#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ৩৯(সবঠিক তো!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী
ঘুম জড়ানো চোখে প্রাহী সামনে তাকাতেই ওর সব ঘুম উবে গেলো! অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ও তাকিয়ে রইলো আকসাদের দিকে, যে কিনা তার চওড়া শরীরে আটসাট করে সাদা শার্ট এর সাথে রিচ কালো প্যান্ট পড়েছে। শার্টের হাতের বোতাম লাগানো শেষে গায়ে সাদা এপ্রোনটা গায়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজাচুলগুলো ড্রায়ার দিয়ে শুকাচ্ছে। প্রাহী গায়ের থেকে কম্বল সরিয়ে আকসাদের পিছন যেয়ে দাঁড়ালো,
– ‘আপনি কি ডাক্তার নাকি!’
আকসাদ প্রাহীর আওয়াজে ড্রায়ার টা ওফ করে পিছন ফিরে ওর দিক তাকিয়ে হাসি দিলো,
– ‘গুড মর্ণিং! ঘুম শেষ!’
প্রাহী মাথা নাড়ালো। আকসাদ প্রাহীর নাকে টোকে দিয়ে বললো,
– ‘ফ্রেশ হয়ে এসো!’
প্রাহী অদ্ভুত চোখে কিছুক্ষণ আকসাদের দিক তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চললো। আকসাদ চুলগুলো পুনরায় ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে সেট করে হাতে ওয়াচ পড়তে লাগলো। ততক্ষণে প্রাহী ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে মুখে চেপে চেপে আকসাদকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
– ‘বললেন না যে?’
আকসাদ প্রাহীর দিক ভ্রু উঁচাতেই প্রাহী তোয়ালে রেখে বললো,
– ‘আপনি ডাক্তার কি না!’
আকসাদ প্রাহীর প্রশ্নে মুচকি হেসে ওর সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। পাতলা কোমড় টায় নিজের শক্ত আঙুলগুলো দ্বারা ধরে ওকে কাছে আনলো। প্রাহীর ছোটো ছোটো হাতজোড়া তখন আকসাদের বুকের এপ্রোনের উপর স্থান নিয়েছে।
– ‘না প্রাহী আ’ম নট এ ডক্টর!’
প্রাহীর ফের প্রশ্ন, ‘তাহলে?’
– ‘আমি ফার্মাসিস্ট।’
প্রাহীর গালের পানিগুলো নিজের বুড়ো আঙুল দ্বারা মুছতে মুছতে আকসাদ জবাব দিলো। প্রাহী বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– ‘ফার্মাসিস্ট!’
– ‘হু!’
প্রাহী উৎসুক কন্ঠে বললো,
– ‘কি কি ঔষুধ বানান আপনি!:
– ‘অনেক ধরনেরই!’
– ‘বাহ্! এখন তাহলে কোনো অসুখে ভুগলে আপনায় বলবো! বাইরে থেকে আর ঔষধ কিনতে হবেনা!’
আকসাদ প্রাহীর কথায় উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। প্রাহী প্রাণখোলা চোখে সেই হাসির দিক তাকিয়ে আছে! হাসলে আকসাদের বামগালে হালকা টোল পড়ে। প্রাহী বিমোহিত চোখে সেই টোলের দিক তাকিয়ে আছে। আকসাদ হাসি থামিয়ে প্রাহীর গালে হাত রেখে বললো,
– ‘ওকে ম্যাডাম! নাও লিসেন টু মি!’
প্রাহী জিজ্ঞাসুক চোখে তাকালে আকসাদ ওকে আরও কাছে টেনে আনলো,
– ‘এখন থেকে রোজ সকালে আমার বেড কফি চাই তাও তোমার হাতে! কাজ শেষে ঘরে ফিরার পর রুমে যেন তোমাকে দেখি! প্লাস এভরি টাইম আমি ফ্রেশ হওয়ার সময় আমার জামাকাপড় বের করে গুছিয়ে রাখবে যাতে আমার আর খুজে খুজে ড্রেস পড়া না লাগে, আমি বাসায় থাকা অবস্থায় আমার সাথে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ,ডিনার সব করবে, …।’
– ‘আর কিছু?’
আকসাদ হাসলো। প্রাহীকে আরও নিজের সাথে মিশিয়ে বললো,
– ‘ইয়াহ্! আর সবসময় আমার সাথে ঘেষে ঘেষে থাকবে!
প্রাহী লাজুক হাসলো,
– ‘থাকলে কি হবে!’
– ‘কি হবে মানে! যত আমার সাথে সময় কাটাবে ততোই না তুমি আমার সাথে ফ্রি হবে! নইলে জড়তা কাটবে কিভাবে বলো?’
প্রাহী নিশ্চুপভাবে আকসাদের দিক চাইলে আকসাদ প্রাহীর দু’গালে হাত রাখলো,
– ‘বিয়ে করেছি! বউয়ের সান্নিধ্য না পেলে জমে?’
প্রাহী সরে যেতেই আকসাদ ওকে ধরে দু’গালে গভীরভাবে চু’মু খেয়ে নাকের ডগাতেও ঠোঁট ছোয়ালো। দরজার কড়া নাড়তেই আকসাদের হাতের বাঁধন হালকা হতেই প্রাহী ছুটে যেয়ে দরজা খুললো। দরজার বাইরে আয়সুন দাঁড়িয়ে। প্রাহীকে দেখে হাসি হাসি মুখে বললো,
– ‘ব্রেকফাস্ট রেডি তোমরা আসবে না! চলো চলো!’
বলেই প্রাহীর হাত ধরে আয়সুন ওকে নিয়ে গেলো। প্রাহী যেতে যেতে আকসাদকে ইশারা করতেই আকসাদ ব্যাগ হাতে বেড়িয়ে এলো। খাবার টেবিলে এসে পৌঁছোতেই আকসাদ চেয়ার টেনে বাবার পাশে বসলো। প্রাহী দাঁড়িয়ে নাস্তা সার্ভ করতেই আকসাদের মা ওকে থামিয়ে দিলেন,
– ‘তুমি বসো! এখানে সবাই নিজের খাবার নিজেরাই নিয়ে খায়। সার্ভ করা লাগবে না। এসো!
প্রাহী ধীরে আকসাদের পাশে বসতেই আকসাদ প্রাহীর প্লেটে একটা স্যান্ডউইচ আর ওমলেট দিয়ে বললো,
– ‘আর কি নিবে বলো! টোস্ট খাবে!’
প্রাহী দ্রুত মাথা নাড়ালো,
– ‘এটাই আমার জন্য অনেক! এগুলো আগে শেষ করি!’
টেবিলে সবার খাওয়ার মাঝেই আকসাদের বাবা আকসাদকে একফাঁক জিজ্ঞেস করলেন,
– ‘আজ থেকে জয়েন করছিস!’
আকসাদ খেতে খেতে জবাব দিলো, ‘হ্যাঁ!’
– ‘কেয়ারফুল থাকিস! এমনেই সময় ভালো যাচ্ছে না।’
আকসাদ বাবার দিক চেয়ে বললো,
– ‘চিন্তা করো না!’
– ‘চিন্তা এমনেই চলে আসে! সমস্যার মাঝে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না! আয়লিন আমার চা টা ঘরে নিয়ে এসো!’
আয়লিনা হোসেন মাথা নেড়ে প্রাহীর দিক নজর দিলেন। প্রাহীর দিক জুসের জার টা এগিয়ে দিলেন,
– ‘তোমার তো শরীরটা এতদিন দূর্বল ছিলো! জুসটা খাও। ভালো লাগবে!’
