে আছে? খালামনি? বিয়ে করলেই কি রাগ কমে যাবে? মিতু আপু বুঝতেই পারল না বিমুগ্ধ চতুর এক খেলা খেলল। শাহিন ভাইকে সে প্রতিশোধ নিতে সাহায্য করল। মিষ্টি একটি প্রতিশোধ। মাঝে মাঝে ভয়াল এই জীবনে মিষ্টি কিছু প্রয়োজন আছে। মিতু আপু শাহিন ভাইয়ের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। এই লোক পাঞ্জাবিও পড়ে নিয়েছে! মিতু আপুর মাথায় ওড়না ভালো করে টেনে দিয়ে তিনি বললেন,’ কইছিলাম না? বিয়া আমারেই করা লাগব।’
‘ আমি জীবনেও আপনারে বিয়ে করব না। এই বিয়ে বন্ধ।’ শাহিন ভাই হো হো করে হাসল। বিয়েতে কি বর এভাবে হাসে? তার তো ঠোঁটে রুমাল চেপে লাজুক চোখে তাকানোর কথা। প্রেমের বিয়ে গুলো হচ্ছে জঘন্য নির্লজ্জের বিয়ে। আনন্দ আর হাসি ছাড়া সব বিলিন। মিতু আপু মনে মনে শাহিন ভাইয়ের মায়ের ভয়ার্তক চেহারা ভেবেই আঁতকে উঠছে। এই মহিলা তাকে জিন্দা মেরে ফেলবে। মূলত এই মহিলার জন্যেই তিনি বিয়ে থেকে পালিয়েছেন। মহিলা যখন নিজের ছেলের পাগলামি থামাকে অক্ষম তখন মিতু আপুকে ধরলেন। অনুনয় বিনয় করে হাত ধরে বলেছিলেন মিতু আপুকে বিয়ে করলে না কি তার কুমার রাজপুত্রের জীবন অপব্যয়িত হয়ে যাবে। এই কালা চাঁদ মুখশ্রী কাউকে দেখাতে পারবে না। তার কুমারা চাঁদের গায়ে আগুন লাগবে। মানে সর্বমোট কথা তার পিছনে সবাই বলে বেড়াবে এতো ভালা এক্কান পোলা ডিভোর্সি মিতুরে বিয়া কইরা জীবন নস্যাৎ কইরা হালাইছে। তাই তো মিতু আপু বিয়ে করতে চায়নি প্রথম দিকে। কিন্তু পরে তার মাইতো বলল তার ছেলেকে একটু অপদস্থ করে ছেড়ে দিতে। ফলে সে মিতুয়া নামক এই নারীকে চরম ঘৃণা করবে। মিতু আপুও ভাবল একটা প্রতিশোধ প্রতিশোধ খেলা খেললে কেমন হয়! তাই তিনিও একটু খেলেছে। কিন্তু তিনি কি জানতো না কি তার কাজিন গুষ্ঠি তাকে নিয়েই খেলবে? এমন চরম খেলা। যে খেলায় সব একদলে হয়ে তাকে ফাঁসিয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দিবে? মিতু আপুর কান্নায় কাগজ ভিজে যাচ্ছে। নীহারিকা একটা ধমক দিল। তার এমন উচ্চ রাগে বিমুগ্ধ প্রায় ফাল মেরে উঠল। শাহিন ভাইয়া ভয় পেয়ে গেল। তিশা অর্পণ মুহিত মুহিতা আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে বিমুগ্ধের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,’ ভাই এই মহিলার এতো রাগ কেন? তোর বাপের থেকেও নীহারিকাকে আমাদের বেশি ভয় লাগে। কি বলছ তোরা?’
সবাই তার কথায় হ হ করে মাথা নাচাল। বিমুগ্ধ পিছনে একদম হেলে বলল,’ আমার বাপও এরে ভয় পায়।’
‘ বলিস কি? সিরিয়াসলি? তোর জল্লাদ আব্বি কাউকে সত্যি ভয় পায়? আমরা তো কার্যকলাপ দেখলেই ভয়ে সিটিয়ে যাই।’
‘ উনার মা হয়। মাকে কোন সন্তান ভয় পায় না!’ বিমুগ্ধ সোজা হয়ে আবার কাগজ এগিয়ে দিল। আনজুম আস্তে করে বলল,’ নীহারিকা তুমি কি রেগে যাচ্ছ?’
‘ না আপু। শুধু মিতু আপুকে ধমাকে ইচ্ছে করছে। তখন থেকে কাঁদছে। ছিঃ কেমন দেখাচ্ছে।’ আনজুম হাসল। সাথে নীহারিকাও। ফাবিহা মিতু আপুর গাল টেনে লাল করে দিয়ে বলল,’ আর কাঁদলে বড় ছোট মানবো না ডিরেক্ট থাপ্পড়।’
ছোট ভাই বোন সব গুলো এভাবে ধমকি দিচ্ছে? ভাবা যায়! মিতু আপুর মরে যেতে ইচ্ছে করছে। এতো অপমান? তাও এই শাহিন ভাইয়ের সামনে? মিতু আপুর কাশি উঠে গেল। সবাই হন্তদন্ত হয়ে পানি এগিয়ে দিল। বিমুগ্ধ নিজের টেবিলের দিকে তাকাল। তারপর ঘরের দিকে। ফয়সাল অসহায় মুখ করে বলল,’ এসব আমি একা পরিষ্কার করতে পারব না।’
‘ তাহলে কে করবে? আমি অনেক ক্লান্ত ফয়সাল।’ বিমুগ্ধ ক্লান্ত ভঙ্গিতে সোফায় গিয়ে বসে পড়ল। নীহারিকার দিকে তাকিয়ে বলল,’ তোমার বোনের বিয়ে স্থগিত করা হয়েছে।’ নীহারিকা দ্রুত এগিয়ে এসে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,’ কেন?’
