একি বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু পর্ব-০১

0
17

#একি_বন্ধনে_জড়ালে_গো_বন্ধু
#পর্ব_১
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া

ছয় বছর বয়সে মা মা*রা গেল, বছর না পেরুতেই বাবা আরেকটা বিয়ে করল।
মেয়েটা পরিনতি মেনে নিতে শিখে গেলো সেই ছোট্ট বয়সে। অতটুকু বয়সে মাকে হারিয়ে, বাবারও কেমন দূরের হয়ে গেল!
বাবা একদিন বলল, “পুষ্পি! মা আমার? তুমি আজ থেকে তোমার নানুর সাথে থাকবা।”

মেয়েটা কি বুঝলো কে জানে, সে রাজি হয়ে গেল। আপসে মেনে নিল নিয়তি। বাবা-মা দুজনের কাউকে ছেড়েই না থাকতে পারা মেয়েটা দুজনকে ছাড়া থাকাটাই মেনে নিল নির্দিধায়!
সে তার নানুর কাছেই বড়ো হতে লাগল। নানু হলো তার আবদারের ঝুলি। বৃদ্ধ মানুষটা যতটুকু পারে তার চাইতেও বেশি করে আগলে রাখে। কারণ তার নিজের মেয়েটাও ছিল ভীষণ আদরের। নাতনিটাও যেন ঠিক মায়ের মতোই হলো। চলন-বলন-গরন সব কিছুতেই যেন মেয়েকে খুঁজে পায়। ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে ওঠে তাঁর।
বাবা শরীফ হোসাইন মাঝেমধ্যে এসে দেখে যায়। নিজেনিজেই হরেকরকম কথা বলে, মেয়েটা চুপচাপ শোনে, কখনো কখনো দু-এক বাক্য বিপরীতে বলে, কখনো বা বলে না। বাবার প্রতি তার অনেক অভিমান, মায়ের প্রতি যেই পরিমাণ মায়া, ঠিক সেই পরিমাণ। বাবাকে শেষ কবে বাবা বলে ডেকেছে তাও মনে করতে পারে না।

জীবনের কুড়ি বসন্ত পার করে এলো নিশ্চুপ অভিমানে, অভিযোগে। পড়াশোনায় ভালো মেয়েটা। তেমনি আল্লাহ গুনের কৌটাও পুর্ণ করে দিয়েছেন। অসুস্থ নানুর সেবা করে, নিজে নিজে রান্নাবান্না করে, ঘরটা এত সুন্দর করে পরিপাটি করে রাখে, যে কেউ দেখলে মুগ্ধ হবে।
নানু শায়লা বেগম অবাক হয়ে ভাবে, এত সংসারী মেয়েটা হলো কেমন করে? মুখচোরা, শান্ত স্বভাব, দশ কথায় রা নেই। মুখ ফুটে কিচ্ছু চায় না। কোনো আবদার নেই। মুখটার দিকে তাকালে চোখটা ভিজে ওঠে সোহাগে! তিনি না থাকলে এই মা-হারা মুখচোরা মেয়েটার কি হবে ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এত অভিমান, বাপের কাছে গিয়েও তো থাকবে না। এবার বুঝি সুপাত্রে দান করার সময় হয়ে এল।
শায়লা বেগমের ইচ্ছে বুঝি সৃষ্টিকর্তাকে স্পর্শ করলো।

পুষ্পির মেজো খালা শারমিন একদিন এক ভদ্রমহিলাকে সাথে করে নিয়ে এলো মাকে দেখতে। পরে অবশ্য জানা গেল মধ্যবয়সী ওই ভদ্রমহিলা শারমিন এর এক প্রতিবেশী। নাম সাবেরী খাতুন । ভীষণ নরম মনের মানুষ। স্বামী, এক মেয়ে আর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। সন্তানগুলো তার অতি আদরের। চোখের মনি। বেঁচে থাকার অতি প্রিয় সম্বল। নিজের সন্তান ব্যাতিত সন্তানতুল্য ছেলে-মেয়েদেরও প্রচন্ড আদর করেন তিনি। এ যেন তাঁর বিশেষ গুন।

পুষ্পি শরবত বানিয়ে নিয়ে এসে দাঁড়াল সাবেরী খাতুনের সামনে। চাঁদের মতন মুখখানা তার নজর কাড়তে দেরি করল না। শায়লা বেগম সেই মুগ্ধতা পূর্ণ করল গুনের বহর খুলে। সাবেরী খাতুন মুখে হাসি পরিস্ফুট করে কেবল বললেন, “মাশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ। আমি মুগ্ধ হলাম। সোনার টুকরো মেয়ে!”