প্রাহী মাথা নেড়ে গ্লাসে জুস নিলো৷ আকসাদের মা রান্নাঘরে গেছেন প্রাহী সেদিক তাকিয়ে পাউরুটি মুখে পুরে কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো ও ভাবছে! আয়সুনের ডাকে ওর দিক তাকাতেই আকসাদ পাশ হতে প্রাহীর বাম গালে চু’মু দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠলো,
– ‘থাকো! মা আমি গেলাম!’
প্রাহী অবাক চোখে তুলে আকসাদের যাওয়ার দিক তাকিয়ে! লোকটার লজ্জা নেই! বোনটার সামনে এমন করার মানে কি? পাশ হতে আয়সুন মিটমিট করে হাসছে। প্রাহী চোখ নিচু করে জুসের গ্লাস ধরে আছে। আকসাদের মা রান্নাঘর থেকে চা এনে টেবিলে রেখে আয়সুনের দিক তাকালো,
– ‘হাসছিস কেন! প্রাহী জুসটা খাচ্ছো না কেন! ভালো লাগছে না!’
– ‘না না জুসটা ভালো!’
– ‘তাহলে খেয়ে ফেলো! চা বা কফি কিছু খেলে খেয়ে নিও! কিচেনে ফ্লাক্সে আছে!’
প্রাহী মাথা নেড়ে জুসের গ্লাসে সিপ দিলো। আয়সুন এখনও হেসে যাচ্ছে! প্রাহী করুণচোখে আয়সুনের দিক তাকাতেই ও এবার শব্দ করে হেসে উঠলো!
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে শিমলা দ্রুত পা ফেলে বাড়ির রাস্তা ধরে এগোতেই তুলি খপ করে এসে ওর হাত ধরলো। শিমলা তুলির দিক চোখ ফেলতেই ও ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ‘এভাবে তাড়াতাড়ি কই চলছিস!’
– ‘কোথায় আর! বাসায়?’
– ‘তা যাবি কিন্তু এত জলদি কেন? শুন প্রাহীর সাথে কথা হয়েছে?’
– ‘হ্যাঁ হয়েছে। কালও তো হলো।’
– ‘আমি ওর সাথে কথা বলতে চাইছিলাম। কিন্তু কখন যে ফোন দিব বুঝতে পারছিনা।’
– ‘হু।’
তুলি এবার শিমলার দিক ভালোভাবে তাকালো। মেয়েটার চোখেমুখে বিরক্তি! শিমলার হাত ধরে ভালোভাবে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘তোর কি হয়েছে বল তো! রেগে আছিস কোনো কারণে আমাদের উপর! বা কারোর উপর?’
শিমলা ভ্রু তুলে বললো, ‘তোদের উপর রাগতে যাব কেন?’
-‘তাহলে?’
শিমলা এবার তুলিকে ধীর কন্ঠে বললো,
– ‘আচ্ছা শোন! তোর বাড়িতে আজ রাতটা থাকি! সমস্যা হবে?’
তুলি মনে মনে একটু অবাক হলেও সেটা চেপে মুখে হাসি এনে বললো,
– ‘সমস্যা হবে কেন! আয় না! কিন্তু কি হয়েছে বলবি তো?’
– ‘সব বলবো তবে তোর বাসায় যেয়ে! আর প্রাহীর সাথে কথাও বলে দিব কেমন?’
তুলি খুশিভাবে মাথা নেড়ে শিমলাকে সাথে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। তুলির সাথে কথা বলতে বলতে শিমলা হঠাৎ দেখলো শোয়াইব ধপাধপ পা ফেলে চলে যাচ্ছে। তন্নি মলিন মুখে ওর যাওয়ার দিক তাকিয়ে আছে! শিমলা ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ সেদিকে তাকালো। এদের আবার কি হলো! সবঠিক তো!
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
টরোন্টো আইসল্যান্ড পার্কের ডান পাশের মেইন রাস্তা বরাবর ‘রিপ্লেই’স ফার্মাসিউটিক্যাল ল্যাব’ এর সামনে আকসাদ গাড়িটা থামালো। পার্কিং লঞ্জ এরিয়াতে গাড়ি সাইড করে রেখে আকসাদ তিনতালা বিশিষ্ট মার্বেল পাথরে সজ্জিত বিল্ডিং মেইন গেট ধরে এগোলো। গেইটে ঢুকতেই গার্ডগুলো আকসাদকে স্বাগত জানাতেই আকসাদ মাথা নেড়ে লিফটে করে দোতলায় উঠে ল্যাবের সামনে এসে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই ল্যাবের একপাশে দাঁড়ানো সকল স্টুডেন্ট আকসাদকে দেখে একসাথে বলে উঠলো,
– ‘গুড মর্ণিং স্যার!’
আকসাদ ব্যাগ একপাশে রেখে বললো,
– ‘গুড মর্নিং! কি অবস্থা সবার?’
– ‘এইতো স্যার ভালো! আপনি কেমন আছেন?’
– ‘গুড!’
আকসাদ ল্যাবের মেশিনগুলোকে পরখ করতেই সিনিয়র একজন স্টুডেন্ট জিম বললো,
– ‘স্যার আমরা কি এবার…।’
আকসাদ সাথে সাথেই বললো,
– ‘শিপমেন্ট এর কাজ এগেইন শুরু হবে!’
স্টুডেন্ট সবাই ওর দিক কিছুটা বিস্মিত নজরে তাকালেও মাথা নাড়ালো। আকসাদ টেবিলে হাত রেখে বললো,
– ‘ঠিক যা জায়গায় আমরা কাজ পোস্টপোন করে রেখেছিলাম ঠিক সেখান থেকেই কাজ শুরু করো ওকে! নাও ডু ফাস্ট। কেমিক্যালগুলো সব কোথায়?’
– ‘স্যার সবগুলো গ্রাউন্ডে আর কিছু এখানে আছে!’
– ‘এখানে যে লিকুইড গুলো আছে সেগুলো আনো।’
টেবিলভর্তি লিকুইডগুলো আকসাদ ভালোমতো দেখলো। এসিটিক এনহাইড্রাইডের বোতলগুলো একপাশে এনে সেগুলোর থেকে একফোঁটা লিকুইড মেশিনে দিয়ে চেক করলো। আকসাদ এবার ভ্রু কুঁচকে ডাইথাইল ইথারের বোতলগুলো দেখে স্টুডেন্টগুলোর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘এগুলো এমন হলুদ কেন!’
– ‘স্যার আসলে…।’
আকসাদ চাইছেনা রাগতে কিন্তু তারপরও ও ওর চোখমুখ কঠিন হয়ে যাচ্ছে,
– ‘এতটা ইরিসপন্সিবেল হও কিভাবে? এতকিছুর পরেও তোমরা এতটা কেয়ারলেস কিভাবে হতে পারো? হাও?’
ওদের মধ্যে একজন এবার সাহস করে বললো,
– ‘স্যার আমরা আজই ল্যাবে এসেছি! এতদিন তো সব ওফ ছিলো! আমরাও এসে দেখি কিছু কিছু লিকুইড এর এই অবস্থা!’