‘ কারণ তুমি সাইন করছ না। সাইন না করলে তো বিয়ে হবে না।’
‘ সাইনের সাথে বিয়ের সম্পর্ক কি?’
‘ গভীর।’ বিমুগ্ধ সত্যি চোখ বুজল। তার আশেপাশে নিচে তার বন্ধুবান্ধব শুয়ে বসে পড়ল। তারা সবাই কানে ইয়ার ফোন গুঁজে দিল। আজব! নীহারিকা কাগজ হাতে নিল। উল্টে পাল্টে ভালো করে পড়ে নিল। বিমুগ্ধ চোখ বুজে বলল,’ তুমি কি ভাবছ বলো তো?’
‘ আপনি তো মাইন্ড রিডার। আপনিই বলুন।’
‘ তোমার মাইন্ড রিড করা পসিবল না। দ্রুত সাইন করো। এই কালো পোশাকের লোক কি আজ সারা রাত বসে থাকবে না কি?’
নীহারিকা সাইন করল। মিতু আপুর কাজিনময় বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। এই খবর পেয়ে খালামনির অবস্থা অস্থির হয়ে গেল। তিনি সত্যি প্রচন্ড খুশি। বাবা মা মেয়েদের বিয়েতে এতো খুশি হয় কেন? নীহারিকা ভ্রু কুঁচকে ভাবল তার বাবা মাও কি এভাবে খুশি হয়ে যাবে? না কি পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে হলেই বাবা মা বেশি খুশি হয়? কিন্তু বিয়ে হলে তো মেয়েদের অন্যের বাড়ি চলে যেতে হবে। তাদের কি কষ্ট হয় না?
সবাই মিলে ছবি তুলে এসব স্মৃতির পাতায় আঠা দিয়ে চেপে রাখল। সত্যি কি এমন বিয়ে হয়? মিতু আপুর কাজিনময় বিয়েতে সবার চোখ নীহারিকার ফুলের তোড়ার দিকে। সবাই বলল,’ নীহারিকা এটি তুই কোথা থেকে কিনে নিয়ে এসেছিস? এটা আপুকে দিয়ে দে। বিয়েতে কোন ফুল নেই এটা তো হয় না। দিয়ে দে তো।’
নীহারিকা বিকট এক চিৎকার করে বলল,’ না।’ পরক্ষণে দেখল বিমুগ্ধ তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে সামলে বলল,’ আরে এটা আমি ইউজ করেছি। এক কাজ করি দাড়া।’ নীহারিকা ফোন হাতে কোথায় যেন চলে গেল। বিমুগ্ধ বুঝতে পেরে উঠে দাড়াল। নীহারিকা আজ তার বারান্দাকে ভিখারি বানিয়ে ছাড়বে। সত্যি নীহারিকা ব্যালকনির সব গাছের শরীরের অলঙ্কার খুলে অর্ধ নগ্ন করে সব ফুল ছিড়ে নিয়ে এসেছে। ফুলের প্রতি বিমুগ্ধের তেমন মায়া নেই। এসব তার আব্বির ফুল গাছ। বিমুগ্ধ বসে চিন্তা করল বাঙ্গালীর উপকার মানুষ কেন করতে চায় না? আসলে এদের উপকার করলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়তে হয় উপকারীর। সে নিজের রুম গুলোর দিকে তাকাল। নীহারিকার দিকে তাকাল। মেয়েটা এতো হাসছে কেন? ওহ অসহ্য। বিমুগ্ধর গায়ে ভয়ংকর জ্বর। তবুও সে বসে আছে। একদম কঠিন হয়ে। নিজের বরবাদি দেখছে। হিসেব করে দেখল এই কাজিনময় বিয়েতে সবচেয়ে বেশি সে ক্ষতিগ্রস্ত। নীহারিকা কি এবার তার সবচেয়ে দামি ফুলদানিও ভেঙ্গে ফেলবে? সত্যি তাই হলো। নীহারিকা সব ফুল সেখান থেকে বের করতে গিয়ে বিমুগ্ধের তুর্কি থেকে নিয়ে আসা ফুলদানী ভেঙ্গে ফেলল। ফয়সাল চিৎকার করে মাথায় হাত দিয়ে বলল,’ সর্বনাশ।’ নীহারিকা তার মাথায় হাত বলিয়ে বলল,’ সর্বনাশের কিছু নেই। কাজিনময় বিয়েতে তো একটু ভাঙ্গাচূড়া হবেই। কি বলেন বিমুগ্ধ?’ নীহারিকা আত্মহারা হয়ে বিমুগ্ধের গালে জার্বেরা ছুঁয়ে দিল। আসলে ছুঁয়ে দিল বললে ভুল হবে সে বাড়ি দিয়েছে। ভয়াবহ আঘাত। বিমুগ্ধ কিছু বলার মত ভাষা খুঁজে পেল না। সে জমে দু’ হাত উচু করে দাড়িয়ে রইল। জ্বরের সাথে তার প্রচন্ড মাথা ব্যথা হচ্ছে। সে বুঝতে পেরেছে নীহারিকা আজ তার সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে এসেছে। যেভাবে ভালোবাসা আসে।
__________
ফ্ল্যাটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কক্ষটি হচ্ছে রান্না ঘর। সব ধরণের আধুনিকতায় মুড়িয়ে দেওয়া এমন একটি রান্না ঘর বাংলাদেশে দুর্লভ বস্তু। এদেশে তো ঘরের সবচেয়ে ছোট রুমটি হয় কিচেন রুম। অথচ এই বাসার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিমুগ্ধের বেডরুমের চেয়েও বড় এই রান্নাঘর। এক কথায় হিসেব করলে দু’ টি বেডরুমের জায়গা দখল করে বসে আছে সে। অত্যন্ত সুন্দর আধুনিকতার ছোঁয়া প্রস্ফুটিত রুমটি দেখেই নীহারিকার মনে হচ্ছে এখনে ঘুমিয়ে পড়া যাবে। প্রতিটি জিনিস এতো সুন্দর করে সাজানো দেখে নীহারিকা ভাবাবিষ্ট হয়ে গেল। এক ফোঁটা বালি খুঁজে বের করাও কষ্ট দায়ক ব্যাপার। কিচেনের জন্য আলাদা জুতোর পর্যন্ত ব্যবস্থা আছে। এসি আছে। পোশাক রাখার আলাদা আলমারি আছে। প্রতিটি চামচ থেকে শুরু করে প্লেটের স্ট্যান্ড গুলোও দেখার মত। এতো আকর্ষণীয় বস্তু বিমুগ্ধ কোথা থেকে খুঁজে বের করেছে? নীহারিকা বেসিনের পাশের বৃহৎ বিস্তির্ণ কালো পাথরের তৈরি জায়গায় লাফিয়ে উঠে বসল। বিমুগ্ধ তাকে দেখেই ভ্রু উচিয়ে বলল,’ রান্নার তো রও পারো না। এখানে কি করছ?’
