তোমার নেশায় মুগ্ধ পর্ব-১৬+১৭

0
35

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :-১৬

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀

চারিদিকে আঁধারের মাঝে রকমারি আলোর খেলা। বিয়ের বাড়ীর সাজে সেজে উঠেছে চৌধুরী ম্যানসন। বাগানের উজ্জ্বল আলোকসজ্জায় ছাদের ক্ষীণ আলো অন্ধকারের মতোই হয়ে আছে।




” আমায় ছেড়ে দিন রেহান।আপনি তো আমাকে ভালবাসেন বলেছিলেন??….… তাহলে কেনো এমন করছেন??”
” তোমার গুণ আমাকে মুগ্ধ করেছিল মুগ্ধ। তোমার প্রেম প্রস্তাব দিলেও তুমি আমার কথা ভাবনি। আমাকে আমার ভালোবাসার কি প্রতিদান দিলে তুমি???…… ইভানকে ছাড়া তুমি কিচ্ছুই বোঝো না। কেনো আমি কি দেখতে খারাপ?? আজ তোমাকে আমার ভালোবাসা না গ্রহণ করার শাস্তি দেবো।”

মুগ্ধর গাউনের সামনের অংশ ছিঁড়ে ফেলার জন্য উদ্ধত হতেই পিছন থেকে একটা রড সোজা এসে রেহানের মাথা বরাবর আঘাত করে। মাথা ফেটে র*ক্ত বেরিয়ে আসে। মুগ্ধ কে ছেড়ে সরে আসে রেহান।

” আমার মুগ্ধের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস কি করে হয় তোর?? নিজের ব্যবহার করা জামাও অন্য কাউকে ছুঁতে দেয় না ইভান চৌধুরী, সেখানে তার আমানত কে ছোঁয়ার অধিকার তোর হয় কি করে??”

বলার সাথে সাথে আবার রডের আঘাত করে ইভান। এতোটাই উন্মত্তের মতো সে রেহান কে মারতে থাকে, যে রেহানের র*ক্ত মুগ্ধের গাউনের ওপরও ছিটকে পড়ে।

রিসেপশন পার্টি যখন জমে উঠেছে তখন হঠাৎ এক চিৎকারে চারিদিক থমথমে হয়ে যায়। বাড়ির পিছনে দিকে সবাই গিয়ে দেখে একজন পরে আছে মাথা ফেঁটে তার গল গল করে র*ক্ত বেরোচ্ছে। ডান হাত কেটে পাশে পরে আছে।হয়তো ছাদ থেকে পড়ে গেছে।কিন্তু কে সেটা কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না। হটাৎ বুশরা বেগম চিৎকার করে ওঠেন।

” ইভাআআআআআআআআন”

বুশরা বেগমের চিৎকারে সবাই তাঁর দিকে তাকায়।দেখে তিনি উপর দিকে তাকিয়ে আছেন। তার চোঁখ অনুসরণ করে সবাই ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখে ইভান ছাদের রেলিং ধরে ঝুলে আছে।

বাড়ির সবাই ও ইভানের লোকেরা দ্রুত ছাদে যায়। ইভানের হাত ধরে টেনে তাকে ছাদের উপরে তুলে নেয়। এতক্ষণ কাউরির নজর মুগ্ধের দিকে না গেলেও ছাদে উঠে আসার সাথে সাথে ইভানের চোঁখ তার প্রাণপ্রেয়সীকে খুঁজে চলেছে।

অনেক্ষণ ধরে খোজার পর দেখে ছাদের এক কোণে দেখা মেলে মুগ্ধের। স্তব্ধ হয়ে পা গুটিয়ে বোধশূন্য হয়ে স্থির চোঁখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ। ইভান দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে।(গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)

” মুগ্ধ ঠিক আছো তুমি?? মুগ্ধ কথা বলো বেইব।”

ইভান মুগ্ধের মুখ থেকে র*ক্তের ছিটা গুলো মুছে দেয়। হাতের আছিলায় মুগ্ধের মুখ তুলে ধরে। মুগ্ধ কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে পুরো ঘটনায় কতোটা শকড হয়ে আছে সে।

” আম… আমাকে বি…বিয়ে করবেন ইভান??”