আকসাদ কপালে আঙুল ডলে বললো,
– ‘গ্রাউন্ড দেখে নতুন লিকুইড আনার ব্যবস্থা করো। জলদি।’
আকসাদের কথামতো সিনিয়ির স্টুডেন্টগুলো স্টাফদের দিয়ে ক্যামিকেল আনলো। আকসাদ সেগুলো টেস্ট করে দেখলো গ্রাউন্ডের কিছু কিছু লিকুইড এর অবস্থাও সেম! সিনিয়র স্টুডেন্ট এর মধ্যে হেনরি এবার বললো,
– ‘স্যার লিকুইডগুলোর অবস্থা তো ভালোনা! এখন কি কাজ…।’
– ‘সব লিকুইড এর অবস্থা খারাপ না! কিছু কিছু ভালো আছে! যেগুলো স্টেবল আছে ওগুলো দিয়েই কাজ শুরু করো।’
আকসাদের কথামতো সবাই কাজ শুরু করে দিলো। কেমিক্যালগুলো ব্যবহার এর আগে ওরা বারবার সেগুলো টেস্ট করে নিলো। আকসাদ এদিকে গ্লাভস পরিহিত হাতে একটা কেমিক্যাল এর টিউব নিয়ে নেড়েচেড়ে মেশিনের নিচে রাখতেই ও কিছুটা অবাক হয়ে গেলো! কেমিক্যালগুলোর কালার তো এভাবে চেঞ্জ হওয়ার কথা না! আকসাদ ক্যামিকেলগুলো একে একে দেখে একই অবস্থা দেখে সেই ক্যামিকালগুলো আলাদা করে রাখলো।
আকসাদ এবার নিজের চেম্বারে বসে আছে। ফাইলগুলো ঘেটে ফোনে কল আসতেই আকসাদ স্ক্রিনের উজ্জ্বলরত নাম দেখে আকসাদ সাথে সাথে রিসিভ করলো ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনতেই ও দ্রুত সাদা এপ্রোনটা খুলে ব্যাগ হাতে বের হতেই ওর কেবিনের দরজা খুলে শ্বেতাঙ্গ একটা মেয়ে নম্রভাবে বললো,
– ‘স্যার কেন আই কাম ইন?’
– ‘হ্যাঁ জেনি এসো!’
– ‘স্যার টেস্টগুলোর ফাইল!’
আকসাদের দিক ফাইলটা এগিয়ে দিতেই আকসাদ সেটা নিয়ে বললো,
– ‘আমি বাসায় যেয়ে চেক করবো?’
– ‘ওকে স্যার!’
আকসাদ এবার বের হতে দেখলো জেনি এখনও দাঁড়িয়ে। হাতের আঙুলগুলো বারবার মুচড়ে যাচ্ছে। আকসাদ ভ্রু কুঁচকে ওর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘কিছু বলবে!’
জেনি এবার মাথা তুলে সিরিয়াস কন্ঠে বললো,
– ‘স্যার আমার আপনাকে কিছু বলার ছিল! এন্ড ইটস্ ইম্পর্টেন্ট!’
চলবে,,,
#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ৪০(প্রথম স্পর্শ)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী
আকসাদ ভ্রু কুঁচকে ওর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘কিছু বলবে!’
জেনি এবার মাথা তুলে সিরিয়াস কন্ঠে বললো,
– ‘স্যার আমার আপনাকে কিছু বলার ছিল! এন্ড ইটস্ ইম্পর্টেন্ট!’
আকসাদ ফোনের দিক তাকালো। ভিঞ্চি ওকে ক্রমাগত ফোন করে যাচ্ছে! ব্যস্ত কন্ঠে জেনিকে বললো,
– ‘বেশি সময় লাগবে?’
জেনি গলা খাকরি দিয়ে বললো,
– ‘জ্বি স্যার!’
– ‘তাহলে জেনি কালকে না হয় বলো? আমার আজকে একটু কাজ পড়ে গেছে। আর আমাকে এখনই যেতে হবে।’
– ‘স্যার তাহলে কালকে ল্যাব শেষে বলি?’
আকসাদ মাথা নেড়ে বললো,
– ‘অবশ্যই! এছাড়া তুমি আমাকে ফোনও করেও বলতে পারো! অসুবিধা নেই!’
জেনি হালকা হেসে বললো,
– ‘ওকে স্যার!’
,
,
,
আকসাদদের বাড়িতে এসেছে প্রাহীর প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে! তারপরও এ বাড়ির আনাচে কানাচে কি রয়েছে তা এখনও প্রাহী সেভাবে চিনেনা! আকসাদদের বাড়িটা মূলত দোতলা বিশিষ্ট। ডাচ হোয়াইট আর ব্ল্যাক মার্বেল পাথরের সমন্বয়ে বাড়িটার প্রতিটি কোণায় কোণায় যেন আভিজাত্যের ছোঁয়া। প্রাহী ভাবছে, আকসাদরা অনেক সৌখিন! এইযে বিভিন্ন শো-পিস, ওয়ালম্যাট, প্রতিটা ঘরের কোণে একটা করে গাছের টব যেখান থেকে গাছের লতাপাতাগুলো দেয়ালে বেয়ে একটা চমৎকার আকার গঠন করছে, আবার কারুকার্যে খচিত বিভিন্নি মাটির টব, কাঁচের সামগ্রী যা বেশ সৌখিনতার পরিচয়ই বহন করে! বাড়ির বাইরেও অনেক খালি জায়গা আছে। যার একপাশে বেশ জায়গা নিয়ে বাগান করা হয়েছে। যেখানে জানা অজানা অনেক ধরনের ফুল জায়গা করে নিয়েছে! একপাশে দোলনা আর বাড়ির পিছনের সাইডে সুইমিংপুল এর স্বচ্ছ পানিতে পুরো বাড়িটার অর্ধেক ছায়া ফুটে উঠেছে। বাড়ির সামনের একপাশে সুগার ম্যাপল পাতার বিশাল গাছটা যেন বাড়িটাকে তার ছায়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে!
বিলাশ বহুল বাড়িটায় একটু ঘুরে প্রাহী উজ্জ্বল সাদা আলোয় ঘেরা করিডোর দিয়ে এখন হাঁটছে। পর পর সবগুলো রুমের সামনে দিয়ে যেতে যেতে একটা রুমের সামনে এসে প্রাহী থামলো। রুমটা বন্ধ করা হলেও রুমের নিচ দিয়ে হালকা ডিমলাইটের আলো উঁকি মারছে! তাহলে এই ঘরে কি কেউ থাকে! প্রাহী ধীরে রুমটার দরজার লকে হাত হাত রেখে ঘুরাতে যাবে তার আগেই ওর হাত ধরে কেউ ঝাঁকি মারলো! প্রাহী চমকে ঘুরে দেখলো আয়দুন দাঁড়িয়ে!
– ‘তুমি এখানে কি করছো ভাবী?’
প্রাহী সামান্য হেসে বললো,
– ‘কিছুনা এমনেই একটু হাঁটছিলাম! আচ্ছা আয়সুন এই ঘরে…।’
– ওকে এখন আমার সাথে চলো? মা তোমাকে ডাকছে।’
প্রাহী আর কথা বাড়ালো না। মাথা নেড়ে ধীর পায়ে আয়সুনের সাথে পা মিলিয়ে ওর চলে গেলো।
,
,
,
আকসাদের মা কিছু বাক্স নাড়াচাড়া করেছিলেন। কারো মিষ্টি আওয়াজে মাথা তুলতেই দেখলেন প্রাহী আর আয়সুন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ।
– ‘ মা আসবো!’
আয়লিনা হোসেন দ্রুত মাথা নেড়ে বললেন,
– ‘এসো এসো!’
প্রাহী আর আয়সুন একসাথে ঘরে ঢুকলো। আয়সুন মায়ের এক পাশে বসলো। প্রাহী বিছানার এক প্রান্তে বসতেই আয়লিনা হোসেন ওর দিক তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন,
– ‘তোমার এ বাড়িতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?’