নীহারিকা তার কথা উপেক্ষা করে বলল,’ এসব কোথা থেকে কিনেছেন? আমিও কিনতে চাই।’
‘ কেন? সেফ ক্লাস জয়েন করবা না কি?’
‘ না মায়ের জন্য। আপনার এই কিচেন দেখলে আমার মা সেন্সলেস হয়ে যাবে।’
বিমুগ্ধ সবার জন্য রান্না করছে। কেমন কেমন রান্না যেন। নীহারিকা মাথা বের করে একদম চুলার কাছে নিয়ে আসল। বিমুগ্ধ বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মাথা সরিয়ে দিয়ে হাসল। নীহারিকা বলল,’ আপনি কি সত্যি এসব বিদেশ থেকে নিয়ে এসেছেন?’
বিমুগ্ধ একটি অস্ত মুরগী কেঁটে ফেলল। নীহারিকার চোখ বড় থেকে বড় হয়ে আসল। এক প্রকার উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,’ আপনি মুরগীও কাঁটতে পারেন?’ পরক্ষণেই আবার বলল,’ ওহ আপনি তো বাবুর্চি।’ তারপর পরই সে হাসতে লাগল। বিমুগ্ধ চিকেনের গায়ে ময়দা মাখাতে ব্যস্ত। এতো মনোযোগী! নীহারিকা হেসে ফেলল। শব্দ করে। বিমুগ্ধ তবুও তাকালো না। তার মাথার পাশে, গালের পাশে সাদা ময়দা। এসব হয়েছে নীহারিকার জন্যেই। তা না হলে সে কখনো এমন কাজে ভুল করে না। নীহারিকা শীতল কন্ঠে বলল,’ আপনি জানেন খালামনি অত্যন্ত খুশি?’
‘ জানি।’
‘ মাও রেগে নেই। কাল বাসায় যেতে বলেছে। কি মারাত্মক ব্যাপার তাই না?’
‘ মোটেও না। বিয়েটা হোক সবাই চেয়েছে। মিতুয়া মাঝে বাগড়া দিয়েছে।’
‘ আমাদের পরিবার রাজি হলেও শাহিন ভাইয়ের পরিবার রাজি ছিলো না।’
‘ আমি জানি।’
‘ আচ্ছা আপনি কি জানেন না বলুন তো?’
নীহারিকার ঠোঁটে কি মিষ্টি হাসি। বোনের বিয়ে হয়েছে বলে সে এতো খুশি? না কি বোন ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকবে বলে এতো খুশি? বিমুগ্ধ চোখ তুলে একবার তাকাল। নীহারিকার চোখে চোখ পড়তেই সরিয়ে নিল। নীহারিকা বলল,’ আমি শাহিন ভাইকে ফকির করার প্ল্যান করেছি। আপনি আমাকে সাহায্য করবেন।’
‘ করছি না।’
‘ কি খারাপ! আপনি না কিছুক্ষণ আগে আমার সাহায্য
নিয়েছেন?’
‘ আমি না শাহিন নিয়েছে। তুমি কি কোন ভাবে তার বাসর নষ্টের প্ল্যান করছ?’
নীহারিকা চমকে গেল। সাথে লজ্জায় তার কান গরম হয়ে উঠল। মানুষটা এভাবে সরাসরি বলে দিল? কি জঘণ্য! বিমুগ্ধ একটু ঝুকল। নীহারিকা ভড়কে গেল। বিমুগ্ধ স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করল,’ সাহায্য সত্যি লাগবে?’
নীহারিকা চোখ মুখ খিঁচে বলল,’ দূরে সরুন। খবরদার কথায় কথায় এমন কাছে আসবেন না।’ নীহারিকা একটি কাঁটা চামচ হাতে নিয়ে বিমুগ্ধকে ভয় দেখাল। বিমুগ্ধ ভয় পাওয়ার অভিনয় করল। মেয়েরা চায় ছেলেরা তাদের ভয় পার। মেনে চলুক। কথার দাম দিক। তাদের অধিক গুরুত্ব দিয়ে সম্মান করুক। এসব করা উচিৎ। কখনো মন থেকে কখনো অভিনয় করে। নীহারিকা সন্তুষ্ট হয়ে বলল,’ ইয়েস। লাভের অংশ ভাগে পাবেন। এতো চিন্তা করবেন না।’
‘ কত পারসেন?’
