#শেহরোজ – ১৪
#ইসরাত_জাহান_দ্যুতি
***
সন্ধ্যা ৬ টা।
অ্যাকোয়ারিয়ামের ভেতরের স্লাইডিং টুকরোটা শাজ সরিয়ে দিয়ে মৌন হয়ে বসে আছে তার সামনে৷ বসে বসে দেখছে লাল আর নীল ফাইটার ফিশদুটোর একে অপরের দিকে কেমন আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তেড়েফুঁড়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ কিন্তু মাঝে পার্টিশন থাকায় মারামারি করাটা সম্ভব হচ্ছে না বলে রেগেমেগে গায়ের পাখনাগুলো মেলে ধরেছে দুজনই৷ এত চমৎকার দৃশ্যটা দেখতে দেখতেই ওর মনের কোলে জমা হওয়া সকল মেঘমেদুর গায়েব হয়ে গেল। কিন্তু বিভ্রান্তে পড়ল কিছু অনুভূতি নিয়ে।
শেহরোজের সঙ্গে তার তো কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া নেওয়া হয়নি৷ অতএব সে যদি কারও সঙ্গে প্রেমে জড়িয়েও পড়ে ‚ তবে ওর তো সেখানে ভালো-মন্দ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোটাই সাজে না। তাহলে কেন অত বিশ্রীভাবে তাকে অপমান করতে গেল ও? আবার গতকাল গাড়িতে ওদের দুজনের মধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটা তৈরি করেছিল শেহরোজ ‚ সেটা নিয়েও সে কী বাজেভাবে মিথ্যা দোষারোপ করে এসেছে! ছেলেটা যদি সুযোগসন্ধানী বা অসচ্চরিত্রেরই হতো তাহলে তো গত পরশু রাতে ছাদে যতটা সময় ছিল ও তার সঙ্গে ‚ ততক্ষণের মাঝে হলেও অসভ্যতা করতে পারত। অন্তত কামুক নজরটা তো দিতে পারত ওর দিকে৷ কিন্তু সত্যিই শাজ ছাদেও দেখেনি তা। আর গাড়িতে যখন বিধ্বস্তপ্রায় অবস্থাতে ছিল ও ‚ তখনো দেখেনি অমন নজর৷ উপরন্তু ওকে শান্ত করার কোনো এক ফাঁকে দ্রুত নিজের টিশার্টটা পরিয়ে দিয়েছিল শেহরোজ। দু দুবার ওকে সাহায্য করল যে ছেলেটা— তাকে ‘উইমেনাইজার’ বলে আসাটা কি ঠিক হলো?
কিন্তু শেহরোজ সকালে ওকে ভালো লাগার কথা জানিয়ে দুপুরে ইরা মির্জাকে গ্রহণ করে নিলো কেন? এখানেই তো সবটা এলোমেলো করে দিয়েছে সে। যেজন্য গত দুদিনে ওকে যেভাবে সাহায্য করেছে সে ‚ এখন মনে হচ্ছে সেটা কেবলই তার চোখে নিজের ভালো একটি ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়াটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। নয়তো কেন ওকেও ফ্লার্ট করে যাবে আবার অন্য আরেক মেয়ের সঙ্গেও জড়িয়ে যাবে? ভাবনাচিন্তা করলে উত্তর তো একটাই আসে— ‘প্লে বয়’। ভার্সিটি জীবনের শুরুতে এমনই এক স্বভাবের ছেলে অয়নের সঙ্গে আবেগের বশে জড়িয়ে পড়েছিল শাজ। ভাগ্য সহায় ছিল বিধায় খুব দ্রুত ছেলেটির স্বভাব সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে গিয়েছিল। আর দ্বিতীয়বার ভুল করেছিল রনি নামক সরকারের পোষা কুকুরকে আশকারা দিয়ে। কিন্তু তৃতীয়বার এই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না সে। আর কখনোই প্রেমকে প্রশ্রয় দেবে না।
ঝট করে দাঁড়িয়ে অ্যাকোয়ারিয়ামটি তুলে নিলো হাতে। চলে এলো সোজা ঝুমা আন্টির বাসায়। দরজাটা ভিড়িয়ে রাখা ছিল বলে আর ডাকাডাকি করতে হয়নি। তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘর থেকে তখনই বেরিয়ে আসলো ঝুমা। শাজকে দেখতেই বলল‚ “চলে গেলে এখনই যা। দরজাটা লাগিয়ে আমি নামাজে বসব।”