প্রাহী হালকা হাসলো,
– ‘না মা, সমস্যা হচ্ছেনা!’
আয়লিনা হোসেন মিষ্টি হাসলেন। মেয়েটার সরল ব্যবহারে উনি অনেক আগেই মুগ্ধ। তার মধ্যে এইযে মেয়েটা নির্দ্বিধায় উনাকে ‘মা’ বলে ডাকছেন এতে উনি আরও সন্তুষ্ট। কারণ উনি ভেবেছিলেন প্রথম প্রথম মেয়েটা হয়তো একটু ইতস্তত বোধ করতে পারে! যদিও ইতস্তত থাকাটা ভুল কিছুনা! কিন্তু মেয়েটা ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে! এইটাই বা কম কি? আকসাদের মা এবার প্রাহীকে বললেন,
– ‘আচ্ছা, তোমার হাতদুটো সামনে দাও!’
প্রাহী নির্দ্বিধায় হাতদুটো সামনে মেলতেই আয়িলনা হোসেন ওর হাতে দু’বড়ির একজোড়া বালা পড়িয়ে দিলো। অতঃপর ঝুকে প্রাহীর গলায় চ্যাপ্টা একটা চেইন পড়িয়ে দিলো। প্রাহী হাতে গলায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে আকসাদের মায়ের দিক তাকাতেই উনি মুচকি হাসলেন,
– ‘আসার পর থেকে বিভিন্ন ঝামেলার কারণে তোমাকে এগুলো দেয়া হয়নি। আবার তুমিও অসুস্থ ছিলে! বিয়ের সময় তো তেমন কিছুই দিতে পারিনি। তাই এখন দিয়ে দিলাম।’
প্রাহী অবাক চোখে আকসাদের মায়ের দিক তাকিয়ে আছে! বিয়ের সময় উনারা ওকে অনেক কিছুই দিয়েছে! তারপরও বলছে কিছুই দেয়নি! প্রাহী হাতের বালাজোড়ার দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নরম কন্ঠে বললো,
– ‘কিন্তু মা আপনারা তো আমায় অনেক কিছুই দিয়েছেন! তারপরও আবার এগুলো?’
আকসাদের মা এবার প্রাহীর কথায় হাসলো,
– ‘আরও অনেক কিছুই দেয়ার ইচ্ছা ছিলো। কারণ তুমি আমার একমাত্র ছেলের বউ। পরিস্থিতির কারণে সেরকমভাবে কিছুই দিতে পারিনি। আর এগুলো কিছুইনা প্রাহী। আমার বিয়ের পর আমার শ্বাশুড়ি মাও আমায় এগুলো দিয়েছিলো। আর আজ আমি তোমায় দিলাম!’
আকসাদ এবার প্রাহীর দিক দূটো বাক্স এগিয়ে দিলো,
– ‘আর একটাতে নাকফুল আছে। এসে থেকে দেখছি তুমি নাকফুল পড়ছোনা! এটা পড়ো তোমাকে ভালো লাগবে! আর হাতের বালাজোড়া যদি বেশি ভারী লাগে তাহলে এখানে সিম্পলের মধ্যে একজোড়া চুড়ি আছে তুমি না হয় সেগুলো পড়ো! আর চেইনটাও ইচ্ছে হলে পড়ে থেকো।’
প্রাহী মাথা নেড়ে বক্সগুলো হাতে নিলো। আকসাদের মা প্রাহীর দিক তাকিয়ে আছে। একটু আগের মেয়েটাকে এখন অল্প কিছু গয়নায় কেমন বড় বড় লাগছে! আয়লিনা হোসেন এবার প্রাহীর একহাত নিজহাতে নিলে প্রাহী উনার দিক তাকালো,
– ‘প্রাহী আমার আকসাদ ছেলে হয়েও ছোটোবেলা থেকে আমাকে কখনও সেভাবে কোনোকিছু নিয়ে জ্বালায়নি। ও ওর নিজের মতোন করে চললেও আমাদের কখনও আশাহত করেনি। নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা গুলো ও নিজেই পূরণ করতো। খুব কম এমন দিন গেছে যে ও নিজে থেকে আমাদের কাছে কিছু চেয়েছে। বড় হওয়ার পর থেকে আমাদের কাছে তেমন কোনো কিছুর আবদার ও করেনি। আমরা নিজ থেকে যা দেওয়ার ওকে দিয়েছি। ওর সব অভ্যাসের মধ্যে একটা অন্যতম অভ্যাস হলো যেটা ওর ভালো লাগবে সেটা ওর চাই! যেটা একদিন ওর মধ্যে বেশ বড়সড় আকারে প্রকাশও পেলো! ছেলেকে হঠাৎ করে দিন দিন এত হতাশ হতে দেখে একদিন কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই ও আমার কোলে মাথা রেখে সাথে সাথে স্বীকার করলো নিজের জীবনের প্রথম অনুভূতিগুলো৷ আর এই অনুভূতিগুলো যাকে ঘিরে তার ওই মানুষটাকে চাই! চাই মানে চাই! ছেলের ওমন আকুল চাওয়া দেখে মা হিসেবে আমিও ছেলেকে যতটুকু সম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি তার নিজের অনুভূতি যাকে ঘিরে তৈরি তাকে পাওয়ার জন্য!’
আকসাদের মা প্রাহীর হাত আরও নিবিড়িভাবে ধরে বললেন,
– ‘আর সেই মানুষটা তুমি প্রাহী! প্রাহী! আমি জানি তোমার আর আকসাদের বিয়েটা বেশ তাড়াহুড়ো করেই হয়েছে। দু’জন হয়তো দু’জনকে সেভাবে জানার সময়টা পাওনি! বিশেষ করে তুমি। তবে সময় কিন্তু অনেক আছে। এখন একটা পবিত্র বন্ধনে নিজেরা আবদ্ধ হয়েছো। দুজন দুজনের কাছে যতটা সম্ভব মেলে দিয়ে একে অন্যকে জানবে, চিনবে,বুঝবে। জীবনের যেকোনো সুখ,দুঃখ,বিপদের সময় একে অন্যের পাশে থাকবে। দেখবে এতে সম্পর্কের বন্ধনটা দৃঢ় হবে। আকসাদ যদি অজান্তে কোনো ভুল করে দেখবে ও নিজেই তা শুধরে নিবে! তুমি কোনো ভুল করলেও ও ই তোমার হয়ে তার সমাধান করে দিবে! শুধু একটাই অনুরোধ তোমাদের প্রতি, কখনও একে অপরের হাত ছেড়োনা, সবসময় একসাথে থাকবে, সবকিছু শেয়ার করবে, একে অপরের প্রতি আস্থা রাখবে! তাহলেই দেখবে সব ঠিক! কি পারবেনা আমার অনুরোধটা রাখতে?’
প্রাহী এতক্ষণ যাবত মনোযোগ দিয়ে আয়লিনা হোসেনের কথা শুনছিলো। উনার প্রত্যেকটা কথা শুনে মনে হয়েছে যেন ওর নিজ মা ওকে বোঝাচ্ছে! যা ভয় বা দ্বিধা ছিলো এখানে আসার পর তা যেন এক নিমিষেই দূর হয়ে গেছে! প্রাহীর চোখ ছলছল করে উঠলো, নিরবে মাথা নাড়িয়ে মিষ্টি হেসে বললো,
– ‘ইনশাআল্লাহ পারবো!’
আয়সুন মাকে খুঁচিয়ে বললো,
– ‘মা ভাবীকে কি সুন্দর লাগছে! তাইনা?’