সেদিনের পরই পুষ্পির জীবনের মোড় বদলে গেল। সংসারী মেয়েটা অফিসিয়ালি সংসারী হওয়ার পথে অগ্রসর হলো।
পুষ্পি নানুর কথার অবাধ্য কখনো হয়নি, সেবারও হলো না। যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেল হুট করে, তাকে এক পলক দেখল না পর্যন্ত। পাড়ার বান্ধুবীরা সুনামে পঞ্চমুখ হলো।
বিয়ের দিন বিকেলে খালা বললেন, “পুষ্পি, মারে? তুই রাজপুত্র পাইছিস। আল্লাহ তোর কপাল খুলে দিয়েছে। লাখে এক ছেলে। এইবার আমাদের শহরের সেরা কলেজের লেকচারার হলো। সাংঘাতিক ব্রিলিয়ান্ট। দেখতেও মাশাআল্লাহ। তুই সুখী হবি, মা। অনেক সুখী হবি ইনশাআল্লাহ। আমি তোকে বলেছিলাম না? বাপের বাড়ি যে সুখ না পায়, পরের বাড়ি সে অসম্ভব সুখী হয়! মিলিয়ে নিস আমার কথা তুই।”

পুষ্পি শুধু এতটুকুই জানে মানুষটার ব্যাপারে। আর কিচ্ছু জানে না। তার আগ্রহও নেই। সে শুধু চায়, সবার ইচ্ছে পূর্ণ করতে। সে তো নাম-ধাম-রূপ কিচ্ছু চায় না। তার তো কেবল চাই একজন মানুষের মতো মানুষ। যার মনটা হবে স্বচ্ছ সমুদ্রের ন্যায়! যে মেয়েটার সকল অপূর্ণ আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিবে চোখের পলকে!

মাগরিবের পর এক রূপালী সন্ধ্যায়, একেবারে অজানা এক মানুষের সাথে হুট করে স্বপ্নের ন্যায় বাধা পড়ে গেল পুষ্পির জীবন।

পুষ্পির বাবা শরিফ হোসেন, মেয়ের সামনে কেমন যেন অপরাধীর মতো হয়ে থাকল সর্বদা। নিজেকে ব্যার্থ পিতাও ভাবলেন কি? ভাবলেন বোধহয়।
তিনি মেয়ের বিয়ের শুরু থেকে শেষ অব্দি একটা বারও কথা বলেননি মেয়ের সাথে। কেমন যেন একটা ইতস্ততবোধ। শেষকালে আর সামলাতে পারলেন না। মেয়েকে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। আর বললেন, “মারে? বাপকে তুই মাফ করে দিস। আমি তোর কোনো ইচ্ছেই পূরণ করতে পারিনি৷ আমি একজন ব্যার্থ বাবা। তোর নতুন জীবন সুখের হোক। অফুরান সুখে ভেসে যাক তোর জীবন, মা।”
পুষ্পি প্রতিক্রিয়া স্বরূপ কিছু বলল না ঠিক তবে কেঁদে ভাসাল বুক। এই মানুষটাকে যে ও অনেক ভালোবাসে! তার প্রতি যে ওর কত অনুরাগ জমে আছে! গাড়িতে উঠেও কান্না থামে না মেয়ের। নানুর জন্যেও কষ্ট হতে লাগল এক বুক! নিজের নতুন সঙ্গীকে নিয়েও ভাবল না এক ফোঁটা! জানলার কাঁচে হাত রেখে কেঁদেই গেল অনবরত।

