বিকেলের যতো রঙ পর্ব-১২

0
42

#বিকেলের_যতো_রঙ
পর্ব সংখ্যা-১২
#রুবাইদা_হৃদি

সুন্দর একটা ঝরঝরে দুপুরেও কেমন নীরবতা বিরাজ করছে৷ এখুনি যেন ঘাপটি মেরে বসে থাকা কেউ একজন কোথাও থেকে বেরিয়ে বলবে,’এই তোমরা কোথায়! দেখো বড় একটা রুই এনেছি৷’

সেই ডাক শুনে আম্মা ঘর থেকে বেরিয়ে রোয়াকে দাঁড়াবে৷ শাড়ির আঁচল টেনে বলবে,’আশরাফের আব্বা আপনার যে মাঝেমধ্যে কি হয়! এতো বড় মাছ কেউ আনে?’

আব্বা সেই কথা শুনে হাসে৷ হাসতে হাসতেই বলে,

‘সালমা তোমার বাপ ভাইয়ের মতো হাড়কিপ্টেমি তো আমি করতে পারি না৷’

সেই কথা শুনে আম্মা কিঞ্চিৎ রাগ দেখায়৷ হেলেদুলে আব্বার হাত থেকে মাছ টা নিয়ে কলপাড়ে আগায়৷
এইসব ই এখন কল্পনা৷ আর কল্পনা যেন বাস্তব৷ আমি রোয়াকে বসে আছি অধীর আগ্রহে৷ দাদি আমার কাছে এসে পাশে রাখা চেয়ারে আঁটসাঁট হয়ে বসে বললো,

‘আমার ছোট পোলার তো দোষ আছিলো না৷’

আমি দাদির কথা শুনে আড়চোখে মহিলার দিকে তাকালাম৷ ভরাট গলায় বললাম,

‘আমার আব্বা কি তোমার সৎ ছেলে?’

‘সৎ হইবো কেন! তোর বাপে আমার নিজের পেটের পোলা৷’

‘তাহলে তার জন্য তোমার সালিসি তো শুনলাম না৷’

দাদি কিছুটা ভড়কে গেলো৷ এরপর চোখেমুখে বিস্তর দুখী ভাব বোঝাতে অনেক প্রয়াস চালালো৷ এবং কিছুটা সময় পর তাতে সফল হয়ে মুখ আঁচল দিয়ে ঢেকে কিছুটা ধরা গলায় বললো,

‘সালিসি করুম না কেন! তোর বাপের জন্য আমার অন্তর পুইড়া যাইতাছে৷ কিন্তু হে তো আমার কথা কোনোকালে শুনে নাই৷’

‘কি কি কথা শুনে নাই?’

‘কতো কথাই তো শুনে নাই৷ সব টাকা কড়ি তোর মায়ের নামে রাখবার মানা করছিলাম৷’

দাদি কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো৷ আমার খুব হাসি পাচ্ছে৷ মূলত তার উদ্দেশ্য হলো,আমার আম্মুর সব হরণ করা৷ আমি দাদির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে বললাম,

‘মূল কাহিনি হলো আমার আম্মার নামে যে সম্পদ ছিলো যেগুলা নানা দিয়ে গিয়েছিলো সেইগুলা আমার আম্মা তোমাদের দেয় নাই৷ এইজন্যই আমার আব্বা আজ বলেছে আমার মায়ের সাথে তার মনের মিল ছিলো না আর তুমি বলছো আমার আব্বা নিজের টাকাকড়ি মায়ের কাছে রাখতো৷ দাদি টাকা গুলা তো আমার নানা বাড়ির!’