“কে যাচ্ছে? তুমি যাও তোমার কাজে”‚ মেজাজের সঙ্গে বলে শাজ বসে পড়ল সোফাতে। অ্যাকোয়ারিয়ামটি রাখল সামনের টি-টেবিলে।
মেজাজের উত্তর দেওয়ার সময় নেই ঝুমার৷ দ্রুত ঘরে চলে গেল সে অজু করতে৷ শাজ তখন পড়ল ভাবনায়। ভাবনাটা হচ্ছে ‚ মাছদুটো ফেরত দেবে সে শেহরোজকে। এজন্যই আসা এখন। কিন্তু কেউ উপহার দিলে সেটা ফিরিয়ে দেওয়াটা যেমন ছেলেমানুষি কাজ আবার তেমনই বোধ হয় অনুচিতও। এজন্যই দ্বিধাবোধ হচ্ছে। আজকের পর শেহরোজের সঙ্গে সে তো আর কোনোভাবেই সহজ হবে না। অথচ ওর দেওয়া এত দামী উপহারটা রেখে দেবে ঘরে? সেটাও যুক্তিসঙ্গত লাগছে না। প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলো — ফেরতই দেবে ও। তাতে ব্যাপারটা যেমন খুশি তেমন দেখাক।
উঠে পড়ল অ্যাকোয়ারিয়াম নিয়ে৷ গেস্টরুমে এসে সরাসরি রাখল সেটাকে সাদা ক্যাবিনেটের ওপর। তারপর ফেরার জন্য পা বাড়িয়েও আবার থেমে গেল কী মনে করে যেন। আজকেই প্রথম এলো সে শেহরোজের ঘরে। ঘরটা ঘুরে দেখার কৌতূহলটা তাই দমাতে পারল না।
খেয়াল করল শাজ এ ঘরের প্রায় প্রতিটি আসবাবই বদলে দেওয়া হয়েছে আর নতুন কিছু যুক্ত করা হয়েছে৷ জানালার সামনে রাখা বিনব্যাগ‚ আর পাশে ক্যাবিনেট। ক্যাবিনেট বরাবর নতুন যুক্ত করা হয়েছে ওয়াল মিরর। আরামদায়ক ফ্লোর ম্যাট‚ খাটের পাশে সাইড টেবিলে সুন্দর একটি ল্যাম্প লাইট। এমনকি জানালায় ফ্লোরাল পর্দাটাও নতুন। তবে দেওয়ালে যেসব ছবি ফ্রেম ছিল সেসব নামিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ ঝুমা শেখ নিজের ছেলের জন্য যতটা যত্ন নিয়ে ঘর সাজিয়েছে ‚ ততটা যত্নের সঙ্গে এই ঘরটিও সাজিয়েছে সে৷ আর এর অর্থ হচ্ছে‚ শেহরোজকে সে কাছের মানুষ ছাড়া দূরের কেউ ভাবে না৷ মাত্র একটি মাসে এই ছেলে কী এমন করে দেখাল তাকে? নয়ত ঝুমা শেখের মনে প্রবেশ করা এত তো সহজ নয়!
কথাটা চিন্তা করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো শাজ। চুপচাপ সোফায় বসে রইল কতক্ষণ। ঝুমা নামাজ শেষ করে এসে শাজকে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখেও নির্বিকারভাবে চলে গেল রান্নাঘরে।
ভীষণ বিরক্তি নিয়ে শাজ টিভিটা চালিয়ে ধরল কার্টুন চ্যানেল৷ ডোরেমন পেয়ে গেল তখনই৷ সব ভাবনাকে ছুঁড়ে সে মনোনিবেশ করল ডোরেমনেই। এর মাঝে ঝুমা শেখ ছবার গেল আর এলো শাজের বাসাতে৷ নতুন এক আচারের রেসিপি পেয়েছে কার থেকে যেন৷ সেটারই নমুনা নিয়ে শাজের দাদীকে বারবার বিরক্ত করছে সে। শেষবারের বেলায় বৃদ্ধা বিরক্ত হয়ে চলেই এলেন আচারের অবস্থা পরীক্ষা করতে।
সেদিকে ধ্যান নেই শাজের৷ পাশে হঠাৎ কারও বসার আভাস পেয়ে গুরুত্বহীনতার সঙ্গে একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলো। তারপর শূন্য সেকেন্ডের মাঝে চমকিত দৃষ্টিতে তাকাল আবার। মুহূর্তেই “আপনি?” বলে উঠে তড়াক করে দাঁড়িয়ে পড়ল। কঠিন চোখে শেহরোজকে দেখেই চলে যেতে উদ্যত হলো৷ তখনই শেহরোজ পিছু ডাকল ওকে ‚ আবদার করল‚ “পানি দেবে‚ শাজ?”
