#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৩৮
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সেতারা বেগম ভীষণ রেগে আছেন।নাতি টা কোনো কিছু না জেনে শ’ত্রু”র ছেলেকে বাড়িতে জায়গা দিয়েছে,আর বড় ছেলের বউটা তো ওই ছেলেকে চোখে হারাচ্ছে!নিখিল কে এতোবার বলেছে কিন্তু ছেলেটার মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারলো না।
মিহির রাতে থেকে গেলো,বাড়িতে আর কেউ নেই তাই চলে যেতে হলো মিহিরের বাবা মায়ের।
নিখিল একবার সবাই কে রুমে যেতে বলেছে, সবাই এখনো সোফায় বসে।
নিখিল এবার ধম’কের সুরেই বললো–,,সকাল পর্যন্ত কি এভাবেই বসে থাকবি নাকি সবাই?চুপচাপ গিয়ে ঘুমা, একজনকেও যেনো এখানে আর না দেখি!দাদি যাও গিয়ে ঘুমাও সকালের আগে কিছুই জানতে পারবে না,রাত বাড়ছে এবার সবাই যাও!
শাহআলম চৌধুরী ও বাকি দুই ভাই বসে আছে,আজকে তাদের কিছু বলার নেই করার নেই,শেষ বয়সে এসে কিনা ছেলেমেয়েদের সামনে এভাবে ছোট হলো!ইলিয়াস খানের বোন কে বিয়ে তাও ওদের ভাই এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।বিয়ে করা তো দূর ওই মেয়ের দিক তাকায়নি পর্যন্ত শাহআলম, মেয়েটা কতো ছল’চাতুরী করেছে বিয়ে করার জন্য। তখন খানদের ব্যবস্যা বানিজ্য ছিলো রমরমা সে ক্ষেত্রে অহং’কার ও ছিলো তাদের।ভাই কে কিভাবে এসব থেকে মুক্ত করবেন বুঝে উঠতে পারলো না তারা!
শাহআলম চৌধুরী কে ধরে রুমে নিয়ে গেলেন বাকি দুজন।আজকে যে হামিদা বেগম আর তাদের দুইজনের সহধর্মিণী আসবে না বেশ বুঝাই গেলো,তাই আজ ভাইয়ের সাথেই রাতটুকু কাটাবে ভাবলো।মানুষটার বয়স হয়েছে,তাদের কে আগলে রাখতো সব সময়, এখন তাদেরও উচিত এমন সময়টায় ভাইয়ের পাশে থাকা।
—–
সাব্বির ঘরময় পায়চারি করছে,জেরিন বিরক্তি নিয়ে বসে আছে।ছেলেটা না নিজে ঘুমাচ্ছে না জেরিন কে ঘুমাতে দিচ্ছে।সাব্বির বলে উঠলো
–,,না না ঘসেটিবেগম এসব কিছুতেই মানা যায় না।বড় আব্বুর আর আরেকটা বিয়ে?এটা তো কোনো লজিক দিয়াই মিলাইতে পারছি না,আমার যে বড় আব্বু এখনো বড় মাকেই সামলে উঠতে পারলো না,বড় মা চোখ রাঙানি দিলেই তো তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না,জীবন নিয়া টানাটানি আবার করবে আরেক মহিলাকে বিয়ে!সাহিল টার কথা কিন্তু আমি বিশ্বাস করছি না।
জেরিন বিরক্তি নিয়ে বললো–,,রাতের বাজে দুইটা তুই নাটক করছিস?ঘুমাবো আমি, যদি আরেকবার কথা বলিস তো রুমের বাহিরে কি বল,ফ্লোরে ঘুমা।আমার কানের কাছে কথা বলবি না!
সাব্বির বলে উঠলো–,,আরে কথা টা তো শোন!
জেরিন একটা বালিশ ছুঁ’ড়ে দিলো সাব্বিরের উপর।সাব্বির মুখ বাঁকিয়ে এসে পাশে শুয়ে পড়লো।
জেরিন ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো–,,লাইট অফ কর!
সাব্বির তেতে বলে উঠলো–,,পারবো না!
জেরিন গা ঘেঁষা বিড়ালের মতো এসে মিশে গেলো সাব্বিরের সাথে।জড়িয়ে ধরে সাব্বিরের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো।সাব্বির মুচকি হাসলো,এটা তো এখন ঘসেটিবেগমের রোজকার রুটিন,যতই হম্বি’তম্বি করুক ঘুমানোর সময় তার সাব্বির কে লাগবেই!জেরিন অকপটে স্বীকারও করে তোকে ছাড়া ঘুম আসে না আমার,বিয়ের দেনমোহর আমার পছন্দ মতো দেসনি তুই,তাই আমিই চেয়ে নিচ্ছি,দুনিয়া উল্টে গেলেও যতই ঝগ’ড়া করি না কেনো,ঘুমানোর সময় আমার তোকে লাগবে,তোর কোল না হয় বুকে মাথা দিয়ে ঘুমাতে দিতে হবে আমাকে,আর মৃ’ত্যুর আগে ছেড়ে যেতে পারবি না!
——–
নিখিল আপনি কি আমাকে বলবেন?কথা বলছেন না কেনো?সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার মতো ধৈর্য আমার নেই।
নিখিল শান্ত ভাবে বললো–,, ঘুমা নেহা।আর একবার বলবি তো বাহিরে নিয়ে রেখে আসবো।
নেহা শুনতে চাইলো না,সে নিখিলের হাত টেনে উঠিয়ে বললো–,,বলুন বলছি,এখনই মানে এখনই!
নিখিল এবার ধ”মক দিলো–,,ঘুমাতে বলেছি না আমি?তার পর কথা বলছিস কখন থেকে,সব সময় বাচ্চাদের মতো জে’দ কেনো করিস?
