মন একে একে দুই পর্ব-৪+৫

0
8

#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ০৪ (স্নিগ্ধময়ী!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী

– ‘হিসসস্! আস্তে এটা লাইব্রেরী!’
প্রাহীরা হাসি থামিয়েও আবার হাসতে লাগলো। শোয়াইব ওদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। এভাবেই টুকটাক গল্প করতে লাগলো ওরা। হুট করে প্রাহী তন্নিকে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘নেক্সট ক্লাস এর সময় হয়ে গেছে না! চলো উঠি এখন!’
তন্নি হাতঘড়ি দেখতে দেখতে বললো,
– ‘হ্যাঁ চলো!’
– ‘এক মিনিট আমার কলম কিনতে হবে। আমি কিনে নিয়ে আসি বরং! তোরা ক্লাসে চলে যা। আমি আসছি!’
প্রাহী চেয়ার থেকে উঠে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চলে গেলো। তন্নি উঠে বই হাতে নিয়ে উঠতে গেলে কারোর কাঁধের সাথে হালকা ধাক্কা খেয়ে সামনে তাকালো। দেখলো শোয়াইব ক্রাচে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তন্নি শোয়াইবের দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘সরি। আমি…’
তন্নির কথার মাঝেই শোয়াইব হালকা কন্ঠে বললো,
– ‘ইটস্ ওকে। আমি নিজেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। তুমি আগে যাও!’
তন্নি শোয়াইবের দিক তাকিয়ে এক পলক সামনে এগিয়ে আবার পিছন ফিরলো। দেখলো শোয়াইব ক্রাচে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। তন্নি শোয়াইবের দিক এগিয়ে ওর সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। পায়ের দিকটা ভালোভাবে দেখে শোয়াইবের দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘পায়ের রগে টান খেয়েছে আপনার!’
শোয়াইব কিছু না বলে আস্তে আস্তে হাঁটার চেষ্টা করতেই তন্নি আলতো হাতে শোয়াইবের হাত ধরে ওকে বললো,
– ‘একা হাঁটা এখন রিস্ক। আমি সাহায্য করছি!’
শোয়াইব ওর হাতে থাকা তন্নির হাতের উপর একনজরে তাকিয়ে রইলো। তন্নি শোয়াইবের দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘আসুন! ক্লাসের জন্য দেরী হয়ে যাচ্ছে!’
শোয়াইব মাথা নাড়িয়ে আস্তে ধীরে হাঁটতে লাগলো আর নিজ হাতের দিক তাকিয়ে রইলো।

পরপর টানা ক্লাস শেষে ভার্সিটি থেকে বের হলো প্রাহী। শোয়াইব আর তন্নি ক্লাস শেষেই বাড়ি ফিরে গেছে। দুপুর বাজে এখন একটা। সকালের হালকা মিষ্টি রোদ টা এখন কড়া রোদে পরিণত হয়েছে। যার দরূন বেশ গরম লাগছে প্রাহীর। ছাতাটাও আনা হয়নি আজ। নাহলে মাথার উপর ছাতা মেলে দিলেও কিছুটা নিস্তার পাওয়া যেত! তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে পারলেই এখন বাঁচে। গরমে কপাল, গাল বেয়ে ঘাম বেয়ে পড়ছে। কোনোরকম বাড়ি যেতে পারলেই হয় এখন!

– ‘এই প্রাহীইইই! দাঁড়া।’
কারোর আওয়াজে হাঁটার বেগ থামিয়ে পিছন ফিরতেই প্রাহী দেখলো শিমলা তাড়াতাড়ি হেঁটে ওর দিক আসছে। চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘কিরে! তুই এখানে এখন? ক্লাস তো শেষ!’
শিমলা ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাপাতে হাপাতে বললো,
– ‘আরে জানি!’
প্রাহী ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ‘তাহলে? আর সকালবেলা কতবার ফোন দিলাম! ধরলি না যে!’
– ‘ঘুমে ছিলাম কিভাবে ধরবো! রাতের বেলা কাজ শেষে ঘুমিয়েছিই তিনটার সময়। যাই হোক শোয়াইব ওরা কই? চলে গেছে?’
প্রাহী মাথা নাড়ালো। শিমলা ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ‘ওকে ম্যাসেজ দিয়েছিলাম আমি একটু আগে! তোদের ক্লাস চলছিল মেইবি তখন! বলেছিল ও ক্লাস শেষে থাকবে। আবার তুইও আছিস সাথে এজন্য আমি আরও একটু আগে গেলাম!’
প্রাহী হালকা শ্বাস ফেলে বললো,
– ‘শোয়াইবটার রগে টান খেয়েছে। তাই ও চলে গেছে ক্লাস শেষেই। কেন! কিছু দরকার ছিল!’
– ‘হ্যাঁ ওকে বলতাম যেন বিয়ের দিন আসে। রাতুল আর তিতলীকে আমি ফোন দিয়ে বলেছি। ওকে ভেবেছিলাম এসে আবারও বলবো।’
প্রাহী হাত নাড়িয়ে বললো,
– ‘অসুবিধে নেই আমি বলে দিয়েছি শোয়াইবকে। ও বলেছে ও আসবে বিয়ের দিন। প্যারা নিস না!’
– ‘আচ্ছা! তাহলে তো হলোই। আচ্ছা এখন চল আমার সাথে।’
প্রাহী ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ‘চল মানে কোথায় যাব!’
শিমলা চোখমুখ কুঁচকে বললো,
– ‘আরে মেহেন্দি তে আপা যেই ব্লাউজ পড়বে সেটা অনেক ঢিলে হচ্ছে নাকি ওর। বাজারের দিক যেতে হবে এটা ফিটিং করার জন্য। আবার কিছু কেনাকাটাও আছে। ভাবছি টেইলার্সে ব্লাউজ টা ঠিক করতে দিয়ে কেনাকাটা গুলো সেরে ব্লাউজ টা নিয়েই বাড়ি ফিরবো। তাহলে আর এদিকটা আসা লাগবেনা। এখন তুই আমার সাথে একটু চল। একলা যেতে ভালো লাগছেনা।’