পাশে বসা মানুষটা নিরবে দেখল সব। দুঃখ বিসর্জনে বাঁধা দিতে নেই। কষ্ট চেপে রাখতে নেই। বাধনহারা পাখির মতো উড়িয়ে দিতে হয়, বিসর্জন দিতে হয়। চোখ, মন অসীম মমতায় ভরে উঠল মানুষটার। জীবনে প্রথম গভীর ভাবে কারো অনুভূতি স্পর্শ করল কী তাকে? করল বোধহয়। বুকের মধ্যিখানে ঝংকার খেলল, কন্ঠ রোধ হয়ে এলো সুমধুর মমতায়।
কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল মেয়েটা! কন্দনরত রমনীদের এমন অপরূপা মায়াময় লাগে সে ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ ছিল এই পুরুষ মানুষটা।
মেয়েটার মাথাটা সামান্য হেলিয়ে নিজের কাঁধে রাখল সে। গভীর মমতা দিয়ে ড্রাইভারকে বলল, “ভাই? এসিটা একটু বাড়িয়ে দিন।”
গাড়ির হালকা আলোয় মেয়েটার দিকে চায়। কী ভীষণ মায়া লাগে। বড়ো আপন আপন লাগে। মাথার টিকলিটা সরিয়ে একপাশ করে রাখে। ছোট ছোট চুলগুলো সরায় কপাল থেকে। তারপর নিজের চোখটাও বুজে ফেলে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে।

বাড়ি যখন এলো, তখন রাত দশটা। পুরো বাড়ি হৈহৈ-রৈরৈ করে উঠল। ‘নতুন বউ এসেছে, নতুন বউ এসেছে’ ধ্বনিতে পুরো বাড়ি আলোড়িত হয়ে উঠল।
পুষ্পির ঘুম ভেঙে গিয়েছে ততক্ষণে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ কোলে তুলে নিল তাকে। পুষ্পি গলা ধরে মুখ পানে চাইল। এই প্রথম দেখল মানুষটার মুখ। এই মুখের ব্যাখা কেমন করে করতে হয়? হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতে লাগল ক্রমশ। অন্যরকম অনুভূতি, একেবারে অন্যরকম। শ্যামবর্ণ মুখ, চোখ দুটো স্বচ্ছ জল! এই মানুষটা……!

এরপরের সময়গুলো অনেক ঝামেলার। এত মানুষ, এত ভিড়, এত হট্টগোল! মেয়েটার বড্ড ক্লান্ত লাগছিল। সারাদিন ঠিকঠাক কিচ্ছু খাওয়া হয়নি। এত মানুষের ভেতর এখনও খেতে পারল না। ননদ এসে ওকে রিল্যাক্স করতে মানুষকে সরাল। ননদটা ভারী মিশুক। অল্প সময়েই ভাবি ভাবি করে মাতোয়ারা হয়ে গেল। দেখতেও কি মিষ্টি! নাম মুনমুন। নিজের ভাইয়ের গুনকীর্তনও করল বৈ কি! শাশুড়ি এসেও খুব আদর করল। মেয়েটার কষ্ট বুঝে রুম ফাঁকা করতে লাগল।
ধীরে ধীরে ভিড় কমল। রুম ফাঁকা হতে হতে পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে গেল। রাত কত হলো কে জানে!
খোলা জানালা দিয়ে শো শো বাতাস বইছে। পুষ্পি জানালা দিয়ে বাহিরে চাইল। আজ আকাশে পূর্ণ চাঁদ। আচ্ছা? আজ কি পূর্ণিমা? এত সুন্দর আকাশটা আজ! কিন্তু মনটা ওর বিষন্নতায় পূর্ণ। নানু কি করছে এখন? নিশ্চয়ই খুব কাঁদছে! ভাবতেই চোখ ভিজে উঠল মেয়েটার।
দরজায় দাঁড়িয়ে নিশ্চুপে এই কন্দনরত রমনীকে দেখল কেউ একজন। আচ্ছা? আজ অব্দি কি এমনও কখনও হয়েছে যে, মানুষের কান্নাও কেউ মুগ্ধ হয়ে দেখে!
দরজায় দুবার ঠকঠক আওয়াজ করল। হঠাৎ চমকে উঠল মেয়েটা। পরে স্থির হলো।
ভরাট পুরুষালি কন্ঠ ভেসে এলো, “পুষ্প! আসব?”

পুষ্পি চমকে উঠল! ওর মা ব্যাতিত এমন করে আর কেউ ডাকেনি কোনোদিন! এই মানুষটা….
অতি সাধারণ দেখতে শ্যাম বর্ণের এই মানুষটা এমন অসাধারণ ভাবে চমকে দিল কেমন করে!
পুষ্পির নিরবতা ভাঙাতেই বুঝি মানুষটা পুনরায় জিজ্ঞেস করল, “আসব আমি?”
মানুষটার থেকে চোখ সরিয়ে পুষ্পি খুব ধীর কন্ঠে বলল, “আসুন, আপনার ঘর।”

মানুষটা মৃদু হাসল। ঘরে প্রবেশ করতে করতেই বলল, “যতটুকু আমার ততটুকু তোমারও।”
বলতে বলতেই পুষ্পির সামনে বসল। হাতে রাখা ঠান্ডা লেবুর শরবতটা এগিয়ে দিল ওর দিকে। বলল, “আজ অনেক গরম পড়ছে৷ এটা খাও, ভালো লাগবে।”
গ্লাসটা নিল মেয়েটা। খুব গলা শুকিয়ে এসেছিল সত্যি। মুখচোরা হওয়ার সুবাদে বলতেও পারছিল না কাউকে।
মানুষটা ততক্ষণে উঠে আলমারির কাছে গেল। আলমারি খুলে একটা লাল রঙের তাতের শাড়ি বের করে পুষ্পির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“চেঞ্জ করে আসো। তোমার ওই ভারি শাড়ি দেখে আমারই হাঁসফাঁস লাগছে, কেমন করে পরে আছ তাই ভাবছি। যাও ফ্রেশ হয়ে আস। কেন যে এত ভারী পোশাক পড়তে হয় বিয়েতে!”

পুষ্পি ক্রমশ চমকের উপর চমকপ্রদ হচ্ছে। আচ্ছা? মানুষটা কি মাইন্ড রিডার? কেমন করে জানল, ওর যে খুব কষ্ট হচ্ছে এই শাড়িতে!

পুষ্পি যেতেই মানুষটা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। এই প্রথম আকাশের ওই চাঁদ খুব একটা মুগ্ধ করতে পারল না তাকে। মানুষ সুন্দরের চেয়েও সুন্দর কিছু দেখে ফেললে, পূর্বের মুগ্ধতায় খানিক ভাঁটা পড়ে। এটাই মনুষ্য স্বভাব। চোখ বুজে দীর্ঘ এক শ্বাস নিল। যখন বুঝল পুষ্পি বেড়িয়ে এসেছে, তখন পেছন ফিরে চাইল।
চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের বিমোহিত, হতচকিত হয়ে গেল। ঘোর লাগা কন্ঠে বলল, “ভাগ্যিস এই শাড়িটা পরে তুমি বিয়ে করোনি আমায়!”
পুষ্পির সাংঘাতিক কৌতুহল হলো। খুব কি খারাপ দেখাচ্ছে তাকে? কিন্তু মুখে কিছু বলল না, চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
মানুষটা পুষ্পির কাছে এলো। আপন মানুষের মতো মাথায় আলতো করে হাত ছোঁয়াল। প্রচন্ড দরদ দিয়ে কইল, “ভয়ংকর সুন্দর লাগছে। যত সুন্দর লাগলে, চাঁদের সৌন্দর্যও নগন্য লাগে ঠিক ততখানি। মানুষের এতখানি সুন্দর হওয়া অনুচিত বোধকরি।”

পুষ্পি অভিভূত হয়ে গেল। এই মানুষটা এত সুন্দর করে কথা বলে! এত সুন্দর!
পুষ্পিকে চুপ থকতে দেখে মানুষটা নিরব হাসল। পাঞ্জাবী চেঞ্জ করতে করতে বলল,
“তুমি তো ভারী লাজুক! এত লজ্জাবতী লতা হলে তো মুশকিল! আমি তোমাকে মিনিটে মিনিটে সুন্দরীতমা বলে ডাকবো, আর তুমি লাজেরাঙা বউ হয়ে নুইয়ে পড়বে!” বলেই আওয়াজ করে হাসল।
হাসল পুষ্পিও! মানুষটা এত সহজ! এত সহজ তাঁর আপন করে নেয়ার কৌশল!
পুষ্পি খাটের এক কোনায় চুপ করে বসে রইল। প্রচন্ড খুদা লেগেছে ওর। ঠিক মতো খাওয়া হয়নি সারাদিনে। খুদা নিয়ে ঘুমাতেও পারে না মেয়েটা। কি করবে এখন!
আচমকা মানুষটা বলে উঠল, “পুষ্প? তোমার পাশের টেবিলটাতে খাবার রাখা আছে। খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। সারাদিনে অনেক ধকল গেল।”