নেহার মন খারা’প হলো,অভিমানে মন ফুলেফেঁপে উঠলো,আবছা অন্ধকারেও নিখিল তা বেশ বুঝতে পারলো,আজকে একদম এই মেয়ের মান ভাঙ্গাবে না নিখিল,বড় হচ্ছে আর বাচ্চামো বাড়ছে, কতো করে বললো সকালে বলবো না এর স’হ্য হচ্ছে না।একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
নেহা নাকের ডগায় রাগে নিয়ে গিয়ে ধা”ম করে সোফায় শুয়ে পড়লো।নিখিল দেখলো সোফাটা কে ওর এখন ওই ব্যাটা সোফা কে হিং’সে হচ্ছে,কালই রুম থেকে এটাকে বের করে দিবে,তখন দেখবে মহারানী কি করে রাগ দেখিয়ে তাকে ছেড়ে ঘুমায়!
নেহা তো ঘুমায়নি ঘুমের ভান ধরে আছে,নিখিল যে আসবে এটা নেহা ভালো করেই জানে,ওকে ধম’ক দেওয়া?বজ্জা’ত ছেলে! নেহা যেনো গভীর ঘুমে নিখিল এসেই কোলে তুলে নিলো, নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো–,,ঘুমের ভান অন্য কারো সামনে গিয়ে ধরবি।
নেহাও কথা শুনে চোখ খুলে ফেললো।নিখিল সুযোগ বুঝে নেহার কপালে একটা চুমু দিলো,নেহা ভেংচি কাটলো কথা শুনিয়ে এখন ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে!
নেহাকে জড়িয়ে ধরে বললো–,,এভাবে সব সময় কেনো রেগে থাকিস বলতো,আমার বাচ্চাগুলাও তো তোর মতো হবে!
–,,আর আপনি যে সব সময় রাগ নিয়ে থাকেন তার বেলা,বাচ্চা তো আপনারও হবে।
–,,থাকবে তো তোর পেটের ভিতর!
নেহা ঠোঁট উল্টে বললো–,,বেবি আমার মতো হবে দেখে আপনার পছন্দ হচ্ছে না?ওহ বুঝেছি তো আমাকে এখন আর ভালো লাগে না আপনার!
নিখিল তাকিয়ে আছে অপলক কি করবে এই ম্যাচিওউর বাচ্চা টাকে নিয়ে!সবার সামনে কতো ভদ্র শান্ত মেয়ে,এখন তো রাগটাও কম দেখায় সবার সামনে চঞ্চলতাটাও কমেছে কিছুটা।কিন্তু ঘরের ভিতর কি কি যে করে এটা যদি কেউ দেখতো।নিখিলের সামনে নেহা এখনো বাচ্চা,সব কথায় ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলে।কিছু বলাই যাবে না তাকে।নিখিল শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,,পাগ’লি একটা।ভালোবাসা কখনো পুরনো হয় না বুঝলি,ভালোবাসার মানুষকে কখনো অপছন্দ করার প্রশ্নই উঠে না।
নেহা নিখিলের গলা জড়িয়ে, গলায় মুখ গুঁজে দিলো
একটা চুমু দিতেই।নিখিল বলে উঠলো–,,এখন কি আমার বউয়ের আদর চাই?
নেহা একটা কি’ল বসিয়েছে নিখিলের বুকে,সব সময় উল্টা পাল্টা চিন্তা করে এই ছেলে!
নিখিল নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো–,,এতো রাগ করো কেনো পাখি?বললাম তো সকালে বলবো,তার পরও রাতের বেলা জে’দ করা সাজে নাকি?
নেহা বুকের উপর লেপ্টে গিয়ে বললো–,,তাই বলে আপনি আমাকে ওভাবে ব”কা দিবেন?আপনার সাথে আর কথা বলবো না আমি।
—,,আচ্ছা মানলাম আমার দো’ষ।স্যরি!এবার খুশি।
নেহা প্রতিউত্তর করলো না,তবে একরাশ প্রশান্তি নিয়ে চোখ বুঝলো।
——-
সকাল না হতেই রান্না ঘরে খাবার বানানোর তোড়জোড় শুরু হলো।আজ রান্না ঘরে শুধু সাহারা ও তাহমিদা।হামিদা বেগম এখনো সাহিলের পাশে বসে।চিন্তিত দুই জা,বড় আপাটার যে কি হলো,একটা অচেনা ছেলের জন্য এতো টান তাদের ভাবাচ্ছে!
ঘুম ভাঙলো সাহিলের,খাটের পাশে হেলান দিয়ে বসে থাকা মধ্য বয়স্ক মহিলাটি কে দেখে,তাকিয়ে রইলো ক্ষণকাল।কে এই মহিলা?তার পাশেই বা বসে বসে ঝিমাচ্ছে কেনো!
সাহিল বুঝতে পারলো সে তার নিজের ঘরে নেই,উঠতে গিয়ে মাথায় ব্যাথা অনুভব করলো,রাতের কথা মনে পড়লো একটু একটু করে।সে এখন চৌধুরী বাড়িতে!
হামিদা বেগম ছোখ খুলে দেখলো সাহিল ঘুম থেকে উঠেছে তিনি বিচলিত কন্ঠে বললো–,,বাবা ঘুম কেমন হলো?এখনো কি মাথায় যন্ত্র”ণা আছে?মা তোর জন্য এক কাপ কফি করে এনে দিবো খাবি বাবা!
সাহিল চকিত নয়নে তাকালো,মনের ভিতর টা কেমন করে উঠলো তার।এতো আদর মিশিয়ে ও বুঝি সাধারণ রোজকার কথা গুলো বলা যায়?এক কাপ কফির আবদার তো ওর করার কথা কিন্তু কে ইনি যে নিজেই আবদার করলো এক কাপ কফি বানিয়ে দিবে কি না!
তাকে বাবা কেনো সম্মোধন করলো আর নিজেকে মা?সাহিল অবাক কন্ঠে বলে উঠলো–,,মা!
হামিদা বেগমের চোখ ছলছল করে উঠলো কি শান্তি তে ঘেরা এই ডাক!মা ডাক শোনার জন্য তার হৃদয় টা আজ ভীষণ রকম ব্যাকুল।
হামিদা বেগম হন্তদন্ত পায়ে গেলো রান্না ঘরে কফি বানিয়ে আবার বের হলো সাহারা,তাহমিদা তব্দা খেয়ে দাড়িয়ে দেখলো তার কাজ।নেহা জেরিন এসেছে রান্না ঘরে বৃষ্টি ও সিঁড়িতে তারা কাজে সাহায্য করতেই এসেছে,নিজেদের মা কে এভাবে ছুটতে দেখে তারাও অবাক,তবে সবাই নিশ্চুপ নিখিল বললো সকালেই সব ঠিক হয়ে যাবে,তাই তারাও অপেক্ষায় আছে!