আয়লিনা হোসেন প্রাহীর থুতনীতে হাত রেখে মিষ্টি হেসে বললেন,
– ‘হ্যাঁ, তোর ভাইয়ার পছন্দ সুন্দর তো লাগবেই!!’
প্রাহী লাজুক হাসলো। আয়সুন এবার প্রাহীর গা ঘেষে বসলো,
– ‘তুমি কি জানো! আজ বাদে কাল যে ভাইয়ার জন্মদিন?’
প্রাহী অবাক হয়ে বললো,
– ‘না তো? আমি তো জানিনা। কাল উনার জন্মদিন!’
আকসাদের মা হালকা হেসে বললেন,
– ‘হ্যাঁ প্রাহী! কাল আকসাদের জন্মদিন! যদিও ও সেভাবে সেলিব্রেট করে পছন্দ করেনা। তাও ভাবছি নিজেরা মিলেই একটু সেলিব্রেশন করবো! কি বলো?’
প্রাহী খুশিমনে মাথা নাড়ালো। আয়সুন প্রাহীর কানে ফিসফিস করে বললো,
– ‘ভাইয়ার জন্মদিনটা স্পেশাল করা যার কিভাবে বলো তো?’
প্রাহী চিন্তায় ডুব দিলো, কি করা যায়?
,
,
,
আকসাদ বাড়িতে এসে ঘরে ঢুকে দেখলো প্রাহী নেই! হয়তো নিচে আছে! এই ভেবে শার্ট-প্যান্ট পরেই টাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো। বের হতেই দেখলো বিছানার উপর একটা সাদা টি-শার্ট আর ট্রাউজার রাখা! আকসাদ মুচকি হাসলো। তার মানে প্রাহী এগুলো রেখেছে! কিন্তু ও কোথায়! চেঞ্জ করে টাওয়াল বারান্দায় মেলতে যেয়েই দেখলো কাউচে বসে প্রাহী ঝিমুচ্ছে! ঘুমের মধ্যে মেয়েটার মাথা এদিক ওদিক দুলছে! ঠোঁটদুটো ফাঁকা করা, দেখতে কিউট লাগছে! আকসাদ মাথা নুইয়ে প্রাহীর গালে আলতো নাড়া দিয়ে ওকে ডাক দিলো,
– ‘প্রাহী! এই প্রাহী উঠো?’
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কারো ডাকে প্রাহী ধীরে ধীরে চোখ মেললো। চোখের সামনে এভাবে কাউকে ঝুকে থাকতে দেখে ও জোরে আওয়াজ করতে নিলেই আকসাদ ওর মুখ চেপে ধরলো৷
– ‘আস্তে এটা আমি?’
প্রাহী মাথা নাড়তে আকসাদ ওর হাত সরালো।
– ‘আপনি! কখন আসলেন?’
আকসাদ আলতো হাসলো,
– ‘এইতো একটু আগেই?’ তুমি এখানে ঘুমাচ্ছ যে?’
– ‘ঘুমায়নি চোখ লেগে এসেছে! খাবার খেয়েছেন?’
আকসাদ প্রাহীর পাশে বসলো,
– ‘তুমি খেয়েছো?’
প্রাহী মাথা নাড়িয়ে বললো, ‘না ভেবেছি আপনি আসলে একসাথে খাব।’
আকসাদ একটা শ্বাস ফেলে বললো, ‘খিদে লাগলে খেয়ে নিবে আগে! বুঝেছো? আমার জন্য ওয়েট করতে হবেনা!’
– ‘একা খেতে ভালো লাগেনা?’
প্রাহীর নরম কন্ঠে আকসাদ ওকে বসতে বলে নিচে গেলো। অতঃপর খাবার এনে আকসাদ আর প্রাহী একসাথে খেয়ে নিলো!
,
,
,
প্রাহী ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো আকসাদ রুমে নেই! বেলকনিতে উঁকি দিতেই দেখলো আকসাদ ফোনে কথা বলছে। আকসাদের চওড়া কাঁধ আবছা আলোয় দৃশ্যমান। প্রাহীর কি হলো কে জানে? ও পা টিপে টিপে আকসাদের পিছু দাঁড়িয়ে ছোটো ছোটো হাতজোড়া দিয়ে আকসাদের পিঠ আর কাঁধ জড়িয়ে ধরলো। নিজের শক্ত পিঠে নরম হাতের ছোঁয়ায় আকসাদ চমকালেও প্রাহীর হাতজোড়া নিজের পেট পর্যন্ত আসতেই আকসাদ মুচকি হেসে প্রাহীর হাতজোড়া মুখের কাছে এনে চু*মু বসালো। প্রাহী হেসে আকসাদের পিঠে ঠোঁট ছোয়ালো। আকসাদ পিছু ঘুরতে প্রাহী সরে যেতেই ও সাথে সাথে প্রাহীকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
– ‘কি ব্যপার! ম্যাডাম আজ নিজ থেকে আমায় জড়িয়ে ধরলেন?’
প্রাহীর মাথায় হাত বুলিয়ে আকসাদ বলে উঠলো।
প্রাহী বুকে মুখ গুজে বললো,
– ‘হু! ইচ্ছা হলো আপনায় প্রথম নিজ থেকে স্পর্শ করার!’
– ‘তা প্রথম স্পর্শের অনুভুতি কেমন!’
প্রাহী আকসাদের চোখে চোখ রেখে বললো,
– ‘অসাধারণ!’
আকসাদ প্রাহীর চোখে চোখ রেখেই ওর কপালে ঠোঁট ছোয়ালো। প্রাহী হুট করে বললো,
– ‘কিন্তু একটা কথা!’
– ‘কি?’
প্রাহী আকসাদের হাতের মাসেলে খোঁচা মেরে বললো,
– ‘আপনি অনেক শক্ত! এত শক্ত কিভাবে হয়েছেন? সিমেন্ট খান নাকি?’
আকসাদ শব্দ করে হাসলো। প্রাহীকে নিজের সাথে জড়িয়ে বললো,
– ‘সিমেন্ট খেতে যাব কেন? জিম করি দৈনিক, সাথে প্রপার ডায়েট তো আছেই! এজন্য শরীর এমন শক্ত হয়ে গেছে! আর তাছাড়া শক্ত হলেই তো ভালো!’
প্রাহী আকসাদের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বললো,
– ‘কেন?’
আকসাদ ঝুঁকে প্রাহীর কানে ফিসফিস করে বললো,
– ‘শরীর শক্ত না হলে বউয়ের নরম শরীরের ফিল পাব কি করে বলো!’
বলে প্রাহীর কানের লতিতে ছোটো করে কামড় বসালো। প্রাহী দ্রুত সরে আসে আকসাদের দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘আপনি এত অসভ্য কেন?’
আকসাদ প্রাহীর দিক এগিয়ে ওকে নিয়ে রুমে যেতে যেতে বললো,
– ‘এখনও অসভ্যতামির কিছুই করিনি ম্যাডাম? চলো ঘুমাবে।’
বিছানায় এসে প্রাহীকে শুইয়ে লাইট ওফ করে নিজেও প্রাহীর পাশে শুয়ে ওকে নিজের বুকে নিয়ে আসলো। প্রাহী আকসাদের বুকে মাথা রেখে আকসাদকে হুট করে বলে উঠলো,,,
চলবে,,,
#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ৪১(আমার প্রাহী!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী
[পর্বটি রোমান্টিক, তাই পছন্দ না হলে স্কিপ করতে পারেন]
এখনও অসভ্যতামির কিছুই করিনি ম্যাডাম? চলো ঘুমাবে।’
বিছানায় এসে প্রাহীকে শুইয়ে লাইট ওফ করে নিজেও প্রাহীর পাশে শুয়ে ওকে নিজের বুকে নিয়ে আসলো। প্রাহী আকসাদের বুকে মাথা রেখে আকসাদকে হুট করে বলে উঠলো,
– ‘আপনার কি প্রতিদিনই কাজ সেরে আসতে এমন দেরী হয়?’