পুষ্পি এতখানি অবাক বোধহয় এই ছোট্ট জীবনে হয়নি। বিস্ময় নিয়ে তাকাল পাশের ঢেকে রাখা প্লেটটার দিকে, তারপর তাকাল মানুষটার দিকে! যাদুর মানুষ! এক রাতেই কি ওকে কাবু করে ফেলবে নাকি, আশ্চর্য!
পুষ্পিকে এমন অবাক হয়ে যেতে দেখে বোধহয় মানুষটা ভারী মজা পেল। খানিক রসিকতা করে বলল, “কী? খাবা না? খাইয়ে দিতে হবে? তখন তো আবার লাজে মরে যাবা! লজ্জাবতী লতা!”

পুষ্পি মুখে কিচ্ছু বলল না। প্লেট নিতে নিতে খুব সুন্দর করে হাসল। এত সুন্দর যে, পাশের রসিকতাপূর্ণ মানুষটার মনটা নিমিষে গলে বরফ হয়ে গেল! বিমুগ্ধ হলো। নিশ্চুপ বসে পুষ্পির খাওয়া দেখল। মেয়েটা অস্বস্তি নিয়ে বেশ অনেকখানি খেলো, বাকিটুকু রেখে দিল।
মানুষটা বলল, “আমায় দাও, আমি খাই। কি নিষ্ঠুর তুমি! আমার খুঁদা লেগেছে কিনা একবার জানতেও চাইলে না!”
পুষ্পি একেবারে আহাম্মক হয়ে গেল। সত্যিই তো! এত বোকা ও। এত ম্যানারলেস, ইশশ!

মানুষটা ওর হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে খেতে আরম্ভ করল। এই পুরুষ মানুষটায় পুষ্পি মুগ্ধ হতে আরম্ভ করল খুব দ্রুত। এত সুন্দর করে খায় মানুষটা। তাঁর প্রত্যেকটা কর্মকান্ড এত দারুণ!

একটা প্রশ্ন পুষ্পির মনে খঁচখঁচ করতে আরম্ভ করল। এই মানুষটার ব্যাপারে একেবারে অজ্ঞ সে। কিচ্ছুটি জানে না। এমন কি নামটা অব্দি…..

প্রথম বারের মতো পুষ্পি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল, “আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?”

মানুষটা খাওয়া বন্ধ করে পুষ্পির দিকে অবাক চোখে চাইল। বলল, “জনম আমার সার্থক, চুপকথার মুখে বুলি ফুটল!”
পুষ্পি এবারও মৃদু হাসল। জিজ্ঞেস করল,
“আপনার নাম কী?”
মানুষটা যেন আকাশ থেকে পড়ল। খানিকক্ষণ অবাক চোখে চেয়ে থেকে; আসমান-জমিন কাঁপানো হাসিতে ভরিয়ে দিল সারা ঘর!
হাসতে হাসতে বিষম খেল, তবুও হাসি থামল না। পুষ্পি দ্রুত পানি এগিয়ে দিল। সে বুঝতে পারছে না, কি এমন হাসির কথা বলেছে!

মানুষটা পানি খেয়ে খানিক স্থির হলো। পুষ্পির দিকে তাকিয়ে বলল, “পুষ্প? তুমিই বোধহয় পৃথিবীর একমাত্র বঁধু যে নিজের বরের নামটা অব্দি জানো না! কি সৌভাগ্য আমার। এমন ভারী মজার ঘটনা বোধহয় প্রথম ঘটলো এই মহাজগতে।” বলেই পুনরায় হেসে উঠল।
ইশশ! আশেপাশের মানুষ এমন তুরকালাম বাধানো হাসি শুনলে কি ভাববে!
(চলবে)