‘ যত পাওয়া যাবে তার উপরে ডিপেন করছে।’
‘ আমি ২০% নিব। তাহলেই রাজি।’ নীহারিকা মনে মনে হাসল। টাকা আগে পেয়ে নি তারপর হু আর ইউ? মুখ কুঁচকে সে বলল,’ এতো বেশি? আপনি মানুষটা চূড়ান্ত বজ্জাত।’
‘ ধন্যবাদ। ডিল মঞ্জুর কি না বলো?’
‘ আপনি এতো টাকা দিয়ে কি করবেন? বড়লোক বাপের বড়লোক ছেলে।’
‘ আমি বড়লোক নই। আমার বাপ হয় তো একটু বড়লোক। আমেরিকার টাকা তো। আমার কাছে সে অনেক টাকা পাবে। এই বাড়ির এক কোটি টাকা এখনো সে পাবে।’
‘ আপনি তো আস্ত আমেরিকান।’
‘ এসব বলে লাভ নেই টাকা পৃথিবীর খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রাগেশ্বরী।’ বিমুগ্ধ বাম চোখ মারল। নীহারিকা বিব্রত হয়ে বলল,’ আচ্ছা ঠিক আছে।’ যদিও তার মনে মনে পরিকল্পনা অন্য। অনেক্ষণ পরে বিমুগ্ধ শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,’ টিস্যু নেও।’ নীহারিকা বাধ্য মেয়ের মত নিলো। বিমুগ্ধ মাথা এগিয়ে দিয়ে বলল,’ এবার এসব পরিষ্কার করো।’ নীহারিকা অপ্রস্তুত হাসল। কি বলে এসব? সে দ্রুত নেমে যাওয়ার ফন্দি করল। বিমুগ্ধ কাছে আসল। নীহারিকা দু’ হাত সামনে রেখে বলল,’ দিচ্ছি দিচ্ছি আপনি সরুন।’ বিমুগ্ধ সহজ হাসল। তার কণ্ঠে তাড়া। রান্না নামক খুবই গুরতর কাজে নিযুক্ত তিনি। নীহারিকা বহু কষ্টে টিস্যু রাখল কপালে। পরক্ষণে মুছে না দিয়ে অত্যন্ত রূঢ় গলায় বলল,’ নিজের কাজ নিজে করুন।’
‘ তাহলে বসে থাকো। নামলে অন্য শাস্তির ব্যবস্থা করব। তুমি তো জানো তোমাকে কাঁদানোর বিশেষ ক্ষমা আছে আমার।’
নীহারিকা বসে রইল। গম্ভীর হয়ে। রাত তখন একটা। মধ্যরাত্রির অন্ধকার ঘন্টা বেঁজে চলেছে। বিমুগ্ধের দক্ষ হাত রান্নায় ব্যস্ত। নীহারিকা সেই স্থানেই মাথা রেখে গভীর তন্দ্রায় তলিয়ে গেল। বিমুগ্ধ রান্না শেষ করে টুল টেনে বসল। মেয়েটি সতেজ ফুলের মত। প্রকৃতির মত। পবিত্রতার মতই পবিত্র। নীহারিকার মনে হচ্ছে কেউ তাকে দেখছে। গভীর ভাবে। কিন্তু তার প্রচন্ড ঘুম। এভাবে ঘুমিয়ে ঘাড় ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। তবুও সে ঘুমাচ্ছে। ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব হতেই সে উঠে বসল। কেউ তো নেই? বিমুগ্ধ তাকে এমন অন্ধকার রুমে রেখে চলে গেল? নীহারিকার প্রচন্ড রাগ হওয়ার কথা। কিন্তু তার হলো অভিমান। বিকশিত হয়তে থাকা সেই আত্মর মন খারাপ ব্যাপারটা সে গোপন করল। এই মানুষটার সাথে তো তার এমন কোন সম্পর্ক নেই। তাহলে অভিমান কিসের? অভিমান করতে হলেও একটা সুন্দর, মিষ্টি, চূড়ান্ত ভালোবাসার নামে বরাদ্ধকৃত মন থাকতে হয়। বিমুগ্ধ তার জীবনে তেমন কিছুই না। একদমই না।
__________
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে ঘুমতে যাওয়ার আয়োজন করতে গিয়ে বিমুগ্ধ ঘোষণা করল,’ মিস্টার শাহিন ভাই এবং মিতুয়া আপনাদের বিয়ে পর্যন্তই আমরা সবাই যুক্ত। কিন্তু এর পরের কিছুতেই আমরা নেই।’
শাহিন ভাই হতভম্ভ মুখ করে বললেন,’ মানে কি? নেই মানে কি বুঝাতে চাইছ?’
বিমুগ্ধ মুডি একটা ভাব মুখে টেনে বলল,’ আপনার বউয়ের সাথে আপনি এখানে থাকতে পারবেন না। কারণ আপনাদের জন্য রুমের ব্যবস্থা করতে গেলে আমাদের নিচে ঘুমাতে হবে। কাজিন গুষ্ঠি আর সেক্রিফাইস করতে পারছে না।’
আনজুম হাত টেনে ভাইকে বলল,’ আজকে ওদের ফার্স্ট নাইট তুমি নষ্ট করতে পারো না।’
‘ আমি সব পাড়ি আনজুম।’
‘ ভাইয়া আমরা এক সাথে একটা ব্যবস্থা করে নিব। তুমি এটা করতে পারো না।’
বিমুগ্ধ ছি ছি একটা মুখশ্রী করে বলল,’ আমি তোমার বড় ভাই আনজুম। তুমি কিভাবে আমার সাথে এসব নিয়ে আলোচনা করতে পারো? হাউ ক্যান ইউ?’
