তোমার নেশায় মুগ্ধ পর্ব-৩৪+৩৫

0
30

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা। #পর্ব :- ৩৪

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমণাদের জন্য🥀

কিছুক্ষণ আগে,

রিং রিং রিং রিং

“হ্যালো,আম্মু??”
“ফোন করেছিলি??”
” হ্যাঁ আম্মু, কি হলো গো ওই দিকে?? ঈশান মেহু কে নিয়ে ওই বাড়ি গিয়ে রেখে এলো কেনো??”
” তুই জানিস না??”
” না আম্মু। আমি খুব টেনশনে আছি, হঠাৎ কি হলো বলোতো??”
” বলছি শোন।”

অতীত,

তালুকদার বাড়ির ডাইনিং রুমে থমথমে পরিবেশ। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। নীরবতা বিরাজমান।

” তাহলে বড়ো ভাইজান অবশেষে সবকিছু শেষ করেই ছাড়লো আপনার ছেলে। এবার তাহলে চলেন বাটি হাতে রাস্তায় বসি।” নীরবতা ভেঙে মুখ খুলল এনামুল সাহেব।
“আহ্ এনামুল এই সময়েও তোমাদের ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া না করলেই নয়?? ঝগড়া না করে উপায় বের করো সমস্যা থেকে বেরোনোর।” দাদাজান বলেন।
” আর সমস্যা থেকে বেরোনোর উপায়!! সে উপায় জীবনেও পাবেন না আব্বাজান। এবার আমাদের পথে বসতে হবে।” এনামুল সাহেব বলেন।
” মেজো চাচা দাঁড়ান আমি একবার ইয়ানার ড্যাডের সাথে কথা বলে দেখছি কি করা যায়।” আরফিন বলে।
” ওই কু*ত্তার বাচ্চা ইশতিয়াক তোকে কি সাহায্য করবে রে?? ওই তো এসবের মুলে আছে। জিজ্ঞেস কর তোর বউ কে।”
” আপনি এরকম কি করে বলতে পারেন??”
” ওরে ছাগল এতো বছরে আমাদের দুনোম্বোরি ব্যবসা ধরা পড়লো না, আর তুই যে ব্যবসার কিছু কাগজ পত্র ওই ইশতিয়াক কে দিয়ে এলি আর আমাদের ব্যাবসা বন্ধ হয়ে গেল। এখনো তোর কিছু বুঝতে বাকি আছে??”

ওদের কথার মাঝে ঈশান মেহু কে টানতে টানতে বাড়ির মধ্যে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলে মেঝে তে। বাড়ির সবাই হতবম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। কি হলো কেও বুঝতে পারছে না। সুমাইয়া বেগম এসে মেয়ে কে ধরে তোলেন।

” কি হয়েছে বাবা তুমি হঠাৎ এই সময়ে মেহেক কে নিয়ে এখানে এলে??”
” আরে সবাই কে মিস্টি খাওয়াবেন না আঙ্কেল??”
” হ্যাঁ তাই তো তাই তো। সুমাইয়া যাও মিষ্টি মুখ করাও জামাইয়ের। কিন্তু জামাই হঠাৎ মিষ্টি মুখ কেনো??”
” আপনার মেয়ে মা হতে চলেছে। তার আনন্দে।”
” কি?? এতো খুবই ভালো খবর।”
” হ্যাঁ অবশ্যই ভালো খবর তো বটেই। আপনাদের বাড়ির মেয়ে আপনাদের বাড়ির ছেলের সন্তানের মা হতে চলেছে। এর থেকে বড়ো সুখবর আপনাদের জন্য আর কিই বা হতে পারে??”

ঈশানের কথায় তালুকদার বাড়ির সবাই অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেছে।

” মানে??? কি বলতে চাইছো তুমি ঈশান??” দাদাজান হুংকার ছাড়েন।
” আপনার মেজো ছেলের মেয়ে মেহেক আপনার বড়ো বড়ো ছেলের ছেলে আরফিনের বাচ্চার মা হতে চলেছে।”
” আমার মনে হয় তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে বাবা। আমার মেয়ে অমন নয় ” সুমাইয়া বেগম বলেন।

ঈশান সবাইকে মোবাইলে সেই ভিডিও টা দেখায়।

” এই ভিডিও মিথ্যে….”