শিমলার কথায় প্রাহী মনে মনে ভাবলো, ওর নিজেরও কিছু সামগ্রী কিনার ছিলো। ভার্সিটির স্যার আজকে বই কিনতে বলেছে সেটা কিনতে হবে। আবার খাতাও কিনতে হবে কিছু সাথে প্রয়োজনীয় আরও জিনিস তো আছেই। কিছুক্ষণ ভাবার পর শিমলার দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘আচ্ছা চল!’

শিমলার সাথে কিছুদূর হাঁটার পর পরিচিত ধূসর রাঙা গাড়িটা দেখে প্রাহী থমকে দাঁড়ালো। মাথা নাড়িয়ে এদিক সেদিক তাকাতেই অস্পষ্ট গলায় বলে উঠলো,
– ‘ইনি এখানে?’
প্রাহীর কথা শুনে শিমলা সামনে তাকিয়ে দেখলো আকসাদ গাড়ির থেকে একটু দূরে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শিমলা লাজুকভাবে মুচকি হেসে বললো,
– ‘হ্যাঁ আকসাদ ভাই আমাদের নিয়ে যাবে।’
প্রাহী চোখ বড়বড় করে শিমলার দিক তাকালো। উনি যাবে সাথে! এটা জানলে ও কখনোই শিমলার সাথে আসতো না! প্রাহী শিমলার দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘আমি যাব না। তুই যা।’
শিমলা হাঁটা থামিয়ে বললো,
– ‘কেন?’
– ‘এমনি তুই যা।’
শিমলা প্রাহীর হাত করে হালকা কন্ঠে বললো,
– ‘তুই কি রেগে আছিস এখনও কালকের বিষয়টার জন্য! আরে আকসাদ ভাই মজা করেছে তোর সাথে।’
প্রাহী আলতোভাবে মাথা নেড়ে বললো,
– ‘না রেগে নেই। উনি তো তোর সাথে আছেই তাহলে আজ না হয় উনার সাথেই যা! আমি…’
শিমলা প্রাহীকে থামিয়ে ওর হাত ধরে ওকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে বললো,
– ‘কোনো কথা না। আমার সাথে যাচ্ছিস তুই। চল এখন।’
অগত্যা প্রাহী শিমলার সাথে হেঁটে যেতে লাগলো। সামনে তাকাতেই দেখলো আকসাদ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে ওদের দিক তাকিয়ে আছে। প্রাহী চোখ সরিয়ে হালকা শ্বাস ফেলে মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো আকসাদ ওদের সামনে এসে দাঁডিয়েছে। শিমলা হালকা হেসে আকসাদকে বলে উঠলো,
– ‘আকসাদ ভাই প্রাহী আমাদের সাথে যাবে।’
আকসাদ ঠোঁটের কোনে মুচকি হেসে বললো,
– ‘তাই নাকি! দ্যাটস গুড দেন! তো কেমন আছেন মিস প্রাহী!
প্রাহী জিভ দ্বারা শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে বললো,
– ‘জ্বী ভালো। আপনি!’
আকসাদ ওর দিক তাকিয়ে চোখের সানগ্লাস টা খুলে হাতে নিয়ে বললো,
– ‘আই এম ফাইন!’
কথার মাঝে শিমলা আকসাদকে বললো,
– ‘আকসাদ ভাই একটু কেনাকাটা করতে হবে আমাদের। অসুবিধে হবে তোমার কোনো!’
আকসাদ মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বুঝিয়ে বললো,
– ‘আমি আছি তোরা শপিং কর। প্রব্লেম নেই!’