আনজুম মোটেও লজ্জিত হলো না। তাদের মাঝে এমন কোন সম্পর্কই নেই। সে আরও উজ্জ্বল দিপ্ত হয়ে বলল,’ আমি শাহিন ভাই এবং মিতু আপুকে সাপোর্ট করছি। নীহারিকা তুমি কাকে সাপোর্ট করবা?’ বেচারি বুঝতেই পারল না নীহারিকাই এসবের মুলে অবস্থান করছে। শাহিন ভাই খুবই ছোট মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। যেন মিতু আপুকে এক মুহূর্তের জন্য দূরে সরালে তিনি মারা যাবেন। বিবাহের দিনেই তার মৃত্যু ঘটিবে। নীহারিকা ভাবল শাহিন ভাইকে একটু মারলে কেমন হয়? সে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,’ এটা তো হবে না ভাইয়া। আমরা আপনাদের বিয়ে দিয়েছি সবার অলক্ষ্যে। ফলে অলরেডি আমরা ফাঁসিতে ঝুঁলছি। আপনি কি চাইছেন আমরা মারাও যাই?’
‘ না মোটেও না। এমন ভয়াবহ জিনিস আমি চাইতে পারি না শালিকা। কিন্তু আমার বউ তোমাদের সাথে কেন থাকবে? সে তো আমার বউ তাই না? নিজের। এক মাত্র বউ।’
‘ পৃথিবীতে বেশির ভাগ পুরুষেরই বউ এক মাত্র হয়। আপনার এক মাত্র বউ আপনারই থাকবে। কিন্তু পৃথিবীর সব কিছুরই একটা বিনিময় মূল্য আছে। আমাদের মৃত্যু ঝুঁকির বিনিময় মূল্য না হলেও ক্ষতিপূরন তো প্রয়োজন?’
শাহিন ভাই বলল,’ কি বলো! ক্ষতিপূরণ আবার কেমন হয়?’
বিমুগ্ধ বুঝতে পেরে নীহারিকার সামনে এসে বলল,’ আমি তোমার নীতিও মানছি না। একজন কুমারা পুরুষ আমি। আমার বাসায় এদের বাসর হওয়া ইম্পসিবল।’
নীহারিকা অত্যন্ত লজ্জিত হলো এই লোকের কথায়। রাগে রাগেশ্বরী হয়ে বলল,’ আপনাকে আমার সেকেন্ড থাপ্পড়টা দিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে? কি কথা হয়েছিল ভুলে গেলেন? অসহ্য।’
অর্পণ অবাক হয়ে বলল,’ সেকেন্ড মানে? তুমি কি আগেও মেরেছ না কি?’
বিমুগ্ধ মুখ চেঁপে ধরল অর্পণের। বলল,’ তোদের বলেছি এখানে নিরব দর্শকের রোল প্লে করতে। কোন কথা নয়।’ সত্যি তাদের এই শর্তে এখানে আসার অনুমতি দিয়েছে বিমুগ্ধ। তারা কোন প্রকার কথা বলতে পারবে না। তাই তো সবাই চুপ। একদম স্ট্যাচু অব লিবার্টি। নীহারিকা হাতের দুই করতল ঘর্ষণ করে বলল,’ মাত্র বিশ হাজার দিলেই হবে।’
শাহিন ভাই আঁতকে উঠে বললেন,’ নাউজুবিল্লাহ। আস্তাগফিরুল্লাহ। তোমরা এতো বড় ডাকাত!
আনজুম দল পরিবর্তন করল। সে দারুন মজা পাচ্ছে। সে বলল,’ আমিও তোমাদের দলে নীহু।’ বলেই সে নীহারিকার গাল টেনে দিল। কি সাঙ্ঘাতিক! শাহিন ভাই মুখ গুঁজে বললেন,’ আনজুম তোমার থেকে এটা আশা করিনি। একদমই না।’
‘ টাকার ব্যাপারে মানুষ কিছুই আশা করতে পারে না শাহিন ভাই। টাকা দেন বউ নেন। কাহিনী খাতাম।’
প্রিয়ম মিতু আপুকে টেনে নিজের পিছনে নিয়ে গেল। ফাবিহা হাত মেলে দাড়িয়ে আছে। তার সাথে তার সব ভাই বোন। মিতু আপু মাঝে থেকে চেঁচিয়ে উঠে বলল,’ আমি তোদের ত্রিশ হাজার দিব বিনিময়ে এই লোককে এখান থেকে বের করে দিতে হবে।’ সবাই চোখ বড় বড় করে মিতু আপুর দিকে তাকাল। নিজের সদ্য হওয়া একমাত্র হাজবেন্ডকে বের করে দিতে বলছে? আবার লোক বসেও সম্মোদন করছে? এরা এক সাথে থাকলে মিতু আপু শাহিন ভাইয়ের গর্দা’ন নিবে। তিনি ব্যাগ থেকে সত্যি অনেক টাকা বের করল। শাহিন ভাই এই দৃশ্য দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে বললেন,’ আমি চল্লিশ দিব। আমার বউ আমাকে দিয়ে দেও।’
মিতু আপু চুপসে গিয়ে বলল,’ পঁচিশ বলা উচিৎ ছিলো না রে প্রিয়ম?’