এ আবদার কখনোই অবমাননা করা উচিত নয়৷ তাই বাধ্য হয়ে ডাইনিং থেকে পানির জগ সমেত গ্লাসটা নিয়ে টি-টেবিলে রেখে ভাবল পানি ঢেলে দেবে না একদম। কিন্তু চোখ বুজে সোফায় গা এলিয়ে পড়ে থাকা শেহরোজের ক্লান্ত‚ ঘর্মাক্ত মুখটা দেখে তা পারল না। আবারও বাধ্য হয়ে পানিটা ঢেলে রুক্ষস্বরে জানাল তাকে‚ “দিয়েছি।”
চোখ মেলে ওর দিকে চেয়েই মুচকি হাসল শেহরোজ৷ দ্বিতীয় আবদার করল‚ “এবার একটু পাশে এসে বসবে?”
“ফাইজলামি?” রেগে উঠবে এমন ভাব শাজের।
টিভিতে একবার তাকাল শেহরোজ। “এটা মনে হয় তোমার পছন্দের প্রোগ্রাম?” জিজ্ঞেস করল ওকে৷
জবাব দিলো না শাজ। তা দেখে বলল শেহরোজ‚ “আমার জন্য কেন তুমি সব জায়গা ত্যাগ করবে? বরং তোমার উচিত আমাকেই দূর হতে বলা।”
কয়েক মুহূর্ত কথাটা ভেবে শাজ সহমত জানাল‚ “ঠিকই বলেছেন। কেন আমি আমার জায়গা সব সময় ছেড়ে যাচ্ছি?” বলতে বলতে নিজের পূর্বের জায়গাটি এসে দখল করল সে। তারপর বলল‚ “যাওয়া উচিত তো অন্য কারও।”
“অন্য কারও? সেটা কে?” চারপাশে কাউকে খোঁজার অভিনয় করল শেহরোজ। তা দেখে শাজ বিরক্ত কণ্ঠে বলল‚ “আপনি এখান থেকে উঠে গেলে খুশি হতাম।”
পাত্তা দিলো না শেহরোজ৷ আরও আরাম করে বসতে বসতে বলল‚ “আর তাতে আমার ফায়দা?”
“আপনার ফায়দা করানোর জন্য আমি বসে নেই”‚ কর্কশ সুরে জানাল শাজ।
“তাহলে কি আমাকে দেখার জন্য বসে আছ?” হাসতে হাসতে বলল শেহরোজ। কিন্তু আর কোনো কথা বলল না শাজ। টিভিতে মন দেওয়ার চেষ্টা করতেই শেহরোজ ওকে এবার বলল‚ “আরও তো প্রোগ্রাম চলছে কত চ্যানেলে। এটা কেন দেখছ? আমি ইনজয় করতে পারছি না।”
“আমি করছি। আর এটা আমার ফেইবরেট।”
“সিরিয়াসলি?” বলেই হেসে ফেলল শেহরোজ। ওকে খেপানোর জন্য কিছু একটা বলতে চাইতেই হঠাৎ শাজের বিষণ্ন হয়ে ওঠা মুখটা দেখে হাসি বিলীন হয়ে গেল তার। তখনই শাজ মৃদুস্বরে বলতে শুরু করল‚ “ডোরেমনের গ্যাজেটগুলো আমার খুব পছন্দের। ওর গ্যাজেটগুলো দিয়ে নিজের সকল ইচ্ছে পূরণ করা যায়‚ স্বপ্নে বিচরণ করা যায়‚ অতীতে যাওয়া যায়‚ ভবিষ্যত দেখা যায়‚ অন্যের মনের কথা শোনা যায়। এজন্যই ডোরেমন আমার ফেইবরেট।”
এই প্রত্যেকটি লাইনেই ছিল শাজের অব্যক্ত দুঃখগুলো‚ অপূর্ণ চাওয়াগুলো৷ শেহরোজ কি তা বুঝল? কিন্তু তাকে থমকে দিতে পারল ঠিকই৷ এক অপরের চোখ চেয়ে ওরা মৌনাবলম্বন করল। একজন যে আরেকজনের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছে ‚ তা হয়তো দুজনের কেউই জানল না।
একটা সময় শাজ অনায়াসেই রনি আর অয়নের চোখের ভাষা পড়ে নিতে পেরেছিল। আর পেরেছিল বলেই ওদের থেকে সরে আসতে সময় নেয়নি। কিন্তু নিজেকে ঘিরে শেহরোজের ভাবনা কী হতে পারে — তার চোখে চেয়ে তা কিঞ্চিৎ পরিমাণও কেন বুঝতে পারে না ও? এত কেন দুর্বোধ্য হবে কারও চোখের ভাষা? এই তো এ মুহূর্তে নিজের জন্য সে শেহরোজের চোখে দেখতে পাচ্ছে কেবলই স্নেহ আর মায়া। গতকালও এই দৃষ্টি ছিল না ওর প্রতি। অথচ পরিস্থিতি বিবেচনায় তখনই বেশি ওকে এই স্নেহদৃষ্টিতে দেখার কথা ছিল শেহরোজের। এর পরিবর্তে তার মাঝে দেখেছিল সে বিকারশূন্যতা৷ যে নিজের শরীরের আঘাত দেখেও চিন্তিত বা শঙ্কিত হয়নি। যতক্ষণ ছিল সঙ্গে ‚ ততক্ষণ কেবল দুষ্টুমিই করে গেছে। কিন্তু তার বদলে অন্য কোনো পুরুষ হলে কি এমনটিই করত?