ঠাসঠাস

” ছিঃ মেহেঁক ছিঃ। এতোটা নিচে তুই নামতে পারলি আমার মেয়ে হয়ে??” এনামুল সাহেব মেয়ের গালে কষিয়ে চর মারেন।
” মরতে পারিস না মুখপুরি। আজ তোর জন্য আমাদের মাথা কাটা গেলো। এতো কিসের চাহিদা তোর বর থাকতে পরপুরুষের কাছে যাস??” সুমাইয়া বেগম মেয়েকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে।
” আম্মু লাগছে আম্মু। আমি কিছু করিনি আম্মু। আমি ভুল করিনি। আমায় মেরোনা আমার লাগছে আম্মু।”

মারতে মারতে হঠাৎ হাতে বাঁধা পেয়ে পাশে তাকান সুমাইয়া বেগম।দেখেন নাজিয়া বেগম তার হাত ধরে আটকেছেন।

” কি করছিস সুমু?? মেয়েটাকে মেরে ফেলবি নাকি?? ভুলে যাচ্ছিস ও প্রেগনেন্ট??” নাজিয়া বেগম বলেন।
” তোমার ছেলের জন্যই তো আমার মেয়ের এই অবস্থা ভাবী। সবাইকে মিষ্টি মুখ করাও তুমি দাদি হতে চলেছো।”

ঠাস ঠাস

” ভাবীইইইই ”
” আর কতো নীচে নামবি রে তুই সুমু?? ছিঃ! লজ্জা লাগছে না নিজের মেয়ে কে এতোটা অবিশ্বাস করতে??”
” তাই বলে তুমি আমায় মারবে??”
” বেশ করেছি আবার মারবো। আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি, তোর মেয়ের প্রতি তোর কোনো বিশ্বাস নেই?? মেহেক আমাদের ওই রকম মেয়েই না যে কোনো রকম আকাম কুকাম করবে।”

” তাহলে কি ভিডিও টা মিথ্যা চাচী??” ঈশান চিৎকার করে ওঠে।
ঈশানের কথায় নাজিয়া বেগম এগিয়ে গিয়ে ঈশানের সামনে দাঁড়ায়।

” তুমি আমাদের বাড়ির জামাই হলেও কিছু কড়া কথা তোমাকে বলছি বাবা কিছু মনে করো না। প্রথম দিন দেখতে এসেই যখন তুমি মেহেক কে বিয়ে করতে চেয়েছিলে তখনই আমার মনে সন্দেহ জেগেছিলো। কিন্তু আমার কথা সুমুরা শোনেনি। তোমার সাথে যেদিন বিয়ে হয়েছে সেদিন থেকে আমাদের মেয়েটা হাসতে ভুলে গেছে। তোমার যে সংসার করার মন মানসিকতা নেই তা আমি আগেই বুঝেছিলাম। আমাদের মেয়ে কে তুমি সুখে রাখোনি………”

” আপনাদের মেয়ে কি সুখে থাকার যোগ্য চাচী?? অন্যের ক্ষতি করে কি কেও সুখে থাকতে পারে??”
” কার ক্ষতি করেছে ও??”
” আমার বড়ো আপুর। নিজের স্বার্থের জন্য আমার বড়ো আপুর জীবনটা নষ্ট করতে পিছু পা হয়নি আপনার ছেলে ও মেহেক।”

” বড়ো আপু??? আর ভাই কে তোমার বড়ো আপু?? আর আমাকেই বা কেন এসবের মাঝে টানছো??” আরফিন চিৎকার করে ওঠে।
” এতো তাড়াতাড়ি আমার বড়ো আপু কে ভুলে গেলেন আরফিন?? ঘুরে ফিরে ফুর্তি মেরে তাকে প্রেগনেন্ট করে ছেড়ে দিলে, আর এত তাড়াতাড়ি ভুলেও গেলেন??” ইয়ানা বলে ওঠে।