আমি বলতেই দাদি চুপ হয়ে গেলো৷ উনি পান চিবুতে চিবুতে চাচিকে ডাকতে ডাকতে বললো,

‘হোসেনের বউ তুমি তোমার বাপেরে কও আমার পোলার জন্য উকিল খুজতে৷’

আমি সেসব কথায় গ্রাহ্যই করলাম না৷ চাচির বাপের দু পয়াসার মুরোদ নেই৷ আর মনোহর স্যার বলেছেন,আমাদের হয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন অপরাধীরা যেন সমান ভাবে শাস্তি পায়৷
আমার আব্বা নিজেও আমার আম্মাকে সম্পদের লোভে পরেই বিয়েটা করেছিলেন৷ কারণ আমার নানা বনেদি পরিবারের সূত্রেই ঢেরবেশি সম্পদের মালিক ছিলেন৷ উত্তরাধিকার সূত্রে আমার মামা আর আম্মা নানা মারা যাবার পর সম্পদের মালিক হোন৷ আর মামা নিজের বোনের সব কিছু বোনকে সেই বিশ বছর পূর্বেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন৷ আব্বা সেই সম্পদের জের ধরেই আম্মার কথা সবটা শুনতেন৷ মানুষ কতোটা কুৎসিত হলে এইসকল কাজ করতে পারে ভেবেই আমার ঘৃণা এসে গেলো৷

.

সকাল সকাল কেমন আবছা আঁধারে পরিবেশ ঢেকে আছে৷ ভাইয়া উঠানে পায়চারি করছে অস্থির ভাবে৷ আমি সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছি৷ গতকালের ঘননায় বাড়িঘর কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে৷ আমাকে দেখেই ভাইয়া নির্লিপ্ত গলায় বললো,

‘উঠেছিস!’

‘তুমি ঘুমাও নাই?’

‘না৷ বাড়িটা কেমন হয়ে গেলো৷ ভোরে মনোহর স্যার ফোন করেছিলো৷’

‘কি বললো!’

আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করতেই ভাইয়া হতাশা নিয়ে বললো,

‘ঝুমা নাকি গলায় ফা’স দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো সেলের ভেতর৷’

কথাটা শুনে আমি কিছুটা আঁতকে উঠলাম৷ তবে বেশি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললাম,

‘নাটকের শেষ কবে হবে৷’

‘এভাবে বলিস না মিথি৷’

ভাইয়া কেমন অন্যরকম গলায় বললো৷

‘যার যার কৃতকর্মের ফল তাকে তো ভোগ করতে হবেই৷’

আমার কথার উত্তরে ভাইয়া চুপ হয়ে গেলো৷ ভাইয়ার আচরণ আমার মোটেও ভালো লাগছে না৷ আমি কিছুটা রাগ নিয়েই ঘরে যাবার উদ্দেশ্য পা বাড়ালাম৷ ভাইয়া আমাকে ডেকে বললো,

‘কাল কেইস টা আবারো আদালতে উঠবে৷ আমাদের যেতে হবে৷’

‘সব প্রমাণ সামনে৷ আমাদের যাওয়া লাগবে কেন!’

‘আব্বা খুব অসুস্থ হয়ে পরেছে৷ মিথি আমি অপরাধবোধে রাতে ঘুমাতে পারছি না৷’

ভাইয়া কাঁপা কন্ঠে কথা গুলা বললো৷ আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে পরখ করে দেখলাম সত্যিই ভাইয়ার চোখের নীচে কালো দাগ পরেছে৷ মুখ ভেঙে গেছে৷ আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,

‘তুমি এমন মলিন হয়ে থাকলে আমি কার কাছে যাবো ভাইয়া!’

‘মলিন না মিথি৷ বেঁচে থাকার জন্য আব্বা আম্মার ছায়াটা অনেক দরকার৷ আজ ভাগের পরিহাসে আমাদের সব শেষ৷ জীবন তো এতোটা সহজ নয়৷’

ভাইয়ার কথা শুনে আমি কেঁদে ফেললাম৷ ভাইয়া নিজের দুঃখে এতোটাই বিলীন যে আমার কষ্ট গুলা বুঝতে পারছে না৷ সবাই নিজেদের পাপ বোধ আর অপরাধ বোধ নিয়ে আছে৷ আমি কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম৷
ভাইয়া অবশ্য পেছনে থেকে বার দুয়েক ডাকলো৷ আমি সবার উপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলছি যেন৷