মুগ্ধের উত্তরে মুগ্ধের কপালে গভীর চুম্বন করে ইভান।
________________

গোল্ডেন জরির কাজ করা লাল রঙের ব্রাইডাল ড্রেসে সজ্জিত হয়ে বসে আছে মুগ্ধ। একে একে তাকে স্বর্ণের গহনাই সাজিয়ে দিচ্ছে ইয়ানা ও ইনায়া। আলমারি থেকে লাল ওড়না বের করে মুগ্ধের মাথায় দিতে দিতে বুশরা বেগম বলে ওঠেন,” এই যে ওড়নাটা দেখছো, এটা আমি আমার বড়ো পুত্রবধূর জন্য বানিয়েছিলাম। গোটা ওড়নায় স্বর্ণের জড়ি দিয়ে ডিজাইন করা।ভেবেছিলাম আমার বড়ো ছেলে যখন বিয়ে করে আসবে তখন তাঁর বউকে এটা দেবো।…… কিন্তু আফসোস দুর্ভাগ্য বসত এটার আজ থেকে তুমিই মালিক।”

” তানহা আপুকে কেনো দেননি আন্টি?? তাকে দিয়ে দিলেই তো এত আফসোস করতে হতো না।”
” চেয়েছিলাম দিতে ইভান দিতে দেইনি। আজও তানহা কে দেখলে ভামার একটা কথা মনে হয়, ইভান কি দেখে ওকে রেখে তোমায় পছন্দ করেছিলো?”

বুশরা বেগমের কথায় চোঁখ ছল ছল করে ওঠে। সে বুঝতে পারে না, এবাড়ির লোকেদের তার বা তার পরিবারের ওপর এতো রাগ কিসের??




কাজী সাহেব মুগ্ধ কে কবুল বলতে বলেছেন বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল, মুগ্ধ এখনো চুপ করে বসে আছে।

ক্রিম কালারের স্যুটে ইভান চৌধুরী কে আজ দারুন হ্যান্ডসাম লাগছে। ফর্সা শরীরে হাল্কা রঙও যে এতো সুন্দর দেখায় তা হয়তো ইভানকে না দেখলে মুগ্ধ জানতো না।

” কি হলো মুগ্ধ?? কবুল বলো।”

ইভানের কথা কানে যেতে চোখ বুঁজে চোখের শেষ জল টুকু নিংড়ে ফেলে মুগ্ধ। মনে মনে আল্লাহ্ কে স্মরণ করে কবুল বলে ওঠে সে।

মুগ্ধের মুখে কবুল শুনে প্রশান্তির হাসি হাসে ইভান। তাকে জিজ্ঞেস করায় সেও ঝটপট কবুল বলে ফেলে।
____________

অয়েনমেন্ট নিয়ে গালে হাত ছোঁয়াতেই গালের ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো মেহু। আধো আধো চোঁখ খুলে পাশে বসা মানুষটির দিকে তাকায়। বাম গাল লাল হয়ে আছে মেহুর।

” ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছি, কয়েকদিনের মধ্যেই আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে। তোমার অহংকারী বাপ কালকে ওদের বাড়ী যাওয়ার জন্য বলছিলো আমি না করে দিয়েছি।” রাগ মিশ্রিত গলায় বলে ওঠে ঈশান।
” ওষুধ লাগাবেন তো ব্যাথা দেন কেনো??” ক্ষীণ স্বরে বলে মেহু।

মেহুর কথায় বিছানায় শায়িত নিজের স্ত্রীর দিকে তাকায় ঈশান। অজানা কারণে চোখের কোনাই জল আসে তার। দরজা লাগিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তৎক্ষণাৎ।
__________

ফুল সজ্জিত ঘরে বসে আছে মুগ্ধ। ইভান এখনো আসেনি। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে মুখ তুলে তাকায়। এক লাল শাড়ি পরিহিতা নারী মুগ্ধের পাশে এসে বসে।

” অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারি তুমি মুগ্ধতা। আজ নববধূ রূপে যেনো তোমার রূপ আরো ফেটে বেরোচ্ছে।”
” আপনি?? ঠিক চিনলাম না??” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে মুগ্ধ। জবাবে তাচ্ছিল্য হেঁসে উঠল সেই নারীটি।
” আমি কে বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়। শুধু এটুকু জেনে রাখো যে আমিও একদিন এই ঘরে এইভাবে তোমার মতই বসে ছিলাম।বাকি সব এক থাকলেও শুধু একটাই পার্থক্য ছিল ।আজ দরজা দিয়ে কিছুক্ষণ পর তোমার স্বামী আসবে, আর সেদিন এই দরজা দিয়েই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এসেছিলো।”

নারীটির উত্তরে ভেতর কেঁপে ওঠে মুগ্ধতার। এই নারীটিই যে তানহা তথা তার স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রী সেটা তার আর বুঝতে বাকি থাকে না।

” আমাকে কেনো এসব বলছেন??”
” কারণ আমি চাই না তুমিও আমার মত ভুল করে হেলায় হারাও ইভানকে। আজ বড্ড আফসোস হয় জানোতো মুগ্ধতা, সেদিন যদি আমি ইভানের কাছে ডিভোর্স না চাইতাম যদি সংসারটা টিকাতে চেস্টা করতাম তাহলে হয়তো বর্তমান চিত্র অন্যরকম হতো।”

কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে মুগ্ধ,” এতোই যখন আফসোস আপনার তাহলে ফিরে আস্তে পারতেন ওনার জীবনে……”
” কিন্তু তোমার উনি তো তোমায় দেখায় পর থেকে আর কাওরীর দিকে নজর দেননা।” চোখের জল মুছে উওর দেয় তানহা।




রুমে যাওয়ার পথে চিলে কোঠায় আলোর ছটা দেখে দাঁড়ায় ইভান। তৎক্ষণাৎ সেদিকে পা বাড়ায়। দেখতে পায় চিলেকোঠার চিত ঘরের দরজা লাগিয়ে বেড়িয়ে আসছে ঈশান।

” তুই এখানে কি করছিলি এতো রাতে??”

ইভানের কথায় চমকে পিছন ফিরে ঈশান।

” ওহ্ ভাইয়া তুমি। জানো তো কেনো এসেছিলাম।”
” আর তুই জানিস না আমাদের এখন এই ঘরে আসাটা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে??? মুগ্ধ বা মেহেক দেখে নিলে কি হবে ভেবেছিস??”
” এসব ঝামেলা কবে শেষ হবে ভাইয়া?? কবে আ…”
” চুপ। এই ব্যাপারে এখানে কথা বলা সেফ নয়। দেওয়ালেরও কান আছে ভুলে যাস না।অতীত ভুলে যাস না ঈশান। তোকে বিদেশ থেকে ডেকে নিয়ে আসার কারণ ভুলে যাস না।”
” মাঝে মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসে জানোতো।”
” মেহেকের সাথে তুই আজ যেটা করেছিস সেটা ঠিক না ঈশান”
” এটা তুমি বলছো ভাইয়া?? ভাবীর খাবারে পিন মেশানো, পেটে ব্লেড চালিয়ে আই লেখা, ভাবীর চুল কেটে ফেলা এগুলো তো সব তুমিই করিয়েছো।”
” মুগ্ধের প্রতি আমার একটা আবেগ আছে ঈশান। আমি জানি না সেটা কে কি বলে, তবে এটা জানি ওকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ, নিঃস্ব।……… তোর মেহেককে নিয়েও কি সে অনুভুতি আছে ঈশান?? তোদের বিয়েতে তো কোনো আবেগ নেই তাইনা??”
” হ্যাঁ ভাইয়া আবেগ নাই। আমি মেহেককে ভালোবাসি না। ইভেন ও আমাকে ভালবাসে না। তবুও ওকে সারাজীবন আমার সাথেই থাকতে হবে। কোনো মুক্তি নেই ওর। এটাই হবে ওর শাস্তি ওর পাপের ফল।”

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :-১৭

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀

” কিন্তু তোমার উনি তো তোমায় দেখায় পর থেকে আর কাওরীর দিকে নজর দেননা।” চোখের জল মুছে উওর দেয় তানহা।

বাসর রাতে স্বামীর প্রাক্তনের মুখে এরূপ কথা শুনতে হলে কোনো মেয়ের মনের কি অবস্থা হয় তা হয়তো শুধু মাত্র একটা মেয়েই বুঝতে পারবে।

” আমাকে এই সব কেনো বলছেন আপনি??” অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে উওর দেয় মুগ্ধ।
” কারণ আমি চাইনা কেও দ্বিতীয় তানহা হোক। হেলায় সব হারাক।নইলে একদিন দেখা যাবে আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।”

কথা বলতে বলতে হঠাৎ তানহা মুগ্ধের হাত চেপে ধরে।

” আরেকটা অনুরোধ করবো বোন??”
” ব…বলুন।” কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দেয় মুগ্ধ।
” ইভান ছেলে খুব ভালো। তোমার সাথে যা করেছে আমি মানছি ভুল করেছে। ওর মনেও বড্ড ব্যথা আছে। পারলে ওকে ক্ষমা করে কাছে টেনে নিও।”

” তুই এখানে কি করছিস তানহা??”
আচমকা আওয়াজে দরজার দিকে তাকায় মুগ্ধ ও তানহা।

” ওহ্ ইভান। আরে তোর বউকে বলছিলাম যে তুই কতোটা ভালো ও তোর যেনো কেয়ার করে।”
” সেটা তোকে বলতে হবে না, আমার মুগ্ধ জানে আমি কতটা ভালো।”

ইভানের কথার দিকে ধ্যান নেই তানহার। সে ব্যস্ত তার সামনে দণ্ডায়মান ছ ফুট লম্বা চওড়া ফর্সা পুরুষটির দিকে পর্যবেক্ষণ করতে।

ইসস!!! আগে কেনো এইভাবে দেখা হয়নি? কি খুঁজে পেয়েছিলো ওই ঠগবাজ তুহিনের মধ্যে?? কলেজ লাইফে কেনো ইভানের দিকে মন আসেনি?? নিজের বাচ্চা হওয়ার পর যখন চাকরি পায়, তখন ইভান কে কেনো ছেড়ে দিলো সে?? বুশরা বেগম, ইয়ানা ও ইনায়া সবাই এতো করে বুঝিয়ে ছিলো তখন কেনো একবারও নিজের সংসার টেকানোর চেষ্টা করলো না?? কেনো তখন ভালবাসলো না ইভান কে?? কোনো জিনিস হারিয়ে ফেললে কেনো তার মূল্য বোঝা যায়??

” কি রে কোথায় হারালি?? তোকে ইয়ানা ডাকছে”

ইভানের কথায় ধ্যান ফেরে তানহার। সৌজন্য হেসে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় সে। শুধু যাওয়ার আগে আরেকবার ফিরে তাকায় পিছনে তার হয়েও কখনো না হওয়া মানুষটা ও তার প্রেয়সীর দিকে।
___________

” কখন থেকে কাঁদছিস ইয়ানা?? কেনো কাঁদছিস এতো??”
” রেহান ভাইয়ার সাথে বিগ ব্রো কেনো এমন করলো ছোটো আপু??”

” আমাকে ডাকছিলে ইয়ানা??”
তানহার ডাকে ইয়ানা ও ইনায়া তাকায় সেদিকে।
” আরে তানহা আপু এসো, দেখো ইয়ানা কেমন কেঁদেই যাচ্ছে??”
” কেনো কাঁদছো ইয়ানা??” তানহা জিজ্ঞেস করে।
” যে মানুষটা ওকে ভালোইবাসেনি কখনও, তার জন্য এতো কাঁদার কি আছে??”
” সেটা তুমি বুঝবে না ইনায়া। ভালোবাসা একতরফা হলে যে আরও বেশী বেদনা দায়ক হয়। তখন যে একটা কেমন আছো না বলাতেও মনে হয় যে আমি মরে যায় না কেনো??” তাচ্ছিল্য হেঁসে উওর দেয় তানহা।

ইনায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,” তুমি এখনো বিগ ব্রো কে ভালোবাসো তানহা আপু??”
” না বেশে থাকা যায়?? ইভানের মতো কথা বলার ধরন,ওর চাল চলন ওর সব কিছুই এতো এত পারফেক্ট যে যে কেও ওর প্রেমে পড়তে বাধ্য। আমি তো কোন ছাড়।”
” কেনো সেদিন এবাড়ি ছেড়ে গেলে?? বিগ ব্রো তো তোমায় বলে ছিলো থেকে যাওয়ার জন্য।”
” মতিভ্রম বোঝো মতিভ্রম?? আমার হয়েছিলো সেদিন।…… সেসব কথা ছাড়ো। ইয়ানা নিজেকে সামলাও বোন। রেহান কোনো ভালো ছেলে নয়।তোমার চোখের জলের কারন হওয়ার যোগ্য নয় সে।”
” ভালোবাসো নিয়ে আমার আর বড়ো আপুর কপালটা একইরকম বলো তানহা আপু?? দুজনেই মন প্রাণ দিয়ে যাকে ভালবাসলাম সেই মানুষটাই আমাদের ফিরতি ভালবাসলো না। কেনো বাসলো না?? কারণ তারা তালুকদার বাড়ির মেয়েদের প্রেমে মত্ত………”