আকসাদ প্রাহীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
– ‘প্রতিদিন হয়না। ইদানীং হচ্ছে আর কি।’
– ‘আপনি তো কাল সকালেই বের হয়ে যাবেন তাইনা?’
– ‘হ্যাঁ! কেন বলোতো?’
– ‘এমনি জিজ্ঞেস করলাম।’
আকসাদ প্রাহীর মুখ তুলে বললো,
– ‘সত্যি?’
– ‘হ্যাঁ!’
আকসাদ প্রাহীকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ‘ওকে! পরশু থেকে তো তোমার ক্লাস শুরু জানো নিশ্চয়ই!’
প্রাহী মাথা নেড়ে বললো, ‘হু!’
– ‘তাহলে ওভাবে নিজেকে প্রিপায়ের করো,নতুনভাবে পড়াশোনা আবার স্টার্ট করার জন্য। আর আমিই দিয়ে আসব তোমাকে ভার্সিটি।’
– ‘আচ্ছা!’
আকসাদ এবার প্রাহীর মাথায় হাত দিয়ে বললো, ‘আচ্ছা এখন ঘুমাও!’
মাথায় বড় বড় শ্বাস পড়তেই প্রাহী আকসাদের দিক মুখ তুলে তাকালো, ঘুমন্ত পুরুষটির দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে শক্ত বুকে মাথা রেখে ও চোখ বুঝলো।
,
,
,
প্রাহী আর আয়সুন আপাতত ব্যস্ত সময় পার করছে। শপিংমলে টুকটাক শপিং এ ওরা ব্যস্ত। আকসাদের জন্মদিন উপলক্ষে কিছু কেনাকাটা আর প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতেই ওরা সকাল বেলা বের হয়ে গিয়েছিলো শপিং এর উদ্দেশ্যে। কাজ শেষে রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটতেই প্রাহী ফুলের দোকান দেখে থামলো। টকটকা লাল গোলাপগুলো দেখে ওর বেশ লোভ লাগলো ফুলগুলো নেয়ার৷ আয়সুনকে সাথে নিয়ে চটজলদি ফুলের দোকানের সামনে চলে গেলো৷
,
,
,
আজ আকসাদ একটু তাড়াতাড়িই ফিরেছে। নতুন কেমিক্যাল আসবে বিধায় আজ তেমন কোনো টাস্ক সবাইকে দিয়ে করায়নি ও। সবাইকে কাজ শেষে বাড়ি যেতে বলে নিজেও চলে এসেছে। বাড়ির ভিতর ঢুকতেই এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে ও কিছুটা থমকালো। আশ্চর্য! এখন বাজে মাত্র আটটা! তাও ঘর এমন অন্ধকার কেন! সব এতো নীরব! আকসাদ প্যান্টের পকেটে হাত রেখে আরেকটু সামনে এগোতেই ঠাস করে লাইট জ্বলে উঠলো। আকসাদের বাবা-মা, আয়সুন সবাই একসাথে হাসিহাসি মুখে দাঁড়ানো। ওদের দিক এগোতেই সবাই একসাথে বলে উঠলো,
– ‘হ্যাপি বার্থডে!!!’
আকসাদ অবাক হয়ে ওদের দিক তাকিয়ে রইলো! আজকে ওর বার্থডে! ও তো ভুলেই গিয়েছিলো! নিজের হাতঘড়ির দিক তাকিয়ে দেখলো আজ ২২ শে অক্টোবর! হ্যাঁ আজই তো ওর জন্মদিন! কাজের চাপে ওর মনে ছিলোনা। আকসাদ সবার দিক তাকিয়ে হাসলো। কিন্তু পরক্ষণেই ভ্রু কুঁচকালো! সবাই এখানে প্রাহী কোথায়? ঝুনঝুন আওয়াজ কানে আসতেই আকসাদ পাশে তাকালো। লালশাড়ি পরিহিত একটা মেয়ে ওর দিকেই এগিয়ে আসছে! আকসাদ যেন আবার থমকালো। পড়নে লালশাড়ি খোলা চুল, কানে কালো ঝুমকা, চোখে কাজল, আর ঠোঁটে হালকা লাল লিপ্সটিক দিয়ে প্রাহী আজ একটু সেজেছে। আকসাদের চোখ যেন প্রাহীতেই আটকে গেছে! মেয়েটাকে আজ একদম লালবউ লাগছে! উফ! ইচ্ছে করছে এখনই যেয়ে জড়িয়ে ধরে মুখে কতগুলো চু’মু দিয়ে ভরিয়ে দিতে। কিন্তু তা তো সম্ভব না! বাড়ির সবাই এখানে! প্রাহী আলতো পায়ে হেঁটে আকসাদের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। প্রাহী আকসাদের কাছে এসে মিষ্টি হেসে বললো,
– ‘শুভ জন্মদিন!’
আকসাদের কোনো নড়চড় নেই! ও একদৃষ্টিতেই প্রাহীর দিক তাকিয়ে আছে। এভাবে একনাগাড়ে আকসাদকে নিজের দিক তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রাহীর বেশ লজ্জা লাগলো। আয়সুন এবার কাছে এসে আকসাদক ধাক্কা দিয়ে বললো,
– ‘ভাবীকে পরে দেখে নিও! আগে আমাদের উইশ এক্সেপ্ট করো!’
আয়সুনের কথায় আকসাদ নিজেকে সামলে মুচকি হাসলো। আয়সুন আর প্রাহী আকসাদের বাবা-মার পাশে যেয়ে দাঁড়ালো। আকসাদ ওদের সামনে যেয়ে হাসিমুখে বললো,
– ‘থ্যাংক ইউ সো মাচ সবাইকে! কিন্তু এতকিছু না করলেও চলতো! এখন তো আর বার্থডে সেলিব্রেশন করার বয়সটা আমার নেই?’
আকসাদের মা ছেলের দিক তাকিয়ে হেসে বললেন,
– ‘তাহলে প্রতি বছর যে তোরা আমার আর তোর বাবার বার্থডে সেলিব্রেশন করিস তখন! আমাদের বার্থডে সেলিব্রেশন এর বেলায় বুঝি বয়স কম থাকে!’
আকসাদের বাবা এবার পাশ থেকে বলে উঠলো,
– ‘তাছাড়া বিয়ে করেছিস একমাস হয়েছে মাত্র! হানিমুনেও যাসনি! তারমধ্যেই নিজেকে বুড়ো ভাবলে তো হবেনা! এখনও কত এঞ্জয় করা বাকি!’
আকসাদের বাবার কথায় আকসাদ হাসলো। প্রাহী লাজুক হেসে আকসাদের দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘কেক কাটবেন আসুন!’
প্রাহী হাতে রাখা কেকটা সেন্টার টেবিলে বসাতেই আকসাদ এগিয়ে আসলো। আকসাদের পাশে ওর বাবা-মা,আয়সুন আর প্রাহী দাঁড়াতেই ও ছুড়ি হাতে কেক কাঁটা শুরু করলো।
– ‘কিরে আমাকে ছাড়াই কেক কাঁটবি নাকি?’
কারোর আওয়াজে সবাই মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো বাড়ির দরজার কাছটায় ভিঞ্চি দাঁড়িয়ে! আকসাদ ভিঞ্চির দিক তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো,
– ‘তুই এখানে?’
ভিঞ্চি হেসে ওর কাছে এসে বললো,
– ‘তোর বার্থডে আজকে। ল্যাবে যেয়ে দেখি তুই নেই তাই ডিরেক্ট বাড়িতে চলে এলাম। নে এবার কেকটা কাঁট আমার ক্ষুধা পেয়েছে!’
ভিঞ্চির কথায় সবাই হাসলো। আকসাদ এবার কেক কেঁটে একে একে ওর বাবা-মা, বোনকে খাইয়ে দিয়ে প্রাহীকে খাইয়ে দিতে নিলে প্রাহী অল্প একটু খেয়ে নিজেও আকসাদকে কেক খাইয়ে দিলো। আকসাদ প্রাহীর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
– ‘একদম লালপরী লাগছে আমার বউটাকে!’
প্রাহীর লজ্জায় আর আকসাদের দিক তাকালো না। আকসাদ সেদিক বাঁকা হেসে এবার ভিঞ্চিকে কেক খাইয়ে দিতেই ভিঞ্চি বলে উঠলো,
– ‘উম! কেকটা অনেক টেস্টি! মনে হচ্ছে হ্যান্ডমেড কেক!’
আয়সুন উৎসুকভাবে বললো,
– ‘হ্যাঁ! ভাবী বানিয়েছে ভাইয়ার জন্য।’
আকসাদ প্রাহীর দিক তাকাতেই প্রাহী মিষ্টি হাসলো। ভিঞ্চি প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘ভাবী অনেক মজা হয়েছে! মাঝে মাঝে কিন্তু এখন থেকে কেক খাওয়ার জন্য চলে আসবো?’
প্রাহী হেসে বললো, ‘অবশ্যই!’
অতঃপর প্রাহী আর আকসাদের মা মিলে রান্নাঘরের দিক চললো। রাত যেহেতু হয়েগেছে তাই এখন ডিনারের ব্যবস্থা করতে হবে! এদিক আয়সুন তার ভাইয়ার জন্মদিন উপলক্ষে কেনা ঘড়ি গিফট দিচ্ছে! আকসাদের বাবাও ছেলেকে একটা ব্যাগে করে কিছু একটা উপহার দিচ্ছে।
,
,
,
প্রাহী সব রান্নাঘরের কিছু কাজ সেরে এখন সিড়ি দিয়ে উঠছে। আকসাদ বাসায় নেই। ভিঞ্চির সাথে বাইরে গেছে। বাড়ির সবাই আপাতত ঘুম। প্রাহী আয়সুনের ঘরের সামনে যেয়ে নক করতেই আয়সুন দরজা খুললো। ঘুমঘুম কন্ঠে বললো,
– ‘ভাবী!’
প্রাহী মাথা নেড়ে বললো,
– ‘গিফটগুলো নিতে এসেছিলাম! ওগুলো তখন তোমার ঘরে রেখে গিয়েছিলাম নিতে মনে ছিলোনা!’
– ‘হ্যাঁ হ্যাঁ এসো! নিয়ে যাও!’
প্রাহী আয়সুনের ঘরে যেয়ে লাল টকটকা গোলাপের তোড়া আরও কিছু জিনিস নিয়ে ঘর থেকে বের হতেই আবার দাঁড়িয়ে আয়সুনের দিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘আয়সুন! তোমার কাছে সেফটিপিন হবে? আমার শাড়ির কুচিটা না ঢিলে হয়ে যাচ্ছে বারবার।’
আয়সুন মাথা নাড়লো,
– ‘না আমার কাছে সেফটিপিন নেই! মায়ের কাছে থাকতে পারে কিন্তু মা তো এখন ঘুম? ভাবী তুমি তো ঘুমিয়ে যাবে একটু পরেই! এখন আর পিন লাগিয়ে কি হবে বলো! শাড়িটা চেঞ্জ করে নিও রুমে যেয়ে।’
প্রাহী ভাবলো এখন শাড়ি চেঞ্জ করা যাবেনা! আকসাদ বাইরে বেরোনোর আগে বলে গেছে, ‘শাড়িটা পড়ে থেকো!’। রুমে যেয়ে শাড়িটা ঠিক করবে না হয়! ভেবেই প্রাহী আয়সুনকে বললো,
– ‘আচ্ছা, তুমি ঘুমাও। আমি আসি কেমন!’
আয়সুন মাথা নাড়িয়ে দরজা লাগাতেই প্রাহী নিজ ঘরের দিক চললো। হাতের জিনিসগুলো রেখে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চললো। মুখে একটু পানির ছিটা দিয়ে বের হলো। শাড়ির কুচিটা একটু ঠিক করার চেষ্টা করলো, পারলো না! হতাশ হয়ে ও আবার নিচে গেলো। আকসাদের জন্য ২/৩ পিস কেক নিয়ে আসলো। মানুষটা তখন তেমনকভাবে কেক খেতে পারেনি। প্রাহী কেক হাতে ঘরে ঢুকতেই দেখলো ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে! তার মানে আকসাদ চলেও এসেছে! প্রাহী কেকটা টেবিলে রাখতেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে পিছন ফিরে দেখলো আকসাদ বেরিয়ে আসছে। পরনে হালকা আকাশীরঙা টি-শার্ট আর সফট কালারের ট্রাউজার।
– ‘কখন এলেন?’
আকসাদ প্রাহীর কথায় মুচকি হেসে বললো,
– ‘এইতো একটু আগেই! তুমি কোথায় ছিলে?’
– ‘একটু নিচে গিয়েছিলাম!’
প্রাহী আকসাদের হাতে কেকের প্লেট দিয়ে বললো,
– ‘নিন! আপনার জন্য বানিয়েছি আপনিই খাননি তেমনভাবে। এখন খান।’
আকসাদ প্রাহীর হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে বললো,
– ‘তুমি খেয়েছো?’
– ‘খেয়েছিলাম অল্প একটু।’
আকসাদ প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘তাহলে আমার সাথে আরও অল্ল একটু খাবে এসো!’
বলেই প্রাহীকে নিয়ে বারান্দায় নিয়ে যেতেই প্রাহী আকসাদের হাত ধরে ওকে থামালো।
– ‘একটু দাঁড়ান!’
বলেই প্রাহী টকটকে লাল ফুলের তোড়া নিয়ে আকসাদের দিক এগিয়ে দিয়ে বললো,
– ‘আপনার গিফট!’
আকসাদ কেকের প্লেটটা রেখে ফুলের তোড়াটা হাতে নিয়ে বললো,
– ‘বাহ্! আমার লাল টুকটুকে বউ আমাকে লাল ফুল দিচ্ছে!’
প্রাহী লাজুক হেসে বাকি জিনিসগুলো এনে আকসাদের হাতে দিতেই আকসাদ জিজ্ঞেস করলো,
– ‘এগুলো কি?’
প্রাহী মুচকি হেসে বললো,
– ‘কিছু চকলেট আছে এখানে! আর একটা ছোট্ট গিফট আছে! পরে না হয় দেখে নিবেন?’
আকসাদ মাথা নেড়ে ব্যাগগুলো রেখে ফুলের তোড়া থেকে একটা ফুল প্রাহীর কানে গুজে দিয়ে বললো, ‘নাও পার্ফেক্ট!’
প্রাহী লাজুক হাসলো। আকসাদ প্রাহীর হাত ধরে বললো,
– ‘ এসো কেক খাবে!’
আকসাদ আর প্রাহী বারান্দায় যেয়ে বসলো। নিজে কেক খাইয়ে প্রাহীকেও খাইয়ে দিলো।
– ‘উমম্! কেকটা অনেক মজা হয়েছে!’
প্রাহী হেসে বললো,
– ‘থ্যাংকস্!’
প্রাহী এক পিসকেক খাওয়ার পর আর খেলো না। টুকটাক কথার মাঝে আকসাদ পানি খাওয়ার জন্য রুমে যেতেই প্রাহী উঠে রেলিং ধরে দাঁড়ালো। আকাশে আজ মস্ত বড় একটা চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোয় চারপাশটা কেমন ঝলমল করছে! প্রাহী মুগ্ধ চোখে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করার মাঝে একজোড়া হাত ওকে পিছন হতে জড়িয়ে ধরতেই প্রাহী চোখ বুঝলো। ও জানে এই হাতজোড়ার মালিককে! আকসাদ প্রাহীর ঘাড়ে মুখ ডোবাতেই ওর ঢিলেঢালা খোপাটা খুলে গেলো। পিঠজুড়ে চুলগুলো ঝড়ে পড়তেই আকসাদ প্রাহীর চুলে মুখ ডুবিয়ে নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো,
– ‘নিজেকে আজ আটকাতে ইচ্ছে করছে না প্রাহী। বড্ড অবাধ্য হতে ইচ্ছে করছে!’
প্রাহী দূর্বল ছোটো ছোটো কন্ঠে বলে উঠলো,
– ‘আটকাতে বলেছে কে!’
আকসাদ দ্রুত প্রাহীকে সামনে ঘুরালো। চাঁদ আর ল্যাম্পপোস্টের ঝাপসা আলোয় ওর প্রেয়সীকে মায়াবী লাগছে। কাজল কালো ডাগর চোখের কাঁপাকাঁপা চাহনী, খোলা চুল, পাতলা গোলাপী কম্পিত ঠোঁটের মেয়েটাকে আজ আকসাদের খুব ভালোবাসতে ইচ্ছা করছে! খুব! আকসাদ নেশালো কন্ঠে প্রাহীর দুগালে হাত রেখে শুধালো,
– ‘আর ইউ শিউর!’
প্রাহী আকসাদের হাতের উপর হাত রেখে নরম কন্ঠে বললো,
– ‘আজ আপনি অবাধ্য হতে পারেন, আকসাদ।’
আকসাদ প্রাহীকে নিজের সাথে আরও জড়িয়ে প্রাহীর মুখটা নিজের কাছে আনলো। দুজনের নিশ্বাস এবার একে অপরের মুখে পড়ছে। গভীর কন্ঠে আকসাদ শুধালো,
– ‘আর যদি আজীবনের জন্য অবাধ্য হতে চাই! বেসামালভাবে তোমাকে চাই। যতোটা না কাছ থেকে অনুভব করা যায় তার চেয়েও বেশি তোমাকে কাছে চাই। অনুমতি দিবে?’
প্রাহী আকসাদের ওই হরিণ চোখের দিক তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো,
– ‘অনুমতি দিলাম।’
দু’জন দু’জনের চোখের দিক গভীরভাবে তাকিয়ে আছে। আকসাদ প্রাহীর কানের নিচে হাত দিয়েই ওর চোখের দিক তাকিয়েই প্রাহীর কম্পিত ঠোঁটজোড়া ওর ঠোঁটের ভাজে পুরে নিলো। প্রাহী চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। জীবনে এই প্রথম কোনো পুরুষের তাঈ আবার নিজের স্বামীর এমন গভীর ছোঁয়ায় ওর কেমন যেন নিজেকে ভারহীন মনে হচ্ছে! খোলা কোমড়ে আকসাদের পুরু হাতের ছোঁয়া, ঠোঁটে জোড়ালো স্পর্শ আর নিচের ঠোঁটে দাঁতের খোচা অনুভব হতেই প্রাহী কাঁপাকাঁপা হাতে আকসাদের বাহুতে নিজের হাত রাখতেই আকসাদ ওকে কোলে তুলে নিলো৷ ঠোঁটে কি*স করতে করতে রুমের মাঝে দাঁড় করিয়ে আকসাদ ওকে ছাড়লো৷ অনেকক্ষণ পর একটু ছাড়া পেয়ে প্রাহী দম ছাড়লো। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে চোখ খুলে তাকাতেই ও অবাক হলো৷ পুরো বিছানা জুড়ে গোলাপের পাপড়ি ছিটানো! প্রাহী আকসাদের দিক তাকাতেই ও বাঁকা হেসে বললো,
– ‘প্রথম ভালোবাসার রাত! একটু মেমোরেবল রাখা উচিত তাইনা!’
প্রাহীকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে বললো,
– ‘নিজের ফুলকে ফুলের উপর রেখে ভালোবাসাই উত্তম।’
বলেই আবারও প্রাহীর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
– ‘ভালোবাসি প্রাহী। অনেক ভালোবাসি।’
প্রাহীর আর জবাব এলোনা। নিজে পুরুষের ছোঁয়ায় ও আপাতত বেসামাল! আকসাদ উঠে নিজের টি-শার্ট খুলে ছুড়ে মাটিতে ফেলে প্রাহীর উপর নিজের অর্ধের ভর দিয়ে আকুল কন্ঠে বললো,
– ‘লুক এট মি প্রাহী?’
ওমন আবদার মাখা কন্ঠে প্রাহী নিভুনিভু চোখে তাকাতেই একজোড়া গভীর চাহনীতে ও আটকে গেলো! সেই চাহনীতে স্পষ্ট বোঝা চাচ্ছে ওকে তীব্রভাবে চাওয়ার আকাঙ্খা, ইচ্ছে। দু’জোড়া চোখের চাহনীর মিলন হতেই প্রাহী বুঝলো ওর ঠোঁটজোড়া সামনের মানুষটার দখলে! রুমের পর্দাগুলো বাইরের খোলা বাতাসে উড়ছে, ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলো ঘরে এসে একটা মাতাল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। রাত বাড়লো, সেই সাথে বাড়ছে ভালোবাসার স্পর্শগুলো। প্রাহীর শাড়ির আঁচলটা পড়ে আছে একপাশে, পাতলা শরীরটা আকসাদের ভারী বেসামাল স্পর্শে সিক্ত। আকসাদের ঠোঁটজোড়া প্রাহীর শরীরে আপনমনে নিজের চিহ্ন আঁকতে ব্যস্ত। প্রাহীর চোখের কোণ হতে দু’ফোটা অশ্রু অনায়াসেই গড়িয়ে পড়লো। এ অশ্রু সুখের! এমন এক সুখ যা আকসাদ নামক ব্যাক্তির সাথে পরিচয় হবার পর থেকেই কারণে অকারণে ও পেয়ে এসেছে! গালের অশ্রুগুলো নিমিষেই একজোড়া ঠোঁট শুষে নিলো। পর পর গালে ভেজা স্পর্শ দিয়ে প্রাহীর গলার খাঁজে মুখ ডুবিয়ে মাতাল কন্ঠে আকসাদ বলে উঠলো,
– ‘প্রাহী! আমার প্রাহী!’
রাতের সাথে সাথে হাতের ভাজে হাতের ছোঁয়া শক্ত হলো, অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছেনা। বরং ক্রমশই সেই নিশ্বাসের আনাগোনা বাড়ছে!
চলবে,,,
[সবাই কমেন্ট করবেন কেমন?]