গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :- ৩
🥀 কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য 🥀
তোমার হবু বড় জানে that you are already lost your virgi*nity to me??”
ইভানের একটা কথায় গোটা বিয়েবাড়িতে যেনো বজ্রপাত ঘটে।
একদিন আগে,
“ম্যাডাম বিউটিফুলকে কি বিরক্ত করলাম??”এক ভারী পুরুষালী কণ্ঠে চমকে পিছন ফিরে তাকায় মুগ্ধ।
“আরে না ভাইয়া এসো।কোনো দরকার ছিলো??”
” যার সাথে কিছুক্ষণ পর আমার হলুদের অনুষ্ঠানও কালকে বিয়ে,তার সাথে বুঝি আমি কারণ ছাড়া কথা থাকতে পারেনা??”রুমের ভিতরে চেয়ারে এসে বসে তূর্য।
মুগ্ধতা চুলের খোঁপা করতে করতে বলে,”আমি সেরকম কিছুই বলতে চাইনি ভাইয়া…..”
মুগ্ধর হাঁটু অব্দি লম্বা ঘন চুলের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে তুর্য। এইমুহুর্তে নিশ্বাস নেওয়াও যেনো তার কাছে দুষ্কর হয়ে গেছে।
“চুলটা খুলে রাখো না প্লীজ মুগ্ধ,তোমার এই খোলা চুল আমার বড্ড প্রিয়।”
চুল বাঁধতে গিয়েও হাত নেমে আসে মুগ্ধতার।এই সামনে বসা মানুষটা তাকে নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালবাসে।আর যদি তার জন্যই এই মানুষটার যদি প্রাণ যায়,তাহলে কি করে নিজেকে ক্ষমা করবে সে?? ফুফুমণিকে কি উওর দেবে?? ইভান চৌধুরীর কি তুর্য ভাইয়াকেও মারতে হাত কাঁপবে না??
।
।
।
।
তালুকদার বাড়ির ছাদেই তুর্য ও মুগ্ধতার হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। বলতে গেলে গোটা গ্রামই আজ নিমন্ত্রীত।
” পারভিন আপার আদিখ্যেতা দেখলে গা জ্বলে যায়।বাপেতে কোনোদিনও বিয়ের পর মুখ দেখলো না সেই বাপেরি ঘরের নাতনিকে কিনা ঘরের বউ করছে”মুখ ঝামটা মারে সুরাইয়া বেগম।
“আহ্ বোন আবার শুরু করলি তুই? মুগ্ধতার ওপর অতো জ্বলা কেনো তুই বলতো??আব্বাজানের কানে এইসব কথা গেলে না আর দেখতে হবে না। তোর দুলাভাইও আমার অবস্থা খারাপ করে দেবে।”
“আপা তুমি দুলাভাইকে এতো ভয় পাও কেনো বলোতো??আজ বিশ বছর বিয়ে হয়ে গেলো এখনো একটু হাতে আনতে পারলে না??”
“সবাই তো আর আমার ছোটো দেওরের মতো হয়না বোন,যে বৌয়ের কথায় উঠবে আর বসবে।”
“আম্মা আব্বা এসে তোমায় কখন থেকে খুঁজছে একবার গিয়ে দেখা করে এসো….”
” আমার ইচ্ছা নেই।গেলেই আবার বড়ো ভাবীদের নিয়ে সমালোচনা শুরু করবে।তুই যা তাহলেই হবে।” সেখান থেকে প্রস্থান করে সুমাইয়া বেগম।
“আপাই তোমাকে এই হলুদ লহেঙ্গাতে যা লাগছে না দেখতে!!!!! সিনেমার হিরোইনদেরও বলে বলে হারাবে😁😁”
“মার খাবি বোনু”
” ওকে বকে কি হবে মুগ্ধ? মেহু তো আর ভুল কিছু বলেনি। আজ তোমার রূপ দেখে তো আকাশের চাঁদটাও লজ্জা পেয়েছে, দেখছোনা মেঘের আড়ালে কিরকম লুকিয়ে রয়েছে বেরোচ্ছে না কিছুতেই।”
হবু দুলাভাইয়ের কথা শুনে মেহেক, আদিল ও আহিল হেঁসে কুটিপাটি হচ্ছে।
“মেহু”
পুরুষালী কণ্ঠের চিৎকারে চমকে পাশে তাকায় ওরা সবাই। দেখে এক বছর আঠাশের যুবক দাঁড়িয়ে আছে। কাঁধ অব্দি লম্বা চুল, ফর্সা মুখে কালো ফ্রেমে চশমা,হলুদ রঙের পাঞ্জাবিটা যেনো এঁটে বসে আছে তার পেটানো শরীরে।
“এতো জোড়ে হাসছিস যে বড়ো?? তোকে না মানা করেছি জোড়ে হাসবি না।”
“সরি আরফিন ভাইয়া”
“তোর সরি নিজের কাছে রাখ। রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আয়।”
“চেঞ্জ?? এতো সুন্দর একটা লেহেঙ্গা পরে আছি আর তুমি বলছো চেঞ্জ করতে। দেখো ভাইয়া আমি পারবো না।”
“নিজের গাল সবার সামনে লাল করাতে না চাইলে,লেহেঙ্গা পাল্টে আয়। দ্বিতীয় বার যে আমি রিপিট করবো না তুই জানিস।”
“আমাকেই বলছো তুমি, আপাইও তো লহেঙ্গা পড়ে আছে ওকে তো কিছু বললে না??”
” ওকে আমার কিছু বলা মানে ওর শাস্তির পরিমাণ আরো বাড়ানো।…….. তুই গেলি পাল্টাতে??”। আরফিনের ধমকে রাগে গজগজ করতে করতে মেহেক নিচে রুমে চলে যায়।
“তোর সাথে কিছু কথা আছে তুর্য।একটু সাইডে আয়।” তুর্য আরফিন সাথে ছাদের একপ্রান্তে যায়।
“কিছু বলবি ব্রো??”
” বিয়েটা কেনো করছিস তূর্য?? তোর তো সত্যিটা অজানা নয়। তোর এই আবেগীপনার জন্য আমার বোনটাকে কি কি ফেস করতে হবে তোর ধারণা আছে??”
” আমি মুগ্ধ কে ভালবাসি সেটা তো তোরও অজানা নয় তূর্য। নিজের ভালোবাসাকে বিয়ে করতে বাঁধা কোথায়?? আমার ভালবাসায় বাধা দিলে তোর ভালোবাসকে আমিও কেড়ে নেবো ব্রো।so আমার আর মুগ্ধর বিয়েতে বাধা দিসনা।”
“তোর মনে হয় এই বিয়েটা হবে??” চলে যেতে গিয়েও থমকে পিছন ফেরে তুর্য।
” পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তি নাই যে আমার থেকে আমার মুগ্ধ কে আলাদা করে।”
।
।
।
হলুদের অনুষ্ঠান শেষে নিজের রুমে যাই মুগ্ধতা। স্নান করার জন্য shower চালাতেই বাঁদিকের পেটটা খুব জ্বালাপোড়া করতে শুরু করে তার।কি হলো হঠাৎ বুঝতে না পেরে বাইরে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। পেটের দিকে তাকাতেই ভয়ে চমকে ওঠে মুগ্ধ। কে যেন ব্লে*ডে করে হাল্কা করে চিরে ইংরেজির ‘I’ লিখে দিয়েছে সেখানে।
“এটা কখন হলো? বুঝতে পারলাম না তো।…. আই লেখা আছে কে…কেনো?….. তাহলে উ….উনি চলে এসেছেন??”
“আপাই ওই আপাই দরজা খোলো।বড়ো আম্মু তোমার জন্য জলের জগ পাঠিয়েছে।” মেহুর দাকে হুশ ফিরে পেতেই, তড়িঘড়ি করে দরজা খোলে মুগ্ধ।
“দে। তুই এখনো ঘুমাসনি??”
“বিয়ের আনন্দে তো ঘুমই আসছে না।তাই ভাবলাম গল্প করি…”
“আজ শুয়ে পর আমি বড্ড ক্লান্ত আমার ঘুম পাচ্ছে।”
_________________
নতুন সকাল প্রতিটা মানুষের জীবনে নতুন আশা নিয়ে আসে।আজকে সকালটাও তুর্যের জীবনে নতুন আশা নিয়ে এসেছে।নিজের ছোটবেলার ভালোবাসাকে নিজের করে পাওয়ার আশা,আর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তার মুগ্ধ তার হবে সেই আশা।
ক্রিম কালারের এক শারারা স্যুটে বধূ সাজে বসে আছে মুগ্ধ।চুল গুলো হালকা curl করে একদিকে নেওয়া।তুর্যকে নীল পাঞ্জাবীতে আজকে অসাধারণ সুন্দর দেখাচ্ছে।যেই আসছে তাদের দুটিকে দেখে বলে যাচ্ছে যে খুব সুন্দর মানিয়েছে।সবার মুখে হাঁসি থাকলেও হাসতে পারছে না মুগ্ধ।
বাড়ির সবাই মুগ্ধর কবুল বলার অপেক্ষা করছে। মুগ্ধ কিছুতেই আর বলতে পারছে না।এই মুহূর্তে তার নিজেকে একটা বোবা মনে হচ্ছে। অনেক সময় ধরে অনেক সাহস সঞ্চার করে যেই না সে কবুল বলতে যাবে হঠাৎ গোটা বিয়ের বাড়ির কারেন্ট চলে যায়।
“If You love me I also love you, If you hate me then I also love you ; but If you betray me I will destroy you 😈”
ভয়ঙ্কর পুরুষালী কণ্ঠে বাড়ি শুদ্দু সবাই দরজার দিকে তাকায়।এক ছয় ফিট দুই ইঞ্চির পুরুষ হাতে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার পিছনে দশ বারোজন তার বন্দুকধারী অনুগামী। আলো আঁধারির জন্য তার মুখটা ঠিক দৃশ্যমান নয়।সেই সাদা ব্লেজার স্যুট পরিহিত পুরুষটি ধীর পায়ে গিয়ে তার প্রাণপ্রেয়সীর সম্মুখে দাঁড়ায় সাথে সাথেই লাইট চলে আসে।
“Didn’t you miss me my Snowflake ❄️??”
ইভানের বলা প্রতিটা শব্দে কেঁপে ওঠে মুগ্ধতা।তার হার্টবিট একশো মিটার দূরে দাঁড়ানো মানুষও শুনতে পাবে।তাহলে শেষ রক্ষাটা আর হলো না?? সবাই কি সবটা জানতে পেরে যাবে??
#চলবে