ওদের কথার মাঝে প্রাহী একপলক আকসাদের দিক তাকালো। মানুষটা নরমাল ড্রেসেই এসেছে। হালকা আকাশী রঙের থ্রি কোয়ার্টার টি-শার্ট সাথে অফ হোয়াইট লুজ প্যান্ট পড়নে দীর্ঘ গড়নের বলিষ্ঠ শরীরের লোকটাকে বেশ স্মার্ট লাগছে। কপালের সামনে সিল্কি চুলগুলো অগোছালোভাবে পড়ে আছে। ফর্সা মুখটা রৌদ্রতাপের কারণে হালকা লাল হয়ে আছে। মানুষটাকে কিছুসময় পর্যবেক্ষণ করার পর তার চোখে চোখ রাখতেই দেখলো আকসাদ শিমলার সাথে কথা বলার মাঝেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। প্রাহী চোখ নামিয়ে ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছে এদিক সেদিক তাকালো।

আরসাদের সাথে কথার মাঝে শিমলা প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘কিরে সাদা গোলাপ কই পেলি! কিনেছিস নাকি কেউ দিয়েছে!’
প্রাহী শিমলার দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘না কিনিনি। একটা বাচ্চা ছেলে দিয়েছে।’
শিমলা হেসে বললো,
– ‘আচ্ছা! বেশ সুন্দর লাগছে ফুলটা তোর চুলের ভাঁজে! যে ছেলেটা তোকে এই সাদা গোলাপ দিয়েছে তাকে বলিস আমাকেও এমন একটা ফুল দিতে কেমন!’
প্রাহী সামনে তাকিয়ে দেখলো আকসাদ এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে আকসাদের সামনে প্রশংসা করায় প্রাহী একটু লজ্জা পেলো। ধ্যাত! আগেভাগে উচিত ছিলো ওর ফুলটা খুলে ব্যাগে রেখে দেওয়া। শিমলা প্রাহীর দিক হালকা হেসে বললো,
– ‘আমি গাড়ির দিক এগোচ্ছি বিয়ের কার্ডও কয়েকটা বিলাতে হবে আজ। তুই আয়!’
বলেই শিমলা আগেভাগে হেঁটে চললো। প্রাহী শিমলার দিক তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কানের পাশের চুলের ভাঁজ হতে গোলাপটা খুলতে যাবে তার আগেই দেখলো কেউ ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রাহী চোখ তুলে দেখলো আকসাদ ওর দিকে পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাহী আলতো কন্ঠে বললো,
– ‘স..সরুন!’
আকসাদ শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
– ‘না!’
প্রাহী হালকা ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ‘কেন?’
আকসাদ ওর চুলের ভাজে রাখা হাতের দিক তাকিয়ে ইশারা করে বললো,
– ‘শুভ্র গোলাপটা চুলের ভাঁজ হতে সরাবেন না মিস প্রাহী!’
প্রাহী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। প্রাহী ছোটো করে একটা ঢোক গিলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আকসাদ ওর দিকে ঝুকে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,
– ‘চুলের ভাজে ওই শুভ্র গোলাপটায় আপনাকে অত্যন্ত ‘স্নিগ্ধময়ী’ লাগছে প্রাহী। ফুলটার সৌন্দর্য যেখানে মানিয়েছে সেটা বরং ওখানেই থাকুক!’
আকসাদের এই শান্ত ধীর কথার প্রেক্ষিতে প্রাহী হালকা নড়ে উঠলো। চেয়েও কিছু বলতে পারলো না! চুলের ভাজে থাকা হাতটা এখন ব্যাগ চেপে ধরেছে।

আকসাদ প্রাহীর নার্ভাসনেস দেখে বাঁকা হেসে সাইড করে দাঁড়ালো। কাঁপা কাঁপা চোখে আকসাদের দিক একবার তাকিয়ে প্রাহী ছোটো ছোটো পায়ে গাড়ির দিক এগিয়ে গেলো। পিছনে আকসাদ স্থির দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

স্নিগ্ধ বদন সহিত কম্পিত চাহনীর প্রান্তর
টানছে আমায় নিরান্তর!
নিদারুণ অনুভূতির নিষ্পত্তি কেবল তোমার সন্নিধানে!

চলবে,,,

#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ০৫ (ফার্স্ট ট্রিট)
#লেখনীতেঃ- #ফেরদৌসী_নবনী

– ‘প্রাহী তুই কি কিছু কিনবি?’
শিমলার প্রশ্নে প্রাহী গাড়ির পিছন সিট থেকে মাথা দুলিয়ে বললো,
– ‘হ্যাঁ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আমারও কিনার ছিলো।’
শিমলা পিছন ফিরে বললো,
– ‘তাহলে আসতে চাইছিলি না কেন?’
আকসাদ ড্রাইভ করতে করতে আড়চোখে পিছন ফিরে প্রাহীর দিক তাকালো। প্রাহী একপলক সেদিকে তাকিয়ে বললো,
– ‘অনেক গরম তাই ভেবেছিলাম পরে একফাকে এসে কিনব। তাই আর কি!…’
– ‘ তো এখানে এত্ত ভাবাভাবির কি আছে এখানে! আমার সাথে তো যাচ্ছিসই!’ বলে সামনে ফিরে হাতে থাকা লিস্টের কাগজের দিক তাকালো শিমলা।
আকসাদ গাড়ি ড্রাইভ করতে কর‍তে সামনের মিরর দিয়ে প্রাহীর দিক তাকালো। সেই গভীর চাহনীতে প্রাহী বারবার অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছে। চোখ বন্ধ করে ছোটো একটা শ্বাস ফেলে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরের দিক তাকালো। সকালের মতো রাস্তা এখন আর নীরব নেই। মোটামুটি জনমানব আছে বলা চলে!

শিমলার সাথে টুকটাক কথা বলা অবস্থায় বাজারের সামনে আকসাদ গাড়ি থামালো। শিমলার দিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘এখানেই থামাবো!’
– ‘হ্যাঁ এখানেই নামব। এখান থেকে একটু হাঁটলেই মার্কেট। প্রাহী নাম।’
প্রাহী মাথা নাড়িয়ে গাড়ি থেকে নামলো। আকসাদ ওদের দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘তোরা সামনে এগোও। আমি গাড়িটা পার্ক করে আসছি!’
শিমলা মাথা নাড়িয়ে প্রাহীকে নিয়ে মার্কেটের দিক এগোলো। দুপুর বেলা আন্তাজে মানুষ এর ভীড় মোটামুটি ভালোই বলা চলে। শিমলা ওর বড় বোনের ব্লাউজ ঠিক করার জন্য আগেভাগে টেইলার্সে গেছে। প্রাহী একটু বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। কি কি কিনবে সেটা ভাবছে। টাকায় হবে কি না সেটা জানার জন্য ব্যাগ চেক করতে যাবে তার আগেই কারো ধাক্কায় ও পড়ে যেতে নিলে এক জোড়া শক্ত হাত ওর কাঁধ আলতোভাবে চেপে ধরলো। প্রাহী ভ্রু কুঁচকে মাথা উঁচিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো আকসাদ ওর দিক সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। তার মানে উনিই ওকে! কাঁধে থাকা আকসাদের হাতের আলতো স্পর্শে ও খানিকটা কেঁপে উঠলো।
– ‘আরেকটু হলেই তো পড়ে যেতেন মিস প্রাহী!’
আকসাদের কথায় প্রাহী আমতা-আমতা কন্ঠে বললো,
– ‘আম…আসলে ব্যাগ চেক করছিলাম তাই আমি…’
প্রাহীকে থামিয়ে আকসাদ হালকা কন্ঠে বলে উঠলো,
– ‘এটা মার্কেট মিস প্রাহী! আশেপাশে অনেক মানুষজন এক সাইড হয়ে নিজের কাজ করবেন!’
প্রাহী আলতোভাবে মাথা নাড়ালো। ততক্ষণে আকসাদ প্রাহীকে সোজা করে দাড় করিয়ে দিল। শিমলা টেইলার্স থেকে বের হয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই প্রাহী আর আকসাদকে দেখে ওদের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। আকসাদ প্রাহীর থেকে নজর সরিয়ে শিমলাকে দেখেই বললো,
– ‘তুই কোথায় ছিলি!’
– ‘টেইলার্সে আপার ব্লাউজ টা দিতে! কেন কিছু হয়েছে!’
আকসাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রাহী বললো,
– ‘না কিছু হয়নি। তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম!’
শিমলা হেসে বললো,
– ‘আচ্ছা চল তাহলে! তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে হবে সন্ধ্যার পর আবার মেহেদীর অনুষ্ঠান বাড়ি যেয়েও কাজ আছে।’
বলে শিমলা হাঁটতে লাগলো। প্রাহী আলতো পায়ে এগোতে যাবে তার আগেই পিছন হতে আকসাদ শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
– ‘সাবধানে চলাফেরা করবেন মিস প্রাহী। আই রিপিট সাবধানে ওকে!’
প্রাহী মাথা নাড়িয়ে এগোনোর আগে আকসাদের দিক তাকিয়ে ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘আপনি…।’
আকসাদ পকেটে হাত রেখে বললো,
– ‘আমি আসছি আপনার পিছু পিছু। আপনি এগোন!’
প্রাহী হালকা নড়েচড়ে ব্যাগটা শক্ত করে চেপে ধরে সামনে এগোলো।

প্রাহী আর শিমলা মিলে নিজেদের মতো করে কেনাকাটা করতে লাগলো। যেহেতু আজ মেহেদীর অনুষ্ঠান তাই ওই অনুযায়ী শিমলা বাড়তি যা যা লাগে কিনতে লাগলো। প্রাহী নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনে এক পাশে যেয়ে শাড়ী দেখতে লাগলো। প্রাহী হঠাৎ একটা জিনিস খেয়াল করলো এই ভীড়ের মধ্যেও কারো গায়ের সাথে ওর তেমন আর ধাক্কা লাগছে না। প্রাহী ওর মাথাটা একটু পিছনে ফিরিয়ে ভাবলো লাগবেই বা কিভাবে! আকসাদ যেভাবে ওদের আগলে রেখে হাঁটছে তাতে কারো সাথেই ওদের তেমন ধাক্কা লাগছে না! কারণ এমনি সময়ে মার্কেটের এইদিকটায় আসলে মানুষের ধাক্কাধাক্কি তে নাজেহাল হয়ে যায় ও। মাঝেমধ্যে বাবা বা নক্ষত্র সাথে আসলে ঠিক এভাবেই আগলে রাখে প্রাহীকে। যেমনটা আকসাদ ওদের রাখছে! সামনে ফিরে প্রাহী না চাইতেও আকসাদের দিক আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

শাড়ী দেখার এক পর্যায়ে আকসাদ প্রাহীর পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘শাড়ী পছন্দ হয়েছে!’
প্রাহী আকসাদের দিক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে বললো,
– ‘না মানে এমনিই দেখছিলাম।’
আকসাদ প্রাহীর দিক এক ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘আচ্ছা! বাই দ্য ওয়ে একটা হেল্প করতে হবে আমাকে মিস প্রাহী!’
প্রাহী চমকে আকসাদের দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘হেল্প!’
– ‘ইয়েস মিস প্রাহী! ছোটো একটা হেল্প!’
প্রাহী এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো শিমলা দোকানদারের সাথে দামাদামি করছে। প্রাহী আকসাদের দিক তাকিয়ে শিমলাকে ইশারা করে বললো,
– ‘শিমলাকে বলুন! ও থাকতে আমি কেন?’
আকসাদ প্রাহীর দিক এক পা এগিয়ে বললো,
– ‘আপনি থাকতে শিমলাই বা কেন মিস প্রাহী!’
প্রাহী ছোট্ট ঢোক গিলে বললো,
– ‘মানে!’
আকসাদ একটা শ্বাস ফেলে বললো,
– ‘মানে কিছুনা। আমার সত্যিই একটা হেল্প লাগবে মিস প্রাহী!’
প্রাহী কিছু না বলে আকসাদের দিক তাকিয়ে রইলো। ওকে চুপ থাকতে দেখে আকসাদ আবারও বলে উঠলো,
– ‘আই রিয়েলি নিড ইউর হেল্প মিস প্রাহি!’
এরূপ ভাবে অনুরোধ করায় প্রাহী আর না বলতে পারলো না। নরম কন্ঠে বললো,
– ‘আচ্ছা বলুন! কি হেল্প করতে পারি!’
আকসাদ পকেটে হাত রেখে বললো,
– ‘ফলো মি!’
বলে আকসাদ হাঁটতে লাগলো। প্রাহী একবার পিছন ফিরে শিমলার দিক তাকিয়ে আকসাদের পিছন পিছন হাঁটতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর আকসাদ থামলো। আকসাদের দেখাদেখি প্রাহীও থেমে গোল গোল চোখে আশপাশটা দেখলো। এটা তো জেন্টস সাইড! চারিদিকে ছেলেদের জামা,জুতো,অন্যান্য জিনিস। এখানে আকসাদ আসলো কেন! প্রাহীর ভাবনার মাঝেই আকসাদ ওকে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘মিস প্রাহী যেকোনো অনুষ্ঠান বা বিশেষ দিনে ছেলেদের মূলত কিসে মানায় বেশি!’
প্রাহী আনমনে উত্তর দিলো,
– ‘পাঞ্জাবীতে।’
প্রাহী উত্তর টা দেওয়ার সাথে সাথেই আকসাদের দিক তাকিয়ে ফের কিছু বলতে যাবে তার আগেই আকসাদ আলতো হেসে বললো,
– ‘তাহলে আমাকে দুটো পাঞ্জাবি চুজ করে দিন।’
প্রাহী হালকা ভ্রু কুঁচকে আকসাদের দিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘পাঞ্জাবী! আপনার জন্য?’
আকসাদ প্রাহীর দিক তাকিয়ে মাথা নেড়ে বললো,
– ‘হু আমার জন্য!’
প্রাহী ঠোঁটজোড়া হালকা ভিজিয়ে বললো,
– ‘কিন্তু আপনি তো বিদেশে থাকেন! তাইনা!’
আকসাদ ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
– ‘তো?’
প্রাহী মাথা দুলিয়ে বললো,
– ‘না মানে আপনি নিশ্চয়ই সব সময় ওখানকার জামা পড়ে অভ্যস্ত! এখানকার কাপড় আপনার পছন্দ হবে কি না…।’
আকসাদ প্রাহীর কথার মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বললো,

– ‘এক সাধারণ মানবীই যেখানে মনের কোনে নির্দ্বিধায় স্থান করে নিয়েছে সেখানে এখানকার সুতোর তৈরি কাপড় তো নগন্য মাত্র!

প্রাহী আকসাদের ঠোঁট নাড়ানো দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না। আকসাদ প্রাহীর দিক তাকিয়ে শান্তকন্ঠে বললো,
– ‘কোনো অসুবিধে নেই মিস প্রাহী! আপনি ভালো ফ্যাবরিক এর দুটো পাঞ্জাবি চুজ করে দিন তাহলেই হবে!’
প্রাহী একটা ছোটো শ্বাস ফেলে আকসাদের দিক তাকিয়ে বললো,
-‘আচ্ছা বেশ! আপনার পছন্দের রঙ!’
আকসাদ হালকা হেসে বললো,
– ‘আপনি আপনার পছন্দমতোই চয়েস করুন মিস প্রাহী। সময় বেশি নিবেন না! অনলি টেন মিনিটস্, ওকে!’

প্রাহী বিস্মিত দৃষ্টিতে আকসাদের দিক তাকিয়ে রইলো। একেতো এই মানুষ পছন্দের রঙ কি সেটা বলছে না! তার মধ্যে আবার দশ মিনিটের মধ্যে পাঞ্জাবি সিলেক্ট করে দিতে বলছে! মনে হয় যেন ও রোবট! হুহ্। প্রাহী হালকা ভেংচি কেঁটে পাঞ্জাবী যে দিকে সেদিকে চলে গেলো। আকসাদ প্রাহীর যাওয়ার দিক হেসে ওর পিছন পিছন চললো।

প্রাহী পাঞ্জাবি দেখতে দেখতে একবার আকসাদের দিক তাকালো। মানুষটা আশপাশ দেখতে ব্যস্ত। প্রাহী আকসাদের দিক তাকিয়ে ভাবলো, চওড়া, বলিষ্ঠ,পেটানো শরীরের মানুষটাকে নির্দ্বিধায় ‘সুদর্শন’ বলা চলে। যেকোনো রঙেই মানুষটাকে মানাবে! প্রাহী তারপরও খুঁজে খুঁজে লাইট গ্রীণের মাঝে বুকের একটা সুতির পাঞ্জাবি আর ডিপ মেরুনের বুকে কারুকার্যের মধ্যে একটা সিল্কের পাঞ্জাবি পছন্দ করলো। গরমের মধ্যে পড়ে আরামও পাওয়া যাবে! প্রাহী পাঞ্জাবী দুটো হাতে নিয়ে আকসাদের দিক তাকাতেই আকসাদ ওর দিক এগিয়ে এলো।
– ‘বাহ চয়েজ করাও শেষ! গ্রেইট!’
আকসাদের কথায় প্রাহী আলতো হেসে বললো,
– ‘জ্বী!’ বলে থেমে আবারও দ্বিধাবোধ কন্ঠে বললো,
– ‘একটু দেখুন তো পছন্দ হয়েছে কি না! যদিও আপনাকে সব কিছুতেই মানাবে! তারপরও আমার যে দুটো পছন্দ হয়েছে আমি তা নিলাম। বাকিটা আপনার ইচ্ছে!’
প্রাহীর কথায় আকসাদ প্রাহীর দিক হালকা ঝুঁকে বললো,
– ‘তাই নাকি মিস প্রাহী! সব কিছুতে মানাবে আমায় ! আই মিন স…ব কিছুতে!’
প্রাহী হালকা পিছিয়ে ভ্রু কুঁচকে আকসাদের দিক তাকিয়ে রইলো।
– ‘আপনি…আপনি এমন কেন!’
আকসাদ এক ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
– ‘কেমন!’
প্রাহী বিরক্তসূচক দৃষ্টিতে আকসাদের দিক তাকিয়ে বলে উঠলো,
– ‘জানিনা। পছন্দ করে দিতে বলেছেন দিয়েছি। এখন বাকিটা আপনার ব্যাপার। সরুন!’
বলে আকসাদ কে পাশ কাঁটিয়ে হেঁটে যেতেই আকসাদ গভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
– ‘মিস প্রাহী!’
প্রাহী হালকাভাবে পিছনে ফিরতেই আকসাদ মিষ্টি হেসে বললো,
– ‘পাঞ্জাবীদুটো আমার পছন্দ হয়েছে মিস প্রাহী! থ্যাংক ইউ!’
প্রাহী মাথা নাড়িয়ে সামনে ফিরে আলতো হেসে হেঁটে যেতে লাগলো। আকসাদ প্রাহীর যাওয়ার দিক তাকিয়ে মুচকি হেসে পাঞ্জাবিদুটো হাতে নিয়ে কাউন্টরের দিক এগোলো।

প্রাহী আর শিমলা একসাথে দাঁড়িয়ে লিস্ট চেক করতে লাগলো। আকসাদ ওদের সামনে দাঁড়াতেই দু’জনেই আকসাদের দিক তাকালো। শিমলা আকসাদের দিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে বলোতো!’ বলে থেমে আকসাদের হাতের দিক তাকিয়ে ইশারা করে বললো,
– ‘আর এটা কি?’
আকসাদ প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘পাঞ্জাবী’
শিমলা অবাক হয়ে বললো,
– ‘পাঞ্জাবী! কার জন্য!’
আকসাদ শিমলার দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘অবভিয়াসলি আমার জন্য!’
– ‘তাই নাকি! দেখিতো কেমন পাঞ্জাবি কিনলে!’
বলেই শিমলা আকসাদের হাত থেকে ব্যাগ টা নিয়ে পাঞ্জাবীগুলো দেখতে লাগলো। শিমলা হালকা হেসে বললো,
– ‘বাহ্! বেশ হয়েছে তো! তোমার চয়েজ আছে বলতে হবে!’
আকসাদ মুচকি হেসে প্রাহীর দিক গভীরভাবে তাকিয়ে বললো,
– ‘হুউ! আমার চয়েজ বরাবরই সুন্দর!’
আকসাদের কথায় প্রাহী হালকা কেঁপে উঠলো। আকসাদ তা দেখে সামান্য হেসে শিমলার দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘তোদের কেনাকাটা শেষ!’
শিমলা মাথা নেড়ে পাঞ্জাবীর ব্যাগটা আকসাদের নিকট দিয়ে বললো,
– ‘হ্যাঁ শেষ। এখন চলো বাসায় যাই!’
আকসাদ শিমলার কথায় প্রাহীর দিক তাকালো। গরমে মেয়েটার চেহারা ঘেমে শুকিয়ে আছে! হাতঘড়ির দিক তাকিয়ে দেখলো প্রায় দুপুর তিনটে বাজে! আকসাদ শিমলার দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘চল কোথাও যেয়ে লাঞ্চ করি! এতক্ষণ শপিং করেছিস নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে!’
শিমলা সাথে সাথেই বলে উঠলো,
– ‘হ্যাঁ যাওয়া যায়! আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে যদিও।’
শিমলার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই প্রাহী বলে উঠলো,
– ‘না না। বাড়ি যেয়েই লাঞ্চ করব। দেরী হয়ে যাচ্ছে।’
আকসাদ প্রাহীর দিক তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো,
– ‘না নয় মিস প্রাহী! চলুন কিছু খেয়ে নিবেন! আমি আপনাকে ড্রপ করে দিব অসুবিধে নেই।’
শিমলা মাথা নেড়ে প্রাহীর হাত ধরে বললো,
– ‘হ্যাঁ! আকসাদ ভাই তোকে ড্রপ করে দিবে! আমারও বেশ খিদে পেয়েছে। এখন চল তো।’
বলেই শিমলা প্রাহীকে নিয়ে সামনে এগোতে লাগলো।প্রাহী ছোটো শ্বাস ফেলে শিমলার সাথে সাথে চললো। এমনটা নয় যে খিদে ওর পাইনি! এতক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর ওরও বেশ খিদে পেয়েছে। কিন্তু মা বলেছিল আজ শিমলাদের বাড়ি যাবে! এখন ওদের সাথে গেলে মায়ের সাথে মনে হয়না আর যেতে পারবে। আর এতক্ষণে ওর মাও নিশ্চয়ই শিমলাদের বাড়ি যেয়ে ফিরেও এসেছে! তার উপর আজই আবার মেহেদীর অনুষ্ঠান!

মাঝারি একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে প্রাহী,আকসাদ আর শিমলা। আকসাদ শিমলা আর প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘তোরা কি খাবি!’
শিমলা ফট করে বলে উঠলো,
– ‘বিরিয়ানি! আমরা বিরিয়ানি খাব। আমার আর প্রাহীর বিরিয়ানি বেশ পছন্দ!’
আকসাদ হেসে মাথা নাড়িয়ে ওয়েটার কে ডেকে দু’টো বিরিয়ানি আর এক কাপ কফি অর্ডার করলো। ওয়েটার যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ওদের টেবিলে বিরিয়ানি আর কফি চলে এলো। আকসাদ কফি নিয়ে ওদের সামনে বিরিয়ানি এগিয়ে দিলো। শিমলা ওর বিরিয়ানির প্লেটটা সামনে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। প্রাহী বিরিয়ানি খাওয়া শুরুর আগে আকসাদের দিক এক পলক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘আপ…আপনি খাবেন না!’
আকসাদের কিছু বলার আগেই শিমলা খেতে খেতে বললো,
– ‘উহুম! আকসাদ ভাই তো ডায়েট করে। তার উপর আবার তেলের জিনিস তাই যখন তখন খায়না।’
প্রাহী আকসাদের দিক তাকিয়ে ছোট্ট কন্ঠে বললো,
– ‘ওহ্।’
আকসাদ প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না মিস প্রাহী! আপনারা লাঞ্চ করুন!’
প্রাহী হালকা শ্বাস ফেলে খাওয়া শুরু করলো। তাড়াতাড়ি করে খেতে যেয়ে এক পর্যায়ে প্রাহী বিষম খেলো। আকসাদ তাড়াতাড়ি করে গ্লাসে পানি ঢেলে প্রাহীর দিক এগিয়ে দিলো। প্রাহী পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে পানি খেতে লাগলো। শিমলা প্রাহীর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
– ‘আরে আস্তে খাবি তো! ঠিক আছিস এখন!’
প্রাহী মাথা নাড়াতেই আকসাদ খানিকটা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
– ‘রিল্যাক্স মিস প্রাহী! আপনার বিরিয়ানি কেউ নিয়ে যাচ্ছেনা আস্তে ধীরে খান! এতো তাড়াহুড়োর কি আছে!’
প্রাহী হালকা লজ্জা পেয়ে মনে মনে বললো, ‘তাড়াহুড়োর কারণ তো আপনি! ওভাবে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে কেই বা খেতে পারে!’ প্রাহীকে চুপ থাকতে দেখে আকসার কপাল কুঁচকে বলে উঠলো,
– ‘কি হলো! চুপ করে আছেন কেন! এনি প্রব্লেম মিস প্রাহী!’
প্রাহী দ্রুত মাথা নেড়ে বললো,
– ‘তেমন কিছুনা।’
– ‘আস্তে ধীরে খান। এতো জলদির কিছু নেই ওকে!’
আকসাদের কথায় প্রাহী মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে খেতে লাগলো। কফিতে ছোটো ছোটো চুমুক দিয়ে আকসাদ নিবিড়ভাবে প্রাহীর দিক তাকিয়ে রইলো।

খাওয়া শেষে আকসাদ ড্রাইভ করে প্রাহীদের বাড়ির সামনে আসতেই আকসাদ গাড়ি থেকে নেমে প্রাহীর দরজা টা খুলে দিলো। শিমলা গাড়ির ভিতর থেকে প্রাহীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– ‘সন্ধ্যার সময়মতো চলে আসিস কিন্তু!’
প্রাহী আলতো হেসে মাথা নেড়ে সামনে এগোতে নিলেই আকসাদ পিছন হতে নরম কন্ঠে বলে উঠলো,
– ‘মিস প্রাহী!’
প্রাহী পিছন ঘুড়তেই আকসাদ বললো,
– ‘আর ইউ ওকে নাও! শরীর ঠিক আছে!’
প্রাহী আলতো হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো,
– ‘জ্বি! ঠিক আছি।’
আকসাদ এক হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বললো,
– ‘ধন্যবাদ কেন!’
– ‘এইযে আমাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য!’
আকসাদ হালকা হেসে বললো,
– ‘এটার জন্য ধন্যবাদ দিতে হবে না! বাই দ্য ওয়ে হাও ওয়াজ দ্য লাঞ্চ?’
প্রাহী মিষ্টি হেসে বললো,
– ‘ভালো! তার জন্যও….।’
প্রাহীর কথার মাঝেই আকসাদ ওর দিক সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– ‘ডোন্ট থ্যাংকস্ মি প্রাহী! আর আমাকে পাঞ্জাবী পছন্দ করে দিয়েছেন! সো ইট ওয়াজ ইউর ফার্স্ট ট্রিট ফ্রম মি! ‘
প্রাহী আকসাদের কথা না বুঝতে পেরে বললো,
– ‘ফার্স্ট ট্রিট!’
আকসাদ মুচকি হেসে বললো,
– ‘ইয়েস! এখন আপনি কবে আমাকে ট্রিট দিবেন মিস প্রাহী!’
প্রাহী চোখ পিটপিট করে বললো,
– ‘পাঞ্জাবি পছন্দ করে দিয়েছি বিধায় আমায় বিরিয়ানি ট্রিট দিয়েছেন! আমি কেন ট্রিট দিতে যাব তাহলে!’
– ‘উম্…কেউ ট্রিট দিলে তাকেও ট্রিট দিতে হয়! আপনি জানেন না এই বিষয়ে! তা কবে আমি আমার ট্রিট পাব বলুন!’
– ‘এ্যাহ্’
বলে প্রাহী বেকুব হয়ে তাকিয়ে রইলো আকসাদের দিক।
আকসাদ প্রাহীর চেহারা দেখে গালভর্তি হেসে বললো,
– ‘এ্যাহ্ না হ্যাঁ! এখনই উত্তর দিতে না ওকে! পরে দিলেও চলবে।’
বলে থেমে আবারও ওর দিক তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
– ‘মেহেদী অনুষ্ঠানে আসছেন তো,রাইট!’
প্রাহী কিছু না বলে আকসাদের দিক তাকিয়ে রইলো। আকসাদ প্রাহীর উওর না পেয়ে ওর দিক হালকা ঝুঁকে ধীর কন্ঠে বললো,
– ‘মিস প্রাহী!’
প্রাহী কম্পনরত অবস্থায় আকসাদের দিক তাকিয়ে অস্পষ্ট গলায় বলে উঠলো, ‘হু!’
আকসাদ সেভাবে ঝুঁকেই বললো,
– ‘মেহেদী অনুষ্ঠানে দেখা হচ্ছে ওকে!’
বলেই গাড়ির চাবিটা বের করে সামনের দিক এগিয়ে চললো। প্রাহী পিছন হতে আকসাদের চওড়া কাঁধের দিক তাকিয়ে রইলো।

কি মনে করে আকসাদ পিছন ফিরে প্রাহীর দিক তাকিয়ে বলে উঠলো,
– ‘মিস প্রাহী! আপনাকে শাড়ীতে কিন্তু বেশ মানায়!’
বলে হালকা হেসে গাড়িতে উঠে চলে গেলো। পিছনে রেখে গেল অবাকরত অবস্থায় থাকা এক মানবীকে। যে কিনা নিষ্পলক আকসাদ’দের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে! লোকটার এক একটা কথা, চালচলন বোঝা বেশ কঠিন! প্রাহীর মুখ থেকে ‘আকসাদ’ নামক লোকটার প্রতি একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। প্রাহীর ভাবনার মাঝেই ওর মাথায় কেউ,,,

(২০০০+ শব্দগুচ্ছ)

চলবে,,,