‘ না চল্লিশ বললে ভাইয়া পঞ্চাশ দিত। তুই এতো গাঁধা কেন?’ বড় বোনের মাথা ঠেলে পিছনে নিয়ে গেল সে। মিতু আপু তার সব সেলারি দিয়ে দিবে বলল। শাহিন ভাই তার চেয়েও বেশি দিবে বলল। এদের কথা কথিতে তিশা, মুহিতা একটি রুমে ঘুমিয়ে পড়ল। মুহিত অর্পণ অপর রুমে। সকালে ভাগ বসাবে এই টাকায়। নিরব দর্শকরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়। আর বেড রুম আছেই তিনটি। নীহারিকা ফিচেল হাসল। বিমুগ্ধ ব্যতিত কেউ ধরতে পারল না। শাহিন ভাই তার জমানো সব টাকা তার শালা শালীকাদের কাছে হস্তান্তর করে দিল। যদিও অপাতত সব বিমুগ্ধের একাউন্টে। নীহারিকা সুযোগ বুঝে দু’ জনকেই দরজার বাহিরে বের করে দিয়ে দরজা লাগাতে লাগাতে বলল,’ নিজের বউকে নিয়ে নিজের রাস্তা মাপুন। শুভ বাসর।’
শাহিন ভাই একটু মন খারাপ করলেও মহা খুশি হলেন। মিতু আপু চিৎকার চেঁচামেচি করল। তারা এই মধ্যরাতে কোথায় যাবে। শাহিন ভাই ভালো একটি অফার দিয়ে বলল,’ আজ সারা রাত আমরা হাঁটব। কেউ কি কখনো শুনেছে বাসর রাতে পিচঢালা রাস্তার বুকে বর বউ হাঁটতে! কালো পোশাকে লাল ওড়নায় প্রিয়সির সাথে প্রিয় মানুষটি। এটি ভালোবাসাময় স্মরণীয় রাত হবে। মস্ত আকাশ মাথার উপরে হবে। নিচের মাটি শীতল হবে। হু হু ঠান্ডা বাতাস বইবে। ক্লান্ত হয়ে মাঝ রাস্তায় বসে পড়বে তারা। আমাদের হবে পথ চলার বাসর।’
________
ফজরের আযানে চারপাশ পরিষ্কার হচ্ছে ধীরে ধীরে। নীহারিকা নামাজ শেষ করে ব্যালকনিতে আসল। এই বারান্দা সুন্দর করে গুঁছিয়ে রাখা। নিচে সবুজ ঘাসের কার্পেট। সামনে ফুলের গাছ। নিচে বসার মত কাপড়ের তৈরি গদি। তার চারপাশে নানান রঙ্গের কুশন। তবে দোলনা নেই। নীহারিকা হতাশ হলো। ঠান্ড শীতল বাতাসে চারপাশ নতুন হয়ে উঠেছে। একটি নতুন সকাল নতুন সম্পর্কের সূচনা। নতুনত্ব পুরাতনকে বিদায় দেয়। কাকের তীক্ষ্ণ চিৎকার কানে আসছে। দূরে কোথায় পাখি ডাকছে। গাইছে গান। নীহারিকা সামনে তাকিয়ে দেখল একটি পানির ফোয়ারা। মনোরম পরিবেশ। বাতাসে বইছে হাওয়া। হাওয়ার মাঝে বাড়ছে মায়া। এপাশ ওপাশ সব সতেজ। বড় বড় সবুজ গাছ। অরণ্যে ভরপুর চারিপাশ। কুয়াশার চাদরে মুড়িয়ে আছে গাছের ছাদ। শিশির জমেছে ঘাসের বুকে। ফুল বিহিন গাছের পাতায় পাতায় ভিজা কুয়াশারা জানিয়ে দিচ্ছে তাদের মাঝের অনুভূতি গুলো। সতেজ পবিত্রতা বিরাজমান। সব খুশির আনন্দের। চারপাশের এতো আনন্দ ছুঁয়ে দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়েছে নীহারিকাকে। পৃথিবী শুদ্ধ সব খুশির হলেও মানুষের একটি নিজস্ব মন থাকে। নিজস্ব সত্ত্বা থাকে। যা কখনো অন্যের দ্বারা আপ্লুত হতে পারে না। অন্যের খুশিতে মানুষ কখনো খুশি হতে পারে না। তাদের সকল আনন্দের পিছনে থাকে নিজের স্বার্থ। নীহারিকা বুঝতে পারল সে চরম স্বার্থপর মানুষ। যাকে অন্য কেউ খুশি করতে পারে না। ভালো রাখতে পারে না। হঠাৎ মন কেমনের বৃষ্টি নামার মতই নীহারিকার বক্ষস্থল কালো ধূসর অন্ধকারে মিশে যাচ্ছে। কোথাও কি কষ্ট হচ্ছে? নীহারিকা তার সিদ্ধান্তের জন্যেই কষ্ট পাচ্ছে। জেনে শুনে নিজেকে কষ্ট দেওয়া মানুষের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভূক্ত। সব কিছু ঝাপিয়ে নীহারিকা উপলব্ধি করল তার ভালো লাগছে না। প্রচন্ড মন খারাপে তারও যেন জ্বর আসছে। এই ঝকঝকে সুন্দর একটি দৃশ্য তাকে টানছে না। কাজিনময় বিয়ে সমাপ্ত করে তারই নিজের আপন খালাত বোনকে ঘর থেকে বের করে দিয়েও সে কষ্ট, আনন্দ, মজা বা এক কথায় কিছুই পাচ্ছে না। তার ঘুম হচ্ছে না। সে জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করে বসে আছে। তা হচ্ছে বিমুগ্ধের সাথে দেখা। কেন