খাবার টেবিলে পিনপতন নীরবতা কারো মুখে কোনো রা নেই।চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে সবাই।সাহিল ইতস্তত বোধ করছে এই মানুষ গুলো আপাতদৃষ্টিতে তার প্রতি”দ্বন্দি তাদের সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়া!হামিদা বেগম তাকে ছাড়তে নারাজ, সাহিল কেনো জানি এ মহিলার কথা ফেলতে পারেনি তা ছাড়াও সে বেয়া’দব নয়!অযথা কোনো মানুষের সাথে খারা”প ব্যবহার কেনো করতে যাবে!
সাহিল অল্প খাবার মুখে নিলো।সবাই কিছু না কিছু খেয়ে উঠে গেলো!
সকাল দশটা আজ কেউ অফিস বা অন্য কোথাও যায়নি।হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো জেরিন গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো তার নিজের বড় মামা মামি এসেছে।সে কোনো রকম জিজ্ঞেস করলো কেমন আছেন? তারাও ছুটে আসলো ভিতরে!
পর পর সবাই উপস্থিত, সাহিলও আছে।একটু পর বাড়িতে আসলো ইলিয়াস খান ও তার স্ত্রী!
নিখিল পূর্ণ দৃষ্টি রাখলো সাহিলের উপর সাহিল ও তাকিয়ে তার দিকে!
নিখিল বললো–,,তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আজ তোমাকে ইলিয়াস খান দিবে সাহিল!
সাহিল হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সবার দিকে।
নিখিল সেতারা বেগমের দিক তাকিয়ে বললো–,,দাদি তুমি বলবে অতীতের কাহিনি।তার পরবর্তী অংশ টুকু বলবে ইলিয়াস খান,আজকেই সব রহস্যের উপর থেকে পর্দা উঠে যাক,অনেক তো হলো লুকোচুরি!
সেতারা বেগম কে সকালেই সব কিছু বুঝিয়েছে নিখিল বলেছে যাতে ইলিয়াস খানের সাথে শত্রু”তার মূল কারন টা সবাই কে তিনি বলেন!ইলিয়াস খান নত মস্তকে বসা আজ সে নিঃস্ব!অহং”কার, লোভ,প্রতা”রণা আজ তাকে ধ্বং”স করে দিয়েছে।তবুও তিনি আজ সব স্বীকার করে পা’পের বোঝা কিছুটা হলেও কমাতে চান।নিখিল তার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে তিনি কতোটা ভুল ছিলেন!
সাহিল এতোটাই শক”ড কি বলবে বুঝে উঠলো না।তার মামা কি এমন সত্যি বলবেন?সব কেমন পেঁচিয়ে যাচ্ছে!
সেতারা বেগমের দিকে তাকিয়ে সকলে তিনি বলতে শুরু করলেন
–,,তখন নিখিলের দাদা ব্যবসা শুরু করেছিলো সবে,তেমন ভালো না অবস্থা। কোনো রকম চলতো আর কি,ধীরে ধীরে লাভ হওয়া শুরু করে কিছুটা উন্নতি হয় তাদের তবে ইলিয়াসের বাবার তখন বেশ হাত গরম!তাদের শহরে নাম ডাক ভালোই ছিলো,তোদের দাদু পরবর্তীতে শাহআলম কে ব্যবসায় যোগ দিতে বলে,পড়াশোনা শেষ হয়েছিলো তার,ততোটাও বড় না,শহিদুল, মাহফুজ পড়াশোনা করছে তখনও।ইলিয়াসের বাবার দুই সন্তান ছিলো ইলিয়াস আর তার বোন কারিমা!কারিমা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে,ইলিয়াস তার বাবার সব কিছু দেখতো মূলত তার তত্বাবধানেই চলতো তাদের সব কিছু!শাহআলম আসার পর থেকে তোদের দাদুর ও উন্নতি হয়।খানদের থেকেও বেশি নাম ডাক হতে শুরু করে।দুইজনই দুজনের দিক থেকে যথাসম্ভব ভালো কেউ কাউকে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।শাহআলমের পরিচিতি বাড়ে সেই সুবাধেই কামেনির পছন্দ হয় শাহআলম কে,ব্যবসায়ীক দ্ব’ন্দ্ব তার উপর মেয়ের শ’ত্রু পক্ষের ছেলেকে পছন্দ করা মেনে নিতে পারেনি ইলিয়াস ও তার বাবা!পরবর্তীতে তারা মেয়ের মতকে প্রাধান্য দিয়েছিলো,সন্ধি করতে চেয়েছিলো।তোদের দাদু এতে অমত করেনি, তবে শাহআলমের কামেনি কে পছন্দ ছিলো না!কামেনি শাহআলম কে ভালোবাসলেও শাহআলমের পছন্দ ছিলো আলাউদ্দিনের বোন হামিদা কে ছেলের পছন্দের বিরু’দ্ধে গিয়ে শুধু ব্যবসার জন্য ছেলের জীবন ন”ষ্ট করতে চায়নি তোদের দাদু তাছাড়াও একটা কথা সত্যি জানিস তো ভালোবাসা সংসার জোর করে হয় না।একে অপরের সাথে থাকা যায় একই ঘরে থাকা যায় তবে মানসিক শান্তি টা থাকে না দিন শেষে নিজের কাছেই নিজেকে বোঝা মনে হয়!আমি মা হয়ে ছেলেকে এমন কিছুতে ফেলতে পারিনি।হামিদা কে আমারও ভীষণ পছন্দ আমার একটাই মেয়ে ছিলো যাকে বিয়ে দিয়ে পরের বাড়িতে পাঠিয়েছি,হামিদার মতো একটা মেয়ে আমার ঘরে আসবে ভেবেই আমি খুশি হয়েছিলাম!ব্যবসায় উন্নতি হওয়ার আগে থেকেই শাহআলম হামিদাকে পছন্দ করতো যা আমাকে সে জানিয়েছিলো,শহিদুলের সাথে একদিন ওদের বাড়ি গিয়েছিলো তখনই হামিদাকে পছন্দ হয়েছে শাহআলমের তবে ছেলে আমার বলেছিলো যখন সে চাকরি করবে তখন প্রস্তাব পাঠাবে তার আগ পর্যন্ত বিষয়টা গোপন রাখতে!কামেনিও যথেষ্ট ভালো মেয়ে ছিলো,শুধু বাবা ভাইয়ের আদরে বিগ”ড়ে গিয়েছিলো দাম্ভি”ক হয়ে উঠেছিলো,যা তার চাই সেটা পেয়েছে সব সময়।জীবন সঙ্গী হিসেবে শাহআলম কে চেয়েছে চাওয়াটা অন্যা’য় না, যদি চাওয়াটা উভয় পাক্ষিক হতো তো কখনো দ্বিমত করতাম না আমরা।শাহআলম তাকে অনেক বার বুঝিয়েছে,একদিন হামিদার কথাও বলেছে।