ইয়ানার মুখে এই ধরনের কথা শুনে বাড়ি শুদ্ধ মানুষ হতবাক।

” এসব কি বলছো তুমি ইয়ানা?? ফুর্তি – প্রেগনেন্ট?? কে??” আরফিন বলে।
” মনে পড়ে আপনার কলেজ লাইফের প্রেম ইশা কে?? আপনার সিনিয়র ছিলো?? সে আর কেও না আমার বড়ো আপু। অবশ্য তাছাড়াও তার আরেকটা পরিচয় আছে, সে হচ্ছে আপনার ফুফুর মেয়ে। মনে বিগ ব্রোর আপন বোন।”…………………………

তারপর একে একে সব ঘটনা নাজিয়া বেগম মেয়ে কে খুলে বলেন।সব শুনে যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে মুগ্ধ।

” ওই ছেলে কে আমি পেটে ধরেছি ভাবতেও আমার ঘেন্না লাগছে।”
” ওর পাপের ফল তো ও পাবেই আম্মু, কিন্তু আমার খারাপ লাগছে মেহুর জন্য। ও তো তখন ছোটো ছিলো, ওই বয়সে করা একটা ভুলের জন্য ওকে এতো বড় শাস্তি পেতে হবে?? ও তো বলেছিলো প্রেম করতে, ইউজ করে ছেড়ে দিতে তো ও বলেনি।”
” বলছি রে মা একবার ইভান বাবার সাথে কথা বলবি,যাতে ওদের ক্ষম……”
” মেহুর জন্য আমি কথা বলব আম্মু, কিন্তু ওই জানোয়ারটার জন্য আমায় বলতে বলো না। তবে শুধু এটুকু বলবো, ইভান কিন্তু এতো সহজে ওকে ছেড়ে দেবেন না। রাখছি।”



বর্তমান,

আজ চৌধুরী ম্যানসনে বিশাল আনন্দ উৎসব। বাড়ির বড়ো মেয়ে এতো বছর পর নিজের পায়ে বাড়ি ফিরছে, এর থেকে বড় খুশির খবর আর কিই বা হতে পারে।

দরজা দিয়ে সাদা জামা পরিহিতা মেয়েটিকে দেখে পুরোনো স্মৃতি গুলো যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠল মুগ্ধের।নিজের অজান্তেই চোখের কোণায় জল জমে ওঠে তার।

এতো সুন্দর দেখতে মেয়েটির কি অবস্থা হয়েছে আগুনে পুড়ে। এই সব কিছুর পিছনে যে তার আপন বড়ো ভাই দায়ী ভাবতেই মরে যেতে ইচ্ছা করছে মুগ্ধের।কি করে সামনে গিয়ে দাঁড়াবে সে ইশা আপুর?? ইভান কি তাহলে এই জন্যেই তার সাথে অতো খারাপ কাজ গুলো করেছিলো?? তাহলে ইভান কি তাকে সত্যি করে ভালবাসে না??

” কি ভাবছো মুগ্ধ??”

ইভানের দাকে ধ্যান ফেরে মুগ্ধতার। চোখের জল আড়ালে মুছে সামনে তাকায় সে।

” ইশা এই হলো তোর ভাবী মুগ্ধতা।”
” আচ্ছা ওকে আমার এতো চেনা চেনা লাগছে কেনো??”ইশা বলে।
” কারণ ও হলো আরফিন তালুকদারের আপন বোন।” বুশরা বেগম বলেন।
” মুগ্ধ?? সেই ছোট্ট মুগ্ধ?? কেমন আছিস তুই?? আর নির্মল কেমন আছে রে??”