দেখা হলো সে জানে না। শুধু উপলব্ধি করছে তার একদমই এই মানুষটার সাথে দেখা হওয়া উচিৎ হয় নি। সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে গেল সে এই মানুষটার প্রেমে পড়ে গেছে। বিমুগ্ধের প্রতি তার এই হঠাৎ বৃষ্টির মত অতি শান্ত কিন্তু ধারাল প্রেম তাকে বহু বছর ধরে খুবড়ে খুবড়ে অন্যরকম কেউ একজন তৈরি করে দিচ্ছে। যে সত্যিকারের নীহারিকা নয়। সে এক উদাসীন মন কেমন করা, চঞ্চল হতে চাওয়া, দূর্বল চিত্তের কান্নারত কন্যা। যাকে কঠিন ভাবে কান্নায় লেপ্টে দেওয়া ছেলেটি হচ্ছে বিমুগ্ধ। নির্বিকার সৌন্দর্য্যে আলোকিত হতে যাওয়া এই সকালকে দেখে নীহারিকার মনে হচ্ছে সে বড্ড ভুল করে ফেলেছে। পৃথিবীতে প্রেমে পড়া উচিৎ। প্রেমে না পড়লে নেহাৎ জীবনটা রসকস বিহিন সাধারণ হয়ে থাকে। জীবনে অসাধারণ রসদের যোগান দিতে একটা প্রেমে পড়া মহান ভাবে জরুরী। কিন্তু সেটি হওয়া উচিৎ অবিমিশ্র, অতিদারুণ সুন্দর। বিমুগ্ধ তো অবিমিশ্র, নির্ভেজাল নয়। উল্টো সে ভেজাল তৈরির জনক। অতিদারুণ সুন্দরও সে নয়। তার আচরণ অন্যকে ব্যথিত করে তুলার মত। অত্যন্ত রাগিয়ে দেওয়ার মত। গম্ভীর্যপূর্ণ একটি চরিত্রও বাস করে তার মাঝে। এধরণের পুরুষদের উপন্যাসে দারুণ শোভা পায়। কিন্তু বাস্তবে! এরা প্রচন্ড পীড়া দায়ক ব্যথায় মে/রে ফেলতে যানে। বিনা শব্দে ছু/রি চালাতে যানে। অ/স্ত্র বিহিন যুগ্ধে লিপ্ত হতে জানে। হৃদয়ের এপাশ ওপাশ ক্ষতবিক্ষত করতে জানে। নীহারিকার মুঠো ফোন জীবিত সুর ধরেছে। কেউ তাকে কল করছ। নীহারিকা ফোনের নামটি দেখে হাসল। জাওয়াদ! অত্যন্ত অস্থির একটি চরিত্র। সে একটি প্রেমিক পুরুষ। এধরণের পুরুষের প্রেমে পড়াই প্রকৃত পক্ষে উত্তম। এরা প্রচন্ড ভালোবাসা দিতে জানে। পাগলামী করতে না জানলেও যত্ন করতে জানে।
অতিসুদর্শন একজন পুরুষ। যার জীবনটাই পারফেক্ট। মিস্টার পারফেক্ট বলে অভিহিত করলে যাকে কম বলা হয়ে যাবে। পিটানো বুক, প্রশস্থ কাধ, মায়াবী চোখ, পেন্সিলে আঁকা ঠোঁট, অত্যন্ত সুন্দর দেখতে একজন পুরুষ। যার পেশা গত যোগ্যতার সাথে সাথে আচরণ, চলাফেরা, কথা বলা, সব চূড়ান্ত ভদ্র লেভেলের। সেই পুরুষটির প্রেমে পড়লে ক্ষতি কিসের? কেন পড়ল না? কেন তার মনে জাওয়াদের মত একজন জায়গা পেল না। যে তার পিছনে পাগলের মত ঘুরছে। যে তার সাথে একটু কথা বলার জন্য অপেক্ষায় থাকে। যাকে তার পরিবার পছন্দ করে। সবচেয়ে বড় কথা তার বাবা নামক পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি পছন্দ করে। কিন্তু মন কেন প্রকৃতির বিরুদ্ধে চলে? নীহারিকা চোখ বন্ধ করল। ঠোঁটে হেসে ভাবল,’ জাওয়াদের প্রেমে পড়া খুব প্রয়োজন। অত্যন্ত জরুরী। সবচেয়ে বড় কথা জাওয়াদের মত ছেলের প্রেমে না পড়লে সে নারীজাতিকে ডুবিয়ে দিবে। এমন একজন পুরুষ কখনো রিজেক্ট হতে পারে না। কখনো না।’
পাশে মাটির কাপের শব্দ হচ্ছে। নীহারিকা ধীর গতিতে চোখ মেলল। বিমুগ্ধ বসেছে তার থেকে এক হাত দূরে। লালাভ রঙ্গে হালকা হয়ে আসা মিশমিশে কালো তার চোখ। তার খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চোখা একটি নাকের উপরে বিদেশি দাম্ভিকতা। সে আস্ত একটি শিল্প। তার বসার মাঝেও রয়েছে শিল্প। ফ্যাশন। নতুনত্ব। তার ঠোঁট শুধু নীহারিকার জন্যে হাসে। চোখ শুধু নীহারিকার জন্যেই কথা বলে। বাকি সময় জুড়ে এই মানুষটি অন্য রকম। পৃথিবীর বুকে একটি মানুষের মাঝে সে দু’ টি মানুষের একদম ভিন্ন চরিত্র দেখেছে। একটি মানুষের সব জুড়ে রাগ, অহংকার বোধ, হিংস্রতা, গাম্ভীর্যতা বিরাজমান। অন্য মানুষটির সব জুড়ে হাসি। নির্বিকার পাগল করা হাসি। তার দুষ্টুমি ভরা দু’ টি চোখ। কৌতুক তার মণি। বিস্ময় করা গলা। নীহারিকার পরাভূত নয়ন। কুয়াশা ভিজা একটি সকালের সূর্য উড়ে এসে নিয়ন আলোর মতই উজ্জ্বল হয়ে তার মুখমন্ডলকে রাঙ্গা করে তুলল।