এর মধ্যেই এসব দেখে আমরা হামিদার সাথে শাহআলমের বিয়ে দেই।এতে কাজও হয়েছিলো কামেনি তার পর থেকে পাগ’লামো বন্ধ করেছে, আমরা ভেবেছি সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, তবে ধারনাটা সম্পুর্নই ভুল ছিলো আমাদের!শাহআলমের বিয়ের তখন এক বছর হামিদা সন্তানসম্ভবা ছিলো।সপ্তাহ খানেক পর তার পর ডেলি’ভারির ডেইট ছিলো হামিদা অসুস্থ ও ছিলো তাই আমরা কোনো ঝুঁ”কি নিতে চাই নি।হসপিটাল নিবো আগে থেকেই সব ঠিক করে রাখা।তার মধ্যে একদিন খবর পাই কামেনি আত্ন”হত্যা করেছে,মেয়েটার জন্য খারা’প লাগলেও কিছু করার ছিলো না আমাদের!তার ভালোবাসা নিখুঁত ছিলো তবে সে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছে,নিজের জীবন দেওয়ার মতো বোকামি টা করেছে! কামেনি মা”রা যাওয়ার পর হামিদার কোল জুড়ে এসেছে নিখিল আমাদের বাড়িতে তখন খুশির আমেজ।তার পর থেকে খানরা আরো রেগে ছিলো আমাদের উপর বোন হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি, মেয়ের শোকে ইলিয়াসের বাবাও কিছু দিন পর মা’রা যায়,তোর দাদুও!দুই পরিবারই দুঃখে ছিলো তবে কেউ কেউ মনে করতো তাদের পরিবারের এরকম পরিস্থিতির জন্য আমরা দা’য়ী!হায়াত-মউ”তের মালিক আল্লাহ আমরাও তো তোর দাদুকে আটকাতে পারিনি জীবন তো থেমে থাকেনি।তবে খানদের সাথে সেই শত্রু,তা এখন রয়েই গেলো!তার পর এখন আবার ইলিয়াসের ছেলে সাহিলের সাথে শাহআলমের ছেলের দ্ব”ন্দ্ব জানিনা কবে এসবের শেষ হবে!
সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো সেতারার কথা।এর মধ্যেই ইলিয়াসের কন্ঠস্বর শোনা গেলো!তার কথাটায় যেনো বড় সড় একটা বিস্ফো”রণ হলো বসার ঘরে নিঃশব্দে।
–,,সাহিল আমাদের সন্তান নয় শাহআলম আর হামিদা বেগমের সন্তান!
সাহিল জানে সে শাহআলম চৌধুরীর সন্তান তবে তার মা কামেনি!তাহলে কেনো তার মামা বলছে সে হামিদা বেগমের সন্তান।
সাহিল হতবাক চোখে তাকিয়ে ইলিয়াস খানের পানে,এতো বছর যে মানুষ টাকে বিশ্বাস করেছে চোখ বন্ধ করে সে মানুষটা তাকে এভাবে ঠকা’লো!
ইলিয়াস খান বলে উঠলো–,,আমাকে ক্ষ’মা করে দিস সাহিল!আমি অ’ন্যায় করেছি।
শাহআলম চৌধুরী সহ বাকিরা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।ছোটরা এখনো শ’ক থেকে বের হতে পারেনি সাহিল তাহলে ওদের ভাই!
সাহিল কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো–,,আমার মা কে সত্যি করে বলো মামা!
ইলিয়াস খান যেনো ভিতর ভিতর মুষড়ে পড়লেন সাহিল তাকে এখনো মামা বলে ডাকছে!ছেলেটা কতো ভালো তিনি তা জানেন শাহআলম চৌধুরীর মতোই বিনয়ী স্বভাব তার,চৌধুরী পরিবারের প্রতিটা মানুষ সত্যি ভীষণ রকম ভালো না হলে কি নিখিল এতো কিছু জানার পরও তাকে মাফ করে দিতে পারে?শুধু মাত্ররো একটা শর্তে!সব সত্যি বললেই তার প্রতি তাদের কোনো রাগ ক্ষো’ভ থাকবে না বলেছে নিখিল।সত্যিই বুঝি তাই,সাহিলের পরিচয় না জেনেই রাতে তাকে থাকতে দিয়েছে তারা সেবা করেছে খেতে দিয়েছে,যদিও বা এখন জানলো সে তাদেরই ছেলে!
ইলিয়াস খানের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো,সাহিলের দিকে তাকিয়ে বললো–,,তোর মা ওইখানে যে মহিলা দাড়িয়ে আছে তিনি!আর বাবা শাহআলম।
সাহিল তাকালো আঙুল তাক করা মহিলাটার দিকে,যিনি আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছেন!যে তাকে রাতে সেবা করেছে সকালে খাওয়ালো,এই ভালো মানুষ টা তার নিজেরই মা!আর সে কিনা এই মমতাময়ীর মমতা থেকে এতোটা বছর দূরে ছিলো?তার জীবনে সব কিছু থেকেও কিনা সে ছিলো অপূর্ণ! এতো গুলো মানুষ সবাই তার আপন ছিলো,কি ভুলের সা’জা দিলো তাকে সৃষ্টিকর্তা!নিজের বাবা মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হলো ভাই বোন থেকে তাকে পৃথক থাকতে হলো!চোখের পাতা ফেলতে কষ্ট হলো যেনো ছেলেটার।ভীষণ রকম ভারী মনে হচ্ছে পৃথিবীটাকে।
নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে অতি শান্ত কন্ঠে সাহিল বললো–,,আমি পুরো সত্যি টা জানতে চাচ্ছি মামা!