.
বিকেলের মেদুর আকাশ জুড়ে বিভিন্ন রঙ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ আমি বাসের জানালা দিয়ে একমনে সেই দিকে তাকিয়ে আছি৷ বিভিন্ন গাছপালার ফাঁকফোকর দিয়ে বিকেলের রাঙা আলো যেন অদ্ভুত সুন্দর লাগছে৷ আমার কিছুটা চোখ লেগে আসতেই ভাইয়া গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,

‘মামা বললো আব্বার শাস্তি হয়তো কিছুটা কম হবে৷’

আমি কোনো উত্তর দিলাম না৷ কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বললাম,

‘তোমার জয়েনিং কবে?’

‘পরশু দিন৷’

‘মামাকে আজকে বলবে আমাকে কোনো হোস্টেলে উঠিয়ে দিতে৷’

আমি কর্কশ গলায় বললাম৷ ভাইয়া কিছুটা আঁতকে উঠলো৷ এরপর গম্ভীর হয়ে বললো,

‘হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত?’

‘যেহেতু আজ মামা বাড়িতে যাচ্ছি৷ আর তোমার ঢাকায় অফিস৷ আমি কাদের সাথে ওই বাড়িতে থাকবো? সে ব্যাপার টা তোমার মাথায় এসেছে! নাকি ঝুমার কষ্টে সব ভুলে গেছো৷’

আমার কথা শুনে ভাইয়া বেশ মর্মাহত হলো৷ এরপর বললো,

‘আমি চিন্তা করেছি তোকে মামার কাছে রাখবো৷ এখানের কোনো একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিবো৷’

‘তাহলে তুমি কোথায় থাকবে? আর বাড়িঘর৷’

‘আমি অফিসের কাছে কোনো একটা ম্যাসে উঠে যাবো৷ আর বাড়িটা বিক্রি করে দিবো মিথি৷ তবে চিন্তা করেছি কিছু টাকা চাচি আর দাদিকে দিয়ে ওই গ্রামটাই ছেড়ে চলে আসবো৷’

‘আমি কারো বাসায় থাকবো না৷ তুমি নিজের সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দিতে পারো না৷’

‘সব সময় নিজের মাতব্বরি না করলেও তো হয় মিথি৷ আমি সব ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’

ভাইয়ার কথা শুবে আমার বেশ রাগ হচ্ছে৷ তবে ও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা না করেই সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুঝলো৷

.
মামার বাড়িটা একদম রায়েরবাজারের ভেতরের দিকে৷ এক চিপা গলি পার হয়ে যাওয়া লাগে৷ মামা কিছুটা কৃপণ প্রকৃতির হবার ফলেই তার সব কিছুতে সাশ্রয় খুজে৷ যদিও নানার সম্পদের বেশটাই গ্রামে পরে আছে৷ আমি সেগুলো ভেবেই আফসোস করলাম৷ দশতলা বিল্ডিংয়ের পুরোটাই মামার৷ আমরা বাসার ভেতরে প্রবেশ করতেই মামি আমাদের দেখে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,

‘ওহ এসে পরেছো!’

ভাইয়া আর আমি কুশল বিনিময় করলেও মামি কিছু বললেন না৷ উনি নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন৷ আমি আর ভাইয়া ড্রয়িংরুমে বসে রইলাম বেশ কিছুটা সময়৷ এরপর ভাইয়া মামিকে কিছুটা উচ্চস্বরে ডেকে বললো,

‘মামা কোথায় মামি!’

‘আরে এমন চেঁচাচ্ছো কেন! এইটা ভদ্র পরিবেশ৷ মানুষ কি বলবে! তোমাদের মত নোংরা পরিবেশ নয়৷’

মামির কথা গুলো শুনে আমার ব্যক্তিত্ত্ব সম্পন্ন ভাইয়া কেমন বিমূর্ত হয়ে বসে রইলো৷ আমি রাগ সীমা ছাড়িয়ে গেলো৷ মহিলা আমাদের এই পর্যন্ত একটাবার খোজ খবর নেয় নি৷আম্মা জীবিত থাকতে প্রতিনিয়ত ফোন দিতো৷ মানুষ পরিবর্তন হতে সময় লাগে না এইটা হয়তো বাস্তব উদাহরণ৷ আমি গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম,