“ তাহার সেই রাঙ্গিয়ে যাওয়া মুখশ্রীতে তাকিয়ে থেকে চোখের পলকে চোখ ডুবিয়ে দৃষ্টির সাথে দৃষ্টি খেলিয়ে কোথায় এক নির্জন বনে পৃথিবীর জনমানবকে ছাপিয়ে ঝমঝমে ঝড়নার জলধারার কোলে লুকিয়ে বলতে ইচ্ছে করে ভালোবাসি। প্রচন্ড প্রেমে পড়ি। আপনি মানে আমার বিস্ময়। আপনি মানে আমার জগৎ অন্যরকম। আপনি মানে কোথাও কেউ নেই। আপনি মানে ধুধু করা মরুভূমিতে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া আমার পথ চলার সঙ্গী।”এই আপনিটাকে উপেক্ষা করে চলে যেতে হবে। বহু দূরে। সব আপনিময়ের সাথে থাকতে নেই। ভালোবাসা প্রকাশ করতে নেই। কিছু ভালোবাসা গোপনে ঢাকা পড়ে দৃষ্টির আড়ালে। এই যে ওই কালোর সাথে সোনালীর মিশ্রণের সেই মনি দিয়ে তাকে জানতে চাইছে। পড়তে চাইছে। ধরতে চাইছে অনুভূতি। কিন্তু পারছে না। বিমুগ্ধ কাপে শব্দ করল। নীহারিকা এক কাল্পনীক দুনিয়া ছেড়ে এখানে এসে উপস্থিত হলো যেন, এমনই দৃষ্টিতে তাকাল। বিমুগ্ধ বলল,’ তুমি শুধু এক পা চা খাও আমার সাথে। শিশির ভেজা একটি সকালে। আপাতত যথেষ্ট।’
‘ না যথেষ্ট নয়। ভালোবাসায় কোন কিছুই যথেষ্ট হয় না বিমুগ্ধ। কোন কিছুই যথেষ্ট হয় না। সব মনে হয় অল্প। স্বল্প। ধুলিকণারই মত তুচ্ছ।’
নীহারিকা কথা গুলো বলল। কিন্তু মনে মনে। গোপনে। লুকায়িত চিঠি বাক্সে ঢুকিয়ে দিল খামে ভরা ভালোবাসা। বিমুগ্ধ বুঝতেই পারল না। অন্যের মন পড়া মানুষটি নিজের মানুষের মন পড়তে অক্ষম। পৃথিবীটা মনে হয় এমনই। নীহারিকা চাইছে বিমুগ্ধ কিছু বলুক। কিছু একটা। কিন্তু বিমুগ্ধ কিছুই বলল না। নীহারিকা বলতে চাইল। বার বার চাইল। বিমুগ্ধ বাঁধা দিয়ে বলল,’ তুমি যা বলতে চাইছ তা শুনলে আমি প্রচন্ড জ্বরে মরে যেতে পারি নীহারিকা। আমার আত্মা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তোমার প্রেমে পড়ার চেয়েও বেশি কঠিন প্রত্যাখ্যান, বিমুখকরণ, উপেক্ষা। এই জগতের অত্যন্ত কঠিন, চূড়ান্ত অসভ্য, দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ পুরুষটাও প্রত্যাখ্যানকে ভয় পায়। এই আগুণ মাত্রা অতিরিক্ত জ্বালিয়ে ঝলসে দেয়। কারণ পুরুষরা তোমাদের মত প্রত্যাখ্যাত হয়ে কাঁদতে পারে না। তারা চিৎকার করতে পারে, ভাঙ্গচূড় করতে পারে। কিন্তু তারা সত্যি কাঁদতে পারে না। একদম না।’
সত্যি কি প্রত্যাখ্যান ভয়াল কোন ব্যাপার? যে ব্যাপারে মানুষ মরে যায়। হারিয়ে যায়। কোথায় যেন লুকিয়ে যায়। খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। প্রত্যাখ্যান সত্যি আশ্চর্য রকমের কষ্ট দায়ক। সবাই বুঝে না। কেউই বুঝে না। শুধু বুঝে একজন। একটি মাত্র মানুষ। একটি মাত্র সত্ত্বা। যার সাথে জুড়ে যায় একটি মাত্র কষ্ট। শেষে কি না বিমুগ্ধ প্রত্যাখ্যাত হয়েছে? হাসল বিমুগ্ধ। খুব হাসল। ওই রোদের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল তার হাসি। নীহারিকা চমকে শুধু তাকিয়ে রইল। রূবাইদা কি এভাবে কষ্ট পায়? জাওয়াদ কি এভাবেই অনুভব করে? প্রত্যাখ্যান বিষয়টি কতটা কঠিন হতে পারে? একটু? না কি আরও একটু বেশি? না কি অনেক অনেক বেশি? বিমুগ্ধ দেখল বাহিরের আকাশ সুন্দর। পরিবেশ শীতল। একটি অসম্ভব মনোহরণ সকালে বিমুগ্ধের মত একজন পুরুষ রিজেক্ট হয়ে গেল? নীহারিকা সত্যি হার্টলেস রমনী! সত্যি!
_____________
চলবে………….
ভুলত্রুটি আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি দিয়ে দেখবেন। নিশ্চুয়ই ক্ষমা একটি সুন্দর গুন।
@হাফসা_আলম