মুগ্ধ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি উওর দেবে সে?? তখন রাগের বসে ইশা আপু কে দোষী বললেও এখন ইশার এই অবস্থা দেখে সে খুব ভালই বুঝতে পেরেছে যে ইশার কোনো দোষই ছিলো না নির্মল ভাইয়ার মৃত্যুর ব্যাপারে। কি করে বলবে সে এখন ইশা আপু কে যে নির্মল ভাইয়া এখন আর বেঁচে নেই?? তার জন্য সে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। কি করে সহ্য করবে ইশা আপু এতো বড়ো সত্যিটা??

” মাম্মা মাম্মা”

হঠাৎ ইসহাক ছুট্টে এসে ইশা কে জড়িয়ে ধরে। ইশাও পরম আবেশে বুকে জড়িয়ে ধরে তাকে। এই ঘটনা যেনো মাথায় বাজ পড়ে মুগ্ধের। মাম্মা মানে?? তাহলে কি ইসহাক আরফিন ভাইয়ার সন্তান??

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা। #পর্ব :-৩৫

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমণাদের জন্য🥀

তুই কি সত্যিই প্রেগনেন্ট মেহু??”

অনাকাঙ্ক্ষিত কথায় পিছন ফিরে তাকায় মেহু। জানালার পাল্লায় মাথা রেখে নীরবে অশ্রুপাত করছিলো সে। অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির বিরক্তিকর প্রশ্নে যেনো তার সেই কার্যে ব্যাঘাত ঘটে। চোঁখ মুখ কুঁচকে বলে ওঠে,

” তুমি এখানে কি করছো আরফিন ভাইয়া?? আর এটাই বা কি ধরনের প্রশ্ন??”
” যা মনে তুই কি??….”
” আমি সত্যিই প্রেগনেন্ট, আমার আমার পেটে ঈশানের বাচ্চা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে।”
” আম সরি,আজ আমার জন্যই তোর……”
“একবারে ফালতু নাটক করবে না আরফিন ভাইয়া, এতোই যদি গিল্টি ফিল করতো তাহলে তখন নীচে সবার সামনে একবার হলেও বলতে যে আমি মেহুর কথা শুনে ইশা কে ফাঁসাইনি,আমার নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করার জন্য আমি তাকে ঠকিয়েছি। কেনো বললে না??? বলো কেনো বললে না তুমি?? কেনো আমার সংসারটা ভেঙে যাচ্ছে তোমার জন্য বলতে পারো?? কেনো তুমি সবার সামনে বললে না যে মেহু পরে আবার আমাকে মানা করেছিলো প্রেমের নাটক করতে?? বলো কেনো বললে না??”
” শান্ত হ মেহু, আমি তোর অবস্থাটা বুঝতে পারছি………”
” কিচ্ছু বুঝতে পারছো না তুমি। কিচ্ছু না। আব্বু বলেছে কাল সকালের মধ্যে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে, আমি কোথায় যাবো বলতে পারো??”

মেহু মেঝেতে বসে হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে। নিজের মেহুপরীর এই অবস্থা দেখে আরফিনের বুকের ভেতরটা কেমন চিনচিন করে ওঠে। আজ এই দুই বোনের এই অবস্থার জন্য তো সেই দ্বায়ী। নাহ একবার তাকে ইভানের সাথে কথা বলতে হবে।যাতে করে সে ঈশান কে বোঝায় মেহুর কোনো দোষ নেই।
________________

” নির্মল কেমন আছে রে??”

উত্তরের অপেক্ষায় চেয়ে আছে ইশা। অনেক্ষণ ধরে কোনো উওর না পেয়ে আবার শুধায় সে,

” কি রে মুগ্ধ কখন থেকে জিজ্ঞেস করছি, তোর নির্মল ভাইয়া কেমন আছে??”
” ন…… নেই আর ভাইয়া।”

মুগ্ধের কথা যেনো মাথার উপর দিয়ে চলে যায় ইশার। বসা থেকে উঠে দাড়ায় সে। এগিয়ে এসে মুগ্ধের কাঁধ ধরে জিজ্ঞেস করে,