অপ্রস্তুত হয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো শাজ। ছোট্ট করে শ্বাস ফেলল তখন শেহরোজ। ওকে বলল‚ “ফিলিংস অথবা ইমোশন শুধু নিজের মাঝে ধরে রাখার জন্য নয়‚ শাজ। আল্লাহ চান তার বান্দা মন খুলে তাঁর কাছে সকল কথা বলুক। তিনি তো ইন্ডওয়েলার। তবুও তিনি চান বান্দা এক্সপ্রেস করুক। সেখানে আপনজনের কাছে কোনো কিছু এক্সপ্রেস না করলে তাদের কি তোমার ভেতরটা জানার আর বোঝার সাধ্য আছে?”
নিশ্চুপ‚ ভাবনাগ্রস্ত শাজকে চমকে দিয়ে শেহরোজ বলে উঠল এবার‚ “যা তুমি নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতে চাইছো তা তোমাকে দিনে দিনে মেন্টালি টর্চার করছে এভরি মোমেন্ট। তোমাকে ঠিকমতো ঘুমাতেও দিচ্ছে না। পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো তুমি পারছ না লাইফ ইনজয় করতে। ওই বিষয়টিই তোমার সকল শান্তিকে কবজা করে রেখেছে।”
রক্তশূন্য চেহারায় শাজ বিস্ফারিত চোখে তাকাল শেহরোজের দিকে‚ “কী ফালতু বকবক করছেন!” মুহূর্তেই রূঢ়ভাষী হয়ে উঠল‚ “আই অ্যাম পারফেক্টলি ফাইন। অ্যান্ড আই অ্যাম হ্যাপি অ্যাট এভরি মোমেন্ট অফ মাই লাইফ। স্টপ কনসোলিং মি উইথ বুলশিট! আমি যার তার থেকে জ্ঞান আর সান্ত্বনা নিতে পছন্দ করি না।”
“নো নো শাজ‚ আই অ্যাম নট গিভিং ইউ অ্যানি সিলি কনসোলেশন”‚ ব্যাকুল গলায় বলল শেহরোজ। “ডোন্ট গেট মি রং। তুমি শান্ত হও‚ প্লিজ।”
“আমি শান্তই আছি”‚ ঝাঁঝিয়ে উঠল শাজ।
“ও আচ্ছা।” বিব্রত হাসার নাটক করে বলল শেহরোজ‚ “আমারই মে বি বুঝতে ভুল হচ্ছে। ভাবলাম তোমাকে রাগিয়ে দিয়েছি। যদি সত্যিই রেগে থাকো তাহলে মাফ চাইছি। আর বুঝতে পারিনি কথাগুলো তোমাকে হিট করতে পারে বা কথাগুলো হিট করার মতো।” শেষের কথাতে আলাদা জোর দিলো সে।
তাতে শাজও বুঝল‚ প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই মেজাজ দেখিয়ে ফেলেছে সে৷ তখন কেন যেন মনে হচ্ছিল শেহরোজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথাগুলো বলছিল ওকে৷ অথচ কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে শেহরোজের? কেন যে নিজের রাগ‚ অভিমান‚ এসব আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না সে!”