” ইয়ানা!!!!!!” তানহা ও ইনায়া একসাথে চিৎকার করে ওঠে।

” এসব বোলো না ইয়ানা। তুমি জানোতো বাড়ির কেও শুনলে কি হবে?? তানহা বলে।
” হ্যাঁ রে ইয়ানা তুই কি ক্ষেপে গেলি?? কি সব বলছিস জানিস তো এইসব বলা যায়না এখন বাড়িতে।”
” কেনো বলা যাবে না ছোট আপু?? বড়ো আপুকে নিয়ে কেনো কিছু আমরা বলতে পারবো না?? ওই মেহেককে দেখলে না আমার মনে হয় বড়ো আপুর মতো ওকেও……”( গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)

” নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করতে শেখ ইয়ানা। ভুলে যাস না। যাকে নিয়ে বলছিস স বর্তমানে তোর ভাবী হয়।” ঈশানের কথায় সবাই অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকায়।
” এই কথা তুই বলেছিস ভাইয়া?? কি ব্যাপার বউয়ের প্রতি বুঝি পীড়িত উথলে উঠেছে??” ইয়ানা বলে।
” সে তোর ভাবী হয়………”
” এ রাখ তো তোর ভাবী।কিসের ভাবী?? কার ভাবী?? ওর মতো মেয়ে কে আমি ভাবী মানি না। তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস যে তুই কেনো ওই মেয়েকে বিয়ে করেছিস। ভুলে গেছিস বড়ো আপুর কথা।”
” ইয়ানা!!!!!!”
______________

গোটা রুম আজ মোমবাতির আলোয় আলোকিত। সুগন্ধি ফুল ব্যস্ত নিজের সুগন্ধ ছড়াতে। এইরূপ মোহনীয় পরিবেশে বসে আছে এক নববিবাহিতা নারী। মুখ তার স্বর্ন ওড়নায় ঢাকা। বুকের মধ্যে এক আকাশ অভিমান ও শরীর জুড়ে তার একরাশ শিহরণ।

ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে স্ত্রীর সামনে খাটের নিচে হাঁটু গেঁড়ে বসে সে। শীতল হাতে স্পর্শ করে মুগ্ধের ডান পা খানি। কেঁপে উঠে মুগ্ধ ইভানের বৈধ স্পর্শে। বুকের ঢিপঢিপানি দুই হাত দূরে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটিও হয়তো শুনতে পাবে।

মুগ্ধের পা নিজের থাইয়ের উপর নেয় ইভান। পকেট থেকে বের করে একজোড়া পায়ের তোড়া। রিনিঝিনি আওয়াজে মুখ তুলে চায় মুগ্ধ। দেখে সামনে বসা বিভীষিকাময় পুরুষটি সাদরে তার দুই পায়ে তোড়া পড়িয়ে দিছে। কাজ শেষে স্ত্রীর পায়ে অধর ছোঁয়ায় ইভান। গভীর চুম্বন এঁকে দেয় তার প্রাণপ্রেয়সীর পা দুখানিতে।

ইভানের এহেন কার্যে চোঁখ খিচে বন্ধ করে মুগ্ধ। খামচে ধরে বিছানার চাদর। অভিমান যেন অশ্রুর দুফোঁটা হয়ে বেরিয়ে আসে।

ও সুন্দরী ললনা!
রূপে তুমি অনন্যা,
চিত্রশিল্পীর প্রেরণা!
বন্ধুরূপে অদ্বিতীয়া!
তোমার সৌন্দর্যের
রহস্য বলনা!
বহুগুণে তুমি গুণান্বিতা
তবুও তুমি
অহংকারী না!
তোমার চোখে নেই
কোনো ছলনা!
আমায় সাথে
নিয়ে চলনা!
দুঃখ বেদনা
ভুলে যাওনা
ভালোবাসা নাওনা!
দূরে সরে যেওনা!
কাছে ডেকে নাওনা!
সুন্দর সময় কাটাও না!
আনন্দ উৎসবে মাতোনা!
কিছু সুখসৃতি রাখনা!
ক্ষণস্থায়ী মুহূর্ত
মধুর হোক না!
জীবনটা চিরস্থায়ী না!