ইলিয়াসের স্ত্রী ও অবাক চিত্তে তাকিয়ে সে নিজেও জানতো সাহিল কামেনির সন্তান কিন্তু নিজের স্বামী যে এতো নি’চ একটা কাজ করতে পারে তিনি এতোবছরে ও বুঝলেন না!মানুষ কতো সহজে মুখো”শের আড়ালে নিজেকে ঢেকে রাখতে পারে।সবার সামনে ভালো সাজা তার স্বামী কিনা একটা মায়ের বুক খালি করে দিয়েছে!একটা পরিবার কে শেষ করে দিতে উঠে পরে লেগেছিলো।ইলিয়াসের এই পা”পের কারনেই হয়তো আল্লাহ তার কোল জুড়ে কোনো সন্তান দেয়নি,তিনি মাতৃত্বের স্বাদ পায়নি!তাদের সব কিছু থাকলে ও কোনো সুখ ছিলো না।
ইলিয়াস খান বলা শুরু করলেন–,,কামেনি মা’রা যাওয়ার পর আমাদের মনে হতে লাগলো সব দোষ শাহআলমের যদি শাহআলম আমার বোনকে মেনে নিতো তো সে বেঁচে থাকতো,আমার বোন যেহেতু আমাদের ছেড়ে চলে গেছে শাহআলমের ও কোনো অধিকার নেই সুখে থাকার!সেদিন জানতে পেরেছিলাম শাহআলমের ছেলে সন্তান হয়েছে তবে জানতাম না সে জোড়া পুত্রের বাবা হয়েছে তবে হয়তো দুজনকেই নিয়ে নিতাম!আমি তাকে সন্তান হারা করতে চেয়েছিলাম।হসপিটালে গিয়ে নার্সদের টাকা দিয়ে শাহআলমের সন্তান কে চেয়েছিলাম আমি, নার্সটি ওতো টাকার লোভ সামলাতে পারেনি, একটা বাচ্চা এনে দিয়েছিলো আমাকে প্রমান স্বরূপ দিয়েছিলো ডি’এনএ টে’স্টের রিপোর্ট!বাড়ি গিয়ে মনে হচ্ছিলো আমি জিতে গেছি শাহআলম হেরে গেছে।কিন্তু আল্লাহ হয়তো অন্য কিছুই ভেবে রেখেছিলেন।জানতে পারি শাহআলমের ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী সহ বাড়িতে গেছে বাড়িতে তাদের আনন্দের সীমা নেই!ভেবেছিলাম এই শিশুটাকে দিয়ে কি করবো আমি!এতিম খানায় দিয়ে দিবো না কি কোথাও ফেলে আসবো।কারন তখনও আমি অবিবাহিত একটা বাচ্চাকে পালা মুখের কথা নয়!আরেকবার ভেবেছিলাম চৌধুরী বাড়ির দরজায় ফেলে যাবো কিন্তু বাবা তাতে রাজি হয়নি।কাজের লোকের হাতেই বড় হতে লাগলো সাহিল!পরিচয় দিয়ে দিলাম কামেনির আর ছোট সাহিলের কানে ছোট থেকেই একটা কথা ঢুকিয়ে দিলাম আমাদের বড় শ”ত্রু চৌধুরী পরিবার তার মায়ের খু’নি চৌধুরী পরিবার,সাহিল খুবই ইন্টেলিজেন্ট বাচ্চা ছিলো!তুখোড় তার প্রতিভা নিখিল ও কম যেতো না ওর খবরও রাখতাম আমি!ইচ্ছে করেই স্কুল, কলেজ,ভার্সিটি এক রেখেছি। যাতে সাহিল নিজের শ’ত্রু হিসেবে শুধু নিখিল কে জানে!আমি সাহিলের জমজ ভাইকে তার প্রধান প্রতি”দ্বন্দি বানিয়েছি।একদিন ভার্সিটি কোনো এক ছেলেকে নিখিল মে”রেছিলো ছেলেটার দো”ষ ছিলো সে নেহা নামক কাউকে কিছু একটা করেছে,সেদিনই জানতে পেরেছিলাম নেহাকে ভালোবাসে নিখিল!ছেলেদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা হলো তাদের জীবনে থাকা তাদের পছন্দের নারী!আমি সাহিল কে বলি সে যাতে নেহা কে পছন্দ করে তাকেই বিয়ে করে,সাহিল মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকাতোও না পর্যন্ত,আমি ভেবেছিলাম হয়তো এক্ষেত্রে ও সে মানা করে দিবে!সাহিল জেনে বুঝে কোনো মেয়ের ক্ষ”তি করবে না এটা আমি জানতাম তাই বলেছিলাম তুই বিয়ে করে চৌধুরীদের থেকে তাকে আলাদা করে দিবি তাহলেই তারা কষ্টে থাকবে!সাহিলের ও প্রস্তাব পছন্দ হয়েছে, নিজের মায়ের জন্য সে এতো টুকু করতে চেয়েছিলো,নেহা কে দেখানোর জন্য সাহিল কে আমি নিয়ে গিয়েছিলাম!সাহিল সেদিন নেহা কে দেখে বলেছিলো সুন্দর।দুই ভাইয়ের পছন্দ প্রায় এক তবে যদি সাহিল জানতো নেহা নিখিল কে পছন্দ করে তবে কিছুতেই সে ওই মেয়ের দিকে তাকাতো না!শত্রু”তা এক পাশে মেয়েদের সম্মানের জায়গা এক পাশে।তবে সে শুধু বলেছিলো মেয়ে পছন্দ হয়েছে,অন্য কিছুই না!যখন শাহআলমের মেয়ের বিয়ের কথা উঠলো তখন আবারও আমার পাতা ফাঁ’দে পা দিলো সাহিল!নিরব কে দিয়ে সব কিছু করালো চৌধুরী বাড়ির সম্মান ন’ষ্ট করতে।সে জানতেই পারলো না সে নিজ হাতে নিজের বোনের জীবন ন’ষ্ট করছে!তাতেও কিছু হলো না,জেরিনের বিয়ে হয়ে গেলো লোক সমাজ কয়েকদিন এসব নিয়ে কথা বললেও সব কিছু মেনে নিলো!