“আমি আসলে ওই কথাগুলোতে বোঝাতে চাইছিলাম যে”‚ নিশ্চুপ শাজকে জহুরির মতো দেখতে দেখতে বলল শেহরোজ‚ “তোমার মনে চেপে থাকা কথাগুলো অথবা কষ্টগুলোকে তুমি অন্তত কাউকে ভরসা করে‚ বিশ্বাস করে কনফেস করো। নিজের মাঝে কষ্টগুলো বয়ে বেড়ানোর জন্যই আমরা ডিপ্রেশনে ভুগি। আসলে আমরা মানুষ একা খুব বেশিদিন ভালো থাকতে পারি না। একটা সময়তে গিয়ে কারও কম্পানি খুব মিস করি। আমার মনে হলো তুমি নিজেকে খু্ব বেশি রিজার্ভ করে রাখো। আর তোমার সুন্দর চোখের নিচে পড়া কালি দেখেই বলেছি ঠিকমতো ঘুমাতে পারো না। বেসিক্যালি ঘুম ফুলফিলস না হওয়ার মেইন রিজন…”
“আই শুড গো হোম”‚ শেহরোজের কথার মাঝে বলে উঠল শাজ। “নয়তো ডোরেমনটা ইনজয় করতে পারব না।”
“ডোন্ট গো প্লিজ”‚ হাতের ইশারায় থামতে বলল শেহরোজ। “আমিই যাচ্ছি। তুমি থাকো।” বলে চলে গেল সে নিজের ঘরে। তবে ঘরে প্রবেশের পূর্বে শাজের চিন্তামগ্ন মুখখানি দেখে নিতে ভুলল না।
টিভিটা অকারণেই চলছে। কোন খেয়ালে শাজ যেন ডুবে আছে। এর মধ্যে ঝুমা শেখ হইহই করতে করতে হাতে আচারের থালা নিয়ে এলো বসার ঘরে৷ পিছু পিছু এলেন শাজের দাদী৷ তেল চটচটে হাতে আচার উঠিয়ে আনন্দে উত্তেজিত ঝুমা শাজের মুখের সামনে ধরল‚ “ওরে শাজ খাইয়্যা দ্যাহেক গোরুর গোশের আচার বানাইয়ালাইছি!”
“পরে খাবো”‚ বলে হাতটা সরিয়ে দিতে চাইলো শাজ।
কিন্তু জেদি ঝুমা বেগম সারা বিকাল থেকে সন্ধ্যা এই আচারের পিছে খেটেছে৷ আবার সর্বপ্রথম খাওয়াতে এসেছে শাজকেই। এত মূল্যায়ন সেই শাজ ঠেলে ফেলে দেবে? হতেই দেবে না তা। ওর গালটা চেপে ধরে আচার ওর মুখের মধ্যে ভরে দিলো সে৷ তক্ষুনি “অসহ্য” বলে চেঁচিয়ে উঠে পড়ল শাজ। চলেই যাবে ও। মুখ মুছতে মুছতে চলে যাবার জন্য দু পা এগোলোও। তখনই ঝুমা বলে উঠল‚ “এই গটগটানি‚ দাঁড়া। তোর পাগলা চাচা তোকে কল করে না পেয়ে আমাকে কল দিয়েছিল। তোকে জানাতে বলল দক্ষিণখানের বাসায় তুই যেন আর না যাস। ওটা ভাড়া দিয়েছে রোজকে।”
“কীহ্!” অবিশ্বাস্য অভিব্যক্তি নিয়ে শাজ ফিরে এলো। জিজ্ঞেস করল‚ “কী বললে? কী করেছে কাকু?”
“রোজ তো বাসা খুঁজছিল। ও হলো নিরিবিলি‚ খোলামেলা জায়গায় থেকে অভ্যস্ত। তাই আমাকে সেরকমই একটা বাসা খুঁজে দিতে বলেছিল৷” আচার চিবুতে চিবুতে ঝুমা নির্বিকার ঢঙে বলে গেল‚ “ওরকম বাসা খুঁজতে গিয়ে সেদিন মাথায় আসলো তোদের ডুপ্লেক্স বাড়িটার কথা৷ আজ কতগুলো বছর হুদ্দাই খালি পড়ে আছে। তাই খালিদ ভাইকে আজ জিজ্ঞেস করেছিলাম ভাড়া টারা দেওয়া যায় নাকি বাড়িটা। রোজের কথাও জানালাম ও কেমন ছেলে‚ কই থেকে আসছে‚ কী করছে। শুনে টুনে তো খালিদ ভাই এক চান্সেই রাজি হয়ে গেল। মাস গেলে ভালো টাকার ভাড়া পাবি তুই এই ভেবে। কালকেই রোজ চলে যাবে ওইখানে। ভাড়ার টাকা অ্যাডভান্সও দিয়ে দেবে আজকেই।”
“তার কি আমার খরচ বহন করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে?” রাগে চিৎকার করে উঠল শাজ‚ “আমার পারমিশন ছাড়া ওই বাড়ি যাকে তাকে ভাড়া দেওয়ার সে কে? দুইটা বছর আমার খরচ টানতে গিয়ে সে যদি গরিব হয়ে যায় তাহলে সেই কথা আমাকে সরাসরি বলার ক্ষমতা হলো না?”