কবিতার ছন্দে ছন্দে ধীরে ধীরে মুগ্ধের ঘোমটা তোলে ইভান। হালকা করে চিবুক ধরে তুলে ধরে মুগ্ধের মুখখানি। অধর ছোঁয়ায় নিজের স্ত্রীর কাঁপতে থাকা আঁখি পল্লবে। পেটের মধ্যে অদ্ভুত কম্পন খেলে যায় মুগ্ধের। মুগ্ধের ঠোঁটের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকে ইভান। ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতেই শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায় মুগ্ধতার। কই আগে যখন ইভান তাকে স্পর্শ করেছে তখন তো তার এরকম অনুভূত হয়নি।

ভালো করে অধর সুধা পানে যেনো মুগ্ধের নাকের নথ খানি বড্ড বাঁধ সাঁধলো। বিরক্ত “চ” শব্দ করে ওঠে ইভান। দাঁতে করেই খুলে ফেলে স্ত্রীর স্বর্ণের নথ খানি, ক্ষিপ্ত ভাবে আঁকড়ে ধরে তার অধরজোড়া। টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় মুগ্ধ কে। ঠোঁট ছেড়ে গলায় মুখ ডোবাতেই দ্বিতীয় বার কেঁপে ওঠে মুগ্ধ। খামচে ধরে ইভানের পিঠ। তার ভারী নিশ্বাস আছড়ে পড়তে থাকে ইভানের কাঁধে।

” খুব উত্তেজিত হয়ে গেছো মনে হচ্ছে Snowflake ❄️?? আমার নেশায় মেতে উঠতে চাইছো নাকি??” গলাতে মুখ গুঁজেই বলে ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে ওঠে ইভান।

উত্তরে ইভানের বুকে আরো সিটিয়ে যায় মুগ্ধ। ধীরে ধীরে পরম আবেশে মুগ্ধ কে ভালোবাসার পরশে ভরিয়ে দিতে থাকে ইভান। ধীরে ধীরে দুটি মন একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতে থাকে ও দুটি শরীর একে অপরের মধ্যে হারিয়ে যেতে থাকে। এক পূর্ণিমার উজ্জ্বল চাঁদ সাক্ষী হয়ে তাকে তাদের মিলনের।
________________

সকালে প্রথম সূর্যালো সবার জন্য সুন্দরতা নিয়ে আসেনা। তেমন আজ আরফিনের জন্য নিয়ে এসেছে একরাশ বিস্ময়।

” তোমাকে এবাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে হবে আরফিন। তোমার বেয়াদপির কোনো ক্ষমা হয় না”

দাদাজানের বলা কথায় চমকে তাকায় আরফিন। বড়ো নাতি হিসাবে সবসময় দাদা দাদীর অতীব প্রিয় হয়ে থেকেছে সে। একবারের বেশি দুবার কখনো তাকে কোনো কিছু চাইতে হয়নি, তার আগেই সেই জিনিস সামনে হাজির করেছেন ইয়াজউদ্দিন তালুকদার। আজ সেই দাদাজানের মুখেই বাড়ি ছাড়ার কথা শুনে, চোখের কোনে জল জমে ওঠে আরফিনের।

” আব্বাজান মেয়েটাকে তো এবাড়ি থেকে ত্যাগ করেছেন, অন্তত ছেলেটাকে আর আমাদের থেকে দূর করেন না।” অনুরোধ করেন হামিদুল সাহেব।
” বড়ো ভাইজান আমি তো তোমার সাহস দেখে মূর্ছা যাচ্ছি। তুমি কিনা আব্বাজানরে হুকুম করছো। এনামুল সাহেব বলেন।
” আমি আব্বাজানকে অনুরোধ করছি এনামুল। তুই আমার আমার আর আব্বাজানের মধ্যে কথা বলবি না।”
” কেনো বলবো না?? তোমার ছেলে কালকে আমার মেয়ের রিসেপশনে যে তামাশাটা করলো তার জন্য তো এই তালুকদার বাড়ির সন্মান গেলো। কে বলেছে ওকে আমার মেয়ের সাথে গিয়ে কথা বলতে?? কেনো চড় মেরেছে সে আমার মেয়েকে??”