‘আপনার বাসায় আমরা থাকতে আসি নাই৷ ভদ্রভাবে কথা বলবেন৷’

‘তুমি তো চরম বে’য়াদব৷ তোমার মামা আসুক আমি সবটা জানাবো৷ আর জানিয়েই বা কি হবে! যাদের পরিবারের কোনো ঠিক ঠিকানা নাই৷ বস্তি গুলা৷’

মামির কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম৷ আমার আম্মা তো উনাকে কম আদর করেন নাই৷ আর এইতো গত কয়েক মাস আগেও মামি ফোন দিয়ে আসতে বলতো৷

‘তোমাদের পরিবারের জন্য কারো সামনে মুখ দেখানো যাচ্ছে না৷ আমার মেয়েগুলা তো বড় হচ্ছে বিয়ে দিবো কিভাবে এ-সব ভেবে আমার রাতে ঘুম হয় না৷ আবার তোমরা আসছো সালিসি করতে৷’

আমি কিছু বলার পূর্বেই ভাইয়া কথার মাঝে বাধা দিয়ে বললো,

‘মিথি কথা বাড়াস না ৷’

ভাইয়া বলেই উঠে দাঁড়ালো৷ ছোট হাতের ব্যাগ হাতে তুলে নিয়ে বললো,

‘ভালো থাকবেন মামি৷ আমরা আজ আসি৷মিথি চল৷’

ভাইয়া বলেই আর একদন্ড দাঁড়ালো না৷ তবে মামি এরপর ও অনেক কথা শুনালেন৷ ভাইয়া বাসার বাইরে এসেই মন খারাপ করে বললো,

‘তোকে এখানে থাকতে হবে না৷’

‘তুমিই তো সব বলছো৷ ওই মহিলাকেও কিছু বলতে দিলে না৷’

‘কথা বললে কথা বাড়ে৷ অহেতুক কথা বাড়িয়ে তো লাভ নেই৷’

আমি প্রত্যুত্তরে কিছু বললাম না৷ ভাইয়া এক হাতে আমার হাত আরেক হাতে ব্যাগ টা নিয়ে যেভাবে এসেছিলাম সেভাবেই বেরিয়ে এলো৷

বাসার বাইরে আসতেই মামাকে কল দিয়ে বললো,’মামা আমি একটা বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি৷’

ওপাশ থেকে মামা কি বললো শুনলাম না৷ তবে ভাইয়া আমাকে নিয়ে রিক্সায় চড়ে বসলো৷ রিক্সা ওয়ালাকে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে বললো৷ রিক্সা ওয়ালা কিছুটা আজব দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

‘অজানা গন্তব্য তো নাই!’

‘মামা যেখানে কোনো মানুষ নেই সেখানে নিয়ে যান৷’

মামা কিছুটা অবাক হলো৷ তবে কথা বাড়ালো না৷ আমিও চুপচাপ বসে আছি৷ ভাইয়া এখনো আমার হাত মুঠোতে ধরে আছে৷ যানবাহনের তীব্র আওয়াজ আমাদের দু ভাইবোনের উপর প্রভাব ফেলতে পারলো না৷ রিক্সা আপন মনে মামা টেনে চলেছে৷
আমি পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার চোখে পানি৷ ভাইয়া সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,

‘এই দিন গুলা আমার সারাজীবন মনে থাকবে৷ সবাই ঠকিয়েই গেলো৷ আহারে জীবন!’

‘ভাইয়া৷’

‘চিন্তা করিস না৷ ভাই আছে৷’

আমার চোখেও অশ্রু এসে জমা হলো৷ এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমাদের হয়তো কেউ নেই৷ মামাকে ভরসা করেছিলাম সে মামাও পরিস্থির চাপে আমাদের হাত ছেড়ে দিতে বাধ্য৷

.

ঢাকা শহরে নিজের বাসা না থাকলে কতোটা ঝক্কি পোহাতে হয় আজ জানলাম৷ ভাইয়া হন্যে হয়ে বাসা খুজে বেড়ালো আমাকে নিয়ে৷ হোটেল গুলাতে থাকার ভরসা ভাইয়া করে উঠতে পারছে না৷ ভাইয়া চিন্তিত সুরে বললো,

‘তুই সাথে না থাকলে এতোটা চিন্তা হতো না৷’

‘আমরা কোথাও বসে থেকেও তো রাত পার করতে পারি৷’

ভাইয়া মলিন হাসলো৷ এরপর বললো,

‘ঢাকা হচ্ছে জাদুর শহর৷ এখানে কেউ কারো না৷ এভাবে এখানে রাত কাটানো যাবে না৷’

আমরা রাস্তার পাশের যাত্রী ছাউনি গুলাতে বসে আছি৷ ভাইয়া একের পর এক অনেক কে কল দিলো৷ তবে কোনো উপায় বের করতে পারছে না৷ সারাদিন বসে থেকে আমার ঝিমুনি আসছে৷ আমি ঘুমে ঢলে পরতেই ভাইয়া আমাকে কাঁধে মাথা রেখে শুতে বললো৷
তবে এর মাঝে দেবদূতের মতো মনোহর স্যার কল করে আমাদের আদালতে যাবার জন্য মনে করিয়ে দিলেন৷ ভাইয়া তখন বললো আমরা ঢাকায় এসেছি৷
স্যার যখন শুনলেন আমরা রাস্তার পাশে বসে আছি তখন উনিই থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন৷
ভাইয়া কিছুটা হাসতে হাসতেই বললো,

‘জীবনে আর কতো কিছু দেখার বাকি মিথি!’

সকাল সকাল আদালতে পৌছাতেই দেখলাম মামাও এসেছে৷ আমাদের দেখে বললেন,

‘বাসায় যাস নাই কেন?’

‘মামা এক বন্ধু খুব জোর করলো৷ তাই ভাবলাম ওর বাসাতেই যাই৷’

ভাইয়ার উত্তর শুনে মামা কিছু বললেন না৷ তবে আমিও মামার সাথে কুশল বিনিময়ে কিছু বললাম না৷
আজকে আদালতে হোসেন চাচা,মিনু খালা আর কুলসুমের শুনানি আছে৷ ওদের এতোদিন পর দেখে কিছুটা অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে৷ মিনু খালার চেহারা একদম ভেঙে গেছে৷ আমি মনে মনে হাসলাম৷ বেচারি কোথাও সুখ কর‍তে পারলো না৷
তবে আব্বাকে দেখার জন্য মন ছুটে যাচ্ছে৷ নিজেকে সংযত করে চেয়ারে বসে রইলাম৷ একে একে সবাইকে ডাকা হলো সাক্ষীর জন্য৷ আমাকে দেখেই মিনু খালা মলিন হাসলো৷
আদালতের সময় শেষ হলো তবে আজকেও কোনো রায় হলো না৷ আমরা কিছুটা হতাশ হলাম৷ মিনু খালা যাবার আগে আমাদের শুধু বললো,

‘তোমরা নিজের অসুস্থ বাপকে ধরায় দিয়া কাজ ভালো করো নাই৷’

উনার কথা শুনে আমি একদলা থুতু ফেললাম উনার পায়ের সামনে৷ আশেপাশের সবাই কিছুটা বিরক্ত হলেও আমি বললাম,

‘সব নষ্টের মূল তো আপনার মতো রঙ পাল্টানো নারীরা৷ যারা নিজের বোনের সংসার ভাঙতের পিছপা হয় না৷ আপনার উপর আল্লাহর গজব পরুক৷’

আমার কথা শুনে মিনু খালা কিছুটা ভড়কে গেলো৷ এরপর উনাদের নিয়ে যাওয়া হলো৷ আজকে আমরা দু ভাইবোন শূন্য হাতে একরাশ একাকীত্ব নিয়ে নিজেরাই নিজের সামাল দিচ্ছি৷

চলবে…