“এ শাজ এই! তুই কারে কী কইতাছিস”‚ বৃদ্ধা আয়শা খাতুন খেপে উঠলেন মুহূর্তেই। “আমার ভাইস্তাডা নিজির সহায়সম্পত্তি কুনো বুন‚ বুনির পোলা মাইয়াগোরে দেলো না। দেলো খালি তরে। বিদ্যাশতেও কামায় রুজগার যা করতাছে ব্যাগডি তর নামে পাডাইতাছে। তারে তুই কইবার পারলি এমুন কতাগুলান?”
“আর তুই যাকে তাকে বললি কাকে”‚ অবাক হলো ঝুমা। “রোজ যে সে পর্যায়ের হলে আমি কি নিজের ঘরে জায়গা দিতাম? তুই এরকম কেন রিয়্যাক্ট করছিস? ওই বাসাতে তো তুই বছরে একবার কি দুইবার যাস। তাহলে সারাটা বছর খালি পড়ে থাকার থেকে নিজেদের চেনাজানা কেউ ভাড়া নিলে ক্ষতি কী?”
“মাত্র এক মাসে কী এত চিনলে জানলে তাকে?” শাজ তিরস্কার করে বলল‚ “চেহারাটা দেখলেই তো কোথাকার গুণ্ডা মস্তান লাগে। এমন জংলীদের মতো দাড়িগোঁফ তো পিয়াল ভাইকে কোনোদিন রাখতে দাওনি। লোকে শিবির ট্যাগ দেবে এই ভয়ে। তাহলে ওই লোককে কী দেখে এত বিশ্বাস করে নিলে‚ হ্যাঁ?”
ঝুমা বেগম রেগে গেল‚ “কথাবার্তা সাইজ করে ক‚ শাজ। থাবড়ানি দিয়া তর চাপা ভাঙমু নয়তো। ও শুইনা ফেলাইলে তর খবর আছে।”
“চেঁচাচ্ছ কেন সবাই?” গোসল অর্ধেক সেড়ে শেহরোজ বেরিয়ে এসেছে ঘর থেকে। তিন প্রজন্মের তিন নারীকেই রণমুর্তি রূপে দেখে জিজ্ঞেস করল সে‚ “এত ঝামেলা করছ কেন তোমরা? কী হয়েছে?”
“কিছু না‚ বাপ।” ঝুমা চটজলদি মেজাজ সামলে বলল‚ “মেয়েলী ব্যাপার। তুমি ঘরে যাও।”
“কোথাও যাবেন না আপনি”‚ আদেশ গলায় বলল শাজ। “ঝামেলাটা আপনার জন্যই হচ্ছে৷ ঢাকাতে এত বাসা থাকতে আপনাকে আমার বাসাতেই কেন ভাড়া থাকতে হবে? দেবো না আপনাকে ভাড়া আমি।”
“কিন্তু কেন‚ শাজ?” বিস্মিত শেহরোজ জানতে চাইলো‚ “কেন ভাড়া দেবে না আমাকে?”
জবাবে কোনো রাখঢাক করল না শাজ‚ “আপনি বাজে একটা ছেলে‚ তাই৷ পারলে এখান থেকেও আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন চলে যাবেন। আপনাকে আমি আমার আশেপাশেও কোথাও দেখতে চাই না।”
“তর সাহস কত্ত বড়ো!” ঝুমা শেখ ভীষণরকম রেগে উঠল‚ “তুই আমার ঘরে খাঁড়াইয়া আমার ইষ্টিরেই খেদায় দিতাছোস? তুই বাইর হ আমার ঘর থেইকা। এক্ষুনি বাইর হ‚ বেদ্দপ ছুডোলুক৷ বাইর হ কইতাছি!”