বিয়ের পর পরই নিখিল যখন সাহিলের সাথে দেখা করতে চাইলো সেদিনই আমার সন্দেহ হয়েছে নিখিল হয়তো কিছু জানে, এ ছেলে কে হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না।আমি লোক দিয়ে সাহিলের গাড়ির ব্রেক ফেই”ল করাই,ইলিয়াস মৃদু হেসে আবার বলে–,,তবে তোমার ভাগ্য সত্যি ভীষণ ভালো শাহআলম তোমার ছেলে নিখিল নিজের ভাইকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো!আমার অগোচরে বিদেশও পাঠিয়েছে,সেখানেও আমি সাহিল কে পথ থেকে সরাতে চেয়েছিলাম!যদি সাহিলই না থাকে তো আমার ও ধরা পরার কোনো চান্স থাকে না!
কিন্তু সাহিল কে সুস্থ করেই ফেললো নিখিল!পরে জানলাম নেহার বিয়ে আগেই নিখিলের সাথে দিয়েছো তোমরা,নিখিলও ততোদিনে আমাদের প্রোডাক্টের ভে”জাল বের করে ভোক্তা অধিদপ্তরে দিয়ে দেয়!প্রচুর লস হয় সব শ্রমিকদের টাকা দিতে গিয়ে অবশেষে বাধ্য হয়ে কোম্পানি বিক্রি করতে হয় আমাকে!যা কিনেও নেয় নিখিল,তবে আমি সেদিন অবাকই হয়েছিলাম নিখিল সাহিলের নামে কোম্পানি কিনেছে!
আমার মা’ফ চাওয়ার কোনো মুখ নেই,জীবনে কম অপ”রাধ করিনি আমি।আমি সত্যি কঠিন কোনো শা”স্তি পাওয়ার যোগ্য!নিখিল আমাকে শা’স্তি না দিয়েই আমাকে সবচেয়ে বড় আত্মগ্লা”নিতে রেখেছে,জে”লে পঁ’চে মর’লেও হয়তো এতো কষ্ট হতো না যতোটা নিজের ভিতরে ভিতরে অনুতপ্ত হয়ে মর’ছি!
কথা গুলো বলে থামতেই ইলিয়াস খানের গালে স্ব জড়ো একটা চ’ড় বসিয়েছে তার স্ত্রী!রাগে হাত পা কাঁপছে মহিলার,ঘৃ”ণায় গা রি রি করে উঠলো ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে এরকম একটা মানুষ তার নিজের স্বামী! যাকে সে এতো টা ভালোবাসে সম্মান করে নিজের জীবনে সবচেয়ে উপরে রেখেছে সে লোক টা কিনা একজন বিবে”কহীন অমা”নুষ!
তিনি তীব্র ঘৃ”ণা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো–,,আমার নিজের প্রতি ঘৃ”ণা হচ্ছে ইলিয়াস এটা ভেবে আপনার মতো মানুষ আমার স্বামী!আপনার এই রূপ আমার সামনে প্রকাশ হওয়ার আগে আমি ম’রে গেলাম না কেন?এভাবে এতো নিখুঁত ভাবে ঠ”কাতে পারলেন আপনি আমাদের??শুধু আমাকে না আপনি একটা বাচ্চা ছেলের জীবন তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছেন,একবার বুকের ভিতরটা কেঁ”পে উঠলো না আপনার?কিভাবে পারলেন মিথ্যার পর মিথ্যা দিয়ে একটা ভিত্ত সাজাতে!
আমি আজ সবার কাছে ল’জ্জিত আমাকে ক্ষ’মা করবেন।সাহিল বাবা আমাকে মা’ফ করে দিস ,আমি যদি এর এক ফোঁটা ও জানতাম তোকে তোর মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিতাম বাবা!এই হতভাগ্য মা কে ক্ষ’মা করে দিস।
বসার ঘর জুড়ে শুধুই নিরবতা! ইলিয়াস খান যেনো উঠতে পারছেন না,স্ত্রীই ছিলো তার শেষ ভরসা একমাত্র সাথী সে মানুষ টিও তাকে ছেড়ে গেছে!কি নিয়ে থাকবেন তিনি?বেঁচে থাকার কোনো কারন খুঁজে পেলেন না যেনো!
সাহিল টি টেবিল হাতরে পানির জগটা উঠিয়ে নিলো তার গলা শুকিয়ে এসেছে মনে হচ্ছে কতো কাল পানি খায় না! ঢক ঢক করে পুরো জগের পানি খেয়ে ফেললো সে,নিজেকে এতোটা অসহায় লাগেনি কখনো!যে জিনিস গুলোকে আটাশ টা বছর নিজের ভেবেছে তার মধ্যে কিছুই তার না?সব কিছু ছিলো মরিচীকা আজ কেমন মিলিয়ে গেলো চোখের পলকে!এ কোন তীরে এসে ঠেকলো সে?এখানকার মানুষ গুলো কি তাকে মেনে নিবে?আগলে রাখবে!সাহিল কি পারবে তাদের আপন করে নিতে,এতোটাও কি সহজ সব কিছু!
তাহমিদা বুঝলেন ছেলেটা কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে!তিনি মাথায় হাত রেখে বললো–,,তুমি ঠিক আছো তো বাবা?
হামিদা বেগম সাহারা কে জড়িয়ে কাঁদছেন দূরে।ছেলেকে পাওয়ার আনন্দ এতো দিন দূরে রাখার কষ্ট সব মিলিয়ে তিনি দিশেহারা!
শাহআলম চৌধুরী স্তব্ধ হয়ে বসে বাকিরাও, তাহমিদা বেগম গেলেন হামিদা বেগমের কাছে।বললেন–,, আপা তুমি কাঁদছো কেনো?আমাদের ছেলে তো সাহিল তোমার ছেলের তোমাকে প্রয়োজন যদি তুমি এভাবে কাঁদো তো তাকে কে সামলাবে!চলো চোখ মুছে।সাহারাও বুঝালেন।সেতারা বেগমের বয়স হয়েছে এসব নিতে পারলেন না যেনো প্রেশা’র বেড়েছে তার জেরিন সাব্বির নেহা মিলে তাকে রুমে রেখে আসলো।ইলিয়াস ফ্লোরে বসে শাহআলমের পা জড়িয়ে বসে আছে।
–,,আমাকে মা”ফ করে দাও ভাই,যা শা’স্তি দিবে তাই মানবো,জীবনে কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই আমার।এক নিঃস্ব মানুষ আমি,শেষ জীবন টুকু একটু তোমাদের দয়া নিয়ে বাঁচতে চাই!
নিখিল শাহআলম চৌধুরীর কাঁধে হাত রাখলো, শাহআলম যেনো হুঁ”শে ফিরলো!ইলিয়াস খানের দিক তাকিয়ে বললো–,,যাও ক্ষ’মা করে দিলাম।আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছো তাতেই অনেক,যদি কাজটা আরো আগে করতে তো ভালো হতো ইলিয়াস! তার পরও তোমাকে কোনো শা’স্তি দিতে চাই না আমি,শুধু আমার পরিবার থেকে দূরে থেকো,অনেক তো করলে এবার নিজের জীবন নিয়ে থাকো,যতটুকু পারো ভালো থাকো!
ইলিয়াস খান চলে গেলো সদর দরজা ছেড়ে।
সাহিলের পাশে এসে বসলো হামিদা বেগম,সাহিলের মুখে হাত রেখে বললো–,,তুই আমার ছেলে,আমার সন্তান আমার নাড়ি”ছেঁড়া ধন!কতো বছর পর আসলি মায়ের কাছে।আমি তোকে চিনতে কি করে ভুল করলাম?তুই তো আমার কাছেই ছিলি নয়টা মাস,মায়ের প্রতি অভিমান জড়িয়ে রাখিসনি তো বাবা?মা জানলে তোকে যেখান থেকে পারতাম নিয়ে আসতাম বাবা!
সাহিল হামিদা বেগম কে জড়িয়ে ধরে ছোট বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কেঁদে দিলো!বাড়ির প্রতিটি মানুষের চোখ ভিজে এসেছে।জেরিন,সাব্বির,বৃষ্টি, নেহা,রৌফ একপাশে দাড়িয়ে। নিখিলের পাশে মিহির,মিহির নিখিলকে জড়িয়ে ধরেলো শক্ত করে!ছেলেটা এই সত্যি গুলো এক বছর ধরে নিজের কাছে রেখেছে না জানি তার কতো কষ্ট হয়েছে!নিখিল মিহিরের কাঁধে হাত রেখে বললো–,,বোন জামাই এখন কিন্তু আমাদের দল আরো ভারি হলো তিনটা ভাই আমার বোনের সাবধান আমার বোনের সাথে যদি কোনো কিছু করেছিস তো!
মিহির বলে উঠলো–,,আমিও চাই আমার বন্ধু আর বউ সব সময় জিতে যাক!
———
হামিদা বেগম সাহিলের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো–,বোকার মতো কাঁদছিস কেনো?আমি আছি তো!
তাহমিদা বেগম, সাহারা এসে বললো–,,আমাদের তো চোখে পড়ে না।ছেলে তো তোমার একার!আমাদের ও ছেলে বুঝলে একা একা সব ভালোবাসা দিবে নাকি?এসব অবি”চার মেনে নিবো না আমরা!
সাহারা,তাহমিদা পাশে বসে বললো–,,এই ছেলে শোন!আমি তোর মেজো মা, আর আমি ছোট মা বুঝলি।একটা মা না তিন তিনটা মা আমাদের যদি পর ভাবিস তো কান টেনে দিবো!
সাহিল হেসে উঠলো,মনে মনে কৃতজ্ঞতায় আবেশিত হলো আল্লাহ তার জন্য এতো ভালো কিছু রেখেছিলো সে তো কল্পনাও করেনি!এতো দিন ভাবতো সে শূন্য আজ বুঝলো সে পরিপূর্ণ। তার জীবনও সুন্দর বাকিদের থেকে একটু বেশিই সুন্দর!
সাব্বির এসে বললো–,,পিপ!পিপ!সাইড প্লিজ এবার বাবাদের পালা আজ ছোট বলে আমাদের কেউ পাত্তা দিচ্ছে না।কি বলিস রে তোরা?
বাকিরা তার কথা শুনে মাথা দুলালো!সাব্বির গিয়ে মাহফুজ চৌধুরী কে আঙুল দিয়ে গুঁতো মে’রে বললো–,,যাচ্ছো না কেনো?তোমরা যদি সাহিল ভাইয়ার সাথে সহজ না হও ওর নিজের কেমন লাগবে?যাও বলছি।মিহির নিখিল এসে তিন ভাই কে উঠিয়ে পাঠালো।নিখিল জানে তার বাপ কান্না করে দেওয়ার ভয়ে যাচ্ছে না,একটা ব’দ লোক হুহ্!
তিন ভাই এসে বসলো শাহআলম চৌধুরী সত্যি ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো!মিহির ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো–,,আহ! আমার সহজ সরল শ্বশুর টা।কি ভালো কি ভালো,শুধু তার জা”হিল পোলাটা বুঝলো না!
নিখিল চোখ কটমট করে তাকালো।মিহির বললো–,,দেখ তোর শ্বশুর টা নিরামিষ ভাবে জড়িয়ে ধরলো নাই দয়া মায়া কিচ্ছু নাই,পুরাই তোর মতো!
শহিদুল চৌধুরী বললো–,,অফিসে যেতে হবে এখন,ভাইজান রা চলো শোনো তোমরা কেউ ব্যস্ত হয়ো না অফিসে খেয়ে নিবো আজ।
সাহিলের মাথায় হাত রেখে বললো–,,রেস্ট নিবে,ঠিক মতো খাবে,মনে রাখবে জীবনে চড়াই-উতরাই থাকবেই,এসব ভেবে মন খারা”প করবে না।নিজেকে একা ভাববে না।আমরা সবাই তোমার পাশে আছি,আমরা সবাই একটা পরিবার তোমার মন খারা”প থাকলে কিন্তু সবারই মন খা’রাপ থাকবে!তাই মন থেকে খুশি থাকবে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।অতীত ভেবে দুঃখ পাবে না,বর্তমান ও ভবিষ্যতে যাতে সুখে থাকতে পারো সেদিকে খেয়াল রেখো!
শাহআলম চৌধুরী, মাহফুজ,শহিদুল বেরিয়ে গেলেন,মিহির,নিখিল,সাব্বির কে বললো তারা যেনো বিকেলে যায়!
বড়রা যেতেই সাব্বির এসে সাহিলের পাশে বসলো।
গদগদ হয়ে বললো–,,উফ ভাইয়া কি বলবো,আমি তোমার একমাত্র কিউট ডেসিং হ্যান্ডসাম ছোট ভাই!
রৌফ বলে উঠলো–,আমি কি ভেসে এসেছি নাকি,তুমি অংকে এতো কাঁচা পাশ করছিলাম কেমনে?বলবা দুইমাত্র!
সাব্বির বলে উঠলো–,,তোকে আমি গনায় ধরি না!
বৃষ্টি, জেরিনের চোখে অশ্রু জমলো,তাদের বড় ভাই!
বৃষ্টি জেরিন একসাথে বলে উঠলো–,,ভাইয়া!
সাহিল তাকালো মেয়ে দুইটার দিকে।তার দুটো বোনও আছে কি ভাগ্যবান ব্যক্তি সে!আগে শুনতো বোন নাকি মায়ের প্রতিচ্ছবি হয়,তাদের মতো করে আগলে রাখার মানুষ আর দুটো হয় না,সাহিলের কতো আফসোস ছিলো তার কেনো কোনো বোন নেই!
দু বোন এসে জড়িয়ে ধরলো তাদের ভাইকে।
সাহিল ইতস্তত করে বললো–,,জেরিন তুমি আমার উপর রেগে আছো তাই না?তোমার সাথে যা করে,,,!
সাব্বির মুখ থেকে কথা টেনে নিয়ে বললো–,,পুরনো কাসন্দি ঘা’টা নি”ষিদ্ধ! আর কি বলছো এটা তুমি সাহিল ব্রো?তুমি এমনটা না করলে ঘসেটিবেগমের মতো এমন একটা নাদুস”নুদুস বউ আমি পাইতাম নাকি?
জেরিন বলে উঠলো –,,সাব্বিরের বাচ্চা!
সাব্বির হাই তুলে বললো–,,তোর পেটে!
জেরিন বলে উঠলো–,,নাউজুবিল্লাহ!
নেহা একটু পর এক ট্রে ভর্তি সরবত নিয়ে হাজির হলো।
নেহা সরবত দিতে দিতে বললো–,,হুহ্! তোমরা আমাকে রেখে ভাইয়ার সাথে পরিচিত হয়ে গেলে?আমি তোমাদের জন্য কতো কষ্ট করে সরবত বানালাম!
সাব্বির কাঁদো কাঁদো ফেইস করে বললো–,,আমার নেহা বইন টা আমি আছি তো বোন আয় এখানে বস লজেন্স কিনে দিবো!
নেহা সবাইকে জুস দিয়ে গিয়ে বসে বললো–,,বুঝলে সাহিল ভাইয়া আমি কিন্তু অনেক খুশি আজকে থেকে আমার দুইটা ভাইয়া হয়েছে।আমি কিন্তু তোমার সবচেয়ে ছোট এবং সবচেয়ে ভালো বোন!
সাহিল বুঝলো নেহা মেয়েটা সহজ সরল এতো কিছু শোনার পরও তার সাথে সহজ হওয়ার জন্য আগ বাড়িয়ে কথা বলছে!বাকিরাও কতোটা গোল্ডেন হার্টের তার বুঝে নিলো কয়েকটা মুহুর্তে।
নিখিল মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,তুই আর ভালো?আমার সরবত দিলি না কেন?
–,,তোমার টা তুমি বানিয়ে খাও এতো দিতে পারবো না!
নিখিল চোখ রাঙানি দিলো,নেহা বলে উঠলো–,,বড় মা তোমার ছেলে দেখো চোখ দিয়ে আমাকে মার’ছে কিভাবে তাকায়!
নেহার অর্ধেক খাওয়া গ্লাস টা নিখিল টান বসালো।নেহাও টানলো টানাটানি করছে দুজনে তিন মা দেখছে আর কপাল চাপড়াচ্ছে আবার দুজনে লেগেছে এরা কবে বুঝদার হবে!
নেহা বলে উঠলো–,,দেখুন আপনি এটা খেলে আপনার পেটে রোগ জী’বাণু অ্যা’টাক করবে।অন্যের মুখের টা খেতে নেই!
নিখিল চোখ বড় বড় করে তাকালো,এতোবার বউয়ের ঠোঁটে চুমু খেলো আর এটাতো সামান্য সরবত!
নিখিল বললো–,,সবার সামনে মুখ খুলতে বাধ্য করবি না বললাম!
–,,যা খুশি করেন আমি দিবো না!
নিখিল বলে উঠলো–,,ওই যে রোজ রোজ তোকে চু,,,!
নেহা নিখিলের মুখ চেপে ধরে বললো–,,নির্লজ্জ পুরুষ!
নেহা সরবত দিয়ে রাগে গটগট করতে করতে চলে গেলো!
সাহিল সহ বাকিরাও হেসে দিলো এতোদিনের সব দুঃখ গুলো যেনো আজ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে সবার মন থেকে!
সবাই এখনও একটু চিন্তিত নিখিল সাহিল একে অপরের সাথে মিশবে তো!
নিখিল উঠে এসে দাড়ালো সাহিলের দিকে একটা এট”ম চকেলেট ছুঁ”ড়ে দিয়ে বললো–,,এট’ম খা চাপার জোর বাড়া।আমার ভাইকে এতো নেতিয়ে যাওয়া মানায় না!
চলবে….