” সেটা আপনি বুঝলে তো আপনি ভালো বাবা হয়ে উঠতেন মেজো চাচা। আপনার যে নিজের মেয়ের মন বোঝারও ক্ষমতা নেই। আপনি যে বাবা হিসাবে ব্যার্থ টা কি আপনি জানেন??” আর চুপ করে থাকতে না পেরে বলে ওঠে আরফিন।
” তুই আমাকে শেখাবি বাবা কি ভাবে হতে হয়??” তেড়ে এগিয়ে আসেন এনামুল সাহেব।

” এনামুল!!!!”
দাদাজানের হুঙ্কারে যে যার জায়গায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
” বলো আরফিন কেনো মেরেছ মেহেককে? কি হলো বলো?”
” কারণ সে মরার কথা বলেছিল। মেহু বলেছিল যদি নিজেকে শেষ করা যদি পাপ না হতো না আজ তোমরা আমার রিসেপশনে নয় হাসপাতালে আমার মরদেহ দেখতে আসতে।”

আরফিনের কথায় চমকে সামনে তাকায় সুমাইয়া বেগম। মেহেক কি সত্যিই এসব বলেছে?? তাহলে তার মেয়েটা সুখে নেই?? তাহলে বড়ো ভাবীর বলা কথা ফলে গেলো?? অজানা ভয়ে বুক ভারি হয়ে আসে সুমাইয়া বেগমের।

” আমার মেয়ের নানে কলঙ্ক লাগাবি না আরফিন। ঈশান যথেষ্ট ভালো একটা ছেলে।”
” কিন্তু তোমার মেয়ে তো তাকে ভালো বাসে না মেজো চাচা।”
” আব্বাজান আপনার বড়ো নাতিকে আমার চোখের সামনে থেকে যেতে বলুন।নইলে আমি বড়ো কিছু অঘটন করে ফেলবো।”
” চলেই যাচ্ছি দাদাজান আপনাকে কিছু বলতে হবে না। এই বাড়ীতে থাকাও পাপ।”
_____________

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আজ ইভানের চোঁখ তৃপ্ত হয়ে ওঠে। হলুদ ও লালে শাড়িতে ভেজা চুল ঝাড়তে ব্যস্ত তার স্ত্রীকে কোনো পরীর থেকে কম সুন্দর লাগছে না তার চোঁখে। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে সে মুগ্ধ কে দেখছে।

” উঠেছেন?? আপনাকে আপনার মা ডাকছিলো। একবার গিয়ে কথা বলবেন।……… আর আপনার চা টা নিন। কি হলো নিন।”

শেষের কথায় ধ্যান ফিরে পায় ইভান। হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নেই।

” সাবধানে খাবেন। কে বলতে পারে যদি বিষ থাকে ওর মধ্যে??”

মুগ্ধের কথায় ভুরু কুঁচকে আসে ইভানের।এক আকাশ সম বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে,” যে অলরেডি মরে গেছে তাকে আর কে মারবে মুগ্ধ?? তোমার রুপে,তোমার গুণে,তোমার আদরে, তোমার ঘৃণায় আমি হাজার বার মরেছি। তবুও হাজার বার তোমার কাছেই ফিরে এসেছি। তুমি যে আমার নেশা। আর নেশা ছাড়া কি মানুষ বাঁচে Snowflake??”

ইভানের বলা একেকটা কথায় যেনো অবাক হওয়ার হাজারো কারণ পায় মুগ্ধ। এই লোকটা তাকে এতদিন আটকে রেখে তার ওপর অত্যাচার করেছে, তার অমতে তাকে স্পর্শ করেছে, তাকে কখনো ভালবাসি পর্যন্ত বলে না তবুও কেনো এই লোকটার কথায় সে অপরিসম মায়া খুঁজে পাই?? যেন এই মানুষটা তার একজন শুভাকাঙ্খী। কেনো মনে হয় তার ভালো হইতো এই মানুষটা ছাড়া কেউ চাইতে পারবে না?? তাহলে কি সে সত্যিই শেষমেশ সাইকো ইভান চৌধুরীর প্রেমে পড়লো??

( শব্দ সংখ্যা ১৬০১)

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা