মন একে একে দুই পর্ব-৬+৭

0
6

#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ০৬ (ম্যাচিং!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী

– ‘মিস প্রাহী! আপনাকে শাড়ীতে কিন্তু বেশ মানায়!’

বলে হালকা হেসে আকসাদ গাড়িতে উঠে চলে গেলো। পিছনে রেখে গেল অবাকরত অবস্থায় থাকা এক মানবীকে। যে কিনা নিষ্পলক আকসাদ’দের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে! প্রাহীর ভাবনার মাঝেই ওর মাথায় কেউ চা’টা মারলো। ভ্রু কুঁচকে পিছনে ও তাকিয়ে দেখলো নক্ষত্র ওর দিক এক চোখ ছোটো করে তাকিয়ে আছে। প্রাহী স্বাভাবিকভাবেই ওকে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘কি সমস্যা!’
নক্ষত্র কাঁধ ঝাঁকিয়ে উত্তর দিলো,
– ‘নো সমস্যা! তুই এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন রোদের মধ্যে!’
– ‘এমনিই। মাত্র এসেছি ভার্সিটি থেকে এখন বাড়ির ভিতর ঢুকবো।’
নক্ষত্র হালকা ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ‘হেঁটে এসেছিস নাকি এই রোদের মধ্যে! রিকশা দিয়ে চলে আসতি?’
প্রাহী মাথা দুলিয়ে বললো,
– ‘না একা আসিনি। শিমলার সাথে গাড়িতে করে এসেছি।’
নক্ষত্র চোখ ছোটো ছোটো করে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘ওই চামচিকা আবার গাড়ি কবে কিনলো!’
প্রাহী বিরক্ত হয়ে বললো,
– ‘চামচিকা কে আবার!’
– ‘কে আবার তোর পেয়ারের বান্ধবী ‘শিমলা’। এক কথায় তোর ‘চামচা’।’
প্রাহী এবার হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
– ‘ও আমার চামচা নয় বুঝেছিস! আর যদি হয়েও থাকে তাহলে তোর কি সমস্যা! আশেপাশে তোরও তো চামচিকার অভাব নেই! তাহলে! সামনে থেকে সর নইলে ফ্রি ফ্রি আঁচড় খাবি!’
এই বলে নক্ষত্রকে ধাক্কা মেরে প্রাহী বাড়ির ভিতর চলে গেলো। নক্ষত্র প্রাহীর যাওয়ার দিক তাকিয়ে বিড়বিড় করলো কিছুক্ষণ। তারপর সামনের চওড়া রাস্তায় এদিক সেদিক তাকিয়ে বাড়ির ভিতর চললো।

প্রাহীর মা ডাইনিং টেবিলের প্লেট বাটি গুছাচ্ছিল। মেয়েকে ভিতরে আসতে দেখে একবার মেয়ের দিক তাকিয়ে প্লেট বাটিগুলো নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন। প্রাহী ব্যাগটা সোফায় রেখে ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার টান দিয়ে সেখানটায় বসলো। মাকে ডাকতে যাবে তার আগেই প্রাহীর মা ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতলটা এনে টেবিলের উপর রাখলো। প্রাহীর দিক তাকিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
– ‘একদম ঠান্ডা পানি দিব!’
প্রাহী হালকা মাথা নাড়িয়ে বললো,
– ‘না না ডিরেক্ট ঠান্ডা পানি দিও না। একটু নরমাল পানি মিশিয়ে দিও!’
প্রাহীর মা নরমাল পানির সাথে হালকা ঠান্ডা পানি মিলিয়ে ওর হাতে দিলেন। প্রাহী কৃতজ্ঞাসূচক দৃষ্টিতে মা’র দিক তাকিয়ে এক চুমুকে পুরোটা পানি শেষ করে গ্লাসটা টেবিলে রাখলো। ততক্ষণে নক্ষত্র বাড়ি এসে প্রাহীর সামনের বরাবর একটা চেয়ারে বসে ওর মায়ের হাত থেকে ঠান্ডা পানির বোতল টা নিয়ে ঢকঢক করে খেতে লাগলো। প্রাহীর মা ছেলের দিক তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ‘আরে আস্তে খা! আর ডিরেক্ট এমন পানি খাচ্ছিস যে! বাহির থেকে এসেই ঘাম শরীর নিয়ে এভাবে সাথে সাথে ঠান্ডা পানি খেতে নেই।’
পানি খাওয়া শেষে নক্ষত্র পানির বোতলটা টেবিলে রেখে বললো,
– ‘নরমাল পানি ভাল্লাগে না মা।’
প্রাহী সেদিক তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
– ‘ভালো লাগবে কিভাবে! তুই তো নিজেই নরমাল না! সেখানে নরমাল পানি কিভাবে ভালো লাগবে! ছা*গল একটা!’
প্রাহীর বিড়বিড়ানি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নক্ষত্র হাত উঁচিয়ে বললো,
– ‘আর তুই হচ্ছিস একটা ‘বেয়াদ্দপ জঙ্গলি হায়েনা’।’
প্রাহী উত্তরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর মা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
– ‘চুপ কর তো তোরা। তোদের বাবা এখন ঘুমে রয়েছে। আস্তে কথা বল।’
এই বলে প্রাহীর দিক তাকিয়ে আবারও জিজ্ঞেস করলেন,
– ‘কি রে তোর আজ এতো দেরী হলো যে ভার্সিটি থেকে আসতে! শিমলাদের বাড়িও তো গেলিনা! ভেবেছিলাম তুই গেলে একসাথে বাড়ি ফিরব। তারপর তো আর এলিনা! কোথাও গিয়েছিলি! কাজ ছিলো কোনো!’
প্রাহী ওড়না মুখ মুছে বললো,
– ‘শিমলার সাথে বাজারের দিকটায় গিয়েছিলাম ভার্সিটি শেষে। ওর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার ছিল। আর আমারও এমনিতে ওদিকটা যাওয়া লাগতো। খাতা, কলম প্রায় শেষের দিকে। এছাডাও আরও কিছু কিনবো ভাবছিলাম। তাই ওখানে ও আমায়সহ যাওয়ার কথা বললে ওর সাথে গেলাম আর কি। এমনিতেও তো আমার যাওয়া লাগতোই।’
প্রাহী কিছুক্ষণ থেমে ওর মার দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো,
– ‘সরি মা! আসলে টুকটাক কিনতে যেয়ে দেরী হয়ে যাবে বুঝিনি!
প্রাহীর মা প্রাহীর হাত থেকে গ্লাসটা নিতে নিতে বললেন,
– ‘আরে পাগলী মেয়ে। এখানে সরির কি আছে! নিজস্ব কাজ থাকলে তো সেটা আগে করতে হবে তাইনা! যাই হোক খাতাপত্র ছাড়া যাই কিনেছিস টাকায় হয়েছে তোর! বাড়ি থেকে যাবার আগে তো তোর বাবার থেকে টাকা নিয়ে বেরোস নি!’
প্রাহী মাথা নেড়ে আলতো হেসে বললো,
– ‘হ্যাঁ হয়েছে। চিন্তা করোনা!’
– ‘যাক! তাহলে তো হলোই। খাবার দিচ্ছি তাহলে খেয়ে ফ্রেশ হো।’
প্রাহী ওর মাকে সাথে সাথেই বলে উঠলো,
– ‘মা আমি বাইরে থেকে শিমলাদের সাথে খেয়ে এসেছি। এখন আর কিছু খাবোনা।’
প্রাহীর মা হালকা ভ্রু কুঁচকে বললেন,
– ‘খেয়ে এসেছিস! কি খেলি?’
– ‘বিরিয়ানি খেয়েছি ওদের সাথে।’
প্রাহীর মা ওকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নক্ষত্র ঠান্ডা পানির বোতল হতে কয়েক ঢোক পানি গিলে বলে উঠলো,

‘কাচ্চি বিরিয়ানি,বিরিয়ানি কাচ্চি
খেয়ে হবে জঙ্গলি হায়েনার হাচ্চি আর হাচ্চি
তা দেখে আরামসে খুশিতে খাব ঠান্ডা ঠান্ডা লাচ্ছি!’

প্রাহীর মেজাজ টা এবার গরম হয়ে গেলো। ও ওর মার দিক তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বলে উঠলো,
– ‘তোমার ছেলেকে ঢাকায় কবে পাঠাবে! স্কুল,কলেজ, ভার্সিটি সব তো খুলে দিয়েছে! ও যায়না কেন এখনও?’
নক্ষত্র হালকা ধমকে ওকে বললো,
– ‘তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি…।’
আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রাহীর মা ধমকে নক্ষত্রের দিক তাকিয়ে বললেন,
– ‘মুখ বন্ধ রাখবি এখন! টেবিলে খাবার দিচ্ছি! ফ্রেশ হয়ে খেতে আসবি। আরেকবার মুখ খুললে খবর আছে!’
এই বলে থেমে প্রাহীর দিক তাকিয়ে বলে উঠলেন,
– ‘বাইরে থেকে যেহেতু খেয়ে এসেছিস তাহলে এখন যা যেয়ে ফ্রেশ হয়েনে। সন্ধ্যার পর আবার শিমলাদের বাড়ি যেতে হবে তো মেহেদি অনুষ্ঠানে।’
প্রাহী মাথা নাড়িয়ে সোফা থেকে ব্যাগ টা তুলে নক্ষত্রের দিক একটা বিরক্তিসূচক দৃষ্টি দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। নক্ষত্র ওর যাওয়ার দিক ত্যাড়াভাবে তাকিয়ে ঠান্ডা পানির বোতলে আবার চুমুক দিতে যাবে তার আগেই ওর মা বোতলটা খপ করে হাতে নিয়ে বললো,
– ‘কাচ্চি,বিরিয়ানি খেলে হাচ্চি হবে! এভাবে ঢকঢক করে ঠান্ডা পানি খেলে আর সর্দি, হাচ্চি হবেনা তাইনা?’
নক্ষত্র অনুরোধের সহিত বলে উঠলো,
– ‘আর একটু…।’
– ‘একদম না।’
বলেই ওর মা রান্নাঘরের দিক চলে গেলো। আর ও মুখটা ভোঁতা করে বাইকের হেলমেট আর চাবি নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে প্রাহী তোয়াল দিয়ে চুলটা মুছে বারান্দায় মেলে দিয়ে মা’র ঘরের দিক চললো। যেয়ে দেখলো ওর মা কাপড় আয়রন করছে। ভাবলো মেহেদীর অনুষ্ঠানে যা পড়বে সেগুলো আয়রন করছে হয়তো। মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ও জিজ্ঞেস করলো,
– ‘কাপড় আয়রন করছো?’
প্রাহীর মা ওর দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বললেন,
– ‘হ্যাঁ! তোর বাবা আজকে সন্ধ্যায় যে শার্টটা পড়বে সেটা আয়রন করে দিচ্ছিলাম।’
– ‘আচ্ছা দাও আমি করে দিচ্ছি!’
বলে মায়ের হাত থেকে আয়রন টা নিয়ে প্রাহী আয়রন করতে থাকলো। প্রাহীর মা বিছানায় বসতে বসতে বললেন,
– ‘সাবধানে কর!’
প্রাহী মাথা নাড়িয়ে শার্টটা আয়রন করতে করতে ওর মা’র দিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘তুমি কখন এসেছিলে আজ শিমলাদের বাড়ি থেকে?’
প্রাহীর মা কাপড় গুছাতে গুছাতে বললেন,
– ‘এইতো দুপুর ২ টার পর! হাতে হাতে কিছু কাজ করে দিয়ে এসেছি। ভালো কথা! যেয়ে একটা বিদেশী মহিলাকে দেখলাম শিমলার মায়ের সাথে কাজ করছিলো আর কথাবার্তা বলছিলো। আমি যাওয়ার পর শিমলার মা পরিচয় করিয়ে দিতেই ভদ্র মহিলা আমার সাথে খুব সহজেই মিশে কথা বলতে লাগলো। যেনো উনি আমায় কতদিন ধরে চিনে! বিদেশে থাকে অথচ কোনো অহংকার এর ছিটেফোঁটাও দেখলাম না। পাশেই উনার টুকটুকে ফর্সা মেয়ে বসে তত্ত্ব সাজাচ্ছিলো। মেয়েটাও ভারী মিশুক। শুনলাম উনারা নাকি শিমলার চাচী হয়!’
প্রাহী ওর মা’র কথা শুনে কিছুক্ষণ মায়ের দিক তাকিয়ে ভাবতে লাগলো, চাচী! শিমলাতো বলেছিল ওর কাকারা নাকি বিদেশে থাকতো। তাহলে কি ওই বিদেশী ভদ্র মহিলা!
আর কিছু ভাবার আগেই প্রাহীর মা বলে উঠলেন,
– ‘কি ভাবছিস! শার্ট আয়রন হয়ে গেছে তো! ওটা ভাঁজ করে রেখে দে। আর তুই কোন শাড়িটা পড়বি? ঠিক করেছিস!’
শাড়ির কথা শুনেই প্রাহীর দুপুরের আকসাদের বলা সেই কথাটা মনে পড়ে গেলো,

-‘আপনাকে শাড়িতে বেশ মানায় প্রাহী’।

প্রাহী কি মনে করে ওর মায়ের দিক তাকিয়ে বলে উঠলো,
– ‘শাড়ি পড়ব না।’
প্রাহীর মা অবাক হয়ে মেয়ের দিক তাকিয়ে রইলেন। মেয়ে তার বান্ধবীর বোনের বিয়ের প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে শাড়ি পড়বে বলে ঠিক করে রেখেছিল। এজন্য আগেভাগে উনি কিছু শাড়ি ধুঁয়ে আয়রন করে রেখে দিয়েছিলেন। এখন মেয়ে বলছে শাড়ি পড়বে না! বিস্মিত কন্ঠে বললেন,
– ‘শাড়ি পড়বি না তো কি পড়বি?’
প্রাহী কিছু একটা ভেবে বললো,
– ‘লেহেঙ্গা পড়বো। একটা লেহেঙ্গা বের করে দাও!’
প্রাহীর মা বিরক্ত হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। প্রাহী ওর মায়ের এমন চাহনী দেখে বলে উঠলো,
– ‘কি হলো?’
প্রাহীর মা কন্ঠে বিরক্তি নিয়েই বলে উঠলেন,
– ‘কি হলো মানে? লেহেঙ্গা কোথায় পাব এখন! গত বছর দুটো লেহেঙ্গা তোর যমজ চাচাতো বোনদের দিয়ে দিয়েছি। এখন কোথা থেকে লেহেঙ্গা পড়বি তুই? হুট করে শাড়ি ছেড়ে লেহেঙ্গা পড়ার ভূত মাথায় চাপলো কেন তোর?’
প্রাহী হালকা আওয়াজে বললো,
– ‘এমনি!’
প্রাহীর মা ওর দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা শ্বাস ছাড়লেন। কিছু একটা মনে করে বলে উঠলেন,
– ‘আচ্ছা দাঁড়া।’
আলমারি কিছুক্ষণ ঘেঁটে একটা গাঢ় সবুজ লেহেঙ্গা বের করলেন। প্রাহীর সামনে নিয়ে যেয়ে বললেন,
– ‘ভাগ্যিস এই একটা লেহেঙ্গা আছে। দেখ এটা চলবে কি না!’
প্রীহা লেহেঙ্গা টা কিছুক্ষণ মেলে দেখলো। তারপর মা’র দিকে তাকিয়ে হেসে বলে উঠলো,
– ‘চলবে মা। কিন্তু একটু আয়রন করতে হবে কুঁচকে আছে।’
প্রাহীর মা লেহেঙ্গাটা নিয়ে দেখলেন আসলেই একটু আয়রন করা লাগবে। তারপর প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললেন,
– ‘আচ্ছা আমি আয়রন করে দিচ্ছি। তুই রেস্ট নে যা।’
– ‘আমি করে নিচ্ছি অসুবিধা নেই।’
প্রাহীর মা প্রাহীর মাথার চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে বললেন,
– ‘গোসল করেছিস এখন চুলগুলো ফ্যানের নিচে মেলে দিয়ে একটু ঘুমা। ভালো লাগবে। আমি লেহেঙ্গা আয়রন করে তোর ঘরে রেখে দিয়ে আসবক্ষণ। ঠিকাছে!’
প্রাহী মায়ের কথায় দেয়াল ঘড়ির দিক তাকালো। বিকেল ৫ টা বাজে প্রায়। যদিও ওর একটু ঘুম দরকার। রোদের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করার কারণে বেশ টায়ার্ড লাগছে। কিন্তু এখন ঘুমালে পরে দেরী হয়ে যাবে। অনুষ্ঠান শুরু হবে ৭ টার দিকেই! পরে ভাবলো এখন আর ঘুমাবে না। পারলে হালকা একটা ন্যাপ নিবে। এতে টায়ার্ডনেসও চলে যাবে অনেকটা আর ফ্রেশও লাগবে! মায়ের দিক তাকিয়ে প্রাহী বললো,
– ‘এখন আর সময় নেই ঘুমানোর। পারলে একটা ন্যাপ নিব কিছু সময়ের জন্য।’
প্রাহীর মা মাথা নেড়ে বললেন,
– ‘আচ্ছা নে। আমি ডাক দিয়ে দিবক্ষন!’
প্রাহী মাথা দুলিয়ে নিজ ঘরে চলে গেলো।

গাঢ় সবুজ রাঙ্গা সুতির লেহেঙ্গা পড়ে প্রাহী কিছুক্ষণ ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখলো। থ্রি কোয়ার্টার টাই স্টাইলের ব্লাউজের সাথে নিচে ঘের ওয়ালা ফ্রক যার পাড়ে গোল্ডেন কালার সুতোর কাজ করা লেহেঙ্গাটায় ওকে মানিয়েছে। নাহ্। খারাপ লাগছে না ওকে! সাথে হাফ সিল্কের বেশ বড় সড় একটা দোপাট্টা। যেহেতু ব্লাউজটা কোমড় পর্যন্ত তাই ও ভাবলো দোপাট্টাটা ফ্রকের সাথে এড্যাস্ট করে শাড়ির স্টাইলে না পড়ে সামনে দুপাশে মেলে দিয়েই পড়বে! লেহেঙ্গা পড়া শেষে ড্রেসের সাথে একদম সামান্য মেকআপ করে চোখে কাজল সাথে আর ঠোঁটে হালকা মেরুন রাঙা লিপ্সটিক লাগিয়ে নিলো। দোপাট্টা পড়ে সেফটিপিন পড়ার জন্য মাকে ডাকতেই ওর মা এসে আস্তে করে কাঁধের দুপাশের দোপাট্টায় সেফটিপিন লাগিয়ে দিয়ে বললো,
– ‘সাবধানে যাতে সেফটিপিন এর সাথে কাঁধে আচড় না লাগে সাথে দোপাট্টাও না ছিড়ে। সিল্কের জিনিস যেহেতু একটু সাবধানে চলিস কেমন!
প্রাহী মাথা নাড়াতেই ওর মা আবার বলে উঠলেন,
– ‘তাড়াতাড়ি কর! বেরোতে হবে এখন।’
প্রাহীর মা বেড়িয়ে যেতেই প্রাহী দ্রুত চুলগুলোকে আছড়ে দুপাশ থেকে কয়েক গাছি চুল নিয়ে পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকে নিলো। শেষ বারের মতো আয়নায় নিজেকে একবার দেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

হালকা শুভ্র আলোয় শিমলাদের বাড়িটা বেশ অন্যরকম লাগছে। যেহেতু মেহেদী অনুষ্ঠান তাই সাধারণভাবেই সাজানো হয়েছে চারপাশটা। মাকে সাথে নিয়ে প্রাহী শিমলাদের বাড়িতে ঢুকলো। ওর বাবা আর নক্ষত্র একটু পর আসবে। বাড়ির ভিতর ঢুকতেই দেখলো শিমলা ওর লেহেঙ্গার নিচের অংশ ধরে সিড়ি দিয়ে নামছে। পড়নে মেহেদী রঙের লেহেঙ্গা, চুলগুলো খোপা করা, আর হালকা সাজে মেয়েটাকে সুন্দর লাগছে! সিড়ি বেয়ে নেমে প্রাহীদের দেখা মাত্রই শিমলা ওদের দিক এগিয়ে গেলো।

প্রাহীর মাকে সালাম দিয়ে শিমলা বলে উঠলো,
– ‘কেমন আছো চাচী! চাচা আর নক্ষত্র ভাই আসেনি?’
প্রাহীর মা হালকা হেসে শিমলার গাল টেনে বলছে,
– ‘তোর চাচা আর নক্ষত্র একটু পরেই আসবে। বেশ মিষ্টি লাগছে তোকে! মাশাল্লাহ্!’
শিমলা লাজুক হাসলো। প্রাহীর মা আবারও জিজ্ঞেস করলেন,
– ‘তোর মা ওরা কোথায়! দেখছি না যে?’
– ‘উনারা সবাই উপরের দিকে চাচী। আপার সাথেই আছে!’
প্রাহীর মা হেসে শিমলার মাথায় হাত বুলিয়ে সামনে চললো। শিমলা এবার প্রাহীর দিক ফিরে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,
– ‘কিরে! তুইও দেখি আজ লেহেঙ্গা পড়েছিস! কিভাবে কিভাবে মিলে গেলো বলতো! আমি তোকে বলব ভাবছিলাম লেহেঙ্গা পড়তে কাজের চাপে আর বলা হয়নি। যাই হোক সেই লাগছে তোকে!
প্রাহী আলতো হেসে বললো,
– ‘তোকেও! শাড়ি পড়তে ইচ্ছা করছিল না তাই ভাবলাম এটাই পড়ি।’
– ‘বেশ করেছিস!’
প্রাহী হালকা চারপাশ তাকিয়ে বললো,
– ‘শোয়াইব ওরা কোথায়! আসেনি?’
– ‘কথা হয়েছিল। শোয়াইব আসবেনা তবে রাতুল আর তন্নি ওরা আসবে।
প্রাহী ঠোঁট দুটো গোল করে ‘ওহ্’ বলে উঠলো।
শিমলা প্রাহীর হাত ধরে বললো,
– ‘চল আপাকে দেখে আসি! আপাও আজ তোর মতোই সবুজ লেহেঙ্গা পড়েছে!’
প্রাহী মুচকি হেসে বললো,
– ‘তাই নাকি! আচ্ছা চল!’

আপার সাথে দেখাসাক্ষাৎ করে রুম থেকে বেড়িয়ে লেহেঙ্গার নিচের পার্ট উঁচু করে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চললো। হুট করে সামনে একজোড়া স্লিপার জুতো দেখে প্রাহী হাঁটা থামিয়ে দিকেই তাকিয়ে রইলো। ধবধবে ফর্সা পায়ে কালো আর সাদার কম্বিনেশনে স্লিপার জুতোটা বেশ মানিয়েছে। ও হয়তো জানে এই জুতোজোড়ার মালিক কে! তাও কি মনে করে আস্তে করে মাথা তুলে তাকাতেই ওর চোখ জোড়া আটকে গেলো সামনের মানবটির দিক! পড়নে হালকা সবুজ পাঞ্জাবি, চুলগুলো বাঁকাভাবে আছড়ানো তার মধ্যে কিছু চুল কপালে এসে ঠাই নিয়েছে, গভীর কালো চোখ, সরু নাক আর তীক্ষ্ণ চোয়াল সহিত লোকটাকে এক কথায় অসাধারণ লাগছে!

অন্যদিকে আকসাদও একইভাবে প্রাহীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে! গাঢ় সবুজ লেহেঙ্গা, ডাগর ডাগর চোখে কালো কাজল, লালচে রাঙা ঠোঁট, কোমড় সমান চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া সামনের ছোটো ছোটো কিছু বেবি হেয়ার কপালের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আকসাদ এক দৃষ্টিতে প্রাহীর দিক তাকিয়ে রইলো। মুখ দিয়ে অস্ফুটে আওয়াজে বলে উঠলো,
– ‘অপূর্ব!’
আকসাদের আওয়াজে প্রাহীর ধ্যান ভাঙলো। ভালোভাবে তাকাতেই দেখলো আকসাদ ওর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। প্রাহী অপ্রস্তুত হয়ে কিছুটা নড়ে উঠলো। আকসাদ প্রাহীর দিক তাকিয়ে হালকা আওয়াজে বললো,
– ‘হাই মিস প্রাহী!’
প্রাহী কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
– ‘চুলের ভাজে আজ কোনো ফুল দিলেন না যে!।’
প্রাহী সামান্য আওয়াজ তুলে বললো,
– ‘এমনি।’
আকসাদ আর কিছু না বলে একই দৃষ্টিতে প্রাহীর দিক তাকিয়ে রইলো। প্রাহীর ইচ্ছা করছে এক ছুঁটে নিচে চলে যেতে। কিন্তু এই লোকতো তার চওড়া কাঁধ দিয়ে যাওয়ার রাস্তা প্রায় অর্ধেক আটকে দাঁড়িয়ে আছে। ও যাবে কিভাবে! কাঁপাকাঁপা কন্ঠে আকসাদকে বলে উঠলো,
– ‘পথ…পথ ছাড়ুন!’
আকসাদ হালকা ঝুঁকে বলে উঠলো,
– ‘কেন!’
প্রাহী ছোট্ট একটা ঢোঁক গিলে বললো,
– ‘একটু নিচে যেতে হবে! আপ…আপনি আমার পথ আঁটকে দাঁড়িয়ে আছেন।’
আকসাদ হালকা শ্বাস ফেলে বললো,
– ‘আপনিই তো আমার যাওয়ার পথটা আঁটকে দিলেন মিস প্রাহী!’
প্রাহী গোল গোল চোখে আকসাদের দিক তাকিয়ে রইলো। ও পথ আঁটকে দিয়েছে! কিভাবে! এই মানুষটাই তো একদম চওড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে! আকসাদ ধীর কন্ঠে প্রাহীর দিক আরেকটু ঝুঁকে বলে উঠলো,
– ‘আমাকে কেমন লাগছে বললেন না তো!’
প্রাহী আবারও আকসাদের চোখের দিক তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলো,
– ‘অ…অনেক সুন্দর!’
আকসাদ হালকা হেসে বললো,
– ‘আচ্ছা তাই?’
আকসাদের হাসির শব্দে প্রাহীর আবারও ধ্যান ভাঙলো। ইশ্। লোকটা ওকে কি ভাবছে! প্রাহী এবার চোখ বন্ধ করে হালকা শ্বাস নিয়ে আকসাদের পাশ দিয়ে দ্রুত ছুটে চললো। আকসাদ পিছনে ফিরে আলতো কন্ঠে ওকে ডাক দিলো,
– ‘মিস প্রাহী!’
প্রাহী কিছুক্ষণ থেমে হালকা পিছন ফিরলো। আকসাদ ওর দিক বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,
– ‘আপনার আর আমার ড্রেসের কালার ম্যাচিং হয়ে গেছে প্রাহী।খেয়াল করেছেন!’
প্রাহী খেয়াল করে দেখলো আসলেই তো! ওর আর আকসাদের ড্রেস এর কালার সেইম! দুজনেই একই রঙের কাপড় পড়েছে। প্রাহী আরেকটা ভালোভাবে আকসাদের দিক তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো। আরে এটা তো!,,,

চলবে,,,

#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ০৭ (শিহরণ!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী

– ‘আপনার আর আমার ড্রেসের কালার ম্যাচিং হয়ে গেছে প্রাহী।খেয়াল করেছেন!’
প্রাহী খেয়াল করে দেখলো আসলেই তো! ওর আর আকসাদের ড্রেস এর কালার সেইম! দুজনেই একই রঙের কাপড় পড়েছে। তবে আকসাদের পরিহিত পোশাকের তুলনায় প্রাহীর লেহেঙ্গার রঙটা হালকা গাঢ়! তাও একই রকমই লাগছে! প্রাহী আরেকটু ভালোভাবে আকসাদের দিক তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো। আরে এটা তো দুপুরের সেই পাঞ্জাবি! যেটা প্রাহী আজকে আকসাদকে শপিং এর সময় পছন্দ করে দিয়েছিলো! ওর পছন্দ করে দেওয়া হালকা সবুজের মধ্যে সুতির পাঞ্জাবিটা আকসাদ পড়েছে!

ওর ভাবনার মাঝেই আকসাদ বলে উঠলো,
– ‘ধন্যবাদ প্রাহী!’

প্রাহী নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,
– ‘ঠিক কি কারণে!’

আকসাদে হালকা হেসে বললো,
– ‘এইযে আমায় পাঞ্জাবীটা পছন্দ করে দেবার জন্য!’

– ‘এখানে ধন্যবাদ দেবার কিছু নেই। আসি!’
বলেই প্রাহী তড়িঘড়ি করে নিচে চলে গেলো। পিছনে রেখে গেলো ওর দিক চেয়ে থাকা একজোড়া বিমোহিত দৃষ্টির মানবকে! যে কিনা খুব নিবিড়ভাবে ওর চলন্ত পদযুগলের দিক তাকিয়ে আছে!

নিচে নামতেই দেখলো শিমলা ভ্রুঁ কুঁচকে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। প্রাহী সেদিক এগিয়ে গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘হয়েছে কি! মুখ এমন কালো হয়ে আছে কেন! সিরিয়াস কিছু?’

শিমলা ফোনটা কান থেকে নামিয়ে প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘সিরিয়াস আবার সিরিয়াস না ব্যাপারটা এমন!’

– ‘মানে!’

শিমলা হালকা শ্বাস ফেলে বললো,
– ‘জানিসই তো আপার বিয়ের অনুষ্ঠানে ডান্সের আয়োজন করেও কেউই তা করতে পারেনি! জেনারেটরের সমস্যা, কারেন্ট ছিলোনা, লাইটের অভাব সব মিলিয়ে তখন আর কেউই ডান্স করেনি। তো আজ সবাই ডান্সের একটা আয়োজন করেছিল।’

প্রাহী মাথা নাড়িয়ে বললো,
– ‘এটাতো ভালো কথা! তাহলে?’

শিমলা ফোনের দিক তাকিয়ে বিরক্তিভাবে বললো,
– ‘তাহলে আর কি? ছয়জন মিলে একটা গ্রুপের ডান্স করার কথা ছিল। এখন দু’জন নাকি আসতে পারবেনা।’

– ‘কেন?’

– ‘যে দুইটা ডান্স করতো ওরা প্রেমিক প্রেমিকা ছিলো। ব্রেক আপ হয়েছে মনে হয় এখন একজন বলছে, ‘আমি ওর সাথে নাচবোনা!’ তাও আরেকজন বলছে ‘ওর সাথে নাচ কি! ওর মুখও দেখতে চাইনা আর।’

প্রাহী ফিক করে হেসে দিলো। শিমলা তা দেখে হালকা রাগ নিয়ে বললো,
– ‘হাসিস না! এদের ন্যাকামির চিপায় এখন আমাকে পড়তে হচ্ছে। এখন আরেকজোড়া কাপল কই পাবো! আর ডান্সের থিমটাই এমন যে শুধু দু’জোরা কাপল নাচলে সেটা ভালো লাগবে না।’

– ‘কোন কোন কাপলের পার্টিসিপেট করার কথা ছিলো?’

– ‘আমার কাজিন দুটো আছে ওরা, রাতুল আর তন্নি। এদিকে ওই দুটোতো বললো আসবে না।’

প্রাহী অবাক হয়ে বললো,
– ‘রাতুল আর তন্নি! মানে আমাদের গ্রুপের রাতুল আর তন্নি! আর ওরা কি এসেছে?’

শিমলা মাথা দুলিয়ে বললো,
– ‘হ্যাঁ এসেছে। ওদিকটায় আছে সবাই। তুই যা আমি একটু আসছি।’
বলেই শিমলা জোড়ে জোড়ে কদম ফেলে বাইরের দিকটায় চলে গেলো। প্রাহী ওর যাওয়ার দিক তাকিয়ে সামনে পা আগালো।

– ‘কি ব্যাপার তোরা কখন এলি?’
তন্নির কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো প্রাহী।

তন্নি মুচকি হেসে বললো,
– ‘এইতো মাত্রই! তুই কখন আসলি! আসার পর তোকে দেখলাম না?’

– ‘উপরে আপার ঘরে ছিলাম। তোর মায়ের এখন কি অবস্থা? সব ঠিক?’

তন্নি হেসে বললো,
– ‘হ্যাঁ এখন কিছুটা ভালো আছে আল্লাহর রহমতে।’

প্রাহী আলতো হেসে বললো,
– ‘যাক আলহামদুলিল্লাহ।’
বলে রাতুলের দিক হালকা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
– ‘কি ব্যপার এদিক ওদিক এভাবে তাকাচ্ছিস যে! কাউকে খুঁজছিস?’

রাতুল প্রাহীর দিক তাকিয়ে তন্নির দিক ইশারা করেবললো,
– ‘এ নাকি কার উপর ক্রাশ খেয়েছে! এখন সেই ব্যাক্তিটিকেই খুঁজছি।’

প্রাহী ভ্রু কুঁচকে তন্নির দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘কার উপর?’

তন্নি হালকা ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,
– ‘নাম তো জানি না দোস্ত! আজই প্রথম দেখলাম।’

প্রাহী হালকা হেসে বললো,
– ‘আচ্ছা! তা কেমন দেখতে?’

তন্নি উত্তেজিত হয়ে বললো,
– ‘আরে একদম আমেরিকান হিরোদের মতোন! বড় বড় চোখ, সিল্কি চুল আর চওড়া বলিষ্ঠ শরীর! উফ্ যাস্ট অসাধারণ দেখতে!’

প্রাহী কিছুক্ষণ ভ্রুকুটি করে তন্নির দিক তাকিয়ে থাকলো। কোনোভাবে কি ও! প্রাহীর ভাবনার মাঝেই তন্নি ওর কাঁধ ঝাকিয়ে বললো,
– ‘শোন সবুজ পাঞ্জাবীর কাউকে দেখেছিস?’

– ‘কেন?’

তন্নি ‘চ্চ’ শব্দ করে বললো,
– ‘আরে বাবা ওই ‘অসাধারণ চার্মিং’ মানুষটা সবুজ পাঞ্জাবীই পড়া ছিল। তখন যে একবার দেখেছি আর দেখিনি।’

প্রাহী এবার নিশ্চিত হয়ে গেল। এই মেয়ে ‘আকসাদ’ নামক ব্যাক্তিটির কথাই বলছে! উফ্! যেখানে যাচ্ছে সেখানেই এই লোক হানা দিচ্ছে। কি একটা অবস্থা!

এদিকে রাতুল বিরক্তসূচক দৃষ্টিতে তন্নিক বলে উঠলো,
– ‘হয়েছে! এবার ওফ যা। মাথাটা খেয়ে দিচ্ছিস যাস্ট তুই সেই কখন থেকেই বকবক করে।’

তন্নি ঘাড়ত্যাড়াভাবে উত্তর দিলো,
– ‘তুই চুপ থাক! বেশি করলে তোর সাথে নাচবো না!’

– ‘নাচিস না। যাহ্ ভাগ!’

তন্নি ত্যাড়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রাহীর ওদের থামিয়ে বললো,
– ‘আরেহ্! থাম এবার! বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানের মাঝে এভাবে ঝগড়া করছিস কেন তোরা!’

– ‘কে ঝগড়া করছে?’
হঠাৎ কারোর গলার আওয়াজে প্রাহী,তন্নি আর রাতুল পিছন ফিরে তাকালো। দেখলো সামনে শিমলার ফুপাতো বোন সানজিদা আর মামাতো ভাই অন্তু দাঁড়িয়ে আছে। এদের দুজনেরও আজ নাচে অংশগ্রহণ করার কথা! প্রাহীদের চুপ থাকতে দেখে সানজিদা আবারও জিজ্ঞেস করলো,
– ‘কি হলো এখন সব চুপ কেন? কি হয়েছে এখানে?’

প্রাহী আমতা-আমতা করে বললো,
– ‘কিছুনা সানজিদা আপু। এই একটু তর্ক বিতর্ক হচ্ছিলো আর কি!’

সানজিদার পাশে দাঁড়ানো অন্তু এবার তন্নি আর রাতুলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
– ‘এমনিতেই দু কপোত-কপোতী ঝগড়ার ফলে এখন আমরা বিপদে পড়েছি। তোমরা আবার নতুন করে ঝগড়া করে বলোনা যে, ‘আমরাও আর নাচে পার্টিসিপেট করবো না’! তখন আবার আরেক সমস্যায় পড়ব। ‘

রাতুল ওদের আস্বস্ত করে বললো,
– ‘চিন্তা করবেন না ভাই তেমন কিছুই হবেনা! তবে নতুন করে কাউকে জিজ্ঞেস করেছেন! আমাদের সাথে নাচে অংশগ্রহণ করতে কেউ ইচ্ছুক কি না!’

সানজিদা হতাশ মুখ করে বললো,
– ‘না কেউই তেমন আগ্রহ দেখালো না! আরেকজোড়া কাপল আমাদের এখন লাগবেই!’

সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লো! বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান! নাচ,গান না হলে কি জমে! তার মধ্যে হুলুদের দিন সেভাবে কিছুই কর‍তে পারেনি ওরা। আজও যদি এমনটা হয় তাহলে তো বিয়েটাই কেউ এঞ্জয় করতে পারবেনা! সবাই উদগ্রীব হয়ে বসে আছে নাচ,গানের পারফরম্যান্স দেখার আশায়! তন্নি ভাবতে থাকা অবস্থায় সামনে তাকিয়ে দেখলো আকসাদ পাঞ্জাবীর ফাঁকে প্যান্টের পকেটে এক হাত রেখে আরেক হাতে মোবাইল চালাতে চালাতে সিড়ি দিয়ে নামছে। তন্নি চোখ বড় বড় করে প্রাহীকে কনুই দ্বারা খোঁচা মেরে বললো,
– ‘ওই দেখ ওইযে আমার ‘আমেরিকান ক্রাশ’ !’

প্রাহী ওর কথায় সামনে তাকিয়ে দেখলো আকসাদ ফোনে নজর রেখে সিড়ি দিয়ে নেমে চারদিকে তাকাচ্ছে। প্রাহী তা দেখে তন্নির দিক ফিরে বললো,
– ‘তো আমি কি করব এখন!’

তন্নি আকসাদের দিক তাকিয়ে থেকে মুগ্ধ কন্ঠে বললো,
– ‘কি আর করবি! খুশিতে নাচ একটু!’

প্রাহী বিরক্তমাখা দৃষ্টিতে বলে উঠলো,
– ‘একটু পর এমনেও তোদের নাচতে হবে! তখন তুই নিজেই খুশিতে নেচে নিস কেমন!’
বলে সামনে তাকাতে দেখলো আকসাদ এদিকেই আসছে!

– ‘আরে আকসাদ ভাই যে! কি অবস্থা?’
বলেই অন্তু আকসাদের হাতের সাথে হাত মিলালো। আকসাদ ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে বললো,
– ‘এইতো আলহামদুলিল্লাহ! তোমাদের কি অবস্থা” কিছু হয়েছে? সবাই এত টেনসড কেন?’

– ‘আমরাও আছি। কিন্তু একটু সমস্যায় পড়েছি আর কি!’

আকসাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ‘কি সমস্যা?’

অন্তু হালকা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
– ‘আসলে আমাদের আজকে ডান্সের পারফরম্যান্স ছিলো। আর এদিকে আমাদের একজোড়া মেম্বার কম।’ বলেই পুরো ঘটনা আকসাদকে খুলে বললো অন্তু।

সবটা শুনে আকসাদ ঠোঁট দুটো গোল করে বলে উঠলো,
– ‘ওহ্! ভালোই সমস্যা হয়েছে দেখছি!’
অন্তু আকসাদের দিক তাকিয়ে হতাশ দৃষ্টিতে মাথা নাড়ালো।

সানজিদা মাথা ঘুরিয়ে আকসাদের দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘উম আকসাদ ভাই!’

আকসাদ ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে সানজিদার দিক তাকিয়েই ও বললো,
– ‘আপনি নাচ কেমন পারেন?’

আকসাদ কিছুটা ভেবে বলে উঠলো,
– ‘ বলবো না যে খুব ভালো ডান্স পারি। কিন্তু আসলে ডিপেন্ড করছে ডান্সের স্টেপ কিরকম তার উপর!’

সানজিদা মাথা উপর নিচ করে চিবুকে হাত রেখে কিছুক্ষণ সামনে তাকিয়ে রইলো।

-‘প্রাহী তুমি তো একটু হলেও নাচ পারো! রাইট!’

সানজিদার আচমকিত প্রশ্নে প্রাহী খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। ওকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে কেন! কোনোভাবে কি ওকে আর আকসাদকে একসাথে! কক্ষনও না! যেভাবেই হোক বিষয়টাকে আটকাতে হবে নয়তো! শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে ও বলে উঠলো,
– ‘নাচ! আমি? কই না তো আপু!’

সানজিদা সোজা কন্ঠে বলে উঠলো,
– ‘উহুঁ। আমি শিমলাদের ভার্সিটিতে একবার গিয়েছিলাম। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তুমি আর শিমলা ভালোই নেচেছিলে। আমার মনে আছে। যাই হোক আজকের অনুষ্ঠানে তুমি আমাদের সাথে পারফরম্যান্স এ অংশগ্রহণ করবে কেমন!’

প্রাহী মাথা নাড়িয়ে বললো,
– ‘আপু সেটা তো সাংস্কৃতিক নাচ ছিলো! দেশাত্মবোধক গানে নেচেছিলাম। তাও বছর খানিক আগে! আমি হুট করে এখন পারবোনা।’

– ‘কোনো অসুবিধে নেই! স্টেপ দেখিয়ে দিলে তুমি পারবে আশা করি!’

আকসাদ কোনাচোখে প্রাহীর দিক তাকিয়ে সানজিদা আর অন্তুর দিক তাকিয়ে বলে উঠলো,
– ‘তোমাদের কাছে কি আজকের নাচের টিউটোরিয়াল টা আছে! থাকলে একটু দেখানো যাবে?’

অন্তু দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বললো,
– ‘হ্যাঁ শিওর!’
বলে পকেট থেকে ফোনটা বের করে আকসাদের দিক এগিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ টিউটোরিয়াল দেখার পর আকসাদ বললো,
– ‘স্টেপগুলো আহামরি কঠিন কিছু না আই গেস্!’

সানজিদা কিছুটা হেসে বললো,
– ‘তাহলে এটাই ফাইনাল! আকসাদ আর প্রাহী তোমরা দুজন তাহলে পার্টিসিপেট করছো আমাদের সাথে কেমন!

প্রাহী জোড় গলায় বললো,
– ‘কিন্তু…।’

প্রাহীকে বলতে না দিয়ে অন্তু মুখ খুললো,
– ‘কোনো কিন্তু নয় প্রাহী! একটা ঝামেলায় পড়েছি এখন তোমরা সহযোগিতা না করলে কিভাবে হবে বলো!’
বলে কিছুটা থেমে আবার বললো,
– ‘আর আকসাদ ভাই তো বললোই নাচের স্টেপ গুলো ওতো কঠিন কিছু না! রিল্যাক্স! আমরা আছি তো তোমাদের হেল্প করবো!’

সানজিদা প্রাহীর কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
– ‘চিন্তা করোনা! আমাদের কাছে আধ ঘন্টার মতো সময় আছে! কিছুক্ষণ রিহার্সাল করে নিবে চলো! দেখবে আর ভয় লাগছে না। ওকে! এখন রিহার্সাল রুমে চলো আর দেরী করা যাবেনা। রাতুল আর তন্নিরাও আছে ওরাও তোমাদের দেখিয়ে দিবে।’
বলেই রাতুল আর তন্নিকে ইশারা করে সানজিদা অন্তুকে নিয়ে সামনে এগোলো।

সানজিদারা সামনে যেতেই প্রাহী দ্রুত আকসাদের নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘আপনি এটা কেন করলেন?’

আকসাদ নিচের ঠোঁট উলটে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘কি করলাম!’

– ‘এইযে এভাবে নাচতে হ্যাঁ বলে দিলেন! আপনি তো বলেছিলেন আপনি নাচ পারেন না তাহলে!’

আকসাদ হালকা হেসে বললো,
– ‘আমি বলেছি ডিপেন্ড করে নাচের স্টেপ এর উপর পারব কি না! আর আমার স্টেপগুলো দেখে মনে হয়েছে আমি পারব তাই হ্যাঁ বলে দিয়েছি!’

প্রাহী এবার হালকা বিরক্ত হলো। উনি পারবে দেখে যে ও যে পারবে এটার কি মানে আছে।
– ‘আপনি!’

আকসাদ হালকা প্রাহীর দিক ঝুঁকে বললো,
– ‘হু! আমি !’

প্রাহী হালকা পিছিয়ে আকসাদের দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘আপনি পারলেই যে আমি পারব এমন তো কথা নেই তাইনা!’

আকসাদ গভীর দৃষ্টিতে প্রাহীর দিক তাকিয়ে বলে উঠলো,
– ‘আই উই’ল গাইড ইউ প্রাহী! ডোন্ট ও’য়ারী!’

প্রাহী বিস্মিত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আকসাদের পানে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই তন্নি ওর বাহু ধরে বললো,
– ‘টেনশন নিস না প্রাহী! বললোই তো উনি তোকে দেখিয়ে দিবে! এবার চল!’
বলেই প্রাহীর বাহু ধরে সামনের দিক এগিয়ে নিয়ে গেলো। রাতুলও হালকা হেসে আকসাদকে আসতে বলে ওদের পিছন পিছন ছুটলো। তন্নি ফিসফিস করে প্রাহীর কানে বলে উঠলো,
– ‘যেচে আমার ‘আমেরিকান ক্রাশ’ তোর সাথে ডান্সে পারফর্ম করতে রাজি হয়েছে! আর তুই এমন করছিস কেন! পাগলী মেয়ে! আমি হলে তো হুর হুর করে রাজি হয়ে যেতাম!’

পাশ থেকে রাতুল বলে উঠলো,
– ‘ও তোর মতো নির্লজ্জ না তাই!’

তন্নি কড়া চোখে রাতুলকে শাসিয়ে প্রাহীকে নিয়ে এগিয়ে চললো। প্রাহী আপাতত এদের কথায় মন না দিয়ে ভাবছে, নাচ! তাও আবার এই লোকটার সাথে! ভাবতেই কেমন গলাটা শুকিয়ে এলো ওর। শিমলাটা থাকলে ভালো হতো ওকেই না হয় গোছিয়ে দিয়ে ও নিস্তার পেত! কিন্তু এই মেয়েকে তো আশেপাশে কোথাও দেখছে না! প্রাহী পিছনফিরে একবার আকসাদের পানে চাইলো যে কিনা পকেটে হাত দিতে একদৃষ্টিতে ওর দিক তাকিয়ে রয়েছে। প্রাহী ভাবলো সানজিদা আপুকে ও আবার বুঝাবে! তন্নির হাত থেকে নিজের বাহু ছাড়িয়ে দৌড়ে সানজিদার কাছে যেয়ে ওকে বোঝাতে লাগলো। দূর হতে প্রাহীকে এভাবে দেখে আকসাদ বিড়বিড় কন্ঠে বলে উঠলো, ‘so loveable!’

– ‘কি রে চামচিকা!’
শিমলা ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলো নক্ষত্র প্যান্টের পকেটে হাত রেখে ওর দিক ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। শিমলা কিছু না বলে আবারও তত্ত্ব গুলো দেখতে লাগলো।

– ‘কি রে কথা কানে যায়না! আর তোর মালিক কই তাকে তো দেখছিনা?’

শিমলা কাজ করতে করতে নক্ষত্রের দিক ফিরে বললো,
– ‘প্রথমত আমি চামচিকা নই। আর দ্বিতীয়ত আপনার বোন কোথায় আর থাকবে! এই বাড়িতেই আছে খুঁজে নিন!’

– ‘আচ্ছা! সবসময় একসাথে আঠার মতো চিপকে থাকিস! এখন আবার একলা তাই জিজ্ঞেস করলাম।’

– ‘আছে হয়তো আশেপাশেই।’
বলেই শিমলা চেয়ারগুলো একত্র করতে লাগলো।

নক্ষত্র এক পলক শিমলার দিক তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা বেশ ভালোই ঘামাচ্ছে গরমে। পকেট থেকে টিস্যু বের করে ওর দিক এগিয়ে দিয়ে বললো,
– ‘ভালোই তো ঘামাচ্ছিস! তুই এগুলোকাজ করছিস যে! লোক কথায়!’

টিস্যু নিতে নিতে শিমলা উওর দিলো,
– ‘ক্যাটারিং এর লোক এখনও আসেনি। উনারা কখন আসবে কে জানে! একটু পরেই অনুষ্ঠানে শুরু হবে চেয়ারগুলো তো দিতে হবে ওখানটায়!’

নক্ষত্র ‘ওহ্’ বলে শিমলার হাত থেকে চেয়ার গুলো নিতে নিতে বললো,
– ‘ তুই ছাড়! আমি দিয়ে আসছি। যা যা নেয়া লাগবে এখানে গুছিয়ে রাখ। আমি নিয়ে যাচ্ছি এইসব কাপড় পড়ে এই কাজ করতে যাচ্ছিস! উষ্ঠা খেয়ে পড়বি পড়ে!

– ‘এইসব কাপড় মানে!’

নক্ষত্র বিরক্তিদৃষ্টিতে বলে উঠলো,
– ‘তোর মাথা! সর সামনে থেকে।
বলে চেয়ারগুলো নিয়ে বেরিয়ে গেলো। শিমলা ভ্রুঁ কুঁচকে নক্ষত্রের যাওয়ার দিক তাকিয়ে চেয়ারছাড়াও বাকি জিনিসগুলো সাজিয়ে রেখে উপরের দিক গেলো।

রিহার্সাল রুমে এসে বারবার হাত কচলাচ্ছে প্রাহী। প্রিপারেশন ছাড়া নাচ! তাও আবার অচেনা একটা মানুষের সাথে! যদিও দেখা হয়েছে ওদের এই নিয়ে ২/৩ বার! তারপরও ওর বেশ নার্ভাস লাগছে। কাঁধে কেউ হাত রাখতেই দেখলো শিমলা ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

– ‘কিরে তুই এখানে?’

প্রাহী ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
– ‘হু! রিহার্সাল করতে এসেছি।’

শিমলা অবাক হয়ে বললো,
– ‘তুই নাচবি! কার সাথে?’

– ‘তোর ‘আকসাদ’ ভাই এর সাথে।’
বলেই প্রাহী একবার আকসাদ এর দিক তাকালো। যে কিনা আপাতত মাঝে মাঝে ওর দিক তাকাচ্ছে আর সানজিদা আর রাতুল এর সাথে কথা বলছে।

শিমলা বিস্মিত হয়ে বললো,
– ‘আকসাদ ভাই এর সাথে! আকসাদ ভাই রাজী হয়েছে!’

প্রাহী মাথা নাড়িয়ে শিমলাকে সবটা বললো। শিমলা শুনে একবার আকসাদের দিক তাকাচ্ছে তো আরেকবার প্রাহীর দিক তাকাচ্ছে!
প্রাহী শিমলার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় এনে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘তুই না হয় আমার জায়গায় এসে পারফম কর! আমি তোকে অনেক খুঁজেছি তখন পাইনি!’

শিমলা প্রাহীর দিক তাকিয়ে শ্বাস ফেলে বললো,
– ‘ওদিকটা একটু সামলাতে হয়েছে তাই আসতে পারিনি।’
বলে থেমে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললো,
– ‘তোকে যেহেতু সিলেক্ট করেছে তুই তাহলে পার্টিসিপেট কর। আমি পারলে অবশ্যই তোকে সাহায্য করতাম!’

শিমলাকে কিছু বলতে যাবে তার মাঝে শিমলার মা এসে বললো,
– ‘তুই নক্ষত্রকে একা এতগুলো কাজের দায়িত্ব দিয়ে এসেছিস! হাতে হাতে একটু সাহায্য তো করতে পারতিস নাকি! তা না করে এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছিস! অদ্ভুত!’

– ‘আমি যাচ্ছি!’ বলেই ঘুড়ে প্রাহীকে আশ্বাস দিয়ে বললো,
– ‘চিন্তা করিস না তুই পারবি!’
বলেই মাকে নিয়ে চলে গেলো শিমলা। প্রাহী অসহায় দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইলো! পিছন থেকে সানজিদা দ্রুত কন্ঠে ওকে বললো,
– ‘প্রাহী এসো! হাতে সময় নেই!’

শিমলা বিরক্তসূচক দৃষ্টিতে নক্ষত্রের দিক তাকিয়ে রয়েছে। কোনো মানে আছে এই গুটিকয়েক কাজের জন্য ওকে ডেকে আনার!

– ‘হ্যাঙলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন?’

শিমলা হালকা চেঁচিয়ে বললো,
– ‘আপনি হ্যাঙলা! কয়েকটা চেয়ার নিয়েই দম ফুড়িয়ে গেলো!’

নক্ষত্র ভ্রু নাচিয়ে বললো,
– ‘ওই চুপ! গুছিয়ে দিয়েই খালাস হয়ে গেছিস! উঠোনে তো একটা টেবিল ফ্যানও নেই! নরমাল ফ্যানে কাজ হবে! শুধু চেয়ার রাখলেই তো হলোনা! বাকিদিক গুলোও তো দেখতে হবে রাইট!’

শিমলা মুখ গোমড়া করে বললো,
– ‘হয়েছে বুঝেছি। আসুন আমার সাথে।’
বলেই শিমলা হাঁটতে লাগলো। পিছন পিছন নক্ষত্রও চললো ওর সাথে।

“এখন আপনাদের সামনে নাচ পরিবেশন করছে তিনজোড়া জুটি।’
এনাউন্স করতেই এক ঝলক আলো তিনজোড়া মুখের উপর এসে পড়লো। রাতুল আর তন্নি একসাইডে, মাঝখানে প্রাহী আর আকসাদ আরেক সাইডে অন্তু আর সানজিদা। যেহেতু প্রাহী আর আকসাদ এর ড্রেস কোড প্রায় ম্যাচিং হয়ে গিয়েছে তাই ওদেরকে মাঝখানে প্রধান কাপল হিসেবে রেখেছে সানজিদা,তন্নি ওরা।
তিনজোড়া জুটি সামনে আসতেই গান বেজে উঠলো,

ইয়ে নজর ভি আজিব থি
ইসনে দেখে মনজার সাভি
হোওওও দেখ কে তুঝে ইক দফা ফির কিসি কো না দেখা কাভি (তন্নি)
মেরা পেহেল জুনুন তু মেরা পেহলা জুনুন
ইশক আখিরি হ্যায় তু (রাতুল)
মেরি জিন্দেগি হ্যায় তু
মেরি জিন্দেগি হ্যায় তু
গম হ্যায় ইয়া খুশি হ্যায় তু
মেরি জিন্দেগি হ্যায় তু (×২) (রাতুল এবং তন্নি)

কাভি না বিছারনে কে ভাস্তে হি
তুঝসে জুডে হ্যায় হাত মেরে (×২)
সায়া ভি মেরা, জাহান সাথ ছোড়ে
ওয়াহান ভি তু রেহনা সাথ মেরে! (আকসাদ)

সাচ কাহু তেরে নাম পে দিল ধড়কতা হ্যায় আজ ভি
দেখ কে তুঝে ইক দফা ফির কিসি কো না দেখা কাভি (প্রাহী)
শাম হ্যায় সুকুন কি, তু শাম হ্যায় সুকুন কি (আকসাদ)
চেইন কি গাদি হ্যায় তু
মেরি জিন্দেগি হ্যায় তু (×২) (আকসাদ আর প্রাহী)

হাল অ্যাইসা হ্যায় মেরা আজ ভি ইশক তেরা
রাত সারি জাগায়ে মুঝে!
কোই মেরে সিওয়া জো পাস আয়ে তেরে তো
বেকারারি সাতায়ে মুঝে! (অন্তু)
জলতা হ্যায় ইয়ে দিল মেরা
ওহ ইয়ারা জিতনি দফা (সানজিদা)
চাঁদ দেখতি হ্যায় তু
মেরি জিন্দেগি হ্যায় তু
মেরি জিন্দেগি হ্যায় তু
গম হ্যায় ইয়া খুশি হ্যায়
তু মেরি জিন্দেগি হ্যায় তু (সবাই একসাথে)
মেরি জিন্দেগি হ্যায় তু
মেরি জিন্দেগি হ্যায় তু ওওও…

নাচ শেষ হতেই সবাই করতালি দিয়ে উঠলো। অসাধারণ পারফরম্যান্সে সবাই হৈহৈ করতে লাগলো। শিমলাও হাততালি দিতে থাকলো!

– ‘কি ব্যাপার তুই নাচলি না!’

নক্ষত্রের দিক একবার তাকিয়ে শিমলা বলে উঠলো,
– ‘না।’
– ‘কেন?’
– ‘এমনি!’
নক্ষত্র খচিয়ে বলে উঠলো,
– ‘ভালোই হয়েছে আর সার্কাস দেখা লাগলো না আমার।’

– ‘যান তো! ফালতু লোক!’
বলেই ঝাঁটা মেরে আকসাদকে সরিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো শিমলা। নক্ষত্র শিমলার যাওয়ার দিক তাকিয়ে ‘হুহ্’ বলে ফোন বের করতে লাগলো।

নাচ শেষ হতেই আকসাদ আলতো হাতে প্রাহীর কোমড় আর হাত ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেতেই প্রাহী যেন ওর শ্বাস ফিরে পেলো। এতক্ষণ লোকতার স্পর্শে ওর শরীরটা যেন নাড়াতে ভুলে গেছিলো ও! প্রাহী চলে যেতে যেতে কি মনে করে একবার পিছন ফিরে আকসাদের দিক তাকিয়ে বলে উঠলো,
– ‘আপনি তো ভালোই ডান্স পারেন!’

আকসাদ মুচকি হেসে বললো,
– ‘আপনিও প্রাহী! বলেছিলাম না ইট উইল বি নরমাল!’

প্রাহী মাথা নাড়িয়ে বললো,
– ‘হু! ধন্যবাদ!’

– ‘নো নিড প্রাহী!’
বলেই হালকা ঝুঁকে আকসাদ ওর মুখে হালকা একটা ফু দিয়ে সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিলো। প্রাহী শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো! মেরুদণ্ড দিয়ে যেন এক ঠান্ডা শিহরণ বয়ে চললো!,,,

চলবে,,,