শাজের জ্বলে ওঠা আগুন চাউনি নিভল। বিস্ময়াহত চোখে তাকাল ঝুমা শেখের দিকে। এক মাসের পরিচিত শেহরোজের জন্য এই মানুষটি ওকে অপমান করে চলে যেতে বলছে বাসা থেকে! একবার ওর মনটা বোঝার চেষ্টা করল না — কেন সে ওই বাড়িটা ভাড়া দিতে চাইছে না শেহরোজকে? ওটা ওর মায়ের ছোট্ট স্বপ্নমহল ছিল৷ নিজে এঁকেছিল মা ওই বাড়ির প্রতিটি নকশা। কিন্তু বেঁচে থাকাকালীন ভাগ্যে হয়নি তার বাড়িটা তৈরি হতে দেখে যাওয়ার৷ বাবার সামর্থ্য হওয়ার পরই মায়ের অপূর্ণ স্বপ্নকে পূর্ণ করেছে। কিন্তু সেই মানুষটিরও ভাগ্য হয়নি সেখানে বসত করার। যে কারণে আজ অবধি সেও সাহস করতে পারে না ওখানে থাকার। আর আজ কিনা বাইরের একটি ছেলে থাকবে সেখানে? তাও কিনা যার স্বভাব‚ বৈশিষ্ট্য ওর অপছন্দের।
বিশ একুশ বছরের স্নেহকে ভুলে শেহরোজের জন্য ঝুমা শেখ যে এভাবে ক্ষিপ্ত হতে পারে তা ভেবেই শাজ খুব আহত হলো। একবার দাদীকে‚ আরেকবার আন্টিকে দেখে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে। নিজের ঘরে ঢুকল না সে। সরাসরি রাস্তায় নেমে এলো৷ হাঁটতে শুরু করল বাসার উলটোদিকে। রাগ‚ দুঃখের সংমিশ্রণে সে মনে মনে নিজেকেই গালমন্দ করতে থাকল — কেন মানুষের প্রতি অতিরিক্ত প্রত্যাশা পোষণ করে? তাহলে তো আজ ঝুমা আন্টির থেকেও এভাবে কষ্টটা পেতে হতো না।
অথচ উত্তপ্ত মস্তিষ্কে শাজের এ কথা স্মরণে এলো না‚ এমন তো অতীতে বহুবার ঝুমা ওকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছে। এমন বকাঝকা তো আগেও করেছে ওকে। আর এসব কিছু তো তার স্নেহ আর শাসনেরই অংশ।
বাসা থেকে বেশ দূরে এসে থেমে পড়ল সে একটি ফাঁকা জায়গার সামনে। জায়গাটি এক ব্যক্তির জমি৷ দীর্ঘদিন খোলামেলা পড়ে থাকার কারণে এলাকার ছেলেপুলেরা এখানে ক্রিকেট‚ ফুটবল খেলে। শীতকাল এলে ব্যাডমিন্টনও খেলে। এখন যেমন মাঠের চারপাশে বড়ো বড়ো লাইট জ্বালিয়ে ফুটবল খেলছে একদল কিশোর। ওদের খেলার দিকেই ভেজা ভেজা উদাস চোখে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইল শাজ। বিনা অনুমতিতে ডান গাল বেঁয়ে একটুখানি অশ্রুকণাও গড়িয়ে পড়ল৷ কণাটুকু সে মুছল না; মুছল অনাকাঙ্ক্ষিত পুরুষালী হাত। মোছার পর বলল গাঢ়স্বরে‚ “আমার জন্য তোমার চেহারায় হাসি ফুটুক‚ লাজ ফুটুক‚ অভিমানও। কিন্তু চোখের পানি পড়বে এটা আমি কক্ষনো চাইনি।”
শেহরোজকে কাছে দেখেই শাজ উদ্ধতভাষী হতে গিয়েও স্থান বিবেচনা করে সামলে নিলো নিজেকে। নিম্ন গলায় হুমকির সঙ্গে বলল‚ “এই মেয়ে পটানো ছলপূর্ণ কথাবার্তা একদম বলতে আসবেন না আমার সঙ্গে। খুব খারাপ হবে তাতে।”
মুখটাতে অনুরোধ ফুটিয়ে বলল শেহরোজ‚ “আমাকে দুপুরের ওই সিচুয়েশন এক্সপ্লেইন করতে দেবে প্লিজ?”
শাজ দাঁড়ালই না আর। গটগটিয়ে সামনে এগোতে থাকলে শেহরোজ ওর পিছু পিছুই চলল চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রেখে। একটু পর রাস্তার মধ্যে থেমে গিয়ে শাজ পিছু ফিরেই আঙুল উঁচিয়ে শেহরোজকে ধমকালো‚ “বেশরম আপনি? পাবলিকের মারধোর না খেতে চাইলে পিছু ছাড়েন বলছি!”
অসহায় দৃষ্টি ছুঁড়ে শেহরোজ বুকের মধ্যস্থলে হাতটি রাখল আর করুণ আবেগে বলে উঠল‚
“বেকুব হৃদয় খুঁজে ফেরে তাকে
ক্ষতচিহ্ন যে বারবার বুকে আঁকে।”
মেজাজ এবার বিশ্রীভাবে বিগড়ে গেল শাজের। এই শায়েরী পাঠ শুনলে গতকাল অবধিও ওর বুকে ধুকপুকানি আরম্ভ হতো। কিন্তু আজকে তার উলটোটাই হচ্ছে— মনে হচ্ছে এই ছেলের সবটাই ছল আর ছল।
এদিকে এলাকার মানুষগুলো আবার কৌতূহল চোখে দেখছে ওদের। রাস্তার মাঝখানে দুজনের এই রং তামাশা চলতে থাকলে যে কারও নজরেই তো দৃষ্টিকটু লাগবে। তাই আর কোনো বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হলো না শাজ। কটমট চোখে শেহরোজকে একবার দেখে চুপচাপ বাসার পথ ধরল সে। আর তা দেখে শেহরোজ মিটিমিটি হেসে এগোলো ওর পিছু পিছু।
একটু সামনে পৌঁছতেই হঠাৎ বাঁ দিকের তিন তলা বিল্ডিংয়ে শাজের চোখ পড়ল আর অমনিই থমকে পড়ল ওর পা জোড়া… আতঙ্কে বোবা বনে বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইল সেদিকেই। ছ’সাত বছরের এক বাচ্চা ছাদের হাফ রেলিঙের ওপর দাঁড়িয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল এই রাতের বেলাতে৷ ছাদে সে একা কিনা কে জানে! ওর যখন দৃষ্টি পড়ল সেখানে‚ তখনই পাটা পিছলে গেল বাচ্চাটির। বিপদ দৃশ্যটুকু দেখার আগেই চোখ বুজে চিৎকার করে উঠল ও।
কিন্তু শাজ বুঝতেই পারল না এই একই সময়ে শেহরোজেরও নজর গিয়েছে সেদিকে আর তারপর একটা সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে থেকেছে সে। চোখদুটো খোলা রাখলেই শাজ দেখতে পেত চিতার মতো দুরন্ত‚ ক্ষিপ্রতায় শেহরোজের ছুটে যাওয়া আর কী অভাবনীয় রিফ্লেক্স অ্যাকশনে বাচ্চাটিকে দুহাতের মাঝে আঁকড়ে ধরা।
আশপাশে চলতে থাকা সকল মানুষ এই দৃশ্য দেখে বিস্ময় নিয়ে শেহরোজের চারপাশে জড়ো হয়ে গেল। যে গতিতে কয়েক হাত দূর থেকে শেহরোজ দৌড়ে এসে বাচ্চাটিকে ধরতে পেরেছে — তা এই সাধারণ মানুষগুলোর চোখে রীতিমতো অবাক কাণ্ডই। বাচ্চাটির কোনো আত্মীয় ছাদে ছিল। তার চিৎকারের আওয়াজ কানে এলো সবার।
কিন্তু শাজ আর এসব দেখার মতো অবস্থাতে নেই৷ নিমেষেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ওর মনশ্চক্ষুতে আঠারো বছর আগের দিনটি— সে আর পিয়ালসহ আরও একটি বাচ্চা সেদিন বিকালে গেটের দারোয়ানের লাঠি কেঁড়ে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছিল। এর মাঝেই ওর দৃষ্টি যায় বাসার ছাদে। রেলিঙের ওপর হঠাৎ মাকে চড়তে দেখে সে মজা পেয়ে লাফায় আর বাকিদেরও ডাকাডাকি করতে থাকে মাকে দেখানোর জন্য৷ পিয়ালরা ছুটে আসতে আসতেই আইরিন খান ঝাঁপিয়ে পড়ে নিচে। চোখের সামনে তখন দেখতে পায় শাজ রক্তে মাখামাখি মায়ের থেঁতলে যাওয়া মাথা আর মুখটা। কেমন জড়ীভূতের মতো সেদিন সে দাঁড়িয়েই ছিল কতক্ষণ! কিন্তু আজ আর পারল না দাঁড়িয়ে থাকতে৷ মৃত মাকে মনের পর্দায় দেখতে দেখতেই চারপাশ দুলে উঠল ওর। ধপ করে রাস্তার মাঝে লুটিয়ে পড়ল সে।
***
#নোট__ যাদের সাসপেন্স নিতে কষ্ট হচ্ছে তারা সামনের দু তিনটা পর্ব জমিয়ে পড়তে পারেন। আমি হুটহাট মূল রহস্যে/থিমে পৌঁছে যেতে পারি না। সাসপেন্স থ্রিলারের ক্ষেত্রে তো আরও পারি না। এই উপন্যাসের মূল প্রেক্ষাপট বিস্তর আলোচনার। এক নিমেষেই সেই প্রেক্ষাপট বোঝানো অসম্ভব৷ একটু একটু করে হিন্টস দেবো আর সাসপেন্স ক্লিয়ার করব। তাহলেই গল্পের কাহিনিটা বুঝতে সুবিধা হবে আপনাদের।
“শায়েরী – মির্জা গালিব”।