” এই মুগ্ধ কি বলছিস তুই??নেই মানে??”
” নেই মানে নেই। আর বেঁচে নেই নির্মল ভাইয়া। তোমাকে প্রপোজ করার দুই দিন পরই সে আত্ম*হত্যা করেছে।”

নিজেকে ধরে না রাখতে পারে মেঝে তে ধপ করে বসে পড়ে ইশা।

” কি ভুল করেছিলো নির্মল ভাইয়া বলতে পর ইশা আপু?? শুধু তোমায় ভালোবাসার শাস্তি সে জীবন দিয়ে কেনো পেলো?কি এমন দেখলে আরফিন তালুকদারের মধ্যে যা আমার নির্মল ভাইয়ার মধ্যে তুমি খুঁজে পেলে না আপু?”
” মুগ্ধ এই মুগ্ধ তুই সত্যি বলছিস?? আমার একটা ভুলের জন্য এতো গুলো মানুষ কে সাফার করতে হচ্ছে??”
“তোমার ভুলের জন্য নয় আপু,তোমার ভাইদের জেদ ও নির্বুদ্ধিতার জন্য।”
” সত্যিই তো আরফিন তালুকদারের ভুলের জন্য তোর আর মেহুর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কোনো দরকার ছিলো না।ওর পাপের ফল তোরা কেনো পাবি??আমি ইভান আর ঈশানের সাথে কথা বলবো।”

ইশা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ।

” তোমাদের ভাইবোনের জন্য আমি আর আমার বোন অনেক শাস্তি পেয়েছি আপু,আর না। তোমার ভাইদের আমরা অনেক বার সুযোগ দিয়েছি। বারবার বিশ্বাস করে ঠকতে হয়েছে আমাদের। এবার তোমার ভাইদের কেও কষ্ট পেতে হবে। মাফ করবেন ইভান আমাকে আপনারাই বাধ্য করলেন এতো বড়ো একটা পদক্ষেপ নিতে, শুধু একটা আফসোস থাকবে যে আপনাকে সামনাসামনি আপনার বাবা হওয়ার খবরটা দিতে পারলাম না। ভালো থাকবেন।” মনে মনে কথা গুলো বলে মুগ্ধ।
______________

রাত দুটো,ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে ঈশান। মনটা তার আজ বড়োই অশান্ত। তালুকদার বাড়ি থেকে আসার পর নিজের রুমের ভিতরে পা দিতে পারছে না সে। সেখানে গেলেই চারিদিকে খালি মেহেক কে দেখতে পাচ্ছে সে। মেহেক কের স্মৃতি গুলো বারবার তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

“ঈশান”

কাঁধে হাত পড়তেই পিছনে ফিরে ঈশান।”ভাইয়া” বলে জড়িয়ে ধরে ইভান কে। মুখ বুঁজে হু হু করে কেঁদে ওঠে সে। ঈশানের ব্যবহারে চমকে ওঠে ইভান।

” ঈশান শান্ত হ। কি হয়েছে? এমন করেছিস কেনো তুই??”
” আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া। খুব কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভেতরটা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে যেনো ভাইয়া। আর পারছি না আমি। কেনো এমনই হতে হলো? মেহেক কেনো আমার জীবনে এলো ভাইয়া?? আমি যে ওকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি। আমি পারছি না ওকে ছেড়ে থাকতে। আমি………”
” এতো দুর্বল তো তুই নয় ঈশান। কেনো এতো ভেঙে পড়ছিস?? ওরা ওদের পাপের ফল পাচ্ছে।এটা তো হওয়ারই ছিল। আমাদের প্রতিশোধ আজ পূর্ণ হয়েছে এবার শুধু আরফিনের শেষ হওয়ার পালা।”
” কিন্তু মেহেকর কি হবে ভাইয়া?? আমার বাচ্চা টার কি হবে……”

” এতোই যখন বউ বাচ্চার চিন্তা তখন গিয়ে নিয়ে আয় বাড়ীতে।”

ইশার কথায় দুই ভাই পিছন ঘুরে তাকায়।

” আপু তুমি??” ঈশান বলে।
” ইশা তুই এখনো ঘুমাসনি? এখনো তোর সুস্থ হতে সময় লাগবে,তোর রেস্টের দরকার……”
” আমার কথার মাঝে কথা বলবি না ইভান।আর ঈশান আমার ভাই হয়ে তুই কি করে মেহেকের সাথে এমন ছল চাতুরি করতে পারলি তুই?? এতে ওর কি দোষ??”
” তুই জানিস না ইশা মেহেকই আরফিন কে বলেছিলো যাতে তোর সাথে প্রেম করে……”
” সেটা সে নির্মল কে পাওয়ার জন্য বলেছিলো। তখন সবে মেহেক তেরো কি চোদ্দো বছরে পা দিয়েছে,ওর অতো জ্ঞান তখন ছিলো না।”
“সেটা তুই ভাবছিস ইশা, প্রেম করার চেষ্টা করতে পারে আর এটা বুঝবে না??”
” না বোঝেনি কারণ আরফিন কে প্রথমে বলার পর মেহু পড়ে আমাকেও এসে বলেছিলো যে সে ওইরকম বলে ফেলেছে আবেগে আমি যেনো সাবধানে থাকি। আমি আরফিনের মিষ্টি কথায় গলে গেছিলাম আমি ওকে চিনতে পারিনি। এতে করে মুগ্ধ আর মেহুর কারোর কোনো দোষ নেই।কেনো আরফিন আর আমার জন্য তোরা নিজেদের সংসার নষ্ট করছিস দুজনে?? আমার কথাটা রাখ ভাই কালকে গিয়ে মেহু কে বাড়ি নিয়ে আয়। এই কয়েকদিনে মেয়েটার ওপর দিয়ে অনেক ঝর গেছে। এতে করে যদি তোর বাচ্চটার কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তখন কিন্তু আফসোস করেও কিছু করার থাকবে না। …… আর ইভান তুইও অনেক কষ্ট দিয়েছিস মুগ্ধ কে। পারলে নিজেদের মধ্যে সব ঠিক করে নে। এই প্রতিশোধের খেলা এবার বন্ধ কর।”

ইশা হন হন করে বেরিয়ে যায় ছাদ থেকে। ইশার কথায় হয়তো টনক নড়ে দুই ভাইয়ের। নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় দুজনে।



” মুগ্ধ কোথা….”

মুগ্ধ কে রুমে দেখতে না পেয়ে অবাক হয় ইভান। এতো রাতে মুগ্ধ আবার কোথায় যাবে?? বাথরুমে গিয়ে দেখে সেখানেও নেই। মনের ভেতরটা যেনো কেঁপে ওঠে ইভানের। কোথায় গেলো মুগ্ধ?

চিৎকার করে সারা বাড়ি জড়ো করে সে। সবাই কে গোটা বাড়ির প্রতিটা কোনা খুঁজে দেখতে বলে। প্রায় এক ঘন্টা ধরে গোটা চৌধুরী ম্যানসন খুঁজেও কোথাও পাওয়া যায় না মুগ্ধ কে।

মাথায় হাত দিয়ে সোফায় ধপ করে বসে পড়ে ইভান। দুই হাতে খামচে ধরে নিজের চুলের মুঠি।” মুগ্ধওওওওওওও বলে চিৎকার করে গর্জন ছাড়ে সে।তার হুঙ্কারে চৌধুরী ম্যানসনের প্রতিটা ইট বালিও যেনো কেঁপে ওঠে। এক লাথে সামনে রাখা সুসজ্জিত টি টেবিলটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

হঠাৎ বাড়ির ফোনটা বেজে ওঠে। ইশতিয়াক সাহেব ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলেন।

” হ্যালো ইশতিয়াক চৌধুরী বলছেন??”
” হ্যাঁ বলছি । কে??”
“আমি মেহেকের মা বলছি, বলছি ভাইজান মেহেক কি ওখানে গেছে??”

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা